মা'আরিফুল হাদীস

পবিত্রতা অধ্যায়

হাদীস নং:
পবিত্রতা অধ্যায়
পেশাব পায়খানার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা
৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমার দৃষ্টান্ত তোমাদের জন্য পুত্রের জন্য পিতা সদৃশ। যেভাবে একজন পিতা তার সন্তানের কল্যাণ কামনায় জীবনের নিয়মনীতি ও আদব শিক্ষা দেন ও তেমনি আমি তোমাদের শিক্ষা দান করি। আমি তোমাদের এ শিক্ষাও দিয়ে থাকি যে, তোমরা পায়খানা করার সময় কিবলাকে সামনে অথবা পিছনে রেখে বসবে না অর্থাৎ কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ ফিরে বসবে না। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ইস্তিঞ্জার জন্য তিনটি ঢিলা ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন আর শুকনা গোবরের টুকরা ও হাড় দ্বারা ঢিলা নিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ডানহাত দিয়ে পায়খানা পেশাব পরিষ্কার করতেও নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ ও দারেমী)
کتاب الطہارت
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ ، أُعَلِّمُكُمْ ، إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ ، وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا. وَأَمَرَ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ. وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ ، وَالرِّمَّةِ. وَنَهَى أنْ يَسْتَطِيبَ الرَّجلُ بِيَمِينِهِ » (رواه ابن ماجه والدارمى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পানাহার যেমন মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। ঠিক তেমনি পেশাব মানুষের একান্ত আবশ্যকীয় বিষয়। নবী কারীম ﷺ যেমন মানব জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, ঠিক তেমনি পেশাব-পায়খানা থেকে পবিত্র হওয়ার বিষয়ে সমীচীন অসমীচীন তথা জায়িয না জায়িয ইত্যাদি বিষয়ের দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। উল্লিখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ চারটি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

১. পেশাব পায়খানা করার সময় এমনভাবে বসা চাই যাতে কিবলার দিক সামনে কিংবা পিছনে না থাকে। এ হচ্ছে কিবলার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আদব ও দাবী। প্রত্যেক বিবেকবান সচেতন ব্যক্তির কাছেই পেশাব পায়খানা করার সময় কিবলার মত কোন পবিত্র জিনিস সামনে কিংবা পেছনে রাখা শিষ্টাচার পরিপন্থী কাজ বলে বিবেচিত হয়।

২. ডান হাত সাধারণত পানাহার, লেখা, কোন কিছু ধরা ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। ডানহাত জন্মগতভাবে বামহাতের তুলনায় অধিক শক্তিশালী এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কাজেই তা ইস্তিঞ্জা কালে অপবিত্রতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ব্যবহার না করাই উচিত। বিষয়টি এরূপ যে, প্রত্যেক সচেতন ভদ্র ব্যক্তিই শৈশবে তার সন্তানদের এ শিষ্টাচার ও ভদ্রোচিত পদ্ধতি রপ্ত করানো অত্যাবশ্যক মনে করে।

৩. দিক নির্দেশনা হচ্ছে এই যে, ইস্তিঞ্জা থেকে পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে কমপক্ষে তিনটি ঢিলা ব্যবহার করা চাই। কেননা সাধারণভাবে তিনটি ঢিলার কমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করা যায় না। তবে কেউ যদি তিনের অধিক ঢিলা ব্যবহার করে, তাতে দোষের কিছু নেই। উল্লেখ্য, হাদীসে ইস্তিঞ্জার জন্য পাথর-ঢিলার কথা বলা হয়েছে, তা বিশেষত আরবদের ব্যবহার বিধির দিকে লক্ষ্য করে। নতুবা পাথর ব্যবহার বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই। মাটির ঢিলা হোক বা এমনি ধরনের কোন বস্তু যা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় তাই মূল উদ্দেশ্য। পাথর ব্যতীত অপরাপর ব্যবহারোপযোগী বস্তু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা অসমীচীন হবে না।

৪. চতুর্থ দিক নির্দেশনা হচ্ছে এই যে, কোন জীব-জন্তুর হাড় কিংবা শুকনা গোবর দ্বারা ইস্তিঞ্জা থেকে পবিত্র হওয়ার প্রয়োজন মিটানো উচিত নয়। যদিও জাহিলিয়্যা যুগে আরবরা দু'টি বস্তু পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত। এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ (স.) দু'টি বস্তু দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা থেকে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। মোটকথা হল দু'টি বস্তু দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা প্রত্যেক ভদ্র ও রুচি সম্পন্ন মানুষের কাছে অশোভন বিবেচিত হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান