প্রবন্ধ
তাওহীদে বিশ্বাস থাকলে কোনো গুনাহের হিসাব লাগবে না! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৮
কিয়ামতের ময়দানে এমন ভয়নক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন অন্যান্য নবীগণ পর্যন্ত ‘নাফসী’ ‘নাফসী’ বলতে থাকবেন। সেদিন অপরাধীরা নিজেদের ছোট-বড় সকল গুনাহের জন্য জবাবদীহি করা ছাড়া কেউ নিস্তার পাবে না।
হেযবুত তওহীদ কী বল?
হেযবুত তওহীদ নামক এ কুৃফরী সংগঠণের দাবী হলো, তাওহীদে অবিচল থাকলে, সে যে গুনাহ-ই করুক না কেন, কোনো সমস্যা নেই, সে জান্নাতে চলে যাবে। এমনকি কবীরা গুনাহ করলেও সে জাহান্নামে যাবে না, বরং সেও হিসাব ছাড়াই যাবে জান্নাতে চলে যাবে। তাদের দাবীগুলো তাদের বই থেকেই দেখুন–
এই একটি শর্ত (তওহীদ) পালন করলে কোনো গুনাহই তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না; এমনকি মহানবীর উল্লেখিত ব্যভিচার ও চুরির মত কবিরা গোনাহও না। –আকীদা, পৃ. ৭
মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনে ভুল-ভ্রান্তি ও গুনাহ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু যদি তারা তওহীদের স্বীকৃতি দিয়ে হেদায়েতে অটল থাকে তাহলে তাদের ভয় নেই, ব্যক্তিগত কোন গুনাহই তাদেরকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। –তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১০
সেরাতুল মুস্তাকীমে অর্থাৎ তওহীদের যে ব্যক্তি অটল থাকবে, বিচ্যুত হবে না, তার পৃথিবী ভর্তি গুনাহও তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না। –তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১৩
তওহীদে যিনি অবিচলর তার মহাপাপও (গুনাহে কবীরা) হিসাবে ধরা হবে না। –আকিদা, পৃ. ৭
এমনকি চুরি ও ব্যভিচারের মত কবিরা গুনাহকারীও জান্নাতে যাবে যদি সে সাচ্চা, সত্য সত্যই বিশ্বাস করে যে এলাহ,বিধানদাতা, আল্লাহর ছাড়া আর কেউ নেই। –শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৭১
প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কেন তওহীদের গুরুত্ব প্রচার করছি? এই যে কোর’আনের আয়াত ও হাদীসগুলো উল্লেখ করা হলো, যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে কেবল তওহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে ছোট ছোট অপরাধ তো বটেই, এমনকি চুরি, ব্যভিচার, হত্যা সমস্ত অপরাধকেই ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। –তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১৫
মৃত্যুদণ্ডের পরে ইসলামের সবচেয়ে কঠিন দন্ড হচ্ছে চুরি আর ব্যভিচারের যারা এই দুটো জঘন্য অপরাধও করবে তাদেরকেও আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না, যদি সে একমাত্র আল্লাহকেই তার হুকুমদাতা হিসাবে বিশ্বাস ও মান্য করে। –প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৬৫
আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দিলেন- আমার তাওহীদকে, আমার সার্বভৌমত্বকে যে বা যারা স্বীকার কোরে নেবে, তা থেকে বিচ্যুত হবে না তারা কত এবাদত কোরেছে, তারা কত গোনাহ কোরেছে, কিছুই আমি দেখবো না, তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো, তারা ব্যভিচার ও চুরি করলেও। –দাজ্জাল, পৃ. ১৫
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত কথা দ্বারা তারা কয়েকটি দাবী করেছে–
ক. তওহীদে থাকলেই ব্যক্তিগত সকল গুনাহ মাফ।
খ. তওহীদ থাকলে যিনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতী, হত্যার গুনাহও মাফ।
গ. তওহীদ থাকলে সকল কবিরা গুনাহেরও হিসাব লাগবে না।
ঘ. তওহীদ থাকলেই পৃথিবী ভর্তি গুনাহও করলেও জান্নাতে যাবে।
ইসলাম কী বলে?
তাওহীদে বিশ্বাসী হওয়ার পরও গুনাহগারদেরকে কিয়ামতের ময়দানে হিসাবের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। কবীরা গুনাহ তো দূরের কথা, সগীরা গুনাহেরও হিসাব দিতে হবে। এ সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস রয়েছে। কয়েকটি দলিল নিন্মে তুলে ধরলাম। মহান আল্লাহ বলেন,
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
আর ‘আমলনামা’ সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি কোন জুলুম করবেন না। –সুরা কাহাফ : ৪৯
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِّيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
সে দিন মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে, কারণ, তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হবে। সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে। –সুরা যিলযাল : ৬-৮
উপরন্তু হাদিস শরীফে এসেছে, আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন,
يا عائشةُ إِيّاكِ و مُحقَّراتِ الذُّنوبِ فإنَّ لها مِنَ اللهِ طالِبًا
হে আয়েশা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ, সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে। –জামে সগীর, হাদিস নং : ২৯০১
প্রিয় পাঠক! একবার ভেবে দেখুন তো, হযরত আয়েশা রা. কী তাওহীদে অবিচল ছিলেন না? নিশ্চয় ছিলেন, বরং শ্রেষ্ট তাওহীদবাদী ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম রা.। তারপরও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কেন ছোট ছোট গোনাহ থেকেও বাঁচতে বলেছেন? যেখানে আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাবী করছেন, সগীরা বা ছোট গুনাহেরও হিসাব দিতে হবে, সেখানে হেযবুত তওহীদ দাবী করে বসেছে ‘কবিরা গুনাহেরও হিসাব দিতে হবে না'। এটা কত্তবড় গোমরাহি এবং কুফরী বক্তব্য একটু ভাবুন তো। সুতরাং উপরিউক্ত আয়াত ও হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হলো যে, ছোট-বড় যেকোনো গুনাহই হোক না কেন কিয়ামতে তার হিসাব দিতেই হবে।
কোন্ সগীরা গুনাহের হিসাব দেওয়া লাগবে না?
অবশ্য যাদের কবীরা গুনাহ নেই, তাদের সগীরা গুনাহ কিয়ামতে মাফ করে দেয়া হবে। মহান রব বলেন-
إِن تَجْتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلاً كَرِيمًا
তোমাদেরকে যেই বড় বড় গুনাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা যদি তা পরিহার করে চল, তবে আমি নিজেই তোমাদের ছোট ছোট গুনাহ তোমাদের থেকে মিটিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাখিল করব। –সুরা নিসা : ৩১
সুতরাং বুঝা গেলো, কবীরা গুনাহ না থাকলে সগীরা গুনাহ ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু কবীরা গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করা হবে না, বরং কবীরাগুনাহ নিয়ে কবরে গেলে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। যার প্রমাণ অসংখ্য আয়াতে এবং হাদিসে এসেছে। চলুন এখানে কয়েকটি আয়াত এবং হাদিস দেখা যাক।
কিয়ামতে কবীরা গুনাহের হিসাব দিতেই হবে। মহান রব্ব বলেন,
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا
এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মাবুদের ইবাদত করে না এবং আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে বধ করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। যে ব্যক্তিই এরূপ করবে তাকে তার গুনাহের (জাহান্নামে শাস্তির) সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করা হবে এবং সে লাঞ্ছিত অবস্থায় তাতে সদা-সর্বদা থাকবে। –সুরা ফুরকান : ৬৮-৬৯
কিন্তু এ জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য কি করতে হবে সে কথাও আল্লাহ তাআলা বলেছেন সাথে সাথেই।
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
তবে কেউ তাওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে, আল্লাহ এরূপ লোকদের পাপরাশিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। –সুরা ফুরকান : ৭০
প্রিয় পাঠক, দেখুন উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা পাওয়ার জন্য ৩ টি শর্ত দিয়েছেন। ১. তওবা। ২.ঈমান। ৩. সৎকর্ম। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম, শুধু তওহীদে বিস্বাস থাকলেই জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়, বরং গুনাহ হয়ে গেলে তওহীদের প্রতি ঈমান আনার পাশাপাশি আরও দু'টি কাজ করতে হবে। ১. গুনাহ থেকে তওবা। ২. সৎকাজ করা।
উপরন্তু অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত। –সুরা ক্ব-ফ : ১৮
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوَءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ وَاللّهُ رَؤُوفُ بِالْعِبَادِ
(সেই দিনকে স্মরণ রেখো), যে দিন প্রত্যেকে যে যে ভালো কাজ করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে এবং যে মন্দ কাজ করেছে (তাও নিজের সামনে উপস্থিত দেখে) আকাঙ্ক্ষা করবে, তার ও সেই মন্দ কাজের মধ্যে যদি অনেক দূরের ব্যবধান থাকতো! আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ (শাস্তি) সম্পর্কে সাবধান করছেন। আর আল্লাহ নিজ বান্দাদের প্রতি অতি মমতাবান। –সুরা আলে ইমরান : ৩০
يُنَبَّأُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ بَلِ الْإِنسَانُ عَلَى نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ وَلَوْ أَلْقَى مَعَاذِيرَهُ
সে দিন সকল মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হবে সে কী আগে পাঠিয়েছে আর কী পেছনে রেখে গিয়েছে। বরং মানুষ নিজেই নিজের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। যদিও সে নানা অজুহাত পেশ করে। –সুরা কিয়ামাহ : ১৩-১৫
অভিশপ্ত শয়তান ও ঈমান
প্রিয় পাঠক, এ বিষয়ে বলার আগে চলুন ইবলিসের পরিচয় জেনে নেয়া যাক। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
كَانَ إِبْلِيسُ اسْمُهُ عَزَازِيلُ وَكَانَ مِنْ أَشْرَافِ الْمَلَائِكَةِ
ইবলিসের নাম ছিলো 'আযাযিল' এবং সে ফিরিস্তাদের মধ্যে সবচে সম্মানিত ছিলো। –তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ১ পৃ. ৩৫৮
কিন্তু এতদ্বসত্বেও আযাযিল ইবলিসে পরিনত হলো কেন? মহান রব বলেন,
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ
সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমের সামনে সিজদা করো। তখন সকলেই সিজদা করল এক ইবলীস ছাড়া। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল। –সুরা কাহাফ : ৫০
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
এবং (সেই সময়ের আলোচনা শোনো), যখন আমি ফিরিশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো। ফলে, তারা সকলে সিজদা করলো, কিন্তু ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল ও দর্পিত আচরণ করল এবং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। –সুরা বাকারা : ৩৪
প্রিয় দ্বীনি ভাই, এখানে একটি বিষয় খুব ভাবুন, ইবলিসের আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাস নিশ্চয় ছিলো। শুধু বিশ্বাসই ছিলো না, বরং ফিরিস্তাদের মধ্যে সবচে সম্মানিত এবং বেশি ইবাদতগুজার ছিলো। কিন্তু সে আল্লাহর কাছ থেকে বিতাড়িত হলো কেন? শুধু আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন ও অহংকারের কারণে। আর আল্লাহর বিধান অমান্য করা বা অহংকার করা উভয়টি কিন্তু কবীরা গুনাহ। আর এ কবীরাগুনাহের কারণে কিন্তু ইবলিস বিতাড়িত হয়েছিলো। আর সে পরবর্তিতে মানুষের মাঝে শিরক-কুফর চালু করার কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। সুতরাং বুঝা গেলো, কবীরা গুনাহের কারণে মানুষকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
গুনাহের খারাবি
শুধু কিয়ামতে নয়, বরং দুনিয়াতেও গুনাহের শাস্তি রয়েছে। নিন্মে কয়েকটি শাস্তির আলোচনা করা হলো।
এক. গুনাহগারকে দুনিয়াতেও শাস্তি দেয়া হয়। মহান রব বলেন,
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُواْ بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُواْ يَفْسُقُونَ
তাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা যখন তারা ভুলে গেলো, তখন অসৎ কাজে যারা বাধা দিচ্ছিল তাদেরকে তো আমি রক্ষা করি। কিন্তু যারা সীমালংঘন করেছিল, উপর্যুপরি অবাধ্যতার কারণে তাদেরকে এক কঠোর শাস্তি দ্বারা আক্রান্ত করি। –সুরা আরাফ : ১৬৫
দুই. গুনাহের কারণেই দুনিয়াতে গজব নামে। মহান রব বলেন,
ظَهَرَ ٱلۡفَسَادُ فِی ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ بِمَا كَسَبَتۡ أَیۡدِی ٱلنَّاسِ لِیُذِیقَهُم بَعۡضَ ٱلَّذِی عَمِلُوا۟ لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُونَ
মানুষ নিজ হাতে যা কামায়, তার ফলে স্থলে ও জলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কতক কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করাবেন বলে, হয়ত (এর ফলে) তারা ফিরে আসবে। –সুরা রুম : ৪১
ইসলামে হত্যা
হেযবুত তওহীদের দাবী ছিলো, 'কেবল তওহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে ছোট ছোট অপরাধ তো বটেই, এমনকি চুরি, ব্যভিচার, হত্যা সমস্ত অপরাধকেই ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। –তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১৫
অথচ হত্যাকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে জেনেশুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি গযব নাযিল করবেন ও তাকে লানত করবেন। আর আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। –সুরা নিসা : ৯৩
ইসলামে চুরি
চোরদের ব্যাপারে মহান রব্ব বলেন,
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
যে পুরুষ ও যে নারী চুরি করে, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও, যাতে তারা নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিফল পায় (এবং) আল্লাহর পক্ষ হতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আল্লাহ ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়। –সুরা আল-মায়িদা : ৩৮
এ ছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরাহ রা. সূত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ البَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ وَيَسْرِقُ الحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ
চোরের উপর আল্লাহর লা‘নত হোক, যখন সে একটি হেলমেট চুরি করে এবং এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৬৭৯৯
এজন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হত্যা ও চুরিকে হারাম ঘোষণা করেছেন। হযরত আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأمْوَالَكُمْ وَأعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ
তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-মাল ও তোমাদের ইজ্জত-সম্মানে হস্তক্ষেপ তোমাদের উপর হারাম। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৭৩৯
ইসলামে যিনা-ব্যভিচার
ব্যাভিচার একটা জঘন্য অপরাধ ও কবীরা গুনাহ। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে মহান রব বলেন-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
এবং ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। –সুরা ইসরা : ৩২
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا
এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মাবুদের ইবাদত করে না এবং আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে বধ করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। যে ব্যক্তিই এরূপ করবে তাকে তার গুনাহের (শাস্তির) সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করা হবে এবং সে লাঞ্ছিত অবস্থায় তাতে সদা-সর্বদা থাকবে। –সুরা ফুরকান : ৬৮-৬৯
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
বলে দাও, আমার প্রতিপালক তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজসমূহ প্রকাশ্য হোক বা গোপন এবং সর্বপ্রকার গুনাহ, অন্যায়ভাবে (কারও প্রতি) সীমালংঘন, আল্লাহ যে সম্পর্কে কোনও প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, এমন জিনিসকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্তকরণ এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলাকে, যে সম্পর্কে তোমাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। –সুরা আরাফ : ৩৩
যিনা, মদ্যপান, চুরি, ডাকাতির সময় ঈমান থাকে না
হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلا يَشْرَبُ الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلا يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ
কোনো ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে। –সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৪৭৫
প্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত আয়াত এবং হাদিসগুলো থেকে প্রমাণ হলো যে, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ব্যাভিচার, সুদ, মদপান ইত্যাদীকে ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এসব কাজে লিপ্ত অবস্থায় ঈমানের খতরা রয়েছে। এসব অপরাধীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর (স্থিরীকৃত) সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।। –সুরা নিসা : ১৪
উপরিউক্ত আয়াত এবং হাদিসগুলো থাকার পরও কী এ কথা বলার সুযোগ আছে যে, ঈমান থাকলে আর কোনো গুনাহই তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না? এমন কথা যারা বলে, তারা আদৌ মুসলিম থাকতে পারে?
হেযবুত তওহীদের দলীল
এ প্রসঙ্গে তারা যে দলীলটি পেশ করে থাকে, তা হলো–হযরত আবু যর গিফারী রা. বলেন,
أَتَيْتُ النبيَّ ﷺ وعليه ثَوْبٌ أبْيَضُ وهو نائِمٌ ثُمَّ أتَيْتُهُ وقَدِ اسْتَيْقَظَ فَقالَ ما مِن عَبْدٍ قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ ثُمَّ ماتَ على ذلكَ إلّا دَخَلَ الجَنَّةَ قلت وإنْ زَنى وإنْ سَرَقَ؟ قالَ وإنْ زَنى وإنْ سَرَقَ قلت وإنْ زَنى وإنْ سَرَقَ قال وإنْ زَنى وإنْ سَرَقَ قُلتُ وإنْ زَنى وإنْ سَرَقَ قال وإنْ زَنى وإنْ سَرَقَ
আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আসলাম। দেখলাম, তিনি সাদা কাপড় শরীর মোবারকের উপরে দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। পরে আবার এসে জাগ্রত দেখলাম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে সে মৃত্যুর পর জান্নাতে যাবে। আবু যর রা. তখন বললেন, যদি সে যিনা ব্যভিচার করে তবুও? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যদি যিনা ব্যাভিচার করে তবুও। আবু যর রা. বললেন, যদি সে যিনা ব্যভিচার করে তবুও? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যদি যিনা ব্যাভিচার করে তবুও। আবু যর রা. বললেন, যদি সে যিনা ব্যভিচার করে তবুও? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যদি যিনা ব্যাভিচার করে তবুও। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৮২৭
উক্ত হাদিস দ্বারা তো বুঝা যাচ্ছে, শুধু তওহীদে থাকলেই কবীরা গুনাহ হলেও জান্নাত নিশ্চিত।
জবাব
এটা হলো হেযবুত তওহীদের বড় ভ্রষ্টতা ও মুর্খতা যে, তারা একটি হাদিস দেখেই ফতাওয়া দিয়ে দেয়। অথচ তাদের জানা থাকা দরকার, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থেকে প্রায় ১০ লাখ হাদিস রয়েছে। এই একটি হাদিস দেখেই ফতাওয়া দিলে উপরোল্লিখিত আয়াত-হাদিসসহ আরও অগণিত আয়াত হাদিস যে বাদ দিতে হবে, সেটার কিন্তু খেয়াল তারা করলো না। তবে এ হাদিসের ক্ষেত্রে তিনটি জবাব লক্ষনীয়।
এক. কোনো মুমিন যিনা-ব্যাভিচার বা যে-কোনো কবীরা গুনাহ করে, দুনিয়া থেকেই যদি তওবা করে যায়, তাহলে আখেরাতে ক্ষমা পাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
তবে কেউ তাওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে, আল্লাহ এরূপ লোকদের পাপরাশিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। –সুরা ফুরকান : ৭০
দুই. তওবা করে না গেলেও আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে মুমিনদের কাউকে শুরুতেই মাফ করতে পারেন। কারণ কুরআন শরীফে এসেছে,
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ وَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
তুমি কি জানো না, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রাজত্ব কেবল আল্লাহরই? তিনি যাকে চান শাস্তি দেন এবং যাকে চান ক্ষমা করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। –সুরা মায়িদা : ৪০
তিন. উপরোক্ত হাদিসটি ব্যখ্যা সাপেক্ষ। অর্থাৎ হাদিসে যে বলা হচ্ছে- যিনা-ব্যাভিচার করলেও জান্নাতে যাবে। এর অর্থ হলো 'গুনাহের কারণে শুরুতে জাহান্নামে যাবে। আর তওহীদের কারণে একদিন সে আবার জান্নাতে ফিরে আসবে। আর এ কথাটি আমার বানানো জবাব নয়, বরং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আরেকটি হাদিসেই প্রমাণ রয়েছে। হযরত আনাস রা. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
يَخْرُجُ مِنَ النّارِ مَن قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ، وفي قَلْبِهِ وزْنُ شَعِيرَةٍ مِن خَيْرٍ، ويَخْرُجُ مِنَ النّارِ مَن قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ، وفي قَلْبِهِ وزْنُ بُرَّةٍ مِن خَيْرٍ، ويَخْرُجُ مِنَ النّارِ مَن قالَ لا إلَهَ إلّا اللَّهُ، وفي قَلْبِهِ وزْنُ ذَرَّةٍ مِن خَيْرٍ
যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাহ বলেছে এবং অন্তরে যব পরিমান নেকি থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং তাকেও বের করা হবে যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং আমল নামায় গম পরিমান নেক রয়েছে এবং তাকেও বের করা হবে যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং অন্তরে অনুপরিমান নেকি রয়েছে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৪
প্রিয় পাঠক! উক্ত হাদিসে বলা হলো তওহীদ থাকলেও জাহান্নামে যাবে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করে একদিন ঈমানের কারণে সে আবার বের করা হয়ে জান্নাতে যাবে। কারণ বেঈমানদের কোনো মুক্তি নেই। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يَلْقى إبْراهِيمُ أباهُ فيَقولُ يا رَبِّ إنَّكَ وعَدْتَنِي أنْ لا تُخْزِيَنِي يَومَ يُبْعَثُونَ، فيَقولُ اللَّهُ: إنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ على الكافِرِينَ
(কিয়ামতের দিন) ইবরাহীম আ. তাঁর বাবা (আযরের) সাথে দেখা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলাকে বলবেন, হে আল্লাহ–আপনি কি আমার সাথে ওয়াদা করেননি যে, আমাকে কেয়ামতের দিন অপমানিত করবেন না? তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৭৬৯
অর্থাৎ বেঈমানদের কোনো মুক্তি হবে না। তবে ঈমানদারগণ শাস্তি ভোগ করে একদিন জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতে যাবে। আর এ কথাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লালাহ বলবে সে জান্নাতে যাবে। সে যিনা করুক বা চুরি করুক। একদিন না একদিন জান্নাতে যাবে।
হেযবুত তওহীদের এ অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্য কী?
এ হাদিসটি নিয়ে অপব্যখ্যা করে হেযবুত তওহীদে তাদের সদস্যদের অন্তরে কৌশলে গুনাহের ভয় উঠিয়ে সবাইকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর মানুষ তো সহজ ইসলাম খুঁজে। ফলে দাজ্জালের এ ফাঁদে পা দিয়ে তারা মূলত জাহান্নামের পথিকই হচ্ছে।
স্ববিরোধী বক্তব্য:
তবে চোর চুরি করলেও নিশানা রেখে যায়। এমনটিই করেছে এ কুফরী সংগঠন হেযবুত তওহীদ। কারণ তারা এক জায়গায় তাদের অজান্তেই তাদের মতবাদ বিরোধী কথা লিখে ফেলেছে,
যারা তাঁর সার্বভৌমত্বকে (Sovereignty) স্বীকার করে নিয়ে নবী-রসূলদের মাধ্যমে পাঠানো আইন-কানুন, আদেশ-নিষেধকে তাদের সমষ্ঠিগত জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ কোরবে, তাদের তিনি গ্রহণ করবেন, ব্যক্তিগত সমস্ত অপরাধ, গোনাহ মাফ করে তাদের জান্নাতে স্থান দেবেন। –দাজ্জাল, পৃ. ১২
মানুষ শুধু দেহসর্বস্ব নয়, সে দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে গঠিত একটি সামাজিক জীব। শুধু ইহকাল নয়, তার পরকালও আছে। মানুষের আত্মারই তার পরিচালক, তাই তাকে অবশ্যই এই শিক্ষা দিতে হবে যে তার প্রত্যেকটি কাজ ও চিন্তা প্রত্যক্ষ করছেন এবং হিসাব রাখছেন একজন সর্বশ্রেষ্ঠ, ক্ষমতাবান স্রষ্টা। প্রতিটি মানুষকে একদিন যাবতীয় কর্মের হিসাব দিতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে, তার জন্য পুরস্কার ও কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। –গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৪১
সুতরাং প্রমাণ হলো, কিয়ামতে শুধু তাওহীদে ঈমান থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে না। অবশ্যই গুনাহের জন্য জাহান্নামে যেতে হবে। তবে আল্লাহ যদি কাউকে দয়া করে ক্ষমা করে দেন, সেটা তাঁর দয়া। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়ম হলো, গুনাহগারকে অবশ্যই জাহান্নামে যেতে হবে। শাস্তি শেষে বা আল্লাহ যখন চান তখন মুমিনদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। সুতরাং বুঝা গেলো, প্রত্যেকটা গুনাহের হিসাব দিতে সবাইকে তৈরি থাকতে হবে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ যে দাবী করেছে, তা নিতান্তই গোমরাহি ও ভ্রষ্টতা। মহান রব্ব আমাদেরকে তাদের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে হিফাযত করেন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ (৬ষ্ঠ পর্ব)
তাওরাত সম্পর্কে পৌলের অভিমত কিন্তু সেন্ট পৌলের অভিমত এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি তাওরাতকে একখানি বাতিল ...
খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ (৫ম পর্ব)
শূলবি দ্ধ হওয়ার বিশ্বাস হযরত ঈসা (আ)-এর সম্পর্কে খ্রিষ্টধর্মের বিশ্বাস হল, ইহুদীরা তাঁকে পন্থীয় পী...
সত্য ইমাম মাহদী ও ভণ্ড ইমাম মাহদী [১ম পর্ব]
...
খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ (৭ম ও শেষ পর্ব)
খৃষ্টধর্ম কি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী ধর্ম কোন ধর্মের দাওয়াত ও প্রচারের জন্য ধর্মের কার্যকরিতা জরুরি...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন