রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ২৮১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়ঃ ৩৫
স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
এর আগের অধ্যায়ে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এ অধ্যায়টি স্বামীর অধিকার সম্পর্কে। স্বামীর যেমন কর্তব্য স্ত্রীর হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করা, তেমনি স্ত্রীরও কতব্য স্বামীর হক আদায়ে যত্নবান থাকা। এর দ্বারাই দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি অর্জিত হতে পারে। সবচে' বড় কথা অন্যের হক আদায় ইসলামী অনুশাসনের একটি বড় অংশ। তা আদায় করা ছাড়া কেউ পরিপূর্ণ মুসলিম হতে পারে না। অন্যের হক আদায় ছাড়া মারা গেলে আখেরাতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। সেদিন নিজের নেকী দিয়ে অন্যের হক পরিশোধ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর বেলায়ও তাই হবে। কাজেই সেদিন যাতে এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়, সে লক্ষ্যেও পারস্পরিক হসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা চাই। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও বহু হাদীছে স্ত্রীর উপর স্বামীর হক ও অধিকারসমূহের বর্ণনা আছে। সেইসঙ্গে জোর তাকিদও করা হয়েছে যাতে স্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সে সমস্ত হক আদায় করে। তা আদায় না করলে কী পরিণাম দাঁড়াবে তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা দেওয়া যাচ্ছে।
‘স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ
অর্থ : 'পুরুষ নারীদের অভিভাবক, যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু পুরুষগণ নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে, (পুরুষের) অনুপস্থিতিতে আল্লাহপ্রদত্ত হেফাজতে (তার অধিকারসমূহ) সংরক্ষণ করে।৩৪৪
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে প্রথমে নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর সে অভিভাবকত্বের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তারপর নেককার স্ত্রীদের গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে।
নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব
এ আয়াত নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব সাব্যস্ত করেছে। বলা হচ্ছে- الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ (পুরুষ নারীদের অভিভাবক)। অর্থাৎ অভিভাবক ও দায়িত্বশীলগণ যেভাবে তাদের অধিনস্তদের দেখভাল ও পরিচালনা করে, তেমনি পুরুষদের উপরও নারীদের দেখভাল ও তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তারপর এ অভিভাবকত্বের দু'টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হচ্ছে নারীর উপর পুরুষের আল্লাহপ্রদত্ত বাড়তি কিছু গুণ। বলা হচ্ছে-
بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ (যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা নারীর উপর পুরুষকে একরকম শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন, সাধারণভাবে নারী অপেক্ষা পুরুষের বুদ্ধির ব্যাপ্তি ও গভীরতা বেশি। পরিচালনাগত যোগ্যতাও তুলনামূলকভাবে পুরুষের বেশি থাকে। দৈহিক ক্ষমতা ও পেশিশক্তিতেও সে উপরে। বিপদ-আপদের ঝুঁকি নেওয়া এবং প্রতিকূল পরিবেশ- পরিস্থিতিতে স্থির-অবিচল থাকার মানসিক শক্তিও নারী অপেক্ষা পুরুষের বেশি। এসব বিশেষত্বের কারণে শরীআতের বিশেষ কিছু দায়-দায়িত্ব তার উপরই চাপানো হয়েছে, নারীর উপর নয়। যেমন জিহাদ ও জুমু'আ কায়েম করা, নামাযের ইমামত করা ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বভার বহন করা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় কারণ প্রকৃতিগত নয়; বরং স্বোপার্জিত। ইরশাদ হয়েছে -وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ (এবং যেহেতু পুরুষগণ নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে)। অর্থাৎ নারীর সার্বিক ব্যয়ভার পুরুষই বহন করে থাকে। বিবাহের আগে তার খোরপোশসহ অন্যান্য খরচাদি বহন করে পিতা। পিতা না থাকলে দাদা বা চাচা কিংবা বড় ভাই। বিবাহের পর এ দায়িত্ব পড়ে স্বামীর উপর। বিবাহে স্ত্রীর মাহরও স্বামীকেই দিতে হয়। মোটকথা আইনত নারীর উপর আর্থিক কোনও দায়-দায়িত্ব নেই। না নিজ ব্যক্তিগত খরচাদি বহনের দায়িত্ব, না অন্য কারও ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব কেবলই পুরুষের। তার নিজের খরচাদিও নিজেকে বহন করতে হয় এবং স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, বাবা-মা, ছোট ভাইবোন ও অন্যান্য সম্পৃক্তজনদের খরচাও। তো যেহেতু নারীর সবরকম ব্যয়ভার পুরুষের উপর চাপানো হয়েছে, সঙ্গত কারণেই তার অভিভাবকত্বও পুরুষের উপরই অর্পিত হওয়ার কথা। ইসলামী শরীআত সেটাই করেছে।
উল্লেখ্য, স্বামী-স্ত্রীকে মিলিতভাবে যেহেতু একটি যূথবদ্ধ জীবন যাপন করতে হয় এবং পরস্পর মিলেমিশে সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয়, তাই সে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে একজনের নেতৃত্বদান জরুরি। নেতা ছাড়া কোনও যৌথ কারবার চলে না। সমাজ ও রাষ্ট্রসহ যে-কোনও সংঘবদ্ধ জীবন কোনও একজনের নেতৃত্ব ছাড়া সুষ্ঠুভাবে চলা সম্ভব নয়। তাই প্রাচীনকাল থেকেই পরিবার ও সমাজ কোনও একজনকে নেতা মেনে আসছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সংসারজীবনে নেতা মানা হবে কাকে? বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কাউকে নেতা মানা হয় তার নেতৃত্বের গুণাবলী বিচারে। এটা একটা বাড়তি গুণ, যা সকলের থাকে না। সাধারণভাবে এ গুণটি আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে বানিয়েছেনই এর উপযুক্ত করে, যেমন আলোচ্য আয়াতে ইশারা করা হয়েছে।
বস্তুত নারী ও পুরুষ প্রত্যেককেই আল্লাহ তাআলা বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাকে সে কাজের যোগ্যতাও দান করেছেন। যেমন মানবপ্রজন্ম বিস্তারের জন্য আল্লাহ তাআলা নারীকে মা বানিয়েছেন, তাই গর্ভে সন্তানধারণ ও শিশুসন্তানের পরিচর্যার জন্য যে মায়া-মমতা ও সুকুমার গুণাবলী দরকার ছিল, আল্লাহ তাআলা নারীকে তা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তার দেহমনকে এর উপযোগী করেই বানিয়েছেন। অন্যদিকে পুরুষকে বানিয়েছেন শক্ত ও কঠিন কাজের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। সে আয়-রোজগার করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, এ উপলক্ষ্যে দেশ-বিদেশে সফর করবে, কঠিন কঠিন সফরের ঝুঁকি গ্রহণ করবে, দেশ পরিচালনা করবে, প্রয়োজনে যুদ্ধ করবে ও শত্রুর বিরুদ্ধে লড়বে এবং এরকম আরও যত কঠোর-কঠিন কাজ আছে তা আঞ্জাম দেবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তার দেহমনও শক্ত-সমর্থ করেই তৈরি করেছেন।
নারীকে আল্লাহ তাআলা যে দায়িত্ব পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তা যাতে সে সুচারুরূপে পালন করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন ছিল তাকে সম্পূর্ণরূপে ভারমুক্ত রাখা। তার না থাকবে নিজের খোরপোশ ও সুরক্ষার দায়িত্ব, না থাকবে সন্তানের প্রতিপালন-সামগ্রী যোগানোর যিম্মাদারী। তার ও তার সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি প্রয়োজন সমাধার ভার থেকে তাকে মুক্ত না রাখা হলে স্ত্রীত্ব ও মাতৃত্বের যিম্মাদারী যথাযথভাবে পালন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে এসব ভার থেকে মুক্ত রেখেছেন এবং তা অর্পণ করেছেন পুরুষের উপর। এ সুবাদেই তাকে নারীর কর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে দিয়েছেন।
অভিভাবকত্ব গৌরবের বিষয় নয়, অভিভাবকের অধীন থাকাটাও নয় অমর্যাদাকর
প্রকাশ থাকে যে, নেতা ও অভিভাবক হওয়ার দ্বারা আল্লাহর কাছে কারও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠত্ব হাসিল হয় কেবলই তাকওয়া-পরহেযগারী দ্বারা। অর্থাৎ সত্যকথা বলা, সৎ জীবনযাপন করা, সত্য-সঠিক পথে চলা ও শরীআত অনুযায়ী জীবনযাপন করার দ্বারা। যে ব্যক্তি শরীআত অনুযায়ী চলে, সে নেতা ও অভিভাবক না হয়েও শ্রেষ্ঠ হতে পারে। আবার এর অভাবে অভিভাবক হয়েও শ্রেষ্ঠ সাব্যস্ত হয় না।
কাজেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই কর্তব্য শরীআত মোতাবেক চলা ও তাকওয়াসম্মত জীবনযাপন করা। আপন আপন যিম্মাদারী পালন করাও শরীআতের এক গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। অভিভাবকত্ব বিষয়ে স্বামীর যিম্মাদারী যেমন অভিভাবকরূপে স্ত্রীর যথাযথ দেখভাল করা, তেমনি স্ত্রীর যিম্মাদারী হচ্ছে স্বামীর অভিভাবকত্ব মেনে চলা। স্বামী যদি অভিভাবকরূপে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তবে সে শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে গণ্য হবে না। অন্যদিকে স্ত্রী যদি অভিভাবকত্ব মেনে চলে, তবে শরীআতের বিধান পালন করার কারণে সে শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে গণ্য হবে। মোটকথা, যিম্মাদারী পালনই আসল কথা, তা অভিভাবকরূপে হোক বা অভিভাবক মানার দ্বারা হোক।
আমরা সবাই পরীক্ষার মধ্যে আছি। আল্লাহ একেকজনকে একেকভাবে পরীক্ষা করছেন। কাউকে পরীক্ষা করছেন অভিভাবক বানিয়ে, কাউকে পরীক্ষা করছেন তার অধীন বানিয়ে। পরীক্ষায় যে পাস করবে সেই আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ। কাজেই বাস্তবিকপক্ষে অভিভাবক হওয়াটা যেমন গৌরবের বিষয় নয়, তেমনি অধীন হওয়াটাও নয় কিছুমাত্র মর্যাদাহীনতা। কাজেই না স্বামীর উচিত স্বামীত্বের গর্ব করা, আর না স্ত্রীর উচিত ঈর্ষাকাতর হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا (32)
‘যা দ্বারা আমি তোমাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তার আকাঙ্ক্ষা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।৩৪৫
আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভ হবে কেবল সৎকর্মে লিপ্ত থাকা তথা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী থাকার দ্বারা। এর মধ্যেই প্রকৃত গৌরব। সুতরাং এ আয়াতে সৎকর্মশীল নারীর গুণাবলী ও যিম্মাদারী বর্ণিত হয়েছে যে-
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ
সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে, (পুরুষের) অনুপস্থিতিতে আল্লাহপ্রদত্ত হেফাজতে (তার অধিকারসমূহ) সংরক্ষণ করে'। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করে, যার একটা দিক স্বামীর হক আদায় করাও বটে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করার অর্থ স্বামীর ঘর ও মালের হেফাজত করা, ঘরের গোপনীয় বিষয় ফাঁস না করা, সর্বোপরি নিজ চরিত্র ও সতীত্ব রক্ষা করা।
'আল্লাহপ্রদত্ত হেফাজতে' এ কথার অর্থ আল্লাহ তাআলা স্বামীর উপর তাদের মাহর ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব অর্পণ করে তাদের হেফাজতের ব্যবস্থা করেছেন। হেফাজতের এ ব্যবস্থাকরণের কৃতজ্ঞতাস্বরূপই হুকুম দেওয়া হয়েছে, যেন তারা নিজ সতীত্ব, দাম্পত্যের গোপনীয়তা ও স্বামীর অর্থ-সম্পদ হেফাজত করে।
৩৪৪. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩৪
৩৪৫. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩২
এ সম্পর্কে হাদীছ আছে বহু। তার মধ্যে একটা তো ওই হাদীছ, যা হযরত আমর ইবনুল আহওয়াস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্বের অধ্যায়ে ২৭৬ নম্বরে গত হয়েছে। হাদীছটি সেখানে দ্র.। এখানে নতুন কিছু হাদীছ পেশ করা যাচ্ছে।
স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
এর আগের অধ্যায়ে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এ অধ্যায়টি স্বামীর অধিকার সম্পর্কে। স্বামীর যেমন কর্তব্য স্ত্রীর হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করা, তেমনি স্ত্রীরও কতব্য স্বামীর হক আদায়ে যত্নবান থাকা। এর দ্বারাই দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি অর্জিত হতে পারে। সবচে' বড় কথা অন্যের হক আদায় ইসলামী অনুশাসনের একটি বড় অংশ। তা আদায় করা ছাড়া কেউ পরিপূর্ণ মুসলিম হতে পারে না। অন্যের হক আদায় ছাড়া মারা গেলে আখেরাতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। সেদিন নিজের নেকী দিয়ে অন্যের হক পরিশোধ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর বেলায়ও তাই হবে। কাজেই সেদিন যাতে এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়, সে লক্ষ্যেও পারস্পরিক হসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা চাই। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও বহু হাদীছে স্ত্রীর উপর স্বামীর হক ও অধিকারসমূহের বর্ণনা আছে। সেইসঙ্গে জোর তাকিদও করা হয়েছে যাতে স্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সে সমস্ত হক আদায় করে। তা আদায় না করলে কী পরিণাম দাঁড়াবে তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা দেওয়া যাচ্ছে।
‘স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার’ সম্পর্কিত একটি আয়াত
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ
অর্থ : 'পুরুষ নারীদের অভিভাবক, যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু পুরুষগণ নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে, (পুরুষের) অনুপস্থিতিতে আল্লাহপ্রদত্ত হেফাজতে (তার অধিকারসমূহ) সংরক্ষণ করে।৩৪৪
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে প্রথমে নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর সে অভিভাবকত্বের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তারপর নেককার স্ত্রীদের গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে।
নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব
এ আয়াত নারীর উপর পুরুষের অভিভাবকত্ব সাব্যস্ত করেছে। বলা হচ্ছে- الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ (পুরুষ নারীদের অভিভাবক)। অর্থাৎ অভিভাবক ও দায়িত্বশীলগণ যেভাবে তাদের অধিনস্তদের দেখভাল ও পরিচালনা করে, তেমনি পুরুষদের উপরও নারীদের দেখভাল ও তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তারপর এ অভিভাবকত্বের দু'টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হচ্ছে নারীর উপর পুরুষের আল্লাহপ্রদত্ত বাড়তি কিছু গুণ। বলা হচ্ছে-
بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ (যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন)। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা নারীর উপর পুরুষকে একরকম শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন, সাধারণভাবে নারী অপেক্ষা পুরুষের বুদ্ধির ব্যাপ্তি ও গভীরতা বেশি। পরিচালনাগত যোগ্যতাও তুলনামূলকভাবে পুরুষের বেশি থাকে। দৈহিক ক্ষমতা ও পেশিশক্তিতেও সে উপরে। বিপদ-আপদের ঝুঁকি নেওয়া এবং প্রতিকূল পরিবেশ- পরিস্থিতিতে স্থির-অবিচল থাকার মানসিক শক্তিও নারী অপেক্ষা পুরুষের বেশি। এসব বিশেষত্বের কারণে শরীআতের বিশেষ কিছু দায়-দায়িত্ব তার উপরই চাপানো হয়েছে, নারীর উপর নয়। যেমন জিহাদ ও জুমু'আ কায়েম করা, নামাযের ইমামত করা ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বভার বহন করা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় কারণ প্রকৃতিগত নয়; বরং স্বোপার্জিত। ইরশাদ হয়েছে -وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ (এবং যেহেতু পুরুষগণ নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে)। অর্থাৎ নারীর সার্বিক ব্যয়ভার পুরুষই বহন করে থাকে। বিবাহের আগে তার খোরপোশসহ অন্যান্য খরচাদি বহন করে পিতা। পিতা না থাকলে দাদা বা চাচা কিংবা বড় ভাই। বিবাহের পর এ দায়িত্ব পড়ে স্বামীর উপর। বিবাহে স্ত্রীর মাহরও স্বামীকেই দিতে হয়। মোটকথা আইনত নারীর উপর আর্থিক কোনও দায়-দায়িত্ব নেই। না নিজ ব্যক্তিগত খরচাদি বহনের দায়িত্ব, না অন্য কারও ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব কেবলই পুরুষের। তার নিজের খরচাদিও নিজেকে বহন করতে হয় এবং স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, বাবা-মা, ছোট ভাইবোন ও অন্যান্য সম্পৃক্তজনদের খরচাও। তো যেহেতু নারীর সবরকম ব্যয়ভার পুরুষের উপর চাপানো হয়েছে, সঙ্গত কারণেই তার অভিভাবকত্বও পুরুষের উপরই অর্পিত হওয়ার কথা। ইসলামী শরীআত সেটাই করেছে।
