প্রবন্ধ
নামাজ জান্নাতের চাবি নয়! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭২
নামাজ হলো, জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম। যে কারণে হাদিস শরীফে নামাজকেও জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবী হলো, নামাজ জান্নাতের চাবি নয়। দেখুন, তারা লিখেছে,
এখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হচ্ছে সালাহ বা নামাজ । জান্নাতের প্রকৃত চাবি আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে (হাদিস- মু’আজ ইবনে জাবাল থেকে আহমদ) ত্যাগ করে এই জাতি নামাজকে জান্নাতের চাবী বানিয়ে নিয়ে সারা দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ সুদৃশ্য মসজিদে কেবল শূণ্যের উপরই খুঁটি গেঁড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ খুঁটিগুলোর উদ্দেশ্য কী তাও তারা জানে না। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৫৭
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, ‘নামাজ জান্নাতের চাবি’ এ হাদিসটি মানুষের বানানো।
ইসলাম কী বলে?
নিন্মে এ সম্পর্কে দুটি হাদিস উল্লেখ্য করছি–
এক. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلاَةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الْوُضُوءُ
জান্নাতের চাবি হচ্ছে ‘নামাজ’, আর নামাজের চাবি হচ্ছে ‘উযু’। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ৪
হাদিসটির মান
উক্ত হাদিস সম্পর্কে কয়েকজন হাদিস বিশারদোে মতামত তুলে ধরলাম–
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহি. বলেন,
قال ابن حجر بسند حسن
ইবনে হাজার এটি (হাদিসটি) হাসান সনদের সাথে বলেছেন। –মিরকাত খ. ১ পৃ. ৩৫৩
আল্লামা জালালুদ্দীন সুূয়ূতী রহি. হাদিসটির সনদ 'হাসান' বলেছেন। –জামে সগীর হাদিস নং- ৮১৭৩
আল্লামা জারুল্লাহ সাদী রহি. সনদটিকে হাসান বলেছেন। –আন নাওয়াফেহুল আত্বরাহ, হাদিস নং : ৩৩৫
সুতরাং প্রমাণ হলো, হাদিসটি জাল তো দূরের কথা যয়ীফও নয়, বরং হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত। যা সহিহ হাদিসেরই একটি প্রকার। উপরন্তু যদি হাদিসটি যয়ীফও হয়, তবুও কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, যয়ীফ মানে দূর্বল, জাল নয়। সুতরাং এ হাদিসটি অস্বীকার করে হেযবুত তওহীদ নামাজের প্রতি এক ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।
দুই. হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ باب الصَّلاَةِ
নামাজীদেরকে জান্নাতের নামাজের দরজা দিয়ে প্রবেশের আহবান জানানো হবে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৬৬৬
সহিহ বুখারীর এ হাদিস থেকে জানতে পারলাম, তালাবদ্ধ জান্নাতে নামাজীদেরকে নামাজের দরজা থেকে ডাকা হবে। এর অর্থ কী? নামাজ যদি জান্নাতের চাবি না হয়, তাহলে তালাবদ্ধ জান্নাতের দরজার দিকে ডাকলে কিভাবে প্রবেশ করবে? সুতরাং যারা হাদিসটিকে অজ্ঞতার কারণে জাল বলে দাবী করছেন, তাদের থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ।
একটি অভিযোগ
হেযবুতি সেলিমের দাবী হলো, হাদিসে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা তাওহীদকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে'। সুতরাং নামাজ জান্নাতের চাবি হতে পারে না। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মুখে দুই কথা বলতে পারেন না।
জবাব
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মুখে দুই কথা বলেননি, বরং মুর্খতার কারণেই সেলিমরা বোঝেনি। কেননা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' -এর অর্থ হলো, 'আল্লাহ ছাড়া কোনো ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই' আর নামাজ তো আল্লাহর সেই ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বরং 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর বাস্তবসম্মত আমল হয় নামাজের মাধ্যমে। উপরন্তু নামাজের মধ্যে এ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' অসংখ্য বার বলা হয়। সুতরাং নামাজকে কালেমার বিপরিত কিছু মনে করা কোনো শিক্ষিত মানুষের কাজ নয়, বরং দুটোর বিষয়বস্তু এক ও অভিন্ন। একথার স্বপক্ষে ইবনুল আরাবী রহি.-এর বক্তব্য নকল করা যায়। তিনি বলেন,
مفتاح الجنة الصلاة لأن أبواب الجنة مغلقة يفتحها الطاعات وركن الطاعات الصلاة
নামাজ জান্নাতের চাবি। কারণ, জান্নাতের দরজাগুলো বন্ধ। সেই দরজাগুলো খোলা যাবে একমাত্র আল্লাহ তা'আলার অনুগত্যের মাধ্যমে। আর (ঈমান আনার পর) আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের সর্বোচ্চ মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। –তুহফাতুল আহওয়াযী, খ. ১ পৃ. ৩৮
সুতরাং প্রমাণ হলো, নামাজও কালেমার একটি অংশ, যার প্রমাণ নিন্মের দুটি বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়।
উপরন্তু ইমাম বুখারী রহি. তাঁর সহিহুল বুখারীতে ترجمة الباب (শিরোনাম হিসেবে) تعليقا সনদ ছাড়াই এনেছেন,
عَن وهب بن مُنَبّه قِيلَ لَهُ: أَلَيْسَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلَّا لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فَتَحَ لَكَ وَإِلَّا لَمْ يَفْتَحْ لَكَ
ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ রহি. কে বলা হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কী জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, অবশ্যই। তবে প্রত্যেক চাবিরই দাঁত থাকে। যদি তুমি দাঁতওয়ালা চাবি নিয়ে যাও, তবে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথায় তা তোমার জন্য খোলা হবে না’ (কালেমার দাঁত হ’ল নেক আমল)। –মিশকাত, বর্ণনা নং : ৪৩
সুতরাং সহিহ সনদে বর্ণিত একটি হাদিসকে জাল প্রমাণ করার পেছনে হেযবুত তওহীদের উদ্দেশ্য কী তা যে-কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বুঝবেন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
শান্তি সম্প্রীতি ও উদারতার ধর্ম ইসলাম
নামে যার শান্তির আশ্বাস তার ব্যাপারে আর যাই হোক, সন্ত্রাসের অপবাদ দেয়ার আগে তার স্বরূপ উদঘাটনে দু'দণ...
ঝাড়ফুঁক-তাবীয : একটি দালীলিক বিশ্লেষণ (২য় পর্ব)
...
মূর্তি ও ভাস্কর্য : যুগে যুগে শিরকের সর্ববৃহৎ প্রণোদনা
...
ইসলামই পৃথিবীর ভবিষ্যত
...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন