প্রশ্নঃ ১৩২০৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
একাধিক বার গুনাহ করে বারবার তওবা করলে কি আল্লাহ কবুল করবেন?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গোনাহের প্রতিবাধান হলো তাওবাহ করা। কৃত অপরাধ থেকে সংশোধন হয়ে গোনাহ ছেড়ে দেয়া। তাওবাহ করার পর মানুষ যতবারই তা ভঙ্গ করুক না কেন, আবার তাকে তাওবাহ করা উচিত এবং প্রতিবারই নতুন করে সংশোধন হওয়ার প্রচেষ্টা চালানো জরুরি।
বারবার তাওবাহ করার মূল উদ্দেশ্য হলো গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করা, পরকালের মুক্তি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য দুনিয়া শত বাধা-বিপত্তির মাঝেও তা অব্যাহত রাখা। এতে যত ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন? বারবার তাওবাহ প্রসঙ্গে একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যেতে পারে-
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কঠিন পর্বত চুড়ায় আরোহন করতে চায়। আর তাতে ওঠার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে তার যাত্রা পথে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, তাকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাহাড়-পর্বতের অসমতল পথে চলতে গিয়ে বার বার পিছলে পড়ে গেলেও সেখান থেকে ওঠে আবারও পথ চলতে হবে।
যতবারই সে পা পিছলে পড়ুক না কেন, প্রতিবারই তাকে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং পর্বত চুড়ায় আরোহনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই গন্তব্যে পৌছা সম্ভব হবে।
আর যে ব্যক্তি পিছলে পড়ে থেকে যায় কিংবা গন্তব্যে পৌছার হিম্মত হারিয়ে ফেলে তবে সে কখনো নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না। সে হবে ব্যর্থ।
ঠিক তেমনিভাবে নৈতিকতা ও পূণ্যের উচ্চ শিখরে উঠার সিদ্ধান্তে অটল ব্যক্তিকে প্রতি পদস্খলনে কিংবা গোনাহের পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামলে নিতে হবে। সত্যের পথে সুদৃঢ় থাকার প্রচেষ্টায় অব্যাহত রাখতে হবে। এ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ বারবার গোনাহ বা পদস্খলনের জন্য পাকড়াও করবেন না। সাফল্য থেকেও বঞ্চিত করবেন না। তাকে সফলতা দান করবেন। অব্যাহত প্রচেষ্টাকারী ব্যক্তি হবে সফল ও স্বার্থক।
পক্ষান্তরে যারা একবার তাওবাহ করার পর পুনরায় গোনাহ করে বসে এবং দ্বিতীয়বার তাওবাহ না করে সে পাপের উপর স্থির থাকে, তাদের জন্য রয়েছে করুণ পরিণতি।
এ করুণ পরিণতি থেকে বাঁচতে বারবার তাওবাহকারী ব্যক্তি নিজের পদস্খলনের জন্য অন্তরে লজ্জা ও অনুতাপের অনুভূতি জাগ্রত রাখা জরুরি। জীবনভর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা জরুরি।
ক্ষমা প্রার্থনায় এ লজ্জা ও অনুতাপ যেন কখনও মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না করে। কেননা এ ধরনের হতাশা আল্লাহ তাআলার রহমতের প্রতি কুধারণার নামান্তর। শয়তান মানুষকে পথহারা করতেই রহমত থেকে হতাশা নামক কুধারণার দিকে ধাবিত করে এবং সহজেই গোনাহের দিকে ধাবিত করে।
অথচ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার রহমতের প্রতি নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ يَٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُواْ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
(হে রাসুল আপনি) বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো- (তোমরা) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু।' (সুরা যুমার : আয়াত 53)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন