রোজা না রাখলে কোনো শাস্তি নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮২
রোজা না রাখলে কোনো শাস্তি নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮২
রোযা হলো একজন মুমিনের ওপর আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ বিধান। যদি কেউ এই রোযা অস্বীকার করে অথবা ‘রোযা না রাখলে জাহান্নামে যাওয়া লাগবে না’ এমন আকিদা লালন করে, সে সুস্পষ্টভাবে কাফের হয়ে যাবে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
এই দুঃসাহস হেযবুত তওহীদ দেখিয়েছে। অর্থাৎ তাদের দাবী হলো–খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য যে আত্মিক চরিত্র গঠন দরকার, সে চরিত্র গঠন করতে রোযা রাখা লাগবে। কিন্তু কেউ যদি রোযা না রাখে, তাহলে তার সে চরিত্র গঠন হবে না। কিন্তু এই রোযা না রাখলে তাকে জাহান্নামে দেয়া হবে না। নাউযুবিল্লাহ। দেখুন, তারা কী লিখেছে–
আল্লাহ কোথাও বলেন নাই যে, সালাহ (নামাজ) ত্যাগ করলে বা সওম (রোজা) ত্যাগ করলে বা হজ্ব ত্যাগ করলে বা অন্য যে কোনো এবাদত ত্যাগ করলে কঠিন শাস্তি দিয়ে এই দীন থেকেই বহিস্কৃত করবেন, শুধু জেহাদ (সংগ্রাম) এবং আল্লাহর রাস্তায় (জেহাদে) ব্যয় ছাড়া। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ১৫
আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দিতে চান না, পরিশুদ্ধ করতে চান। তাই তিনি ইসলামের ভিতরে যে কোনো বাড়াবাড়িকে হারাম করেছেন। সওম না রাখার জন্য তিনি কাউকে জাহান্নামে দিবেন বা শাস্তি দিবেন এমন কথা কোর'আনে কোথাও নেই। তবে মো'মেন সওম (সংযম সাধনা) না রাখলে তার আত্মিক অবনতি হবে, তার কাঙ্ক্ষিত চারিত্রিক গুণাবলী অর্জিত হবে না, সে স্বার্থপর হবে। –সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ১২
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো–রোযা না রাখলে আত্মিক চরিত্র গঠণ হবে না। কিন্তু এর জন্য তাকে জাহান্নামে যাওয়া লাগবে না এবং কোনো শাস্তিতে পতিত হওয়াও লাগবে না।
ইসলাম কী বলে?
হযরত আবু উমামাহ বাহেলী রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন; আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
بَيْنا أنا نائمٌ إذ أتاني رَجُلانِ فأخَذا بضَبْعَيَّ فأتَيا بي جَبَلًا وَعْرًا فقالا لي: اصعَدْ، فقُلتُ: إنِّي لا أُطيقُه، فقالا: إنّا نُسَهِّلُه لكَ، فصَعَدتُ حتّى إذا كُنتُ في سَواءِ الجَبَلِ إذا أنا بأصواتٍ شَديدةٍ، فقُلتُ: ما هذه الأصواتُ؟ قالوا: هذا عُواءُ أهلِ النّارِ، ثمَّ انطَلَق بي، فإذا أنا بقَومٍ مُعَلَّقين بعَراقيبِهِم مُشَقَّقةً أشداقُهم، تَسيلُ أشداقُهم دَمًا، قالَ: قُلتُ: مَن هَؤلاءِ؟ قالَ: هَؤلاءِ الَّذين يُفطِرون قَبْلَ تَحِلَّةِ صَومِهِم
একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম; এমন সময় (স্বপ্নে) আমার নিকট দুই ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমার উভয় বাহুর ঊর্ধ্বাংশে ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ের নিকট উপস্থিত করলেন এবং বললেন, ‘আপনি এই পাহাড়ে চড়ুন।’ আমি বললাম, ‘এ পাহাড়ে চড়তে আমি অক্ষম।’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য চড়া সহজ করে দেব।’ সুতরাং আমি চড়ে গেলাম। অবশেষে যখন পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছলাম তখন বেশ কিছু চিৎকার-ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘এ চিৎকার-ধ্বনি কাদের?’ তাঁরা বললেন, ‘এ হল জাহান্নামবাসীদের চীৎকার-ধ্বনি।’ পুনরায় তাঁরা আমাকে নিয়ে চলতে লাগলেন। হঠাৎ দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কশগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কশ বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি বললাম, ‘ওরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘ওরা হল তারা; যারা সময় হওয়ার পূর্বে-পূর্বেই ইফতার করে নিতো। –মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস নং : ১৫৮৮
এই হাদিস থেকে জানা গেলো, যারা রোযা রেখেও ইফতারীর সময় হওয়ার পূর্বেই ইফতার করবে, তাদের জন্য জাহান্নামে এমন কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভাবুন, রোযা রাখার পরেও তাদের যদি ঐ অবস্থা হয়, তাহলে যারা পূর্ণ দিন মূলেই রোযা রাখে না, তাদের অবস্থা এবং যারা পূর্ণ মাসই রোযা রাখে না, তাদের অবস্থা যে কত করুণ, কত সঙ্গিন তা অনুমেয়!
