রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৬৭৯ টি

হাদীস নং: ৩০১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যকীয়তা।
সাত বছর থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের প্রতি করণীয়
হাদীছ নং : ৩০১

হযরত আমর ইবন শুআইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলেই তোমরা তাদেরকে নামাযের আদেশ কর। তাদের বয়স দশ বছর হয়ে গেলে নামাযের জন্য তাদেরকে মার এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও -আবূ দাউদ।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৬৮৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৮২: বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৩২৩৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮২৮৩; সুনানে দারাকুতনী, হাদীছ নং ৮৮৭; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৪৫৭: বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৫০৫)
مقدمة الامام النووي
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
301 - وعن عمرو بن شعيب، عن أبيه، عن جدهِ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مُرُوا أَوْلادَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ». حديث حسن رواه أَبُو داود بإسناد حسن. (1)
হাদীস নং: ৩০২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যকীয়তা।
সাত বছর থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের প্রতি করণীয়
হাদীছ নং : ৩০২

হযরত আবূ ছুরায়্যাহ সাবরাহ ইবন মাবাদ জুহানী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা শিশুকে নামায শেখাও সাত বছর বয়সে। দশ বছর হয়ে গেলে নামাযের জন্য তাদেরকে মার -আবূ দাউদ ও তিরমিযী।৪২৩
ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
ইমাম আবূ দাউদের বর্ণনা অনুযায়ী হাদীছটির অর্থ- তোমরা শিশুদেরকে নামাযের আদেশ কর যখন সাত বছর বয়সে উপনীত হয়।
সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৪০৭; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ১৪৭১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৮১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৩৩৯; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৫০৯১; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬৫৪৬; সহীহ ইবন খুযায়মা, হাদীছ নং ১০০২
مقدمة الامام النووي
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
302 - وعن أَبي ثُرَيَّةَ سَبْرَةَ بن معبدٍ الجُهَنِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «عَلِّمُوا الصَّبِيَّ الصَّلاةَ لِسَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُ عَلَيْهَا ابْنَ عَشْرِ سِنِينَ» حديث
حسن رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن». (1)
ولفظ أَبي داود: «مُرُوا الصَّبِيَّ بِالصَّلاةِ إِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِينَ».
হাদীস নং: ৩০৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৩৯

প্রতিবেশীর হক এবং তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ

الجار -এর অর্থ প্রতিবেশী। শব্দটির উৎপত্তি الجوار (আশ্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ) থেকে। বলা হয়ে থাকে- استجرته فاجارني (আমি তার কাছে আশ্রয় চাইলাম, সে আমাকে আশ্রয় দিল)। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ (আর আমিই তোমাদের রক্ষক, সূরা আনফাল (৮), আয়াত ৪৮)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ (এবং যিনি আশ্রয় দান করেন এবং তার বিপরীতে কেউ কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না, সূরা মুমিনূন (২৩), আয়াত ৮৮)। শব্দটি ‘নৈকট্য’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কেউ কারও নিকটবর্তী হলে বলা হয়ে থাকে- جاره وجاوره। বলা হয়- جاورا (তারা দু'জন একে অন্যের নিকটবর্তী হলো)। কুরআন মাজীদে আছে- وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُتَجَاوِرَاتٌ (আর পৃথিবীতে আছে বিভিন্ন ভূখণ্ড, যা পাশাপাশি অবস্থিত, সূরা রা'দ (১৩), আয়াত ৪)।
এক প্রতিবেশী যেহেতু অপর প্রতিবেশীর নিকটবর্তী থাকে এবং তাদের একজন অন্যজনের আশ্রয়দাতা ও সাহায্যকারী হয়ে থাকে, তাই তাদেরকে (একবচনে) : جار ও (বহুবচনে) جيران বলা হয়। পরিভাষায় جار বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যার বাসস্থান অন্যের বাসস্থানের নিকটবর্তী হয়। এদের প্রত্যেকেই একে অন্যের جار।
جار (জার) শব্দটির মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, প্রকৃত প্রতিবেশী সেই, যে অপর প্রতিবেশীর রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখে। কোনও প্রতিবেশী দ্বারা যদি অপর প্রতিবেশীর জান, মাল বা ইজ্জতের কোনওরকম ক্ষতি সাধিত হয়, তবে সে যেন সত্যিকার প্রতিবেশীই নয়। এমনিভাবে অন্য কারও দ্বারা যদি এমন কোনও কাজ হয়,যা প্রতিবেশীর পক্ষে ক্ষতিকর আর অপর প্রতিবেশী তা দেখেও তাতে বাধা না দেয়; বরং নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকে, তবে সেও প্রতিবেশী নামের উপযুক্ত নয়।
প্রকাশ থাকে যে, মুসলিম ব্যক্তির 'জার' বা প্রতিবেশী হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া শর্ত নয়; বরং মুসলিম-অমুসলিম, নেককার বদকার, বন্ধু-শত্রু, আত্মীয়-অনাত্মীয়, উপকারী-ক্ষতিকর, স্থানীয়-বহিরাগত যেই হোক না কেন, পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা হলেই সে জার বা প্রতিবেশী বলে গণ্য হবে এবং ইসলাম প্রতিবেশীর যে অধিকার সাব্যস্ত করেছে তা তার জন্য প্রযোজ্য হবে, যদিও সম্পর্কের পার্থক্যভেদে অধিকারের মধ্যে সংখ্যাগত পার্থক্য হবে। যেমন প্রতিবেশী মুসলিম হলে প্রতিবেশিত্বের অধিকারের পাশাপাশি ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অধিকারও তার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। আবার সে যদি আত্মীয়ও হয়, তবে প্রতিবেশিত্ব, ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তা এ তিনটি অধিকার তার প্রাপ্য হবে। পক্ষান্তরে প্রতিবেশী যদি অমুসলিম ও অনাত্মীয় হয়, তবে তার অধিকার হবে কেবল একটি— প্রতিবেশিত্বের অধিকার।
ইসলাম প্রতিবেশীর হক আদায় ও তার প্রতি সদাচরণের জোর তাগিদ করেছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সে সম্পর্কিত একটি আয়াত ও কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে তার অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা চাওফীক দান করুন- আমীন।

‘প্রতিবেশীর হক এবং তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা’ সম্পর্কিত আয়াত

আল্লাহ ত‘'আলা ইরশাদ করেন-

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا

অর্থ : আল্লাহর ইবাদত কর ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গে বসা (বা দাঁড়ানো) ব্যক্তি, পথচারী এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও (সদ্ব্যবহার কর)। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনও দর্পিত অহংকারীকে পসন্দ করেন না।
(সূরা নিসা (০৪), আয়াত ৩৬)

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ ইবাদত বন্দেগীর আদেশ করার পর নয় শ্রেণীর লোকের প্রতি সদ্ব্যবহারের হুকুম দিয়েছেন। এটাকে আমরা এককথায় হুকুকুল ইবাদ অর্থাৎ বান্দার হক আদায়ের হুকুমও বলতে পারি। এ নয় শ্রেণীর মধ্যে মানবসমাজের অধিকাংশ লোকই শামিল রয়েছে।

আল্লাহ তাআলার ইবাদত-আনুগত্য করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আল্লাহ তাআলা বান্দার হক আদায়ের আগে তাঁর নিজের ইবাদত-বন্দেগী করা ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করার আদেশ করেছেন। প্রথমে এ আদেশ করার কারণ এর গুরুত্ব পরবর্তী হকসমূহের চেয়ে অনেক বেশি। কেননা এটা আল্লাহ তাআলার হক। আল্লাহ তাআলার আরও অনেক হক আছে। তার মধ্যে এ হকই প্রধান। আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করা ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করার মূল কথা হচ্ছে তাওহীদ। তাওহীদের অর্থ আল্লাহ তাআলাকে এক জানা ও কেবল তাঁরই ইবাদত করা। এটা ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও বিধি-বিধানের মূল ও প্রাণবস্তু। এর উপরই বাকি সব নির্ভর করে । এটা যার ঠিক নেই, তার কোনওকিছুই আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ গুরুত্বের কারণেই আদেশটিকে সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এ আদেশ ওই নয় শ্রেণীর লোকের হক আদায়ের হুকুম দেওয়ার আগে একটি ভূমিকারও মর্যাদা রাখে।
আল্লাহ তাআলা সর্বশক্তিমান। তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত সবকিছুই দেখেন। তাঁকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা নেই কারও। কাজেই যে ব্যক্তি সেই সর্বশক্তিমানের ইবাদত-বন্দেগী ও আনুগত্য করতে অভ্যস্ত হয়, তার অন্তরে আল্লাহভীতি জাগ্রত থাকে। আল্লাহভীতি এমন এক গুণ, যা বান্দাকে তার যাবতীয় কর্তব্য পালনে নিষ্ঠাবান করে তোলে এবং অন্যায়- অনুচিত কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। আল্লাহভীরু লোকের পক্ষে বান্দার হক আদায়ও সহজ হয়ে যায়, বিশেষত যখন সে এ সম্পর্কে সচেতন থাকে যে, বান্দার হক আদায় করা আল্লাহ তাআলার হক আদায়েরও অন্তর্ভুক্ত, যেহেতু এটা তাঁর আদেশ। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-আনুগত্য অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই লক্ষ করা যায় যারা আল্লাহ তাআলার ইবাদত-আনুগত্যে বেশি যত্নবান, তারা বান্দার হক আদায়ের প্রতিও বেশি সচেতন। ইবাদত-আনুগত্যে গাফেল লোকদের পক্ষ থেকেই বান্দার হক আদায়ে বেশি অবহেলা হয়ে থাকে। কেননা তাদের অন্তরে যেহেতু আল্লাহর ভয় থাকে না, অন্যদিকে মানুষের হক মেরে দিয়ে বাঁচার নানা ফাঁক-ফোকর থাকে, তাই তাদের হক আদায়েরও বিশেষ গুরুত্ব তাদের অন্তরে থাকে না; বরং কার হক কিভাবে মেরে দেওয়া যায় সেটাই থাকে তাদের লক্ষ্যবস্তু। আর এভাবে তারা তাদের দীন-দুনিয়া উভয়ই ধ্বংস করে ।

১. পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা

আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীর আদেশ করার পর যে নয় শ্রেণীর লোকের প্রতি সদ্ব্যবহারের হুকুম করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে পিতা-মাতা। ইরশাদ হয়েছে- وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا (পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর)। এর দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করার পর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন মাজীদের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

অর্থ : তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।
(সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৭)

আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীর আদেশদানের পরপর পিতা-মাতার প্রতি ভালো ব্যবহার করার আদেশ দেওয়ার কারণ বাহ্যত এই যে, আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন মানুষের সৃষ্টিকর্তা। তারপর পিতা-মাতা তাদের দুনিয়ায় আসার মাধ্যম। মানুষের অস্তিত্বলাভে আল্লাহ তাআলার সৃজনক্ষমতার পর পিতা-মাতার যেহেতু একটা বাহ্যিক ভূমিকা আছে, তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার পর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশিই হওয়ার কথা। এ কারণেই আল্লাহর ইবাদতের পরপর অন্য সবকিছুর আগে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের হুকুম দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী অধ্যায়ে আসছে।

২. আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়

আয়াতে পিতা-মাতার ‘হক’র পর দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থান পেয়েছে আত্মীয়-স্বজনের হক। ইরশাদ হয়েছে- وَبِذِي الْقُرْبَى (আত্মীয়-স্বজনের প্রতি)। অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা ফরয ও অতি বড় ছাওয়াবের কাজ। তাদের প্রতি অসদ্ব্যবহার করা হারাম ও কঠিন গুনাহ। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ

‘গরীবদের দান-সদাকা করার দ্বারা কেবল সদাকার ছাওয়াব হয়। আর আত্মীয়দের দান-সদাকা করলে তাতে যেমন সদাকা হয়, তেমনি আত্মীয়তা রক্ষারও ছাওয়াব হয়।’
(সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৮২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৬৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬২৩৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১০৫৪১; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৮৪৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩৪৪; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৭২৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৭৩৪)
পিতা-মাতা ছাড়া অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে অর্থসাহায্য করা কেবল তখনই ওয়াজিব, যখন তারা আয়-রোজগার করতে অক্ষম হয়, যেমন অন্ধ, পঙ্গু, বিকলাঙ্গ, শিশু ইত্যাদি। পিতা-মাতার সাহায্য করার ক্ষেত্রে এ শর্ত নেই। কোনও ধনী ব্যক্তির সামনে যদি তার আত্মীয়-স্বজন অনাহারে কষ্ট করে এবং তা সত্ত্বেও সে তাকে সাহায্য না করে, তবে তা আলোচ্য আয়াতের হুকুম অমান্য করার শামিল হবে। এরূপ ক্ষেত্রে দান- খয়রাত করা অবশ্যকর্তব্য।

৩-৪. ইয়াতীম ও মিসকীনের প্রতি সদাচরণ

তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে এসেছে ইয়াতীম ও মিসকীনের হক আদায়ের হুকুম। বলা হয়েছে - وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ (এবং ইয়াতীম ও মিসকীনদের প্রতি)। ইয়াতীম ও মিসকীনগণ যাকাত আদায়ের খাত। তাদেরকে যাকাতের অর্থ দান করা ধনীদের উপর ফরয। সাধারণভাবে যাকাত ছাড়া অন্যান্য দান-খয়রাত করা মুস্তাহাব। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তা ওয়াজিব ও অবশ্যকর্তব্যও হয়ে যায়। যেমন কোনও ব্যক্তি যদি অনাহারে কষ্ট পায় আর ধনী ব্যক্তির যাকাত আদায় শেষ হয়ে যায়, তবে এ অবস্থায় তার অনাহারের কষ্ট দূর করার জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করা ওয়াজিব।
ইয়াতীমের সাহায্য-সহযোগিতা করা অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেন-

أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا، وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا

‘আমি ও ইয়াতীমের লালনপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন এবং দুটোর মধ্যে ফাঁক করলেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০০৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯১৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২৮২০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৬০; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১৩৩; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫৯০৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬৬২)
মিসকীন ও বিধবাদের সাহায্য করার ফযীলত সম্পর্কে এক হাদীছে আছে-

الساعي على الأرملة والمسكين كالمجاهد في سبيل الله وأحسبه قال كالقائم لا يفتر وكالصائم لا يفطر

‘'বিধবা ও মিসকীনদের সহায়তাকারী আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মত। (রাবী বলেন) আমার ধারণা তিনি আরও বলেছেন, এবং সে অবিশ্রান্ত নামায আদায়কারীর মত বা ওই রোযাদারের মত, যে কখনও রোযা ছাড়া থাকে না।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০০৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৯৮২; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩৬৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২১৪০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭৩২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬৬৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫৮)
বস্তুত ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি সদ্ব্যবহার করা ঈমানের দাবি। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা তাদের পক্ষেই মানায়, যাদের অন্তরে ঈমান নেই। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন-

أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ (1) فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ (2) وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ (3)

‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে কর্মফলকে অস্বীকার করে? সে তো সে-ই, যে ইয়াতীমকে ধাক্কা দেয় এবং মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না।’ (সূরা মা'উন (১০৭), আয়াত ১-৩)
আখেরাতে জাহান্নামীগণ তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলবে-

قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ (43) وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ (44)

‘তারা বলবে, আমরা নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা মিসকীনদেরকে খাবার দিতাম না। (সূরা মুদ্দাচ্ছির (৭৪), আয়াত ৪৩-৪৪)
এসব আয়াত দ্বারা বোঝা যায় ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি সদয় আচরণ না করার পরিণাম কত ভয়াবহ। তাই আমাদের এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকা দরকার।

৫. ৬. নিকট ও দূর প্রতিবেশীর হক আদায়

পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ে রয়েছে নিকট ও দূর প্রতিবেশীর হক আদায়ের তাগিদ।
ইরশাদ হয়েছে— وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ (নিকট প্রতিবেশী এবং দূর প্রতিবেশী)। অর্থাৎ নিকট ও দূর প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহার কর। নিকট প্রতিবেশী হলো ওই প্রতিবেশী, যার বাড়ি সবচে' বেশি কাছে। কেউ বলেন, এমন প্রতিবেশী, যার সঙ্গে প্রতিবেশিত্বের পাশাপাশি আত্মীয়তা বা ধর্মীয় সম্পর্কও আছে।
দূর প্রতিবেশী হলো ওই প্রতিবেশী, যার বাড়ি অন্য প্রতিবেশীর তুলনায় দূরে। অথবা এমন প্রতিবেশী, যার সঙ্গে আত্মীয়তা বা ধর্মীয় সম্পর্ক নেই। এক বর্ণনায় আছে-

الجيران ثلاثة فمنهم من له ثلاثة حقوق و منهم من له حقان و منهم من له حق فأما الذي له ثلاثة حقوق فالجار المسلم القريب له حق الجار و حق الإسلام و حق القرابة و أما الذي له حقان فالجار المسلم له حق الجوار و حق الإسلام و أما الذي له حق واحد فالجار الكافر له حق الجوار

‘প্রতিবেশী তিন প্রকার। ক. এমন প্রতিবেশী, যার হক তিনটি। খ. এমন প্রতিবেশী, যার হক দু'টি এবং গ. এমন প্রতিবেশী, যার হক একটি। যার হক তিনটি, সে হলো মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী। তার এক হক হলো প্রতিবেশিত্বের, দ্বিতীয় হক ইসলামের এবং তৃতীয় হক আত্মীয়তার। যার হক দু'টি, সে হলো কেবল মুসলিম প্রতিবেশী। তার এক হক প্রতিবেশিত্বের, দ্বিতীয় হক মুসলিম ভাই হিসেবে। যার হক কেবল একটি সে হলো অমুসলিম প্রতিবেশী। তার জন্য রয়েছে কেবল প্রতিবেশিত্বের হক।’ (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯১১৩; আল খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ২৪৭)
এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম এবং আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়, প্রতিবেশী হিসেবে তার নির্ধারিত হক আছেই। তার সে হক আদায় করা অবশ্যকর্তব্য। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, প্রতিবেশীর হক হলো সে সাহায্য চাইলে তাকে সাহায্য করা, ঋণ চাইলে ঋণ দেওয়া, অসুস্থ হলে খোঁজখবর রাখা, মারা গেলে জানাযায় শরীক হওয়া, তার কোনও সুখবর থাকলে মুবারকবাদ জানানো, বিপদে পড়লে সহানুভূতি প্রকাশ করা, তার অনুমতি ছাড়া এমন উঁচু প্রাচীর বা বাড়ি না বানানো, যাতে তার বাড়িতে বাতাস আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, ভালো খাবার তৈরি হলে তাতে তাকে শরীক করা ইত্যাদি। এ অধ্যায়ের হাদীছসমূহে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আসছে।

