মা'আরিফুল হাদীস
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
হাদীস নং: ১৬
তাহারাত (পবিত্রতা) অধ্যায়
উযু পাপ মোচনের মাধ্যম
১৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কোন মুসলমান, কিংবা তিনি বলেছেন, মুসলিম বান্দা যখন উযূ করে তখন মুখ ধোয়ার সাথে, অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার দু চোখের দৃষ্টি পড়েছিল। যখন দু'হাত ধোয় তখন পানির সাথে, অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, সেগুলো তার দু'হাত দিয়ে ধরেছিল। যখন সে দু'পা ধোয় তখন পানির সাথে, অথবা বলেছেন, পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার ঐ সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলোর জন্য তার দু'পা ব্যবহার দ্বারা হয়েছিল। ফলে লোকটি উযূ করার পর সমুদয় গুনাহ্ থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ - أَوِ الْمُؤْمِنُ - فَغَسَلَ وَجْهَهُ ، خَرَجَتْ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنِهِ مَعَ الْمَاءِ ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ ، خَرَجَتْ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ ، خَرَجَ كُلُّ خَطِيئَةٍ مِنْ رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ ، حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ » (رواه مسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আলোচ্য হাদীসে কয়েকটি অংশের ব্যাখ্যা- ১. উপরে বর্ণিত হাদীস দু'টিতে উযূর পানির সাথে দেহ থেকে সমুদয় গুনাহ দূরীভূত হবার বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। অথচ দৃশ্যমান ময়লার ন্যায় গুনাহ'র ময়লা এমন বস্তু নয় যা পানির সাথে চলে যাবে এবং ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোন কোন ভাষ্যকার এর ব্যাখ্যায় বলেন, গুনাহ বিদূরিত হবার তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ্ কর্তৃক পাপমোচন এবং তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ। কিছু সংখ্যক ভাষ্যকারের মতে, মানুষ তার যে সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ দ্বারা গুনাহের কাজ করে, প্রথমত তার খারাপ প্রভাব উক্ত অঙ্গসমূহে, তারপর তা অন্তরে বসে যায়। এরপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশের আলোকে নিজকে পবিত্র করার লক্ষ্যে নবী কারীম ﷺ প্রদর্শিত সুন্নাত পদ্ধতি অনুযায়ী উযূ করে তখন সে যে সকল অঙ্গ দ্বারা গুনাহ্ করেছিল এবং গুনাহের মন্দপ্রভাব যে সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং অন্তরে যে গুনাহ্ বসে গিয়েছিল উযূর পানির সাথে তা সম্পূর্ণভাবে দূর হয়ে যায়। এর সাথে সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার গুনাহসমূহও ক্ষমা করা হয়। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অধমের নিকট হাদীসে বর্ণিত শব্দের অধিক কাছাকাছি।
২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে মুখমণ্ডল ধোয়ার সাথে কেবল চোখের গুনাহ বিদূরিত হবার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। অথচ মুখমণ্ডলে চোখ ব্যতীত নাক, জিহ্বা ও মুখ রয়েছে এবং এসব অঙ্গের সাথেও কোন কোন পাপের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এর ব্যাখ্যায় বলা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ হাদীসে সামগ্রিকভাবে উযূর অঙ্গসমূহের কথা বলেন নি, বরং উদাহরণ স্বরূপ চোখ, হাত ও পায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়কে আরও বিস্তারিত এক হাদীস ইমাম মালিক এবং-নাসাঈ (র) আবদুল্লাহ্ সানাবিহী (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসে কুলি ও নাকে পানি দেওয়ার সাথে সাথে জিহ্বা, মুখ ও নাকের গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ হওয়ার বিষয়ও উল্লিখিত হয়েছে।
৩. সৎকাজের এমন শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে যে, তা গুনাহের দাগ ও চিহ্ন ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে: إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ "সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটিয়ে দেয়" (১১, সূরা হৃদঃ ১১৪)
উল্লিখিত হাদীস সমূহে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিশেষ বিশেষ সৎকর্মের নাম ধরে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তা হচ্ছে, অমুক সৎকাজ গুনাহ মিটিয়ে দেয়, অমুক সৎকাজে গুনাহ মাফ হয়ে যায়, অমুক সৎকাজ দ্বারা গুনাহের প্রতিবিধান হয়ে যায়। পূর্বেও এ বিষয়ক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং সামনেও বিভিন্ন অনুচ্ছেদ বর্ণিত হবে। কোন কোন হাদীসে নবী কারীম ﷺ স্পষ্টরূপে বলেছেন: এসব নেককাজের বরকতে সগীরা গুনাহসমূহে বিমোচিত হয়ে যায়। এ সূত্র ধরে হকপন্থী আলিমগণ বলেন: সৎকাজ দ্বারা কেবলমাত্র সগীরা গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়। কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছে: إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ "তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলো মোচন করব।" (৪, সূরা নিসাঃ ৩১)
মোদ্দাকথা, উল্লিখিত দু'টি হাদীসে উযূর বরকতে যে সকল গুনাহ বিধৌত ও বিদূরিত হওয়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে তার দ্বারা সগীরা গুনাহসমূহে বুঝানো হয়েছে। কবীরা গুনাহর বিষয়টি খুবই গুরুতর এ থেকে উত্তরণের পথ একটাই, আর তা হচ্ছে তাওবা।
২. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে মুখমণ্ডল ধোয়ার সাথে কেবল চোখের গুনাহ বিদূরিত হবার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। অথচ মুখমণ্ডলে চোখ ব্যতীত নাক, জিহ্বা ও মুখ রয়েছে এবং এসব অঙ্গের সাথেও কোন কোন পাপের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এর ব্যাখ্যায় বলা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ হাদীসে সামগ্রিকভাবে উযূর অঙ্গসমূহের কথা বলেন নি, বরং উদাহরণ স্বরূপ চোখ, হাত ও পায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়কে আরও বিস্তারিত এক হাদীস ইমাম মালিক এবং-নাসাঈ (র) আবদুল্লাহ্ সানাবিহী (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসে কুলি ও নাকে পানি দেওয়ার সাথে সাথে জিহ্বা, মুখ ও নাকের গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ হওয়ার বিষয়ও উল্লিখিত হয়েছে।
৩. সৎকাজের এমন শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে যে, তা গুনাহের দাগ ও চিহ্ন ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে: إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ "সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটিয়ে দেয়" (১১, সূরা হৃদঃ ১১৪)
উল্লিখিত হাদীস সমূহে রাসূলুল্লাহ ﷺ বিশেষ বিশেষ সৎকর্মের নাম ধরে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তা হচ্ছে, অমুক সৎকাজ গুনাহ মিটিয়ে দেয়, অমুক সৎকাজে গুনাহ মাফ হয়ে যায়, অমুক সৎকাজ দ্বারা গুনাহের প্রতিবিধান হয়ে যায়। পূর্বেও এ বিষয়ক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং সামনেও বিভিন্ন অনুচ্ছেদ বর্ণিত হবে। কোন কোন হাদীসে নবী কারীম ﷺ স্পষ্টরূপে বলেছেন: এসব নেককাজের বরকতে সগীরা গুনাহসমূহে বিমোচিত হয়ে যায়। এ সূত্র ধরে হকপন্থী আলিমগণ বলেন: সৎকাজ দ্বারা কেবলমাত্র সগীরা গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়। কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছে: إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ "তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলো মোচন করব।" (৪, সূরা নিসাঃ ৩১)
মোদ্দাকথা, উল্লিখিত দু'টি হাদীসে উযূর বরকতে যে সকল গুনাহ বিধৌত ও বিদূরিত হওয়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে তার দ্বারা সগীরা গুনাহসমূহে বুঝানো হয়েছে। কবীরা গুনাহর বিষয়টি খুবই গুরুতর এ থেকে উত্তরণের পথ একটাই, আর তা হচ্ছে তাওবা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)