আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সুদের টাকা গরীব মিসকিনদের জন্য কী করে হালাল হয়?

প্রশ্নঃ ৪৭৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম !! আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু জানি সুদের টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব মিসকিন কে দান করতে পারবে অথবা কোন জনকল্যানমূলক কাজে ব্যয় করে দিবে!আমার প্রশ্ন হলো সুদের টাকা যদি গরীব মিসকিনদের দান করা হয় তাহলে তাঁদের জন্য সেটা খাওয়া হালাল হবে কোন দলীলের ভিত্তিতে ?? তারাও তো মানুষ ! হারাম তো সকলের জন্যই হারাম! গরীব মিসকিনদের জন্য কী সেই সুদের টাকা হারাম নয়?বিস্তারিত দলীল সহকারে কুরআন হাদীস ইজমা ক্বিয়াস আরবী ইবারত সহ জানিয়ে বাধিত করবেন!!জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!!

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কেরানীগঞ্জ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মুহতারাম,
বুঝের অসঙ্গতি যেখান থেকে সৃষ্ট, সেই বিষয়টি আপনার সামনে খোলাসা করতে চাচ্ছি। আপনি একটি কথা লিখেছেন। "হারাম তো সকলের জন্যই হারাম, গরীব মিসকিনদের জন্য কি সেই সুদের টাকা হারাম নয়?"
তাহলে বুঝতে হবে, হারাম মাল দু'ধরনের।

১. একটি হল যেসব মাল (বস্তু) আল্লাহ তাআলা খাদ্য হিসেবে হারাম করে দিয়েছেন। এই হারাম মাল শ্রেণি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই হারাম। (ক্ষুধার তাড়নায় সংকটাপন্ন ব্যক্তির বিষয়টি ভিন্ন। সে সময় মৃত প্রাণী কিংবা শূকরের গোশত প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে সামান্য পরিমাণ খাওয়া অনুমতি রয়েছে)। যেমন শরাব (নেশাজাত দ্রব্য) মৃত প্রাণী, শুকরের গোশত, প্রবাহিত রক্ত, মলমূত্র ইত্যাদি।

২. আরেক ধরনের হারাম হল حكمي হুকমী হারাম। অর্থাৎ যে মাল মূলত হারাম নয়। বরং হারাম উপায়ে এ মাল উপার্জন করা হয়েছে। পদ্ধতিগত ভুলের কারণে তাতে হারামের হুকুম লেগে গেছে।
বিষয়টি সহজে বোঝার জন্য একটি উপমা পেশ করা হচ্ছে।
আপনার পকেট থেকে চোর দশ টাকা চুরি করল। এই দশ টাকা আপনার জন্য হালাল। এই টাকা ভোগ করা চোরের জন্য হারাম। দেখুন, মালটি আপনার জন্য হালাল ছিল। কিন্তু তার জন্য হারাম। যে টাকা তার জন্য হারাম। সেই টাকা আপনার জন্য হালাল।
তদ্রুপ বছর শেষে সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত বের করতে হয়। এই অংশটুকু সেই ব্যক্তির জন্য হালাল নয়। কিন্তু গরিবের জন্য হালাল। আবার এই অংশটুকু কোন ধনীকে দিলেও তার জন্য ভোগ করা হালাল নয়।
আরেকটি উদাহরণ। কোন গণক (জ্যোতিষী) আপনাকে ভবিষ্যৎবাণী করে শোনালো। আপনি তাকে বকশিশ হিসেবে কিছু টাকা দিয়েছেন। এই টাকা তার জন্য হালাল নয়। কিন্তু আপনার কাছে সেটি হালাল ছিল। আপনাকে ফিরিয়ে দিলে সেটি হালালই থাকবে।
