মা'আরিফুল হাদীস

معارف الحديث

কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৩২১ টি

হাদীস নং: ২১
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ যিকিরের কালেমাসমূহ: সেগুলোর বরকত-ফযীলত
২১. হযরত সা'দ ইবনে আবূ ওক্কাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি একদা নবী করীম ﷺ-এর সাথে তাঁর এক সহধর্মিণীর ঘরে গিয়ে উপনীত হলেন। তাঁর (সেই মহিলার) সম্মুখে তখন কিছু খেজুরের বীচি অথবা পাথরের কণা ছিল, যেগুলোর সাহায্যে তিনি তাসবীহ গুণে গুণে পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন বললেন: আমি কি তোমাকে এর চাইতে সহজতর কিছু বাৎলে দেবো না, (অথবা তিনি বলেছেন: এর চাইতে উত্তম কিছু)। তা হলো:

سُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الْأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَالِكَ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقُ وَاللّٰهُ اَكْبَرُ مِثْلَ ذَالِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَالِكَ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللّٰهُ مِثْلَ ذَالِكَ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ مِثْلَ ذَالِكَ

সুবহানাল্লাহ- সেই পবিত্র আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সংখ্যায় যা তিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানে, সুবহানাল্লাহ সেই সংখ্যানুপাতে, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন যমীনে। সুবহানাল্লাহ সেই সংখ্যানুপাতে, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন এতদুভয়ের মধ্যে। সুবহানাল্লাহ সেই সৃষ্টির সংখ্যানুপাতে, যা তিনি অনাগত কালে সৃষ্টি করবেন। অনুরূপভাবে আল্লাহু আকবর। এবং অনুরূপভাবে আলহামদুলিল্লাহ এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অনুরূপভাবে। এবং লা-হাওলা ওলা কুওওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ অনুরূপভাবে। (জামে' তিরমিযী, সুনানে আবূ দাউদ)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ أَنَّهُ دَخَلَ مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى امْرَأَةٍ وَبَيْنَ يَدَيْهَا نَوَاةٌ، أَوْ قَالَ: حَصَاةٌ تُسَبِّحُ بِهَا، فَقَالَ: أَلاَ أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هَذَا أَوْ أَفْضَلُ؟ سُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ، وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الأَرْضِ، وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ، وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ، وَالحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ. (رواه الترمذى وابوداؤد)
হাদীস নং: ২২
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর খাস ফযীলত
২২. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: সর্বোত্তম (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) যিকির হচ্ছে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الذِّكْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ. (رواه الترمذى وابن ماجه)
হাদীস নং: ২৩
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর খাস ফযীলত
২৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন বান্দা দেলের ইখলাসসহ অর্থাৎ বিশুদ্ধ চিত্তে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, তখন তার জন্যে অবশ্যই আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়, এমন কি এই কালিমা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়- যাবৎ সে ব্যক্তি কবীরা গুনাহ্ থেকে আত্মরক্ষা করে চলবে। (জামে তিরমিযী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُخْلِصًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، حَتَّى تُفْضِيَ إِلَى العَرْشِ، مَا اجْتَنَبَ الكَبَائِرَ. (رواه الترمذى)
হাদীস নং: ২৪
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর খাস ফযীলত
২৪. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহর নবী মূসা (আ) আল্লাহর দরবারে আরয করলেন, হে আমার প্রভু, আমাকে এমন একটি কালিমা শিক্ষা দিন, যার সাহায্যে আমি তোমার নামের যিকির করবো। (অথবা তিনি বললেন: যার সাহায্যে আমি তোমাকে ডাকবো।) তখন আল্লাহ তা'আলা বললেন: হে মূসা! তুমি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে।

তিনি আরয করলেন: হে আমার প্রভু! এ কালিমা তো তোমার সকল বান্দাই বলে থাকে। আমি তো এমন কিছু একটা চাই, যা তুমি আমাকে বিশেষভাবে দান করবে।

আল্লাহ তা'আলা বললেন: হে মূসা! সাত আসমান এবং আমি ছাড়া এর সমস্ত অধিবাসী এবং সমস্ত যমীন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ যদি অপর পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর পাল্লা নিশ্চিতভাবে ভারী হবে বা তা ঝুকে যাবে। - (শারহুস সুন্নাহ-বাগাভী সঙ্কলিত)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ مُوسَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَبِّ عَلِّمْنِي شَيْئًا أَذْكُرُكَ بِهِ، أَوْ أَدْعُوكَ بِهِ. فَقَالَ: يَا مُوسَى، قُلْ: لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ. فَقَالَ: يَا رَبِّ، كُلُّ عِبَادِكَ يَقُولُ هَذَا، إِنَّمَا أُرِيدُ شَيْئًا تَخُصُّنِي بِهِ. قَالَ: يَا مُوسَى، لَوْ أَنَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعَ وَعَامِرَهُنَّ غَيْرِي، وَالأَرَضِينَ السَّبْعَ وُضِعْنَ فِي كِفَّةٍ، وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ فِي كِفَّةٍ، لَمَالَتْ بِهِنَّ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ". (رواه البغوى فى شرح السنة)
হাদীস নং: ২৫
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কলিমায়ে তাওহীদের খাস মাহাত্ম্য ও বরকত
২৫. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি একশ বার বলবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওহদাহু লা-শরীকালাহু, লাহুল মুল্কু ও লাহুল হাম্দু ওহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক বা সমকক্ষ নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই এবং সবকিছুর উপরই তিনি ক্ষমতাবান।) তা হলে সে দশজন গোলাম আযাদ করার সমান ছওয়াব লাভ করবে। তার জন্যে একশ' ছওয়াব লিখিত হবে এবং তার এক শ' পাপ মার্জনা করা হবে এবং তার জন্যে তার ঐ আমল সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্যে রক্ষাকবচ হয়ে যাবে এবং অন্য কারো আমল তার আমল থেকে উত্তম হবে না, ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যার আমল তার চাইতে অধিক হবে। (সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিম)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ، كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ، إِلَّا أَحَدٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ" (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ২৬
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লা-হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহর বিশেষ ফযীলত
২৬. হযরত আবূ মূসা আশ'আরী (রা) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: আমি কি তোমাকে এমন একটি কালিমা বাৎলে দেবো না, যা জান্নাতের সম্পদ ভাণ্ডারের সম্পদ স্বরূপ।
আমি বললামঃ জী হ্যাঁ হযরত, অবশ্যই বলবেন।
তখন তিনি বললেনঃ লা-হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। - (মুসলিম ও বুখারী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ فَقُلْتُ: بَلَى، فَقَالَ: «لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ»
হাদীস নং: ২৭
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লা-হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহর বিশেষ ফযীলত
২৭. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: লা-হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ বেশি বেশি করে পাঠ করবে! কেননা তা হচ্ছে জান্নাতের ধনভাণ্ডারের অন্যতম ভাণ্ডার স্বরূপ। -(জামে তিরমিযী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثِرْ مِنْ قَوْلِ: لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ، فَإِنَّهَا مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ. (رواه الترمذى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ২৮
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ লা-হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহর বিশেষ ফযীলত
২৮. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন: আমি কি তোমাকে এমন একটি কালিমা শিক্ষা দেবো না, যা জান্নাতের তলদেশ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা জান্নাতের ধনভাণ্ডারের সম্পদ স্বরূপ। তা হচ্ছে:

لَاحَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ

(বান্দা যখন তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এ কালিমা পাঠ করে) আল্লাহ তা'আলা বলেন:

أَسْلَمَ عَبْدِيْ وَاسْتَسْلَمَ

"আমার এ বান্দা (নিজের সমস্ত অহমিকা বিসর্জন দিয়ে) আমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং পূর্ণ আনুগত্য অবলম্বন করেছে।" -(দাওয়াতুল কবীর- বায়হাকী সঙ্কলিত)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: أَسْلَمَ عَبْدِي وَاسْتَسْلَمَ " (رواه البيهقى فى الدعوات الكبير)
হাদীস নং: ২৯
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আসমাউল হুসনা: আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ

সত্যিকার অর্থে আল্লাহ পাকের নাম বা তাঁর ইসমে যাত কেবল একটি আর তা হচ্ছে 'আল্লাহ'। অবশ্য তাঁর সিফাতী বা গুণবাচক নাম শত শত যা কুরআন শরীফ ও হাদীসসমূহে পাওয়া যায়। এগুলোকেই 'আসমাউল হুসনা' বলা হয়ে থাকে।

হাফিয ইব্‌ন হাজর আসকালানী সহীহ্ বুখারীর শরাহ বা ভাষ্যগ্রন্থ 'ফৎহুল বারী'তে ইমাম মুহাম্মদ জা'ফার সাদিক এবং সুফিয়ান ইব্‌ন উয়ায়না প্রমুখ উম্মতের শ্রেষ্ঠস্থানীয় কতিপয় বুযুর্গের প্রমুখাৎ বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা'আলার নিরান্নব্বইটি নাম তো কেবল কুরআন মজীদেই উল্লেখিত হয়েছে। তাঁরা এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট বিবরণও দিয়েছেন। তারপর হাফিয ইব্‌ন হাজর (র) তার মধ্য থেকে কিছু নাম সম্পর্কে পর্যালোচনা করে বলেন: এগুলো হুবহু কুরআন মজীদে ঐ সব শব্দে নেই, তবে বিভিন্ন ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হিসাবে সেগুলো সাজিয়ে নেয়া হয়েছে। এগুলো ছাড়াই নিরান্নব্বইটি নাম হুবহু কুরআন মজীদে রয়েছে। তিনি এগুলোর পূর্ণ তালিকাও দিয়েছেন, যা এ আলোচনার একটু পরেই পাঠক জানতে পারবেন।

আমাদের এ যুগেরই কোন কোন আলেম আল্লাহ তা'আলার আসমায়ে সিফাতী বা গুণবাচক নামসমূহ খুঁজে দুই শতাধিক নাম পেয়েছেন। এসব গুণবাচক নামে তাঁর বিভিন্ন বিশেষণেরই অভিব্যক্তি ঘটেছে। এগুলো তাঁর মা'রিফতের প্রবেশদ্বার স্বরূপ। সুতরাং আল্লাহ তা'আলার যিকিরের এও একটি বিশেষ বিশদ সূরত, বান্দা অত্যন্ত ভক্তি ও মহব্বতের সাথে এগুলোর মাধ্যমে যিকির করবে বা আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করবে এবং এগুলোকে তার ওযীফা বা জপমালা বানিয়ে নেবে।
এ ভূমিকার পর এ সংক্রান্ত কয়েকখানা হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো:
২৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আল্লাহ তা'আলার নিরান্নব্বই অর্থাৎ এক কম একশ' নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি তা সংরক্ষিত বা কণ্ঠস্থ করলো এবং এগুলোর খেয়াল রাখলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -(সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিম)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الجَنَّةَ. (رواه البخارى ومسلم)
হাদীস নং: ৩০
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কুরআন মজীদে উল্লেখিত আল্লাহর নিরানব্বইটি পবিত্র নাম
৩০. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা'আলার এক কম একশ' অর্থাৎ নিরান্নব্বই নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি তা মুখস্থ করলো এবং এগুলো খেয়াল রাখলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সে পবিত্র নামগুলোর বিবরণ নিম্নরূপ)

সেই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য বা ইবাদত লাভের যোগ্য পাত্র নেই। তিনি-
১. اَلرَّحْمٰنُ (আর রাহমান) পরম করুণাময়।
২. ُاَلرَّحِيْم (আর রাহীম) পরম দয়ালু।
৩. اَلْمَلِكُ (আল মালিকু) প্রকৃত বাদশাহ ও নিরঙ্কুশ শাসন ক্ষমতার অধিকারী।
৪. اَلْقُدُّوْسُ (আল কুদ্দুস) অত্যন্ত পবিত্র সত্তা।
৫. اَلسَّلَامُ (আস সালাম) যাঁর সত্তাগত গুণই হচ্ছে শান্তি।
৬. اَلْمُؤْمِنُ (আল মু'মিন) শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা।
৭. ُاَلْمُهَيْمِن (আল মুহাইমিন) পূর্ণ তত্ত্বাবধানকারী।
৮. اَلْعَزِيْزُ (আল আযীয) প্রবল প্রতাপের অধিকারী।
৯. اَلْجَبَّارُ (আল জাব্বার) দাপটের অধিকারী, গোটা সৃষ্টিকুল যাঁর অঙ্গুলি হেলনে চলে।
১০. اَلْمُتَكَبِّرُ (আল মুতাকাব্বির) অহংকারের প্রকৃত অধিকারী।
১১. اَلْخَالِقُ (আল খালিক) স্রষ্টা।
১২. ُاَلْبَارِئ (আল বারিউ) যথার্থভাবে সৃষ্টিকারী।
১৩. اَلْمُصَوِّرُ (আল মুসাব্বির) অবয়ব সৃষ্টিকারী কুশলী শিল্পী।
১৪. اَلْغَفَّارُ (আল গাফফার) পরম ক্ষমাশীল।
১৫. اَلْقَهَّارُ (আল কাহহার) সকলের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকারী, যাঁর সম্মুখে সকলেই অসহায় ও ক্ষমতাহীন।
১৬. اَلْوَهَّابُ (আল ওহ্হাব) প্রতিদান ব্যতিরেকেই প্রচুর পরিমাণে দানকারী।
১৭. اَلرَّزَّاقُ (আর রাজ্জাক) সকলকে জীবিকাদাতা।
১৮. اَلْفَتَّاحُ (আল ফাত্তাহ) সকলের জন্যে রহমত ও জীবিকার দরজা উন্মুক্তকারী।
১৯. اَلْعَلِیْمُ (আল আলীম) সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
২০. اَلْقَابِضُ (আল কাবিয) সঙ্কীর্ণকারী।
২১. اَلْبَاسِطُ (আল বাসিত) প্রশস্তকারী অর্থাৎ তিনি তাঁর হিকমত ও ইচ্ছানুযায়ী কারো জন্যে কখনো সঙ্কীর্ণতা আবার কখনো প্রশস্ততা সৃষ্টি করেন।
২২. اَلْخَافِضُ (আল খাফিয) নীচুকারী।
২৩. اَلرَّافِعُ (আর রাফি) উঁচুকারী অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা যখন ইচ্ছা উঁচু বা নীচু তিনিই করে থাকেন।
২৪. اَلْمُعِزُ (আল মুইয)- মর্যাদাদাতা।
২৫. اَلْمُذِلَّ (আল-মুযিল)- অমর্যাদাকারী, কাউকে সম্মানে ভূষিত করা বা অমর্যাদার অতলে ডুবিয়ে দেয়া তাঁরই ইচ্ছাধীন।
২৬. ُاَلسَّمِيْع (আস সামিউ) সম্যক শ্রোতা।
২৭. اَلْبَصِيْرُ (আল বাসিরু) সম্যক দ্রষ্টা।
২৮. اَلْحَكَمُ (আল হাকামু) প্রকৃত হাকিম।
২৯. اَلْعَدْلُ (আল আদল) সাক্ষাৎ আদল ও ইনসাফ।
৩০. اَللَّطِيْفُ (আল লতীফ) অনুগ্রহ ও দয়াদাক্ষিণ্য যাঁর সত্তাগত গুণ।
৩১. اَلْخَبِيْرُ (আল খাবীর) প্রতিটি ব্যাপারে সম্যক ওয়াকিফহাল।
৩২. اَلْحَلِيْمُ (আল হালীম) পরম সহিষ্ণু।
৩৩. اَلْعَظِيْمُ (আল আযীম) অতি মাহাত্ম্যের অধিকারী মহামহিম।
৩৪. اَلْغَفُوْرُ (আল গাফুর) পরম ক্ষমাশীল।
৩৫. اَلشَّكُوْرُ (আশ শাকুর) সৎকার্যের কদরকারী ও উত্তম বিনিময়দাতা।
৩৬. اَلْعَلَيُّ (আল আলীয়্যু) সর্বোচ্চ সত্তা।
৩৭. اَلْكَبِيْرُ (আল কাবীরু) সব চাইতে বড় সত্তা।
৩৮. ُاَلْحَفِيْظ (আল হাফীযু) সকলের তত্ত্বাবধানকারী।
৩৯. اَلْمُقِيْتُ (আল মুকীতু) সকলকে জীবনোপকরণ সরবরাহকারী।
৪০. اَلْحَسِيْبُ (আল হাসীব) সবার জন্য যথেষ্ট সত্তা।
৪১. اَلْجَلَيْلُ (আল জলীল) মহা সম্মানী।
৪২. اَلْكَرِيْمُ (আল করীম) মহাবদান্যশীল।
৪৩. اَلرَّقِيْبُ (আর রাকীব) তত্ত্বাবধানকারী ও রক্ষক।
৪৪. اَلْمُجِيْبُ (আল মুজীব) কবুলকারী।
৪৫. اَلوَاسِعُ (আল ওয়াসিউ) বিপুল সত্তা, প্রশস্তকারী।
৪৬. اَلْحَكِيْمُ (আল হাকীম) মহাকুশলী।
৪৭. ُاَلْوَدُوْد (আল ওয়াদূদ) প্রেমময় সত্তা।
৪৮. اَلْمَجِيْدٌ (আল মজীদ) মহিমাময়।
৪৯. اَلْبَاعِثُ (আল বাইছু) পুনরুত্থানকারী- যিনি মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থান ঘটাবেন।
৫০. اَلشَّهِيْدُ (আশ শাহীদ) যিনি সবকিছু প্রত্যক্ষ করেন এবং শুনেন সেই পবিত্র সত্তা।
৫১. اَلْحَقُّ (আল হক) যাঁর সত্তা ও অস্তিত্ব হক।
৫২. اَلْوَكَيْلُ (আল ওয়াকীল) কর্ম বিধায়ক।
৫৩. اَلْقَوِيُّ (আল কাবিউ) মহা শক্তিমান।
৫৪. اَلْمَتِيْنُ (আল মাতীন) বলিষ্ঠ ও পরাক্রান্ত সত্তা।
৫৫. اَلْوَلِيُّ (আল ওয়ালী) পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী সত্তা।
৫৬. اَلْحَمِيْدُ (আল হামীদ) স্বনামধন্য ও প্রশংসিত সত্তা।
৫৭. اَلْمُحْصِيْ (আল মুহসী) সকল সৃষ্টি সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত ও সম্যক জ্ঞাত সত্তা।
৫৮. اَلْمُبْدِئُ (আল মুবদিউ) প্রথমবার অস্তিত্বদানকারী।
৫৯. اَلْمُعِيِدُ (আল মুইদু) পুনর্বার জীবনদাতা।
৬০. ْاَلْمُحْيِي (আল মুহঈ) জীবনদাতা।
৬১. اَلْمُمِيْتُ (আল মুমীত) মৃত্যুদাতা।
৬২. اَلْحَيُّ (আল হাইউ) চিরঞ্জীব।
৬৩. اَلْقَيُّوْمُ (আল কাইয়ূম) যিনি নিজে কায়েম থাকেন এবং সকল সৃষ্টিকে নিজ ইচ্ছা ও অভিরুচি মোতাবেক কায়েম রাখেন।
৬৪. اَلْوَاجِدُ (আল ওয়াজিদ) সবকিছুকে ধারণকারী।
৬৫. اَلْمَاجِدُ (আল মাজিদু) বুযুর্গী ও মাহাত্ম্যের অধিকারী।
৬৬. اَلْوَاحِدُ (আল ওয়াহিদু) একক সত্তা।
৬৭. اَلْاَحَدُ (আল আহাদু) নিজ গুণরাজীতে অনন্য।
৬৮. اَلصَّمَدُ (আস সামাদু) সেই মহান সত্তা, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, অথচ সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।
৬৯. اَلْقَدِيْرُ (আল কাদিরু) ক্ষমতাধর।
৭০. اَلْمُقْتَدِرُ (আল মুকতাদির) সকলের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার অধিকারী।
৭১. اَلْمُقَدِّمُ (আল মুকাদ্দিমু) যাকে ইচ্ছা তিনি অগ্রসর করে দেন।
৭২. اَلْمُؤَخِّرُ (আল মুআখ্যিরু) যাকে ইচ্ছে পিছিয়ে দেন সেই সত্তা।
৭৩ اَلأَوَّلُ (আল আওয়ালু) অনাদি- অর্থাৎ যখন কেউ ছিল না তখনও তিনি ছিলেন আর
৭৪. اَلْآخِرُ (আল আখিরু) অনন্ত- যখন কেউ থাকবে না তখনও তিনি বিরাজমান থাকবেন।
৭৫. اَلظَّاهِرُ (আয যাহিরু) সম্পূর্ণ প্রকাশিত ও পূর্ণ বিকশিত সত্তা।
৭৬. اَلْبَاطَنُ (আল বাতিন) সম্পূর্ণ গোপন সত্তা।
৭৭. اَلْوَالِيْ (আল ওয়ালী) মালিক ও কর্মবিধায়ক।
৭৮. اَلْمُتَعَالِيْ (আল মুতা'আলী) সুউচ্চ মহান সত্তা।
৭৯. اَلْبَرُّ (আল বাররু) পরম এহসানকারী।
৮০. اَلتَّوَّابُ (আত তাওয়াবু) তাওবার তাওফীকদাতা ও তাওবা কবুলকারী।
৮১. اَلْمُنْتَقِمُ (আল মুনতাকিম) পাপীতাপীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
৮২. اَلْعَفُوُّ (আল আফুউ) পরম ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী।
৮৩. اَلرَّؤُوْفُ (আর রাউফ) পরম সদয়।
৮৪. مَالِكُ الْمُلْكِ (মালিকুল মুলক) সারা জাহানের মালিক।
৮৫. ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ (যুল জালালি ওয়াল ইকরাম) প্রতিপত্তিশালী ও বদান্যশীল যার প্রতিপত্তির ভয় বান্দা পোষণ করে এবং বদান্যতার আশা রাখে।
৮৬. اَلْمُقْسِطُ (আল মুকসিতু) হকদারের হক আদায়কারী ন্যায়পরায়ণ সত্তা।
৮৭. اَلْجَامِعُ (আল জামিউ) সারা সৃষ্টি জগতকে কিয়ামতের দিন একত্রকারী।
৮৮. اَلْغَنِيُّ (আল গনী) নিজে অমুখাপেক্ষী।
৮৯. اَلْمُغْنِيْ (আল মুগনী) অন্যদেরকে যিনি অমুখাপেক্ষী করেছেন সেই সত্তা।
৯০. اَلْمَانِعُ (আল মানিউ) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী, যা রোধ করা উচিৎ।
৯১. اَلضَّارُّ (আদ দাররু) কারো ক্ষতিকারী
৯২. اَلنَّافِعُ (আন নাফিউ) কাউকে উপকারদাতা
৯৩. النُّوْرُ (আন নূর) জ্যোতি।
৯৪. ْاَلْهَادِي (আল হাদী) হিদায়াতকারী।
৯৫. اَلْبَدِيْعُ (আল বাদীউ) পূর্বের কোন নমুনা ব্যতিরেকেই অভূতপূর্ব সৃষ্টির স্রষ্টা।
৯৬. اَلْبَاقِيْ (আল বাকী) চিরন্তন সত্তা যিনি কোন দিন বিলীন হবেন না।
৯৭. اَلْوَارِثُ (আল ওয়ারিসু) সবকিছু ফানা হয়ে যাওয়ার পরও যিনি বিরাজমান থাকবেন সেই পবিত্র সত্তা।
৯৮. اَلرَّشِيْدُ (আর রশীদু) প্রজ্ঞাময় সত্তা, যাঁর প্রতিটি কাজই যথার্থ ও প্রজ্ঞাময়।
৯৯. اَلصَّبُوْرُ (আস সাবুরু) পরম ধৈর্যশীল, যিনি বান্দার চরম ঔদ্ধত্য ও না-ফরমানী স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেও সাথে সাথে শাস্তি দেন না বা পাকড়াও করেন না। (জামে তিরমিযী, বায়হাকীকৃত দাওয়াতে কাবীর)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا، مِائَةً إِلَّا وَاحِدَةً مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لا إِلَهَ إِلا هُوَ الرَّحْمَنُ، الرَّحِيمُ، الْمَلِكُ، الْقُدُّوسُ، السَّلامُ، الْمُؤْمِنُ، الْمُهَيْمِنُ، الْعَزِيزُ، الْجَبَّارُ، الْمُتَكَبِّرُ، الْخَالِقُ، الْبَارِئُ، الْمُصَوِّرُ، الْغَفَّارُ، الْقَهَّارُ، الْوَهَّابُ، الرَّزَّاقُ، الْفَتَّاحُ، الْعَلِيمُ، الْقَابِضُ، الْبَاسِطُ، الْخَافِضُ، الرَّافِعُ، الْمُعِزُّ، الْمُذِلُّ، السَّمِيعُ، الْبَصِيرُ، الْحَكَمُ، الْعَدْلُ، اللَّطِيفُ، الْخَبِيرُ، الْحَلِيمُ، الْعَظِيمُ، الْغَفُورُ، الشَّكُورُ، الْعَلِيُّ، الْكَبِيرُ، الْحَفِيظُ، الْمُقِيتُ، الْحَسِيبُ، الْجَلِيلُ، الْكَرِيمُ، الرَّقِيبُ، الْمُجِيبُ، الْوَاسِعُ، الْحَكِيمُ، الْوَدُودُ، الْمَجِيدُ، الْبَاعِثُ، الشَّهِيدُ، الْحَقُّ، الْوَكِيلُ، الْقَوِيُّ، الْمَتِينُ، الْوَلِيُّ، الْحَمِيدُ، الْمُحْصِي، الْمُبْدِئُ، الْمُعِيدُ، الْمُحْيِي، الْمُمِيتُ، الْحَيُّ، الْقَيُّومُ، الْوَاجِدُ، الْمَاجِدُ، الْوَاحِدُ، الصَّمَدُ، الْقَادِرُ، الْمُقْتَدِرُ، الْمُقَدِّمُ، الْمُؤَخِّرُ، الأَوَّلُ، الآخِرُ، الظَّاهِرُ، الْبَاطِنُ، الْوَالِي، الْمُتَعَالِي، الْبَرُّ، التَّوَّابُ، الْمُنْتَقِمُ، الْعَفُوُّ، الرَّءُوفُ، مَالِكُ الْمُلْكِ، ذُو الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ، الْمُقْسِطُ، الْجَامِعُ، الْغَنِيُّ، الْمُغْنِي، الْمَانِعُ، الضَّارُّ، النَّافِعُ، النُّورُ، الْهَادِي، الْبَدِيعُ، الْبَاقِي، الْوَارِثُ، الرَّشِيدُ، الصَّبُورُ. (رواه الترمذى والبيهقى فى الدعوات الكبير)
হাদীস নং: ৩১
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইসমে আ'যম

হাদীস সমূহ পাঠে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা'আলার পবিত্র নাম সমূহের কোন কোনটিতে এমন বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে রয়েছে যে, যখন সেগুলির মাধ্যমে দু'আ করা হয় তখন তা কবুল হওয়ার বেশি আশা করা যায়।

এ সমস্ত পবিত্র নামকে 'ইসমে আযম' নামে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে এগুলোকে চিহ্নিত করা হয়নি, অনেকটা অস্পষ্ট ও আড়ালে আবডালে রাখা হয়েছে। এটা অনেকটা লাইলাতুল কদর ও জুমার দিনের দু'আ কবুলের বিশেষ সময়টিকে অস্পষ্ট বা অচিহ্নিত রাখার মত ব্যাপার। হাদীস সমূহ থেকে এটাও জানা যায় যে, ইসমে আ'যম কোন বিশেষ একটি নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যেমনটি অনেক লোকে ধারণা করে থাকেন; বরং একাধিক নামকে ইসমে আ'যম বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঐ সমস্ত হাদীস থেকে এটাও সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সাধারণ্যে ইসমে আ'যম সম্পর্কে যে ধারণা চালু রয়েছে এবং এ সম্পর্কে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে, তা একান্তই অলীক ও ভিত্তিহীন। আসল ব্যাপার তা'ই যা উপরে উক্ত হয়েছে। তারপর এ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি হাদীস পাঠ করুন।
৩১. হযরত বুবায়দা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা এক ব্যক্তিকে এরূপ দু'আ করতে শুনলেন: “হে আল্লাহ! আমি আমার ফরিয়াদ তোমার কাছে এ অসিলায় পেশ করছি যে, তুমি আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোন মালিক ও উপাস্য নেই, তুমি একক, তুমি অনন্য, তুমি অমুখাপেক্ষী, সকলেই তোমার মুখাপেক্ষী। না তুমি কারো সন্তান আর না কেউ তোমার সন্তান আর না কেউ তোমার সমকক্ষ আছে।"

তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকটিকে এ দু'আ করতে শুনে বলে উঠলেন, লোকটি আল্লাহকে তাঁর ইসমে আ'যমের মাধ্যমে ফরিয়াদ জানালো! ঐ নামে যখন কেউ দু'আ করে তখন তার দু'আ কবুল করা হয়ে থাকে। -(জামে তিরমিযী ও সুনানে আবূ দাউদ)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ بُرَيْدَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ سَأَلَ اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ» (رواه الترمذى وابوداؤد)
হাদীস নং: ৩২
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইসমে আ'যম
৩২. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তখন সালাত আদায় করছিল। সে তখন দু'আর মধ্যে বলছিলঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছি এই ওসীলায় যে, সমস্ত স্তব-স্তুতি তোমারই জন্য শোভনীয়। তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি অত্যন্ত মেহেরবান এবং অতি এহসানকারী, যমীন ও, আসমানের স্রষ্টা। আমি তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, হে প্রবল দাপট ও মর্যাদার অধিকারী চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক সত্তা! তখন নবী করীম ﷺ বললেন; এ ব্যক্তি আল্লাহর এমন ইসমে আ'যমের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে দু'আ করেছে যার ওসীলায় দু'আ করলে আল্লাহর তা কবুল করেন এবং যখন এর ওসীলায় যাচ্ঞা করা হয় তখন দান করা হয়।
(তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইব্‌ন মাজা)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْمَسْجِدِ وَرَجُلٌ يُصَلِّي، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْحَنَّانُ الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، أَسْأَلُكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى» (رواه الترمذى وابوداؤد والنسائى وابن ماجه)
হাদীস নং: ৩৩
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ইসমে আ'যম
৩৩. আসমা বিনতে য়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নাম বা ইসমে আ'যম এ দুটি আয়াতের মধ্যে নিহিত রয়েছে:
১. وَاِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَاحِدٌ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِيْمُ
২. আল ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াতঃ
الم اَللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوُمُ
(জামে' তিরমিযী, সুনানে আবূ দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা ও সুনানে দারেমী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اسْمُ اللهِ الأَعْظَمُ فِي هَاتَيْنِ الآيَتَيْنِ {وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ} وَفَاتِحَةِ آلِ عِمْرَانَ {الم اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ}. (رواه الترمذى وابوداؤد وابن ماجه والدارمى)
হাদীস নং: ৩৪
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কুরআন মজীদ তিলাওয়াত

উপরে বলা হয়েছে যে, কুরআন মজীদ তিলাওয়াতও অন্যতম যিকর। কোন কোন হিসাবে তা হচ্ছে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির। বান্দার এ ব্যস্ততা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয় ও পছন্দনীয়।

নিঃসন্দেহে আল্লাহর তা'আলা সকল উপমা ও উদাহরণের উর্ধ্বে। কিন্তু এ দীনাতি দীন লেখক এ সত্যটি নিজ অভিজ্ঞতায় সম্যক উপলদ্ধি করেছে যে, যখন কাউকে নিজের লিখিত কোন পুস্তক মনোযোগ সহকারে পাঠে লিপ্ত দেখেছি, তখনই আনন্দে হৃদয়-মন ভরে উঠেছে এবং সে ব্যক্তির সাথে এক বিশেষ আন্তরিক সম্পর্ক বা ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। সে ঘনিষ্ঠতা এতই নিবিড়, যা অনেক নিকটাত্মীয়ের সাথেও নেই। এ অভিজ্ঞতার আলোকে আমি তো এতটুকু বুঝেছি যে, যখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর কোন বান্দাকে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করতে শুনতে পান ও দেখতে পান, তখন তিনি ঐ বান্দার প্রতি কতটুকু প্রীত হয়ে থাকবেন। (যদি না তার কোন গুরুতর অপরাধের দরুন সে তাঁর সদয় দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত থাকে)

রসূলুল্লাহ ﷺ উম্মতকে কুরআন মজীদের মাহাত্ম্য বুঝানোর জন্যে এবং এর তিলাওয়াতের প্রতি উৎসাহিত করার জন্যে বিভিন্ন শিরোনাম ব্যবহার করেছেন। আমরাও এ সংক্ষিপ্ত হাদীস সমূহ বর্ণনার বিভিন্ন শিরোনাম ব্যবহার করেছি।

আল্লাহ তা'আলা নবী করীম ﷺ এর এ সব বাণী থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দিন- যা এ বাণী গুলোর উদ্দিষ্ট।

কুরআন মজীদের মাহাত্ম্য ও ফযীলত
কুরআন মজীদের মাহাত্ম্যের জন্যে এটুকুই যথেষ্ট যে, এটি আল্লাহর কালাম। এটি আল্লাহ তা'আলার হাকীকী সিফাত বা প্রকৃত গুণ। প্রকৃত পক্ষে এ দুনিয়ায় যা কিছুই রয়েছে এমনকি যমীনের মখলুক সমূহের মধ্যে আল্লাহর কা'বা, নবী-রসূলগণের পবিত্র সত্তাসমূহ এবং ঊর্ধ্ব জগতের সৃষ্টি সমূহের মধ্যে আরশ, কুরসী, লাওহ ও কলম জান্নাত এবং তার নিয়ামত সমূহ, আল্লাহর নৈকট্যধন্য ফিরিশতাগণ এসব কিছুই স্ব-স্ব স্থানে অতীব মাহাত্ম্যপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এ সবই হচ্ছে মখলুক বা সৃষ্টি। পক্ষান্তরে কুরআন মজীদ আল্লাহর এরূপ সৃষ্টি যা তাঁর পবিত্র সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বস্তু নয় বরং তাঁর হাকীকী সিফাত বা সত্তাগত গুণ বিশেষ। এটা তাঁর সত্তার সাথে ওৎপ্রোত ভাবে জড়িত ও অবিচ্ছিন্ন ভাবে কায়েম রয়েছে। এটা আল্লাহর তা'আলার সবচাইতে বড় দয়া ও দান যে, তিনি তাঁর রসূলে আমীন মারফত তাঁর পবিত্র কালাম আমাদের নিকট পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং যেন আমাদের তিলাওয়াত করতে, নিজ রসনায় তা উচ্চারণ করতে, তা উপলদ্ধি করতে এবং নিজেদের জীবনে এ পবিত্র গ্রন্থকে দিকদিশারীরূপে গ্রহণ করতে পারি।

কুরআন মজীদে আছে যে, আল্লাহর তাআ'লা তুয়ার পবিত্র প্রান্তরে একটি বরকতময় বৃক্ষ থেকে হযরত মূসা আলাইহিস্সালামকে আপন পবিত্র কালাম শুনিয়েছিলেন। কতই না সৌভাগ্যবান ছিল সেই বৃক্ষটি, যাকে আল্লাহর তা'আলা তাঁর পবিত্র বাণী শুনানোর জন্যে মাধ্যমরূপে ব্যবহার করেছিলেন। যে বান্দা ইখলাস এবং ভক্তিসহকারে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে সে তখন মূসা আলাইহিস সালামের সে বৃক্ষের মর্যাদা ও গৌরব লাভে ধন্য হয়। সে যেন তখন আল্লাহর পবিত্র কালামের রেকর্ড স্বরূপ হয়ে যায়। সত্য কথা হলো, মানুষ তার চাইতে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার কথা কল্পনাও করতে পারে না।

এ ভূমিকা পাঠের পর কুরআন মজীদের মাহাত্ম্য ও ফযীলতের বিবরণ সম্বলিত রসূলুল্লাহ ﷺ এর কয়েকখানা হাদীস নিম্নে পাঠ করুন।
৩৪. হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, মহামহিমান্বিত আল্লাহর তা'আলা বলেন, যে ব্যক্তিকে কুরআনের ব্যস্ততা আমার যিকর ও আমার কাছে বান্দার যাচ্ঞা করা থেকে বিরত রেখেছে, আমি তাকে দু'আকারী ও যাচ্ঞা কারীদেরকে প্রদত্ত দানের চাইতে উত্তম দান করে থাকি। মর্যাদার দিক থেকে আল্লাহর কালামের মর্যাদা অন্যান্য কথাবার্তার চাইতে ঠিক সে রূপ বেশি, যেরূপ বেশি মর্যাদা আল্লাত তা'আ'লার তাঁর সমগ্র সৃষ্টকূলের তুলনায়। (জামে' তিরমিযী, সুনানে দারেমী ও শু'আবুল ঈমান বায়হাকী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: مَنْ شَغَلَهُ الْقُرْآنُ عَنْ ذِكْرِي وَمَسْأَلَتِي أَعْطَيْتُهُ أَفْضَلَ مَا أُعْطِي السَّائِلِينَ، وَفَضْلُ كَلاَمِ اللهِ عَلَى سَائِرِ الكَلاَمِ كَفَضْلِ اللهِ عَلَى خَلْقِهِ. (رواه الترمذى والدارمى والبيهقى فى شعب الايمان)
হাদীস নং: ৩৫
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কুরআন মজীদের মাহাত্ম্য ও ফযীলত
৩৫. হযরত আলী মুরতাযা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ সাবধান, একটি মহা বিপর্যয় আসন্ন। আমি জিজ্ঞেস করলাম: তা থেকে বাঁচবার কী ব্যবস্থা রয়েছে ইয়া রাসূলাল্লাহ?
জবাবে তিনি বললেন; কিতাবুল্লাহ্, তাতে রয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের (শিক্ষাপ্রদ ঘটনাবলীর) সংবাদ এবং তোমাদের পরবর্তীদের হাল-হাকীকত, (অর্থাৎ আমল ও আখলাকের যে সব পার্থিব এবং পারলৌকিক পরিণতি দেখা দিবে, কুরআন মজীদে সে সব সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে) তোমাদের মধ্যকার সমস্য সমূহ সম্পর্কে কুরআন মজীদে সিদ্ধান্ত ও বিধান রয়েছে, (হক-বাতিল ও ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে) তা হচ্ছে চূড়ান্ত ফয়সালা স্বরূপ, বেহুদা বাক্যলাপ নয়। যে কেউ গোঁয়ার্তুমী করে তা থেকে ঘাড় ফিরিয়ে নেবে আল্লাহ তার ঘাড় মটকাবেন। আর যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত অন্বেষণ করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্যে আসবে কেবল গুমরাহী। (অর্থাৎ সে হকের হিদায়াত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত থাকবে)। কুরআনই হচ্ছে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রক্ষার মযবুত বন্ধন বা মাধ্যম আর তা হচ্ছে সুদৃঢ় হিদায়াত এবং এটাই সিরাতুল মুস্তাকীম বা সহজ-সরল পথ। এটাই হচ্ছে সেই স্পষ্ট সত্য, যার অনুসরণে প্রবৃত্তিসমূহ বক্র পথ অবলম্বন করতে পারে না এবং রসনা সমূহ তাকে বিকৃত করতে পারে না। (অর্থাৎ যেভাবে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহে রসনার পথে গুমরাহীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং বিকৃতিকারীরা নিজেদের ইচ্ছা মত একটির স্থলে অন্যটি পড়ে পড়ে সে সব কিতাবে বিকৃতি সাধন করেছে, এই কুরআনে তারা সেভাবে তা করে বিকৃতি সাধন করতে পারবে না। আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামত পর্যন্ত তার সুসংরক্ষণের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।) জ্ঞানীরা কখনো তার দ্বারা পূর্ণ পরিতৃপ্ত হবেন না। (মানে যতই তারা এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবেন ততই জ্ঞানের নিকট নতুন নতুন রহস্য উম্মোচিত হতে থাকবে এবং কখনো কুরআন চর্চাকারী এটা মনে করবেন না যে, এর জ্ঞান-বিজ্ঞানের সবটুকুই তাঁর আয়ত্তে এসে গেছে আর কিছু জানবার বা বুঝবার মত বাকী নেই; বরং যতই তাঁরা এ নিয়ে গবেষণা করবেন ততই তাঁরা অনুভব করবেন যে, এ পর্যন্ত কুরআনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের যতটুকু আমরা হাসিল করেছি তার চাইতে অনেকগুণ বেশি আমাদের অজ্ঞাত রয়ে গেছে) বার বার পূনরাবৃত্তির দরুন তা কখনো পুরনো হয়ে যাবে না (অর্থাৎ যে ভাবে পৃথিবীর অন্য দশটি বই একবার পড়ে নিলেই বার বার পড়তে আর মন চায় না, বিরক্তিকর ঠেকে; কুরআন শরীফের ব্যাপারে তা ঘটবে না তা যতবেশি তিলাওয়াত করা হবে আর যত বেশি তাতে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা হবে, ততই উপভোগ্য ও আনন্দদায়ক মনে হবে।) আর এর চমৎকারিত্ব ও বিস্ময় কখনো শেষ হবার নয়। কুরআন শরীফের শান হচ্ছে এই যে, যখন জিনেরা তা শুনলো তখন তারা বলে উঠলোঃ

إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ

আমরা কুরআন শ্রবণ করেছি যা বিস্ময়কর, পথ প্রদর্শন করে কল্যাণের দিকে। তাই আমরা এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি।

যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী কথা বলবে, সে যথার্থ ও হক কথা বলবে আর যে ব্যক্তি সে অনুসারে আমল করবে, সে তার বিনিময় বা পুরস্কার লাভ করবে। যে ব্যক্তি কুরআন অনুসারে ফয়সালা করবে সে ইনসাফ করবে এবং যে ব্যক্তি কুরআনের দিকে আহবান জানাবে, সে সিরাতুল মুস্তাকীম বা সহজ-সরল পথে পরিচালিত হবে। (জামে, তিরমিযী ও সুনানে দারেমী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: إِنِّي قَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ. قُلْتُ: مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: كِتَابُ اللهِ فِيهِ نَبَأُ مَا قَبْلَكُمْ وَخَبَرُ مَا بَعْدَكُمْ، وَحُكْمُ مَا بَيْنَكُمْ، وَهُوَ الفَصْلُ لَيْسَ بِالهَزْلِ، مَنْ تَرَكَهُ مِنْ جَبَّارٍ قَصَمَهُ اللَّهُ، وَمَنْ ابْتَغَى الهُدَى فِي غَيْرِهِ أَضَلَّهُ اللَّهُ، وَهُوَ حَبْلُ اللهِ الْمَتِينُ، وَهُوَ الذِّكْرُ الحَكِيمُ، وَهُوَ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ، هُوَ الَّذِي لاَ تَزِيغُ بِهِ الأَهْوَاءُ، وَلاَ تَلْتَبِسُ بِهِ الأَلْسِنَةُ، وَلاَ يَشْبَعُ مِنْهُ العُلَمَاءُ، وَلاَ يَخْلَقُ عَلَى كَثْرَةِ الرَّدِّ، وَلاَ تَنْقَضِي عَجَائِبُهُ، هُوَ الَّذِي لَمْ تَنْتَهِ الجِنُّ إِذْ سَمِعَتْهُ حَتَّى قَالُوا: {إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ} مَنْ قَالَ بِهِ صَدَقَ، وَمَنْ عَمِلَ بِهِ أُجِرَ، وَمَنْ حَكَمَ بِهِ عَدَلَ، وَمَنْ دَعَا إِلَيْهِ هَدَى إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ. (رواه الترمذى والدارمى)
হাদীস নং: ৩৬
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কুরআনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
৩৬. হযরত উছমান (রা) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ عُثْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ» (رواه البخارى)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১০৮৬
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ حامل قرآن پر رشک برحق
حضرت عبداللہ بن عمر رضی اللہ عنہ سے روایت ہے کہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا کہ صرف دو آدمی قابل رشک ہیں ۔ (اور ان پر رشک آنا برحق ہے) ایک وہ جس کو اللہ نے قرآن کی نعمت عطا فرمائی پھر وہ دن اور رات کے اوقات میں اس میں لگا رہتا ہے.اور دوسرا وہ خوش نصیب آدمی جس کو اللہ نے مال و دولت سے نوازا،اور وہ دن اور رات کے اوقات میں راہ خدا میں اس کو خرچ کرتا رہتا ہے۔ (صحیح بخاری و صحیح مسلم)

تشریح
دن اور رات میں قرآن پاک میں مشغول ہونے اور رہنے کی مختلف شکلیں ہو سکتی ہیں ۔ ایک یہ کہ اس کے سیکھنے سکھانے میں لگا رہتا ہے ۔ دوسرے یہ کہ نماز میں اور بیرونِ نماز اس کی تلاوت کرتا رہتا ہے ۔ تیسرے یہ کہ فکر و اہتمام کے ساتھ اس کے احکام و ہدایات پر عمل کرتا رہتا ہے ۔ حدیث کے الفاظ : فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ، وَآنَاءَ النَّهَارِ اس طرح کی سب شکلوں پر حاوی ہیں ۔ قرآن پاک کی عظیم نعمت کا شکر یہی ہے کہ بندہ اس کو اپنا شغل اور اپنی زندگی کا دستور بنا لے ۔
کتاب الاذکار والدعوات
عَنِ ابْنِ عُمَرَ " لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ، وَآنَاءَ النَّهَارِ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا، فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ، وَآنَاءَ النَّهَارِ " (رواه البخارى ومسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১০৮৭
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ قرآن کے خاص حقوق
حضرت عبیدہ ملیکی رضی اللہ عنہ سے روایت ہے کہ رسول اللہ ﷺ نے فرمایا : اے قرآن والوں ! قرآن کو اپنا تکیہ اور سہارا نہ بنا لو ، بلکہ دن اور رات کے اوقات میں اس کی تلاوت کیا کرو جیسا کہ اس کا حق ہے ، اور اس کو پھیلاؤ اور اس کو دلچسپی سے اور مزہ لے لے کر پڑھا کرو ، اور اس میں تدبر کرو ، امید رکھو کہ تم اس سے فلاح پا جاؤ گے ، اور اس کا عاجل معاوضہ لینے کی فکر نہ کرو ، اللہ تعالیٰ کی طرف سے اس کا عظیم ثواب اور معاوضہ (اپنے وقت پر) ملنے والا ہے ۔ (شعب الایمان للبیہقی)

تشریح
حدیث کا مطلب یہ ہے کہ اللہ نے جن بندوں کو قرآن کی دولت نصیب فرمائی ہے وہ اسی پر تکیہ کر کے نہ بیٹھ جائیں کہ ہمارے پاس قرآن ہے اور ہم قرآن والے ہیں ، بلکہ انہیں چاہئے کہ قرآن مجید کے حقوق ادا کریں ، رات اور دن کے اوقات میں اس کے حق کے مطابق اس کی تلاوت کیا کریں ، اس کو اور اس کے پیغامِ ہدایت کو دوسروں تک پہنچائیں ، اس کو م زہ لے لے کے پڑھیں ، اس کے احکام ، اس کی ہدایات ، اس کے قصص اور نصائح پر غور و فکر کیا کریں ۔ اگر انہوں نے ایسا کیا تو ان کی فلاح کی پوری امید ہے ۔ اور انہیں چاہئے کہ وہ قرآن کے اس پڑھنے اور پڑھانے اور اس کی خدمت کا معاوضہ دنیا ہی میں نہ چاہیں ۔ اللہ تعالیٰ کی طرف سے ان کو اپنے وقت پر اس کا بڑا غیر معمولی معاوضہ اور عظیم صلہ ملنے والا ہے ۔
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ عُبَيْدَةَ الْمُلَيْكِيِّ، اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ، لَا تَتَوَسَّدُوا الْقُرْآنَ وَاتْلُوهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَفْشُوهُ، وَتَغَنَّوْهُ وَتَدَبَّرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ، وَلَا تَعْجَلُوا تِلَاوَتَهُ فَإِنَّ لَهُ ثَوَابًا " (رواه البيهقى فى شعب الايمان)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১০৮৮
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ قرآن اور قوموں کا عروج و زوال
حضرت عمر بن الخطاب رضی اللہ عنہ سے روایت ہے کہ رسول اللہ ﷺ نے فرمایا کہ : اللہ تعالیٰ اس کتابِ پاک (قرآن مجید) کی وجہ سے بہت سوں کو اونچا کرے گا اور بہت سوں کو نیچے گرائے گا ۔ (صحیح مسلم)

تشریح
قرآن مجید اللہ تعالیٰ کی صفتِ قائمہ اور بندوں کے لئے اس کا فرمان اور عہد نامہ ہے ۔ اس کی وفاداری اور تابعداری اللہ تعالیٰ کی وفاداری اور تابعداری ہے ۔ اسی طرح اس سے انحراف اور بغاوت اللہ تعالیی سے انحراف اور سرکشی ہے ، اور اللہ تعالیٰ کا فیصلہ ہے کہ جو قوم اور جو اُمت خواہ وہ کسی نسل سے ہو ، اس کا کوئی بھی رنگ اور کوئی بھی زبان ہو ، قرآن مجید کو اپنا راہنما بنا کر اپنے کو اس کا تابعدار بنا دے گی اور اس کے ساتھ وہ تعلق رکھے گی جو کلام اللہ ہونے کی حیثیت سے اس کا حق ہے ، اللہ تعالیٰ اس کو دنیا اور آخرت میں سربلند کرے گا ۔ اور اس کے برعکس جو قوم اور امت اس سے انحراف اور سرکشی کرے گی وہ اگر بلندیوں کے آسمان پر بھی ہو گی تو نیچی گرا دی جائے گی ۔
اسلام اور مسلمانون کی پوری تاریخ اس حدیث کی گواہ اور اللہ تعالیٰ کے اس فیصلہ کی آئینہ دار ہے ۔ اس حدیث میں “اَقْوَامًا” کے لفظ سے یہ بھی اشارہ ملتا ہے کہ عروج و زوال کے اس الٰہی قانون کا تعلق افراد سے نہیں بلکہ قوموں اور امتوں سے ہے ۔ واللہ اعلم ۔
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:«إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا، وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ». (رواه مسلم)
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ১০৮৯
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ تلاوت قرآن کا اجر و ثواب
حضرت عبداللہ بن مسعود رضی اللہ عنہ سے روایت ہے کہ رسول اللہ ﷺ نے فرمایا : جس نے قرآن پاک کا ایک حرف پڑھا اس نے ایک نیکی کما لی، اور یہ کہ ایک نیکی اللہ تعالیٰ کے قانون کے مطابق دس نیکیوں کے برابر ہے ۔ (مزید وجاحت کے لئے آپ نے فرمایا) میں نہیں کہتا (یعنی میرا مطلب یہ نہیں ہے) کہ الم ایک حرف ہے، بلکہ الف ایک حرف ہے، لام ایک حرف ہے اور میم ایک حرف ہے ۔ (اس طرح الم پڑھنے والا بندہ تیس نیکیوں کے برابر ثواب حاصل کرنے کا مستحق ہو گا ۔) (جامع ترمذی ، سنن دارمی)

تشریح
اللہ تعالیٰ کا یہ کریمانہ قانون کہ ایک نیکی کرنے والے کو دس نیکیوں کے برابر ثواب عطا ہو گا ۔
واضح طور پر قرآن مجید میں بھی بیان فرمایا گیا ہے ۔ سورہ انعام میں ارشاد ہے :
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا(الانعام ع: 20)
جو بندہ ایک نیکی لے کر آئے گا اس کو اس جیسی دس نیکیوں کا ثواب دیا جائے گا ۔
مندرجہ بالا حدیث میں رسول اللہ ﷺ نے اُمت کو یہ خوشخبری سنائی ہے کہ جو بندہ اخلاص کے ساتھ قرآن مجید کی تلاوت کرے گا تو حروف تہجی کے ہر حرف کی تلاوت ایک نیکی شمار ہو گی جو اجر و ثواب کے لحاظ سے دس نیکیوں کے برابر ہو گی ۔ اسی حدیث کی بیہقی کی روایت میں ہے کہ آپ ﷺ نے فرمایا کہ : “بسم اللہ” ایک حرف ہے بلکہ “ب” ایک حرف ہے “س” ایک حرف ہے “م” ایک حرف ہے ۔ اور میں یہ نہیں کہتا کہ الم ایک حرف ہے بلکہ “ا ، ل ، م” الگ الگ حروف ہیں ۔ اللہ پاک یقین کی دولت نصیب فرمائے ۔ اس حدیث میں کلام پاک کی تلاوت کرنے والوں کے لئے بڑی ہی خوشخبری ہے ۔ فَطُوْبىٰ لَهُمْ
اس حدیث سے ایک واضح اشارہ یہ بھی ملا کہ قرآن مجید کی تلاوت پر ثواب کے لئے یہ ضروری نہیں ہے کہ وہ تلاوت معنی مفہوم سمجھ کر ہی ہو ۔ کیوں کہ “الم” اور سارے حروف مقطعات کی تلاوت معنی مفہوم سمجھے بغیر ہی کی جاتی ہے ، اور حدیث نے صراحۃً بتلایا کہ ان حروف کی تلاوت کرنے والوں کو بھی ہر حرف پر دس نیکیوں کا ثواب ملے گا ۔ واللہ اعلم ۔
کتاب الاذکار والدعوات
عَنِ ابْنَ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ. (رواه الترمذى والدارمى)
tahqiq

তাহকীক: