আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২১- হজ্জ্বের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬৩০
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৩৯
১০৯২. মিনার দিনগুলোতে খুতবা প্রদান।
১৬৩০। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্যে একটি খুতবা দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন দিন ? সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। তারপর তিনি বললেনঃ এ শহরটি কোন শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। তারপর তিনি বললেনঃ এ মাসটি কোন মাস? তারা বললেনঃ সম্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইযযত-হুরমত তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত, যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি, তোমাদের এ শহরে এবং তোমাদের এ মাসে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন।
পরে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌছিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়েছি? ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অসীয়ত। (নবী (ﷺ) আরো বললেনঃ) উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌছিয়ে দেয়। আমার পরে তোমরা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।
باب الْخُطْبَةِ أَيَّامَ مِنًى
1739 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا فُضَيْلُ بْنُ غَزْوَانَ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ النَّاسَ يَوْمَ النَّحْرِ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَيُّ يَوْمٍ هَذَا؟» ، قَالُوا: يَوْمٌ حَرَامٌ، قَالَ: «فَأَيُّ بَلَدٍ هَذَا؟» ، قَالُوا: بَلَدٌ حَرَامٌ، قَالَ: «فَأَيُّ شَهْرٍ هَذَا؟» ، قَالُوا: شَهْرٌ حَرَامٌ "، قَالَ: «فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا» ، فَأَعَادَهَا مِرَارًا، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: " اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ، اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ - قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّهَا لَوَصِيَّتُهُ إِلَى أُمَّتِهِ، فَلْيُبْلِغِ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا، يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি বিদায় হজ্জের ভাষণের একটি অংশ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হজ্জে মিনায় ও আরাফায় একাধিকবার ভাষণ দিয়েছিলেন। সবগুলো ভাষণের সমষ্টিকে বিদায় হজ্জের ভাষণ বলা হয়ে থাকে। তিনি এ ভাষণের একপর্যায়ে বলেছিলেনঃ-

لعلي لا ألقاكم بعد عامي هذا

সম্ভবত এ বছরের পর তোমাদের সঙ্গে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১২৯৭: সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৯৭০: সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩০৬২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৮৮৬

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ আদায়ের পর মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে আসেন। পরবর্তী বছর অর্থাৎ হিজরী ১১ সালের মুহাররাম ও সফর মাস অতিবাহিত হয়ে যায়। তারপর রবীউল আউওয়ালের প্রথম দশকে তাঁর ওফাত হয়ে যায়। এভাবে তিনি সম্ভবত এ বছরের পর তোমাদের সঙ্গে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না বলে যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন তা সত্যে পরিণত হয়ে যায়। আর তখনই সাহাবায়ে কিরাম বুঝতে পারেন যে, ওই হজ্জই ছিল তাঁর বিদায় হজ্জ। তাতে প্রদত্ত ভাষণ দ্বারা তিনি তাদের থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন এবং সে ভাষণে তাদেরকে বিদায়ী অসিয়ত করেছেন।

হিজরতের পর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাত্র একবারই হজ্জ করেছেন এবং তা এ বিদায় হজ্জই। এর আগে ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয় হয়েছে। মক্কাবিজয়ের আগে তো হজ্জ করা সম্ভবই ছিল না। আর মক্কাবিজয়ের পর ৯ম সালে সে সুযোগ ছিল বটে, কিন্তু সে বছর তিনি হজ্জে নিজে না গিয়ে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-কে হজ্জের আমীর করে পাঠান। সে বছর তাঁর নেতৃত্বেই হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়।

হিজরী ৯ম সনে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্জ না করার কারণ
হিজরী ৯ম সনের হজ্জে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের না যাওয়ার কারণ হয়তো এই ছিল যে, তখনও পর্যন্ত মুশরিকরা হজ্জ করত। তারা হজ্জ করত তাদের প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী। কুরায়শ ও তাদের মিত্র গোত্রসমূহ (যাদেরকে হুমস বলা হত) ছাড়া আর কেউ নিজেদের কাপড় পরে হজ্জ করতে পারত না। কুরায়শ বা তাদের মিত্র গোত্রসমূহের কাছ থেকে কাপড় না পেলে তারা উলঙ্গ হয়েই তাওয়াফ করত। তাছাড়া এমনিই মুশরিকগণ আকীদাগতভাবে অপবিত্র। তাদের জন্য হজ্জের অনুমতি থাকতে পারে না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا

হে মুমিনগণ! মুশরিকরা তো আপাদমস্তক অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর যেন তারা মসজিদুল হারামের নিকটেও না আসে। (সূরা তাওবা (১), আয়াত ২৮)

তদুপরি নগ্ন হয়ে তাওয়াফ! এ কারণে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচ্ছিলেন পবিত্র কা'বা ও হজ্জের অনুষ্ঠানাদিকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত করতে। সুতরাং তিনি ৯ম হিজরীর হজ্জে হযরত আলী রাযি.-এর নেতৃত্বে একদল ঘোষক দিয়ে ঘোষণা দেওয়ান যে-

أن لا يحج بعد العام مشرك ولا يطوف بالبيت عريان

আগামী বছর থেকে কোনও মুশরিক হজ্জ করতে পারবে না এবং কেউ নগ্ন অবস্থায় তাওয়াফ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৪৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৯৪৬)

যেহেতু ৯ম হিজরীর হজ্জকালে এ কদর্যতা বিদ্যমান ছিল, তাই তিনি এ বছর নিজে হজ্জ করা থেকে বিরত থাকেন এবং পরবর্তী বছরের হজ্জ এ কদর্যতা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে গেলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন।

তাছাড়া ৯ম হিজরীর হজ্জে তাঁর অংশগ্রহণ করা এ কারণেও কঠিন ছিল যে, ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয় হয়ে যাওয়ার পর আরবের বিভিন্ন গোত্রসমূহ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছিল আর সে লক্ষ্যে তারা একের পর এক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছিল। পূর্ণ ৯ম হিজরী সালটি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে ব্যস্ততার মধ্যেই কাটাতে হয়। প্রতিনিধি দলসমূহকে সাক্ষাৎকার দেওয়া এবং তাদেরকে দীনের মৌলিক বিষয়াবলীর সঙ্গে পরিচিত করা ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এবং এটি ছিল তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় বিষয়। হজ্জ আদায় করা ফরয হলেও যেহেতু তাতে অবকাশ থাকে যে, নগদ না করে তা পরেও করা যায়, সম্ভবত সেজন্যও নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হজ্জ আদায়কে পরবর্তী বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন সমাধাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

মু'মিনদের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা দেওয়ার তাকিদ
মুমিনদের জান, মাল ও ইজ্জত যে কতটা মর্যাদাপূর্ণ এবং সে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা যে কত কঠিন পাপ তা বোঝানোর জন্য নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা, পবিত্র হজ্জের মাস এবং পবিত্র হজ্জের দিবসকে উপমা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মর্যাদাপূর্ণ মাসসমূহ

বারো মাসের ভেতর চারটি মাস হচ্ছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ- যূ কা'দা, যুলহিজ্জা, মুহাররম ও রজব। কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ-

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে আল্লাহর কিতাবে (অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে) মাসের সংখ্যা বারটি, সেই দিন থেকে, যেদিন আল্লাহ আকাশণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটাই সহজ-সরল দীন (-এর দাবি)। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। (সূরা তাওবা (৯), আয়াত ৩৬)

নিজেদের প্রতি জুলুম হয় পাপকর্ম দ্বারা। পাপকর্ম সবসময়ই নিষেধ। কাজেই এ মাসসমূহে তা করতে নিষেধ করার মানে এ সময় পাপকর্ম করা অধিকতর মন্দ। এর মধ্যে আবার যুলহিজ্জা মাসের গুরুত্ব আরও বেশি, যেহেতু এ মাসে হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রথম দশদিন তো এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, কুরআন মাজীদে এর কসমও করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ

শপথ ফজর-কালের এবং দশ রাতের। (সূরা ফাজর (৮৯), আয়াত ১-২)

পবিত্র মক্কা নগরীর মর্যাদা
তারপর পবিত্র মক্কা নগরও অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এ নগর এবং এর চারপাশের একটা নির্দিষ্ট এলাকাকে, যা হারাম বা মর্যাদাপূর্ণ এলাকা নামে অভিহিত, আল্লাহ তা'আলা নিরাপদ ও সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা দিয়েছেন। কুরআন মাজীদের কোথাও এর নাম দিয়েছেন 'হারাম' (মর্যাদাপূর্ণ ও নিষিদ্ধ), কোথাও নাম দিয়েছেন 'আমীন' (নিরাপদ)। আর এভাবে আল্লাহ তাআলা বাইতুল্লাহ শরীফ, মসজিদুল হারাম ও তার চতুষ্পার্শ্বস্থ হারামের বিস্তীর্ণ এলাকাকে এমন মর্যাদাপূর্ণ করেছেন যে, এর ভেতর নরহত্যা, তীব্র প্রতিরক্ষামূলক প্রয়োজন ব্যতীত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও কোনও পশু শিকার জায়েয নয়। এমনকি কোনও গাছ-বৃক্ষ উপড়ানো কিংবা কোনও প্রাণীকে আটকে রাখার অনুমতি নেই। এভাবে এটা কেবল মানুষেরই নয়, বরং জীব-জন্তু ও উদ্ভিদের জন্যও নিরাপত্তাস্থল। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-

يا أيها الناس! إن الله حرم مكة يوم خلق السماوات والأرض، فهي حرام إلى يوم القيامة ، لا يعضد شجرها ولا ينفر صيدها ولا يأخذ لقطتها إلا منشد

হে মানুষ! আল্লাহ তা'আলা মক্কাকে হারাম করেছেন ওইদিন থেকে, যেদিন তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এটি কিয়ামত পর্যন্ত হারামই থাকবে। এর গাছ কাটা যাবে না, এর শিকার (ক্ষতিকর নয় এমন পশুপাখি) -কে ভীত-সন্ত্রস্ত করা যাবে না এবং প্রচারকারী ছাড়া অন্য কেউ এখানকার রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা বস্তু তুলবে না। (সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩১০৯, বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩৭১৮)

পবিত্র এ নগরের মর্যাদাহানিকর যে-কোনও কাজ করা কঠিন পাপ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা সতর্ক করেনঃ-

وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

আর যে-কেউ এখানে জুলুমে রত হয়ে বাঁকা পথের (অর্থাৎ এখানকার বিধানাবলী লঙ্ঘনের) ইচ্ছা করবে আমি তাকে মর্মন্তুদ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব। (সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ২৫)

এক তো চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। তার মধ্যে আবার যুলহিজ্জা অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন মাস। দ্বিতীয়ত মক্কা নগর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থান। তারপর পবিত্র হজ্জের দিনের যে কী মর্যাদা তা সকলেরই জানা। তো কেউ যদি এহেন পবিত্র মাসে, এ পবিত্র নগরে এবং এ পবিত্র দিনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে শরী'আতবিরোধী কোনও কাজে লিপ্ত হয়, তবে তা কতই না কঠিন ও গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য হবে!

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু'মিনদের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা ও সে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করাকে যুলহিজ্জা মাসে পবিত্র হারামের ভেতর হজ্জের দিনের মর্যাদা ও সে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার সঙ্গে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ মুমিনদের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা ঠিক ওইরকম এবং এ মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার পাপও ওই পাপতুল্য।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
প্রশ্ন হতে পারে, মুমিনদের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা তো পবিত্র মাস, পবিত্র মক্কা নগর ও পবিত্র হজ্জের দিন অপেক্ষাও বেশি, আর নিয়ম হচ্ছে কোনও জিনিসকে অন্য কোনও জিনিসের সঙ্গে তুলনা করা যায় কেবল তখনই, যখন উভয়ের মধ্যকার সাধারণ গুণটি উপমেয় অপেক্ষা উপমানের মধ্যে বেশি থাকবে, অর্থাৎ যাকে তুলনা করা হয় তারচে' যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তার মধ্যে বেশি থাকবে, কিন্তু এস্থলে যখন মু'মিনদের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা তুলনামূলক বেশি, তখন তুলনামূলক কম মর্যাদাসম্পন্ন বিষয়ের সঙ্গে তার তুলনা করা হল কিভাবে? মুমিনদের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা যে আরও বেশি তা স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ দ্বারাই জানা যায়। একবার তিনি পবিত্র কা'বার দিকে লক্ষ করে ইরশাদ করেনঃ-

ما أطيبك وأطيب ريحك ! ما أعظمك وأعظم حرمتك! والذي نفس محمد بيده لحرمة المؤمن أعظم عند الله حرمة منك ماله ودمه

কতই না পবিত্র তুমি এবং কতই না পবিত্র তোমার সুরভি! কতই না মহান তুমি এবং কতই না মহান তোমার মর্যাদা! তবে সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আল্লাহর কাছে মুমিন ব্যক্তির জান-মালের মর্যাদা তোমার মর্যাদার চেয়েও বেশি। (সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৯৩২: তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৬৯৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬২৮০;)

এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, জাহিলী যুগে মানুষের অন্তরে পবিত্র মাস, পবিত্র নগর ও পবিত্র হজ্জের দিনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের কোনও মর্যাদা তাদের কাছে ছিল না। মানুষকে হত্যা করা, মানুষের মাল কেড়ে নেওয়া ও তার ইজ্জতের ওপর আঘাত হানা তাদের দৃষ্টিতে কোনও অন্যায় বলেই বিবেচিত ছিল না। তুচ্ছ তুচ্ছ কারণে তারা মানুষের জান, মাল ও ইজ্জত হরণ করত। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে যদিও মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদাই বেশি, কিন্তু তারা যেহেতু এ মর্যাদার সঙ্গে পরিচিত ছিল না, তাই যে জিনিসের মর্যাদা তাদের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত ছিল তার সাথে তুলনা করে তাদের অন্তরে এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

সন্দেহ নেই যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এ প্রচেষ্টায় পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন। সাহাবায়ে কিরাম কেবল মু'মিন-মুসলিমই নয়, যে-কোনও মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা রক্ষায় কতটা সচেতন ছিলেন, ইতিহাসই তার সাক্ষী। কিন্তু আমরা তাঁর শিক্ষা থেকে অনেক দূর সরে গিয়েছি। মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা রক্ষায় আমরা সচেতন তো নই-ই; বরং ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তা ক্ষুণ্ণ করছি। ফলে আখিরাতের ক্ষতি তো আপন জায়গায় আছেই, দুনিয়ায়ও আমরা ভয়াবহ ক্ষতির মধ্যে পড়ে গিয়েছি। এখন প্রত্যেকেই নিজ জান, মাল ও ইজ্জত নিয়ে শঙ্কিত। কখন কিভাবে কোন দিক থেকে বিপদ চলে আসে তার ঠিকানা নেই।

এ সর্বব্যাপী নিরাপত্তাহীনতার কবল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে, যাতে মানুষের এ তিন হকের কোনও হকই আমার দ্বারা ক্ষুণ্ণ না হয়। অন্যের এ তিন মৌলিক হক প্রত্যেকের কাঁধে অর্পিত অতি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। কারও দ্বারা এর কোনও একটি ক্ষুণ্ণ হলে তা কঠিন জুলুম ও খেয়ানতরূপেই গণ্য হবে এবং সেজন্য আল্লাহ তা'আলার আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আর এর আগের হাদীছ দ্বারা আমরা জেনেছি সে বিচার হবে হকের বিপরীতে নিজের নেকী দেওয়া এবং অন্যের গুনাহের ভার গ্রহণের সুরতে, যা কেবল জাহান্নামে যাওয়াকেই অবধারিত করবে। আল্লাহ জাল্লা শানুহ আমাদেরকে সচেতন হওয়ার তাওফীক দান করুন।

রিসালাতের দায়িত্ব আদায়ের সাক্ষ্য

বিদায় হজ্জের ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত জনমণ্ডলীর সামনে প্রশ্ন রেখেছিলেন যে, আমি কি তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিলাম? অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যা-কিছু পৌছানোর আদেশ আমাকে করা হয়েছে, আমি কি তা পুরোপুরি তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছি? সবাই বললেন, হাঁ। এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ-

أيها الناس! إنكم مسؤولون عني، فما أنتم قائلون؟ قالوا نشهد أنك قد بلغت وأديت الأمانة

