প্রবন্ধ
নামায কোনো ইবাদত নয়, বরং যুদ্ধের ট্রেনিং! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৬৬
দ্বীন-ইসলাম পরিপূর্ণ। দ্বীনের ভেতর নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করা দ্বীনের বিকৃতি করার শামিল। আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ
যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে (অর্থাৎ তা গ্রহণযোগ্য হবে না)। –সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৬৯৭
দ্বীনের প্রত্যেকটি বিধান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে হাতে, কলমে, প্যাক্টিকালি সব শিখিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে যুগ পরম্পরায় উম্মতে মুসলিমার আদায়কৃত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাযকে ভুল আখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে এক চরম বিকৃতি সাধন করেছে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তারা নামাযকে ইবাদত হিশাবে না নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ বলে ঘোষণা দিয়ে হিযবুত তাওহীদ নতুন এক বিদআতী সালাতের সূচনা করেছে। যে কারণে তারা মুসলিমদের মতো স্বাভাবিকভাবে নামায আদায় না করে কুচকাওয়াজের মতো আর্মি ট্রেনিংয়ের মতো আদায় করে। দেখুন, তারা লিখেছে-
আমরা নামায পড়ছি, মসজিদ নির্মাণ করছি। আমরা হজ্ব করছি, যাকাত দিচ্ছি। এগুলি সব আমল। আমলে পূর্ব শর্ত হচ্ছে। ঈমান কি? লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানবো না। এর অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে যারা ঐক্যবদ্ধ হবেন, তারা হবেন মোমেন। এই মোমেনের নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত আল্লাহর কাছে কবুল হবে। -সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ৯
ঐ জেহাদ ও কেতাল কোরে জয়ী হবার মত চরিত্র গঠণের জন্য, প্রশিক্ষণেরর জন্য ফরদ করে দিলেন সালাহ্। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৫৫
সালাতের মুখ্য ও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশৃঙ্খল,নেতার আদেশ পালনে আগুনে ঝাঁপ দিতে তৈরি দুর্ধর্ষ, অপারেজেয় যোদ্ধার চরিত্র সৃষ্টি। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৯
ঐক্য-শৃঙ্খলা-এতায়াত (আদেশ পালন) ও হেজরত, এই সামরিক গুনগুলো অর্জনই সালাতের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। –সলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪১
ঐক্যবদ্ধ,সুশৃঙ্খল ও সুশিক্ষিত জাতি ও বাহিনী ছাড়া কোন সংগ্রাম,সশস্ত্র সংগ্রাম সম্ভব নয় তাই ঐক্য ও শৃঙ্খলা শিক্ষার প্রক্রিয়া হলো সালাত (নাময)।কিন্তু (সালাত) নামায উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া মাত্র। –আকিদা, পৃ. ৮
সেই সত্যদীনকে প্রতিষ্ঠা করার সর্ব উপায়ে প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মো'মেনের অবশ্য কর্তব্য, ফরদ। এই দীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মো'মেনের অবশ্যই কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণ লাগবে। সেই চারিত্রিক, মানসিক, আত্মিক গুণ, বৈশিষ্ট্য (অঃঃত্রনঃবং) এটা যে সে অর্জন করবে কোত্থেকে অর্জন করবে? সেটার জন্য আল্লাহ তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন। সেটা হলো সালাহ, সওম, হজ্ব, যাকাত এগুলো। এগুলোর মাধ্যমে তার চরিত্রে কিছু গুণ অর্জিত হবে। –সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ৫
অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায় নামায কোনো ইবাদত নয়, বরং দ্বীন কায়েমের জিহাদের ট্রেনিং।
ইসলাম কী বলে?
নামাযকে জিহাদের ট্রেনিং বলা পবিত্র কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যার শামিল। কারণ আল্লাহপাক ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও বলেননি যে, নামায জিহাদের ট্রেনিং। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ
তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো। –সুরা বাকারা : ১১০
উক্ত আয়াতসহ নামাযের ব্যাপারে যত আয়াত এসেছে, সকল আয়াতে মহান রব্ব বলেছেন, নামায কায়েম করতে। কিন্তু কোনো আয়াত বা হাদিসে নামাযকে জিহাদের ট্রেণিং বলা হয়নি। সুতরাং কুরআনের শর্তহীন আয়াতকে শর্তযুক্ত (مقيد) করা অপব্যাখ্যার শামিল। আর কোনো আয়াতের মনগড়া উক্তি করা এক জঘন্যতম অন্যায়। যে-কারণে হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَأْيِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ أَخْطَأَ
যে ব্যক্তি নিজের মত অনুযায়ী কুরআন প্রসঙ্গে কথা বলে, সে সঠিক বললেও অপরাধ করলো (এবং সঠিক ব্যাখ্যা করলো-সেও ভুল করলো)। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৯৫২
অপর একটি হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِغَيْرِ عِلْمٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
যে ব্যক্তি সঠিক ইলম ব্যতীত কুরআন প্রসঙ্গে কোন কথা বলে, সে যেন জাহান্নামকে নিজের জন্য বাসস্থান বানিয়ে নিলো। –জামে তিরমিযি, হাদিস নং : ২৯৫০
সুতরাং হেযবুত তওহীদের মনগড়া অপব্যাখ্যা থেকে সবাই সতর্ক হয়ে নামাযকে নামাযের মতো স্থীরতার সাথে আদায় করা ও হেযবুত হিপহুপ স্টাইলের নামায থেকে বিরত থাকা জরুরি।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবে বরাত
এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে ন...
শবে বরাত সম্পর্কে দশটি জরুরি কথা
শবে বরাত নিয়ে বর্তমানে বেশ বির্তকমণ্ডিত একটি অবস্থা বিরাজমান- সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেউ বলতে চাচ্...
ঝাড়ফুঁক-তাবীয : একটি দালীলিক বিশ্লেষণ (১ম পর্ব)
...
উপমহাদেশে নামধারী সুন্নী যারা
ভূমিকা ইসলাম এক পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যার আকীদা ও আমল নির্ভর করে কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামে...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন