মা'আরিফুল হাদীস
যাকাত অধ্যায়
হাদীস নং: ১২
যাকাত অধ্যায়
যাকাত-সদাকার হকদার কারা
১২. হযরত যিয়াদ ইবনে হারেস সুদায়ী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম। তারপর যিয়াদ একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন (এবং এ প্রসঙ্গে এ ঘটনার উল্লেখ করলেন যে,) এক ব্যক্তি এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর খেদমতে এসে আরয করল, যাকাতের মাল থেকে আমাকে কিছু দিন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আল্লাহ্ তা'আলা যাকাতের হকদার কারা হবে, এ বিষয়টির ফায়সালা কোন নবী অথবা অন্য কারো হাতে ছেড়ে দেননি; বরং নিজেই এর ফায়সালা করে দিয়েছেন এবং এটাকে আট প্রকার লোকের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। অতএব, তুমি যদি ঐ আট প্রকারের মধ্য থেকে কোন এক প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমি তোমাকে যাকাত থেকে অংশ দিব। আবু দাউদ
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ زِيَادِ بْنِ الْحَارِثِ الصُّدَائِيَّ ، قَالَ : أَتَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْتُهُ ، فَذَكَرَ حَدِيثًا طَوِيلًا ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ ، فَقَالَ : أَعْطِنِي مِنَ الصَّدَقَةِ ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَرْضَ بِحُكْمِ نَبِيٍّ وَلَا غَيْرِهِ فِي الصَّدَقَاتِ حَتَّى حَكَمَ هُوَ فَجَزَّأَهَا ثَمَانِيَةَ أَجْزَاءٍ فَإِنْ كُنْتَ مِنْ تِلْكَ الْأَجْزَاءِ أَعْطَيْتُكَ حَقَّكَ".
(رواه ابوداؤد)
(رواه ابوداؤد)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ হাদীসে যাকাত ব্যয়ের ক্ষেত্রসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলার যে হুকুমের বরাত দিয়েছেন সেটা সূরা তওবার এ আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে:
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَالۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَفِی الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِیۡنَ وَفِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
প্রকৃতপক্ষে সদকা ফকীর ও মিসকীনদের হক এবং সেই সকল কর্মচারীদের, যারা সদকা উসূলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের মনোরঞ্জন করা উদ্দেশ্য তাদের। তাছাড়া দাসমুক্তিতে, ঋণগ্রস্তের ঋণ পরিশোধে এবং আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের সাহায্যেও (তা ব্যয় করা হবে)। এটা আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তওবা)
এ হচ্ছে যাকাতের ৮টি ব্যয়খাত, যা স্বয়ং কুরআন মজীদে বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এইঃ (১) ফকীর- অর্থাৎ, সাধারণ গরীব ও বিত্তহীন মানুষ। আরবী ভাষায় ফকীর শব্দটি ধনীর বিপরীতে বলা হয়। এ বিবেচনায় ঐসব গরীব লোক এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ধনী নয়। (অর্থাৎ, যাদের কাছে এ পরিমাণ অর্থ-সম্পদ নেই, যার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে যায়।) শরী‘আতে ধনী হওয়ার মাপকাঠি এটাই। কিতাবুয যাকাতের একেবারে শুরুতে হযরত মো'আয রাযি.-এর হাদীস গিয়েছে যেখানে যাকাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, "এটা ধনীদের থেকে আদায় করা হবে এবং তাদের গরীবদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে।" (২) মিসকীন- ঐসব অভাবী মানুষ যাদের কাছে নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছুই নেই এবং যারা একেবারে রিক্তহস্ত। (৩) যাকাত আদায়কারী- এর দ্বারা যাকাত তহশীলের কর্মচারী উদ্দেশ্য। এরা যদি ধনীও হয় তবুও তাদের শ্রম এবং তাদের সময়ের বিনিময়, অর্থাৎ, বেতন-ভাতা যাকাত থেকে দেওয়া যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে এ রীতিই ছিল। (৪) মুআল্লাফাতুল কুলুব- অর্থাৎ, এমন লোক, যাদের মন যোগানো দ্বীনী ও জাতীয় স্বার্থে খুবই জরুরী মনে হয়। এরা যদি সম্পদশালীও হয় তবুও এ উদ্দেশ্যে যাকাতের মাল থেকে তাদের উপর খরচ করা যায়। (৫) রিকাব- অর্থাৎ, দাস-দাসীদের মুক্তির প্রয়োজনে যাকাত থেকে অর্থ প্রদান করা যায়। (৬) ঋণগ্রস্ত- অর্থাৎ, যাদের উপর এমন কোন আর্থিক বোঝা চেপে বসেছে যে, এটা বহন করার শক্তি ও ক্ষমতা তাদের নেই। যেমন, নিজের আর্থিক সঙ্গতির চেয়ে অধিক ঋণের বোঝা অথবা অন্য কোন অর্থদণ্ড তাদের উপর এসে গেল। এসব লোকের সাহায্যও যাকাত থেকে করা যায়। (৭) আল্লাহর পথে- অধিকাংশ আলেম ও ইমামদের মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য দ্বীনের সাহায্য ও হেফাযত এবং আল্লাহর দ্বীন রক্ষার কাজে নিয়োজিত মুজাহিদদের প্রয়োজন পূরণ। (৮) মুসাফির- এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঐসব মুসাফির, সফরে বা প্রবাস জীবনে যাদের সাহায্যের প্রয়োজন দেখা দেয়।
যিয়াদ ইবনে হারেস সুদায়ীর এ হাদীসে এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আবেদন করেছিলেন যে, আমাকে যাকাত থেকে কিছু দিয়ে দিন। এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা যাকাতের এ আটটি খাত নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তুমি যদি এ আট শ্রেণীর কোন একটির অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমি দিতে পারি। আর যদি এমন না হয়, তাহলে আমার এ এখতিয়ার নেই যে, এ খাত থেকে আমি তোমাকে কিছু দিয়ে দিব। (এখানে কেবল হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যাকাত খরচ করার ক্ষেত্রসমূহের কথা সংক্ষেপে বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত মাসআলা ফেকাহর কিতাবে দেখে নেওয়া যেতে পারে অথবা বিজ্ঞ আলেম ও মুফতীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া যেতে পারে।)
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَالۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَفِی الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِیۡنَ وَفِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
প্রকৃতপক্ষে সদকা ফকীর ও মিসকীনদের হক এবং সেই সকল কর্মচারীদের, যারা সদকা উসূলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের মনোরঞ্জন করা উদ্দেশ্য তাদের। তাছাড়া দাসমুক্তিতে, ঋণগ্রস্তের ঋণ পরিশোধে এবং আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের সাহায্যেও (তা ব্যয় করা হবে)। এটা আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তওবা)
এ হচ্ছে যাকাতের ৮টি ব্যয়খাত, যা স্বয়ং কুরআন মজীদে বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এইঃ (১) ফকীর- অর্থাৎ, সাধারণ গরীব ও বিত্তহীন মানুষ। আরবী ভাষায় ফকীর শব্দটি ধনীর বিপরীতে বলা হয়। এ বিবেচনায় ঐসব গরীব লোক এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যারা ধনী নয়। (অর্থাৎ, যাদের কাছে এ পরিমাণ অর্থ-সম্পদ নেই, যার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে যায়।) শরী‘আতে ধনী হওয়ার মাপকাঠি এটাই। কিতাবুয যাকাতের একেবারে শুরুতে হযরত মো'আয রাযি.-এর হাদীস গিয়েছে যেখানে যাকাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, "এটা ধনীদের থেকে আদায় করা হবে এবং তাদের গরীবদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে।" (২) মিসকীন- ঐসব অভাবী মানুষ যাদের কাছে নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছুই নেই এবং যারা একেবারে রিক্তহস্ত। (৩) যাকাত আদায়কারী- এর দ্বারা যাকাত তহশীলের কর্মচারী উদ্দেশ্য। এরা যদি ধনীও হয় তবুও তাদের শ্রম এবং তাদের সময়ের বিনিময়, অর্থাৎ, বেতন-ভাতা যাকাত থেকে দেওয়া যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে এ রীতিই ছিল। (৪) মুআল্লাফাতুল কুলুব- অর্থাৎ, এমন লোক, যাদের মন যোগানো দ্বীনী ও জাতীয় স্বার্থে খুবই জরুরী মনে হয়। এরা যদি সম্পদশালীও হয় তবুও এ উদ্দেশ্যে যাকাতের মাল থেকে তাদের উপর খরচ করা যায়। (৫) রিকাব- অর্থাৎ, দাস-দাসীদের মুক্তির প্রয়োজনে যাকাত থেকে অর্থ প্রদান করা যায়। (৬) ঋণগ্রস্ত- অর্থাৎ, যাদের উপর এমন কোন আর্থিক বোঝা চেপে বসেছে যে, এটা বহন করার শক্তি ও ক্ষমতা তাদের নেই। যেমন, নিজের আর্থিক সঙ্গতির চেয়ে অধিক ঋণের বোঝা অথবা অন্য কোন অর্থদণ্ড তাদের উপর এসে গেল। এসব লোকের সাহায্যও যাকাত থেকে করা যায়। (৭) আল্লাহর পথে- অধিকাংশ আলেম ও ইমামদের মতে এর দ্বারা উদ্দেশ্য দ্বীনের সাহায্য ও হেফাযত এবং আল্লাহর দ্বীন রক্ষার কাজে নিয়োজিত মুজাহিদদের প্রয়োজন পূরণ। (৮) মুসাফির- এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঐসব মুসাফির, সফরে বা প্রবাস জীবনে যাদের সাহায্যের প্রয়োজন দেখা দেয়।
যিয়াদ ইবনে হারেস সুদায়ীর এ হাদীসে এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আবেদন করেছিলেন যে, আমাকে যাকাত থেকে কিছু দিয়ে দিন। এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা যাকাতের এ আটটি খাত নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তুমি যদি এ আট শ্রেণীর কোন একটির অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমি দিতে পারি। আর যদি এমন না হয়, তাহলে আমার এ এখতিয়ার নেই যে, এ খাত থেকে আমি তোমাকে কিছু দিয়ে দিব। (এখানে কেবল হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যাকাত খরচ করার ক্ষেত্রসমূহের কথা সংক্ষেপে বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত মাসআলা ফেকাহর কিতাবে দেখে নেওয়া যেতে পারে অথবা বিজ্ঞ আলেম ও মুফতীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া যেতে পারে।)
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)