মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ২৮৩
সলাত অধ্যায়
সূর্য গ্রহণের সালাত এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত
২৮৩. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সময়ে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে যান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। এরপর রুকু করেন এবং দীর্ঘ রুকু করেন। রুকূ হতে মাথা উঠান এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু পূর্বের দাঁড়াবার সময়ের চাইতে তা কম দীর্ঘ ছিল। এরপর রুকু করেন এবং দীর্ঘ রুকু করেন কিন্তু তা ছিল প্রথম রুকু হতে কিছু কম। এরপর সিজদা করেন, এবং দীর্ঘ সিজদা করেন। তা প্রথম রুকূ হতে কিছু কম। এরপর প্রথম রাক'আতের ন্যায় দ্বিতীয় রাক'আত আদায় করেন। তারপর তিনি ফিরেন। এদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এরপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্য ভাষণ দিতে যেয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করেন। এরপর বলেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম। কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। যখন তোমরা চন্দ্র অথবা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে দু'আ করবে, তাকবীর বলবে, সালাত আদায় করবে এবং দান সাদাকা করবে। তিনি বলেন, হে মুহাম্মদ এর উম্মাত। কোন গোলাম বা বাদীর ব্যভিচারে কেউ এত ক্রুদ্ধ ও বিরক্তি বোধ করে না যতটুকু আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর গোলাম বাঁদীর ব্যভিচারে ক্রুদ্ধ হন (তাই তাঁর শাস্তিকে ভয় কর এবং ব্যভিচার ও নাফরমানি থেকে দূরে থাক)
হে মুহাম্মদ এর উম্মাত! আল্লাহর শপথ। যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কাঁদতে বেশি এবং হাসতে কম। পরে তিনি বলেন, আমি কি আল্লাহর নির্দেশ যথাযথভাবে প্রচার করতে পেরেছি? (বুখারী ও মুসলিম)
হে মুহাম্মদ এর উম্মাত! আল্লাহর শপথ। যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কাঁদতে বেশি এবং হাসতে কম। পরে তিনি বলেন, আমি কি আল্লাহর নির্দেশ যথাযথভাবে প্রচার করতে পেরেছি? (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّهَا قَالَتْ : خَسَفَتِ الشَّمْسُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ ، فَقَامَ ، فَأَطَالَ القِيَامَ ، ثُمَّ رَكَعَ ، فَأَطَالَ الرُّكُوعَ ، ثُمَّ قَامَ فَأَطَالَ القِيَامَ وَهُوَ دُونَ القِيَامِ الأَوَّلِ ، ثُمَّ رَكَعَ فَأَطَالَ الرُّكُوعَ وَهُوَ دُونَ الرُّكُوعِ الأَوَّلِ ، ثُمَّ سَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُودَ ، ثُمَّ فَعَلَ فِي الرَّكْعَةِ الْأُخْرَى مِثْلَ مَا فَعَلَ فِي الأُولَى ، ثُمَّ انْصَرَفَ وَقَدْ انْجَلَتِ الشَّمْسُ ، فَخَطَبَ النَّاسَ ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ، ثُمَّ قَالَ : « إِنَّ الشَّمْسَ وَالقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ ، لاَ يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ ، فَادْعُوا اللَّهَ ، وَكَبِّرُوا وَصَلُّوا وَتَصَدَّقُوا » ثُمَّ قَالَ : « يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ أَنْ يَزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ ، يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ وَاللَّهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلبَكَيْتُمْ كَثِيرًا اَلَا هَلْ بَلَّغْتُ » (رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সালাত যেহেতু ব্যতিক্রমধর্মী তাই নবী কারীম ﷺও তা ব্যতিক্রমরূপেই আদায় করেন। ফলে অনেক সাহাবী এ বিষয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে শুধু পাঁচজন সাহাবীর রিওয়ায়াত উল্লেখ করা হলো। হাদীস গ্রন্থসমূহে বিশের অধিক সাহাবী সূত্রে এ বিষয়ে সবিস্তার বিবরণ পাওয়া যায়। ইমাম বুখারী (র.) বিভিন্নসূত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ সম্বলিত হাদীস নয় জন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। এসব হাদীস থেকে এ বিষয়ে সবিস্তার বিবরণ জানা যায়। এর মধ্যে অধিকাংশ হাদীসেই একটি বিষয় চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে যে, এ সালাত সাহাবা কিরামের নিকট ছিল একান্তভাবেই নতুন এবং এর পূর্বে তাঁরা কখনো চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত আদায় করেন নি। রিওয়ায়াত সমূহে একথাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত যে, নবী নন্দন ইব্রাহীমের ইন্তিকালের দিনই সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। হাদীস বিশারদগণ বলেছেন: ইব্রাহীম (র.) দশম হিজরী সনে নবী কারীম ﷺ-এর ইন্তিকালের কয়েক মাস পূর্বে ইন্তিকাল করেছিলেন। এর দ্বারা একথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, নবী কারীম ﷺ তাঁর জীবদ্দশায় কেবল একবারই সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করেছিলেন। আর হাদীস সূত্রেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। চন্দ্রগ্রহণের সময়কালীন সালাত আদায় সম্পর্কিত বিষয়টিও আলোচ্য হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু নবী কারীম ﷺ কখনো চন্দ্র গ্রহণের সালাত আদায় করেছেন বলে কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না। সম্ভবত এ কারণ এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি কেবল সূর্যগ্রহণের বিষয় আদিষ্ট হন এবং এর কয়েক মাস পর এ নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। আর এ সময়ের মধ্যে চন্দ্রগ্রহণ হয়নি।
নবী কারীম ﷺ এই সালাত একান্তভাবেই ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে আদায় করেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে কতিপয় নতুন নতুন বিষয় প্রকাশিত হতে থাকে। এক. তিনি এই সালাত দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করেন (যদিও জামা'আতে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর সালাত আদায় করা সচরাচর অভ্যাস পরিপন্থী ছিল বরং লোকদের এ থেকে নিষেধও করতেন)
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মনে হয় তিনি এই সালাতের প্রথম রাক'আতে সূরা বাকারা এবং দ্বিতীয় রাক'আতে সূরা আলে-ইমরান পাঠ করেন। হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এই সালাতে লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি বরং মাটিতে পড়ে যায়। কোন কোন বর্ণনায় আছে, এই সালাতে মানুষ চেতনাহীন হয়ে পড়ে এবং তাদের মাথায় পানি ঢালতে হয়েছিল।
এ সালাতের নতুনত্বের মধ্যে এও ছিল যে, তিনি কিয়াম অবস্থায় হাত তুলে তাসবীহ্ তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর বলে দীর্ঘক্ষণ দু'আ করে। অন্য হাদীসে এ বিস্ময়কর তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে যে, তিনি সালাতে দাঁড়ান অবস্থায় আল্লাহর হুযূরে ঝুঁকে পড়েন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূতে থেকে দাঁড়িয়ে যান এবং কিরা'আত পাঠ করে রুকু-সিজদা করেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে, কিয়াম অবস্থা থেকে কেবল একবার নয় বরং কয়েকবার রুকুর দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।
কোন কোন বর্ণনায় আছে, তিনি এই সালাত আদায় কালে কখনো পিছনে হটে যান আবার কখনো সামনে এগিয়ে যান। আবার কখনো তিনি হাত সামনে সম্প্রসারিত করেন যেমন মানুষ কোন কিছু গ্রহণের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে থাকে। তিনি পরে খুতবায় বলেন: এসময় তাঁর সামনে অদৃশ্য জগতের বহু হাকীকত প্রকাশ পায়। তিনি জান্নাত জাহান্নাম সামনে দেখতে পান। তিনি জাহান্নামের ভয়বাহ মর্মান্তিক শাস্তি প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি এমন বস্তুও দেখেন যা ইতো-পূর্বে কখনো দেখেন নি।
এই সালাতে নবী কারীম ﷺ থেকে যে সকল বিষয় নতুনরূপে প্রকাশ পায় তাহল সালাতে হাত তুলে দীর্ঘক্ষণ দু'আ করা, কিরা'আত পাঠরত অবস্থায় বারবার আল্লাহর সমীপে ঝুঁকে পড়া, কখনো পিছে হটে যাওয়া আবার কখনো সামনে এগিয়ে যাওয়া, কখনো নিজ হাত সামনে বাড়িয়ে দেওয়া এসবই অদৃশ্য বিষয় দর্শনের কারণেই হয়েছে।
জ্ঞাতব্য: নবী নন্দন হয়রত ইব্রাহীমের ইন্তিকালের দিন সূর্যগ্রহণ হওয়ায় তিনি খুতবায় জোর দিতে ঘোষণা করেন যে, এই সূর্যগ্রহণের সাথে আমার বাসভবনের ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। এ ধরনের কিছু মনে করা হবে মারাত্মক ভুল। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর এ সত্যভাষণ ও পবিত্র বাণী তাঁর সত্যতা পবিত্রতার এমনই দলীল যা ভয়ানকভাবে আল্লাহকে অস্বীকার কারীদের মনে অপূর্ব প্রভাব বিস্তার করে। তবে এ প্রভাব কেবল জীবন্ত অন্তরেই অনুভূত হবে।
নবী কারীম ﷺ এই সালাত একান্তভাবেই ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে আদায় করেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে কতিপয় নতুন নতুন বিষয় প্রকাশিত হতে থাকে। এক. তিনি এই সালাত দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করেন (যদিও জামা'আতে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর সালাত আদায় করা সচরাচর অভ্যাস পরিপন্থী ছিল বরং লোকদের এ থেকে নিষেধও করতেন)
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মনে হয় তিনি এই সালাতের প্রথম রাক'আতে সূরা বাকারা এবং দ্বিতীয় রাক'আতে সূরা আলে-ইমরান পাঠ করেন। হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এই সালাতে লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি বরং মাটিতে পড়ে যায়। কোন কোন বর্ণনায় আছে, এই সালাতে মানুষ চেতনাহীন হয়ে পড়ে এবং তাদের মাথায় পানি ঢালতে হয়েছিল।
এ সালাতের নতুনত্বের মধ্যে এও ছিল যে, তিনি কিয়াম অবস্থায় হাত তুলে তাসবীহ্ তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর বলে দীর্ঘক্ষণ দু'আ করে। অন্য হাদীসে এ বিস্ময়কর তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে যে, তিনি সালাতে দাঁড়ান অবস্থায় আল্লাহর হুযূরে ঝুঁকে পড়েন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূতে থেকে দাঁড়িয়ে যান এবং কিরা'আত পাঠ করে রুকু-সিজদা করেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে, কিয়াম অবস্থা থেকে কেবল একবার নয় বরং কয়েকবার রুকুর দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।
কোন কোন বর্ণনায় আছে, তিনি এই সালাত আদায় কালে কখনো পিছনে হটে যান আবার কখনো সামনে এগিয়ে যান। আবার কখনো তিনি হাত সামনে সম্প্রসারিত করেন যেমন মানুষ কোন কিছু গ্রহণের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে থাকে। তিনি পরে খুতবায় বলেন: এসময় তাঁর সামনে অদৃশ্য জগতের বহু হাকীকত প্রকাশ পায়। তিনি জান্নাত জাহান্নাম সামনে দেখতে পান। তিনি জাহান্নামের ভয়বাহ মর্মান্তিক শাস্তি প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি এমন বস্তুও দেখেন যা ইতো-পূর্বে কখনো দেখেন নি।
এই সালাতে নবী কারীম ﷺ থেকে যে সকল বিষয় নতুনরূপে প্রকাশ পায় তাহল সালাতে হাত তুলে দীর্ঘক্ষণ দু'আ করা, কিরা'আত পাঠরত অবস্থায় বারবার আল্লাহর সমীপে ঝুঁকে পড়া, কখনো পিছে হটে যাওয়া আবার কখনো সামনে এগিয়ে যাওয়া, কখনো নিজ হাত সামনে বাড়িয়ে দেওয়া এসবই অদৃশ্য বিষয় দর্শনের কারণেই হয়েছে।
জ্ঞাতব্য: নবী নন্দন হয়রত ইব্রাহীমের ইন্তিকালের দিন সূর্যগ্রহণ হওয়ায় তিনি খুতবায় জোর দিতে ঘোষণা করেন যে, এই সূর্যগ্রহণের সাথে আমার বাসভবনের ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। এ ধরনের কিছু মনে করা হবে মারাত্মক ভুল। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর এ সত্যভাষণ ও পবিত্র বাণী তাঁর সত্যতা পবিত্রতার এমনই দলীল যা ভয়ানকভাবে আল্লাহকে অস্বীকার কারীদের মনে অপূর্ব প্রভাব বিস্তার করে। তবে এ প্রভাব কেবল জীবন্ত অন্তরেই অনুভূত হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)