মা'আরিফুল হাদীস
معارف الحديث
যাকাত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬০ টি
হাদীস নং: ১
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও এর অবস্থান
এটা সুবিদিত সত্য যে, তওহীদ ও রেসালতের সাক্ষ্যদান এবং নামায কায়েমের পর যাকাত ইসলামের তৃতীয় রোকন ও মূল স্তম্ভ। কুরআন মজীদে সত্তরেরও অধিক স্থানে নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত আদায় একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে—যা প্রমাণ করে, দ্বীন ইসলামে এ দু’টির মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রায় সমান।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর যখন আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু লোক—যারা বাহ্যত ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং নামাযও পড়ত—যাকাত দিতে অস্বীকার করল, তখন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কারণ, তারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছিল—যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ারই শামিল।
বুখারীও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, তিনি হযরত উমর (রাযি.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন—
وَاللّٰهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ
অর্থাৎ— “আল্লাহর কসম! যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব।”
পরে সকল সাহাবায়ে কেরাম তাঁর এই অবস্থানের সাথে একমত হন এবং এ বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
মা’আরিফুল হাদীস গ্রন্থেও প্রথম খণ্ডের শুরুতেই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সেইসব হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি ইসলামের মূল রোকনসমূহের আলোচনা করতে গিয়ে তওহীদ ও রেসালতের পর নামায ও যাকাতের কথাই উল্লেখ করেছেন।
যাহোক—কুরআন ও হাদীসে বারবার নামায ও যাকাতকে পাশাপাশি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, এ দু’টির মাঝে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে এবং ইসলামে এ দু'টির অবস্থান অত্যন্ত সম্মানজনক।
যাকাতের তিনটি দিক
যাকাতের মধ্যে পুরস্কার ও উপকারিতার তিনটি বিশেষ দিক রয়েছে—
১) আল্লাহর দরবারে দাসত্বের প্রকাশ
যেভাবে মুমিন বান্দা নামাযের কিয়াম, রুকূ ও সেজদার মাধ্যমে দেহ, মন ও মুখের সাহায্যে আল্লাহর সামনে দীনতা প্রকাশ করে—
তেমনি যাকাত হলো তাঁর পথে বান্দার আর্থিক কুরবানী। এর মাধ্যমে সে প্রমাণ করে—তার মাল-সম্পদকে সে নিজের বলে মনে করে না; বরং আল্লাহর আমানত মনে করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা বিলিয়ে দেয়। এই দিক থেকেই যাকাত এবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
২) দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য
যাকাতের দ্বিতীয় দিক হলো—এটি অভাবী, দুস্থ ও অসহায় মানুষের সহায়তায় ব্যয় হয়। এই দিক থেকে যাকাত নৈতিকতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
৩) আত্মার পরিশুদ্ধি ও সম্পদের পবিত্রতা
অর্থের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ও সম্পদপূজা একটি ভয়ংকর ঈমান-নাশকারী রোগ।
যাকাত হলো এই রোগের চিকিৎসা—এটি অন্তরকে পবিত্র করে, লোভ দূর করে এবং সম্পদকে বরকতময় করে।
এ কারণেই কুরআনে বলা হয়েছে—
خُذۡ مِنۡ اَمۡوَالِہِمۡ صَدَقَۃً تُطَہِّرُہُمۡ وَتُزَکِّیۡہِمۡ بِہَا
অর্থ: “তাদের সম্পদ থেকে সদাকা গ্রহণ করুন; এর মাধ্যমে তাদের অন্তর পবিত্র হবে ও আত্মা পরিশুদ্ধ হবে।” (সূরা তওবা)
আরও বলা হয়েছে—
وَسَیُجَنَّبُہَا الۡاَتۡقَی، الَّذِیۡ یُؤۡتِیۡ مَالَہٗ یَتَزَکّٰی
অর্থ: “জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে সেই মুত্তাকী ব্যক্তিকে, যে তার সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে—এবং এর দ্বারা নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।” (সূরা লাইল)
আসলে যাকাত শব্দের অর্থই “পবিত্রতা” ও “পরিশুদ্ধি”—এ কারণে হয়তো যাকাতের এই নামকরণ।
যাকাতের বিধান: পূর্ববর্তী শরীআতসমূহে
যাকাতের এ অসাধারণ গুরুত্ব ও উপকারিতার কারণে এর নির্দেশ পূর্ববর্তী নবী–রাসূলদের শরীআতেও নামাযের সাথে সাথেই ছিল। সূরা আম্বিয়ায় হযরত ইবরাহীম (আঃ), তাঁর পুত্র ইসহাক (আঃ) এবং তাঁর পরবর্তী পুত্র ইয়াকুব (আঃ)-এর আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
وَاَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡہِمۡ فِعۡلَ الۡخَیۡرٰتِ وَاِقَامَ الصَّلٰوۃِ وَاِیۡتَآءَ الزَّکٰوۃِ ۚ وَکَانُوۡا لَنَا عٰبِدِیۡنَ
অর্থাৎ, আমি তাদেরকে আদেশ দিলাম পুণ্য কাজের, (বিশেষ করে) নামায কায়েমের এবং যাকাত আদায়ের। আর তারা আমার এবাদতগুযার বান্দা ছিল। (সূরা আম্বিয়া)
সূরা মারয়ামে হযরত ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَکَانَ یَاۡمُرُ اَہۡلَہٗ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ
অর্থাৎ, তিনি তাঁর পরিবারের লোকদেরকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন। (সূরা মারয়াম)
ইসরাঈল ধারার শেষ পয়গম্বর হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বলা হয়েছে যে তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের বলতেন:
قَالَ اِنِّیۡ عَبۡدُ اللّٰہِ ۟ؕ اٰتٰنِیَ الۡکِتٰبَ وَجَعَلَنِیۡ نَبِیًّا، وَّجَعَلَنِیۡ مُبٰرَکًا اَیۡنَ مَا کُنۡتُ ۪ وَاَوۡصٰنِیۡ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ مَا دُمۡتُ حَیًّا
অর্থাৎ, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দান করেছেন এবং নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি, সেখানেই তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন জীবিত থাকি, আমাকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিয়েছেন।
সূরা বাকারায় বনী ইসরাঈলের ঈমানী অঙ্গীকারের উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ
অর্থাৎ, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে।
অনুরূপভাবে সূরা মায়িদায় আরও বলা হয়েছে:
وَقَالَ اللّٰہُ اِنِّیۡ مَعَکُمۡ ؕ لَئِنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَیۡتُمُ الزَّکٰوۃَ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِیۡ
অর্থাৎ, আল্লাহ বলেছেন: আমি তোমাদের সাথে আছি — যদি তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন…।
এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, নামায ও যাকাত সব সময়ই আসমানী শরীআতসমূহের বিশেষ রোকন ও প্রতীক ছিল।
পূর্ববর্তী শরীআতে ও প্রাথমিক ইসলামী যুগে বিধান বৈচিত্র্য
হ্যাঁ, রূপরেখা, বিস্তারিত বিধান এবং পরিমাণ নির্ধারণে পার্থক্য ছিল। আমাদের শরীআতের নিজস্ব ইতিহাসেও বিধান ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ হয়েছে। উদাহরণ—
১. নামায প্রথমে তিন ওয়াক্ত ছিল, পরে পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়।
২. প্রথমে ফরয নামায কেবল দু' রাকআত ছিল; পরে ফজর ছাড়া অন্যান্য সালাতে রাকআত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
৩. প্রাথমিক যুগে নামাযের ভিতরে সালাম–কালামের অবকাশ ছিল; পরে তা নিষিদ্ধ হয়।
অনুরূপভাবে হিজরতের পূর্বে মক্কা যুগেই যাকাতের সাধারণ নির্দেশ ছিল।
মক্কী সূরাগুলো— সূরা মু’মিনুন, সূরা নামল, সূরা লুকমান— এসবের শুরুতেই নামায ও যাকাতের উল্লেখ আছে।
তখন যাকাত বলতে বোঝানো হতো— অভাবী, দরিদ্র ও কল্যাণমূলক কাজে নিজের সম্পদ ব্যয় করা।
কিন্তু বিস্তারিত বিধান, হার ও পরিমাণ নির্ধারণ হিজরতের পর মদীনায় নাযিল হয়।
এ কারণেই অনেক ঐতিহাসিক উল্লেখ করেন যে, যাকাতের হুকুম দ্বিতীয় হিজরীতে বা তার পরে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো— বিশদ বিধান, পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তখন নাযিল হয়েছে। অথচ যাকাতের সাধারণ হুকুম মক্কা যুগেই ছিল।
সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যে যাকাতের পূর্বমক্কী যুগের প্রমাণ
এ বিষয়টি শুধু উপরের মক্কী সূরাগুলোর আয়াতেই নয়, বরং হযরত উম্মে সালামা (রাঃ)-এর বর্ণিত ঘটনাতেও প্রমাণিত হয়। তিনি আবিসিনিয়া হিজরতের বর্ণনায় হযরত জাফর তাইয়ার (রাঃ)-এর নাজ্জাশীর সাথে কথোপকথন উল্লেখ করেন, যেখানে জাফর (রাঃ) বলেন:
ويأمرنا بالصلوة والزكوة
তিনি (রাসূলে আকরাম ﷺ) আমাদের নামায ও যাকাতের হুকুম দেন। এটি ছিল হিজরতের বহু পূর্বের ঘটনা।
আরও প্রমাণ পাওয়া যায় ইমাম বুখারী ও অন্যান্যের বর্ণনায়—
রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের প্রশ্নের জবাবে (সেই সময়কার শত্রু) আবু সুফিয়ান বলেছিলেন:
ويأمرنا بالصلوة والزكوة والصلة والعفاف
অর্থাৎ, তিনি আমাদের নামায, যাকাত, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা ও পবিত্রতার নির্দেশ দেন।
এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে, হিজরতের পূর্বে মক্কা যুগেই রাসূলুল্লাহ ﷺ যাকাতের শিক্ষা দিতেন।
হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় যাকাত সংগ্রহের প্রশাসনিক কাঠামো ৮ হিজরীর পর প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ ভূমিকার পর এখন যাকাত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীসমূহ পাঠ করুন:
ঈমান ও নামাযের পর যাকাতের দাওয়াত
এটা সুবিদিত সত্য যে, তওহীদ ও রেসালতের সাক্ষ্যদান এবং নামায কায়েমের পর যাকাত ইসলামের তৃতীয় রোকন ও মূল স্তম্ভ। কুরআন মজীদে সত্তরেরও অধিক স্থানে নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত আদায় একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে—যা প্রমাণ করে, দ্বীন ইসলামে এ দু’টির মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রায় সমান।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওফাতের পর যখন আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু লোক—যারা বাহ্যত ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং নামাযও পড়ত—যাকাত দিতে অস্বীকার করল, তখন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কারণ, তারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছিল—যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ারই শামিল।
বুখারীও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, তিনি হযরত উমর (রাযি.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন—
وَاللّٰهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ
অর্থাৎ— “আল্লাহর কসম! যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব।”
