মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৭০ টি

হাদীস নং: ১
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার হাকীকত এবং ইসলামে এর স্থান

ইসলামের দৃষ্টিতে সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, কা'বাঘর তাওয়াফ ইত্যাদি ইবাদাত আদায়ের ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জন কেবল অত্যাবশ্যক শর্তই নয় বরং কুরআন হাদীস সূত্রে জানা যায় যে, তা দীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও অন্যতম উদ্দেশ্যও বটে। কুরআন মাজীদে তাই তো ইরশাদ হয়েছে:

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

আল্লাহ্ তাওবাকারীদের ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও ভালবাসেন। (২ সূরা বাকারা: ২২২)
কুবা পল্লীতে বসবাসকারী মু'মিনদের প্রশংসায় কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে:

فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

সেখানে এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা অর্জনকে ভালবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ্ পসন্দ করেন।" (৯ সূরা তাওবা: ১০৮)

উল্লিখিত আয়াত দু'টি থেকেই বুঝা যায় ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব কত বেশী। আলোচ্য গ্রন্থের প্রথম ক্রমিকে সহীহ মুসলিমের বর্ণিত হাদীসখানার অংশ الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيْمَانِ এর শাব্দিক অনুবাদেই এরূপ ইংগিত রয়েছে তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জন ইসলামের একটি বিধান মাত্র নয় বরং ধর্মের ও ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে।

অন্যান্য হাদীসে একে "ঈমানের অর্ধেক" বলেও উল্লেখ রয়েছে।
আমাদের মুহতারাম উস্তাদ শায়খুল মাশায়িখ হযরত শাহওয়ালী উল্লাহ্ (র) এর একটি মূল্যায়ন এখানে উল্লেখের দাবি রাখে। তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ 'হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা'য় তিনি বলেন: "আল্লাহ তা'আলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে এ কথার হাকীকত বুঝিয়েছেন যে, কল্যাণ লাভের রাজপথ হল শরী'আত, যার দিকে আহবান করার লক্ষ্যে নবী-রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছে। এর (শরী'আত) অনেক শাখা রয়েছে এবং প্রত্যেক শাখার শত শত প্রশাখা রয়েছে। কিন্তু একে মোটামুটি চারটি শিরোনামে একত্র করা যেতে পারে। যথা ১. তাহারাত (পবিত্রতা). ২. বিনয় ৩. উদারতা ৪. ন্যায়নিষ্ঠা”।

এরপর শাহওয়ালী উল্লাহ (র) প্রত্যেকটির হাকীকত বর্ণনা করেছেন যা গভীর অভিনিবেশ সহকারে পাঠ করলে একথা পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, নিঃসন্দেহে সমগ্র শরী'আতকে এই চার ভাগে ভাগ করা যায়।
আমি এখানে শাহ সাহেব (র)-এর কেবল সে প্রসঙ্গই আলোচনা করব যাতে তিনি পবিত্রতার হাকীকত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: "কোনো সুস্থ মননের ও পরিচ্ছন্ন মানসিকতার মানুষ যার অন্তর পাশবিকতার দাবি পূরণ করেনি এবং তাতে জড়িয়েও পড়েনি, সে যখন কোনভাবে অপবিত্র হয়ে পড়ে চাই তা পেশাব পায়খানা দ্বারা হোক কি স্ত্রী সম্ভোগ দ্বারা সে নিশ্চয়ই নিজের মধ্যে এক প্রকার সংকোচ, রুচিহীনতা, মালিনতা, গ্লানি এবং অস্বচ্ছতা অনুভব করবে। তারপর যদি সে পেশাব পায়খানা সেরে নেয় এবং ভালভাবে ইস্তিঞ্জা ও উযু করে অথবা যদি সে স্ত্রী সম্ভোগ করে গোসল করে নেয় এবং ভাল কাপড় চোপড় পরে নেয় এবং সুগন্ধি মাখে তবে সে সংকোচ গ্লানি ও অস্বচ্ছতা থেকে সহসা মুক্ত হতে পারে। এছাড়াও সে তার নিজ স্বভাবে প্রবল আনন্দও অনুভব করে। সুতরাং বলা যায়, উপরে বর্ণিত দুই অবস্থার প্রথমটি অপবিত্রতা এবং দ্বিতীয়টি পবিত্রতা নামে পরিচিত। মানুষের মধ্যে যে ব্যক্তি সুস্থ স্বভাব ও প্রকৃতির অধিকারী, সে এ দুই অবস্থার মধ্যেকার ব্যবধান পরিষ্কারভাবে অনুভব করে এবং স্বভাবের দাবি হিসেবে অপবিত্রতা অপসন্দ করে এবং পবিত্রতা পসন্দ করে।"

মানুষের এই পবিত্রাবস্থার সাথে আল্লাহর ফিরিশতাদের সাথে রয়েছে কতই না অপূর্ব মিল। কারণ তাঁরা সর্বদা অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ও জ্যোতির্ময় অবস্থায় দিন কাটান। তাই সর্বক্ষণ পবিত্রাবস্থায় থাকা মানুষকে এনে দেয় ফিরিশতা সূলভমাহাত্ম্য। ফলে মানুষ ও উর্ধ্ব জগতে অবস্থানকারীদের (নৈকট্য প্রাপ্ত ফিরিশতাদের) থেকে উপকৃত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে। পক্ষান্তরে মানুষ যখন অপবিত্র অবস্থায় বিচরণ করে তখন তার সাথে শয়তানের অপূর্ব মিল লক্ষ্য করা যায়। আর তখন তার মধ্যে শয়তানী কুমন্ত্রণা গ্রহণের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। ফলে তার অন্ধকারের গভীর কুঠরীতে তলিয়ে যায়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৪

হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র)-এর উল্লিখিত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, অপবিত্রতা ও পবিত্রতা মানুষের আত্মিক ও সহজাত দু'টি অবস্থার নাম। আমরা যে সকল বস্তুকে নাপাকী এবং পবিত্রতা বলি তা প্রকৃতপক্ষে তার কারণসমূহ মাত্র এবং শরী'আত এই কারণসমূহের উপরই বিধান আরোপ করে এবং তা নিয়ে আলোচনা করে।

আশা করা যায় যে, তাহারাতের হাকীকত এবং মানবাত্মার জন্য তার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করার ক্ষেত্রে হযরত শাহ সাহেব (র)-এর এই ভাষ্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে। এ থেকে আরো বুঝা যায় যে, পবিত্রতা গোটা শরী'আতের এক চতুর্থাংশ বটে।

হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা গ্রন্থের অন্য একস্থানে তাহারাতের বিধান এবং এর তাৎপর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- "তাহারাত তিন প্রকার। যথা ১. অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়া অর্থাৎ যে সকল অবস্থায় গোসল অথবা উযূ ওয়াজিব কিংবা মুস্তাহাব ঐ সকল অবস্থায় গোসল অথবা উযূ করে পবিত্রতা অর্জন করা।
২. প্রকাশ্য ও দৃশ্যমান অপবিত্রতা এবং নাপাকী থেকে শরীর, কাপড় চোপড় বা কোন স্থানকে পবিত্র করা এবং ৩. শরীরের যে সকল স্থান থেকে দুর্গন্ধময় বস্তু অথবা ময়লা বের হয়-তা পরিষ্কার করা, যেমন, দাঁত পরিষ্কার করা, নাকের ময়লা পরিষ্কার করা, নখ কাটা এবং নাভীর নিচের চুল কর্তন করা।" (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, তাওরাত অধ্যায়, ১ম ২য় খণ্ড, পৃ.১৭৩)

নিম্নে সে সব হাদীস উপস্থাপিত হবে তার কিছু অংশ হবে সাধারণভাবে তাহারাতের সাথে সংশ্লিষ্ট যা উল্লিখিত তিন প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। আর কিছু অংশে ঐ তিন প্রকারের কোন এক প্রকারের সাথে সংশ্লিষ্ট। এই ভূমিকার পর তাহারাত সম্পর্কীয় কতিপয় হাদীস পাঠ করা যায়।
১. হযরত আবূ মালিক আশ'আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তাহারাত-পবিত্রতা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। আল-হামদু লিল্লাহ্ আমলের পাল্লা ভরে দেয় এবং সুবহানাল্লাহ্ ও আল-হামদু লিল্লাহ্ পাল্লা ভরে দেয়, কিংবা রাসূলল্লাহ্ বলেন: আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থান ভরে দেয়। সালাত হচ্ছে নূর বা আলো, দান-সাদাকা হচ্ছে দলীল, ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতি, কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেকে ভোর উঠে আপন আত্মাকে ক্রয়-বিক্রয় করে, ফলে সে হয় নিজের মুক্তিদাতা কিংবা ধ্বংসকারী। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآَنِ - أَوْ تَمْلَأُ - مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ ، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ২
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অপবিত্রতার কারণে কবরে শাস্তি
২. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী কারীম ﷺ দু'টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি বললেন: জেনে রেখ এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তবে কোন বিরাট ব্যাপারে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না অর্থাৎ এ থেকে বিরত থাকা কোন কঠিন কাজ ছিল না। তাদের একজনের গুনাহ ছিল এই যে, যে পেশাব কালে আড়াল করত না। (মুসলিমের বর্ণনায় আছে পেশাব থেকে পবিত্র হতো না) আর অপর জনের গুনাহ ছিল, এই যে, সে চোগলখুরী করে বেড়াত। এর পর তিনি খেজুরের তাজা একটি শাখা আনালেন। তারপর তা দু'টুকরা করে উভয় কবরের উপর একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন একাজ করলেন? তিনি বললেন: সম্ভবত এদের শাস্তি কিছুটা লাঘব করা হবে, যতদিন এ তাজা শাখা দু'টো না শুকাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يِقَبْرَيْنِ ، فَقَالَ : " إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ (وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ لَا يَسْتَنْزِهُ) مِنَ البَوْلِ ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ » ، ثُمَّ أَخَذَ جَرِيدَةً رَطْبَةً ، فَشَقَّهَا بِنِصْفَيْنِ ، ثُمَّ غَرَزَ فِي كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً ، فَقَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، لِمَ صَنَعْتَ هَذَا؟ فَقَالَ : « لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ৩
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমার দৃষ্টান্ত তোমাদের জন্য পুত্রের জন্য পিতা সদৃশ। যেভাবে একজন পিতা তার সন্তানের কল্যাণ কামনায় জীবনের নিয়মনীতি ও আদব শিক্ষা দেন ও তেমনি আমি তোমাদের শিক্ষা দান করি। আমি তোমাদের এ শিক্ষাও দিয়ে থাকি যে, তোমরা পায়খানা করার সময় কিবলাকে সামনে অথবা পিছনে রেখে বসবে না অর্থাৎ কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ ফিরে বসবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ইস্তিঞ্জার জন্য তিনটি ঢিলা ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন আর শুকনা গোবরের টুকরা ও হাড় দ্বারা ঢিলা নিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ডানহাত দিয়ে পায়খানা পেশাব পরিষ্কার করতেও নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ ও দারেমী)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ ، أُعَلِّمُكُمْ ، إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ ، وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا. وَأَمَرَ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ. وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ ، وَالرِّمَّةِ. وَنَهَى أنْ يَسْتَطِيبَ الرَّجلُ بِيَمِينِهِ » (رواه ابن ماجه والدارمى)
হাদীস নং: ৪
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৪. হযরত সালমান ফারসী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একবার কাফিরদের তরফ থেকে বিদ্রুপ ছলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমাদের নবী তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দেন এমনকি পেশাব পায়খানার পদ্ধতিও? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে পেশাব পায়খানার সময় কিবলামুখী হয়ে বসতে, ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে, তিনটি ঢিলার কম দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে এবং গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ سَلْمَانَ ، قَالَ : قِيلَ لَهُ : قَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ قَالَ : فَقَالَ : أَجَلْ « لَقَدْ نَهَانَا أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ ، أَوْ بَوْلٍ ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِينِ ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ ، أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৫
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৫. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী কারীম ﷺ যখন ইস্তিঞ্জা করতে যেতেন, আমি ওখন তাঁর জন্য কাঁসার বা পাথরের পাত্রে আবার কখনো চামড়ার পাত্রে পানি এগিয়ে দিতাম। তিনি তা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন। অতঃপর মাটিতে হাত ঘষে নিতেন। এরপর আমি আরো একপাত্র পানি দিলে তিনি তা দ্বারা উযূ করতেন। (আবূ দাউদ)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : « كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَى الْخَلَاءَ ، أَتَيْتُهُ بِمَاءٍ فِي تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ فَاسْتَنْجَى ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ ، ثُمَّ أَتَيْتُهُ بِإِنَاءٍ آخَرَ فَتَوَضَّأَ » (رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ৬
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৬. হযরত আবূ আইউব, জাবির ও আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন: কু'বার মসজিদ সম্পর্কে যখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়:

فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

"সেখানে এমন লোকও আছে যারা পবিত্রতা অর্জন ভালবাসে এবং আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের পসন্দ করেন" (১০, সূরা তাওবা: ১০৮)

তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ হে আনসারগণ! এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ তোমাদের পবিত্রতার প্রশংসা করেছেন। তোমাদের সে পবিত্রতা কি? তাঁরা বললেন: আমরা সালাতের জন্য উযূ এবং অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে গোসল এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে থাকি অর্থাৎ ঢিলা ব্যবহারের পর পানিও ব্যবহার করে থাকি। তিনি বললেন: কারণ এটাই। সুতরাং তোমরা অবশ্যই সর্বদা একাজ করবে। (ইবনে মাজাহ)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِىْ أَيُّوبَ ، وَجَابِرُ ، وَأَنَسُ ، أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ {فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ} قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ ، إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُورِ ، فَمَا طُهُورُكُمْ؟ » قَالُوا : نَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ ، وَنَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ ، وَنَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ. قَالَ : « فَهُوَ ذَاكَ ، فَعَلَيْكُمُوهُ » (رواه ابن ماجه)
হাদীস নং: ৭
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৭. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমরা দু'টি অভিশাপের কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! সে কাজ দু'টি কি? তিনি বললেন: মানুষের চলার পথে অথবা ছায়াযুক্ত স্থানে পেশাব-পায়খানা করা। (সহীহ্ মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ » ، قَالُوا : وَمَا اللَّاعِنَانِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : « الَّذِي يَتَخَلَّى فِي طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ ظِلِّهِمْ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ৮
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৮. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী কারীম ﷺ পেশাব-পায়খানা করতে চাইলে এমন স্থানে চলে যেতেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়। (আবূ দাউদ)
کتاب الطہارت
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، « أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ الْبَرَازَ انْطَلَقَ ، حَتَّى لَا يَرَاهُ أَحَدٌ » (رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ৯
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৯. হযরত আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদিন আমি নবী কারীম ﷺ এর সাথে ছিলাম। তিনি পেশাব করতে একটি দেয়ালের গোড়ায় নরম নিচু জায়গায় চলে গেলেন এবং অতঃপর পেশাব করলেন। এরপর বললেনঃ তোমাদের কেউ পেশাব করতে চাইলে সে যেন উপযুক্ত জায়গা খুঁজে নেয়। (আবূ দাউদ)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَأَرَادَ أَنْ يَبُولَ ، فَأَتَى دَمِثًا فِي أَصْلِ جِدَارٍ فَبَالَ ، ثُمَّ قَالَ : صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ « إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَبُولَ فَلْيَرْتَدْ لِبَوْلِهِ مَوْضِعًا » (رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ১০
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
১০. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন গোসলের জায়গায় পেশাব করে সেখানে গোসল কিংবা উযূ না করে। কেননা অধিকাংশ সন্দেহ (ওয়াসওয়াসা) এসব বিষয় থেকেই সৃষ্টি হয়। (আবূ দাউদ)
کتاب الطہارت
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي مُسْتَحَمِّهِ ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ أَوْ يَتَوَضَّأُ فِيهِ فَإِنَّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ " (رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ১১
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
১১. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে সারজিস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন গর্তে পেশাব না করে। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)
کتاب الطہارت
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَرْجِسَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي جُحْرٍ » (رواه ابوداؤد والنسائى)
হাদীস নং: ১২
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পায়খানায় প্রবেশের দু'আ
১২. হযরত যায়িদ ইবনে আকরাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: পায়খানার স্থানসমূহ হচ্ছে জিন্ শয়তানের উপস্থিতির স্থান। সুতরাং তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে এই দু'আ পাঠ করবে- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ "হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে নর ও নারী শয়তান থেকে পানাহ চাচ্ছি।" (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الطہارت
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ هَذِهِ الْحُشُوشَ مُحْتَضَرَةٌ ، فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ " (رواه ابوداؤد وابن ماجه)
হাদীস নং: ১৩
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পায়খানা থেকে বেরিয়ে আসার পর দু'আ
১৩. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম ﷺ পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন: غُفْرَانَكَ "হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি"। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্)
کتاب الطہارت
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلاَءِ ، قَالَ : غُفْرَانَكَ. (رواه الترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ১৪
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পায়খানা থেকে বেরিয়ে আসার পর দু'আ
১৪. হযরত আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম ﷺ পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন: الْحَمْدُ لِلَّهِ ‌الَّذِي ‌أَذْهَبَ ‌عَنِّي ‌الْأَذَى ، وَعَافَانِي "মহান আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক অপবিত্রতা দূর করলেন এবং আমাকে নিরাপদ রাখলেন।" (সুনানে নাসায়ী)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ ، قَالَ : « الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِي » (رواه النسائى)
হাদীস নং: ১৫
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযু পাপ মোচনের মাধ্যম

উযূঃ উযূর মাহাত্ম্য ও বরকত
আমি হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র)-এর বরাতে পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে সকল মানুষ পাশবিকতার নিগড় উৎরে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন করেছেন, পেশার পায়খানা বা অন্য কোন কারণে তাদের উযূ ভঙ্গ হলে তারা তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঘোর অন্ধকার ও গ্লানি অনুভব করেন। প্রকৃতপক্ষে এই অনুভূতিরই অপর নাম অপবিত্র অবস্থা। ইসলামী শরী'আত এ অপবিত্র অবস্থা দূরীকরণের লক্ষ্যে উযূর ব্যবস্থা করেছে। যে সকল লোক পাশবিকতার নিগড় থেকে মুক্ত এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে দেউলিয়া হয়ে পড়েনি তারা অপবিত্র অবস্থায় নিজেদের অপবিত্রতার দুর্গন্ধ ও অন্ধকার অনুভব করেন এবং মনে করেন তা থেকে উত্তরণের এবং আধ্যাত্মিক পবিত্রতা ও জ্যোতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে কেবল উযূই ভূমিকা পালন করতে পারে। এটাই উযূর প্রকৃত উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু। আর এজন্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম সালাত আদায় করার সময় উযূ আবশ্যকীয় করা হয়েছে। এতদ্ব্যতীত আল্লাহ্ তা'আলা উযূর সঙ্গে তার আরও অনেক অনুগ্রহ ও বরকতের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। নবী কারীম ﷺ যেমন তাঁর উম্মাতকে উযূর পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিয়েছেন। তদ্রুপ ফযীলত ও বরকত সম্পর্কেও বাণী প্রদান করেছেন। কাজেই এ পর্যায়ে কতিপয় হাদীস পাঠ করা যাক।
১৫. হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি উযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমুদয় গুনাহ্ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের ভেতর থেকেও (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ ، حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১৬
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযু পাপ মোচনের মাধ্যম
১৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কোন মুসলমান, কিংবা তিনি বলেছেন, মুসলিম বান্দা যখন উযূ করে তখন মুখ ধোয়ার সাথে, অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার দু চোখের দৃষ্টি পড়েছিল। যখন দু'হাত ধোয় তখন পানির সাথে, অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, সেগুলো তার দু'হাত দিয়ে ধরেছিল। যখন সে দু'পা ধোয় তখন পানির সাথে, অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলোর জন্য তার দু'পা ব্যবহার দ্বারা হয়েছিল। ফলে লোকটি উযূ করার পর সমুদয় গুনাহ্ থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ - أَوِ الْمُؤْمِنُ - فَغَسَلَ وَجْهَهُ ، خَرَجَتْ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنِهِ مَعَ الْمَاءِ ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ ، خَرَجَتْ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ ، خَرَجَ كُلُّ خَطِيئَةٍ مِنْ رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ ، حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১৭
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ উযূ জান্নাতের সকল দরজা উম্মোচনের চাবি
১৭. হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং পূর্ণভাবে উযূ করবে অতঃপর أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, এবং মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল"- পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এরপর সে উক্ত দরজাসমূহের যে কোনটি দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ - أَوْ فَيُسْبِغُ - الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ : أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ ". (رواه مسلم)
হাদীস নং: ১৮
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কিয়ামতের দিন উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে জ্যোতি চমকাবে
১৮. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে আহবান করা হবে, উযূর চিহ্নের দরূন। তাদের চেহারা, হাত ও পা হতে জ্যোতি চমকাবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঔজ্জ্বল্যকে বাড়াতে চায়, সে যেন তাই করে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الوُضُوءِ ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ১৯
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে উযূ করা
১৯. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না যাতে করে আল্লাহ্ তোমাদের পাপরাশি মিটিয়ে দেবেন এবং মর্যাদা সমুন্নত করবেন? সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন: তা হল অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে উযূ করা, মসজিদে আসার জন্য অধিক পদচারণা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রেখ, এটাই হচ্ছে রিবাত- প্রকৃত সীমান্ত প্রহরা। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا ، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ » قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ : « إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ২০
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পূর্ণ গুরুত্বের সাথে উযূ করা ঈমানের লক্ষণ
২০. হযরত সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমরা সঠিক পথে অবিচল থাকো। তবে কখনো তোমরা পূর্ণ অবিচল থাকতে পারবে না (তাই নিজেদের ত্রুটির কথা স্মরণ রাখবে)। জেনে রেখ, তোমাদের কাজ সমূহের মধ্যে সালাত হচ্ছে সর্বোত্তম এবং মু'মিন ব্যতীত কেউই যথোচিত পদ্ধতিতে উযূ করে না। (মালিক, আহমাদ, ইবনে মাজাহ ও দারিমী)
کتاب الطہارت
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اسْتَقِيمُوا وَلَنْ تُحْصُوا ، وَاعْلَمُوا أَنَّ خَيْرَ أَعْمَالِكُمُ الصَّلَاةُ ، وَلَنْ يُحَافِظَ عَلَى الْوُضُوءِ إِلَّا مُؤْمِنٌ " (رواه مالك واحمد وابن ماجه والدارمى)