উল্লেখ্য, স্বামী-স্ত্রীকে মিলিতভাবে যেহেতু একটি যূথবদ্ধ জীবন যাপন করতে হয় এবং পরস্পর মিলেমিশে সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয়, তাই সে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে একজনের নেতৃত্বদান জরুরি। নেতা ছাড়া কোনও যৌথ কারবার চলে না। সমাজ ও রাষ্ট্রসহ যে-কোনও সংঘবদ্ধ জীবন কোনও একজনের নেতৃত্ব ছাড়া সুষ্ঠুভাবে চলা সম্ভব নয়। তাই প্রাচীনকাল থেকেই পরিবার ও সমাজ কোনও একজনকে নেতা মেনে আসছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সংসারজীবনে নেতা মানা হবে কাকে? বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কাউকে নেতা মানা হয় তার নেতৃত্বের গুণাবলী বিচারে। এটা একটা বাড়তি গুণ, যা সকলের থাকে না। সাধারণভাবে এ গুণটি আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে বানিয়েছেনই এর উপযুক্ত করে, যেমন আলোচ্য আয়াতে ইশারা করা হয়েছে।
বস্তুত নারী ও পুরুষ প্রত্যেককেই আল্লাহ তাআলা বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাকে সে কাজের যোগ্যতাও দান করেছেন। যেমন মানবপ্রজন্ম বিস্তারের জন্য আল্লাহ তাআলা নারীকে মা বানিয়েছেন, তাই গর্ভে সন্তানধারণ ও শিশুসন্তানের পরিচর্যার জন্য যে মায়া-মমতা ও সুকুমার গুণাবলী দরকার ছিল, আল্লাহ তাআলা নারীকে তা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তার দেহমনকে এর উপযোগী করেই বানিয়েছেন। অন্যদিকে পুরুষকে বানিয়েছেন শক্ত ও কঠিন কাজের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। সে আয়-রোজগার করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, এ উপলক্ষ্যে দেশ-বিদেশে সফর করবে, কঠিন কঠিন সফরের ঝুঁকি গ্রহণ করবে, দেশ পরিচালনা করবে, প্রয়োজনে যুদ্ধ করবে ও শত্রুর বিরুদ্ধে লড়বে এবং এরকম আরও যত কঠোর-কঠিন কাজ আছে তা আঞ্জাম দেবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তার দেহমনও শক্ত-সমর্থ করেই তৈরি করেছেন।
নারীকে আল্লাহ তাআলা যে দায়িত্ব পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তা যাতে সে সুচারুরূপে পালন করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন ছিল তাকে সম্পূর্ণরূপে ভারমুক্ত রাখা। তার না থাকবে নিজের খোরপোশ ও সুরক্ষার দায়িত্ব, না থাকবে সন্তানের প্রতিপালন-সামগ্রী যোগানোর যিম্মাদারী। তার ও তার সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি প্রয়োজন সমাধার ভার থেকে তাকে মুক্ত না রাখা হলে স্ত্রীত্ব ও মাতৃত্বের যিম্মাদারী যথাযথভাবে পালন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে এসব ভার থেকে মুক্ত রেখেছেন এবং তা অর্পণ করেছেন পুরুষের উপর। এ সুবাদেই তাকে নারীর কর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে দিয়েছেন।
অভিভাবকত্ব গৌরবের বিষয় নয়, অভিভাবকের অধীন থাকাটাও নয় অমর্যাদাকর
প্রকাশ থাকে যে, নেতা ও অভিভাবক হওয়ার দ্বারা আল্লাহর কাছে কারও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠত্ব হাসিল হয় কেবলই তাকওয়া-পরহেযগারী দ্বারা। অর্থাৎ সত্যকথা বলা, সৎ জীবনযাপন করা, সত্য-সঠিক পথে চলা ও শরীআত অনুযায়ী জীবনযাপন করার দ্বারা। যে ব্যক্তি শরীআত অনুযায়ী চলে, সে নেতা ও অভিভাবক না হয়েও শ্রেষ্ঠ হতে পারে। আবার এর অভাবে অভিভাবক হয়েও শ্রেষ্ঠ সাব্যস্ত হয় না।
কাজেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই কর্তব্য শরীআত মোতাবেক চলা ও তাকওয়াসম্মত জীবনযাপন করা। আপন আপন যিম্মাদারী পালন করাও শরীআতের এক গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। অভিভাবকত্ব বিষয়ে স্বামীর যিম্মাদারী যেমন অভিভাবকরূপে স্ত্রীর যথাযথ দেখভাল করা, তেমনি স্ত্রীর যিম্মাদারী হচ্ছে স্বামীর অভিভাবকত্ব মেনে চলা। স্বামী যদি অভিভাবকরূপে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তবে সে শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে গণ্য হবে না। অন্যদিকে স্ত্রী যদি অভিভাবকত্ব মেনে চলে, তবে শরীআতের বিধান পালন করার কারণে সে শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে গণ্য হবে। মোটকথা, যিম্মাদারী পালনই আসল কথা, তা অভিভাবকরূপে হোক বা অভিভাবক মানার দ্বারা হোক।
আমরা সবাই পরীক্ষার মধ্যে আছি। আল্লাহ একেকজনকে একেকভাবে পরীক্ষা করছেন। কাউকে পরীক্ষা করছেন অভিভাবক বানিয়ে, কাউকে পরীক্ষা করছেন তার অধীন বানিয়ে। পরীক্ষায় যে পাস করবে সেই আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ। কাজেই বাস্তবিকপক্ষে অভিভাবক হওয়াটা যেমন গৌরবের বিষয় নয়, তেমনি অধীন হওয়াটাও নয় কিছুমাত্র মর্যাদাহীনতা। কাজেই না স্বামীর উচিত স্বামীত্বের গর্ব করা, আর না স্ত্রীর উচিত ঈর্ষাকাতর হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا (32)
‘যা দ্বারা আমি তোমাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তার আকাঙ্ক্ষা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।৩৪৫
আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভ হবে কেবল সৎকর্মে লিপ্ত থাকা তথা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী থাকার দ্বারা। এর মধ্যেই প্রকৃত গৌরব। সুতরাং এ আয়াতে সৎকর্মশীল নারীর গুণাবলী ও যিম্মাদারী বর্ণিত হয়েছে যে-
فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ
সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে, (পুরুষের) অনুপস্থিতিতে আল্লাহপ্রদত্ত হেফাজতে (তার অধিকারসমূহ) সংরক্ষণ করে'। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করে, যার একটা দিক স্বামীর হক আদায় করাও বটে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করার অর্থ স্বামীর ঘর ও মালের হেফাজত করা, ঘরের গোপনীয় বিষয় ফাঁস না করা, সর্বোপরি নিজ চরিত্র ও সতীত্ব রক্ষা করা।
'আল্লাহপ্রদত্ত হেফাজতে' এ কথার অর্থ আল্লাহ তাআলা স্বামীর উপর তাদের মাহর ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব অর্পণ করে তাদের হেফাজতের ব্যবস্থা করেছেন। হেফাজতের এ ব্যবস্থাকরণের কৃতজ্ঞতাস্বরূপই হুকুম দেওয়া হয়েছে, যেন তারা নিজ সতীত্ব, দাম্পত্যের গোপনীয়তা ও স্বামীর অর্থ-সম্পদ হেফাজত করে।
৩৪৪. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩৪
৩৪৫. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩২
এ সম্পর্কে হাদীছ আছে বহু। তার মধ্যে একটা তো ওই হাদীছ, যা হযরত আমর ইবনুল আহওয়াস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্বের অধ্যায়ে ২৭৬ নম্বরে গত হয়েছে। হাদীছটি সেখানে দ্র.। এখানে নতুন কিছু হাদীছ পেশ করা যাচ্ছে।
যে নারীর উপর ফিরিশতারা লা'নত করে থাকে
হাদীছ নং : ২৮১
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে আর সে না আসে, ফলে স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, তবে ফিরিশতাগণ তার উপর অভিশাপ দিতে থাকে, যাবৎ না ভোর হয় -বুখারী ও মুসলিম।
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, কোনও নারী যখন তার স্বামীর বিছানা পরিত্যাগ করে রাত কাটায়, তখন ফিরিশতাগণ তাকে অভিশাপ দিতে থাকে, যাবৎ না ভোর হয়।৩৪৬
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, যে-কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যদি নিজ বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী তা অস্বীকার করে, তবে যতক্ষণ না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যিনি আসমানে আছেন তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন।৩৪৭
৩৪৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩২৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৩৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১৪১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৬৭১; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৩৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩২৮
৩৪৭. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৩৬; মুসনাদুল বাযযার, হাদীছ নং ৯৭৫৫
হাদীছ নং : ২৮১
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে আর সে না আসে, ফলে স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, তবে ফিরিশতাগণ তার উপর অভিশাপ দিতে থাকে, যাবৎ না ভোর হয় -বুখারী ও মুসলিম।
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, কোনও নারী যখন তার স্বামীর বিছানা পরিত্যাগ করে রাত কাটায়, তখন ফিরিশতাগণ তাকে অভিশাপ দিতে থাকে, যাবৎ না ভোর হয়।৩৪৬
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, যে-কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যদি নিজ বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী তা অস্বীকার করে, তবে যতক্ষণ না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যিনি আসমানে আছেন তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন।৩৪৭
৩৪৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩২৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৩৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১৪১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৬৭১; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭০৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৩৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩২৮
৩৪৭. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৩৬; মুসনাদুল বাযযার, হাদীছ নং ৯৭৫৫
مقدمة الامام النووي
35 - باب حق الزوج عَلَى المرأة
قَالَ الله تَعَالَى: {الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ الله} [النساء: 34].
وأما الأحاديث فمنها حديث عمرو بن الأحوص السابق في الباب قبله (1).
قَالَ الله تَعَالَى: {الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ الله} [النساء: 34].
وأما الأحاديث فمنها حديث عمرو بن الأحوص السابق في الباب قبله (1).
281 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امرَأتَهُ إِلَى فرَاشِهِ فَلَمْ تَأتِهِ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا المَلائِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2) [ص:112]
وفي رواية لهما: «إِذَا بَاتَت المَرأةُ هَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ».
وفي رواية قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «والَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأتَهُ إِلَى فِرَاشهِ فَتَأبَى عَلَيهِ إلاَّ كَانَ الَّذِي في السَّمَاء سَاخطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنها».
وفي رواية لهما: «إِذَا بَاتَت المَرأةُ هَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ».
وفي رواية قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «والَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأتَهُ إِلَى فِرَاشهِ فَتَأبَى عَلَيهِ إلاَّ كَانَ الَّذِي في السَّمَاء سَاخطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنها».
হাদীস নং: ২৮২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখা
হাদীছ নং : ২৮২
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর জন্য নফল রোজা রাখা বৈধ নয় এবং তার অনুমতি ছাড়া কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়াও তার জন্য জায়েয নয় -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৯৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০২৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৭৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ১৭৬১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৭৩৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৭০; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২৯৩২; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪০৩৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৬৪১)
হাদীছ নং : ২৮২
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর জন্য নফল রোজা রাখা বৈধ নয় এবং তার অনুমতি ছাড়া কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়াও তার জন্য জায়েয নয় -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৯৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০২৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৭৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ১৭৬১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৭৩৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৭০; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২৯৩২; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪০৩৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৬৪১)
مقدمة الامام النووي
35 - باب حق الزوج عَلَى المرأة
282 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - أيضًا: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَحِلُّ لامْرَأةٍ أَنْ تَصُومَ وزَوْجُهَا شَاهدٌ إلاَّ بإذْنِهِ، وَلاَ تَأذَنَ في بَيْتِهِ إلاَّ بِإذنِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ (1)
وهذا لفظ البخاري.
وهذا لفظ البخاري.
হাদীস নং: ২৮৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
স্বামীগৃহে স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য
হাদীছ নং : ২৮৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আমীর একজন দায়িত্বশীল, পুরুষ তার পরিবারবর্গের উপর দায়িত্বশীল, নারী তার স্বামীর ঘর ও তার সন্তানদের উপর দায়িত্বশীল। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭০৫, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৯২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৪৯৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪৮৯; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬৮৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৫০৬
হাদীছ নং : ২৮৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আমীর একজন দায়িত্বশীল, পুরুষ তার পরিবারবর্গের উপর দায়িত্বশীল, নারী তার স্বামীর ঘর ও তার সন্তানদের উপর দায়িত্বশীল। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭০৫, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৯২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৪৯৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪৮৯; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬৮৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৫০৬
مقدمة الامام النووي
باب حق الزوج على المرأة
283 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كلكم رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ: وَالأمِيرُ رَاعٍ، والرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أهْلِ بَيتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجها وَوَلَدهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৮৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
স্বামীর ডাকে সাড়াদানের গুরুত্ব
হাদীছ নং : ২৮৪
হযরত আবূ আলী তালক ইবন আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজনে ডাকে, তখন সে যেন তার কাছে চলে আসে, যদিও সে চুলার উপর থাকে –তিরমিযী ও নাসাঈ।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীছ।জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৬০; নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৯২২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৬৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৩৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮২৪০
হাদীছ নং : ২৮৪
হযরত আবূ আলী তালক ইবন আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজনে ডাকে, তখন সে যেন তার কাছে চলে আসে, যদিও সে চুলার উপর থাকে –তিরমিযী ও নাসাঈ।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীছ।জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৬০; নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৯২২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৬৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৩৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮২৪০
مقدمة الامام النووي
باب حق الزوج على المرأة
284 - وعن أَبي علي طَلْق بن علي - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ زَوْجَتهُ لحَاجَتِهِ فَلْتَأتِهِ وَإنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُور (1)». رواه الترمذي والنسائي، (2) وَقالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح».
হাদীস নং: ২৮৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
স্বামীর আনুগত্য করার গুরুত্ব
হাদীছ নং : ২৮৫
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি যদি কোনও ব্যক্তিকে অপর কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম, তবে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম যেন নিজ স্বামীকে সিজদা করে -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীছ।জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৫৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬১৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৬২; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ৮৭৮৫; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭০৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫১১৬; বাগাবী, শারহুস্-সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩২৯
হাদীছ নং : ২৮৫
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি যদি কোনও ব্যক্তিকে অপর কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম, তবে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম যেন নিজ স্বামীকে সিজদা করে -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীছ।জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৫৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬১৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪১৬২; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ৮৭৮৫; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭০৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫১১৬; বাগাবী, শারহুস্-সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩২৯
مقدمة الامام النووي
باب حق الزوج على المرأة
285 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَوْ كُنْتُ آمِرًا أحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لأحَدٍ لأمَرْتُ المَرأةَ أَنْ تَسْجُدَ لزَوجِهَا». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
হাদীস নং: ২৮৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
স্বামীর সন্তুষ্টি জান্নাত লাভের উপায়
হাদীছ নং : ২৮৬
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও মহিলা যদি এ অবস্থায় মারা যায় যে,তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান স্তরের হাদীছ।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৬১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৮৫৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১২৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৮৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৭০; মুসনাদে আবূ ইয়ালা, হাদীছ নং ৬৯০৩)
হাদীছ নং : ২৮৬
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও মহিলা যদি এ অবস্থায় মারা যায় যে,তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান স্তরের হাদীছ।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৬১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৮৫৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১২৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৮৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৭০; মুসনাদে আবূ ইয়ালা, হাদীছ নং ৬৯০৩)
مقدمة الامام النووي
باب حق الزوج على المرأة
286 - وعن أم سَلَمَة رضي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أيُّمَا امْرَأةٍ مَاتَتْ، وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ২৮৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
যে স্ত্রীকে জান্নাতের হুর অভিশাপ দেয়
হাদীছ নং : ২৮৭
হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখনই কোনও মহিলা দুনিয়ায় তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, আয়তলোচনা হুরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। সে তো তোমার কাছে একজন মেহমান মাত্র। অচিরেই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান স্তরের হাদীছ।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২১০১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২২৪)
হাদীছ নং : ২৮৭
হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখনই কোনও মহিলা দুনিয়ায় তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, আয়তলোচনা হুরদের মধ্যে যে তার স্ত্রী হবে সে বলে, তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। সে তো তোমার কাছে একজন মেহমান মাত্র। অচিরেই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান স্তরের হাদীছ।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২১০১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২২৪)
مقدمة الامام النووي
باب حق الزوج على المرأة
287 - وعن معاذ بن جبل - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ تُؤْذِي امْرَأةٌ زَوْجَهَا [ص:113] في الدُّنْيَا إلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الحُورِ العِينِ لاَ تُؤذِيهِ قَاتَلكِ اللهُ! فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ (1) يُوشِكُ أَنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا». رواه الترمذي، (2) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ২৮৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
পুরুষের পক্ষে সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা
হাদীছ নং : ২৮৮
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিকতর ক্ষতিকর পরীক্ষার বিষয় কিছু রেখে যাইনি -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫২৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৭৪০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৯১০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭৪৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৯৬৭; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৫২২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫০২৭; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪১৫; বাগাবী, শারহুস্সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২৪৩)
হাদীছ নং : ২৮৮
হযরত উসামা ইবন যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিকতর ক্ষতিকর পরীক্ষার বিষয় কিছু রেখে যাইনি -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫২৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৭৪০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৯১০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৭৪৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৯৬৭; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৫২২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫০২৭; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪১৫; বাগাবী, শারহুস্সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২৪৩)
مقدمة الامام النووي
باب حق الزوج على المرأة
288 - وعن أسامة بن زيد رضي الله عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً هِيَ أضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّساء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৮৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়ঃ ৩৬
পরিবার-পরিজনের উপর অর্থব্যয়
প্রত্যেকের দায়িত্বে তার পরিবার-পরিজন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানতস্বরূপ। তাদের যথাযথ প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা ঈমানী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করার উপর আখেরাতের মুক্তি নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককেই জিজ্ঞেস করবেন সে তার এ দায়িত্ব কতটুকু সঠিকভাবে পালন করেছে। অনেকেই এটা কেবলই দুনিয়াবী বিষয় মনে করে। ফলে পরিবার-পরিজনের প্রতি নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী আচরণ করে। কেউ তো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করে, আবার কেউ অন্যসব দায়িত্বে অবহেলা করে কেবল পরিবার-পরিজন নিয়েই থাকে। যেন এর বাইরে আর কোনও যিম্মাদারী নেই। এ উভয়রকম প্রান্তিকতা ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। ইসলাম পরিবার-পরিজনের হক আদায়কে প্রথম স্থানে রেখেছে। সেইসঙ্গে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও অন্যান্য মানুষের হক আদায়ের প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। উৎসাহ দিয়েছে দীনের বহুমুখী খাতে অর্থ-সম্পদ খরচ করতে। এটা ইসলামী শিক্ষার ভারসাম্য। ইসলামী শিক্ষার অনুসারীগণ যাতে এ ভারসাম্য না হারায়, সে লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীছ তাদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দান করেছে।এ অধ্যায়ে ইমাম নববী রহ. সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।
‘পরিবার-পরিজনের উপর অর্থব্যয়’ সংক্রান্ত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অর্থ : ‘সন্তান যে পিতার, তার কর্তব্য ন্যায়সম্মতভাবে মায়েদের খোরপোশের ভার বহন করা।৩৬৭
ব্যাখ্যা
দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে তখন শিশুটির দুধপানের কী ব্যবস্থা হবে, এ আয়াতে সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আয়াতটির শুরুতে বলা হয়েছে-
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ
‘মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু'বছর দুধ পান করাবে। (এ সময়কাল) তাদের জন্য, যারা দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়।'
এর দ্বারা বোঝা গেল শিশুর দুধপানের পূর্ণ মেয়াদ দু'বছর। আরও জানা গেল এ দু'বছর দুধ পান করানোর মূল দায়িত্ব মায়ের। বিবাহবিচ্ছেদ ঘটা সত্ত্বেও নৈতিকভাবে সে এ দায়িত্ব পালনে বাধ্য। বিনা ওজরে কিংবা তালাকদাতা স্বামীর প্রতি জিদবশত দুধ পান না করালে সে গুনাহগার হবে। অবশ্য বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ায় ইদ্দতকালীন খোরপোশ ছাড়া স্বামীর কাছে অন্য কোনও আর্থিক সহযোগিতা তার প্রাপ্য নয়। তাই দুধপানের মেয়াদে দুধ পান করানো বাবদ স্বামীর কাছ থেকে সে বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে। বিবাহ বহাল থাকাকালে তার এ বাবদ কোনও বিনিময় গ্রহণের অধিকার থাকে না। আয়াতটির পরবর্তী বাক্যে, যা এ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিনিময়ের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-
وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
(সন্তান যে পিতার, তার কর্তব্য ন্যায়সম্মতভাবে মায়েদের খোরপোশের ভার বহন করা)। লক্ষণীয়, আয়াতটির শুরুতে 'মা'-এর জন্য শব্দ ব্যবহৃত হয়েছিল الْوَالِدَاتُ (মায়েরা)। সে হিসেবে “পিতা”-এর জন্য এখানে الْوَالِد শব্দ ব্যবহৃত হওয়ার কথা। তার বদলে الْمَوْلُودِ لَهُ (সন্তানটি যার) শব্দ ব্যবহার করার উদ্দেশ্য পিতাকে খোরপোশের ভার বহনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং তা বহন করা তার জন্য সহজসাধ্য করে তোলা।
প্রকৃতপক্ষে শিশুটি পিতামাতা উভয়ের সম্মিলিত ধন। এখন পিতামাতার মধ্যে যেহেতু বিচ্ছেদ ঘটে গেছে, তখন তার দুধপান করানো বাবদ খরচা বহনের ভার একা পিতা বহন করতে চাপ বোধ করতে পারে। সে বলতে পারে, আমি একা কেন বহন করব, দুজনকেই এটা বহন করতে হবে। কাজেই আমি তার মায়ের খোরপোশ পুরোটা নয়; বরং অর্ধেকটা দেব। এই চাপ যাতে সে বোধ না করে, তাই শুরুতে বলে দেওয়া হয়েছে الْمَوْلُودِ لَهُ (সন্তানটি যার)। অর্থাৎ সৃষ্টিগতভাবে সন্তানটি পিতামাতা উভয়ের হলেও সামাজিক পরিচয়ে তাকে পিতারই সন্তান বলা হয়ে থাকে। সে পরিচিত হয় পিতৃপরিচয়েই, যে কারণে দুধপানের পরবর্তী সব যিম্মাদারী পিতার উপরই আসে। সেদিক থেকে শিশুটি যখন তার, তখন তার দুধপান বাবদ মায়ের খোরপোশও তাকেই দিতে হবে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারলে পিতার পক্ষে তা বহন করা আসান হয়ে যায়। সে লক্ষ্যেই শব্দটির ব্যবহার।
বলা হয়েছে মায়ের খোরপোশ পিতা বহন করবে ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্থাৎ পিতার সামর্থ্য অনুযায়ী। সামর্থ্যের বাইরে তাকে চাপ দেওয়া যাবে না। আবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এমন নিম্নমানের দেবে না, যা তার মায়ের পক্ষে অসম্মানজনক হয়।
আয়াতটির মূলকথা হল পারিবারিক খরচার যিম্মাদারী পিতার উপর। পিতা হিসেবে পরিবারবর্গের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তারই। এটা যেমন বিবেক-বুদ্ধির দাবি, তেমনি এটা শরীআতেরও হুকুম।
দুই নং আয়াত
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا
অর্থ : ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচা দেবে আর যার জীবিকা সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, (অর্থাৎ যে গরীব) সে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচা দেবে। আল্লাহ যাকে যতটুকু দিয়েছেন তার বেশি ভার তার উপর অর্পণ করেন না।৩৬৮
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ শিশুর প্রতিপালন বাবদ যা-কিছু খরচ হয়, তা বহনের দায়িত্ব পিতারই। এ ক্ষেত্রে পিতার সামর্থ্য বিবেচ্য। সচ্ছল হলে সে সচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করবে, আর অসচ্ছল হলে সে ক্ষেত্রেও তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব কেবল তাই করবে। এর বেশি করতে সে বাধ্য নয়। সেরকম চাপও তাকে দেওয়া বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা কাউকে দিয়ে তার সামর্থ্যের বাইরে বোঝা বহন করান না। শরীআতের যাবতীয় বিধানেই বান্দার শক্তি-ক্ষমতার দিকে লক্ষ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কাজেই পরিবারের সদস্যবর্গকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। নিজেদের খেয়াল-খুশিমত তার উপর চাপ সৃষ্টি করলে তা জুলুমেরই নামান্তর হবে। অপরপক্ষে সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও পরিবার-পরিজনের ন্যায্য খরচ বহন করতে কার্পণ্য করাও উচিত নয়। তাদেরকে অহেতুক কষ্ট দেওয়াও জুলুম বৈকি। আল্লাহ তাআলা যখন তাকে সচ্ছলতা দান করেছেন, তখন তাদের উপর এ জুলুম শুধু শুধু করবে কেন? সচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করাটাও একরকম শোকর আদায়। এটা আল্লাহ তাআলা পসন্দ করেন। দোষ হচ্ছে অপচয় করা ও অহমিকা দেখানো। তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
তিন নং আয়াত
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
অর্থ : ‘তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন।৩৬৯
ব্যাখ্যা :
আয়াতটির শুরুতে আছে-
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ
‘বল, আমার প্রতিপালক নিজ বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিকের প্রাচুর্য দান করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) তা সংকীর্ণ করে দেন।'
অর্থাৎ সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা আল্লাহ তাআলারই দান। তিনি যাকে ইচ্ছা গরীব বানান, যাকে ইচ্ছা ফকীর। আবার তিনি নিজ ইচ্ছামত অবস্থা পরিবর্তনও করে দেন। ফলে একসময়ের চরম ফকীর প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যায়। অন্যদিকে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক নিঃস্ব-কপর্দকহীন হয়ে পড়ে। তো ঐশ্বর্যের চাবিকাঠি যখন আল্লাহ তাআলার হাতে, তখন না নিজ ঐশ্বর্যের উপর ভরসা করা উচিত, আর না উচিত নিজ দারিদ্র্যের কারণে অসহায় বোধ করা। সর্বাবস্থায় কর্তব্য আল্লাহর দিকে রুজু' থাকা এবং তাঁর উপর ভরসা করে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করতে থাকা। আয়াতের দ্বিতীয় অংশে সে উৎসাহই দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলছেন-
