ইসলাম যুক্তির আলোকে মানতে হবে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৮
ইসলাম যুক্তির আলোকে মানতে হবে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৮
ইসলাম ধর্মের মূল উৎস ‘ওহী’। কারো কোনো বুদ্ধি বিবেচনা বা যুক্তি দিয়ে ইসলাম চলে না। অবশ্য যুক্তি যদি ওহীর অনুযায়ী হয়, তাহলে মানতে অসুবিধা নেই। তবে যুক্তবর মাধ্যমে ওহীর বিথানকে অমান্য করার সুযোগ নেই।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের দাবি হলো, ইসলাম ধর্ম মানতে হবে যুক্তি দিয়ে। তারা লিখেছে,
ধর্মজীবী তথাকথিত আলেম পুরোহিত শ্রেণীর খপ্পরে পড়ে দীন আজ বিকৃত এবং বিপরীতমুখী আকার ধারণ করেছে। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে এই বিকৃতি পৌঁছায়নি। আর এরই ধারাবাহিকতায় দীন আজ অন্ধ বিশ্বাসের অলীক ধ্যান-ধারণায় পরিণত হয়েছে। বাস্তবে ইসলাম কোন অন্ধভাবে বিশ্বাসের যোগ্য বিষয় নয়। প্রকৃত ইসলাম যুক্তির উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আর তাই যুক্তি দিয়ে ইসলামকে নিরীক্ষণ করতে হয়। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ৩৬
অনেক যুক্তিশীল মানুষ ধর্মের নামে চলা এই কুপমন্ডুকতাকে মেনে নিতে না পেরে পুরোপুরি ধর্মবিদ্বেষী হয়েছেন। -গণমাধ্যমের করণীয়, পৃ. ৫৯ (প্রিন্ট) ৬১ (pdf)
যে ইসলাম আজ নানা প্রকার রূপ নিয়ে আমাদের ১৬০ কোটি মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়। ফলে ইসলাম এ যুগের চাহিদা ও যাবতীয় সমস্যার সমাধানরূপে মানবজাতির দ্বারা বিবেচিত হতে পারছে না। ইসলামের ধারক বাহক আলেমসমাজ তারাও যুক্তির যুগে অন্ধবিশ্বাসকেই ধর্মের ভিত্তি বানিয়ে রেখেছেন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১৫; (pdf) পৃ. ১৪১
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে জানা গেলো হেযবুত তওহীদের বিশ্বাস হলো, 'যুক্তি দিয়েই ইসলাম মানতে হবে'।
ইসলাম কী বলে?
এ সম্পর্কে সবচে চমৎকার করে হযরত আলী রা. বলেছেন,
لَوْ كَانَ الدِّيْنُ بِالرَّاْىِ لَكَانَ اَسْفَلَ الْخُفِّ اَوْلى بِالْمَسْحِ مِنْ اَعْلَاهُ وَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ عَلى ظَاهِرِ خُفَّيْهِ
দ্বীন যদি (মানুষের জন্য) যুক্তি অনুসারেই হতো, তাহলে মোজার উপরের চেয়ে নীচের দিকে মাসাহ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি তাঁর মোজার উপরের দিক মাসাহ করেছেন। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ১৬২
সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলামি আইন-কানুন টোটালটাই নির্ভর করে ওহীর জ্ঞানের ওপর। এরপরও যারা যুক্তিকেই মানদণ্ড আখ্যায়িত করতে চান, তাদের ব্যাপারে মহান রব বলেন,
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
(হে মানুষ,) তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে যে কিতাব নাযিল করা হয়েছে, তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের প্রতিপালককে ছেড়ে অন্য (মনগড়া) অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। (কিন্তু) তোমরা উপদেশ কমই গ্রহণ করো। –সুরা আ’রাফ : ৩
বোঝা গেলো, আল্লাহ পাকের ওহি ব্যতিত নিজের মনগড়া চিন্তা বা অন্য কারো মতবাদ গ্রহণ করার কোনো সুযোগই ইসলামে নেই। আল্লাহ পাক আরও বলেন,
فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। –সুরা কাসাস : ৫৯
উপরন্তু ওহীকে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে যুগে যুগে মানুষের যুক্তি ও প্রমাণ ছিল সামাজিক প্রচলন, পূর্বপুরুষদের বিশ্বাস বা নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ। কুরআনে একে মানব সমাজের বিভ্রান্তির মূল কারণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে । কারণ গায়েব বা অদৃশ্য জগত সম্পর্কে ওহীর বাইরে যা কিছু বলা হয় সবই ধারণা, অনুমান, আন্দায বা কল্পনা হতে বাধ্য। এরকম একটি নড়বড়ে মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার বিধান জেনে আমল করার কথা বলা কোনো বুদ্ধিমানের বক্তব্য হতে পারে না। সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বিবেক ও যুক্তিগ্রাহ্য ওহীকে প্রত্যাখ্যান করে এরূপ আন্দায বা ধারণাকে বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা নিজের মর্জি বা প্রবৃত্তির অনুসরণ বৈ কিছুই নয়। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন
بَلِ اتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَهْوَاءَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۖ فَمَن يَهْدِي مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ ۖ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ
কিন্তু জালেমগণ অজ্ঞানতাবশত তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে। কাজেই আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেছেন, কে তাকে হেদায়াত দিতে পারে? এরূপ লোকের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।–সুরা রূম : ২৯
সুতরাং বোঝা গেলো, নিজেদের মনে উদয় হওয়া যুক্তি ও চিন্তা চেতনার অনুসরণ করে ইসলাম পালন করতে যাওয়া মূর্খতা বৈ কিছু না।
যুক্তি ও শয়তান : যুক্তি যদি মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারতো, তাহলে ইবলিস মালউন ও বিতাড়িত হতো না। ইবলিস তো অনেক বড় ইবাদতগুজার ছিলো। কিন্তু আল্লাহ যখন তাকে নির্দেশ দিলেন,
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ
এবং সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো। তখন তারা সিজদা করলো, কিন্তু ইবলীস করলো না। –সুরা ইসরা : ৬১
ইবলিস সিজদা করলো না কেন? এ সম্পর্কে মহান রব বলেন,
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোকে আদেশ করলাম, তখন কিসে তোকে সিজদা করা হতে বিরত রাখলো? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছো, আর তাকে সৃষ্টি করেছো মাটি দ্বারা।। –সুরা আরাফ : ১২
এখানে ইবলিস আল্লাহ তাআলার বিধান পালন করতে গিয়ে যুক্তির তালে পড়লো। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে বিতাড়িত করে দিয়েছিলেন। সুতরাং বুঝা গেলো, আল্লাহ তাআলার বিধানাবলী টোটালটাই নির্ভর করে ওহির ওপর, যুক্তির ওপর নয়। যুক্তি তালাশ করা ইবলিস শয়তানের কর্ম। সেই একই কাজ বর্তমানে করতে চাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। তাহলে তাদেরকে হেযবুত তওহীদ না বলে, বরং হেযবুশ শয়তান বলাই শ্রেয় নয় কী? মনে রাখা চাই, (Commonsense) তথা আকল বা যুক্তি এগুলো মুতাজিলা সম্প্রদায় ও নাস্তিকদের থিম। তাই চলুন, তাদের অনুসরণ করে যুক্তির তালে পড়ে শয়তান না হয়ে মুসলিম হতে ট্রাই করি।
মতলব কী?
মূলত এ কথার পেছনে তাদের মূল টার্গেট হলো, মানুষকে বেঈমান বানানো। সেটা এভাবে যে, যখন মানুষ ইসলাম পালন করতে যুক্তি তালাশ করতে যাবে, অথচ ইসলামের অসংখ্য বিষয় যুক্তিতে মিলবে না, তখন তাদের সামনে বিরাট প্রশ্নের পাহাড় জমা হবে। আর এ কারণেই যুক্তির পেছনে পড়ে যুক্তিশীল অজস্র মানুষ নাস্তিক হচ্ছে। এটা তারা বুঝেই মানুষকে যুক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।