৭. সাথী-সঙ্গীর প্রতি সদ্ব্যবহার

সপ্তম পর্যায়ে হলো পার্শ্বসহচরের হক। ইরশাদ হয়েছে- وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ ‘সঙ্গে বসা (বা দাঁড়ানো) ব্যক্তি'। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের সঙ্গে বসা বা দাঁড়ানো থাকে, তার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। সহপাঠী, সফরসঙ্গী, সহকর্মী, সহযাত্রী, একই মজলিসে পাশাপাশি উপবিষ্ট ব্যক্তি এবং এরকম আরও যাদের সঙ্গে পাশাপাশি ওঠা-বসা করা হয় তারা সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত।
এই শ্রেণীর লোকদেরও যে হক থাকতে পারে, সে ব্যাপারে সাধারণত চিন্তাই করা হয় না। অথচ ইসলাম হুকুকুল ইবাদের ক্ষেত্রে এই শ্রেণীকেও শামিল রেখেছে। সুতরাং ওঠাবসা-চলাফেরায় লক্ষ রাখা চাই যাতে কোনওভাবেই এদের হক নষ্ট না হয়। এককথায় এদের হক হলো ইনসাফপূর্ণ আচরণ করা ও কষ্টদান থেকে বিরত থাকা। যেমন গণপরিবহনে যাতায়াতকালে ধুমপান থেকে বিরত থাকা চাই। কেননা তাতে পাশের যাত্রীদের কষ্ট হয়ে থাকে। অনেকে নিজ আসনের অতিরিক্ত জায়গা দখল করে রাখে। এতে পার্শ্ববর্তী যাত্রীর হক নষ্ট হয়। কেউ কেউ এত উচ্চস্বরে কথা বলে, যাতে পাশের যাত্রী অতিষ্ঠ হয়ে যায়। অপ্রয়োজনে বার বার ওঠাবসা করার দ্বারাও তাকে কষ্ট দেওয়া হয়। এমনিভাবে আরও যেসব আচরণ পার্শ্ববর্তী যাত্রীর পক্ষে কষ্টদায়ক হয়, সেসব থেকেই বিরত থাকা কর্তব্য। অন্যথায় তা সহযাত্রীর অধিকার হরণের মধ্যে গণ্য হবে।
এ আয়াতে সদ্ব্যবহারের হুকুম দেওয়া হয়েছে। এটা অধিকার আদায়ের চেয়েও উচ্চপর্যায়ের। সুতরাং যেসব কাজে তাদের হক নষ্ট হয় তা থেকে বিরত থাকাই যথেষ্ট নয়; বরং যা-কিছুই অশোভন ও অরুচিকর, তা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি এমন ভদ্রোচিত ব্যবহার করা উচিত, যা শান্তিদায়ক ও সম্মানজনক হয়। যেমন মজলিসে থাকা অবস্থায় বেশি ওঠাবসা না করা, অন্যদের সামনে নাক না ঝাড়া, অতিরিক্ত শব্দে হাঁচি ও কাশি না দেওয়া, শরীরের কোনওরকম দুর্গন্ধে কেউ কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ রাখা, পাশের ব্যক্তিকে আরামে বসার সুযোগ করে দেওয়া, তার কোনওকিছুর প্রয়োজন আছে কিনা সে খবর নেওয়া ও তা পূরণের চেষ্টা করা ইত্যাদি।

৮. পথিক ও মুসাফিরের প্রতি সদাচরণ

এ আয়াতে বর্ণিত হক্কুল ইবাদের অষ্টম শ্রেণী হলো ইবনুস্ সাবীল । অর্থাৎ পথিক ও অতিথি । কোনও ব্যক্তি সফরকালে কারও মেহমান হলে সামর্থ্য অনুযায়ী তার সেবা করা ও তার মেহমানদারির দিকে লক্ষ রাখা একটি ঈমানী দায়িত্ব। ইসলামে অতিথির যে ‘হক’র কথা বলা হয়েছে, লোকে সাধারণত তা দ্বারা আত্মীয়-স্বজনের হক বুঝে থাকে। মূল ব্যাপার তা নয়। আত্মীয়ের হক আলাদা এবং ইবনুস্ সাবীলের হকও আলাদা। ইবনুস্ সাবীল হলো ওই পথিক ও মুসাফির, যে সফরকালে কারও বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরূপ ব্যক্তি অতিথিরূপে ভালো ব্যবহারের হকদার হয়ে যায়। এমনিভাবে কোনও মুসাফির ও পথিক প্রখর রোদ, ঝড়-বাদল বা অন্ধকার রাতে সামনে চলতে অক্ষম হয়ে কোনও বাড়ির দরজায় পৌঁছলে সে বাড়ির লোকজনের কর্তব্য আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে আশ্রয় দেওয়া ও তার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা। এটা তাদের কাছে সেই পথিক ও মুসাফিরের প্রাপ্য।

৯. দাস-দাসী ও শ্রমিক-কর্মচারীর হক আদায়

নবম শ্রেণী হলো দাস-দাসী। আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ (এবং নিজেদের দাস-দাসীদের প্রতিও)। এর আক্ষরিক অর্থ- তোমাদের হাত যাদের মালিকানা লাভ করেছে। বোঝানো উদ্দেশ্য ওই সকল গোলাম-বাঁদীকে, যারা মনিবের মালিকানাধীন থাকে, মনিব যাদেরকে বেচাকেনা করার অধিকারও রাখে। ইসলামে এটা অনুমোদিত। তবে ইসলামের দাসপ্রথা ও পশ্চিমা বিশ্বের অধুনালুপ্ত দাসপ্রথা এক জিনিস নয়। ইসলামের দাসপ্রথা কেবলই যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং তাদের প্রতি আচার- আচরণ সম্পর্কিত ইসলামী বিধানও সম্পূর্ণ মানবিক। গভীরভাবে লক্ষ করলে ইসলামের দাসপ্রথা—নামেই যা দাসপ্রথা। বাস্তবিকপক্ষে দাস-দাসীগণ ইসলামী ভ্রাতৃত্বেরই অংশ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেন-

إِخْوَانُكُمْ خَوَلُكُمْ، جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ، فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ

‘দাস-দাসীগণ তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। কাজেই আল্লাহ তাআলা তার যে ভাইকে তার অধীন করেছেন, তার প্রতি তার কর্তব্য হচ্ছে নিজে যা খাবে তাকে তাই খাওয়াবে, নিজে যা পরবে তাকে তাই পরাবে, তার সাধ্যের বাইরে কোনও কাজের বোঝা তার উপর চাপাবে না, যদি সাধ্যের বাইরে কোনও কাজ তার উপর চাপায়, তবে সে কাজে নিজে তার সাহায্য করবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৬১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৪৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৯০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৪০৯; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১৯৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৭৭৫)

অপর এক হাদীছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لِلْمَمْلُوكِ طَعَامُهُ وَكِسْوَتُهُ، وَلَا يُكَلِّفُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا يُطِيقُ

‘দাস-দাসীর খাদ্য ও পোশাকের দায়িত্ব তার মনিবের উপর। মনিবের আরও কর্তব্য হলো তার উপর তার ক্ষমতার বেশি কাজের বোঝা না চাপানো।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৬২; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং১৯২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৩৬৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৩১৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৭৭২: শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮১৯৭)
ইসলামে দাস-দাসীকে মারপিট করা সম্পূর্ণ নিষেধ। একবার বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ মাসউদ আনসারী রাযি, তাঁর এক গোলামকে পেটাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পান আবূ মাস'উদ। জেনে রেখ, ওর উপর তোমার যতটুকু ক্ষমতা, তারচে' তোমার উপর আল্লাহর ক্ষমতা অনেক বেশি। আওয়াজ শুনে তিনি পেছন দিকে ফিরে তাকান। দেখতে পান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই গোলামটিকে আযাদ করে দেন। তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-

أَمَا لَوْ لَمْ تَفْعَلْ للفَحَتْكَ النَّارُ، أَوْ لَمَسَّكَ النَّارُ

‘শোন! তুমি যদি এরূপ না করতে, তবে অবশ্যই আগুন তোমাকে গ্রাস করত। কিংবা বলেছেন, অবশ্যই আগুন তোমাকে স্পর্শ করত।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৫৯; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১৭১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮২০৮)
এই হচ্ছে ইসলামে দাস-দাসীর অধিকার। এই হচ্ছে দাস-দাসীর প্রতি আচার- আচরণে ইসলামের শিক্ষা। পক্ষান্তরে পশ্চিমা বিশ্বে যে দাসপ্রথা চালু ছিল, তা ছিল নিতান্তই নিপীড়ন। তাতে নিয়ম-নীতির কোনও বালাই ছিল না। জোর জুলুম করে অসহায় স্বাধীন লোকদেরকেই দাস-দাসীরূপে ব্যবহার করা হতো। তারা তো এখনও তাদের আধিপত্যভুক্ত দুর্বল জনগোষ্ঠীর প্রতি দাস-দাসীসুলভ আচরণই করে থাকে। তাদের জন্য তারা ‘দাস’ শব্দটি ব্যবহার করে না বটে, কিন্তু কার্যত তারা তাদেরকে দাসত্বের শেকলেই আবদ্ধ করে রেখেছে। সুতরাং তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের দাসপ্রথাকে বিবেচনা করা মোটেই সুবিচার নয় ।
প্রকাশ থাকে যে, যদিও আয়াতে সরাসরি দাস-দাসীর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ব্যাপকার্থে শ্রমিক, কর্মচারী ও গৃহকর্মীরাও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাদের প্রতিও সদ্ব্যবহার করা কর্তব্য। যথাসময়ে তাদের পারিশ্রমিক আদায় করতে হবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাতে গড়িমসি করলে তা জুলুম বলে গণ্য হবে। তাদের প্রতি কথাবার্তায় কোমলতা প্রদর্শন করা ও আচার-আচরণে সহানুভূতিশীল থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। গালাগাল করা, রূঢ় ভাষা ব্যবহার করা ও কঠিন-কঠোর আচরণ করা ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মোটকথা তাদের প্রতি আচার-আচরণ করতে হবে পুরোপুরি মানবিক ও ভ্রাতৃত্বমূলক। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِذَا صَنَعَ لأَحَدِكُمْ خَادِمُهُ طَعَامَهُ ، ثُمَّ جَاءَهُ بِهِ ، وَقَدْ وَلِيَ حَرَّهُ وَدُخَانَهُ ، فَلْيُقْعِدْهُ مَعَهُ ، فَلْيَأْكُلْ ، فَإِنْ كَانَ الطَّعَامُ مَشْفُوهًا قَلِيلاً ، فَلْيَضَعْ فِي يَدِهِ مِنْهُ أُكْلَةً ، أَوْ أُكْلَتَيْنِ

‘তোমাদের কারও জন্যে তার খাদেম যখন আগুনের তাপ ও ধোঁয়ার কষ্ট সহ্য করে খানা পাকাবে, তখন সে যেন তাকে নিজের সঙ্গে বসিয়ে খানা খাওয়ায়। খানার পরিমাণ যদি খুব কম হয়, তবে অন্ততপক্ষে তার হাতে দুই-এক লোকমা অবশ্যই তুলে দেবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৬৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৮৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৭২৬)
একবার এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা চাকরদের কতবার ক্ষমা করব? তিনি নীরব থাকলেন। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। সে তৃতীয়বার একই কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন-

كُلَّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً

‘তাকে রোজ সত্তরবার ক্ষমা করবে।’ (জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৪৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৬৪; মুসনাদে আহমাদ,
হাদীছ নং ৫৮১৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৭৯৮)
প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব
হাদীছ নং : ৩০৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. ও উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরীল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার মনে হলো, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন-বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬২৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৪২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৫৫৭৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫১১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৫৪১৬; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৬৮)
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ

قَالَ الله تَعَالَى: {وَاعْبُدُوا اللهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ} [النساء: 36].
303 - وعن ابن عمر وعائشة رضي الله عنهما، قالا: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا زَالَ جِبْريلُ يُوصِيني بِالجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُورِّثُهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩০৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
ঘরে ভালো রান্নাবান্না হলে প্রতিবেশীকে তাতে শরীক রাখা
হাদীছ নং : ৩০৪

হযরত আবূ যার রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে আবূ যার! তুমি যখন ঝোল (তরকারি) রান্না করবে তখন তাতে পানি বেশি দেবে এবং তা থেকে তোমার প্রতিবেশীদের (ঘরে) পৌছাবে -মুসলিম।২০
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আবূ যার রাযি. বলেন, আমার পরম বন্ধু (রাসূলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন, যখন তুমি ঝোল রান্না করবে তখন তাতে পানি বেশি দেবে। তারপর তোমার প্রতিবেশীদের পরিবারবর্গের দিকে লক্ষ করবে এবং সে ঝোল থেকে কিছুটা হলেও দিয়ে তাদের কল্যাণ করবে।২১

২০. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬২৫; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১১৪; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ১৩৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০৯২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৮৯

২১. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬২৫; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৮০৭; সুনানে
দারিমী, হাদীছ নং ২১২৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ১৭১৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান,
হাদীছ নং ৯০৯৩; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ২৩৮
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
304 - وعن أَبي ذر - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا أَبَا ذَرٍّ، إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً، فَأكثِرْ مَاءَهَا، وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ». رواه مسلم. (1)
وفي رواية لَهُ عن أَبي ذر، قَالَ: إنّ خليلي - صلى الله عليه وسلم - أوْصَاني: «إِذَا طَبَخْتَ مَرَقًا فَأكْثِرْ مَاءها، ثُمَّ انْظُرْ أَهْلَ بَيْتٍ مِنْ جِيرَانِكَ، فَأَصِبْهُمْ مِنْهَا بِمعرُوفٍ».
হাদীস নং: ৩০৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
যার অনিষ্ট থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, তার প্রতি সতর্কবাণী
হাদীছ নং : ৩০৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়।' জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে সে? তিনি বললেন, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না- বুখারী ও মুসলিম।২৬
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না। সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ২৭

২৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৮৭৮; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮২৫০; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০৮৭

২৭. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫১০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৮৫৫; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১২১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০৫৫৩; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৮৯
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
305 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «واللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ!» قِيلَ: مَنْ يَا رَسُول الله؟ قَالَ: «الَّذِي لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية لمسلم: «لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ».
«البَوَائِقُ»: الغَوَائِلُ والشُّرُورُ.
হাদীস নং: ৩০৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
প্রতিবেশিনীর কোনও হাদিয়াকেই তুচ্ছ মনে না করা
হাদীছ নং : ৩০৬

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে মুসলিম নারীগণ! কোনও প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর জন্য তুচ্ছ মনে না করে, তা বকরির একটা পায়া হলেও -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৫৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৩০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২১৩০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৫৯১; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১২৩; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫৬২; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা: ১১৩২৮; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২১৬০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬৪১
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
306 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا نِسَاء المُسْلِمَاتِ، لاَ تَحْقِرَنَّ جَارةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاة». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩০৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
এক প্রতিবেশীর দেয়ালে অপর প্রতিবেশীর আড়কাঠ লাগানো
হাদীছ নং : ৩০৭

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে নিজ দেওয়ালে আড়কাঠ গাড়তে বাঁধা না দেয়। তারপর আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৬৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩৫৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৯৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫১৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৩২৯
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
307 - وعنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً في جِدَارِهِ»، ثُمَّ يقُولُ أَبُو هريرة: مَا لِي أرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضينَ! وَاللهِ لأرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أكْتَافِكُمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
رُوِيَ «خَشَبَهُ» بالإضَافَة وَالجمع. وَرُويَ «خَشَبَةً» بالتنوين عَلَى الإفرادِ. وقوله: مَا لي أراكم عَنْهَا مُعْرِضينَ: يَعْني عَنْ هذِهِ السُّنَّة.
হাদীস নং: ৩০৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
প্রকৃত মুমিনের করণীয় তিনটি কাজ
হাদীছ নং : ৩০৮

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে নয়ত চুপ থাকে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৬২৬ ; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৬; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৬৩; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০৮৫; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০৪৪২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩৩২
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
308 - وعنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بالله وَاليَومِ الآخرِ، فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩০৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব
হাদীছ নং : ৩০৯

হযরত আবূ শুরাইহ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে নয়ত চুপ থাকে – মুসলিম।৪৪ বুখারী এর অংশবিশেষ বর্ণনা করেছেন।
৪৪ সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৮; সুনানে ইবনু মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৭২; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৫৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৭০; সুনানে দারিমী; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫০১; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৭৮; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৫৬৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩০০১
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
309 - وعن أَبي شُرَيْح الخُزَاعيِّ - رضي الله عنه: أن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، [ص:118] وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ». رواه مسلم بهذا اللفظ، وروى البخاري بعضه. (1)
হাদীস নং: ৩১০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
হাদিয়া ও উপহারে কোন্ প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে
হাদীছ নং : ৩১০

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দু'জন প্রতিবেশী আছে। তাদের মধ্যে আমি কাকে হাদিয়া দেব? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যার দরজা তোমার বেশি নিকটবর্তী তাকে- বুখারী।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২২৫৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫৫৩৬; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১০৭; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদীছ নং ১৪৪০১; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১০১৯; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২৬১০; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০৯৭
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
310 - وعن عائشة رضي الله عنها، قَالَت: قُلْتُ: يَا رَسُول الله، إنَّ لِي جارَيْنِ، فإلى أيِّهِمَا أُهْدِي؟ قَالَ: «إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنكِ بَابًا». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৩১১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
কে উত্তম সঙ্গী এবং কে উত্তম প্রতিবেশী
হাদীছ নং : ৩১১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সাথী-সঙ্গীদের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার কাছে উত্তন সেই ব্যক্তি যে তার বন্ধুর জন্য উত্তম। প্রতিবেশীদের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার কাছে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার প্রতিবেশীর জন্য উত্তম -তিরমিযী।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৫৬৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫১৮; সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীছ নং ২৫৩৯; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ২৮০০; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯০৯৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৮৯;)
مقدمة الامام النووي
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
311 - وعن عبدِ الله بن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيرُ الجِيرَانِ عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ৩১২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৪০

পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা

পিতা-মাতার আনুগত্য করা, তাদের সেবাযত্ন করা ও তাদেরকে খুশি রাখার প্রচেষ্টাকে بر الوالدين বলা হয়।بر শব্দটির মূল অর্থ সৎকর্মের বিস্তার, প্রাচুর্য ও ব্যাপ্তি। শব্দটি আল্লাহ তাআলার জন্যও ব্যবহৃত হয়, বান্দার জন্যও। বান্দার জন্য ব্যবহার করলে অর্থ হবে আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ আনুগত্য করা ও সামর্থ্য অনুযায়ী আনুগত্যকে ব্যাপক করে তোলা। আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে এর অর্থ বান্দার সৎকর্মের পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়া। এর থেকে উৎপন্ন আল্লাহ তাআলার এক গুণবাচক নাম হলো البر । যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে إِنَّهُ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيمُ ‘নিশ্চয়ই তিনি পরিপূর্ণ প্রতিদানদাতা, পরম দয়ালু।
বান্দার ক্ষেত্রে بر শব্দটি আকীদা-বিশ্বাস ও কাজকর্ম সবকিছুতে আল্লাহ তাআলার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ

‘পুণ্য তো কেবল এটাই নয় যে, তোমরা নিজেদের চেহারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং পুণ্য হলো (সেই ব্যক্তির কার্যাবলী), যে ঈমান রাখে আল্লাহর, শেষ দিনের ও ফিরিশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীগণের প্রতি। আর আল্লাহর ভালোবাসায় নিজ সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির ও সওয়ালকারীদেরকে এবং দাসমুক্তিতে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং যারা কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণে যত্নবান থাকে এবং সংকটে, কষ্টে ও যুদ্ধকালে ধৈর্যধারণ করে। (সূরা বাকারা (২), আয়াত ১১৭)
এ আয়াতে আকীদা-বিশ্বাস এবং নফল ও ফরয সবরকম সৎকর্মকে بر শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
পিতা-মাতার আনুগত্য ও সেবাযত্নও আল্লাহ তাআলার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। তাই এটিকেও بر বলে। বলা হয়ে থাকে- بر اباه (সে তার পিতার আনুগত্য করেছে)। পিতা-মাতার অনুগত সন্তানকে بر ও بار বলা হয়। যেমন কুরআন মাজীদে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উক্তি বর্ণিত হয়েছে- وَبَرًّا بِوَالِدَتِي , (এবং আল্লাহ আমাকে বানিয়েছেন আমার মায়ের অনুগত, সূরা মারয়াম (১৯), আয়াত ৩২)
সত্য কথা, কথা রক্ষা করা ও কসম পূর্ণ করার সম্পর্কেও بر ব্যবহৃত হয়। বলা হয় بر في يمينه (সে তার কসম রক্ষা করল)।
আত্মীয়তা রক্ষা করা ও আত্মীয়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করাকে صلة الأرحام বলে। صلة অর্থ মেলানো, জোড়ানো। الأرحام শব্দটি رحم এর বহুবচন। رحم এর মূল অর্থ গর্ভাশয়। رحم বা গর্ভাশয় থেকে সন্তানের জন্মকে কেন্দ্র করে যেহেতু আত্মীয়তার সৃষ্টি, তাই আত্মীয়তা অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং صلة الأرحام অর্থ যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা। এ সম্পর্কটি সর্বপ্রথম স্থাপিত হয় সন্তান-সন্ততি ও পিতা-মাতার মধ্যে। তাই صلة الأرحام ও আত্মীয়তারক্ষা বিষয়ে এদের অবস্থানই সর্বোচ্চে। তাদের পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে জন্মসূত্র সম্পর্কিত অন্যান্য আত্মীয়বর্গ, যেমন দাদা-দাদী, নানা-নানী, ভাইবোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা ও তাদের বংশধরগণ। সুতরাং সাধারণভাবে পিতা-মাতার আনুগত্য করা صلة الأرحام -এর অন্তর্ভুক্ত হলেও এ ক্ষেত্রে পিতা-মাতার স্থান যেহেতু সর্বোচ্চে, তাই ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ের শিরোনামে তাদের জন্য بر الوالدين শব্দবন্ধকে প্রথমে উল্লেখ করেছেন, তারপর পৃথকভাবে অন্যান্য আত্মীয়বর্গের জন্য صلة الأرحام শব্দযূথ ব্যবহার করেছেন।
ইসলামে পিতা-মাতার আনুগত্য ও সেবাযত্ন করা এবং আত্মীয়তারক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এর ফযীলতও বিশাল। কুরআন মাজীদ ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছে এ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা আছে। ইমাম নববী রহ. সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ এ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতাআলাই তাওফীক দাতা।

‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তারক্ষা' সম্পর্কিত কিছু আয়াত

• এক নং আয়াত

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ

অর্থ : তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না। পিতা- মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গে বসা (বা দাঁড়ানো) ব্যক্তি, পথচারী এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও (সদ্ব্যবহার কর)।৫২

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীর হুকুম দেওয়ার পর কয়েক শ্রেণীর বান্দার হক আদায় ও তাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের আদেশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে পিতা-মাতা।

আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীর আদেশদানের পরপর পিতা-মাতার প্রতি ভালো ব্যবহার করার আদেশ দেওয়ার কারণ বাহ্যত এই যে, আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন মানুষের সৃষ্টিকর্তা । তারপর পিতা-মাতা তাদের দুনিয়ায় আসার মাধ্যম। মানুষের অস্তিত্বলাভে আল্লাহ তাআলার সৃজনক্ষমতাই আসল। তারপর পিতা-মাতার যেহেতু একটা বাহ্যিক ভূমিকা আছে, তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করার পর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশিই হওয়ার কথা ।
আয়াতটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা এর আগের অধ্যায়ে গত হয়েছে।

• দুই নং আয়াত
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ

অর্থ : আল্লাহকে ভয় কর, যার অছিলা দিয়ে তোমরা একে অন্যের কাছে (নিজেদের হক) চেয়ে থাক ।৫৩

ব্যাখ্যা

দুনিয়ায় মানুষ যখন একে অন্যের কাছে নিজের প্রাপ্য অধিকার দাবি করে, তখন অধিকাংশ সময়ই বলে থাকে, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে তুমি আমাকে আমার পাওনা মিটিয়ে দাও,। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলছেন যে, তোমরা যখন নিজেদের হক ও প্রাপ্য অধিকারসমূহের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে অছিলা বানাও, তখন অন্যদের হক আদায়ের ব্যাপারেও আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর এবং মানুষের সর্বপ্রকার হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করে দাও। (তাওযীহুল কুরআন)

আয়াতটিতে এর আগে আছে-

يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

'হে লোক সকল! নিজ প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এক ব্যক্তি হতে এবং তারই থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয় থেকে বহু নর-নারী (পৃথিবীতে) ছড়িয়ে দিয়েছেন।'
পূর্ণ আয়াতটিতে পর্যায়ক্রমে মৌলিক তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে-
ক. সৃষ্টিকর্তা হওয়ার কারণে এক আল্লাহকে ভয় করা ও কেবল তাঁরই ইবাদত-আনুগত্য করা।
খ. একই আদম-সন্তান হওয়ার কারণে সমস্ত মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা। কোনও অবস্থায়ই কারও কোনও অধিকার হরণ না করা।
গ. অন্যান্য মানুষ অপেক্ষা আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বেশি থাকায় তাদের অধিকারও যেহেতু অন্যদের তুলনায় বেশি, তাই তাদের অধিকারসমূহ আদায়ে অধিকতর যত্নবান থাকা ।

• তিন নং আয়াত

وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ

অর্থ : আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তারা তা বজায় রাখে।৫৪

ব্যাখ্যা

এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বুঝানো হয়েছে। এ আয়াতটিসহ এর আগের ও পরের কয়েকটি আয়াতে প্রকৃত বুদ্ধিমানের কিছু সদ্‌গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ধৈর্যধারণ করা, নামায পড়া, আল্লাহর পথে প্রকাশ্যে ও গোপনে খরচ করা, মন্দ ব্যবহারের জবাবে ভালো ব্যবহার করা এবং আল্লাহ তাআলা যে সম্পর্ক রক্ষা করার হুকুম দিয়েছেন সেই সম্পর্ক অর্থাৎ আত্মীয়তা রক্ষা করা। এসব গুণ যারা অর্জন করতে সক্ষম হয় তাদের পরিণাম শুভ। অর্থাৎ তারা জান্নাতবাসী হবে।
আত্মীয়তা রক্ষা করা মানে আত্মীয়দের খোঁজখবর রাখা, সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। ভালো ব্যবহার করার মানে তারা দুর্ব্যবহার করলেও তার জবাবে দুর্ব্যবহার না করা; বরং ক্ষমা করা এবং সর্বদা সুসম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট থাকা। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِي، وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ : الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا

‘ওই ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষাকারী নয়, যে কেবল (সদ্ব্যবহারের) প্রতিদান দেয়। বরং আত্মীয়তা রক্ষাকারী সে-ই, যার সঙ্গে আত্মীয়তা ছিন্ন করা হলে সে তা পুনঃস্থাপন করে।,৫৫


• চার নং আয়াত

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا

অর্থ : আমি মানুষকে আদেশ করেছি তারা যেন পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে ।৫৬

ব্যাখ্যা

পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার সম্পর্কে এ আয়াতটি একটি মূলনীতির মর্যাদা রাখে। পরিপূর্ণ আয়াতটি এরকম-

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

‘আমি মানুষকে আদেশ করেছি তারা যেন পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে। তারা যদি আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য তোমার উপর বলপ্রয়োগ করে, যার সম্পর্কে তোমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই, তবে সে ব্যাপারে তাদের কথা মানবে না। আমারই কাছে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তোমাদেরকে অবহিত করব তোমরা কী করতে।'
আয়াতটি নাযিল হয়েছে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. ও তাঁর মা হামনা বিনত আবূ সুফয়ানকে কেন্দ্র করে। আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত বিখ্যাত সাহাবী হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. ইসলামের প্রথম যুগেই ঈমান এনেছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মাতৃভক্ত। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর মা তাঁর প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। তিরস্কার করে বললেন, তুমি বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে নতুন এক ধর্ম গ্রহণ করেছ! আল্লাহর কসম, তুমি যতক্ষণ না এ নতুন ধর্ম ত্যাগ করে বাপ-দাদার ধর্মে ফিরে আসবে, ততক্ষণ আমি কিছু খাব না, কিছু পানও করব না। এভাবেই মরে যাব। ফলে চিরকাল মানুষ এই বলে তোমার নিন্দা করবে যে, তুমি তোমার মাকে হত্যা করেছ। এতে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. খুব পেরেশান হয়ে যান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আলোচ্য আয়াত নাযিল করেন।
এতে প্রথমত পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে হুকুম দেওয়া হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, পিতা-মাতা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করার হুকুম দিলে তা মানা যাবে না। আল্লাহর সঙ্গে শরীক করাকে একটি অজ্ঞতাপ্রসূত কাজ সাব্যস্ত করা হয়েছে। নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান কেবল আল্লাহ তাআলারই আছে। মানুষের জ্ঞান ত্রুটিপূর্ণ ও অপূর্ণ। কাজেই আল্লাহ তাআলার হুকুমের বিপরীত কেউ কোনও হুকুম দিলে তা অজ্ঞতাপ্রসূতই বটে। যাবতীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস অজ্ঞতাপ্রসূত বিশ্বাস এবং যাবতীয় পাপাচার ও নাফরমানির কাজ অজ্ঞতারই পরিচায়ক, তা বাহ্যদৃষ্টিতে মানুষের কাছে যতই জ্ঞান-যুক্তিভিত্তিক সাব্যস্ত হোক না কেন।
এর দ্বারা বুঝা গেল, আল্লাহর নাফরমানি হয় এমন কোনও কাজে মানুষের আনুগত্য করা জায়েয নয়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ، إِنَّمَا الطَاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ

‘আল্লাহর নাফরমানির কাজে বান্দার কোনও আনুগত্য নেই। বান্দার আনুগত্য করা যায় কেবল সৎকাজে।,৫৭
যাহোক আয়াতটি নাযিল হলে হযরত সা'দ রাযি.-এর পেরেশানি দূর হয়। তিনি নিজ করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা পেয়ে যান। ইমাম বাগাবী রহ.-এর বর্ণনায় আছে, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি.-এর মা একদিন একরাত অনাহারে কাটান, কিন্তু তবুও হযরত সা'দ রাযি. সত্যদীনের উপর অবিচল থাকেন। তিনি মায়ের কাছে এসে বললেন, আম্মা, আপনার যদি একশ'টিও প্রাণ থাকত এবং একটি একটি করে তার সবগুলো বের হয়ে যেত, তবুও আমি আমার এ দীন পরিত্যাগ করতাম না। এবার আপনার ইচ্ছা হলে পানাহার গ্রহণ করুন আর না হয় অনাহারেই থাকুন। তার মা বুঝে ফেললেন যে, পুত্রকে তার নতুন ধর্ম থেকে টলানো যাবে না। নিরাশ হয়ে পানাহার শুরু করে দিলেন।

• পাঁচ নং আয়াত

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا (23) وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

অর্থ : তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ্ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো আর দু'আ করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন।৫৮

ব্যাখ্যা

এ দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার সম্পর্কে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। শুরুতে কেবল আল্লাহ তাআলারই ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তারপর ইরশাদ হয়েছে- وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا (পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো)। এটা তাদের প্রতি সাধারণভাবে সদ্ব্যবহারের হুকুম। এরপর এ হুকুমের খানিকটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা দ্বারা সদ্ব্যবহারের বিশেষ কয়েকটি দিক পরিস্ফুট হয়েছে।

সুতরাং ইরশাদ হয়েছে—

إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ

(পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ্ পর্যন্ত বলো না)। ‘উফ্’ শব্দটি বিরক্তি প্রকাশক ও অপ্রীতিব্যাঞ্জক। উফ্ পর্যন্ত বলো না- এর অর্থ, তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করো না এবং তাদেরকে বিরক্তিসূচক কোনও কথা বলো না, যেমন তারা যদি কোনও কথা বার বার বলে বা অপ্রয়োজনীয় কোনও কথা বলে, যেমনটা বৃদ্ধ ও শিশুরা করে থাকে, তখন বিরক্তির সাথে তার জবাব দিও না।
আয়াতে পিতা-মাতার সঙ্গে উফ্ বা বিরক্তিসূচক কোনও শব্দ ব্যবহার নিষেধ করার দ্বারা বুঝা গেল এটা জায়েয নয়। পিতা-মাতার সঙ্গে যখন এরূপ শব্দ ও ভাষা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তখন তাদেরকে সরাসরি কষ্ট দেওয়া যে আরও কতটা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ হবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু অনেক সময় সেদিকে লক্ষ রাখা হয় না। কেউ তো পিতা- মাতাকে খাওয়ায় কষ্ট দেয়। কেউ বা পোশাক-আশাকে। অনেকে তাদের স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ রাখে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না। এদিকেও লক্ষ করা হয় না যে, পিতা-মাতা যে ঘরে বা যে কামরায় থাকে তা তাদের পক্ষে কষ্টদায়ক নয় তো! মোটকথা তাদের শারীরিক বা মানসিক কষ্ট নানাভাবেই দেওয়া হয়ে থাকে। তা সবই এ আয়াতের হুকুমের পরিপন্থী। এ ব্যাপারে প্রত্যেক সন্তানের সচেতন থাকা উচিত। আবার অনেকে তো পিতা-মাতাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণও করে। আয়াতে পরের বাক্যে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে- وَلَا تَنْهَرْهُمَا (এবং তাদেরকে ধমক দিও না)। অনেক সময় পিতা-মাতার কোনও কথা বা কোনও কাজ পসন্দ না হলে সন্তান তাদেরকে ধমক দিয়ে বসে। পসন্দ-অপসন্দের বিষয়টি কখনও রুচি-প্রকৃতির প্রভেদের কারণেও হয় এবং কখনও হয় সময়ের ব্যবধানের কারণে। সন্তানকে এটা বুঝতে হবে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার রুচি-অভিরুচি কেন আমার মত নয় কিংবা পিতা-মাতা কেন আমার সময়কালের রুচি-অভিরুচি বুঝতে পারে না, কেন লোকজনের সামনে সময়োপযোগী কথা বলে না—এসব বিবেচনায় তাদের প্রতি বিরক্ত না হয়ে বরং সন্তানের কর্তব্য হবে পিতা-মাতার দীর্ঘদিনের অভ্যাসকে সম্মান জানানো ও তাদের লালিত রুচি-প্রকৃতির মূল্য দেওয়া। এভাবে চিন্তা করা হয় না বলেই অনেক সন্তান পিতা-মাতার আচরণে যন্ত্রণাবোধ করে। ফলে বিরক্ত হয়ে অনেক সময় ধমক দিয়ে বসে। কোনও কোনও দুর্ভাগা তো রীতিমত গালাগালিই করে। এটা অত্যন্ত ধ্বংসকর আচরণ। এরূপ অবাধ্য সন্তান নিজ আখেরাত তো বরবাদ করেই, দুনিয়ায়ও তাকে কঠিন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

كُلُّ الذُّنُوبِ يَغْفِرُ اللهُ مِنْهَا مَا شَاءَ إِلَّا عُقُوْقَ الْوَالِدَيْنِ، فَإِنَّهُ يُعَجِّلُ لِصَاحِبِهِ فِي الْحَيَاةِ قَبْلَ الْمَمَاتِ

‘সমস্ত পাপের ক্ষেত্রেই নিয়ম এই যে, আল্লাহ তাআলা তা থেকে যা ইচ্ছা মাফ করে দেবেন। কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতা এর ব্যতিক্রম। কেননা আল্লাহ এই অপরাধের অপরাধীকে মৃত্যুর আগে এ দুনিয়ায়ই নগদ শাস্তি দিয়ে দেন।,৫৯
সুতরাং প্রত্যেক সন্তানের এরূপ আচরণ থেকে বিরত হওয়া একান্ত কর্তব্য। সর্বাবস্থায়ই সন্তানদেরকে পিতা-মাতার সঙ্গে শান্তিদায়ী আচরণ করতে হবে। কথা বলতে হবে সম্মানজনক। সুতরাং এর পরবর্তী বাক্যে ইরশাদ হয়েছে-

وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

(বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো)। অর্থাৎ যখনই তাদের সঙ্গে কথা বলবে, তখন মাথায় এই চিন্তা-চেতনা জাগ্রত রেখে কথা বলবে যে, তারা আমার পিতা-মাতা, সর্বাপেক্ষা শ্রদ্ধাভক্তির পাত্র। কেউ কেউ বলেন, একজন কঠোর স্বভাবের মানবের সঙ্গে তার অনুগত ও বাধ্যগত গোলাম যেমন নম্র ও বিনীত ভঙ্গিতে কথা বলে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে ঠিক সেইভাবে কথা বলতে হবে। পরবর্তী আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ

(এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো)। অর্থাৎ তাদের জন্য তোমার দু'হাত নম্র-কোমল রাখ। এর দ্বারা তাদের প্রতি বিনীত ও উদার থাকতে হুকুম করা হয়েছে। কাজেই তাদের সঙ্গে আচার-আচরণ করতে হবে অত্যন্ত আদবের সঙ্গে। খুব সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনও অবস্থায়ই তাদের সঙ্গে বেআদবী না হয়ে যায়। এমনিভাবে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের প্রয়োজন পূরণেও সচেষ্ট থাকতে হবে। তাদের যা-কিছু পসন্দ তা পূরণে অকাতরে টাকাপয়সা খরচ করবে।
বলা হয়েছে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি আচরণ করতে হবে মমতাপূর্ণ। কেননা আজ তারা বার্ধক্যের কারণে তোমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্মরণ কর, আজ তারা যেমন তোমার উপর নির্ভরশীল, তেমনি তুমিও একদিন তাদের উপর এরকম নির্ভরশীল ছিলে। তখন তারা পরম মমতায় নিজেদের সুখ ও আরাম ভুলে তোমার সুখ ও আরামের প্রতি লক্ষ রাখতেন। কাজেই আজ তাদের এই দুর্বল অবস্থায় তোমারও উচিত সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে তাদের প্রতি মমত্বপূর্ণ আচরণ করে যাওয়া।
এ তো গেল পিতা-মাতার সেবাযত্নে নিজ শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করার ব্যাপার। প্রকৃত সুখ-শান্তিদাতা তো আল্লাহ তাআলাই । আল্লাহ তাআলা না চাইলে কোনও বান্দা হাজার চেষ্টা করেও কাউকে সুখ দিতে পারে না। বিশেষত আখেরাতের মুক্তি ও নাজাতের ব্যাপারে কেউ তো বাহ্যিকভাবেও কিছু করতে পারে না। তা সম্পূর্ণই আল্লাহ তাআলার এখতিয়ারে। তাই সন্তানের কর্তব্য পিতা-মাতার প্রতি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি তাদের দোজাহানের শান্তি ও মুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করাও। আয়াতের পরবর্তী অংশে সে দুআই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে—

وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

(আর দু'আ করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন)। অর্থাৎ আমি যখন নিতান্তই দুর্বল ছিলাম, তখন তারা আমার লালন-পালনের জন্য নিজের সমস্ত সুখ ও আরাম বিসর্জন দিয়েছিলেন। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তারা আমার আরাম ও কল্যাণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। কোনও বিপদ-আপদ যাতে আমাকে স্পর্শ করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন। এমনকি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য তারা প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত থাকতেন। আজ তারা বয়সের ভারে ক্লান্ত-শ্রান্ত। হে আল্লাহ! আপনার তাওফীকে আমি তো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের খেদমত করে যাচ্ছি। কিন্তু সন্তান হিসেবে যা কর্তব্য তা ঠিক পালন করা হচ্ছে না। সুতরাং হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নিবেদন করছি, আপনি আজ তাদের প্রতি নিজ রহমত জারি রাখুন এবং মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি আপন দয়ামায়ার আচরণ করুন।

• ছয় নং আয়াত

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

অর্থ : আমি মানুষকে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি- (কেননা) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু' বছরে- তুমি শোকর আদায় কর আমার এবং তোমার পিতা-মাতার। আমারই কাছে (তোমাদেরকে) ফিরে আসতে হবে।৬০

ব্যাখ্যা

এটি সূরা লুকমানের ১৪ নং আয়াত। এর পরের আয়াতটি এরকম-

وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

‘তারা যদি এমন কাউকে (প্রভুত্বে) আমার সমকক্ষ সাব্যস্ত করার জন্য তোমাকে চাপ দেয়, যে সম্পর্কে তোমার কোনও জ্ঞান নেই, তবে তাদের কথা মানবে না। অবশ্য দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে থাকবে। এমন ব্যক্তির পথ অবলম্বন করো, যে একান্তভাবে আমার অভিমুখী হয়েছে। অতঃপর তোমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তোমাদেরকে অবহিত করব তোমরা যা-কিছু করতে।৬১
এ আয়াতদু'টির আগে ও পরে হযরত লুকমান আলাইহিস সালামের উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। সে উপদেশ তিনি করেছিলেন নিজ পুত্রকে লক্ষ্য করে। তাতে পুত্রকে সাবধান করেছিলেন যেন কিছুতেই আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে। তাঁর উপদেশের মাঝখানে এ দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বিশেষভাবে পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিরক পরিহারের নির্দেশের সাথে এর সম্পর্ক এই যে, হযরত লুকমান তো নিজ পুত্রকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার ও তাওহীদকে আঁকড়ে ধরার উপদেশ দিচ্ছিলেন, অপর দিকে মক্কা মুকাররমার মুশরিকগণ হযরত লুকমানকে একজন মহাজ্ঞানী লোক হিসেবে স্বীকার করা সত্ত্বেও, যখন তাদের সন্তানগণ তাওহীদী আকীদা অবলম্বন করল, তখন তারা তাদেরকে তা থেকে ফেরানোর এবং পুনরায় শিরকে লিপ্ত করার জন্য জোরদার চেষ্টা করছিল। তাদের মুমিন সন্তানগণ এক্ষেত্রে পিতা-মাতার সঙ্গে কীরূপ আচরণ করবে তা নিয়ে বেজায় পেরেশান ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত দ্বারা তাদেরকে পথনির্দেশ করছেন যে, আমিই মানুষকে আদেশ করেছি, তারা যেন আল্লাহ তাআলার সাথে তাদের পিতা-মাতারও শোকর আদায় করে। কেননা যদিও তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা, কিন্তু বাহ্যিক কারণ হিসেবে তাদের দুনিয়ায় আগমনের পেছনে পিতা-মাতার ভূমিকাই প্রধান।
পিতা-মাতার মধ্যেও আবার বিশেষভাবে মায়ের কষ্ট-মেহনতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ

(তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু' বছরে)। মা কতইনা কষ্টের সাথে তাকে নিজ গর্ভে ধারণ করে রাখেন। তারপর একটানা দু'বছর তাকে দুধ পান করায়। বলাবাহুল্য শিশুর লালন-পালনের সুদীর্ঘ সময়ের ভেতর দুধ পানের সময়টাই মায়ের জন্য বেশি কষ্ট-ক্লেশের হয়ে থাকে। এসব কারণে মা'ই সন্তানের পক্ষ হতে সদ্ব্যবহারের বেশি হকদার। কিন্তু এই সদ্ব্যবহারের অর্থ এ নয় যে, মানুষ তার দীন ও ঈমানের প্রশ্নে আল্লাহ তাআলার হুকুমকে পাশ কাটিয়ে পিতা-মাতার হুকুম মানতে শুরু করে দেবে।
এ বিষয়টা স্মরণে রাখার জন্যই আয়াতে পিতা-মাতার শোকর আদায়ের নির্দেশ দেওয়ার আগে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ (তুমি শোকর আদায় কর আমার এবং তোমার পিতা-মাতার)। কেননা পিতা-মাতা তো এক বাহ্যিক 'কারণ' ও মাধ্যম মাত্র। মানুষের প্রতিপালনের ব্যবস্থা হিসেবে এ কারণ আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃত স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তাআলাই। কাজেই এই বাহ্যিক কারণ ও মাধ্যমের গুরুত্ব কখনওই প্রকৃত স্রষ্টা ও আসল প্রতিপালকের গুরুত্ব অপেক্ষা বেশি হতে পারে না। তাই বলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা যাবে না। ইরশাদ হয়েছে- وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا (অবশ্য দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে থাকবে)।
অর্থাৎ দীনের ব্যাপারে পিতা-মাতা কোনও অন্যায় কথা বললে তা মানা তো জায়ে হবে না, কিন্তু তাদের কথা এমন পন্থায় রদ করা যাবে না, যা তাদের জন্য কষ্টদায়ক হয় বা যাতে তারা নিজেদেরকে অপমানিত বোধ করে। বরং তাদেরকে নম্র ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে, আমি আপনাদের কথা মানতে অপারগ।
কেবল এতটুকুই নয়, বরং সাধারণভাবে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই তাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে। তাদের খেদমত করতে হবে, আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য করতে হবে এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের সেবা-যত্ন করতে হবে ইত্যাদি। মূলত এ নসীহতের সম্পর্ক পিতা-মাতার খেদমতের সঙ্গে। তাদের আনুগত্য করা যাবে কেবল এমন বিষয়েই, যা শরীআতসম্মত হয়। সুতরাং আয়াতের পরের অংশে ইরশাদ হয়েছে-

وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

(এমন ব্যক্তির পথ অবলম্বন করো, যে একান্তভাবে আমার অভিমুখী হয়েছে। অতঃপর তোমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তোমাদেরকে অবহিত করব তোমরা যা-কিছু করতে)। অর্থাৎ মাতা-পিতা ভ্রান্ত পথে থাকলে তাদের পথ অবলম্বন করা যাবে না কিছুতেই; বরং পথ অবলম্বন করতে হবে কেবল তাদেরই, যারা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। অর্থাৎ কেবল তাঁরই ইবাদত ও আনুগত্য করে।
এর ভেতর এই ইঙ্গিতও রয়েছে যে, দীনের অনুসরণও কেবল নিজ বুদ্ধি-বিবেচনার ভিত্তিতে করা ঠিক নয়; বরং যারা আল্লাহ তাআলার আশেক ও তাঁর পরিপূর্ণ অনুগত বলে পরিষ্কারভাবে জানা আছে, দেখতে হবে তারা দীনের অনুসরণ করে কিভাবে এবং তাদের আমলের ধরন কী? তারা যে কাজ যেভাবে করেন ঠিক সেভাবেই তা সম্পাদন করা চাই। সমস্ত আমলে তাদেরই পথ অনুসরণ করা চাই। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে এবং যথার্থই বলা হয়ে থাকে যে, ব্যক্তিগত পড়াশোনার ভিত্তিতে কুরআন ও হাদীছের এমন কোনও ব্যাখ্যা করা ও তা থেকে এমন কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কিছুতেই সমীচীন নয়, যা উম্মতের উলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দীন থেকে প্রাপ্ত ব্যাখ্যার পরিপন্থী। (তাওযীহুল কুরআন)

৫২. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩৬

৫৩. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১

৫৪. সূরা রা'দ (১৩), আয়াত ২১

৫৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৭৮৫; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৮; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২১৯; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৫৬২৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৪২

৫৬. সূরা আনকাবূত (২৯), আয়াত ৮

৫৭. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৪০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৬২৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪২০৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭২৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৫৬৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬০৯

৫৮. সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৩,২৪

৫৯. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫০৬; খারাইতী, মাসাবিউল আখলাক, হাদীছ নং ২৩৬

৬০. সূরা লুকমান (৩১), আয়াত ১৪

৬১. সূরা লুকমান (৩১), আয়াত ১৫
কোন্ আমল আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়
হাদীছ নং : ৩১২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে কোন্ আমল সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়? তিনি বললেন, ‘ওয়াক্তমত নামায পড়া,। জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্বব্যবহার করা,। ফের জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা,-বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৭৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮২; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৬১০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৮৯০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১৪৭৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ১৯৩০৮; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৯৮০২
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
قَالَ الله تَعَالَى: {وَاعْبُدُوا اللهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ (1) وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ} [النساء: 36]، وَقالَ تَعَالَى: {وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَام} [النساء: 1]، وَقالَ تَعَالَى: {وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ} [الرعد: 21]، وَقالَ تَعَالَى: {وَوَصَّيْنَا الأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا} [العنكبوت: 8]، وَقالَ تَعَالَى: {وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا} [الإسراء: 23 - 24]، وَقالَ تَعَالَى: {وَوَصَّيْنَا الأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْك} [لقمان: 14].
312 - وعن أَبي عبد الرحمان عبد الله بن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: سألت النبي - صلى الله عليه وسلم: أيُّ العَمَلِ أحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالَى؟ قَالَ: «الصَّلاةُ عَلَى وَقْتِهَا»، قُلْتُ: ثُمَّ أي؟ قَالَ: «بِرُّ الوَالِدَيْنِ»، قُلْتُ: ثُمَّ أيٌّ؟ قَالَ: «الجِهَادُ في سبيلِ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩১৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
সস্তানের পক্ষে পিতা-মাতাকে প্রতিদান দেওয়া সম্ভব কি
হাদীছ নং : ৩১৩

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও সন্তানই তার পিতাকে প্রতিদান দিতে পারে না তবে সে যদি তাকে দাসরূপে পায়, তারপর তাকে কিনে আযাদ করে দেয় ( আলাদা কথা) -মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৫১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৬; নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৮৭৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৫৯
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
313 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَجْزِي وَلَدٌ وَالِدًا إِلاَّ أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكًا، فَيَشْتَرِيهُ فَيُعْتِقَهُ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৩১৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মুমিনের জন্য অবশ্যকরণীয় কয়েকটি কাজ
হাদীছ নং : ৩১৪

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার আত্মীয়তা রক্ষা করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে নয়তো চুপ থাকে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬১৩৮
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
314 - وعنه أيضًا - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩১৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
আত্মীয়তা ছিন্ন করার ভয়াবহ পরিণাম
হাদীছ নং : ৩১৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা মাখলুক সৃষ্টি করলেন। তাদের সৃষ্টিকর্ম সমাপ্ত হলে ‘রাহিম, (আত্মীয়তা) দাঁড়িয়ে গেল। সে বলল, এটা তার স্থান যে ছিন্ন হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় গ্রহণ করে। তিনি বললেন, হাঁ। তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও, যে ব্যক্তি তোমাকে জুড়ে রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে রাখব আর যে ব্যক্তি তোমাকে ছিন্ন করবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব? সে বলল, হাঁ, আমি তাতে সন্তুষ্ট। আল্লাহ বললেন, এটা তোমাকে দেওয়া হলো। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা চাইলে পাঠ করতে পার-
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (22) أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ
('অতঃপর তোমরা (জিহাদ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলে কি তোমাদের দ্বারা ভূমিতে অশান্তি বিস্তার এবং রক্তের আত্মীয়তা ছিন্ন করার সম্ভাবনা আছে? এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন (অর্থাৎ তাঁর রহমত থেকে দূর করে দিয়েছেন। ফলে তাদেরকে বধির বানিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন)৬৬ -বুখারী ও মুসলিম । ৬৭
বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে- مَنْ وَصَلَكِ وَصَلْتُهُ، وَمَنْ قَطَعَكِ قَطَعْتُهُ
এ বর্ণনায় শব্দগত পার্থক্য থাকলেও অর্থ একই।