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
(তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন)।
অর্থাৎ খরচ করলে সম্পদ কমে যাবে ও অভাবে পড়ে যাবে এ ভয় করো না। খরচ করলে রিযিক কমে না। আল্লাহ তাআলা যার ভাগ্যে যা রেখেছেন তা সে পাবেই। বরং খরচ করলেই লাভ। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক খরচ করার দ্বারা অর্থ-সম্পদে বরকত হয় এবং আখেরাতে ছাওয়াব পাওয়া যায়।
বলা হয়েছে, 'তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন' এ দেওয়াটা আখেরাতের ছাওয়াব আকারেও হতে পারে এবং দুনিয়াবী বদলাও হতে পারে। খরচ করার দ্বারা মনের ঐশ্বর্য তো লাভ হয়ই, যা কিনা প্রকৃত ঐশ্বর্য। সেইসঙ্গে লাভ হয় বরকতও। বরকত হওয়ার মানে অল্প খরচেই অনেক বড় প্রয়োজন মিটে যাওয়া, অহেতুক খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া, যা খরচ হয় তা বৃথা না যাওয়া; বরং যে উদ্দেশ্যে খরচ করা হয় তা অর্জিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব অর্জন খরচ করার দ্বারাই হয়। খরচ না করলে এর থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিলাল রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেন-
أَنْفِقْ يَا بِلَالُ، وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا
‘হে বেলাল! খরচ কর। আরশওয়ালার কাছ থেকে কমানোর ভয় করো না।৩৭০
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর কন্যা হযরত আসমা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিবাহকালে যুবায়র রাযি. আমাকে যে মাহর দিয়েছিলেন, আমার সম্পদ বলতে কেবল তাই। আমি তা থেকে কি কিছু দেব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
نَعَمْ، وَلَا تُوكِي فَيُوْكَى عَلَيْكِ ، يَقُولُ: لَا تُحْصِي فَيُحْصَى عَلَيْكِ
‘হাঁ, তা থেকে খরচ কর। তা বেঁধে রেখ না, তাহলে তোমার থেকেও বেঁধে রাখা হবে। তা গুণবে না, তাহলে তোমাকেও গুণে গুণে দেওয়া হবে।৩৭১
৩৬৭. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৩৩
৩৬৮. সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ৭
৩৬৯. সূরা সাবা (৩৪), আয়াত ৩৯
৩৭০, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৩৯৩; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০২০
৩৭১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৬০; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২৪৭; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৪৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৯৭০
পরিবার-পরিজনের উপর অর্থব্যয়
প্রত্যেকের দায়িত্বে তার পরিবার-পরিজন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানতস্বরূপ। তাদের যথাযথ প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা ঈমানী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করার উপর আখেরাতের মুক্তি নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককেই জিজ্ঞেস করবেন সে তার এ দায়িত্ব কতটুকু সঠিকভাবে পালন করেছে। অনেকেই এটা কেবলই দুনিয়াবী বিষয় মনে করে। ফলে পরিবার-পরিজনের প্রতি নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী আচরণ করে। কেউ তো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করে, আবার কেউ অন্যসব দায়িত্বে অবহেলা করে কেবল পরিবার-পরিজন নিয়েই থাকে। যেন এর বাইরে আর কোনও যিম্মাদারী নেই। এ উভয়রকম প্রান্তিকতা ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী। ইসলাম পরিবার-পরিজনের হক আদায়কে প্রথম স্থানে রেখেছে। সেইসঙ্গে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও অন্যান্য মানুষের হক আদায়ের প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। উৎসাহ দিয়েছে দীনের বহুমুখী খাতে অর্থ-সম্পদ খরচ করতে। এটা ইসলামী শিক্ষার ভারসাম্য। ইসলামী শিক্ষার অনুসারীগণ যাতে এ ভারসাম্য না হারায়, সে লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীছ তাদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দান করেছে।এ অধ্যায়ে ইমাম নববী রহ. সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।
‘পরিবার-পরিজনের উপর অর্থব্যয়’ সংক্রান্ত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অর্থ : ‘সন্তান যে পিতার, তার কর্তব্য ন্যায়সম্মতভাবে মায়েদের খোরপোশের ভার বহন করা।৩৬৭
ব্যাখ্যা
দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে তখন শিশুটির দুধপানের কী ব্যবস্থা হবে, এ আয়াতে সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আয়াতটির শুরুতে বলা হয়েছে-
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ
‘মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু'বছর দুধ পান করাবে। (এ সময়কাল) তাদের জন্য, যারা দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়।'
এর দ্বারা বোঝা গেল শিশুর দুধপানের পূর্ণ মেয়াদ দু'বছর। আরও জানা গেল এ দু'বছর দুধ পান করানোর মূল দায়িত্ব মায়ের। বিবাহবিচ্ছেদ ঘটা সত্ত্বেও নৈতিকভাবে সে এ দায়িত্ব পালনে বাধ্য। বিনা ওজরে কিংবা তালাকদাতা স্বামীর প্রতি জিদবশত দুধ পান না করালে সে গুনাহগার হবে। অবশ্য বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ায় ইদ্দতকালীন খোরপোশ ছাড়া স্বামীর কাছে অন্য কোনও আর্থিক সহযোগিতা তার প্রাপ্য নয়। তাই দুধপানের মেয়াদে দুধ পান করানো বাবদ স্বামীর কাছ থেকে সে বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে। বিবাহ বহাল থাকাকালে তার এ বাবদ কোনও বিনিময় গ্রহণের অধিকার থাকে না। আয়াতটির পরবর্তী বাক্যে, যা এ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিনিময়ের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-
وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
(সন্তান যে পিতার, তার কর্তব্য ন্যায়সম্মতভাবে মায়েদের খোরপোশের ভার বহন করা)। লক্ষণীয়, আয়াতটির শুরুতে 'মা'-এর জন্য শব্দ ব্যবহৃত হয়েছিল الْوَالِدَاتُ (মায়েরা)। সে হিসেবে “পিতা”-এর জন্য এখানে الْوَالِد শব্দ ব্যবহৃত হওয়ার কথা। তার বদলে الْمَوْلُودِ لَهُ (সন্তানটি যার) শব্দ ব্যবহার করার উদ্দেশ্য পিতাকে খোরপোশের ভার বহনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং তা বহন করা তার জন্য সহজসাধ্য করে তোলা।
প্রকৃতপক্ষে শিশুটি পিতামাতা উভয়ের সম্মিলিত ধন। এখন পিতামাতার মধ্যে যেহেতু বিচ্ছেদ ঘটে গেছে, তখন তার দুধপান করানো বাবদ খরচা বহনের ভার একা পিতা বহন করতে চাপ বোধ করতে পারে। সে বলতে পারে, আমি একা কেন বহন করব, দুজনকেই এটা বহন করতে হবে। কাজেই আমি তার মায়ের খোরপোশ পুরোটা নয়; বরং অর্ধেকটা দেব। এই চাপ যাতে সে বোধ না করে, তাই শুরুতে বলে দেওয়া হয়েছে الْمَوْلُودِ لَهُ (সন্তানটি যার)। অর্থাৎ সৃষ্টিগতভাবে সন্তানটি পিতামাতা উভয়ের হলেও সামাজিক পরিচয়ে তাকে পিতারই সন্তান বলা হয়ে থাকে। সে পরিচিত হয় পিতৃপরিচয়েই, যে কারণে দুধপানের পরবর্তী সব যিম্মাদারী পিতার উপরই আসে। সেদিক থেকে শিশুটি যখন তার, তখন তার দুধপান বাবদ মায়ের খোরপোশও তাকেই দিতে হবে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারলে পিতার পক্ষে তা বহন করা আসান হয়ে যায়। সে লক্ষ্যেই শব্দটির ব্যবহার।
বলা হয়েছে মায়ের খোরপোশ পিতা বহন করবে ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্থাৎ পিতার সামর্থ্য অনুযায়ী। সামর্থ্যের বাইরে তাকে চাপ দেওয়া যাবে না। আবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এমন নিম্নমানের দেবে না, যা তার মায়ের পক্ষে অসম্মানজনক হয়।
আয়াতটির মূলকথা হল পারিবারিক খরচার যিম্মাদারী পিতার উপর। পিতা হিসেবে পরিবারবর্গের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তারই। এটা যেমন বিবেক-বুদ্ধির দাবি, তেমনি এটা শরীআতেরও হুকুম।
দুই নং আয়াত
لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا
অর্থ : ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খরচা দেবে আর যার জীবিকা সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, (অর্থাৎ যে গরীব) সে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচা দেবে। আল্লাহ যাকে যতটুকু দিয়েছেন তার বেশি ভার তার উপর অর্পণ করেন না।৩৬৮
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ শিশুর প্রতিপালন বাবদ যা-কিছু খরচ হয়, তা বহনের দায়িত্ব পিতারই। এ ক্ষেত্রে পিতার সামর্থ্য বিবেচ্য। সচ্ছল হলে সে সচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করবে, আর অসচ্ছল হলে সে ক্ষেত্রেও তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব কেবল তাই করবে। এর বেশি করতে সে বাধ্য নয়। সেরকম চাপও তাকে দেওয়া বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা কাউকে দিয়ে তার সামর্থ্যের বাইরে বোঝা বহন করান না। শরীআতের যাবতীয় বিধানেই বান্দার শক্তি-ক্ষমতার দিকে লক্ষ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কাজেই পরিবারের সদস্যবর্গকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। নিজেদের খেয়াল-খুশিমত তার উপর চাপ সৃষ্টি করলে তা জুলুমেরই নামান্তর হবে। অপরপক্ষে সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও পরিবার-পরিজনের ন্যায্য খরচ বহন করতে কার্পণ্য করাও উচিত নয়। তাদেরকে অহেতুক কষ্ট দেওয়াও জুলুম বৈকি। আল্লাহ তাআলা যখন তাকে সচ্ছলতা দান করেছেন, তখন তাদের উপর এ জুলুম শুধু শুধু করবে কেন? সচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করাটাও একরকম শোকর আদায়। এটা আল্লাহ তাআলা পসন্দ করেন। দোষ হচ্ছে অপচয় করা ও অহমিকা দেখানো। তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
তিন নং আয়াত
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
অর্থ : ‘তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন।৩৬৯
ব্যাখ্যা :
আয়াতটির শুরুতে আছে-
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ
‘বল, আমার প্রতিপালক নিজ বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিকের প্রাচুর্য দান করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) তা সংকীর্ণ করে দেন।'
অর্থাৎ সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা আল্লাহ তাআলারই দান। তিনি যাকে ইচ্ছা গরীব বানান, যাকে ইচ্ছা ফকীর। আবার তিনি নিজ ইচ্ছামত অবস্থা পরিবর্তনও করে দেন। ফলে একসময়ের চরম ফকীর প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যায়। অন্যদিকে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক নিঃস্ব-কপর্দকহীন হয়ে পড়ে। তো ঐশ্বর্যের চাবিকাঠি যখন আল্লাহ তাআলার হাতে, তখন না নিজ ঐশ্বর্যের উপর ভরসা করা উচিত, আর না উচিত নিজ দারিদ্র্যের কারণে অসহায় বোধ করা। সর্বাবস্থায় কর্তব্য আল্লাহর দিকে রুজু' থাকা এবং তাঁর উপর ভরসা করে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করতে থাকা। আয়াতের দ্বিতীয় অংশে সে উৎসাহই দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলছেন-
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ
(তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন)।
অর্থাৎ খরচ করলে সম্পদ কমে যাবে ও অভাবে পড়ে যাবে এ ভয় করো না। খরচ করলে রিযিক কমে না। আল্লাহ তাআলা যার ভাগ্যে যা রেখেছেন তা সে পাবেই। বরং খরচ করলেই লাভ। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক খরচ করার দ্বারা অর্থ-সম্পদে বরকত হয় এবং আখেরাতে ছাওয়াব পাওয়া যায়।
বলা হয়েছে, 'তদস্থলে অন্য জিনিস দিয়ে দেন' এ দেওয়াটা আখেরাতের ছাওয়াব আকারেও হতে পারে এবং দুনিয়াবী বদলাও হতে পারে। খরচ করার দ্বারা মনের ঐশ্বর্য তো লাভ হয়ই, যা কিনা প্রকৃত ঐশ্বর্য। সেইসঙ্গে লাভ হয় বরকতও। বরকত হওয়ার মানে অল্প খরচেই অনেক বড় প্রয়োজন মিটে যাওয়া, অহেতুক খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া, যা খরচ হয় তা বৃথা না যাওয়া; বরং যে উদ্দেশ্যে খরচ করা হয় তা অর্জিত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব অর্জন খরচ করার দ্বারাই হয়। খরচ না করলে এর থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিলাল রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেন-
أَنْفِقْ يَا بِلَالُ، وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا
‘হে বেলাল! খরচ কর। আরশওয়ালার কাছ থেকে কমানোর ভয় করো না।৩৭০
হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর কন্যা হযরত আসমা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিবাহকালে যুবায়র রাযি. আমাকে যে মাহর দিয়েছিলেন, আমার সম্পদ বলতে কেবল তাই। আমি তা থেকে কি কিছু দেব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
نَعَمْ، وَلَا تُوكِي فَيُوْكَى عَلَيْكِ ، يَقُولُ: لَا تُحْصِي فَيُحْصَى عَلَيْكِ
‘হাঁ, তা থেকে খরচ কর। তা বেঁধে রেখ না, তাহলে তোমার থেকেও বেঁধে রাখা হবে। তা গুণবে না, তাহলে তোমাকেও গুণে গুণে দেওয়া হবে।৩৭১
৩৬৭. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৩৩
৩৬৮. সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ৭
৩৬৯. সূরা সাবা (৩৪), আয়াত ৩৯
৩৭০, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৩৯৩; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০২০
৩৭১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৬০; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২৪৭; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৪৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৯৭০
পরিবার-পরিজনের মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্য অর্থব্যয়ই শ্রেষ্ঠ অর্থব্যয়
হাদীছ নং : ২৮৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি একটি দীনার আল্লাহর পথে খরচ করেছ, একটি দীনার দাসমুক্তিতে ব্যয় করেছ, একটি দীনার মিসকীনকে দান করেছ আর একটি দীনার পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করেছ। এর মধ্যে ছাওয়াবের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ সেই দীনার, যা তুমি পরিবারবর্গের উপর ব্যয় করেছ মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১০১১৯, নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৩৯; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৬৯৭: শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৪৩, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৭৮
হাদীছ নং : ২৮৯
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি একটি দীনার আল্লাহর পথে খরচ করেছ, একটি দীনার দাসমুক্তিতে ব্যয় করেছ, একটি দীনার মিসকীনকে দান করেছ আর একটি দীনার পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করেছ। এর মধ্যে ছাওয়াবের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ সেই দীনার, যা তুমি পরিবারবর্গের উপর ব্যয় করেছ মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১০১১৯, নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৩৯; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৬৯৭: শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৪৩, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৭৮
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوف} [البقرة: 233]، وَقالَ تَعَالَى: {لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللهُ لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ مَا آتَاهَا} [الطلاق: 7]، وَقالَ تَعَالَى: {وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه} [سبأ: 39].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوف} [البقرة: 233]، وَقالَ تَعَالَى: {لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللهُ لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ مَا آتَاهَا} [الطلاق: 7]، وَقالَ تَعَالَى: {وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه} [سبأ: 39].