আরেকটি উদাহরণ। একজন ব্যভিচারী কোনো নারীর সাথে দুষ্কর্ম করল। নারীকে পারিশ্রমিক দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভাষায় তার এই পারিশ্রমিক হারাম। অথচ আপনার কাছে এ টাকা হালাল ছিল।
মোটকথা, যে সম্পদ মৌলিকভাবে হালাল। ভুল পদ্ধতিতে হাতবদল হয়ে অন্যত্র গেলে তার ওপরে হারামের হুকুম লেগে যায়। বাস্তবে তার মধ্যে হারামের কিছুই থাকে না।
সুদের টাকার বিষয়টি এই প্রকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু সুদ গ্রহীতা অন্যায় ভাবে টাকা নিয়েছে। বিধায় এই টাকা তার জন্য হারাম। সুদখোর নিজের মালিকানা (কবজা) থেকে হারাম সম্পদ বের করে নিজেকে পাপমুক্ত করা ওয়াজিব।
অন্যদিকে অনর্থক সম্পদ ধ্বংস করা শরীয়তে জায়েজ করেনি। এই মাল নদীতে ফেলে দেবে। আগুনে পুড়ে ফেলবে। এ অধিকার তাকে দেয়া হয়নি।
অতএব হারাম উপার্জনগুলো গরিব মিসকিনের মাঝে বিলিয়ে অথবা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে নিজেকে পাপমুক্ত করা এবং হারাম মালের উপর থেকে নিজের অন্যায় দখল উঠিয়ে নেয়া জরুরী।

الْكَسْبُ الْخَبِيثُ وَمَصِيرُهُ:
17 - طَلَبُ الْحَلاَل فَرْضٌ عَلَى كُل مُسْلِمٍ (7) ، وَقَدْ أَمَرَ اللَّهُ تَعَالَى بِالأَْكْل مِنَ
الطَّيِّبَاتِ، فَقَال سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى: {يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} (1) ،
وَقَال فِي ذَمِّ الْحَرَامِ: {وَلاَ تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِل} (2) إِلَى غَيْرِ ذَلِكَ مِنَ الآْيَاتِ (3) .
وَفِي حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَال: وَلاَ يَكْسِبُ عَبْدٌ مَالاً مِنْ حَرَامٍ، فَيُنْفِقُ مِنْهُ فَيُبَارَكُ لَهُ فِيهِ، وَلاَ يَتَصَدَّقُ بِهِ فَيُقْبَل مِنْهُ، وَلاَ يَتْرُكُ خَلْفَ ظَهْرِهِ إِلاَّ كَانَ زَادَهُ إِلَى النَّارِ (4) ، وَقَال النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَرْبُو لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلاَّ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ (5) .
وَالْحَرَامُ كُلُّهُ خَبِيثٌ، لَكِنَّ بَعْضَهُ أَخْبَثُ مِنْ بَعْضٍ، فَإِنَّ الْمَأْخُوذَ بِعَقْدٍ فَاسِدٍ حَرَامٌ، وَلَكِنَّهُ لَيْسَ فِي دَرَجَةِ الْمَغْصُوبِ عَلَى سَبِيل الْقَهْرِ، بَل الْمَغْصُوبُ أَغْلَظُ؛ إِذْ فِيهِ إِيذَاءُ الْغَيْرِ وَتَرْكُ طَرِيقِ الشَّرْعِ فِي الاِكْتِسَابِ،
وَلَيْسَ فِي الْعُقُودِ الْفَاسِدَةِ إِلاَّ تَرْكُ طَرِيقِ التَّعَبُّدِ فَقَطْ، وَكَذَلِكَ الْمَأْخُوذُ ظُلْمًا مِنْ فَقِيرٍ أَوْ صَالِحٍ أَوْ يَتِيمٍ أَخْبَثُ وَأَغْلَظُ مِنَ الْمَأْخُوذِ مِنْ قَوِيٍّ أَوْ غَنِيٍّ أَوْ فَاسِقٍ (1) .