হে লোকসকল! তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? তারা উত্তর দিলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব আপনি (আল্লাহর বার্তা আমাদের কাছে) পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১২১৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ১৯০৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩০৭৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৯৩৪; খুলাসাতুল ওয়াফা বিআখবারি দারিল মুস্তাফা, খ. ১, পৃ. ৪৪৬: তাফসীরে ইবন কাছীর, খ. ৩, পৃ. ১৩৭)
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উত্তর পেয়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বললেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। তিনি তিনবার এ কথা বললেন।

তিনি কেন আল্লাহকে সাক্ষী রাখলেন? এর উত্তর এই যে, আল্লাহ তা'আলা নবী রাসূলগণকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন মানুষের হিদায়াতের জন্য। তাঁদের ওপর এক কঠিন যিম্মাদারী ছিল আল্লাহর বার্তা ও তাঁর বিধি-বিধান মানুষের কাছে পৌঁছানো। তা পৌঁছাতে গিয়ে তাদেরকে কঠোর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সবরকম নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তাঁরা তাঁদের সে দায়িত্বপালন থেকে সরে তো দাঁড়ানইনি; বিন্দুমাত্র শিথিলতাও করেননি। তাঁদের কওম তাঁদের পক্ষ থেকে কিছুটা ছাড়ের বিনিময়ে আপোষ প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ও ওহীর বাণী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সম্পূর্ণ আপোষহীন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কখনও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেও রাজি হননি; বরং রাজি থেকেছেন জান দিয়ে দিতে।

এ ধারার সর্বশেষ নবী ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি ছিলেন কিয়ামত পর্যন্তকার জন্য সারা বিশ্বের সমস্ত মানুষের নবী। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে সর্বাপেক্ষা বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু শত বাধার মুখেও তিনি আল্লাহর বার্তা পৌঁছানোর ব্যাপারে ছিলেন অটল অবিচল। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হুকুম ছিলঃ-

يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ

হে রাসূল! তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা-কিছু নাযিল করা হয়েছে, তা প্রচার কর। যদি (তা) না কর, তবে (তার অর্থ হবে) তুমি আল্লাহর বার্তা পৌঁছালে না। (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৬৭)

তিনি যে সকল বাধা উপেক্ষা করে আল্লাহর এ হুকুম যথাযথভাবে পালন করেছেন। এবং রিসালাতের যিম্মাদারী পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছেন, প্রথমত সে সাক্ষ্য সাহাবায়ে কিরাম থেকে নিয়েছেন। তারপর সাহাবায়ে কিরামের সে সাক্ষ্যের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাকে সাক্ষ্য রেখে আপন যিম্মাদারী পালনের ব্যাপারে নিজ সন্তোষ জ্ঞাপন করেছেন। তিনি যেন বলছেন, হে আল্লাহ! আপনি দেখুন এরা সাক্ষ্য দিচ্ছে—আপনি যে যিম্মাদারী আমার প্রতি অর্পণ করেছিলেন, আমি তা পুরোপুরি পালন করেছি।

যে-কোনও প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের হুকুম পালন করে তৃপ্তিবোধ করে থাকে। নবী রাসূলগণ শ্রেষ্ঠতম আল্লাহপ্রেমিক। সেই শ্রেষ্ঠতম আল্লাহপ্রেমিকদের শিরোমণি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দায়িত্ব পালনের সপক্ষে যখন হাজারও সাহাবী সমস্বরে সাক্ষ্যদান করল, তখন তিনি কতটা পরিতৃপ্তি ও কী পরিমাণ আনন্দ লাভ করেছিলেন তা কি ভাবা যায়? বস্তুত আল্লাহকে সাক্ষী রাখা ছিল তাঁর এ মহাপ্রেমিকের সে দায়িত্ব পালনজনিত পরিতৃপ্তিরই বহিঃপ্রকাশ।

আল্লাহকে সাক্ষী রাখার এ অর্থও হতে পারে যে, হাশরের ময়দানে অন্যান্য নবীর উম্মতগণ আপন আপন নবীর দাওয়াত ও তাবলীগের কথা অস্বীকার করবে। তখন সকল নবী এ উম্মতকে তাদের পক্ষে সাক্ষী মানবে। এ উম্মত সাক্ষ্য দেবে যে, হা নবী তাদের উম্মতের কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়েছিলেন। তখন যাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগের কথা অস্বীকার করতে না পারে, সে লক্ষ্যে তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে তাদের কাছ থেকে তাঁর দায়িত্ব পালনের পক্ষে স্বীকারোক্তি আদায় করে নিয়েছেন এবং সে স্বীকারোক্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলাকে সাক্ষী রেখেছেন।

বিদ'আতী কাজের কদর্যতা

প্রকাশ থাকে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ যে পুরোপুরিভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন, তার সুস্পষ্ট অর্থ হচ্ছে তিনি আমাদের কাছে আল্লাহপ্রদত্ত পরিপূর্ণ দীনই পৌছিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং এ দীনে যেমন কোনও কাটছাটের সুযোগ নেই, তেমনি নতুন কিছু যোগ করারও অবকাশ নেই। কাজেই কেউ যদি দীনের নামে নতুন কিছু যোগ করে, তবে সেরকম বিদ'আতী কর্ম দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতী কর্মের পরিপূর্ণতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। যেন সে বলতে চাচ্ছে, তিনি আমাদের কাছে পরিপূর্ণ দীন পৌঁছিয়ে যাননি, আমি আমার এ নতুন সংযোজন দ্বারা তা পরিপূর্ণ করছি—না উযুবিল্লাহি মিন যালিক! নববী দাওয়াত ও দীনের পরিপূর্ণতার ওপর কী কঠিন আঘাত! বস্তুত বিদ'আতী কাজকর্ম দ্বারা দীনের পরিপূর্ণতার ওপরই আঘাত করা হয়। তাই এর থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের অবশ্যকর্তব্য।


পরস্পর মারামারি ও হানাহানির প্রতি নিষেধাজ্ঞা
বিদায় হজ্জের ভাষণ সম্পর্কিত এ বর্ণনার সর্বশেষ কথা হচ্ছে-

لا ترجعوا بعدي كفارا يضرب بعضكم رقاب بعض

তোমরা যেন আমার পর কাফের অবস্থার দিকে ফিরে না যাও যে, তোমাদের একে অন্যের গর্দান উড়াতে থাকবে।

এর দু'টি অর্থ হতে পারে।
ক. তোমরা আমার পরে মুরতাদ হয়ে যেয়ো না। অর্থাৎ বাস্তবিকই ইসলাম পরিত্যাগ করে কুফরী ধর্মের দিকে ফিরে যেয়ো না, যার পরিণামে জাহিলী যুগের মত পরস্পরে মারামারি ও খুনোখুনিতে লিপ্ত হবে এবং অন্যায়ভাবে একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে দেবে।
খ .অথবা এর অর্থ- তোমরা কাফেরদের মত হয়ে যেয়ো না, যাদের কাছে মানুষের জানমালের কোনও মূল্য নেই। ফলে অন্যায়ভাবে একে অন্যকে হত্যা করে এবং তুচ্ছ তুচ্ছ কারণে পরস্পরে খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়।

বাস্তবিকপক্ষে অন্যায় রক্তপাত কাফেরদেরই কাজ। এটা মু'মিনদের কাজ হতে পারে না। মু'মিনদের কাজ তো অন্যের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। সুতরাং তোমরা যদি আমার পর আত্মকলহে লিপ্ত হও এবং অন্যায়ভাবে একে অন্যকে হত্যা কর, তবে তা কাফেরদের মত কাজই হবে। এরকম কাজ তোমরা ইসলাম গ্রহণের আগে জাহিলী যুগে করতে। সাবধান! আমার পরে তোমরা ওইরকম কাজের দিকে ফিরে যেয়ো না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. একের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা নষ্ট করা কঠিন জুলুম। আমাদের কিছুতেই এরকম জুলুমের কাজে লিপ্ত হওয়া চলবে না।

খ. হারাম শরীফ ও হজ্জের মাস অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। নিষিদ্ধকর্মে লিপ্ত হয়ে যাতে সে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না করে ফেলি, সে ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।

গ. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা কাফেরদের কাজ। ঈমানের দাবিদার ব্যক্তির কিছুতেই এরূপ কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)