289 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «دِينَارٌ أنْفَقْتَهُ في سَبيلِ اللهِ، وَدِينار أنْفَقْتَهُ في رَقَبَةٍ، وَدِينارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ، وَدِينَارٌ أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ، أعْظَمُهَا أجْرًا الَّذِي أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ২৯০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
পরিবার-পরিজনের মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্য অর্থব্যয়ই শ্রেষ্ঠ অর্থব্যয়
হাদীছ নং : ২৯০
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাওলা (মুক্তদাস) হযরত ছাওবান ইবন বুজদুদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি যে দীনার খরচ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল সেই দীনার, যা সে তার পরিবারবর্গের উপর ব্যয় করে এবং ওই দীনার, যেটি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ঘোড়ার জন্য খরচ করে আর ওই দীনার, যা সে আল্লাহর পথে নিজ সঙ্গীদের উপর খরচ করে -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৬৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ২৭৬০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২৪০৬; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৭৫৭; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৪৯; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৩৯)
হাদীছ নং : ২৯০
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাওলা (মুক্তদাস) হযরত ছাওবান ইবন বুজদুদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি যে দীনার খরচ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল সেই দীনার, যা সে তার পরিবারবর্গের উপর ব্যয় করে এবং ওই দীনার, যেটি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ঘোড়ার জন্য খরচ করে আর ওই দীনার, যা সে আল্লাহর পথে নিজ সঙ্গীদের উপর খরচ করে -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৬৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ২৭৬০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২৪০৬; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৭৫৭; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৪৯; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৩৯)
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
290 - وعن أَبي عبد الله، ويُقالُ لَهُ: أَبو عبد الرحمان ثَوبَان بن بُجْدُد مَوْلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أفْضَلُ دِينَارٍ يُنْفقُهُ الرَّجُلُ: دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ، وَدينَارٌ يُنْفقُهُ عَلَى دَابَّتِهِ في سَبيلِ الله، وَدِينارٌ يُنْفقُهُ عَلَى أصْحَابهِ في سَبيلِ اللهِ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ২৯১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
সন্তানদের পেছনে খরচে মাতৃমমতা সক্রিয় থাকাটা ছাওয়াবের জন্য বাধা নয়
হাদীছ নং : ২৯১
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যে আবূ সালামার সন্তানদের উপর খরচ করি তাতে কি আমার ছাওয়ার আছে? আমি তো তাদেরকে এমন এমন অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারি না। তারাও তো আমারই সন্তান! তিনি বললেন, হাঁ, তুমি যে তাদের উপর খরচ কর তাতে তোমার জন্য ছাওয়াব আছে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৩৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬০৮৫; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৭৬০; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৯৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ হাদীছ নং ১৬৭৯)
হাদীছ নং : ২৯১
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যে আবূ সালামার সন্তানদের উপর খরচ করি তাতে কি আমার ছাওয়ার আছে? আমি তো তাদেরকে এমন এমন অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারি না। তারাও তো আমারই সন্তান! তিনি বললেন, হাঁ, তুমি যে তাদের উপর খরচ কর তাতে তোমার জন্য ছাওয়াব আছে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৩৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬০৮৫; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৭৬০; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭৯৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ হাদীছ নং ১৬৭৯)
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
291 - وعن أمِّ سَلمَة رَضي الله عنها، قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُول الله، هَلْ لِي أجرٌ فِي بَنِي أَبي سَلَمَة أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكتهمْ هكَذَا وَهكَذَا إنَّمَا هُمْ بَنِيّ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، لَكِ أجْرُ مَا أنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৯২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরীআতসম্মত যে-কোনও খাতে অর্থব্যয়ে ছাওয়াবের নিশ্চয়তা
হাদীছ নং : ২৯২
হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. থেকে দীর্ঘ এক হাদীছে বর্ণিত আছে, যে হাদীছটি এ গ্রন্থের শুরুতে নিয়ত অধ্যায়ে আমরা উল্লেখ করেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই খরচ করবে তার বিনিময়ে তোমাকে ছাওয়াব দেওয়া হবে, এমনকি তুমি যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তার বিনিময়েও-বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৬৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬২৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২১১৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫২৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৬০২৬; তবারানী, আল্-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭১৭১: বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৫৬৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৪৫৯
হাদীছ নং : ২৯২
হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. থেকে দীর্ঘ এক হাদীছে বর্ণিত আছে, যে হাদীছটি এ গ্রন্থের শুরুতে নিয়ত অধ্যায়ে আমরা উল্লেখ করেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বলেন, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই খরচ করবে তার বিনিময়ে তোমাকে ছাওয়াব দেওয়া হবে, এমনকি তুমি যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তার বিনিময়েও-বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৬৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬২৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২১১৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫২৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৬০২৬; তবারানী, আল্-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭১৭১: বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৫৬৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৪৫৯
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
292 - وعن سعد بن أَبي وقاص - رضي الله عنه - في حديثه الطويل الَّذِي قدمناه في أول الكتاب [ص:114] في باب النِّيَةِ: أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ لَهُ: «وإنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ بِهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ في فيِّ امرأتِك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৯৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
পরিবার-পরিজনের পেছনে খরচ করার দ্বারা সদাকার ছাওয়াব
হাদীছ নং : ২৯৩
হযরত আবূ মাস'ঊদ আল-বাদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি যখন ছাওয়াবের আশায় নিজ পরিবারবর্গের উপর খরচ করে, তার জন্য তা সদাকা গণ্য হয় -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০২; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৪৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৩৯; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২৭০৬; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫২২; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৭৪৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৭৭)
হাদীছ নং : ২৯৩
হযরত আবূ মাস'ঊদ আল-বাদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি যখন ছাওয়াবের আশায় নিজ পরিবারবর্গের উপর খরচ করে, তার জন্য তা সদাকা গণ্য হয় -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০২; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৪৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৩৯; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২৭০৬; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫২২; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৭৪৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৭৭)
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
293 - وعن أَبي مسعود البدري - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا أنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً يَحْتَسِبُهَا فَهِيَ لَهُ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৯৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
পোষ্যবর্গের মৌলিক চাহিদা পূরণে অবহেলা করা গুনাহ
হাদীছ নং : ২৯৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রায. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তির গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, যার খাবার তার দায়িত্বে, সে তার খাবার যোগানো হতে বিরত থাকবে।
এটি একটি সহীহ হাদীছ, যা আবূ দাউদ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।৩৮২ ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ গ্রন্থে একই অর্থের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তা নিম্নরূপ : যে ব্যক্তি কারও খাদ্য যোগানোর যিম্মাদার, তার গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার খাবার আটকে দেবে।৩৮৩
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ - (٣٨١) - এ বাক্যে كَفَى শব্দটি فعل, যার فاعل হচ্ছে أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ মাঝখানে بِالْمَرْءِ শব্দটি مفعول به, যার সাথে অতিরিক্ত ب যুক্ত হয়েছে। إِثْمًا শব্দটি تمييز। কিন্তু এটি মূলত فاعل ছিল। বাক্যটির বিশ্লিষ্ট রূপ এরকম- كفي المرء في عظم الإثم اثم تضييع من يقوت
৩৮২. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৯১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৯৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ২৪৩৫৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৩৪১৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৬৯৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৩৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪০৪
৩৮৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪১; বায়হাকী, আস্সুনানুস সগীর, হাদীছ নং ২৯১৭
হাদীছ নং : ২৯৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রায. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তির গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, যার খাবার তার দায়িত্বে, সে তার খাবার যোগানো হতে বিরত থাকবে।
এটি একটি সহীহ হাদীছ, যা আবূ দাউদ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।৩৮২ ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ গ্রন্থে একই অর্থের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তা নিম্নরূপ : যে ব্যক্তি কারও খাদ্য যোগানোর যিম্মাদার, তার গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার খাবার আটকে দেবে।৩৮৩
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ - (٣٨١) - এ বাক্যে كَفَى শব্দটি فعل, যার فاعل হচ্ছে أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ মাঝখানে بِالْمَرْءِ শব্দটি مفعول به, যার সাথে অতিরিক্ত ب যুক্ত হয়েছে। إِثْمًا শব্দটি تمييز। কিন্তু এটি মূলত فاعل ছিল। বাক্যটির বিশ্লিষ্ট রূপ এরকম- كفي المرء في عظم الإثم اثم تضييع من يقوت
৩৮২. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৯১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৯৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ২৪৩৫৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৩৪১৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৬৯৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৩৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪০৪
৩৮৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪১; বায়হাকী, আস্সুনানুস সগীর, হাদীছ নং ২৯১৭
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
294 - وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ٣٨١» حديث صحيح رواه أَبُو داود وغيره.
ورواه مسلم في صحيحه بمعناه، قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمًا أَنْ يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ». (1)
ورواه مسلم في صحيحه بمعناه، قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمًا أَنْ يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ». (1)
হাদীস নং: ২৯৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
খরচকারীদের জন্য ফিরিশতাদের দুআ ও কৃপণদের জন্য বদ্দুআ
হাদীছ নং : ২৯৫
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর বান্দাগণ প্রতিদিন ভোরে উপনীত হতেই দু'জন ফিরিশতা নেমে আসেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! খরচকারীকে উত্তম বদলা দিন। অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে দিন বিনাশ -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৫৫২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩২৯, নাসাঈ, আসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৮১৬; বায়হাকী, আসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৮১৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯৮৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৫৮)
হাদীছ নং : ২৯৫
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর বান্দাগণ প্রতিদিন ভোরে উপনীত হতেই দু'জন ফিরিশতা নেমে আসেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! খরচকারীকে উত্তম বদলা দিন। অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে দিন বিনাশ -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৫৫২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩২৯, নাসাঈ, আসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৮১৬; বায়হাকী, আসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৮১৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯৮৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৫৮)
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
295 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيهِ إلاَّ مَلَكانِ يَنْزلاَنِ، فَيقُولُ أحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أعْطِ مُنْفقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ: اللَّهُمَّ أعْطِ مُمْسِكًا تلَفًا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৯৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
দান-সদাকার মাহাত্ম্য ও পদ্ধতি এবং হাত না পেতে আত্মিক ঐশ্বর্য অবলম্বনের সুফল
হাদীছ নং : ২৯৬
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। তুমি যাদের লালন-পালন কর তাদের থেকে খরচ শুরু কর। উৎকৃষ্ট দান সেটাই যা অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে করা হয়। যে ব্যক্তি সংযমী হতে চায়, আল্লাহ তাকে সংযমী বানান। যে ব্যক্তি (মাখলূক থেকে) মুখাপেক্ষিতামুক্ত থাকতে চায় আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষিতামুক্ত রাখেন -বুখারী।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৫৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ১০৬৯৩; তবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩০১৯, বায়হাকী, আসুনানুস সগীর, হাদীছ নং ১২৫২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬১৭
হাদীছ নং : ২৯৬
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। তুমি যাদের লালন-পালন কর তাদের থেকে খরচ শুরু কর। উৎকৃষ্ট দান সেটাই যা অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে করা হয়। যে ব্যক্তি সংযমী হতে চায়, আল্লাহ তাকে সংযমী বানান। যে ব্যক্তি (মাখলূক থেকে) মুখাপেক্ষিতামুক্ত থাকতে চায় আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষিতামুক্ত রাখেন -বুখারী।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৫৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ১০৬৯৩; তবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩০১৯, বায়হাকী, আসুনানুস সগীর, হাদীছ নং ১২৫২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬১৭
مقدمة الامام النووي
36 - باب النفقة عَلَى العيال
296 - وعنه، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ২৯৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়ঃ ৩৭
প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে দান করা
আল্লাহর পথে যা খরচ করা হয়, প্রকৃতপক্ষে তাই মানুষের আসল সম্পদ; বরং সেটাই তার সম্পদ। দুনিয়ায় যা রেখে যাওয়া হয় তা পরের সম্পদ। মৃত্যুর পর তাতে কারও কোনও ক্ষমতা থাকে না। আল্লাহর পথে যা খরচ করা হয় তা আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে। মৃত্যুর পর তা পাওয়া যাবে। সেই সম্পদই যখন আসল সম্পদ, তখন তার প্রতিই বিশেষভাবে মনোযোগী থাকা যুক্তিসঙ্গত ও বুদ্ধিমত্তার কাজ। সে বুদ্ধিমত্তার দাবি হচ্ছে আল্লাহর পথে নিজ প্রিয়বস্তু দান করা ও উৎকৃষ্ট বস্তু দান করা।
প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু দান করা এ কারণেও প্রয়োজন যে, তা দেওয়া হচ্ছে আল্লাহকে। যে-কোনও বস্তু দান করলে তার প্রথম গ্রহীতা আল্লাহ। কোনও বান্দার হাতে যাওয়ার আগে প্রথমে তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে। আল্লাহর পথে দান করা হয় আল্লাহর ভালোবাসায়। এটা এক সাধারণ নিয়ম, ভালোবাসার জনকে কিছু দেওয়া হলে উৎকৃষ্ট ও প্রিয় বস্তুই দেওয়া হয়ে থাকে। এক আল্লাহপ্রেমিকের কাছে আল্লাহর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কিছুই হতে পারে না। অতএব আল্লাহর উদ্দেশ্যে যা দান করা হবে, আল্লাহপ্রেমের দাবিতেই তা সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তুই হওয়ার কথা। অনেকে দানের এ মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে না। ফলে দায়সারাভাবে কোনও একটা কিছু দিয়ে দেয়। বরং অনেক সময় সবচে' অপসন্দের ও সবচে' কম দামীটাই দেওয়া হয়ে থাকে। বলা যায় এটাই ব্যাপক। বলাবাহুল্য এটা আল্লাহর পক্ষে দানের মহিমা নষ্ট করে।
আবার আল্লাহর পথে যা-কিছু দান করা হয় তা তো আল্লাহ আল্লাহ তাআলারই দেওয়া। তাঁর দেওয়া বস্তু তাঁর পথে ব্যয় করার সময় খুঁজে খুঁজে মন্দটা দেওয়া বা অপ্রিয়টা দেওয়া একরকম নাশুকরীও বটে। এ নাশুকরী থেকে বাঁচার লক্ষ্যেও প্রত্যেক দাতার কর্তব্য আল্লাহর পথে প্রিয়বস্তু দান করা ও ভালোটা দেওয়া।
মানুষ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার প্রতি বেশি আকৃষ্ট থাকার কারণে দান খয়রাতের ক্ষেত্রে এসকল দিক চিন্তা করে না। ফলে আখেরাতের বিচারে সে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়। সে ক্ষতি থেকে মানুষকে বাঁচানোর লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীছে তাকে উৎকৃষ্ট ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে প্রচুর আয়াত আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছও আছে অনেক। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম দু'টি আয়াত ও একটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।
‘প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে দান করা’ সম্পর্কিত দুটি আয়াত
এক নং আয়াত
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ
অর্থ : ‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে।৪০৫
ব্যাখ্যা
الْبِرّ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন সদ্ব্যবহার, অনুগ্রহ, সৎকর্ম ইত্যাদি। সাধারণত এর দ্বারা পরিপূর্ণরূপে অন্যের হক আদায় করা বোঝানো হয়, যা দ্বারা নিজ দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে সম্পন্ন হয়ে যায়। এভাবে দায়িত্ব পালনকারীকে بر এবং বহুবচনে ابرار বলা হয়। কুরআন মাজীদে এ শব্দের বহুল ব্যবহার আছে।
এস্থলে الْبِرّ দ্বারা কী বোঝানো উদ্দেশ্য, সে সম্পর্কে মুফাস্সিরগণ বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কারও মতে এর দ্বারা পূর্ণাঙ্গ ছাওয়াব ও প্রতিদান বোঝানো হয়েছে। কেউ বলেন, রহমত। কেউ বলেন, জান্নাত। এছাড়া যে-কোনও কল্যাণ, আনুগত্য, তাকওয়া, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি, সত্য ও সততা ইত্যাদি ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। এর সবগুলোই সৎকর্ম বা সৎকর্মের প্রতিদান। মূলত বোঝানো উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের দ্বারা দান-সদাকার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সৎকর্ম সংঘটিত হবে না, ফলে তার পরিপূর্ণ প্রতিদানও আল্লাহ তাআলার কাছে লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয়বস্তু থেকে দান কর।
‘দান' কথাটি ব্যাপক। এর দ্বারা অর্থ দান করা, শক্তি ব্যয় করা, বিদ্যা-বুদ্ধি খরচ করা, মাখলুকের সেবায় নিজ প্রভাব ও ক্ষমতার বৈধ ব্যবহার করা ইত্যাদি সবই বোঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং সর্বপ্রকার ব্যয়ই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তাআলার পথে যার যা ব্যয় করার সামর্থ্য আছে, তা পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান পাওয়া যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ আয়াতে পরিপূর্ণ প্রতিদানের জন্য প্রিয়বস্তু ব্যয়ের শর্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যদি প্রিয়বস্তু খরচ করা না হয়, তবুও একরকম প্রতিদান অবশ্যই পাওয়া যাবে। আল্লাহর পথে কোনও খরচই বৃথা যায় না, যদি তা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। সুতরাং যার দানের মান ও পরিমাণ যেমন হবে, সে সেই অনুপাতেই প্রতিদান লাভ করবে। তাই তো আয়াতের শেষে আছে—
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (92)
(তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত)। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর পথে যা ব্যয় কর, তার মান ও পরিমাণ তিনি জানেন এবং সে দানের ক্ষেত্রে তোমাদের আন্তরিকতা কতটুকু, সে সম্পর্কেও তিনি অবগত। তিনি সে অনুসারেই তোমাদেরকে প্রতিদান দেবেন।
অবশ্য আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট পুরস্কার লাভ করুক। সেজন্যই এ আয়াতে প্রিয়বস্তু দান করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এ আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কেরাম কী তৎপরতার সঙ্গে এর উপর আমল করেছিলেন, তার একটা দৃষ্টান্ত এ অধ্যায়ে উদ্ধৃত হাদীছ দ্বারা জানা যায়।
দুই নং আয়াত
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ
অর্থ : 'হে মুমিনগণ! তোমরা যা-কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা-কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। আর এরূপ মন্দ জিনিস (আল্লাহর নামে) দেওয়ার নিয়ত করো না।৪০৬
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে প্রথমত বান্দার উপার্জিত এবং ভূমি হতে আল্লাহর উৎপাদিত বস্তু থেকে যা হালাল ও উৎকৃষ্ট, আল্লাহর পথে তা ব্যয় করতে আদেশ করা হয়েছে। তারপর নিকৃষ্ট বস্ত্র দান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং তার মন্দত্ব পরিষ্কার করার জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ কাউকে মন্দ বস্তু দেওয়া হলে তার অবস্থা কেমন হয় তা উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে যে, তোমাদের উপার্জিত ও ভূমি থেকে উৎপন্ন বস্তুসামগ্রী হতে যা উৎকৃষ্ট তার একটা অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় কর। যাকাত ও নফল দান-খয়রাত উভয়টাই এর অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু লোক যাকাত দেওয়ার সময় নিম্নমানের মাল থেকে তা আদায় করত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাযিল হয়। কাজেই সরাসরি এর সম্পর্ক যাকাতের সঙ্গেই হয়। স্বর্ণ-রৌপ্য ছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণ গবাদি পশুর উপরও যাকাত ফরয হয়ে থাকে। এমনিভাবে ফসলের উপর উশর ফরয হয়। উশর ও একরকম যাকাতই বটে। এসকল সম্পদ সবই সমমানের হয় না। ভালো, মন্দ, মাঝারি বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। অনেকে এসব মাল থেকে যাকাত আদায়কালে খুঁজে খুঁজে মন্দটা দেয়। নফল দান-খয়রাতে তো এটা ব্যাপকভাবেই করা হয়ে থাকে।
আল্লাহর পথে খরচ করা মূলত আল্লাহপ্রেমেরই নিদর্শন। নিকৃষ্ট মাল থেকে তাঁর পথে ব্যয় করাটা সে নিদর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই হুকুম দেওয়া হয়েছে, বেছে বেছে মন্দটা নয়; বরং ভালোটা দিতে চেষ্টা কর। তবেই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ পুরস্কার লাভ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, একদিকে দাতাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে উৎকৃষ্ট মাল থেকে দিতে, অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে যারা যাকাত উসূল করে তাদের হুকুম দেওয়া হয়েছে যেন বেছে বেছে উৎকৃষ্টটা গ্রহণ না করে; বরং মাঝারি মানেরটা গ্রহণ করে। এর দ্বারা একদিকে যাকাত ব্যয়ের খাত তথা গরীবদেরও স্বার্থ রক্ষা হয় এবং অন্যদিকে যাকাতদাতার উপরও জুলুম হয় না। এটা ইসলামী বিধানাবলীর ভারসাম্য।
তারপর মন্দ জিনিস থেকে দান করতে নিষেধ করা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوا فِيهِ
‘আর এরূপ মন্দ জিনিস (আল্লাহর নামে) দেওয়ার নিয়ত করো না, যা (অন্য কেউ তোমাদেরকে দিলে ঘৃণার কারণে) তোমরা চক্ষু বন্ধ না করে তা গ্রহণ করবে 'না'।
অর্থাৎ তোমাদেরকে যদি কেউ তোমাদের প্রাপ্য সম্পদ মন্দ বস্তু থেকে দেয় কিংবা কোনও নিম্নমানের বস্তু তোমাদেরকে উপহার দেয়, তবে প্রথমত তোমরা তা গ্রহণই কর না। আর লজ্জাবশত গ্রহণ করলেও এমন অবজ্ঞার সঙ্গে গ্রহণ কর যে, সে বস্তুর দিকে তাকাওই না, চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখ। তুমি আমার এক সাধারণ সৃষ্টি। তুমি নিজের বেলায় যখন এ নীতি অবলম্বন করছ, তখন মহান আল্লাহর সঙ্গে কেন এর বিপরীত আচরণ কর? তাঁকে দেবার বেলায় কেন নিম্নমানের বস্তু খোঁজ? এটা কিছুতেই সমীচীন নয়।
আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
(মনে রেখ, আল্লাহ বেনিয়ায, সর্বপ্রকার প্রশংসা তাঁরই দিকে ফেরে)। অর্থাৎ আল্লাহর পথে দান- খয়রাত করার সময় তোমাদের যেন এ কথা স্মরণ থাকে যে, আল্লাহ গনী ও বেনিয়ায। কারও কাছে তাঁর কোনও ঠ্যাকা নেই, তাঁর কোনও অভাব নেই। তিনি তোমাদেরকে দান করতে হুকুম দিয়েছেন তোমাদেরই স্বার্থে। কাজেই তোমরা যদি তাঁর মর্জি মোতাবেক দান না কর, তবে তিনি তা কবুল করবেন না। তোমরা তাঁর কাছে কোনও প্রতিদানও পাবে না। আবার তিনি হামীদ ও গুণগ্রাহীও বটে। তাঁর পথে উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ করলে তিনি তা প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি তার উত্তম বদলা দেন। সুতরাং তাঁর সন্তুষ্টি ও উত্তম প্রতিদান পাওয়ার আশায় তাঁর পথে তোমরা উৎকৃষ্ট বস্তুই দান করতে সচেষ্ট থেক।
৪০৫. সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৯২
৪০৬. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৬৭
প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে দান করা
আল্লাহর পথে যা খরচ করা হয়, প্রকৃতপক্ষে তাই মানুষের আসল সম্পদ; বরং সেটাই তার সম্পদ। দুনিয়ায় যা রেখে যাওয়া হয় তা পরের সম্পদ। মৃত্যুর পর তাতে কারও কোনও ক্ষমতা থাকে না। আল্লাহর পথে যা খরচ করা হয় তা আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে। মৃত্যুর পর তা পাওয়া যাবে। সেই সম্পদই যখন আসল সম্পদ, তখন তার প্রতিই বিশেষভাবে মনোযোগী থাকা যুক্তিসঙ্গত ও বুদ্ধিমত্তার কাজ। সে বুদ্ধিমত্তার দাবি হচ্ছে আল্লাহর পথে নিজ প্রিয়বস্তু দান করা ও উৎকৃষ্ট বস্তু দান করা।
প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু দান করা এ কারণেও প্রয়োজন যে, তা দেওয়া হচ্ছে আল্লাহকে। যে-কোনও বস্তু দান করলে তার প্রথম গ্রহীতা আল্লাহ। কোনও বান্দার হাতে যাওয়ার আগে প্রথমে তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে। আল্লাহর পথে দান করা হয় আল্লাহর ভালোবাসায়। এটা এক সাধারণ নিয়ম, ভালোবাসার জনকে কিছু দেওয়া হলে উৎকৃষ্ট ও প্রিয় বস্তুই দেওয়া হয়ে থাকে। এক আল্লাহপ্রেমিকের কাছে আল্লাহর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কিছুই হতে পারে না। অতএব আল্লাহর উদ্দেশ্যে যা দান করা হবে, আল্লাহপ্রেমের দাবিতেই তা সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তুই হওয়ার কথা। অনেকে দানের এ মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে না। ফলে দায়সারাভাবে কোনও একটা কিছু দিয়ে দেয়। বরং অনেক সময় সবচে' অপসন্দের ও সবচে' কম দামীটাই দেওয়া হয়ে থাকে। বলা যায় এটাই ব্যাপক। বলাবাহুল্য এটা আল্লাহর পক্ষে দানের মহিমা নষ্ট করে।
আবার আল্লাহর পথে যা-কিছু দান করা হয় তা তো আল্লাহ আল্লাহ তাআলারই দেওয়া। তাঁর দেওয়া বস্তু তাঁর পথে ব্যয় করার সময় খুঁজে খুঁজে মন্দটা দেওয়া বা অপ্রিয়টা দেওয়া একরকম নাশুকরীও বটে। এ নাশুকরী থেকে বাঁচার লক্ষ্যেও প্রত্যেক দাতার কর্তব্য আল্লাহর পথে প্রিয়বস্তু দান করা ও ভালোটা দেওয়া।
মানুষ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার প্রতি বেশি আকৃষ্ট থাকার কারণে দান খয়রাতের ক্ষেত্রে এসকল দিক চিন্তা করে না। ফলে আখেরাতের বিচারে সে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়। সে ক্ষতি থেকে মানুষকে বাঁচানোর লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীছে তাকে উৎকৃষ্ট ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে প্রচুর আয়াত আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছও আছে অনেক। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম দু'টি আয়াত ও একটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।
‘প্রিয় ও উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে দান করা’ সম্পর্কিত দুটি আয়াত
এক নং আয়াত
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ
অর্থ : ‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে।৪০৫
ব্যাখ্যা
الْبِرّ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন সদ্ব্যবহার, অনুগ্রহ, সৎকর্ম ইত্যাদি। সাধারণত এর দ্বারা পরিপূর্ণরূপে অন্যের হক আদায় করা বোঝানো হয়, যা দ্বারা নিজ দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে সম্পন্ন হয়ে যায়। এভাবে দায়িত্ব পালনকারীকে بر এবং বহুবচনে ابرار বলা হয়। কুরআন মাজীদে এ শব্দের বহুল ব্যবহার আছে।
এস্থলে الْبِرّ দ্বারা কী বোঝানো উদ্দেশ্য, সে সম্পর্কে মুফাস্সিরগণ বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কারও মতে এর দ্বারা পূর্ণাঙ্গ ছাওয়াব ও প্রতিদান বোঝানো হয়েছে। কেউ বলেন, রহমত। কেউ বলেন, জান্নাত। এছাড়া যে-কোনও কল্যাণ, আনুগত্য, তাকওয়া, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি, সত্য ও সততা ইত্যাদি ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। এর সবগুলোই সৎকর্ম বা সৎকর্মের প্রতিদান। মূলত বোঝানো উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের দ্বারা দান-সদাকার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সৎকর্ম সংঘটিত হবে না, ফলে তার পরিপূর্ণ প্রতিদানও আল্লাহ তাআলার কাছে লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয়বস্তু থেকে দান কর।
‘দান' কথাটি ব্যাপক। এর দ্বারা অর্থ দান করা, শক্তি ব্যয় করা, বিদ্যা-বুদ্ধি খরচ করা, মাখলুকের সেবায় নিজ প্রভাব ও ক্ষমতার বৈধ ব্যবহার করা ইত্যাদি সবই বোঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং সর্বপ্রকার ব্যয়ই এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তাআলার পথে যার যা ব্যয় করার সামর্থ্য আছে, তা পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিদান পাওয়া যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ আয়াতে পরিপূর্ণ প্রতিদানের জন্য প্রিয়বস্তু ব্যয়ের শর্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যদি প্রিয়বস্তু খরচ করা না হয়, তবুও একরকম প্রতিদান অবশ্যই পাওয়া যাবে। আল্লাহর পথে কোনও খরচই বৃথা যায় না, যদি তা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। সুতরাং যার দানের মান ও পরিমাণ যেমন হবে, সে সেই অনুপাতেই প্রতিদান লাভ করবে। তাই তো আয়াতের শেষে আছে—
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (92)
(তোমরা যা-কিছুই ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত)। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর পথে যা ব্যয় কর, তার মান ও পরিমাণ তিনি জানেন এবং সে দানের ক্ষেত্রে তোমাদের আন্তরিকতা কতটুকু, সে সম্পর্কেও তিনি অবগত। তিনি সে অনুসারেই তোমাদেরকে প্রতিদান দেবেন।
অবশ্য আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট পুরস্কার লাভ করুক। সেজন্যই এ আয়াতে প্রিয়বস্তু দান করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এ আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কেরাম কী তৎপরতার সঙ্গে এর উপর আমল করেছিলেন, তার একটা দৃষ্টান্ত এ অধ্যায়ে উদ্ধৃত হাদীছ দ্বারা জানা যায়।
দুই নং আয়াত
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ
অর্থ : 'হে মুমিনগণ! তোমরা যা-কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা-কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। আর এরূপ মন্দ জিনিস (আল্লাহর নামে) দেওয়ার নিয়ত করো না।৪০৬
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে প্রথমত বান্দার উপার্জিত এবং ভূমি হতে আল্লাহর উৎপাদিত বস্তু থেকে যা হালাল ও উৎকৃষ্ট, আল্লাহর পথে তা ব্যয় করতে আদেশ করা হয়েছে। তারপর নিকৃষ্ট বস্ত্র দান করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং তার মন্দত্ব পরিষ্কার করার জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ কাউকে মন্দ বস্তু দেওয়া হলে তার অবস্থা কেমন হয় তা উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে যে, তোমাদের উপার্জিত ও ভূমি থেকে উৎপন্ন বস্তুসামগ্রী হতে যা উৎকৃষ্ট তার একটা অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় কর। যাকাত ও নফল দান-খয়রাত উভয়টাই এর অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু লোক যাকাত দেওয়ার সময় নিম্নমানের মাল থেকে তা আদায় করত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাযিল হয়। কাজেই সরাসরি এর সম্পর্ক যাকাতের সঙ্গেই হয়। স্বর্ণ-রৌপ্য ছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণ গবাদি পশুর উপরও যাকাত ফরয হয়ে থাকে। এমনিভাবে ফসলের উপর উশর ফরয হয়। উশর ও একরকম যাকাতই বটে। এসকল সম্পদ সবই সমমানের হয় না। ভালো, মন্দ, মাঝারি বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। অনেকে এসব মাল থেকে যাকাত আদায়কালে খুঁজে খুঁজে মন্দটা দেয়। নফল দান-খয়রাতে তো এটা ব্যাপকভাবেই করা হয়ে থাকে।
আল্লাহর পথে খরচ করা মূলত আল্লাহপ্রেমেরই নিদর্শন। নিকৃষ্ট মাল থেকে তাঁর পথে ব্যয় করাটা সে নিদর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই হুকুম দেওয়া হয়েছে, বেছে বেছে মন্দটা নয়; বরং ভালোটা দিতে চেষ্টা কর। তবেই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ পুরস্কার লাভ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, একদিকে দাতাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে উৎকৃষ্ট মাল থেকে দিতে, অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে যারা যাকাত উসূল করে তাদের হুকুম দেওয়া হয়েছে যেন বেছে বেছে উৎকৃষ্টটা গ্রহণ না করে; বরং মাঝারি মানেরটা গ্রহণ করে। এর দ্বারা একদিকে যাকাত ব্যয়ের খাত তথা গরীবদেরও স্বার্থ রক্ষা হয় এবং অন্যদিকে যাকাতদাতার উপরও জুলুম হয় না। এটা ইসলামী বিধানাবলীর ভারসাম্য।
তারপর মন্দ জিনিস থেকে দান করতে নিষেধ করা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوا فِيهِ
‘আর এরূপ মন্দ জিনিস (আল্লাহর নামে) দেওয়ার নিয়ত করো না, যা (অন্য কেউ তোমাদেরকে দিলে ঘৃণার কারণে) তোমরা চক্ষু বন্ধ না করে তা গ্রহণ করবে 'না'।
অর্থাৎ তোমাদেরকে যদি কেউ তোমাদের প্রাপ্য সম্পদ মন্দ বস্তু থেকে দেয় কিংবা কোনও নিম্নমানের বস্তু তোমাদেরকে উপহার দেয়, তবে প্রথমত তোমরা তা গ্রহণই কর না। আর লজ্জাবশত গ্রহণ করলেও এমন অবজ্ঞার সঙ্গে গ্রহণ কর যে, সে বস্তুর দিকে তাকাওই না, চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখ। তুমি আমার এক সাধারণ সৃষ্টি। তুমি নিজের বেলায় যখন এ নীতি অবলম্বন করছ, তখন মহান আল্লাহর সঙ্গে কেন এর বিপরীত আচরণ কর? তাঁকে দেবার বেলায় কেন নিম্নমানের বস্তু খোঁজ? এটা কিছুতেই সমীচীন নয়।
আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
(মনে রেখ, আল্লাহ বেনিয়ায, সর্বপ্রকার প্রশংসা তাঁরই দিকে ফেরে)। অর্থাৎ আল্লাহর পথে দান- খয়রাত করার সময় তোমাদের যেন এ কথা স্মরণ থাকে যে, আল্লাহ গনী ও বেনিয়ায। কারও কাছে তাঁর কোনও ঠ্যাকা নেই, তাঁর কোনও অভাব নেই। তিনি তোমাদেরকে দান করতে হুকুম দিয়েছেন তোমাদেরই স্বার্থে। কাজেই তোমরা যদি তাঁর মর্জি মোতাবেক দান না কর, তবে তিনি তা কবুল করবেন না। তোমরা তাঁর কাছে কোনও প্রতিদানও পাবে না। আবার তিনি হামীদ ও গুণগ্রাহীও বটে। তাঁর পথে উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ করলে তিনি তা প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি তার উত্তম বদলা দেন। সুতরাং তাঁর সন্তুষ্টি ও উত্তম প্রতিদান পাওয়ার আশায় তাঁর পথে তোমরা উৎকৃষ্ট বস্তুই দান করতে সচেষ্ট থেক।
৪০৫. সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৯২
৪০৬. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৬৭
আল্লাহর পথে হযরত আবূ তালহা রাযি.-এর সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ দান করে দেওয়ার ঘটনা
হাদীছ নং : ২৯৭
হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবূ তালহা রাযি. মদীনায় সর্বাপেক্ষা বেশি সম্পদশালী ছিলেন একটি খেজুর বাগানের কারণে। তার কাছে তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ ছিল বাইরাহা নামক বাগানটি। বাগানটি ছিল মসজিদের সামনেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বাগানে প্রবেশ করতেন এবং তার (অর্থাৎ বাগানের মধ্যকার একটি কুয়ার) মিষ্টি পানি পান করতেন।
হযরত আনাস রাযি.বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হল لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে, তখন আবূ তালহা রাযি. উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি আয়াত নাযিল করেছেন- لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ, আর আমার কাছে আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ হল বাইরাহা বাগানটি। আমি এটা আল্লাহ তাআলার জন্য সদাকা করে দিলাম। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে এর পুণ্য ও প্রতিদান আশা করি। সুতরাং ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা অনুযায়ী আপনি এটা যেখানে চান খরচ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বাহ! এটা তো লাভজনক সম্পদ। এটা তো লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বললে আমি তা শুনলাম। আমার মত হচ্ছে, তুমি এটা তোমার নিকটাত্মীয়দের দিয়ে দাও। আবূ তালহা রাযি. বলেন, আমি তাই করব ইয়া রাসূলাল্লাহ। সুতরাং আবূ তালহা রাযি. বাগানটি তার নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন -বুখারী ও মুসলিম।৪০৭
ইমাম নববী রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বলেছেন مال رابح, বুখারী ও মুসলিম শরীফে এর رابح শব্দটি যেমন ب হরফের সঙ্গে আছে, তেমনি ي দ্বারা رايح-ও বর্ণিত আছে। সে হিসেবে অর্থ হবে, এটা এমন সম্পদ যার উপকার তোমার কাছেই ফিরে আসবে। বাইরাহা হচ্ছে একটি খেজুর বাগানের নাম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৬১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৪৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩৪০ নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১০০০; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৯২০; শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৭৬; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ১৬৯৫)
হাদীছ নং : ২৯৭
হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবূ তালহা রাযি. মদীনায় সর্বাপেক্ষা বেশি সম্পদশালী ছিলেন একটি খেজুর বাগানের কারণে। তার কাছে তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ ছিল বাইরাহা নামক বাগানটি। বাগানটি ছিল মসজিদের সামনেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বাগানে প্রবেশ করতেন এবং তার (অর্থাৎ বাগানের মধ্যকার একটি কুয়ার) মিষ্টি পানি পান করতেন।
হযরত আনাস রাযি.বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হল لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে, তখন আবূ তালহা রাযি. উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি আয়াত নাযিল করেছেন- لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ, আর আমার কাছে আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ হল বাইরাহা বাগানটি। আমি এটা আল্লাহ তাআলার জন্য সদাকা করে দিলাম। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে এর পুণ্য ও প্রতিদান আশা করি। সুতরাং ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা অনুযায়ী আপনি এটা যেখানে চান খরচ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বাহ! এটা তো লাভজনক সম্পদ। এটা তো লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বললে আমি তা শুনলাম। আমার মত হচ্ছে, তুমি এটা তোমার নিকটাত্মীয়দের দিয়ে দাও। আবূ তালহা রাযি. বলেন, আমি তাই করব ইয়া রাসূলাল্লাহ। সুতরাং আবূ তালহা রাযি. বাগানটি তার নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন -বুখারী ও মুসলিম।৪০৭
ইমাম নববী রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বলেছেন مال رابح, বুখারী ও মুসলিম শরীফে এর رابح শব্দটি যেমন ب হরফের সঙ্গে আছে, তেমনি ي দ্বারা رايح-ও বর্ণিত আছে। সে হিসেবে অর্থ হবে, এটা এমন সম্পদ যার উপকার তোমার কাছেই ফিরে আসবে। বাইরাহা হচ্ছে একটি খেজুর বাগানের নাম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৬১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৪৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩৪০ নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১০০০; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৯২০; শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৭৬; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ১৬৯৫)
مقدمة الامام النووي
37 - باب الإنفاق مِمَّا يحبُّ ومن الجيِّد
قَالَ الله تَعَالَى: {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} [آل عمران: 92] وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الأَرْضِ وَلا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ} [البقرة: 267].
قَالَ الله تَعَالَى: {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} [آل عمران: 92] وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الأَرْضِ وَلا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ} [البقرة: 267].
297 - عن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ أَبُو طَلْحَةَ - رضي الله عنه - أكْثَرَ الأنْصَار بالمَدِينَةِ مَالًا مِنْ نَخْل، وَكَانَ أَحَبُّ أمْوالِهِ إِلَيْه بَيْرَحَاء، وَكَانتْ مُسْتَقْبلَةَ المَسْجِدِ وَكَانَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم [ص:115] يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّب. قَالَ أنَسٌ: فَلَمَّا نَزَلَتْ هذِهِ الآيةُ: {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} قام أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رَسُول الله، إنَّ الله تَعَالَى أنْزَلَ عَلَيْكَ: {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} وَإنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرَحَاءُ، وَإنَّهَا صَدَقَةٌ للهِ تَعَالَى، أرْجُو بِرَّهَا، وَذُخْرَهَا عِنْدَ الله تَعَالَى، فَضَعْهَا يَا رَسُول الله حَيْثُ أرَاكَ الله، فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «بَخ (1)! ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، وقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ، وَإنِّي أرَى أَنْ تَجْعَلَهَا في الأقْرَبينَ»، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ: أفْعَلُ يَا رَسُول الله، فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَةَ في أقَارِبِهِ، وبَنِي عَمِّهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
قوله - صلى الله عليه وسلم: «مالٌ رابحٌ»، رُوِيَ في الصحيحين «رابحٌ» و «رايحٌ» بالباء الموحدة وبالياءِ المثناةِ، أي: رايح عَلَيْكَ نفعه، وَ «بَيرَحَاءُ»: حديقة نخلٍ، وروي بكسرِ الباءِ وَفتحِها.
قوله - صلى الله عليه وسلم: «مالٌ رابحٌ»، رُوِيَ في الصحيحين «رابحٌ» و «رايحٌ» بالباء الموحدة وبالياءِ المثناةِ، أي: رايح عَلَيْكَ نفعه، وَ «بَيرَحَاءُ»: حديقة نخلٍ، وروي بكسرِ الباءِ وَفتحِها.
হাদীস নং: ২৯৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়ঃ৩৮
পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যিকতা
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ যারাই কারও তত্ত্বাবধানে থাকে, তাদের দীনী তরবিয়াত করার অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতন করা।অধিকাংশ অভিভাবক ও গৃহকর্তা তাদের দুনিয়াবী প্রয়োজন সমাধা করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। তাদের থাকা-খাওয়া, পোশাক-আশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাকেই তারা একমাত্র দায়িত্ব মনে করে। এরই জন্য তাদের যত চেষ্টা।এ চেষ্টাও জরুরি বটে এবং এ ক্ষেত্রে অবহেলা করার কোনও অবকাশ নেই এ কথাও সত্য, কিন্তু নিজ দায়িত্বকে কেবল এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা ভুল। কেননা সকল অভিভাবক ও তাদের পোষ্যবর্গের যিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীনী তরবিয়াত করারও হুকুম দিয়েছেন।
নিজ অধীনস্থদের দীনী তরবিয়াত করার অর্থ তাদেরকে মুত্তাকী ও পরহেযগাররূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা তথা আল্লাহ তাআলার দীন ও শরীআত মোতাবেক পরিচালনা করা। এর জন্য প্রথমে দরকার তাদেরকে দীন ও শরীআতের জরুরি ইলম শেখানো, তারপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা যাতে তারা সে শিক্ষা অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকে। অর্থাৎ তারা যেন আল্লাহ তাআলা যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তা পালন করে এবং যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকে। তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা আর তা না মানাই হল তাঁর নাফরমানি করা। সুতরাং লক্ষ রাখতে হবে তারা যেন নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী যথাযথভাবে পালন করে। তারা যেন সত্য কথা বলে, বড়কে সম্মান করে, ছোটকে স্নেহ করে, ওয়াদা রক্ষা করে। মিথ্যা বলা, অন্যকে কষ্ট দেওয়া, চুরি করা, ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি থেকে যেন বিরত থাকে।
এ ব্যাপারে কেউ কোনও গাফলাতি করলে তাকে সতর্ক করবে, প্রয়োজনে পরিমিত শাস্তিদানও করবে। একে তা'দীব বলে। দীনী তরবিয়াতের ক্ষেত্রে তা'দীবেরও প্রয়োজন আছে। শরীআতের অনুসরণে স্ত্রী বা ছেলেমেয়ে গাফলাতি করলে মায়া-মমতার বশে তা উপেক্ষা করা কিছুতেই সমীচীন নয়। এ জাতীয় মায়া কল্যাণকামিতার পরিপন্থী। কেননা এ জাতীয় মায়ার পরিণামে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনে।
প্রত্যেক অভিভাবক ও গৃহকর্তা যাতে এ দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে, সেজন্য কুরআন ও হাদীছে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।
পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশদান সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
এক নং আয়াত
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
অর্থ : ‘এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচলিত থাক।৪০৯
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ নিজ পরিবারভুক্ত সকলকে নিয়মিত নামায আদায়ে যত্নবান থাকার হুকুম দাও। সেইসঙ্গে নিজেও নিয়মিত নামায পড়। সরাসরি যদিও এ আদেশ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, তবে এ হুকুমের ব্যাপকতায় তাঁর উম্মতও অন্তর্ভুক্ত। বরং বলা যায় তাঁকে আদেশদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে উম্মতকেই আদেশ করা হয়েছে। কেননা তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গ তো এ আদেশ নিয়মিত পালন করতেনই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনও অবহেলা থাকার প্রশ্নই আসে না। তা সত্ত্বেও যখন তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, এর দ্বারা বোঝা যায় উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মত। আর তাদেরকে লক্ষ্য করে আদেশ করার দ্বারা উম্মতের মনে বিষয়টির গুরুত্ব সঞ্চার করা হয়েছে, যাতে উম্মত বোঝে যে, এ ক্ষেত্রে যাদের বিন্দুমাত্র অবহেলা ছিল না সেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গকেই যখন এ আদেশ করা হয়েছে, তখন আমাদের তো এ আদেশ পালনের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। অর্থাৎ প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য তার সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়মিত নামায আদায় করতে বলা আর তাদেরও উচিত অভিভাবকের সে হুকুম মেনে চলা। হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন রাতে নামাযের জন্য উঠতেন, তখন পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন এবং তখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন।
আয়াতটিতে এর পরে আছে-
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
(আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না। রিযিক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তো তাকওয়ারই)। অর্থাৎ বান্দার নামাযে আল্লাহর কোনও ফায়দা নেই। ফায়দা বান্দার নিজেরই। কেননা নামাযের বরকতে আল্লাহ তাআলা রিযিকেরও ফয়সালা করেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।৪১০
এর দ্বারা রিযিকের দুনিয়াবী চেষ্টা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং সে চেষ্টা যাতে নামাযের জন্য বাধা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য এ কথা বোঝানো যে, তোমাদের চেষ্টাতেই সব হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে রিযিক আমিই দিয়ে থাকি। তোমাদের চেষ্টার ফল আমার ইচ্ছাতেই ঘটে। তোমরা যে চেষ্টা কর তাও আমার ইচ্ছারই প্রকাশ। কাজেই সবকিছুর মূলে যখন আমার ইচ্ছা, তখন আমার হুকুম পালনে গাফলাতি করবে কেন? তোমরা আমার হুকুম যথাযথভাবে পালন কর, ঠিকভাবে নামায পড় এবং তাকওয়া-পরহেযগারীর সঙ্গে চল, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাত সব জায়গায় তোমাদের চেষ্টা সুফল বয়ে আনবে। এমনও হতে পারে যে, তোমরা চেষ্টা করছ এক জায়গায়, কিন্তু আমি অন্য জায়গা থেকে অকল্পনীয়ভাবে তোমাদের রিযিক দিয়ে দেব। সেইসঙ্গে রিযিকের বরকত ও জীবনের শান্তি ও স্বস্তির ব্যাপার তো আলাদা আছেই। এক হাদীছে আছে-
(كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَزَلَ بِأَهْلِهِ شِدَّةٌ أَوْ قَالَ: ضِيْقٌ أَمَرَهُمْ بِالصَّلَاةِ وَتَلَا (وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারে যখন কোনও কষ্ট বা সংকট দেখা দিত, তখন তাদেরকে নামাযের হুকুম দিতেন এবং তিলাওয়াত করতেন-...... وَأْمُرْ أَهْلَكَ।
একদিন উমাইয়া বংশীয় খলিফা হিশাম ইবন আব্দুল মালিক (শাসনকাল ১০৫হি.-১২৫হি.) জুমুআর দিন মসজিদে তার এক পুত্রকে দেখতে পেলেন না। পরে তিনি তাকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে গেলে না কেন? বলল, আমার খচ্চরটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই যেতে পারিনি। তিনি তিরস্কার করে বললেন, হেঁটে যেতে পারলে না? তারপর তিনি তাকে হুকুম দিলেন, এক বছর কোনও বাহনে চড়তে পারবে না এবং এ এক বছর তুমি হেঁটে হেঁটে জুমুআয় যাবে।
দুই নং আয়াত
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
অর্থ : 'হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
ব্যাখ্যা
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা ও তাঁর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা। এককথায় শরীআতের অনুসরণ করা। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এ পন্থায় নিজেকেও জাহান্নাম থেকে বাঁচানো এবং পরিবারবর্গকেও বাঁচানো। কাজেই পরিবারের প্রত্যেকে যাতে শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা পরিবারের কর্তার জন্য ফরয। তাদেরকে এ সম্পর্কে আন্তরিকতার সঙ্গে বোঝাতে হবে এবং জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। তারা অবহেলা করলে শাসন করাও কর্তব্য। সেজন্য মারার প্রয়োজন হলে মারাটাও তাদের প্রতি কল্যাণকামিতারই পরিচায়ক হবে। বিষয়টা আমরা যত ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করব, ততই আমাদের কল্যাণ। অন্যথায় শরীআত অমান্য করার কারণে পরিবারের কেউ যদি জাহান্নামে যায়, তবে তাদের প্রতি দীনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে নিজেরও জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা আছে।
এ আয়াত নাযিল হলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজেকে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচাব তা তো বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু পরিবারবর্গকে কিভাবে বাঁচাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তোমরা তাদেরকেও তা থেকে বিরত রাখবে। আর তোমাদেরকে যে কাজ করতে হুকুম দিয়েছেন, তোমরা তাদেরকেও তা করার হুকুম দেবে।
এভাবে নিজেকে ও পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো গেলে জান্নাতেও সবাই একসঙ্গে থাকার সুযোগ হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
'যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।৪১৩
জাহান্নামের শাস্তি হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এ আয়াত বলছে-
وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
(যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর)।
অর্থাৎ পাথর ও জাহান্নামীদেরকে দিয়ে জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত করা হবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা কেবল জাহান্নামের আগুনে পুড়ে শাস্তি পাবে তাই নয়; শাস্তি পাবে জ্বালানী হয়েও। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আয়াতে এর পরে আছে-
عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
(তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন-হৃদয় ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহর কোনও হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়)।
অর্থাৎ সে ফিরিশতাগণ এমন যে, একে তো কোনও অবস্থায়ই আল্লাহর অবাধ্যতা করে না, তদুপরি তারা অত্যন্ত কঠোর স্বভাব ও কঠিন-হৃদয়ের। তাদের তোষামোদ করে বা তাদের উপর জোর খাটিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। বাঁচা যাবে না তাদেরকে উৎকোচ দিয়েও। জাহান্নামে নিযুক্ত ফিরিশতাদের 'যাবানিয়া' বলা হয়। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান দায়িত্বশীল তার নাম মালিক।
৪০৯. সূরা তোয়াহা (২০), আয়াত ১৩২
৪১০. সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ২-৩
৪১১. মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৪৭৪৪; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৮৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৯১১
৪১২. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৬
৪১৩. সূরা তূর (৫২), আয়াত ২১
পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যিকতা
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ যারাই কারও তত্ত্বাবধানে থাকে, তাদের দীনী তরবিয়াত করার অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতন করা।অধিকাংশ অভিভাবক ও গৃহকর্তা তাদের দুনিয়াবী প্রয়োজন সমাধা করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। তাদের থাকা-খাওয়া, পোশাক-আশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাকেই তারা একমাত্র দায়িত্ব মনে করে। এরই জন্য তাদের যত চেষ্টা।এ চেষ্টাও জরুরি বটে এবং এ ক্ষেত্রে অবহেলা করার কোনও অবকাশ নেই এ কথাও সত্য, কিন্তু নিজ দায়িত্বকে কেবল এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা ভুল। কেননা সকল অভিভাবক ও তাদের পোষ্যবর্গের যিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীনী তরবিয়াত করারও হুকুম দিয়েছেন।
নিজ অধীনস্থদের দীনী তরবিয়াত করার অর্থ তাদেরকে মুত্তাকী ও পরহেযগাররূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা তথা আল্লাহ তাআলার দীন ও শরীআত মোতাবেক পরিচালনা করা। এর জন্য প্রথমে দরকার তাদেরকে দীন ও শরীআতের জরুরি ইলম শেখানো, তারপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা যাতে তারা সে শিক্ষা অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকে। অর্থাৎ তারা যেন আল্লাহ তাআলা যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তা পালন করে এবং যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকে। তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা আর তা না মানাই হল তাঁর নাফরমানি করা। সুতরাং লক্ষ রাখতে হবে তারা যেন নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী যথাযথভাবে পালন করে। তারা যেন সত্য কথা বলে, বড়কে সম্মান করে, ছোটকে স্নেহ করে, ওয়াদা রক্ষা করে। মিথ্যা বলা, অন্যকে কষ্ট দেওয়া, চুরি করা, ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি থেকে যেন বিরত থাকে।
এ ব্যাপারে কেউ কোনও গাফলাতি করলে তাকে সতর্ক করবে, প্রয়োজনে পরিমিত শাস্তিদানও করবে। একে তা'দীব বলে। দীনী তরবিয়াতের ক্ষেত্রে তা'দীবেরও প্রয়োজন আছে। শরীআতের অনুসরণে স্ত্রী বা ছেলেমেয়ে গাফলাতি করলে মায়া-মমতার বশে তা উপেক্ষা করা কিছুতেই সমীচীন নয়। এ জাতীয় মায়া কল্যাণকামিতার পরিপন্থী। কেননা এ জাতীয় মায়ার পরিণামে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনে।
প্রত্যেক অভিভাবক ও গৃহকর্তা যাতে এ দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে, সেজন্য কুরআন ও হাদীছে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।
পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশদান সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
এক নং আয়াত
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
অর্থ : ‘এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচলিত থাক।৪০৯
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ নিজ পরিবারভুক্ত সকলকে নিয়মিত নামায আদায়ে যত্নবান থাকার হুকুম দাও। সেইসঙ্গে নিজেও নিয়মিত নামায পড়। সরাসরি যদিও এ আদেশ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, তবে এ হুকুমের ব্যাপকতায় তাঁর উম্মতও অন্তর্ভুক্ত। বরং বলা যায় তাঁকে আদেশদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে উম্মতকেই আদেশ করা হয়েছে। কেননা তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গ তো এ আদেশ নিয়মিত পালন করতেনই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনও অবহেলা থাকার প্রশ্নই আসে না। তা সত্ত্বেও যখন তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, এর দ্বারা বোঝা যায় উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মত। আর তাদেরকে লক্ষ্য করে আদেশ করার দ্বারা উম্মতের মনে বিষয়টির গুরুত্ব সঞ্চার করা হয়েছে, যাতে উম্মত বোঝে যে, এ ক্ষেত্রে যাদের বিন্দুমাত্র অবহেলা ছিল না সেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গকেই যখন এ আদেশ করা হয়েছে, তখন আমাদের তো এ আদেশ পালনের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। অর্থাৎ প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য তার সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়মিত নামায আদায় করতে বলা আর তাদেরও উচিত অভিভাবকের সে হুকুম মেনে চলা। হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন রাতে নামাযের জন্য উঠতেন, তখন পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন এবং তখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন।
আয়াতটিতে এর পরে আছে-
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
(আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না। রিযিক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তো তাকওয়ারই)। অর্থাৎ বান্দার নামাযে আল্লাহর কোনও ফায়দা নেই। ফায়দা বান্দার নিজেরই। কেননা নামাযের বরকতে আল্লাহ তাআলা রিযিকেরও ফয়সালা করেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।৪১০
এর দ্বারা রিযিকের দুনিয়াবী চেষ্টা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং সে চেষ্টা যাতে নামাযের জন্য বাধা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য এ কথা বোঝানো যে, তোমাদের চেষ্টাতেই সব হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে রিযিক আমিই দিয়ে থাকি। তোমাদের চেষ্টার ফল আমার ইচ্ছাতেই ঘটে। তোমরা যে চেষ্টা কর তাও আমার ইচ্ছারই প্রকাশ। কাজেই সবকিছুর মূলে যখন আমার ইচ্ছা, তখন আমার হুকুম পালনে গাফলাতি করবে কেন? তোমরা আমার হুকুম যথাযথভাবে পালন কর, ঠিকভাবে নামায পড় এবং তাকওয়া-পরহেযগারীর সঙ্গে চল, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাত সব জায়গায় তোমাদের চেষ্টা সুফল বয়ে আনবে। এমনও হতে পারে যে, তোমরা চেষ্টা করছ এক জায়গায়, কিন্তু আমি অন্য জায়গা থেকে অকল্পনীয়ভাবে তোমাদের রিযিক দিয়ে দেব। সেইসঙ্গে রিযিকের বরকত ও জীবনের শান্তি ও স্বস্তির ব্যাপার তো আলাদা আছেই। এক হাদীছে আছে-
(كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَزَلَ بِأَهْلِهِ شِدَّةٌ أَوْ قَالَ: ضِيْقٌ أَمَرَهُمْ بِالصَّلَاةِ وَتَلَا (وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারে যখন কোনও কষ্ট বা সংকট দেখা দিত, তখন তাদেরকে নামাযের হুকুম দিতেন এবং তিলাওয়াত করতেন-...... وَأْمُرْ أَهْلَكَ।
একদিন উমাইয়া বংশীয় খলিফা হিশাম ইবন আব্দুল মালিক (শাসনকাল ১০৫হি.-১২৫হি.) জুমুআর দিন মসজিদে তার এক পুত্রকে দেখতে পেলেন না। পরে তিনি তাকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে গেলে না কেন? বলল, আমার খচ্চরটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই যেতে পারিনি। তিনি তিরস্কার করে বললেন, হেঁটে যেতে পারলে না? তারপর তিনি তাকে হুকুম দিলেন, এক বছর কোনও বাহনে চড়তে পারবে না এবং এ এক বছর তুমি হেঁটে হেঁটে জুমুআয় যাবে।
দুই নং আয়াত
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
অর্থ : 'হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
ব্যাখ্যা
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা ও তাঁর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা। এককথায় শরীআতের অনুসরণ করা। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এ পন্থায় নিজেকেও জাহান্নাম থেকে বাঁচানো এবং পরিবারবর্গকেও বাঁচানো। কাজেই পরিবারের প্রত্যেকে যাতে শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা পরিবারের কর্তার জন্য ফরয। তাদেরকে এ সম্পর্কে আন্তরিকতার সঙ্গে বোঝাতে হবে এবং জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। তারা অবহেলা করলে শাসন করাও কর্তব্য। সেজন্য মারার প্রয়োজন হলে মারাটাও তাদের প্রতি কল্যাণকামিতারই পরিচায়ক হবে। বিষয়টা আমরা যত ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করব, ততই আমাদের কল্যাণ। অন্যথায় শরীআত অমান্য করার কারণে পরিবারের কেউ যদি জাহান্নামে যায়, তবে তাদের প্রতি দীনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে নিজেরও জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা আছে।
এ আয়াত নাযিল হলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজেকে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচাব তা তো বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু পরিবারবর্গকে কিভাবে বাঁচাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তোমরা তাদেরকেও তা থেকে বিরত রাখবে। আর তোমাদেরকে যে কাজ করতে হুকুম দিয়েছেন, তোমরা তাদেরকেও তা করার হুকুম দেবে।
এভাবে নিজেকে ও পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো গেলে জান্নাতেও সবাই একসঙ্গে থাকার সুযোগ হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
'যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।৪১৩
জাহান্নামের শাস্তি হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এ আয়াত বলছে-
وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
(যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর)।
অর্থাৎ পাথর ও জাহান্নামীদেরকে দিয়ে জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত করা হবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা কেবল জাহান্নামের আগুনে পুড়ে শাস্তি পাবে তাই নয়; শাস্তি পাবে জ্বালানী হয়েও। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আয়াতে এর পরে আছে-
عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
(তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন-হৃদয় ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহর কোনও হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়)।
অর্থাৎ সে ফিরিশতাগণ এমন যে, একে তো কোনও অবস্থায়ই আল্লাহর অবাধ্যতা করে না, তদুপরি তারা অত্যন্ত কঠোর স্বভাব ও কঠিন-হৃদয়ের। তাদের তোষামোদ করে বা তাদের উপর জোর খাটিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। বাঁচা যাবে না তাদেরকে উৎকোচ দিয়েও। জাহান্নামে নিযুক্ত ফিরিশতাদের 'যাবানিয়া' বলা হয়। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান দায়িত্বশীল তার নাম মালিক।
৪০৯. সূরা তোয়াহা (২০), আয়াত ১৩২
৪১০. সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ২-৩
৪১১. মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৪৭৪৪; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৮৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৯১১
৪১২. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৬
৪১৩. সূরা তূর (৫২), আয়াত ২১
নাতি হাসান রাযি.-কে সদাকার খেজুর খেতে বারণ করা
হাদীছ নং : ২৯৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবন আলী রাযি. সদাকার খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ছি, ছি, এটা ফেলে দাও। তুমি জানো না যে আমরা সদাকা খাই না? -বুখারী ও মুসলিম।৪১৪
অপর এক বর্ণনায় আছে, আমাদের জন্য সদাকা হালাল নয়।
ইমাম নববী রহ. বলেন, كَخ كَخ শব্দটিকে এর خ হরফে জয়মের সঙ্গেও পড়া যায় এবং দুই যেরের সঙ্গেও পড়া যায়। শিশুদের দ্বারা কোনও ঘৃণ্য কাজ হয়ে গেলে তখন তাদের তিরস্কার করার জন্য শব্দটি ব্যবহার হয়। হযরত হাসান রাযি. তখন শিশু ছিলেন।
(৪১৪. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩০৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩২৯৪; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩৬৫২৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২৩১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬০৫)
হাদীছ নং : ২৯৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবন আলী রাযি. সদাকার খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ছি, ছি, এটা ফেলে দাও। তুমি জানো না যে আমরা সদাকা খাই না? -বুখারী ও মুসলিম।৪১৪
অপর এক বর্ণনায় আছে, আমাদের জন্য সদাকা হালাল নয়।
ইমাম নববী রহ. বলেন, كَخ كَخ শব্দটিকে এর خ হরফে জয়মের সঙ্গেও পড়া যায় এবং দুই যেরের সঙ্গেও পড়া যায়। শিশুদের দ্বারা কোনও ঘৃণ্য কাজ হয়ে গেলে তখন তাদের তিরস্কার করার জন্য শব্দটি ব্যবহার হয়। হযরত হাসান রাযি. তখন শিশু ছিলেন।
(৪১৪. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩০৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩২৯৪; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩৬৫২৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২৩১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬০৫)
مقدمة الامام النووي
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
قَالَ الله تَعَالَى: {وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا} [طه: 132]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا} [التحريم: 6].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا} [طه: 132]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا} [التحريم: 6].
298 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: أخذ الحسن بن علي رضي الله عنهما تَمْرَةً مِنْ تَمْر الصَّدَقَةِ فَجَعَلَهَا في فِيهِ، فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَخْ كَخْ إرْمِ بِهَا، أمَا عَلِمْتَ أنَّا لا نَأكُلُ الصَّدَقَةَ!؟». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: «أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ».
وقوله: «كَخْ كَخْ» يقال: بإسكان الخاء، ويقال: بكسرها مَعَ التنوين وهي كلمة زجر للصبي عن المستقذراتِ، وكان الحسن - رضي الله عنه - صبِيًّا.
وفي رواية: «أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ».
وقوله: «كَخْ كَخْ» يقال: بإسكان الخاء، ويقال: بكسرها مَعَ التنوين وهي كلمة زجر للصبي عن المستقذراتِ، وكان الحسن - رضي الله عنه - صبِيًّا.
হাদীস নং: ২৯৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যকীয়তা।
পানাহার করার ইসলামী তরিকা
হাদীছ নং : ২৯৯
হযরত উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রবীব (স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর ঔরসজাত সন্তান), তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিপালনাধীন এক বালক ছিলাম। আমার হাত খাবার পাত্রে ঘোরাফেরা করত। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে খোকা! আল্লাহ তা'আলার নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছের থেকে খাও। তখন থেকে আমার খাবার এভাবেই হয়ে থাকে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০২২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৫৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১৬৩৩৭: নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৭২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৪৪৪১)
হাদীছ নং : ২৯৯
হযরত উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রবীব (স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর ঔরসজাত সন্তান), তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিপালনাধীন এক বালক ছিলাম। আমার হাত খাবার পাত্রে ঘোরাফেরা করত। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে খোকা! আল্লাহ তা'আলার নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছের থেকে খাও। তখন থেকে আমার খাবার এভাবেই হয়ে থাকে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০২২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৫৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১৬৩৩৭: নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৭২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৪৪৪১)
مقدمة الامام النووي
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
299 - وعن أَبي حفص عمر بن أَبي سلمة عبد الله بن عبد الأسدِ ربيبِ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: كُنْتُ غلاَمًا في حجر رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - وَكَانَتْ يَدي تَطِيشُ في الصَّحْفَةِ، [ص:116] فَقَالَ لي رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا غُلامُ، سَمِّ الله تَعَالَى، وَكُلْ بيَمِينكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ» فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتي بَعْدُ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
«وَتَطِيشُ»: تدور في نواحِي الصحفة.
«وَتَطِيشُ»: تدور في نواحِي الصحفة.
হাদীস নং: ৩০০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যকীয়তা।
অধীনস্থ ব্যক্তিদের উপর শর'ঈ দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব
হাদীছ নং : ৩০০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের উপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। খাদেম তার মনিবের অর্থ-সম্পদের উপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭০৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৯২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৪৯৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪৮৯; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬৮৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৫০৬)
হাদীছ নং : ৩০০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের উপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। খাদেম তার মনিবের অর্থ-সম্পদের উপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৮৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭০৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৯২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৪৯৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪৮৯; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬৮৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৫০৬)
مقدمة الامام النووي
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
300 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: سمعت رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ: الإمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، والرَّجُلُ رَاعٍ في أهْلِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيَةٌ في بيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)