মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহ'র দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–২৫
মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহ'র দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–২৫
প্রিয় পাঠক, সকল মুসলিম এ ব্যাপারে একমত য, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পরিপূর্ণ করে গেছেন এবং এ ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে অসংখ্য প্রমাণাদি রয়েছে। হেযবুত তওহীদ কী বলে? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানের কুফরী সংগঠণ হেযবুত তওহীদ একটি জঘন্য দাবী করে বসলো যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ কর্তৃক দেওয়া তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করে যেতে পারেননি। নাউযুবিল্লাহ। বিষয়টি তারা তাদের বইগুলোর ভেতর অসংখ্য জায়গায় লিখেছে, বিশ্বনবী তাঁর নবীজীবনের তেইশ বছরে সমস্ত আরব উপদ্বীপে এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করলেন- ইসলামের শেষ সংস্করণ মানব জীবনের একটি অংশে প্রতিষ্ঠা হলো। কিন্তু তার উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ না, তার দায়িত্ব সমস্ত পৃথিবী, সম্পূর্ণ মানব জাতি। এর আগে কোন নবীর উপর সম্পূর্ণ মানবজাতির দায়িত্ব অর্পিত হয় নি। যতদিন সম্পূর্ণ মানব জাতির উপর এই শেষ জীবন বিধান জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন মানুষ জাতি আজকের মতোই অশান্তি, যুদ্ধবিগ্রহ, অবিচারের মধ্যে ডুবে থাকবে- শান্তি, ইসলাম আসবে না এবং বিশ্বনবীর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বও পূর্ণ হবে না। –শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১৫ পূর্ববর্তী নবীদের উপর অর্পিত দায়িত্ব তাঁরা অনেকেই তাদের জীবনেই পূর্ণ করে যেতে পেরেছিলেন, কারণ তাদের দায়িত্বের পরিসীমা ছিল ছোট। কিন্তু এই শেষ জনের দায়িত্ব হলো এত বিরাট যে এক জীবনে তা পূর্ণ করে যাওয়া অসম্ভব। অথচ যতদিন ঐ দায়িত্ব পূর্ণ করা না হবে ততদিন তাঁর উপর আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব অপূর্ণ-অসমাপ্ত থেকে যাবে। –আকিদা, পৃ. ১২; এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৭৪-৭৫ যখন আল্লাহ রাসুল (দঃ) এই দুনিয়া থেকে চোলে গেলেন তখন ওই দায়িত্ব স্বভাবতঃই এসে পোড়লো তাঁর গঠন করা জাতিটির ওপর অর্থাৎ উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর, কারণ রসূলের ওপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব তখনও পূর্ণ হয় নি। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১০৪-১০৫ আল্লাহর রাসূল আংশিকভাবে তার দায়িত্বপূর্ণ করে চলে গেলেন এবং তার বাকি কাজ পূর্ণ করার ভার দিয়ে গেলেন তাঁর সৃষ্ট জাতির উপর, তার উম্মাহর উপর। –শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১৫-১১৬ বিশ্বনবীর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বকে যারা মাঝপথে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন, তারা আল্লাহর দেওয়া বিশ্বনবীর উপাধি, ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ কেও পূর্ণ হতে দেননি। –আকিদা, পৃ. ১৯ তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ করতে দেশ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন। –বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ১০ শেষ নবীর সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন অর্থাৎ তার নবুয়াত সমস্ত পৃথিবী পরিব্যপ্ত। তার উম্মাহর ব্যর্থতার জন্য তাঁর নবুওয়াত সমস্ত মানবজাতিকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি। যদিও সেটাই ছিলো উম্মতে মোহাম্মদীর উপর অর্পিত সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব। –শোষণের হাতিয়ার, পৃ. ৫৮ অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দায়িত্ব নিয়ে মহান রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন, সে দায়িত্ব তিনি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পারেননি, এমনকি তিনি তাঁর দায়িত্ব পূর্ণ করতে যে সাহাবাদেরকে গঠণ করেছিলেন, তাঁরাও সে দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি। এক কথায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ ছিলেন। ইসলাম কী বলে? এ ব্যাপারে সমস্ত মুসলিম একমত যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দায়িত্ব পূর্নাঙ্গরুপে আদায় করে গেছেন। আর এজন্যই তিনি উম্মতের কাছে কামেল-মুকাম্মাল নবী হিশাবে বিবেচিত হয়েছের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মহান রব্ব যে দীন দুনিয়াতে প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করতে গিয়ে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন বটে, কিন্তু তিনি দীন প্রচারের কাজ বন্ধ করে দেননি, বরং ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত এ দীনের ফিকির এবং প্রচারের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সে দায়িত্বে পূর্ণতা লাভ করেই ইহধাম ত্যাগ করেন। এর স্বপক্ষে প্রমাণস্বরূপ বিদায় হজ্বের ভাষণটি দেখতে পারেন। বিদায় হজ্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, হে সাহাবারা, আমি কী আমার দায়িত্ব পরিপূর্ণ ভাবে তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি? প্রতি উত্তরে সাহাবায়ে কেরাম বললেন- قالوا نشهدُ أنَّكَ قد بلَّغتَ وأدَّيتَ ونصحْتَ ثمَّ قالَ بأُصبعِهِ السَّبَّابةِ يرفعُها إلى السَّماءِ وينكبُها إلى النَّاسِ اللَّهمَّ اشهدْ اللَّهمَّ اشهدْ اللَّهمَّ اشهدْ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা সাক্ষী দিচ্ছি–আপনি অবশ্যই আপনার দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন। এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাঁর শাহাদাত আঙ্গুল উঁচিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করে বললেন–হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাকো। তুমি সাক্ষী থাকো। তুমি সাক্ষী থাকো। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১২১৮ আর সে সময়েই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিলেন- الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সুতরাং এ দীনের বিধানাবলী পরিপূর্ণভাবে পালন করো)। –সুরা মায়িদা : ৩ উক্ত আয়াতে মহান রব্ব তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেওয়াটাই প্রমাণ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করেছেন। কারণ যদি তিনি দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন না করতেন, তাহলে দ্বীন পূর্ণ হতো না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বায়াজীদ খান পন্নী এত সুস্পষ্ট আয়াত এবং সহিহ হাদিসকে অস্বীকার করলো কীভাবে? যেখানে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম রা. সাক্ষী দিলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলা-কে তিন তিনবার সাক্ষী রাখলেন, এমনকি আল্লাহ তাআলাও সার্টিফিকেট দান করলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন। অথচ পন্নী বললো–কাফেররা দীনের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে পারেননি। আসতাগফিরুল্লাহ। এমন সুস্পষ্ট আয়াত এবং সহিহ হাদিস থাকার পরও কোনও ব্যক্তি যদি দাবী করে থাকে যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব আদায়ে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি, তাকে কীভাবে ইসলামের বন্ধু মনে করা যায়, সেটা আমার বোধগম্য নয়। অভিযোগ: হেযবুত তওহীদ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ প্রমাণ করতে মূলত একটি আয়াতের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। দেখুন, তারা কী লিখেছে, আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার রাসূলকে সঠিক পথ প্রদর্শন (হেদায়াহ) এবং সত্যদীন দিয়ে প্রেরণ কোরলাম এই জন্যে যে তিনি যেন একে (এই হেদায়াহ ও জীবন ব্যবস্থাকে) পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত জীবন ব্যবস্থার উপর বিজয়ী করেন (কোর'আন-সুরা আল ফাতাহ- ২৮, সুরা আত তওবা- ৩৩ ও সুরা আস সফ- ৯)। অর্থাৎ পৃথিবীতে, মানব জাতির মধ্যে আল্লাহর রাসূলকে প্রেরণের উদ্দেশ্য হোচ্ছে (রাসূলের মাধ্যমে) হেদায়াহ বা পথ প্রদর্শনসহ দীন বা জীবনব্যাবস্থা পাঠানো এবং সেই হেদায়াহ ও দীনকে সমগ্র মানব জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। –এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ১৮ অর্থাৎ উক্ত আয়াত দ্বারা তারা বোঝাতে চায় যে, আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পুরো বিশ্বে ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব প্রদান করেছেন। যেহেতু সেটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করে যেতে পারেননি, সেহেতু তাঁর দায়িত্ব তিনি পুর্ণ করতে পারেননি, ফলে তিনি ব্যাার্থ নবি। নাউযুবিল্লাহ। জবাব: ক. মূলত হেযবুত তওহীদ ‘নবী সা. তাঁর দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি’ বলে যে দাবী করেছে, সেটার স্বপক্ষে তারা নিন্মের আয়াতটি দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا তিনিই নিজ রাসুলকে হেদায়াত ও সত্য দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন, অন্য সমস্ত দীনের উপর তাকে জয়যুক্ত করার জন্য। আর (এর) সাক্ষ্য দানের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। –সুরা ফাতহ্ : ২৮ উক্ত আয়াতে মূলত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একটি, আর সেটা হলো, অন্যান্য সমস্ত ধর্মের উপর ইসলামকে বিজয়ী করা। ইমাম তাবারী রহি. বলেন, ليعلي الإسلام على الملل كلها তিনি যেন এ দীন ইসলামকে অন্য সমস্ত দ্বীন তথা সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করেন। –তাফসীরে তাবারী, খ: ১৪ পৃ: ২১৪ এ আয়াতে কিন্তু বলা হয়েছে, সকল ধর্মের উপর ইসলামকে বিজয়ী করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব। এ ব্যাখ্যাটি শুধু আমাদের নয়, বরং হেযবুত তওহীদও স্বীকার করে। তারা লিখেছে, পূর্ববর্তী নবীদের যে কারণে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তাঁর এই শেষ নবীকেও সেই একই উদ্দেশ্যে পাঠালেন- অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষের জীবনে শান্তি, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁকে (সা.) নির্দেশ দিলেন- পৃথিবীতে যত রকম জীবনব্যবস্থা আছে সমস্তগুলোকে নিষ্ক্রিয়, বাতিল করে এই শেষ জীবনব্যবস্থা মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে (সুরা তওবা ৩৩, সুরা ফাতাহ ২৮, সুরা সফ ৯)। –বিকৃত সুফিবাদ, পৃ. ৯ প্রমাণ হলো, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব ছিলো অন্য ধর্মের ওপর ইসলামকে বিজয়ী করা। কিন্তু পুরো দুনিয়াময় ইসলামকে বিজয়ী করার কথা তো উক্ত আয়াতে নেই। কিন্তু হেযবুত তওহীদ দাবী করেছে যে, পৃথিবীতে মানবজাতির মধ্যে আল্লাহর রাসূলকে প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি নয়, দুইটি। একটি রসুলের মাধ্যমে হেদায়াহ, পথ-প্রদর্শনসহ দীন পাঠানো, দ্বিতীয়টি সেই হেদায়াহ ও দীনকে সমগ্র মানব জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। –এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ৪৬ পূর্ববর্তীদের (নবীদের) দায়িত্ব ছিল তাদের যার যার সমাজ, গোত্র, জাতির মধ্যে সীমিত, আর এই শেষ-নবীর দায়িত্ব হলো সমস্ত পৃথিবীর (সুরা নেসা-১৭০, সুরা ফোরকান-১)। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ১০ অর্থাৎ তারা বোঝাতে চায়, ‘পুরো দুনিয়াময় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব ছিলো’। অথচ এ কথাটা এ আয়াত কেন কোথাও বলা হয়নি? কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পন্নী আয়াতটির অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে বলে দিলো যে, যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো পৃথিবিতে দীন কায়েম করে যেতে পারেননি, সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ কর্তৃক দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি। অথচ পুরো পৃথিবীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্বই ছিলো না। খ. উপরন্তু একজন মানুষের পক্ষে পুরো পৃথিবীময় ইসলাম বিজয় করা কি সম্ভব? চলুন, এটার উত্তর সরাসরি হেযবুত তওহীদ থেকেই নেওয়া যাক। তারা লিখেছে, এই বিশাল দায়িত্ব, সমস্ত পৃথিবীময় এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করা এক জীবনে অসম্ভব। –শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১১৫ এই বিশাল দায়িত্ব যে এক জীবনে পালন করার প্রশ্নই আসে না তা তিনি এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তিনিও জানেন, আর যার উপর অর্পণ করেছেন তিনিও জানেন। –শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১৩৩-১৩৪ এই শেষ জনের (মুহাম্মাদ স.) দায়িত্ব হলো এত বিরাট যে এক জিবনে তা পূর্ণ করে যাওয়া অসম্ভব।অথচ যতদিন ঐ দায়িত্ব পূর্ণ করা না হবে ততদিন তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়ীত্ব অপূর্ণ-অসমাপ্ত থেকে যাবে। –আকিদা, পৃ. ১২ অর্থাৎ হেযবুত তওহীদের এ বক্তব্যগুলো থেকে বোঝা গেলো–‘পুরো বিশ্বময় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব ছিলো’ বলে যে দাবী তারা করছে, সে দায়িত্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এক জিবনে পূর্ণ করা সম্ভব নয়। তার অর্থ এই দাঁড়ালো যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর সাধ্যের বাহিরে দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন! অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না। –সুরা বাকারা : ২৮৬ যেহেতু আল্লাহপাক সাধ্যের বাহিরে কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেন না, সেহেতু বিশ্বময় ইসলাম প্রতিষ্ঠার দায়িত্বও আল্লাহ তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দেননি, কিন্তু আয়াতের অপব্যাখ্যা করে সে দায়িত্ব নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাঁকে ব্যার্থ প্রমাণের হীন প্রচেষ্টাটাই করেঅে হেযবুত তওহীদ। যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর সরাসরি মিথ্যা অপবাদ। এর মূল কারণ হলো, পন্নী সাহেবের আরবী সম্পর্কে চরম মুর্খতা। কারণ পন্নী ছিলো আরবীতে একজন নিরক্ষর ব্যক্তি। সে নিজেই লিখেছে, আমি বাংলা জানি,যেটুকু জানা দরকার মানুষের, ইংলিশ জানি, যতটুকু মানুষের জানা দরকার, আমি আরবী জানি না, আরবীতে আমি নিরক্ষর। ঠিক আক্ষরিকভাবে নয়, কিন্তু আমি আরবী জানি না। আর যে এসলাম নিয়ে কথা সেই এসলাম রোয়েছে কোর'আন-হাদীসে আর সেটার ভাষা আরবী। ওখানে আমি বাস্তবিক অর্থে নিরক্ষর। –আল্লাহর মো'জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৫ তাহলে একজন আরবী সম্পর্কে নিরক্ষর ব্যক্তি ইসলামের ঠিক-বেঠিক যাচাই করে কীভাবে? কীভাবে সে মুসলিমদের নেতা হয়? কীভাবে সে পবিত্র কুরআনের মতো সাহিত্যপূর্ণ কিতাবের ব্যাখ্যা করতে যায়? কোন সাহসে? নবীজি ﷺ এর ওপর অর্পিত দায়িত্ব কী পূর্ণ হয়েছিলো? মূলত নবী কারীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব ছিলো ‘জাযিরাতুল আরব’-এ দীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। যা তিনি পূর্ণ করেছিলেন। এ বিষয়টি মক্কা বিজয়ের দিন স্পষ্ট হয়েছিলো। কারণ সেদিন জাযিরাতুল আরবে সমস্ত ধর্মের পরাজয় হয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ধর্ম ইসলামেরই একচ্ছত্র বিজয় হয়েছিলো। সমস্ত কুফফার সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিলো। আর এ কথাটিই তাফসীরে রাযীতে এসেছে, المُرادُ لِيُظْهِرَ الإسْلامَ عَلى الدِّينِ كُلِّهِ في جَزِيرَةِ العَرَبِ وقَدْ حَصَلَ ذَلِكَ فَإنَّهُ تَعالى ما أبْقى فِيها أحَدًا مِنَ الكُفّارِ ইসলামকে বিজয়ী করার অর্থ হলো, জাযিরাতুল আরবের (আরব উপদ্বীপ) সমস্ত ধর্মের উপর ইসলামকে বিজিত করা। আর এ বিজয় অর্জন হয়েই গেছে।কারণ আল্লাহ তাআলা সেখানে কোন কাফেরকে আর অবশিষ্ট রাখেননি। –তাফসীরে রাযী, খ. ১৬ পৃ. ৪২ এ কথাটি শুধু আমার নয়, এর স্বপক্ষে খোদ হেযবুত তওহীদও লিখেছে- রসুলুল্লাহ তাঁর জীবদ্দশায় ঐ জাতিকে সঙ্গে নিয়ে জেহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম) চালিয়ে গেলেন এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থার অধীনে এলো। –প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৭৫ আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সেই মাপকাঠি রসুল ভেঙে চুরমার করে দিলেন। –সম্মানিত আলেমদের প্রতি, পৃ. ৪ বাস্তবেই আল্লাহর রসুল এমন শান্তি, এমন নিরাপত্তা, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেলেন । তৎকালীন পৃথিবীর সবচাইতে বিশৃঙ্খল, ঐক্যহীন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত সেই আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। শত্রুকে ভাই বানিয়ে দিলেন। –সূত্রাপুরে এমামের ভাষণ, পৃ. ৭ মক্কা যে রসুলকে একদিন বের করে দিয়েছিল সে মক্কা এই ক্ষণে তাঁর পায়ের তলে। চতুর্দিকে উপরে মুসলিম সেনা কাফেরদের ঘেরাও করে আছে। আল্লাহর রসুলের কৃপার আজ মক্কাবাসীর জীবন। তিনি আজ যাদেরকে জীবন ভিক্ষা দেবেন তারা বাঁচবে, যাদেরকে ঘরে থাকতে দেবেন তারা ঘরে থাকবে, যাদেরকে বাহিরে থাকতে দেবেন তারা বাহিরে থাকবে, রসুলাল্লাহ যাদেরকে আজ লোহিত সাগরে নিক্ষেপ করবেন তারা লোহিত সাগরে নিক্ষিপ্ত হবে। আজকের দিনে মক্কা নগরীতে কারো সাধ্য নেই রসুলাল্লাহর কথাকে অমান্য করে। মক্কায় আজ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের নিরংকুশ বিজয়। –শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ১০৯ সুতরাং পবিত্র কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে মহান রব্ব যে দায়িত্ব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দিয়েছিলেন, অর্থাৎ জাযিরাতুল আরবে অন্য সব ধর্মের ওপর ইসলামকে বিজয়ী করা, সেটা তিনি পূর্ণ করে গেছেন, যা আমরা উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা বোঝা গেলো। কিন্তু পন্নী সাহেব এটা বুঝতে সক্ষম হয়নি, কারণ সে আরবীতে নিরক্ষর ছিলো। আরবীতে নিরক্ষর কোনও মানুষ যে কুরআন-হাদিস না বুঝে বিশ্বনবী সা. সম্পর্কে এতবড় জঘন্য অপবাদ দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না, তাকে এমাম মেনে আমরা জাহান্নামী হচ্ছি না তো? একটু ভেবে দেখবো সবাই। ইনশাআল্লাহ। অভিযোগ : 'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পালন করতে পারেননি" বলে যে দাবী হেযবুত তওহীদ করে থাকে, এর স্বপক্ষে তারা আরেকটি আয়াত দাঁড় করাতে চায়। সেটা হলো, মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর হয়ে যায়। –সুরা বাকারা : ১৯৩ উক্ত আয়াতকে সামনে রেখে তারা লিখেছে, যতদিন না সমগ্র মানব জাতি নিজেদের তৈরি জীবনব্যবস্থা সমূহ পরিত্যাগ করে মোহাম্মদের মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োগ করবে ততদিন তারা সেই অমান্তি,অন্যায় (ফাসাদ) ও যুদ্ধ,রক্তপাতের (সাফাকুদ্দিমা) মধ্যে ডুবে থাকবে,আজকের মত এবং ততদিন বিশ্বনবীর ঐ উপাধী অর্থবহ হবে না,অর্থপূর্ণ হবে না এবং আজও হয়নি।তাঁর উম্মাহ ব্যর্থ হয়েছে তাঁর উপাধিকে পরিপূর্ণ অর্থবহ করতে। –আকীদা, পৃ. ২০ অর্থাৎ যেহেতু সকল ফিতনার অবসান করে, দীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত স্বশস্ত্র সংগ্রাম করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বিশ্বময় ফিতনার অবসান করার আগেই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। সুতরাং তিনি আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে পারেননি। জবাব : আসলে এখানে বায়াজীদ খান পন্নীর আরও একটি চরম ভুল হয়েছে। সে আয়াতটির যথাযথ অর্থ করতে পারেনি এবং বোঝেনি। উক্ত আয়াতটির আসল অর্থ কী? চলুন, এটা সরাসরি হাদিস শরীফ থেকেই দেখে নেয়া যাক। عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَتَاهُ رَجُلَانِ فِيْ فِتْنَةِ ابْنِ الزُّبَيْرِ فَقَالَا إِنَّ النَّاسَ صَنَعُوْا وَأَنْتَ ابْنُ عُمَرَ وَصَاحِبُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَمَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَخْرُجَ فَقَالَ يَمْنَعُنِيْ أَنَّ اللهَ حَرَّمَ دَمَ أَخِيْ فَقَالَا أَلَمْ يَقُلْ اللهُ : (وَقٰتِلُوْهُمْ حَتّٰى لَا تَكُوْنَ فِتْنَةٌ) : فَقَالَ قَاتَلْنَا حَتَّى لَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ وَكَانَ الدِّيْنُ لِلهِ وَأَنْتُمْ تُرِيْدُوْنَ أَنْ تُقَاتِلُوْا حَتَّى تَكُوْنَ فِتْنَةٌ وَيَكُوْنَ الدِّيْنُ لِغَيْرِ اللهِ হযরত ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর কাছে দুই ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা.-এর যুগে সৃষ্ট ফিতনার সময় আগমন করলেন এবং বললেন, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আর আপনি উমার রা.-এর পুত্র এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী! কী কারণে আপনি বের হন না? তিনি উত্তর দিলেন, আমাকে নিষেধ করেছে এই কথা, أَنَّ اللهَ حَرَّمَ دَمَ أَخِيْ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছেন'। তাঁরা দু’জন বললেন, আল্লাহ কী এ কথাও বলেননি যে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো যাবৎ না ফিতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনে উমার রা. বললেন, ফিতনার অবসান ঘটার আগ পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এবং ফলে দীনও আল্লাহ-র জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা ফিতনা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছো, আর যেন আল্লাহ ব্যতিত অন্যের জন্য দ্বীন হয়ে গেছে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৫১৩ প্রিয় পাঠক, এখানে আমি মূল যে বিষয়টি বুঝাতে চাচ্ছি, সেটা হলো, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. সুরা বাকারার ১৯৩ নং আয়াতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর আল্লাহ প্রদত্ব দায়িত্ব বাস্তবায়ণ করেছেন কী না, সেটা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বললেন, قَاتَلْنَا حَتَّى لَمْ تَكُنْ فِتْنَةٌ وَكَانَ الدِّيْنُ لِلهِ ফিতনার অবসান ঘটার আগ পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এবং ফলে দীনও আল্লাহর জন্য হয়ে গেছে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৫১৩ উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, ফিতনার অবসান ঘটাবার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ করার যে দায়িত্ব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দেওয়া হয়েছিলো, সে দায়িত্ব পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। এটা খোদ ইবনে ওমর রা. নিজেই বলে দিলেন। কিন্তু পুরো পৃথিবীতে সংগ্রাম করে দ্বীন বিজয় করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দেননি, বরং যতটুকু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি সেটা সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে করে গেছেন। সুতরাং এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্বে কোনও অপূর্ণতা ছিল না। নবীজি ﷺ এর দায়িত্ব কয়টি? হেযবুত তওহীদ দাবি করেছে যে, পৃথিবীতে মানবজাতির মধ্যে আল্লাহর রাসূলকে প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি নয়, দুইটি। একটি রসুলের মাধ্যমে হেদায়াহ, পথ-প্রদর্শনসহ দীন পাঠানো, দ্বিতীয়টি সেই হেদায়াহ ও দীনকে সমগ্র মানব জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। –এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ৪৬ অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ৪ টি দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। সেগুলো কী কী তা নিন্মোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়। মহান রব বলেন, كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولاً مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ (এ অনুগ্রহ ঠিক সেই রকমই) যেমন আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য হতে, যে তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম দেয় এবং তোমাদেরকে এমন সব বিষয় শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। –সুরা বাকারা : ১৫১ অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে চারটি কাজের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন- ১. কিতাবুল্লাহ পাঠ করে শুনানো। ২. উম্মাহকে আত্মশুদ্ধ করা। ৩. কিতাবুল্লাহ’র শিক্ষা প্রদান করা। ৪. হিকমাহ শিক্ষা দেওয়া। আর এর প্রত্যেকটি তিনি যথাযথভাবে পালন করে গেছেন। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জিবনে পরিপূর্ণভাবে সফল মহান ব্যক্তি ছিলেন। এটা সবাই মানে ও বিশ্বাস করে, এমনকি 'বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী' লেখক মাইকেল এইচ. হার্টের মত একজন অমুসলিমও এ বিষয়টি বিশ্বাস করলেও দাজ্জালের সদস্য পন্নী বিশ্বাস করতে পারল না। বিষয়টা দুঃখজনক। শেষ নোট : বলাবাহুল্য হেযবুত তওহীদ লিখেছে (মক্কার কাফের কুরাইশরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিভিন্ন লোভ দেখালো, তখন তিনি বলেছিলেন,) হয় আল্লাহ আমাকে বিজয়ী করবেন নয়তো মোহাম্মদ এ পথে ধ্বংস হয়ে যাবে। –প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৬১ এখন প্রশ্ন হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী ধ্বংশ হয়েছিলেন? নিশ্চয় না। তাহলে বলতে হবে তিনি বিজয় হয়েছিলেন। যদি তিনি বিজয়ী হয়েই থাকেন, তাহলে তাঁকে ব্যার্থ বলে হেযবুত তওহীদ স্ববিরোধিতা করছে না তো? শুধু কী তাই, হেযবুত তওহীদ আরও লিখেছে, নবী প্রেরিত হোয়েছেন সমস্ত দুনিয়ার জন্য। কিন্তু ভবিষ্যৎবাণী যখন করলেন তখন তিনি দুনিয়া বোললেন না যে তোমাদের দিয়ে সারা দুনিয়া বিজয় হবে, বললেন তোমাদের দিয়ে এই দুইটি সাম্রাজ্য বিজয় হবে। সীমিত কোরে দিলেন। বাস্তবেও তাই হোল। –আল্লাহর মোজেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৮ সেই ক্রীতদাস বেলালকে তিনি (মক্কা বিজয়ের দিন)কাবার উপরে উঠালেন। উঠিয়ে প্রমাণ করে দিলেন মানুষ উর্ধ্বে মানবতা উর্ধ্বে। মানুষকে সর্বোচ্চ আসনে উঠানোর জন্যই তিনি এসেছিলেন। এখানে ঘটেছে রাসূলুল্লাহ রাহমাতাল্লিল আলামিন নামের বহিঃপ্রকাশ। –প্রিয় দেশবাসী, পৃ. ৫৫ এরপরও কী এ কথা বলা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি? যদি পূর্ণ না হয় তাহলে 'রহমাতুল্লিল আলামিন' নামের বহির্প্রকাশ হলো কীভাবে? সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেননি' এমন মন্তব্য করা নিতান্তই তাঁর শানে অপমান করা। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদের নবীকে সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا (হে রাসূল!) আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদাদাতা ও সতর্ককারীরূপে। যাতে (হে মানুষ!) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনো এবং তাঁকে সাহায্য করো ও তাঁকে সম্মান করো এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করো। –সুরা ফাতহ : ৮-৯ সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দায়িত্বে ব্যার্থতার দায় চাপিয়ে পন্নী ও তার অনুসারিরা কুফরী করেছে।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের চেয়ে মুমিন দামী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১৬
পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহপাকের কালাম। পৃথিবীর সব কিছু মাখলুক হলেও আল্লাহ-র কালাম মাখলুক নয়। সুতরাং ...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১২৫৬