পরে সকল সাহাবায়ে কেরাম তাঁর এই অবস্থানের সাথে একমত হন এবং এ বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
মা’আরিফুল হাদীস গ্রন্থেও প্রথম খণ্ডের শুরুতেই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সেইসব হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি ইসলামের মূল রোকনসমূহের আলোচনা করতে গিয়ে তওহীদ ও রেসালতের পর নামায ও যাকাতের কথাই উল্লেখ করেছেন।
যাহোক—কুরআন ও হাদীসে বারবার নামায ও যাকাতকে পাশাপাশি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, এ দু’টির মাঝে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে এবং ইসলামে এ দু'টির অবস্থান অত্যন্ত সম্মানজনক।
যাকাতের তিনটি দিক
যাকাতের মধ্যে পুরস্কার ও উপকারিতার তিনটি বিশেষ দিক রয়েছে—
১) আল্লাহর দরবারে দাসত্বের প্রকাশ
যেভাবে মুমিন বান্দা নামাযের কিয়াম, রুকূ ও সেজদার মাধ্যমে দেহ, মন ও মুখের সাহায্যে আল্লাহর সামনে দীনতা প্রকাশ করে—
তেমনি যাকাত হলো তাঁর পথে বান্দার আর্থিক কুরবানী। এর মাধ্যমে সে প্রমাণ করে—তার মাল-সম্পদকে সে নিজের বলে মনে করে না; বরং আল্লাহর আমানত মনে করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা বিলিয়ে দেয়। এই দিক থেকেই যাকাত এবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
২) দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য
যাকাতের দ্বিতীয় দিক হলো—এটি অভাবী, দুস্থ ও অসহায় মানুষের সহায়তায় ব্যয় হয়। এই দিক থেকে যাকাত নৈতিকতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
৩) আত্মার পরিশুদ্ধি ও সম্পদের পবিত্রতা
অর্থের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ও সম্পদপূজা একটি ভয়ংকর ঈমান-নাশকারী রোগ।
যাকাত হলো এই রোগের চিকিৎসা—এটি অন্তরকে পবিত্র করে, লোভ দূর করে এবং সম্পদকে বরকতময় করে।
এ কারণেই কুরআনে বলা হয়েছে—
خُذۡ مِنۡ اَمۡوَالِہِمۡ صَدَقَۃً تُطَہِّرُہُمۡ وَتُزَکِّیۡہِمۡ بِہَا
অর্থ: “তাদের সম্পদ থেকে সদাকা গ্রহণ করুন; এর মাধ্যমে তাদের অন্তর পবিত্র হবে ও আত্মা পরিশুদ্ধ হবে।” (সূরা তওবা)
আরও বলা হয়েছে—
وَسَیُجَنَّبُہَا الۡاَتۡقَی، الَّذِیۡ یُؤۡتِیۡ مَالَہٗ یَتَزَکّٰی
অর্থ: “জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে সেই মুত্তাকী ব্যক্তিকে, যে তার সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে—এবং এর দ্বারা নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।” (সূরা লাইল)
আসলে যাকাত শব্দের অর্থই “পবিত্রতা” ও “পরিশুদ্ধি”—এ কারণে হয়তো যাকাতের এই নামকরণ।
যাকাতের বিধান: পূর্ববর্তী শরীআতসমূহে
যাকাতের এ অসাধারণ গুরুত্ব ও উপকারিতার কারণে এর নির্দেশ পূর্ববর্তী নবী–রাসূলদের শরীআতেও নামাযের সাথে সাথেই ছিল। সূরা আম্বিয়ায় হযরত ইবরাহীম (আঃ), তাঁর পুত্র ইসহাক (আঃ) এবং তাঁর পরবর্তী পুত্র ইয়াকুব (আঃ)-এর আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
وَاَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡہِمۡ فِعۡلَ الۡخَیۡرٰتِ وَاِقَامَ الصَّلٰوۃِ وَاِیۡتَآءَ الزَّکٰوۃِ ۚ وَکَانُوۡا لَنَا عٰبِدِیۡنَ
অর্থাৎ, আমি তাদেরকে আদেশ দিলাম পুণ্য কাজের, (বিশেষ করে) নামায কায়েমের এবং যাকাত আদায়ের। আর তারা আমার এবাদতগুযার বান্দা ছিল। (সূরা আম্বিয়া)
সূরা মারয়ামে হযরত ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَکَانَ یَاۡمُرُ اَہۡلَہٗ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ
অর্থাৎ, তিনি তাঁর পরিবারের লোকদেরকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন। (সূরা মারয়াম)
ইসরাঈল ধারার শেষ পয়গম্বর হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বলা হয়েছে যে তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের বলতেন:
قَالَ اِنِّیۡ عَبۡدُ اللّٰہِ ۟ؕ اٰتٰنِیَ الۡکِتٰبَ وَجَعَلَنِیۡ نَبِیًّا، وَّجَعَلَنِیۡ مُبٰرَکًا اَیۡنَ مَا کُنۡتُ ۪ وَاَوۡصٰنِیۡ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ مَا دُمۡتُ حَیًّا
অর্থাৎ, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দান করেছেন এবং নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি, সেখানেই তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। আর যতদিন জীবিত থাকি, আমাকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিয়েছেন।
সূরা বাকারায় বনী ইসরাঈলের ঈমানী অঙ্গীকারের উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে:
وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ
অর্থাৎ, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে।
অনুরূপভাবে সূরা মায়িদায় আরও বলা হয়েছে:
وَقَالَ اللّٰہُ اِنِّیۡ مَعَکُمۡ ؕ لَئِنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَیۡتُمُ الزَّکٰوۃَ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِیۡ
অর্থাৎ, আল্লাহ বলেছেন: আমি তোমাদের সাথে আছি — যদি তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন…।
এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, নামায ও যাকাত সব সময়ই আসমানী শরীআতসমূহের বিশেষ রোকন ও প্রতীক ছিল।
পূর্ববর্তী শরীআতে ও প্রাথমিক ইসলামী যুগে বিধান বৈচিত্র্য
হ্যাঁ, রূপরেখা, বিস্তারিত বিধান এবং পরিমাণ নির্ধারণে পার্থক্য ছিল। আমাদের শরীআতের নিজস্ব ইতিহাসেও বিধান ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ হয়েছে। উদাহরণ—
১. নামায প্রথমে তিন ওয়াক্ত ছিল, পরে পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়।
২. প্রথমে ফরয নামায কেবল দু' রাকআত ছিল; পরে ফজর ছাড়া অন্যান্য সালাতে রাকআত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
৩. প্রাথমিক যুগে নামাযের ভিতরে সালাম–কালামের অবকাশ ছিল; পরে তা নিষিদ্ধ হয়।
অনুরূপভাবে হিজরতের পূর্বে মক্কা যুগেই যাকাতের সাধারণ নির্দেশ ছিল।
মক্কী সূরাগুলো— সূরা মু’মিনুন, সূরা নামল, সূরা লুকমান— এসবের শুরুতেই নামায ও যাকাতের উল্লেখ আছে।
তখন যাকাত বলতে বোঝানো হতো— অভাবী, দরিদ্র ও কল্যাণমূলক কাজে নিজের সম্পদ ব্যয় করা।
কিন্তু বিস্তারিত বিধান, হার ও পরিমাণ নির্ধারণ হিজরতের পর মদীনায় নাযিল হয়।
এ কারণেই অনেক ঐতিহাসিক উল্লেখ করেন যে, যাকাতের হুকুম দ্বিতীয় হিজরীতে বা তার পরে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো— বিশদ বিধান, পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তখন নাযিল হয়েছে। অথচ যাকাতের সাধারণ হুকুম মক্কা যুগেই ছিল।
সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যে যাকাতের পূর্বমক্কী যুগের প্রমাণ
এ বিষয়টি শুধু উপরের মক্কী সূরাগুলোর আয়াতেই নয়, বরং হযরত উম্মে সালামা (রাঃ)-এর বর্ণিত ঘটনাতেও প্রমাণিত হয়। তিনি আবিসিনিয়া হিজরতের বর্ণনায় হযরত জাফর তাইয়ার (রাঃ)-এর নাজ্জাশীর সাথে কথোপকথন উল্লেখ করেন, যেখানে জাফর (রাঃ) বলেন:
ويأمرنا بالصلوة والزكوة
তিনি (রাসূলে আকরাম ﷺ) আমাদের নামায ও যাকাতের হুকুম দেন। এটি ছিল হিজরতের বহু পূর্বের ঘটনা।
আরও প্রমাণ পাওয়া যায় ইমাম বুখারী ও অন্যান্যের বর্ণনায়—
রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের প্রশ্নের জবাবে (সেই সময়কার শত্রু) আবু সুফিয়ান বলেছিলেন:
ويأمرنا بالصلوة والزكوة والصلة والعفاف
অর্থাৎ, তিনি আমাদের নামায, যাকাত, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা ও পবিত্রতার নির্দেশ দেন।
এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে, হিজরতের পূর্বে মক্কা যুগেই রাসূলুল্লাহ ﷺ যাকাতের শিক্ষা দিতেন।
হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় যাকাত সংগ্রহের প্রশাসনিক কাঠামো ৮ হিজরীর পর প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ ভূমিকার পর এখন যাকাত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীসমূহ পাঠ করুন:
ঈমান ও নামাযের পর যাকাতের দাওয়াত
১. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) কে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বলেছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে, তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সাদ্কা (যাকাত) ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে (কেবল) তাদের উত্তম মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে এবং মযলুমের বদদুআকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদুআ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না। সহীহ বুখারী
کتاب الزکوٰۃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ ، فَقَالَ : " إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللَّهِ ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِي أَمْوَالِهِمْ ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ ، فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ ".
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত আদায় না করার শাস্তি
২. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত করেনঃ
وَلَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ہُوَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ شَرٌّ لَّہُمۡ ؕ سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِہٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ
“আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।” (৩ঃ ১৮০) সহীহ বুখারী।
(তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজা শরীফেও এ বিষয়বস্তুটি শব্দের সামান্য পার্থক্যের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযি) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।)
وَلَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ہُوَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ شَرٌّ لَّہُمۡ ؕ سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِہٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ
“আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।” (৩ঃ ১৮০) সহীহ বুখারী।
(তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজা শরীফেও এ বিষয়বস্তুটি শব্দের সামান্য পার্থক্যের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযি) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।)
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ ، مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ (يَعْنِي شِدْقَيْهِ) ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ، ثُمَّ تَلَا : وَلا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ الآية.
(رواه البخارى)
(رواه البخارى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত আদায় না করার শাস্তি
৩. হযরত আয়েশা (রাযি) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি: যাকাতের মাল যখন অন্য মালের সাথে মিশে যায়, তখন এটা ঐ মালকে ধ্বংস করে দেয়। -মুসনাদে শাফেয়ী, তারীখে বুখারী, মুসনাদে হুমায়দী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُوْلَ : مَا خَالَطَتِ الصَّدَقَةُ مَالًا قَطُّ اِلَّا اَهْلَكَتْهُ.
(رواه الشافعى والبخارى فى تاريخه والحميدى فى مسنده)
(رواه الشافعى والبخارى فى تاريخه والحميدى فى مسنده)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৪
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত মালকে পবিত্র করে
৪. হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হয়,
وَالَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَالۡفِضَّۃَ وَلَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ
অর্থ: যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও। রাবী বলেন, তখন মুসলমানদের নিকট তা খুবই গুরতর মনে হল। উমর রাযি. বলেনঃ আমি তোমাদের এই উদ্বেগ দূরীভূত করব। অতপর তিনি গিয়ে বলেনঃ ইয়া নবীআল্লাহ! এই আয়াত আপনার সাহাবীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের অবশিষ্ট ধন-সম্পদ পবিত্র করতে যাকাত ফরয করেছেন। আর তিনি মীরাছ এইজন্য ফরয করেছেন, যাতে পরিত্যক্ত মাল তোমাদের পরবর্তী বংশধরেরা পেতে পারে।
তখন উমর রাযি. ″আল্লাহু আকবার″ ধ্বনি দেন। অতঃপর তিনি উমর রাযি.-কে বলেনঃ আমি কি তোমাকে লোকদের পুঞ্জীভুত মালের চেয়ে উত্তম মাল সর্ম্পকে অবহিত করব না? তা হল পূন্যবতী নারী যখন সে (স্বামী) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে তখন সে সন্তুষ্ট হয়। আর যখন সে (স্বামী) তাকে কিছু করার নির্দেশ দেয়, তখন সে তা পালন করে। আর যখন সে (স্বামী) তার নিকট হতে অনুপস্থিত থাকে তখন সে তার (ইজ্জত ও মালের) হেফাযত করে।
وَالَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَالۡفِضَّۃَ وَلَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ
অর্থ: যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও। রাবী বলেন, তখন মুসলমানদের নিকট তা খুবই গুরতর মনে হল। উমর রাযি. বলেনঃ আমি তোমাদের এই উদ্বেগ দূরীভূত করব। অতপর তিনি গিয়ে বলেনঃ ইয়া নবীআল্লাহ! এই আয়াত আপনার সাহাবীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের অবশিষ্ট ধন-সম্পদ পবিত্র করতে যাকাত ফরয করেছেন। আর তিনি মীরাছ এইজন্য ফরয করেছেন, যাতে পরিত্যক্ত মাল তোমাদের পরবর্তী বংশধরেরা পেতে পারে।
তখন উমর রাযি. ″আল্লাহু আকবার″ ধ্বনি দেন। অতঃপর তিনি উমর রাযি.-কে বলেনঃ আমি কি তোমাকে লোকদের পুঞ্জীভুত মালের চেয়ে উত্তম মাল সর্ম্পকে অবহিত করব না? তা হল পূন্যবতী নারী যখন সে (স্বামী) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে তখন সে সন্তুষ্ট হয়। আর যখন সে (স্বামী) তাকে কিছু করার নির্দেশ দেয়, তখন সে তা পালন করে। আর যখন সে (স্বামী) তার নিকট হতে অনুপস্থিত থাকে তখন সে তার (ইজ্জত ও মালের) হেফাযত করে।
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ : وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ الآية ، كَبُرَ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ ، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَا أُفَرِّجُ عَنْكُمْ ، فَانْطَلَقَ ، فَقَالَ : يَا نَبِيَّ اللَّهِ ، إِنَّهُ كَبُرَ عَلَى أَصْحَابِكَ هَذِهِ الْآيَةُ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَفْرِضْ الزَّكَاةَ إِلَّا لِيُطَيِّبَ مَا بَقِيَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ وَإِنَّمَا فَرَضَ الْمَوَارِيثَ .....وَذَكَرَ كَلِمَةً ..... لِتَكُونَ لِمَنْ بَعْدَكُمْ" ، فَقَالَ فَكَبَّرَ عُمَرُ..... ثُمَّ قَالَ : "أَلَا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ : الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ".
(رواه ابوداؤد)
(رواه ابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাতের বিস্তারিত বিধান ও নিয়ম-পদ্ধতি
যাকাতের সংক্ষিপ্ত ও মৌলিক স্বরূপ তো এটাই যে, নিজের সম্পদ ও নিজের উপার্জন থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু ব্যয় করা হবে। একটু আগেই যেমন বলা হয়েছে যে, ইসলামের একেবারে প্রাথমিক যুগে এ সংক্ষিপ্ত নির্দেশই ছিল। পরে এর বিস্তারিত বিধান এসেছে এবং নিয়ম-নীতি নির্ধারিত হয়েছে। যেমন, কোন্ প্রকার সম্পদে যাকাত আসবে, কমপক্ষে কতটুকু সম্পদ থাকলে যাকাত ওয়াজিব হবে, কত সময় পার হওয়ার পর যাকাত ওয়াজিব হবে এবং কোন্ কোন্ খাতে এটা খরচ করা যাবে ইত্যাদি। এবার ঐ হাদীসগুলো পাঠ করে নিন, যেগুলোর মধ্যে যাকাতের বিস্তারিত বিধান ও নিয়ম-পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
কমপক্ষে কতটুকু সম্পদ হলে যাকাত ফরয হয়
যাকাতের সংক্ষিপ্ত ও মৌলিক স্বরূপ তো এটাই যে, নিজের সম্পদ ও নিজের উপার্জন থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু ব্যয় করা হবে। একটু আগেই যেমন বলা হয়েছে যে, ইসলামের একেবারে প্রাথমিক যুগে এ সংক্ষিপ্ত নির্দেশই ছিল। পরে এর বিস্তারিত বিধান এসেছে এবং নিয়ম-নীতি নির্ধারিত হয়েছে। যেমন, কোন্ প্রকার সম্পদে যাকাত আসবে, কমপক্ষে কতটুকু সম্পদ থাকলে যাকাত ওয়াজিব হবে, কত সময় পার হওয়ার পর যাকাত ওয়াজিব হবে এবং কোন্ কোন্ খাতে এটা খরচ করা যাবে ইত্যাদি। এবার ঐ হাদীসগুলো পাঠ করে নিন, যেগুলোর মধ্যে যাকাতের বিস্তারিত বিধান ও নিয়ম-পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
কমপক্ষে কতটুকু সম্পদ হলে যাকাত ফরয হয়
৫. হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণ খেজুরের যাকাত নেই। পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রূপার যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটের যাকাত নেই। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنَ التَّمْرِ صَدَقَةٌ ، وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ ، وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ مِنَ الْإِبِلِ صَدَقَةٌ"
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কমপক্ষে কতটুকু সম্পদ হলে যাকাত ফরয হয়
৬. হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি ঘোড়া ও ক্রীতদাসের যাকাত মাফ করে দিলাম। অতএব, তোমরা রূপার যাকাত আদায় কর প্রতি চল্লিশ দেরহাম থেকে এক দেরহাম। আর ১৯৯ পর্যন্ত কোন যাকাত নেই। তবে যখন ২০০ পূর্ণ হয়ে যায়, তখন এতে পাঁচ দেরহাম ওয়াজিব হবে। -তিরমিযী, আবূ দাউদ
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "قَدْ عَفَوْتُ عَنِ الْخَيْلِ وَالرَّقِيقِ فَهَاتُوا صَدَقَةَ الرِّقَةِ مِنْ كُلِّ أَرْبَعِينَ دِرْهَمًا دِرْهَمٌ ، وَلَيْسَ فِي تِسْعِينَ وَمِائَةٍ شَيْءٌ ، فَإِذَا بَلَغَتْ مِائَتَيْنِ فَفِيهَا خَمْسَةُ دَرَاهِمَ".
(رواه الترمذى وابوداؤد)
(رواه الترمذى وابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৭
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ব্যবসার মালের উপর যাকাত
৭. হযরত সামুরা ইবনে জুন্দুব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন যে, আমরা যেন ঐ মালের যাকাত আদায় করে দেই, যা বিক্রির জন্য আমরা প্রস্তুত করে রাখি। -আবূ দাউদ
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ"يَأْمُرُنَا أَنْ نُخْرِجَ الصَّدَقَةَ مِنَ الَّذِي نُعِدُّ لِلْبَيْعِ".
(رواه ابوداؤد)
(رواه ابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৮
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত ওয়াজিব হবে
৮. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তির কোন মাল হস্তগত হল, বর্ষপূর্তি না হওয়া পর্যন্ত এর উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। -তিরমিযী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنِ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكَاةَ فِيهِ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ.
(رواه الترمذى)
(رواه الترمذى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৯
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অলংকারাদির যাকাত আদায়ের নির্দেশ
৯. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, এক মহিলা তার এক মেয়েকে নিয়ে নবী করীম (ﷺ) এর দরবারে আসল। তার মেয়েটির হাতে দু'টি মোটা ও ভারী চুড়ি ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি এর যাকাত আদায় কর? উত্তরে সে বলল, না। তিনি তখন বললেন: তোমার কি এটা ভাল লাগবে যে, এ দু'টির (যাকাত আদায় না করার) কারণে আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামতের দিন তোমাকে আগুনের দু'টি চুড়ি পরিয়ে দেন? এ কথা শুনে সে চুড়ি দু'টি খুলে ফেলল এবং নবী করীম (ﷺ) এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এগুলো এখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। -আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ্
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ جَدِّهِ ، أَنَّ امْرَأَةً أَتَتِ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِابْنَةٌ لَهَا وَفِي يَدِ ابْنَتِهَا مَسَكَتَانِ غَلِيظَتَانِ مِنْ ذَهَبٍ ، فَقَالَ : "أَتُعْطِينَ زَكَاةَ هَذَا؟"قَالَتْ : لَا ، قَالَ : "أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللَّهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ النَارِ؟" فَخَلَعَتْهُمَا ، فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَقَالَتْ : هُمَا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ.
(رواه ابوداؤد وغيره من اصحاب السنن)
(رواه ابوداؤد وغيره من اصحاب السنن)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১০
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অলংকারাদির যাকাত আদায়ের নির্দেশ
১০. হযরত উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সোনার আওযাহ (এক বিশেষ ধরনের বালা) পরতাম। তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। এটা কি কানযের অন্তর্ভুক্ত? (যার উপর জাহান্নামের আযাবের ধমকি এসেছে।) তিনি উত্তর দিলেন: যে মাল যাকাতের নেসাব পর্যন্ত পৌঁছে যায়, আর এর যাকাত আদায় করে দেওয়া হয়, এটা কানয (অন্যায় সঞ্চয় নয়।) -মুয়াত্তা মালেক, আবু দাউদ
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : كُنْتُ أَلْبَسُ أَوْضَاحًا مِنْ ذَهَبٍ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَكَنْزٌ هُوَ؟ فَقَالَ : "مَا بَلَغَ أَنْ تُؤَدَّى زَكَاتُهُ ، فَزُكِّيَ فَلَيْسَ بِكَنْزٍ".
(رواه مالک وابوداؤد)
(رواه مالک وابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১১
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত অগ্রিমও আদায় করা যায়
১১. হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, হযরত আব্বাস রাযি. সময় হওয়ার পূর্বেই তার যাকাত অগ্রিম আদায়ের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তখন তাকে এর অনুমতি দিয়ে দিলেন। -আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, দারেমী।
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَلِيٍّ ، أَنَّ الْعَبَّاسَ سَأَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ أَنْ تَحِلَّ ، فَرَخَّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ".
(رواه ابوداؤد والترمذى وابن ماجه والدارمى)
(رواه ابوداؤد والترمذى وابن ماجه والدارمى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১২
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১২. হযরত যিয়াদ ইবনে হারেস সুদায়ী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম। তারপর যিয়াদ একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন (এবং এ প্রসঙ্গে এ ঘটনার উল্লেখ করলেন যে,) এক ব্যক্তি এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর খেদমতে এসে আরয করল, যাকাতের মাল থেকে আমাকে কিছু দিন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আল্লাহ্ তা'আলা যাকাতের হকদার কারা হবে, এ বিষয়টির ফায়সালা কোন নবী অথবা অন্য কারো হাতে ছেড়ে দেননি; বরং নিজেই এর ফায়সালা করে দিয়েছেন এবং এটাকে আট প্রকার লোকের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। অতএব, তুমি যদি ঐ আট প্রকারের মধ্য থেকে কোন এক প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমি তোমাকে যাকাত থেকে অংশ দিব। আবু দাউদ
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ الصُّدَائِيَّ ، قَالَ : أَتَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْتُهُ ، فَذَكَرَ حَدِيثًا طَوِيلًا ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ ، فَقَالَ : أَعْطِنِي مِنَ الصَّدَقَةِ ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَرْضَ بِحُكْمِ نَبِيٍّ وَلَا غَيْرِهِ فِي الصَّدَقَاتِ حَتَّى حَكَمَ هُوَ فَجَزَّأَهَا ثَمَانِيَةَ أَجْزَاءٍ فَإِنْ كُنْتَ مِنْ تِلْكَ الْأَجْزَاءِ أَعْطَيْتُكَ حَقَّكَ".
(رواه ابوداؤد)
(رواه ابوداؤد)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৩
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৩. হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: প্রকৃত মিসকীন ঐ ব্যক্তি নয়, যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং এক দুই গ্রাস খাবার অথবা এক দু'টি খেজুর তাকে এখান থেকে সেখানে নিয়ে যায়; বরং আসল মিসকীন হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে প্রয়োজন পূরণের কোন উপকরণ পায় না এবং (নিজের অভাব গোপন রাখার কারণে) মানুষ তার অবস্থাও বুঝে না যে, তাকে দান করবে। আর সে নিজে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে সওয়ালও করে না। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَيْسَ المِسْكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ ، وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ ، وَلَكِنِ المِسْكِينُ الَّذِي لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ ، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ ، فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ »
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৪
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, (ﷺ) বলেছেনঃ যাকাত গ্রহণ করা বৈধ নয় ধনীর জন্য এবং সুস্থ সবল মানুষের জন্য। -তিরমিযী, আবু দাউদ, দারেমী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « لَا تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِيٍّ ، وَلَا لِذِي مِرَّةٍ سَوِيٍّ »
(رواه الترمذى وابوداؤد والدارمى)
(رواه الترمذى وابوداؤد والدارمى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৫
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৫. হযরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনে আদী ইবনুল খিয়ার (রাহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে (অপরিচিত) দুই ব্যক্তি এই খবর দেন যে, তাঁরা বিদায় হজ্বের সময় নবী করীম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হন। তখন তিনি যাকাতের মাল বন্টনে রত ছিলেন। ঐ দুই ব্যক্তি কিছু মালের জন্য প্রার্থনা করেন। তিনি আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে পুনরায় দৃষ্টি অবনত করেন। তিনি আমাদের উভয়কে শক্ত সবল ও হৃষ্টপুষ্ট দেখতে পেলেন। তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও তবে আমি তোমাদের দুই জনকে দান করব। (কিন্তু জেনে রাখ!) এই মালে ধনী, কর্মক্ষম ও শক্ত সবলদের কোন অধিকার নাই। -আবূ দাউদ, নাসায়ী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي رَجُلَانِ : أَنَّهُمَا أَتَيَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ ، وَهُوَ يُقَسِّمُ الصَّدَقَةَ ، فَسَأَلَاهُ مِنْهَا ، فَرَفَعَ فِينَا الْبَصَرَ وَخَفَضَهُ ، فَرَآنَا جَلْدَيْنِ ، فَقَالَ : « إِنَّ شِئْتُمَا أَعْطَيْتُكُمَا ، وَلَا حَظَّ فِيهَا لِغَنِيٍّ ، وَلَا لِقَوِيٍّ مُكْتَسِبٍ »
(رواه ابوداؤد والنسائى)
(رواه ابوداؤد والنسائى)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৬
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৬. হযরত আব্দুল মুত্তালিব ইবনে রাবীআ ইবনে হারিস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: এসব সদাকা-যাকাত হচ্ছে মানুষের মালের ময়লা, আর এটা মুহাম্মদ ও মুহাম্মদ পরিবারের জন্য হালাল নয়। -মুসলিম
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ عَبْدَ الْمُطَّلِبِ بْنَ رَبِيعَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ هَذِهِ الصَّدَقَاتِ إِنَّمَا هِيَ أَوْسَاخُ النَّاسِ ، وَإِنَّهَا لَا تَحِلُّ لِمُحَمَّدٍ ، وَلَا لِآلِ مُحَمَّدٍ »
(رواه مسلم)
(رواه مسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৭
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৭. হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় রাস্তায় একটি খেজুর দেখতে পেলেন। তিনি বললেন: আমার যদি এ আশংকা না হত যে, এটা যাকাতের কোন মাল হবে, তাহলে আমি এটা উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। -বুখারী, মুসলিম
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتَمْرَةٍ فِي الطَّرِيقِ ، قَالَ : « لَوْلاَ أَنِّي أَخَافُ أَنْ تَكُونَ مِنَ الصَّدَقَةِ لَأَكَلْتُهَا »
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৮
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৮. হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রাযি.-এর পুত্র হযরত হাসান (বাল্যকালে) একবার যাকাতের খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে নিজের মুখে দিয়ে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এটা দেখে মুখে কাখ্ কাখ্ শব্দ করলেন। (অবুঝ শিশুরা মুখে কোন অখাদ্য নিলে আমরা যেমন আখ, ওয়াক্, ছি, থু ইত্যাদি শব্দ করে থাকি) যাতে তিনি এটা ফেলে দেন। তারপর বললেন: তুমি কি জান না যে, আমরা (বনী হাশেম) যাকাত-সদাকা খাই না। বুখারী, মুসলিম
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : أَخَذَ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ الصَّدَقَةِ ، فَجَعَلَهَا فِي فِيهِ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « كِخْ كِخْ » لِيَطْرَحَهَا ، ثُمَّ قَالَ : « أَمَا شَعَرْتَ أَنَّا لاَ نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ »
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ১৯
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১৯. হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে যখন কোন খাদ্য-সামগ্রী নিয়ে আসা হত, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন যে, এটা কি হাদিয়া, না সদাকা? যদি বলা হত যে, এটা সদাকা, তাহলে তিনি সাথীদেরকে (অর্থাৎ, ঐসব সাথীদেরকে যাদের জন্য সদাকা জায়েয, যেমন, আসহাবে সুফফা,) বলতেন যে, তোমরা খেয়ে নাও এবং তিনি নিজে এখান থেকে খেতেন না। আর যদি বলা হত যে, এটা হাদিয়া, তাহলে তিনি নিজেও এর দিকে হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খেয়ে নিতেন।-বুখারী, মুসলিম
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ : « أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ؟ » ، فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ ، قَالَ لِأَصْحَابِهِ : « كُلُوا » ، وَلَمْ يَأْكُلْ ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ ، ضَرَبَ بِيَدِهِ ، فَأَكَلَ مَعَهُمْ.
(رواه البخارى ومسلم)
(رواه البخارى ومسلم)
তাহকীক:
হাদীস নং: ২০
যাকাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যাকাত-সদাকার হকদার কারা
২০. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আযাদকৃত গোলাম হযরত আবু রাফে রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বনী মাখযূমের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরণ করলেন। ঐ মাখযুমী লোকটি আবু রাফেকে বলল, তুমিও আমার সাথে চল, যাতে তুমিও এখান থেকে কিছু পেয়ে যাও। আর রাফে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত তোমার সাথে যেতে পারব না। তারপর আবু রাফে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর খেদমতে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি উত্তরে বললেন: আমাদের জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল নয়, আর কোন পরিবারের গোলামও ঐ পরিবারের লোকদের মধ্যেই গণ্য। (তাই আমাদের মত তোমার জন্যও যাকাত গ্রহণ করা জায়েয নয়।) -তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ ابْنِ أَبِي رَافِعٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ رَجُلًا مِنْ بَنِي مَخْزُومٍ عَلَى الصَّدَقَةِ ، فَقَالَ لِأَبِي رَافِعٍ : اصْحَبْنِي كَيْمَا تُصِيبَ مِنْهَا ، فَقَالَ : لَا ، حَتَّى آتِيَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْأَلَهُ ، فَانْطَلَقَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَسَأَلَهُ فَقَالَ : « إِنَّ الصَّدَقَةَ لَا تَحِلُّ لَنَا ، وَإِنَّ مَوَالِيَ القَوْمِ مِنْ أَنْفُسِهِمْ »
(رواه الترمذى وابوداؤد والنسائى)
(رواه الترمذى وابوداؤد والنسائى)
তাহকীক: