প্রবন্ধ
রোযা কোনো ইবাদত নয়, বরং জিহাদের ট্রেণিং! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮০
ইসলামের প্রত্যেকটি আমলের ওপর হামলাকারী সংগঠনের নাম ‘হেযবুত তওহীদ’। একেবারে ইসলামের মূল থেকে ধরে সর্বক্ষেত্রেই হামলা করেছে এই ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তি। এরই ধারবাহিকতায় রোযার ওপরেও হামলা করেছে তারা।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের কাছে রোযা কোনো ইবাদতই নয়, বরং এটা জিহাদের ট্রেণিং। দেখুন, তারা কী লিখেছে–
তারা তাদের ওয়াজে নসিহতে মানুষকে কেবল নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি করার জন্য উপদেশ দেন। এগুলোকে তারা এবাদত ও ধর্মকর্ম বলে মনে করেন। –শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৯
নামাজ রোজা হজ্ব পূজা প্রার্থনা তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতী যেন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত। –জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৫৬
এখন মোসলেম দাবিদার জাতির সামনে থেকে দীনের এই উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে, তারা কেবল নামাজ, রোজা, হজ্বব করাকেই এবাদত হিসাবে ধোরে নিয়ে ভালো মানুষ সবার জন্য জোর প্রচেষ্টা কোরছে। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৮৯
এবাদত হচ্ছে আল্লাহর খেলাফত করা , কিন্তুু ভুল করে নামায , রোযা , হজ্জ , যাকাত ইত্যাদিকে এবাদত বলে মনে করা হচ্ছে । –মহা সত্যের আহ্বান, পৃ . ৯
প্রকৃত এসলামের, জীবনব্যবস্থার উদ্দেশ্য মানব জীবনের নিরাপত্তা, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, আর বর্তমান এসলামের উদ্দেশ্য ওসব কিছুই নয় বরং সময়মত নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, হজ্ব করা, রোজা রাখা, দাড়ি রাখা, লম্বা পোশাক ও খাটো পায়জামা পরা ইত্যাদি। –হেযবুত তওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃ. ৭
এজন্য আল্লাহ রসুল (সা.) বলেছেন, সওম তাদেরই হবে যারা মানবতার মুক্তির জন্য সংগ্রামের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হবে। তাদের জাতির সামগ্রিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিটি সদস্যের ব্যক্তিগত চরিত্রের প্রশিক্ষণ হল সওম। যারা ঐ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ নয়, তাদের সওম অর্থহীন। –সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ১২
সেই সত্য দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্ব উপায়ে প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মো'মিনের অবশ্য কর্তব্য, ফরদ। এই দীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মো'মেনের অবশ্যই কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুন লাগবে। সেই চারিত্রিক, মানসিক আত্মিক গুণ বৈশিষ্ট্য (Attributes) এটা যে সে অর্জন করবে কোথেকে অর্জন করবে? সেটার জন্য আল্লাহ তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন। সেটা হলো সালাহ সওম,হজ্ব,যাকাত এগুলো। এগুলোর মাধ্যমে তার চরিত্রে কিছু গুন অর্জিত হবে। তারপর সে আল্লাহর সত্যদীন পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করে মানবসমাজ থেকে অন্যায় অশান্তি দূর করতে পারবে যেটা উম্মতে মুহাম্মদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য। –সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ৫
নিজেদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে সংগ্রাম করার মধ্যে দিয়েই মোমেন হতে হবে, অন্য কোন পন্থা আল্লাহ দেননি। এই মুমিনের জন্য নামাজ রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ ইসলামের অন্যান্য সব আমল। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১১৩
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মানেই হচ্ছে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। যারা এই অঙ্গীকার করবে তাদের চরিত্র অর্জনের জন্য আল্লাহ নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত এর হুকুম দিয়েছেন। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৯
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো–রোযা কোনো ইবাদত নয়, বরং খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য যে জিহাদ করতে হবে, সে জিহাদের ট্রেণিং মাত্র।
ইসলাম কী বলে?
রোযা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ইবাদত। এটা কোনো ট্রেণিং নয়, বরং আল্লাহ তাআলাকে পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মহান রব্ব বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। –সুরা বাকারা : ১৮৩
এ আয়াতে রোযাকে তাক্বওয়া বা খোদাভিতির মাধ্যম বলা হয়েছে। এ ছাড়াও হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
قَالَ اللهُ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোযা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু রোযা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। রোযা ঢাল স্বরূপ। –সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৯০৪
এ হাদিসে রোযাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ বলা হয়েছে। সুতরাং রোযাকে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও জিহাদের ট্রেণিং বলেননি। অতএব নব্য আবিস্কৃত এসব উদ্ভট কথা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
تحریک استشراق کی حقیقت اور استشراقی لٹریچر کے اثرات
تعارف: استشراق( Orientalism ) اور مستشرق کا لغوی و اصطلاحی معنی استشراق عربی زبان کے مادہ( ش۔ر۔ق) سے...
সত্য ইমাম মাহদী ও ভণ্ড ইমাম মাহদী [শেষ পর্ব]
...
খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ (২য় পর্ব)
আরবদেশে কেন গিয়েছিলেন দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, তিনি দক্ষিণ দামেস্কে আরব এলাকায় কেন গিয়েছিলেন? ইতিপূর্...
প্রসঙ্গ মুয়াবিয়া রাজিআল্লাহু আনহুঃ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কিত ইতিহাস পাঠের মূলনীতি
...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন