মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

সালাত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৩৭৪ টি

হাদীস নং: ২৭৮
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১০ ই যিলহজ্জের ফযীলত ও সম্মান
২৭৮. হযরত উম্মু সালমা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যখন যিলহজ্জের প্রথম দশদিন শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করতে চায় সে যেন কুরবানী না করা পর্যন্ত চুল এবং নখ না কাটে। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَاَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ ، فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا ، وَلَا يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا » (رواه مسلم)
হাদীস নং: ২৭৯
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সালাত এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত
জুমু'আ ও দুই ঈদের যেমন সামষ্টিক সালাতের দিন তারিখ সুনির্ধারিত, এছাড়া আরো দুই সালাত সামষ্টিকভাবে আদায় করা হয়। তবে তার দিনক্ষণ তারিখ নির্ধারিত নেই। এর মধ্যে একটি সূর্য গ্রহণের সালাত এবং অপরটি হল বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত (সালাতুল ইস্তিসকা)

সূর্য গ্রহণের সালাত
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ মূলতঃ আল্লাহ্ তা'আলার অসীম কুদরতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। যখন চন্দ্র অথবা সূর্যগ্রহণ হয় তখন অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে মহা মহিমান্বিত আল্লাহর আসনে মাথা ঝুঁকিয়ে তাঁর দয়া ও করুণা প্রার্থনা করা উচিত। উল্লেখ্য, নবী নন্দন হযরত ইব্রাহীমের বয়স যখন দেড় বছর তখন তিনি ইন্তিকাল১ করেন' এবং ঐদিন সূর্যগ্রহণও লেগেছিল। জাহিলিয়া যুগের একটি বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, কোন মহান ব্যক্তির তিরোধান জনিত কারণেই মূলতঃ সূর্যগ্রহণ হয়। যেন তার মৃত্যুতে সূর্যকালো চাদর গায়ে শোকের আচ্ছন্ন হয়। হযরত ইব্রাহীমের ইন্তিকালের দিন সূর্যগ্রহণ হওয়ায় মানুষ উক্ত ভুল ধারণার শিকার হতে পারত। বরং কোন কোন বর্ণনায় আছে, কোন কোন মানুষের মুখে একথা উচ্চারিত হয় যে, তাঁর মৃত্যুতেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তাই সূর্যগ্রহণের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ ভীষণভাবে শংকিত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে জামা'আত সহ দুই রাক'আত সালাত আদায় করেন। এ সালাত ছিল ভিন্ন ধর্মী। তিনি এতে দীর্ঘ কিরা'আত পাঠ করেন এবং কিরা'আতের মধ্যে কখনো কখনো তন্ময় হয়ে ঝুঁকে পড়তেন। আবার সোজা হয়ে কিরা'আত পাঠ করতেন। একইভাবে এ সালাতে তিনি দীর্ঘ রুকু সিজদা করেন এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সালাতে আল্লাহর দরবারে কাতর প্রার্থনা করেন। তারপর লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। কারো মৃত্যু জনিত কারণে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ হওয়ার বদ্ধমূল ধারণা চিরতে বিদূরিত করেন। তিনি বলেন, এ হল, জাহিলিয়া যুগের চিন্তা-চেতনারই ফল যার কোন ভিত্তি নেই। এ হচ্ছে মূলতঃ মহান আল্লাহ্ তা'আলার অসীম কুদ্রতেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাই কখনো সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণ হলে বিনয় নম্রতার সাথে আল্লাহ্ অভিমুখী হওয়া, তাঁর ইবাদাত করা এবং দু'আ করা উচিত। এই দীর্ঘ ভূমিকার পর সূর্য গ্রহণের সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট কতিপয় হাদীস পাঠ করা যেতে পারে।

টিকা: ১. নবীনন্দন হযরত ইব্রাহীম (রা) দশম হিজরীতে ইন্তিকাল করেন এ বিষয় বিপুল সংখ্যক হাদীস বিশারদ ঐকমত্য পোষণ করেন। কারো কারো মতে, তিনি রাবীউল আউওয়াল মাসে ইন্তিকাল করেন। বিগত শতাব্দীর খ্যাতিমান মনীষী মরহুম মাহমূদ পাশা এ বিষয়ে ফরাসী ভাষায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন যার আরবী তরজমা ১৩০৫ হিজরীতে মিসরে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি উক্ত সূর্যগ্রহণের তারিখ দশম হিজরীর ২৯ শে শাওয়াল বলে উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত ঐদিন সকাল সাড়ে আটটায় সূর্যগ্রহণ লেখেছিল।
২৭৯. হযরত মুগীরা ইবনে শু'বা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর যুগে তাঁর ছেলে ইব্রাহীমের ইন্তিকালের দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন লোকেরা বলাবলি শুরু করল যে, ইব্রাহীমের ইন্তিকালের কারণে সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: কারো মৃত্যু জনিত কারণে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হয় না। কাজেই তোমরা গ্রহণ দেখতে পেলে সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنِ المُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، قَالَ : كَسَفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيمُ ، فَقَالَ النَّاسُ : كَسَفَتِ الشَّمْسُ لِمَوْتِ إِبْرَاهِيمَ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ الشَّمْسَ وَالقَمَرَ لاَ يَنْكَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ فَصَلُّوا ، وَادْعُوا اللَّهَ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৮০
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সালাত এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত
২৮০. হযরত আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একবার সূর্যগ্রহণ হলো। নবী কারীম ﷺ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং কিয়ামত হয়ে যাওয়ার আশংকা করতে থাকেন। এরপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর আগে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চাইতে দীর্ঘ সময় দরে কিয়াম ও রুকু-সিজদাসহ সালাত আদায় করেন। তিনি আরো বলেন, এগুলো হলো নিদর্শন যা আল্লাহ্ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সতর্ক করেন। সুতরাং যখনই তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখনই আল্লাহর যিকর দু'আ এবং ইস্তিগফারের দিকে ধাবিত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي مُوسَى ، قَالَ : خَسَفَتِ الشَّمْسُ ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَزِعًا ، يَخْشَى أَنْ تَكُونَ السَّاعَةُ ، فَأَتَى المَسْجِدَ ، فَصَلَّى بِأَطْوَلِ قِيَامٍ وَرُكُوعٍ وَسُجُودٍ رَأَيْتُهُ قَطُّ يَفْعَلُهُ ، وَقَالَ : « هَذِهِ الآيَاتُ الَّتِي يُرْسِلُ اللَّهُ ، لاَ تَكُونُ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ ، وَلَكِنْ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ ، فَافْزَعُوا إِلَى ذِكْرِهِ وَدُعَائِهِ وَاسْتِغْفَارِهِ » (رواه البخارى ومسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৮১
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সালাত এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত
২৮১. হযরত কাবীসা হিলালী (রা) থেকে বির্ণত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হয়। এ সময় তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এত দ্রুত বের হয়ে আসেন যে, তার চাদর মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিল এবং এ সময় মদীনাতে আমি তাঁর সাথে ছিলাম। তারপর তিনি দুই রাক'আত সালাত আদায় করেন, যাতে তিনি দীর্ঘ কিয়াম করেন। তাঁর সালাত শেষ করার সাথে সাথে সূর্যগ্রহণও শেষ হয়। তখন তিনি বললেন: এটা আলাহ্ তা'আলার অন্যতম নিদর্শন, যার মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাদের সতর্ক করে থাকেন। যখন তোমরা এরূপ হতে দেখবে তখন দ্রুত তোমাদের সর্বশেষ ফরয সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করবে। (আবূ দাউদ ও নাসায়ী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ قَبِيصَةَ الْهِلَالِيِّ ، قَالَ : كُسِفَتِ الشَّمْسُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَخَرَجَ فَزِعًا يَجُرُّ ثَوْبَهُ وَأَنَا مَعَهُ يَوْمَئِذٍ بِالْمَدِينَةِ ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، فَأَطَالَ فِيهِمَا الْقِيَامَ ، ثُمَّ انْصَرَفَ وَانْجَلَتْ ، فَقَالَ : « إِنَّمَا هَذِهِ الْآيَاتُ يُخَوِّفُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهَا فَصَلُّوا كَأَحْدَثِ صَلَاةٍ صَلَّيْتُمُوهَا مِنَ الْمَكْتُوبَةِ » . (رواه ابوداؤد والنسائى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৮২
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সালাত এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত
২৮২. হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি তীর-ধনুক নিয়ে মদীনায় অনুশীলন করছিলাম। একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ লাগল। আমি তীর-ধনুক রেখে দিলাম এবং বললাম, আল্লাহর শপথ! সূর্যগ্রহণকালে রাসূলুল্লাহ ﷺ কী করেন আমি অবশ্যই তা দেখব। তিনি বলেন, আমি দেখতে পেলাম, তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে আছেন। হাত তুলে তিনি তাসবীহ্, হামদ, তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) তাকবীর ও দু'আয় মশগুল আছেন। সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাত ও দু'আ করতে থাকেন। এ সালাতে তিনি দু'টি সূরা পাঠ করেন এবং দুই রাক'আত সালাত আদায় করেন। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ : كُنْتُ أَرْتَمِي بِأَسْهُمٍ لِي بِالْمَدِينَةِ فِي حَيَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، إِذْ كَسَفَتِ الشَّمْسُ ، فَنَبَذْتُهَا ، فَقُلْتُ : وَاللهِ لَأَنْظُرَنَّ إِلَى مَا حَدَثَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ ، قَالَ : « فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ قَائِمٌ فِي الصَّلَاةِ رَافِعٌ يَدَيْهِ ، فَجَعَلَ يُسَبِّحُ ، وَيَحْمَدُ ، وَيُهَلِّلُ ، وَيُكَبِّرُ ، وَيَدْعُو ، حَتَّى حُسِرَ عَنْهَا » ، قَالَ : « فَلَمَّا حُسِرَ عَنْهَا ، قَرَأَ سُورَتَيْنِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ » . (رواه مسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৮৩
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সূর্য গ্রহণের সালাত এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত
২৮৩. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সময়ে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে যান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। এরপর রুকু করেন এবং দীর্ঘ রুকু করেন। রুকূ হতে মাথা উঠান এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু পূর্বের দাঁড়াবার সময়ের চাইতে তা কম দীর্ঘ ছিল। এরপর রুকু করেন এবং দীর্ঘ রুকু করেন কিন্তু তা ছিল প্রথম রুকু হতে কিছু কম। এরপর সিজদা করেন, এবং দীর্ঘ সিজদা করেন। তা প্রথম রুকূ হতে কিছু কম। এরপর প্রথম রাক'আতের ন্যায় দ্বিতীয় রাক'আত আদায় করেন। তারপর তিনি ফিরেন। এদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এরপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্য ভাষণ দিতে যেয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করেন। এরপর বলেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। যখন তোমরা চন্দ্র অথবা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে দু'আ করবে, তাকবীর বলবে, সালাত আদায় করবে এবং দান সাদাকা করবে। তিনি বলেন, হে মুহাম্মদ এর উম্মাত। কোন গোলাম বা বাদীর ব্যভিচারে কেউ এত ক্রুদ্ধ ও বিরক্তি বোধ করে না যতটুকু আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর গোলাম বাঁদীর ব্যভিচারে ক্রুদ্ধ হন (তাই তাঁর শাস্তিকে ভয় কর এবং ব্যভিচার ও নাফরমানি থেকে দূরে থাক)
হে মুহাম্মদ এর উম্মাত! আল্লাহর শপথ। যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কাঁদতে বেশি এবং হাসতে কম। পরে তিনি বলেন, আমি কি আল্লাহর নির্দেশ যথাযথভাবে প্রচার করতে পেরেছি? (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّهَا قَالَتْ : خَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ ، فَقَامَ ، فَأَطَالَ القِيَامَ ، ثُمَّ رَكَعَ ، فَأَطَالَ الرُّكُوعَ ، ثُمَّ قَامَ فَأَطَالَ القِيَامَ وَهُوَ دُونَ القِيَامِ الأَوَّلِ ، ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ، ثُمَّ سَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُودَ ، ثُمَّ فَعَلَ فِي الرَّكْعَةِ الْأُخْرَى مِثْلَ مَا فَعَلَ فِي الأُولَى ، ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدْ انْجَلَتِ الشَّمْسُ ، فَخَطَبَ النَّاسَ ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ، ثُمَّ قَالَ : « إِنَّ الشَّمْسَ وَالقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ ، لاَ يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ ، فَادْعُوا اللَّهَ ، وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا » ثُمَّ قَالَ : « يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ ، يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلبَكَيْتُمْ كَثِيرًا اَلَا هَلْ بَلَّغْتُ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৮৪
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত (সালাতুল ইস্তিসকা)

সকল প্রাণীর জীবন জীবিকা পানির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কাজেই কোন এলাকায় দুর্ভিক্ষ ও খরা দেখা দিলে তা সাধারণ বিপদের রূপ নেয়। বরং বলাচলে, এক ধরনের সাধারণ শাস্তির রূপ ধারণ করে। ব্যক্তিগত সমস্যা উত্তরনের লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ যেমন সালাতুল হাজতের (প্রয়োজন পূরনের সালাত) শিক্ষা দিয়েছেন যা ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে, ঠিক একইভাবে সামষ্টিক বিপদ উত্তরনের লক্ষ্যেও একটি সালাত শিক্ষা দিয়েছেন যা সালাতুল ইস্তিসকা (বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত) নামে পরিচিত। ইস্তিসকার আভিধানিক অর্থ পানি প্রার্থনা করা এবং পানি দ্বারা যমীন প্লাবিত করার দু'আ করা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবদ্ধশায় একবার ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তখন বৃষ্টিও বর্ষিত। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীস থেকে উক্ত ঘটনার সবিস্তার বিবরণ পাঠ করা যেতে পারে।
২৮৪. হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে অনাবৃষ্টির অভিযোগ করে। তিনি দিন ক্ষণ ঠিক করে সকলকে ঈদগাহের ময়দানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি মাঠে মিম্বর স্থাপানের নির্দেশ দিলে তা স্থাপিত হয়। আয়েশা (রা.) বলেন, সে দিন সূর্য উঠার সাথে সাথে নবী কারীম ﷺ ময়দানে গিয়ে উক্ত মিম্বরে আরোহন করে সর্বপ্রথম তাকবীর বলেন। তারপর আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা করেন। এরপর তিনি বলেন, তোমরা সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করছ অথচ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন: যদি তোমরা তাঁর নিকট দু'আ কর, তবে তিনি তা কবুল করবেন। এরপর তিনি বলেন: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত বিশ্বজগতের প্রতিপালক। তিনি পরমদাতা, মেহেরবান, কিয়ামতের দিনের একচ্ছত্র অধিপতি। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। হে আল্লাহ্! তুমি আল্লাহ্! তুমি ছাড়া অপর কেউ স্বয়ং সম্পূর্ণ নেই। এবং আমরা তো তোমার মুখাপেক্ষী। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর এবং তার সাহায্যে খাদ্য শস্য উৎপাদনের ব্যবস্থা কর। তার পর তিনি উভয় হাত এত উপরে উঠান যে, তাঁর বগলের সাদা অংশ দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তিনি লোকদের প্রতি পিঠ ফিরিয়ে স্বীয় চাদর মুবারক উল্টিয়ে দেন এবং ঐ সময়েও তাঁর হাত উপরে ছিল। অবশেষে তিনি লোকদের দিকে ফিরে মিম্বর হতে অবতরণের পর দুই রাক'আত সালাত আদায় করেন। এই সময় আল্লাহ্ তা'আলা আকাশে মেঘ সঞ্চার করেন এবং মেঘের গর্জন ও ঘনঘটা শুরু হয়ে যায়। তার পর আল্লাহর হুকুমে এমন বৃষ্টিপাত হতে থাকে যে, নবী কারীম ﷺ মসজিদে নববীতে আসার পূর্বেই সমস্ত এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এর পর তিনি যখন তাদেকে আর্দ্রতা হতে আত্মরক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখেন, তখন এমনভাবে হেসে দেন যে, তাঁর দাঁত মুবারক দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা'আলা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। (আবূ দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ : شَكَا النَّاسُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُحُوطَ الْمَطَرِ ، فَأَمَرَ بِمِنْبَرٍ ، فَوُضِعَ لَهُ فِي الْمُصَلَّى ، وَوَعَدَ النَّاسَ يَوْمًا يَخْرُجُونَ فِيهِ ، قَالَتْ عَائِشَةُ : فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، حِينَ بَدَا حَاجِبُ الشَّمْسِ ، فَقَعَدَ عَلَى الْمِنْبَرِ ، فَكَبَّرَ وَحَمِدَ اللَّهَ ، ثُمَّ قَالَ : « إِنَّكُمْ شَكَوْتُمْ جَدْبَ دِيَارِكُمْ ، وَاسْتَخَارَ الْمَطْرِ عَنْ إِبَّانِ زَمَانِهِ عَنْكُمْ ، وَقَدْ أَمَرَكُمُ اللَّهُ أَنْ تَدْعُوهُ ، وَوَعَدَكُمْ أَنْ يَسْتَجِيبَ لَكُمْ » ، ثُمَّ قَالَ : « الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ ، اللَّهُمَّ أَنْتَ اللَّهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ » ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ، فَلَمْ يَتْرُكِ الرَّفْعِ حَتَّى بَدَا بَيَاضُ إِبِطَيْهِ ، ثُمَّ حَوَّلَ إِلَى النَّاسِ ظَهْرَهُ ، وَقَلَّبَ ، أَوْ حَوَّلَ رِدَاءَهُ ، وَهُوَ رَافِعٌ يَدَيْهِ ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ وَنَزَلَ ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، فَأَنْشَأَ اللَّهُ سَحَابَةً فَرَعَدَتْ وَبَرِقَتْ ، ثُمَّ أَمْطَرَتْ بِإِذْنِ اللَّهِ ، فَلَمْ يَأْتِ مَسْجِدَهُ حَتَّى سَالَتِ السُّيُولُ ، فَلَمَّا رَأَى سُرْعَتَهُمْ إِلَى الْكِنِّ ضَحِكَ ، حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ ، فَقَالَ : « أَشْهَدُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ، وَأَنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ » (رواه ابوداؤد)
হাদীস নং: ২৮৫
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত (সালাতুল ইস্তিসকা)
২৮৫. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়িদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে লোকদের নিয়ে ঈদগাহের দিকে বের হন এবং তাদের নিয়ে দুই রাক'আত সালাত আদায় করেন। এতে তিনি উচ্চকণ্ঠে কিরা'আত পাঠ করেন। এসময় তিনি নিজ হাত দু'টি উপরে তুলে কিবলামুখী হয়ে দু'আ করেন। কিবলামুখী হওয়ার সময় তিনি নিজ চাদর উল্টিয়ে নিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ : خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ يَسْتَسْقِي ، فَصَلَّى بِهِمْ رَكْعَتَيْنِ جَهَرَ بِالقِرَاءَةِ وَاسْتَقْبَلَ القِبْلَةَ يَدْعُوْ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ حِيْنَ اسْتَقْبَلَ القِبْلَةَ. (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৮৬
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত (সালাতুল ইস্তিসকা)
২৮৬. হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার সালাতুল ইস্তিসকার উদ্দেশ্যে সাধারণ পোশাক পরে (মাঠের উদ্দেশ্যে) বের হন। তিনি বিনয় নম্রতা সহকারে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে করতে পথ চলেন। (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ ابْن عَبَّاسٍ قَالَ : خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَاضِعًا مُتَبَذِّلًا ، مُتَخَشِّعًا ، مُتَضَرِّعًا. (رواه الترمذى وابوداؤد والنسائى وابن ماجه)
হাদীস নং: ২৮৭
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জানাযার সালাত এবং তার আগে ও পরে করণীয়
হাদীস বিশারদগণ সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সালাত অধ্যায়ের শেষে জানাযা অধ্যায় সন্নিবেশিত করে তার অধীনে মৃত্যু, মৃত্যুশয্যার রোগ বরং সাধারণ রোগ ব্যাধি ও তখনকার করণীয় বিষয় আলোচনা করেন। এর পর মৃতর গোসল, দাফন-কাফন, জানাযার সালাত, শোকপ্রকাশ, কবর যিয়ারত ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেন। এই নিয়মের অনুসরণে এখানে এ সকল বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী ও আমলসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। এসব হাদীসের সারকথা হল, মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী এবং তার কোন নির্ধারিত সময় নেই। কাজেই মৃত্যুর ব্যাপারে কোন মুসলমানের অচেতন থাকা উচিত নয়, সর্বদা তা স্মরণ রাখা এবং আখিরাতের এই সফরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। বিশেষতঃ যখন কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে তার নিজ দীনী ও ঈমানী অবস্থা সংশোধন করে নেয়া উচিত। এবং আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত। একজন রোগাক্রান্ত হলে অপরজনের সেবা শুশ্রূষা ও সমবেদনা প্রকাশ করে তার চিন্তা হালকা করা উচিত এবং তার মনোরজ্ঞনেরও সাধ্যমত চেষ্ট করা উচিত। রোগ মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহর নাম নিয়ে তার জন্য দু'আ করে তার দেহে ফুঁক দেওয়া উচিত, সাওয়াব লাভ করা যায় এমন কথা বলা এবং আল্লাহর শান ও রহমতের আলোচনা তার সামনে করা উচিত। তবে বিশ্বাস জন্মে যে, রোগী সুস্থ হবে না এবং মুত্যু অত্যাসন্ন এমতাবস্থায় তার অন্তর আল্লাহ্ অভিমুখী করা এবং ঈমানের কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার যথোচিত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তার পর মারা গেলে মৃতের নিকটাত্মীয়দের ধৈর্যধারণ করা উচিত, এবং মৃত্যু সহজাত ব্যাপার, একে আল্লাহর ফয়সালা মনে করে তাদের মাথা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঝুঁকিয়ে দেয়া উচিত, এরূপ দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব প্রাপ্তির আশা করা এবং মৃতের জন্য দু'আ করা উচিত। এরপর মৃতের গোসলের ব্যবস্থা করা কর্তব্য। তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাফন পরানো এবং সুগন্ধি ব্যবহার করানো চাই। এরপর তার জানাযার সালাত আদায় করে নিতে হবে এবং তাতে আল্লাহর তাসবীহ্ ও প্রশংসা, তাঁর মাহাত্ম্যের স্বীকৃতি এবং উম্মাতের (মৃত ব্যক্তিসহ সকল মু'মিনের) পথ প্রদর্শনকারী আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর জন্য রহমতের দু'আ করতে হবে। এসবের পর মৃতের জন্য আল্লাহর দয়া অনুগ্রহ কামনা করে দু'আ করা উচিত। এরপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাকে মাটির মধ্যে রেখে দিতে হবে, যে মাটির অংশ দ্বারা তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর মৃতের শোক সন্তপ্ত নিকটাত্মীয়-স্বজনের সমবেদনা প্রকাশ করা উচিত এবং তাদের সান্ত্বনা দিয়ে দুশ্চিন্তা লাঘবের চেষ্টা করা উচিত।

উল্লিখিত বিষয়গুলোর রহস্য পরিষ্কার, অভিজ্ঞতার নিরিখে দেখা গেছে যে, সাধারণ রোগ-ব্যাধি এবং অপরাপর বিপদের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রদর্শিত কার্যক্রম অনুযায়ী কাজ করা হলে অন্তরে স্বস্তি ও শান্তি ফিরে আসে। তাঁর দেওয়া প্রতিটি শিক্ষা ও নির্দেশনা অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণের ক্ষেত্রে ঔষধরূপে কাজ করে। মৃত্যু আল্লাহর সাক্ষাতের মাধ্যম হওয়ায় তা একজন বান্দার অভিপ্রেত ব্যাপার হয়ে যায়। এগুলো দুনিয়ারী বরকতের সাথে সংশ্লিষ্ট। আখিরাতের বিষয়সমূহ ইনশাআল্লাহ্ সামনে আসবে যা প্রাপ্তি অঙ্গীকার পরবর্তী হাদীসসমূহে করা হয়েছে। এই ভূমিকার পর এ পর্যায়ে কতিপয় হাদীস পাঠ করা যেতে পারে।

মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৮৭. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধ্বংসী মৃত্যুর কথা তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করবে। (তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَكْثِرُوا مِنْ ذِكْرِ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ المَوْتِ. (رواه الترمذى والنسائى وابن ماجه)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৮৮
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৮৮. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার উভয় কাঁধ ধরে বললেন: তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফিরের ন্যায় অথবা পথযাত্রীর মত থাকবে। আর ইবনে উমর (রা) (এই হাদীসের ভিত্তিতে) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করবে না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করবে না। (যেহেতু ততক্ষণ বাঁচবে কিনা জানা নেই) তোমার সুস্থতার অবকাশে তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখবে। আর জীবিতাবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকবে। (বুখারী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَنْكِبِي ، فَقَالَ : « كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ » وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ ، يَقُولُ : « إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ » (رواه البخارى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৮৯
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৮৯. হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে, আল্লাহ্ও তাঁর সাক্ষাৎ কামনা করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপ্রিয় মনে করে, আল্লাহ্ও তাঁর সাক্ষাৎ অপ্রিয় মনে করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৯০
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৯০. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মৃত্যু হল মু'মিনের জন্য উপহার। (বায়হাকীর শু'আবুল ঈমান)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " تُحْفَةُ الْمُؤْمِنِ الْمَوْتُ " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ২৯১
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃত্যু কামনা করা এবং এর জন্য দু'আ করা নিষেধ

অনেক লোক দুনিয়ার কষ্ট ও দুশ্চিন্তার শিকার হয়ে মৃত্যু কামনা করে এবং মৃত্যুর জন্য দু'আও করে, তবে এ কাজ নিতান্ত নির্বুদ্ধিতা, ভীরুতা ও ধৈর্যহীনতার পরিচায়ক এবং ঈমানের দুর্বলতার লক্ষণও বটে। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এ থেকে নিষেধ করেছেন।
২৯১. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে সৎ হলে আরো নেকী অর্জন করবে আর অসৎ হলে (তাওবা করে) আল্লাহর সন্তোষ লাভে সমর্থ হবে। (বুখারী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : « لاَ يَتَمَنَّى أَحَدُكُمُ المَوْتَ إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ ، وَإِمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ » (رواه البخارى)
হাদীস নং: ২৯২
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৯২. হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের কেউ বিপদগ্রস্ত হয়েও যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি সে তা করতেই চায় তবে যেন বলে- اللَّهمَّ ‌احيْيِني ‌ما ‌كانَتِ الحياةُ خيرًا لي وَتوفَنِي إِذا كانتِ الوَفاةُ خيرًا لِي" হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ যে পর্যন্ত আমার জীবন আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلًا ، فَلْيَقُلْ : اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لِي ، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيْرًا لِي " (رواه البخارى ومسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৯৩
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রোগ ব্যাধি মু'মিনের জন্য রহমত এবং পাপের কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ)

রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন যে, মৃত্যুবরণ করা অর্থ অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়া নয় বরং এক জীবন হোক অন্য জীবনে পাড়ি জমানো। মু'মিন ব্যক্তিদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয় এদিক থেকেই মৃত্যু মু'মিনের জন্য উপহার স্বরূপ। তাই তিনি বলেছেন, রোগব্যাধি কোন দুঃখের কিংবা বিপদের বিষয় নয়। বরং একদিক থেকে তা রহমতও বটে। কারণ এর দ্বারা পাপ বিমোচিত হয়। রোগব্যাধি ও অপরাপর বিপদাপদকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য সতর্কবাণী বলে মনে করতে হবে এবং নিজের সংশোধনের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। নিম্নবর্ণিত হাদীসে এসব বিষয়ের শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে।
২৯৩. হযরত আবূ সাঈদ (রা.) সূত্রে নবী কারীম ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: যখন কোন মুসলমান বিপদগ্রস্ত হয়, রোগাক্রান্ত হয়, কোন দুশ্চিন্তার শিকার হয়, কোন প্রকার দুঃখ-কষ্টে পতিত হয় এমন কি তার দেহের কোথাও কাঁটাবিদ্ধ হয় এসব দ্বারা আল্লাহ্ তার পাপরাশি মুচে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا ، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ » (رواه البخارى ومسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৯৪
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রোগ ব্যাধি মু'মিনের জন্য রহমত এবং পাপের কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ)
২৯৪. আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-বলেছেন: কোন মুসলামানের প্রতি যে কোন কষ্ট পৌঁছে থাকুক না কেন, চাই তা রোগ-ব্যাধি বা অন্য কিছু আল্লাহ্ তা'আলা এর দ্বারা তার পাপরাশি ঝেড়ে ফেলেন যে ভাবে গাছ তার পাতা ঝেড়ে ফেলে। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ ، فَمَا سِوَاهُ إِلَّا حَطَّ اللهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ ، كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا » (رواه البخارى ومسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৯৫
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রোগ ব্যাধি মু'মিনের জন্য রহমত এবং পাপের কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ)
২৯৫. হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মু'মিন নারী ও পুরুষের বিপদ লেগেই থাকে। কখনো তার নিজের উপর, কখনো তার ধন-সম্পদে, কখনো তার সন্তান-সন্ততিতে যার দরুন তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এমনকি সে আল্লাহর দরবারে এমন অবস্থায় হাযির হয় যে তার কোন পাপই থাকে না। (তিরমিযী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَا يَزَالُ الْبَلَاءُ بِالْمُؤْمِنِ , وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَمَا عَلَيْهِ مِنْ خَطِيئَةٍ ". (رواه الترمذى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৯৬
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রোগ ব্যাধি মু'মিনের জন্য রহমত এবং পাপের কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ)
২৯৬. মুহাম্মাদ ইবনে খালিদ সুলামী (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর পিতামহ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কোন বান্দার জন্য যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন মর্যাদা নির্ধারিত থাকে এবং সে যদি তা আমল করে অর্জন করতে না পারে তখন আল্লাহ্ তাঁর শরীর, সম্পদ ও সন্তানের দ্বারা পরীক্ষা করেন। তার পর তাকে ধৈর্যের তাওফীক দেন যাতে সে বিপদে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর নির্ধারিত মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আহমাদ ও আবু দাউদ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ خَالِدٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ جَدِّهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ مَنْزِلَةٌ ، لَمْ يَبْلُغْهَا بِعَمَلِهِ ابْتَلَاهُ اللَّهُ فِي جَسَدِهِ ، أَوْ فِي مَالِهِ ، أَوْ فِي وَلَدِهِ ثُمَّ صَبَّرَهُ عَلَى ذَلِكَ حَتَّى يُبْلِغَهُ الْمَنْزِلَةَ الَّتِي سَبَقَتْ لَهُ مِنَ اللَّهِ » (رواه احمد وابوداؤد)
হাদীস নং: ২৯৭
সালাত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ রোগ ব্যাধি মু'মিনের জন্য রহমত এবং পাপের কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ)
২৯৭. হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছান্দ্যে বসবাসকারীরা কিয়ামতের দিন যখন দেখবে যে, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আফসোস করে বলবে, হায় দুনিয়াতে যদি আমাদের চামড়া কাঁচি দ্বারা কাটা হতো। (তিরমিযী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَوَدُّ أَهْلُ العَافِيَةِ يَوْمَ القِيَامَةِ حِينَ يُعْطَى أَهْلُ البَلاَءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالمَقَارِيضِ. (رواه الترمذى)
tahqiq

তাহকীক: