মা'আরিফুল হাদীস
যাকাত অধ্যায়
হাদীস নং: ২
যাকাত অধ্যায়
যাকাত আদায় না করার শাস্তি
২. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিলাওয়াত করেনঃ
وَلَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ہُوَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ شَرٌّ لَّہُمۡ ؕ سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِہٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ
“আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।” (৩ঃ ১৮০) সহীহ বুখারী।
(তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজা শরীফেও এ বিষয়বস্তুটি শব্দের সামান্য পার্থক্যের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযি) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।)
وَلَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ہُوَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ شَرٌّ لَّہُمۡ ؕ سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِہٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ
“আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরে কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।” (৩ঃ ১৮০) সহীহ বুখারী।
(তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজা শরীফেও এ বিষয়বস্তুটি শব্দের সামান্য পার্থক্যের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযি) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।)
کتاب الزکوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ ، مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ (يَعْنِي شِدْقَيْهِ) ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ، ثُمَّ تَلَا : وَلا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ الآية.
(رواه البخارى)
(رواه البخارى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কুরআন ও হাদীসে বিশেষ বিশেষ আমলের যে বিশেষ প্রতিদান ও বিশেষ শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, এসব আমল এবং প্রতিদান ও শাস্তির মধ্যে সর্বদাই বিশেষ কোনো সম্পর্ক থাকে। অনেক সময় এ সম্পর্কটি এমন স্পষ্ট হয়, যা বুঝা আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্যও কোনো কঠিন ব্যাপার হয় না। আর কখনো কখনো এমন সূক্ষ্ম ও গোপন সম্পর্ক থাকে, যা উম্মতের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তত্ত্বজ্ঞানীরাই বুঝতে পারেন।
এ হাদীসে যাকাত আদায় না করার গুনাহের যে বিশেষ শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে—অর্থাৎ, এ সম্পদ এক বিষাক্ত সাপের আকৃতিতে তাকে জড়িয়ে ধরবে এবং তার দুই চোয়ালে দংশন করবে—নিঃসন্দেহে এ গুনাহ এবং এর শাস্তির মধ্যেও একটি বিশেষ সম্বন্ধ রয়েছে। এটা ঐ সম্পর্কই, যার কারণে ঐ কৃপণ মানুষকে যে সম্পদের মোহের কারণে নিজের সম্পদকে আঁকড়ে থাকে এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রেও খরচ করে না—বলা হয় যে, সে নিজের সম্পদ ও ভান্ডারে সাপ হয়ে বসে আছে। আর এ সম্পর্কের কারণেই কৃপণ ও ক্ষুদ্রমনা মানুষ কখনো কখনো এ ধরনের স্বপ্নও দেখে থাকে।
এ হাদীসে এবং উপরে উল্লেখিত সূরা আলে ইমরানের আয়াতে ‘কেয়ামতের দিন’ বলে যে শব্দটি এসেছে, এর দ্বারা বুঝা যায় যে, এ আযাবটি জাহান্নাম অথবা জান্নাতের ফায়সালার পূর্বে হাশরের ময়দানে হবে। হযরত আবূ হুরায়রা (রাযি) বর্ণিত মুসলিম শরীফের এক হাদীসে যারা যাকাত আদায় করে না, এ ধরনের এক বিশেষ স্তরের মানুষের বিশেষ আযাবের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে শেষে বলা হয়েছে—
حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَأَمَّا إِلَى النَّارِ
(এ শাস্তি ঐ সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে, যে পর্যন্ত না বান্দাদের হিসাব-কিতাবের পর তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।)
ঐ সিদ্ধান্ত ও ভাগ্য নির্ধারণের পর এ ব্যক্তি হয়তো জান্নাতের পথ দেখবে অথবা জাহান্নামের পথ। অর্থাৎ, যে পরিমাণ শাস্তি সে হিসাব-নিকাশ ও শেষ ফায়সালার আগে ভোগ করে নিবে, তার পাপের শাস্তি হিসাবে যদি এতটুকুই আল্লাহ্র নিকট যথেষ্ট বিবেচিত হয়, তাহলে এরপর সে ছুটি ও মুক্তি পেয়ে যাবে এবং তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি হাশরের ময়দানের এ আযাব দ্বারা সে দায়মুক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত শাস্তির জন্য তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
اللَّهُمُ احْفَظْنَا وَاغْفِرْ لَنَا وَلَا تُعَذِّبْنَا
কেয়ামত এবং জান্নাত ও জাহান্নামের শাস্তি ও আরাম সম্পর্কে যে মৌলিক কথাগুলো মা'আরিফুল হাদীসের প্রথম খন্ডে লিখা হয়েছে, ঐ কথাগুলো যাদের নজরে আসেনি তারা যেন এগুলো অবশ্যই দেখে নেন। এসব বিষয় সম্পর্কে যে সব খটকা ও সংশয় অনেকের মনে সৃষ্টি হয়, এটা পাঠ করে নিলে ইন্শাআল্লাহ্ এর নিরসন হয়ে যাবে।
এ হাদীসে যাকাত আদায় না করার গুনাহের যে বিশেষ শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে—অর্থাৎ, এ সম্পদ এক বিষাক্ত সাপের আকৃতিতে তাকে জড়িয়ে ধরবে এবং তার দুই চোয়ালে দংশন করবে—নিঃসন্দেহে এ গুনাহ এবং এর শাস্তির মধ্যেও একটি বিশেষ সম্বন্ধ রয়েছে। এটা ঐ সম্পর্কই, যার কারণে ঐ কৃপণ মানুষকে যে সম্পদের মোহের কারণে নিজের সম্পদকে আঁকড়ে থাকে এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রেও খরচ করে না—বলা হয় যে, সে নিজের সম্পদ ও ভান্ডারে সাপ হয়ে বসে আছে। আর এ সম্পর্কের কারণেই কৃপণ ও ক্ষুদ্রমনা মানুষ কখনো কখনো এ ধরনের স্বপ্নও দেখে থাকে।
এ হাদীসে এবং উপরে উল্লেখিত সূরা আলে ইমরানের আয়াতে ‘কেয়ামতের দিন’ বলে যে শব্দটি এসেছে, এর দ্বারা বুঝা যায় যে, এ আযাবটি জাহান্নাম অথবা জান্নাতের ফায়সালার পূর্বে হাশরের ময়দানে হবে। হযরত আবূ হুরায়রা (রাযি) বর্ণিত মুসলিম শরীফের এক হাদীসে যারা যাকাত আদায় করে না, এ ধরনের এক বিশেষ স্তরের মানুষের বিশেষ আযাবের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে শেষে বলা হয়েছে—
حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَأَمَّا إِلَى النَّارِ
(এ শাস্তি ঐ সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে, যে পর্যন্ত না বান্দাদের হিসাব-কিতাবের পর তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।)
ঐ সিদ্ধান্ত ও ভাগ্য নির্ধারণের পর এ ব্যক্তি হয়তো জান্নাতের পথ দেখবে অথবা জাহান্নামের পথ। অর্থাৎ, যে পরিমাণ শাস্তি সে হিসাব-নিকাশ ও শেষ ফায়সালার আগে ভোগ করে নিবে, তার পাপের শাস্তি হিসাবে যদি এতটুকুই আল্লাহ্র নিকট যথেষ্ট বিবেচিত হয়, তাহলে এরপর সে ছুটি ও মুক্তি পেয়ে যাবে এবং তাকে জান্নাতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি হাশরের ময়দানের এ আযাব দ্বারা সে দায়মুক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত শাস্তির জন্য তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
اللَّهُمُ احْفَظْنَا وَاغْفِرْ لَنَا وَلَا تُعَذِّبْنَا
কেয়ামত এবং জান্নাত ও জাহান্নামের শাস্তি ও আরাম সম্পর্কে যে মৌলিক কথাগুলো মা'আরিফুল হাদীসের প্রথম খন্ডে লিখা হয়েছে, ঐ কথাগুলো যাদের নজরে আসেনি তারা যেন এগুলো অবশ্যই দেখে নেন। এসব বিষয় সম্পর্কে যে সব খটকা ও সংশয় অনেকের মনে সৃষ্টি হয়, এটা পাঠ করে নিলে ইন্শাআল্লাহ্ এর নিরসন হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)