৬৬. সূরা মুহাম্মাদ (৪৭), আয়াত ২২-২৩

৬৭. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৮৩০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৫৪; মুসনাদে আহমাদ,হাদীছ নং
৮৩৬৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪১; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৯৮০২; বায়হাকী, আসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২১৭; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৫৫৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৩১
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
315 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ الخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْهُمْ قَامَتِ الرَّحِمُ، فَقَالَتْ: هَذَا مُقَامُ العَائِذِ بِكَ مِنَ القَطِيعةِ، قَالَ: نَعَمْ، أمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أصِلَ مَنْ وَصَلَكِ، وَأقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ؟ قَالَتْ: بَلَى، قَالَ: فَذَلِكَ لَكِ، ثُمَّ قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «اقْرَؤُوا إنْ شِئْتمْ: {فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ} [محمد: 22 - 23] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية للبخاري: فَقَالَ الله تَعَالَى: «مَنْ وَصَلَكِ، وَصَلْتُهُ، وَمَنْ قَطَعَكِ، قَطَعْتُهُ».
হাদীস নং: ৩১৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মায়ের হক ও অধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব
হাদীছ নং : ৩১৬

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে আমার কাছ থেকে উত্তম সোহবতের সর্বাপেক্ষা বেশি হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা -বুখারী ও মুসলিম ।৬৯
অপর এক বর্ণনায় আছে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার উত্তম সোহবতের সর্বাপেক্ষা বেশি হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। তারপর বললেন, তোমার মা। তারপর বললেন, তোমার পিতা। তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার নিকটজন, তোমার নিকটজন।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৪৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৯৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৩৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৩৪৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৩৩; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৯৫৭; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৭৫৫
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
316 - وعنه - رضي الله عنه - قَالَ: جاء رجل إِلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رَسُول الله، مَنْ أحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي؟ قَالَ: «أُمُّكَ» قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»، قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»، قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «أبُوكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: يَا رَسُول الله، مَنْ أَحَقُّ بحُسْنِ الصُّحْبَةِ؟ قَالَ: «أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أَبَاكَ، ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاكَ».
«وَالصَّحَابَةُ» بمعنى: الصحبةِ. وقوله: «ثُمَّ أباك» هكذا هُوَ منصوب بفعلٍ محذوفٍ، [ص:107] أي: ثُمَّ بُرَّ أبَاكَ. وفي رواية: «ثُمَّ أبوك»، وهذا واضح.
হাদীস নং: ৩১৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পাওয়ার সৌভাগ্য সত্ত্বেও জান্নাত লাভ করতে না পারার দুর্ভাগ্য
হাদীছ নং : ৩১৭

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলোমলিন হোক, ওই ব্যক্তির নাক ধুলোমলিন হোক, ওই ব্যক্তির নাক ধুলোমলিন হোক, যে তার পিতা-মাতার উভয়কে বা তাদের কোনও একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, তা সত্ত্বেও জান্নাতে প্রবেশ করল না -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৫১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৫৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৫৫৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১০৮; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫০৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫০০; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ২১)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
317 - وعنه، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «رغِم أنفُ، ثُمَّ رَغِمَ أنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أنْفُ مَنْ أدْرَكَ أبَويهِ عِنْدَ الكِبَرِ، أَحَدهُما أَوْ كِليهمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الجَنَّةَ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৩১৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
অসদাচারী আত্মীয়ের অশুভ পরিণাম ও সদাচারী আত্মীয়ের পুরস্কার
হাদীছ নং : ৩১৮

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এমনকিছু আত্মীয় আছে, যাদের সঙ্গে আমি সুসম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের দুর্ব্যবহারে সহনশীলতার পরিচয় দিই, কিন্তু তারা আমার প্রতি অসংযত আচরণ করে। তিনি বললেন, তুমি যেমন বললে যদি সেরকমই হয়ে থাক তবে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাওয়াচ্ছ। তুমি যতক্ষণ তোমার এই নীতির উপর থাকবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে তোমার একজন সাহায্যকারী থাকবে -মুসলিম৭৪
ইমাম নববী রহ. বলেন, المل অর্থ ‘গরম ছাই’। তাদের গুনাহকে গরম ছাইয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কেউ গরম ছাই খেলে সে যেমন কষ্ট পায়, তেমনি দুর্ব্যবহারকারীগণও গুনাহের কারণে কষ্টের সম্মুখীন হবে। তাদের দুর্ব্যবহারে সদ্ব্যবহারকারীর কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু তার হক নষ্ট করা ও তাকে কষ্ট দেওয়ার কারণে দুর্ব্যবহারকারীদের কঠিন পাপ হয়।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৫৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৫০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৯৯২; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৫২; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫৮৩; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৭৮৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৩৭
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
318 - وعنه - رضي الله عنه: أن رجلًا قَالَ: يَا رَسُول الله، إنّ لِي قَرابةً أصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوني، وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ، وَأحْلَمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ، فَقَالَ: «لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكأنَّمَا تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذلِكَ». رواه مسلم. (1)
«وَتُسِفُّهُمْ» بضم التاء وكسرِ السين المهملة وتشديد الفاءِ، «وَالمَلُّ» بفتح الميم، وتشديد اللام وَهُوَ الرَّمادُ الحَارُّ: أيْ كَأنَّمَا تُطْعِمُهُمُ الرَّمَادَ الحَارَّ، وَهُوَ تَشبِيهٌ لِمَا يَلْحَقَهُمْ من الإثم بما يلحَقُ آكِلَ الرَّمَادِ الحَارِّ مِنَ الأَلمِ، وَلاَ شَيءَ عَلَى هَذَا المُحْسِنِ إلَيهمْ، لكِنْ يَنَالُهُمْ إثمٌ عَظيمٌ بتَقْصيرِهم في حَقِّهِ، وَإدْخَالِهِمُ الأَذَى عَلَيهِ، وَاللهُ أعلم.
হাদীস নং: ৩১৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
আত্মীয়ের প্রতি সদ্ব্যবহার দ্বারা রিযিক ও আয়ু বৃদ্ধি
হাদীছ নং : ৩১৯

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তার রিযিক প্রশস্ত করা হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি করা হোক, সে যেন আত্মীয়তা রক্ষা করে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৫৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৯৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৩৫৮৫; আল- আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৫৬; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২২১; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫৭২; তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ৫৬২৬)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
319 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «من أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ في رِزْقِهِ، ويُنْسأَ لَهُ في أثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
ومعنى «ينسأ لَهُ في أثرِهِ»، أي: يؤخر لَهُ في أجلِهِ وعمرِهِ.
হাদীস নং: ৩২০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
নিজের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আত্মীয়দের জন্য উৎসর্গ করা
হাদীছ নং : ৩২০

হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি খেজুর বাগানের কারণে হযরত আবূ তালহা রাযি. মদীনায় সর্বাপেক্ষা বেশি সম্পদশালী ছিলেন। তার কাছে তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ ছিল বায়রাহা নামক বাগানটি। বাগানটি ছিল মসজিদের সামনেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বাগানে প্রবেশ করতেন এবং তার (অর্থাৎ বাগানের মধ্যকার একটি কুয়ার) মিষ্টি পানি পান করতেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলো-
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ
‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে', তখন আবূ তালহা রাযি. উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি আয়াত নাযিল করেছেন—
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ
আর আমার কাছে আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ হলো বায়রাহা বাগানটি। আমি এটা আল্লাহ তাআলার জন্য সদাকা করে দিলাম। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে এর পুণ্য ও প্রতিদান আশা করি। সুতরাং ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা অনুযায়ী আপনি এটা যেখানে চান খরচ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহ! এটা তো লাভজনক সম্পদ। এটা তো লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বললে আমি তা শুনলাম। আমার মত হচ্ছে, তুমি এটা তোমার নিকটাত্মীয়দের দিয়ে দাও। আবূ তালহা রাযি. বললেন, আমি তাই করব ইয়া রাসূলাল্লাহ। সুতরাং আবূ তালহা রাযি. বাগানটি তার নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন - বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৬১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৪৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩৪০; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১০০০; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৯২০ শু‘আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৭৬; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ১৬৯৫)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
320 - وعنه، قَالَ: كَانَ أَبُو طَلْحَةَ أكْثَرَ الأنْصَارِ بالمَدينَةِ مَالًا مِنْ نَخل، وَكَانَ أحَبُّ أمْوَاله إِلَيْهِ بَيْرَحاء، وَكَانَتْ مسْتَقْبَلَةَ المَسْجِدِ، وَكَانَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يَدْخُلُهَا، وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّب، فَلَمَّا نَزَلَتْ هذِهِ الآيةُ: {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} [آل عمران: 92] قَامَ أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رَسُول الله، إنَّ الله تبارك وتَعَالَى، يقول: {لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ} وَإنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرَحَاءُ، وَإنَّهَا صَدَقَةٌ للهِ تَعَالَى، أرْجُو بِرَّهَا وَذُخْرَهَا عِنْدَ الله تَعَالَى، فَضَعْهَا يَا رَسُول الله، حَيْثُ أرَاكَ الله. فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «بَخ! ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ! وقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ، وَإنِّي أرَى أَنْ تَجْعَلَهَا في الأقْرَبينَ»، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ: أفْعَلُ يَا رَسُول الله، فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَةَ في أقَارِبِهِ وبَنِي عَمِّهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وسبق بيان ألفاظِهِ في باب الإنْفَاقِ مِمَّا يحب.