সাহাবাদের লক্ষ্যই ছিলো দেশ দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৪
সাহাবাদের লক্ষ্যই ছিলো দেশ দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫৪
সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর নিরবচ্ছিন্ন কাজ ছিলো–রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনীত দীন সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তারা বলতে চায়, সাহাবাদের সকল যুদ্ধের পেছনে মূল টার্গেট ছিলো দেশ দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। তারা লিখেছে- উম্মতে মোহাম্মদী (সাহাবায়ে কেরাম রা.) যত যুদ্ধ কোরেছিল সেগুলির উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরে সেখানে আল্লাহর বিধান জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা। –আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৭ জাতির (সাহাবাদের) প্রতিটি মানুষের জীবনের লক্ষ্য ছিল সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা। –এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭১ আল্লাহর নির্দেশে তাঁর রসূল যে উম্মাহ, যে জাতি গঠন করলেন সেটাকে একটি জাতি না বলে বরং একটি সামরিক বাহিনী বলাই যথার্থ। -ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা : পৃ. ৬১ অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, কোনো অন্যায় পাওয়া ছাড়াই সাহাবারা রা. নিজেরা অগ্রগামী হয়ে যুদ্ধ করতেন দেশ দখল করে ইসলাম কায়েম করার জন্য। ইসলাম কী বলে? এ জমিন আল্লাহর। এক আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত ও হুকুম পালন করা অন্যায়। যে-কারণে সাহাবায়ে কেরাম রা. দেশ থেকে দেশান্তর ছুটে বেড়িয়েছেন এই দাওয়াত নিয়ে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই। এই দাওয়াতে যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সাহাবা রা.-এর ওপর তরবারী তুলেছে, তাদের সাথেই তাঁরা জিহাদ করেছেন। কিন্তু অন্যায়ভাবে কারও ওপর তাঁরা অগ্রীম হামলা করেননি। কারণ ইসলামে অন্যায়ভাবে কারো উপর তরবারী উত্তোলন করা হারাম। এমনকি কোনও কাফেরও যদি ইসলামের বিরুদ্ধে তরবারী না তোলে, তবুও তাকে হত্যা করা নিষেধ। সেখানে সাহাবায়ে কেরাম রা. রাষ্ট্র দখল করতেই যুদ্ধ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন, বলে দাবী করা কী বিকৃতি নয়? অথচ যুদ্ধের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন, وَقَاتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلاَ تَعْتَدُواْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبِّ الْمُعْتَدِينَ যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ করো, তবে সীমালংঘন করো না। নিশ্চিত জেনে রাখো, আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। –সুরা বাকারা : ১৯০ উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ত্বাকী উসমানী দা. বা. বলেন, ‘এ আয়াত সেই সময় নাযিল হয়, যখন মক্কার মুশরিকগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে উমরা আদায়ে বাধা দিয়েছিলো এবং চুক্তি হয়েছিলো যে, পরবর্তী বছর এসে তাঁরা উমরা করবেন। পরবর্তী বছর উমরার ইচ্ছা করা হলে কতিপয় সাহাবীর মনে আশঙ্কা দেখা দেয়, মক্কার মুশরিকগণ চুক্তি ভঙ্গ করে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে দেবে না তো? তেমন কিছু ঘটলে মুসলিমগণ সংকটে পড়ে যাবে। কেননা হারামের সীমানায় এবং বিশেষত যূ-কা‘দা মাসে তারা কিভাবে যুদ্ধ করবেন? কেননা এ মাসে তো যুদ্ধ-বিগ্রহ জায়েয নয়। এ আয়াত নির্দেশনা দিলো যে, নিজেদের পক্ষ থেকে তো যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে কাফিরগণ যদি চুক্তি ভঙ্গ করতঃ নিজেরাই যুদ্ধ শুরু করে দেয়, তবে সেক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ জায়েয। তারা যদি হারামের সীমানা ও পবিত্র মাসের পবিত্রতাকে উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে বসে, তবে মুসলিমদের জন্যও তাদের সে সীমালংঘনের বদলা নেওয়া জায়েয হয়ে যাবে’। সুতরাং বোঝা গেলো, কোনো কারণ ছাড়াই কারো উপর হামলা করা জায়েয নয়। তাহলে সাহাবায়ে কেরামের রা. ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা যে, ‘সাহাবায়ে কেরাম রা. রাষ্ট্র দখল করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যই যুদ্ধ করেছেন এটা কী পরোক্ষভাবে সাহাবাদেরকে আল্লাহর আইন লঙ্ঘনকারী হিশাবে প্রমাণ করার নামান্তর নয়?