বাচ্চার মুখে ভাত দেওয়ার অনুষ্ঠান করা কি জায়েজ?
প্রশ্নঃ ১৩০৮১২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো যে? বাচ্চা দের কী মুখে ভাতের অনুষ্ঠান করা জায়েয আছে
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় ভাই, শিশুকে প্রথম ভাত খাওয়ানোর অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘অন্নপ্রাশন’।
এই অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানটি নিছক কোনো সামাজিক আয়োজন নয়; বরং এটি হিন্দুয়ানী রীতি-নীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। হিন্দু পরিবারগুলোতে পরম্পরাগতভাবে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে সাধারণত একটি বৃহৎ স্থানে বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়। নির্দিষ্ট একটি শুভক্ষণ নির্ধারণ করে পুরোহিতদের উপস্থিতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
তাছাড়াও এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার জড়িত রয়েছে। ফলে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পালন করা মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়।
কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি হিন্দুয়ানী আচার-অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমগুলো বাদ দিয়েও এ ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে, তবুও তা বৈধ হবে না। কারণ এতে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। অথচ এ বিষয়ে হাদিসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
" مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ " .
যে ব্যক্তি কোন কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।* (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নংঃ ৪০৩১)
*অর্থাৎ এমন অনুসরণ ও অনুকরণ করা, যাতে কাফির ও মুসলমানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি তাদের দলভুক্ত হিসাবে পরিগণিত হবে যাদের সে অনুসরণ করবে। যেমন বর্তমানে অনেক ফ্যাসান-পূজারীদের দেখা যায়, যারা দাঁড়ি লম্বা-লম্বা গোঁফ রাখে; যার ফলে তারা কাফির, মুশরিকদের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়। অনেকে হিন্দু, ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের মত কাপড়ও পরিধান করে, যা তাদের অনুকরণের ফলশ্রুতি। নবী (ﷺ) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন - (অনুবাদক)
ইসলামি নিয়ম নবজাতক শিশুর মুখে তাহনিক করা:
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُؤْتَى بِالصِّبْيَانِ فَيُبَرِّكُ عَلَيْهِمْ وَيُحَنِّكُهُمْ .
আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে (নবজাতক) শিশুদের নিয়ে আসা হতো। তিনি তাদের জন্য বরকতের দুআ করতেন এবং তাহনীক করে (খেজুর চিবিয়ে তাদের মুখে) দিতেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নংঃ ২১৪৭)
সুতরাং হিন্দুয়ানী প্রথা অনুযায়ী অন্নপ্রাশন পালন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। এর পরিবর্তে নবজাতক শিশুর মুখে তাহনিক করা—অর্থাৎ খেজুর, মধু বা অনুরূপ মিষ্টান্ন দ্রব্য দেওয়া—ইসলামসম্মত ও উত্তম পদ্ধতি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অমুসলিমদের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি অনুসরণ ও সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, দারুল কুরআন আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা
মুহাম্মদপুর, ঢাকা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন