নামাজ দ্রুত গতিতে পড়তে হবে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭১
নামাজ দ্রুত গতিতে পড়তে হবে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭১
প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্থীরতার সাথে গুরুত্বসহকারে আদায় করতে হয়। এমনিভাবে যখন নামাজও আদায় করা হয়, তখন স্থীরতার সাথে গুরুত্বসহকারে আদায় করা উচিত।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের কাছে যেহেতু নামাজ গুরুত্বপূর্ণ আমল নয়, বরং সামরিক ট্রেণিং, সেহেতু তারা লিখেছে,
যেহেতু মূলত সালাহ সামরিক প্রশিক্ষণ সেহেতু এর চলন (Muvenent) দ্রুত হতে বাধ্য। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ২৫
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো–রুকু, সিজদায় দ্রুত গতিতে যেতে হবে এবং উঠা-নামাও করতে হবে দ্রুত গতিতে।
ইসলাম কী বলে?
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নামাজ শিখিয়েছেন, সেদিকে তাকালে বুঝা যায় ধীরস্থিরভাবে, শান্তহয়ে রুকু-সিজদায় যেতে হবে। মহান রব বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ। যারা তাদের নামাযে আন্তরিকভাবে বিনীত। –সুরা মুমিনুন : ১-২
উক্ত আয়াতের خاشِعُونَ এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
خائِفُونَ ساكِنُونَ
যারা ভীতসন্ত্রস্ত ও স্থীর। –তাফসীরে রুহুল মা’আনী, খ. ৭ পৃ. ২০৬
এ ছাড়াও খুশুখুজু’র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইমাম মাহমুদ বাগদাদী আলুসী রহি. বলেন,
والخُشُوعُ التَّذَلُّلُ مَعَ خَوْفٍ وسُكُونٍ لِلْجَوارِحِ
খুশু বলা হয়, আল্লাহর ভয়ে বিনয়ের সাথে শারীরিক ধীরস্থীরতার সাথে (নামাজ আদায়) করা। –তাফসীরে রুহুল মা’আনী, খ. ৭ পৃ. ২০৬
উক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেলো, নামাজ হতে হবে ধীরস্থীরতার সাথে। এছাড়াও নিন্মোক্ত হাদিসটি দেখুন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إذا قُمْتَ إلى الصَّلاةِ فَكَبِّرْ، ثُمَّ اقْرَأْ ما تَيَسَّرَ معكَ مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ ارْكَعْ حتّى تَطْمَئِنَّ راكِعًا، ثُمَّ ارْفَعْ حتّى تَعْدِلَ قائِمًا، ثُمَّ اسْجُدْ حتّى تَطْمَئِنَّ ساجِدًا، ثُمَّ ارْفَعْ حتّى تَطْمَئِنَّ جالِسًا، وافْعَلْ ذلكَ في صَلاتِكَ كُلِّها
তুমি সলাতে দাঁড়ানোর সময় সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর তোমার সুবিধানুযায়ী কুরআনের আয়াত পাঠ করবে, অতঃপর শান্ত ও স্থিরতার সাথে রুকূ‘ করবে, অতঃপর রুকু হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ্ করবে। এরপর প্রশান্তির সাথে উঠে বসবে। এভাবেই তোমার পুরো সলাত আদায় করবে। –সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৭৫৭
উক্ত হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, নামাজ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের নামাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শেখানো পদ্ধতির বিপরীত। মূলত পন্নী উদ্ভট এ কথা লিখেছে মূলত তার নিজস্ব মতবাদ- ‘সালাত হচ্ছে সামরিক প্রশিক্ষণ’ -এর গ্রহণযোগ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য। প্রশ্ন জাগে-যেখানে পৃথিবীর কোথাও এমন আজব রীতিতে সালাত পড়া হয় না, ইসলামের ইতিহাসে যার নজির নেই, সেখানে হুট করে সে কোথা হতে সঠিক পদ্ধতির নব আবিষ্কৃত এই সালাত পেলো? যেখানে হাদীসের বর্ণনা হচ্ছে, 'সকল উম্মত একত্রে ভ্রান্তিতে নিপতিত হবে না'। সেখানে গোটা উম্মতের সালাতকে বিকৃত বলা মানে হাদীসের বক্তব্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের নামান্তর নয় কী?