وَالْكَسْبُ الْخَبِيثُ هُوَ أَخْذُ مَال الْغَيْرِ لاَ عَلَى وَجْهِ إِذْنِ الشَّرْعِ، فَيَدْخُل فِيهِ الْقِمَارُ وَالْخِدَاعُ وَالْغُصُوبُ وَجَحْدُ الْحُقُوقِ وَمَا لاَ تَطِيبُ نَفْسُ مَالِكِهِ، أَوْ حَرَّمَتْهُ الشَّرِيعَةُ وَإِنْ طَابَتْ بِهِ نَفْسُ مَالِكِهِ كَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ وَأَثْمَانِ الْخُمُورِ وَالْخَنَازِيرِ وَغَيْرِ ذَلِكَ (2) .
وَالْوَاجِبُ فِي الْكَسْبِ الْخَبِيثِ تَفْرِيغُ الذِّمَّةِ وَالتَّخَلُّصُ مِنْهُ بِرَدِّهِ إِلَى أَرْبَابِهِ إِنْ عَلِمُوا، وَإِلاَّ إِلَى الْفُقَرَاءِ (3) .
قَال النَّوَوِيُّ نَقْلاً عَنِ الْغَزَالِيِّ: إِذَا كَانَ مَعَهُ مَالٌ حَرَامٌ، وَأَرَادَ التَّوْبَةَ وَالْبَرَاءَةَ مِنْهُ، فَإِنْ كَانَ لَهُ مَالِكٌ مُعَيَّنٌ وَجَبَ صَرْفُهُ إِلَيْهِ أَوْ إِلَى وَكِيلِهِ، فَإِنْ كَانَ مَيِّتًا وَجَبَ دَفْعُهُ إِلَى وَارِثِهِ، وَإِنْ كَانَ لِمَالِكٍ لاَ يَعْرِفُهُ، وَيَئِسَ مِنْ مَعْرِفَتِهِ، فَيَنْبَغِي أَنْ يَصْرِفَهُ فِي مَصَالِحِ الْمُسْلِمِينَ الْعَامَّةِ كَالْقَنَاطِرِ وَالرُّبُطِ وَالْمَسَاجِدِ وَمَصَالِحِ طَرِيقِ
مَكَّةَ وَنَحْوِ ذَلِكَ مِمَّا يَشْتَرِكُ الْمُسْلِمُونَ فِيهِ، وَإِلاَّ فَيَتَصَدَّقُ بِهِ عَلَى فَقِيرٍ أَوْ فُقَرَاءَ، وَيَنْبَغِي أَنْ يَتَوَلَّى ذَلِكَ الْقَاضِي إِنْ كَانَ عَفِيفًا، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ عَفِيفًا لَمْ يَجُزَ التَّسْلِيمُ إِلَيْهِ، فَإِنْ سَلَّمَهُ إِلَيْهِ صَارَ الْمُسْلِمُ ضَامِنًا، بَل يَنْبَغِي أَنْ يُحَكِّمَ رَجُلاً مِنْ أَهْل الْبَلَدِ دَيِّنًا عَالِمًا، فَإِنَّ التَّحَكُّمَ أَوْلَى مِنَ الاِنْفِرَادِ، فَإِنْ عَجَزَ عَنْ ذَلِكَ تَوَلاَّهُ بِنَفْسِهِ، فَإِنَّ الْمَقْصُودَ هُوَ الصَّرْفُ إِلَى هَذِهِ الْجِهَةِ، وَإِذَا دَفَعَهُ إِلَى الْفَقِيرِ لاَ يَكُونُ حَرَامًا عَلَى الْفَقِيرِ، بَل يَكُونُ حَلاَلاً طَيِّبًا، وَلَهُ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِهِ عَلَى نَفْسِهِ وَعِيَالِهِ إِذَا كَانَ فَقِيرًا، لأَِنَّ عِيَالَهُ إِذَا كَانُوا فُقَرَاءَ فَالْوَصْفُ مَوْجُودٌ فِيهِمْ، بَل هُمْ أَوْلَى مَنْ يَتَصَدَّقُ عَلَيْهِ، وَلَهُ هُوَ أَنْ يَأْخُذَ مِنْهُ قَدْرَ حَاجَتِهِ؛ لأَِنَّهُ أَيْضًا فَقِيرٌ.
قَال النَّوَوِيُّ بَعْدَ أَنْ نَقَل قَوْل الْغَزَالِيِّ الْمَذْكُورَ: وَهَذَا الَّذِي قَالَهُ الْغَزَالِيُّ فِي هَذَا الْفَرْعِ ذَكَرَهُ الآْخَرُونَ مِنَ الأَْصْحَابِ، وَهُوَ كَمَا قَالُوهُ، وَنَقَلَهُ الْغَزَالِيُّ أَيْضًا عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَغَيْرِهِ مِنَ السَّلَفِ، وَعَنْ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ وَالْحَارِثِ الْمُحَاسِبِيِّ وَغَيْرِهِمَا مِنْ أَهْل الْوَرَعِ؛ لأَِنَّهُ لاَ يَجُوزُ إِتْلاَفُ هَذَا الْمَال وَرَمْيُهُ فِي الْبَحْرِ، فَلَمْ يَبْقَ إِلاَّ صَرْفُهُ فِي مَصَالِحِ الْمُسْلِمِينَ (1) .
وَمَنْ وَرِثَ مَالاً وَلَمْ يَعْلَمْ مِنْ أَيْنَ كَسَبَهُ
مُوَرِّثُهُ: أَمِنْ حَلاَلٍ أَمْ حَرَامٍ؟ وَلَمْ تَكُنْ عَلاَمَةٌ فَهُوَ حَلاَلٌ بِإِجْمَاعِ الْعُلَمَاءِ (1) .
وَصَرَّحَ الْحَنَفِيَّةُ بِأَنَّهُ إِذَا مَاتَ الرَّجُل وَكَسْبُهُ خَبِيثٌ، كَأَنْ كَانَ مِنْ بَيْعِ الْبَاذَقِ أَوِ الظُّلْمِ أَوْ أَخْذِ الرِّشْوَةِ، فَالأَْوْلَى لِوَرَثَتِهِ أَنْ يَرُدُّوا الْمَال إِلَى أَرْبَابِهِ، فَإِنْ لَمْ يَعْرِفُوا أَرْبَابَهُ تَصَدَّقُوا بِهِ؛ لأَِنَّ سَبِيل الْكَسْبِ الْخَبِيثِ التَّصَدُّقُ إِذَا تَعَذَّرَ الرَّدُّ عَلَى صَاحِبِهِ (2) .
وَفِي الْبَزَّازِيَّةِ: إِنْ عَلِمَ الْمَال الْحَرَامَ بِعَيْنِهِ لاَ يَحِل لَهُ (لِلْوَارِثِ) أَخْذُهُ، وَإِنْ لَمْ يَعْلَمْهُ بِعَيْنِهِ أَخَذَهُ حُكْمًا، وَأَمَّا فِي الدِّيَانَةِ فَإِنَّهُ يَتَصَدَّقُ بِهِ بِنِيَّةِ الْخُصَمَاءِ (3) .
وَذَهَبَ الشَّافِعِيَّةُ إِلَى أَنَّ مَنْ وَرِثَ مَالاً، وَعَلِمَ أَنَّ فِيهِ حَرَامًا وَشَكَّ فِي قَدْرِهِ، أَخْرَجَ الْقَدْرَ الْحَرَامَ بِالاِجْتِهَادِ (4) .
وَيَمْنَعُ وَالِي الْحِسْبَةِ النَّاسَ مِنَ الْكَسْبِ الْخَبِيثِ، قَال الْمَاوَرْدِيُّ: وَيَمْنَعُ مِنَ التَّكَسُّبِ بِالْكَهَانَةِ وَاللَّهْوِ، وَيُؤَدِّبُ عَلَيْهِ الآْخِذَ وَالْمُعْطِيَ (5) .
আল মাওসূআ আল ফিক্বহিয়্যাহ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন:

ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন