রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৬৭৯ টি

হাদীস নং: ৩২১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
হিজরত ও জিহাদের বায়আতপ্রত্যাশীকে পিতা-মাতার সেবায় নিয়োজিত থাকার পরামর্শ দান
হাদীছ নং : ৩২১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রতিদানের আশায় হিজরত ও জিহাদের বায়আত গ্রহণ করতে চাই। তিনি বললেন, তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কী? সে বলল, হাঁ, বরং উভয়ই জীবিত। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রতিদানের আশা কর তো? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তবে তুমি তোমার পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের প্রতি সদাচরণ কর -বুখারী ও মুসলিম।৮০
এটা মুসলিমের বর্ণনা। বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, জনৈক ব্যক্তি এসে তাঁর কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তবে তাদের মধ্যেই (সদাচরণ বজায় রাখার) জিহাদ কর।৮১
৮০. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৪৯; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৫৩; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৭৮২৯; শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৪৪৩

৮১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩০০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৪৯; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩১০৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৫৪৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩১৮; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৭৮২৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৬৩৮; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৯৯৮;
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
321 - وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، قَالَ: أقبلَ رَجُلٌ إِلَى نَبيِّ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: أُبَايِعُكَ عَلَى الهِجْرَةِ وَالجِهَادِ أَبْتَغي الأجْرَ مِنَ الله تَعَالَى. قَالَ: «فَهَلْ لَكَ مِنْ [ص:121] وَالِدَيْكَ أحَدٌ حَيٌّ؟» قَالَ: نَعَمْ، بَلْ كِلاهُمَا. قَالَ: «فَتَبْتَغي الأجْرَ مِنَ الله تَعَالَى؟» قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: «فارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ، فَأحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وهذا لَفْظُ مسلِم. (1)
وفي رواية لَهُمَا: جَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَأذَنَهُ في الجِهَادِ، فقَالَ: «أحَيٌّ وَالِداكَ؟»
قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَفيهِمَا فَجَاهِدْ».
হাদীস নং: ৩২২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষাকারী কে
হাদীছ নং : ৩২২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষাকারী নয়, যে কেবল (সদ্ব্যবহারের) প্রতিদান দেয়। বরং আত্মীয়তা রক্ষাকারী সে-ই, যার সঙ্গে আত্মীয়তা ছিন্ন করা হলে সে তা পুনঃস্থাপন করে -বুখারী।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৯১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৭৮৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২১৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩১৫৫; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৫৬২৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৪২)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
322 - وعنه، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَيْسَ الوَاصِلُ بِالمُكَافِىءِ، وَلكِنَّ الوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا». رواه البخاري. (1)
وَ «قَطَعَتْ» بِفَتح القَاف وَالطَّاء. وَ «رَحِمُهُ» مرفُوعٌ.
হাদীস নং: ৩২৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
আল্লাহ তাআলার সমীপে আত্মীয়তার ফরিয়াদ
হাদীছ নং : ৩২৩

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রাহিম’ (আত্মীয়তা) আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত আছে । সে বলে, যে ব্যক্তি আমাকে রক্ষা করে, আল্লাহ তা'আলা তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করুন। আর যে ব্যক্তি আমাকে ছিন্ন করে, আল্লাহ তা'আলাও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৫৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ২৫৩৮৮; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২১৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫৫৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৩৬)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
323 - وعن عائشة، قَالَتْ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالعَرْشِ تَقُولُ: مَنْ وَصَلَنِي، وَصَلَهُ اللهُ، وَمَنْ قَطَعَنِي، قَطَعَهُ اللهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩২৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মামা-খালাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার প্রতি উৎসাহদান
হাদীছ নং : ৩২৪

উম্মুল মুমিনীন হযরত মায়মূনা বিনতুল হারিছ রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি একটি দাসী আযাদ করেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি নেননি। অতঃপর তার পালার দিনে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন, তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি জানেন, আমি আমার দাসীটি আযাদ করে দিয়েছি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি তা করে ফেলেছ? তিনি বললেন, হাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শোন, তুমি যদি দাসীটি তোমার মামাদের দিয়ে দিতে তবে তোমার ছাওয়াব বেশি হত –বুখারী ও মুসলিম।(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৫৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৯০; নাসাঈ, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৯১১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৮১৭; তবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭১; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৭৬২)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
324 - وعن أم المؤمنين ميمونة بنتِ الحارث رضي الله عنها: أنَّهَا أعْتَقَتْ وَليدَةً وَلَمْ تَستَأذِنِ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فَلَمَّا كَانَ يَوْمُهَا الَّذِي يَدُورُ عَلَيْهَا فِيهِ، قَالَتْ: أشَعَرْتَ يَا رَسُول الله، أنِّي أعْتَقْتُ وَليدَتِي؟ قَالَ: «أَوَ فَعَلْتِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ. قَالَ: «أما إنَّكِ لَوْ أعْطَيْتِهَا أخْوَالَكِ كَانَ أعْظَمَ لأَجْرِكِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩২৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
অমুসলিম পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার
হাদীছ নং : ৩২৫

হযরত আসমা বিনত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুশরিকদের সঙ্গে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধি চলাকালে আমার মা আমার কাছে আসলেন। তিনি তখন মুশরিক। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমার কাছে এসেছে কিছু পাওয়ার আশাবাদী হয়ে। আমি কি আমার মায়ের প্রতি সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হাঁ, তোমার মায়ের প্রতি সদাচরণ কর -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬২০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৬৮; ৪৯১১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৫২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৯১৫; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৯৯৩২; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২০৩; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৮৩৩)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
325 - وعن أسماءَ بنتِ أَبي بكر الصديق رضي الله عنهما، قَالَتْ: قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشركةٌ في عَهْدِ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فاسْتَفْتَيْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قُلْتُ: قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ رَاغِبَةٌ، أفَأصِلُ أُمِّي؟ قَالَ: «نَعَمْ، صِلِي أُمَّكِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وَقَولُهَا: «رَاغِبَةٌ» أيْ: طَامِعَةٌ عِنْدِي تَسْألُني شَيْئًا؛ قِيلَ: كَانَتْ أُمُّهَا مِن النَّسَبِ، وَقيل: مِن الرَّضَاعَةِ، وَالصحيحُ الأول.
হাদীস নং: ৩২৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
ধনী স্ত্রীর পক্ষ হতে গরীব স্বামীর সাহায্য-সহযোগিতা
হাদীছ নং : ৩২৬

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি.-এর স্ত্রী যায়নাব ছাকাফিয়্যাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে নারী সম্প্রদায়! তোমরা সদাকা কর তোমাদের অলংকারাদি থেকে হলেও। যায়নাব বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের কাছে ফিরে আসলাম। তাকে বললাম, আপনি একজন নিম্নবিত্তের লোক । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সদাকা করতে হুকুম করেছেন। আপনি তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন, আমার পক্ষ থেকে আপনাকে সদাকা দেওয়া সঠিক হবে কি না? তা না হলে আমি সদাকা অন্যদেরকে দেব। আব্দুল্লাহ রাযি. বললেন, বরং তুমি গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস কর। সুতরাং আমি গেলাম। গিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরজায় এক আনসার মহিলা উপস্থিত রয়েছে। আমার ও তার প্রয়োজন একই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে ছিল স্বভাবজাত বীর্যবত্তা (কাছে যেতে ভয় লাগত)। ক্ষণিকের মধ্যেই বিলাল রাযি. আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে তাঁকে জানান, দরজায় দু'জন মহিলা অপেক্ষা করছে। তারা আপনার কাছে জানতে চাচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে তাদের স্বামীদেরকে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ইয়াতীমদেরকে সদাকা দেওয়া সঙ্গত হবে কি না? আপনি তাঁকে আমাদের পরিচয় দেবেন না। বিলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রবেশ করলেন এবং এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তারা দু'জন কে? তিনি বললেন, আনসারদের এক মহিলা ও যায়নাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কোন্ যায়নাব? বিলাল রাযি. বললেন, আব্দুল্লাহর স্ত্রী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাতে তাদের দ্বিগুণ ছাওয়াব আছে। আত্মীয়তার ছাওয়াব ও দান-সদাকার ছাওয়াব -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৫৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০০; নাসাঈ, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১৫৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীছ নং ২৪৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৭০৪৮; মুসনাদে আবূ ইয়ালা, হাদীছ নং ৬৫৮৫; ত্বহাবী, শারহু মাআনিল আছার, হাদীছ নং ৩০৩৩;)
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
326 - وعن زينب الثقفيةِ امرأةِ عبدِ الله بن مسعود رضي الله عَنْهُ وعنها، قَالَتْ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «تَصَدَّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ»، قَالَتْ: فَرَجَعْتُ إِلَى عبد الله بنِ مسعود، فقلتُ لَهُ: إنَّكَ رَجُلٌ خَفِيفُ ذَاتِ اليَدِ، وَإنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَدْ أمَرَنَا بِالصَّدَقَةِ [ص:122] فَأْتِهِ، فَاسْأَلْهُ، فإِنْ كَانَ ذلِكَ يُجْزِىءُ عَنِّي، وَإلاَّ صَرَفْتُهَا إِلَى غَيْرِكُمْ. فَقَالَ عبدُ اللهِ: بَلِ ائْتِيهِ أَنتِ، فانْطَلَقتُ، فَإذا امْرأةٌ مِنَ الأنْصارِ بِبَابِ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - حَاجَتي حَاجَتُها، وَكَانَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَدْ أُلْقِيَتْ عَلَيهِ المَهَابَةُ، فَخَرجَ عَلَيْنَا بِلاَلٌ، فَقُلْنَا لَهُ: ائْتِ رَسُولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأَخْبرْهُ أنَّ امْرَأتَيْنِ بالبَابِ تَسألانِكَ: أُتُجْزِيءُ الصَّدَقَةُ عَنْهُمَا عَلَى أَزْواجِهمَا وَعَلَى أَيْتَامٍ في حُجُورِهِما؟، وَلاَ تُخْبِرْهُ مَنْ نَحْنُ، فَدَخلَ بِلاَلٌ عَلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فسأله، فَقَالَ لَهُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ هُمَا؟» قَالَ: امْرَأةٌ مِنَ الأنْصَارِ وَزَيْنَبُ. فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أيُّ الزَّيَانِبِ هِيَ؟»، قَالَ: امْرَأةُ عبدِ الله، فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «لَهُمَا أَجْرَانِ: أَجْرُ القَرَابَةِ، وَأَجْرُ الصَّدَقَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩২৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার সারসংক্ষেপ
হাদীছ নং : ৩২৭

হযরত আবূ সুফয়ান ছাখর ইবন্ হারব রাযি. থেকে বর্ণিত হিরাক্লিয়াসের ঘটনা সম্পর্কিত দীর্ঘ এক হাদীছে আছে, হিরাক্লিয়াস আবূ সুফয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিল, তিনি তোমাদেরকে কী হুকুম করেন? অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তিনি বলেন, আমি বললাম, তিনি বলে থাকেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করো না এবং তোমাদের পূর্বপুরুষগণ যা বলে তা পরিত্যাগ কর। তিনি আমাদেরকে নামায, সত্যবাদিতা, পবিত্র জীবনযাপন ও আত্মীয়তা রক্ষার আদেশ করেন -বুখারী ও মুসলিম।
৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭৭৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৭১৭; নাসাঈ, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯৯৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৬৫৫৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৭০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৯৭২৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৭২৬৯
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
327 - وعن أَبي سفيان صخر بنِ حرب - رضي الله عنه - في حديثِهِ الطويل في قِصَّةِ هِرَقْلَ: أنَّ هرقْلَ قَالَ لأبي سُفْيَانَ: فَمَاذَا يَأمُرُكُمْ بِهِ؟ يَعْنِي النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: قُلْتُ: يقول: «اعْبُدُوا اللهَ وَحْدَهُ، وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيئًا، واتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ، وَيَأمُرُنَا بِالصَّلاَةِ، وَالصِّدْقِ، والعَفَافِ، والصِّلَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩২৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মিশর জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী ও মিশরবাসীদের সঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়তা
হাদীছ নং : ৩২৮

হযরত আবূ যার্র রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই তোমরা এমন এক ভূখণ্ড জয় করবে, যেখানে ‘কীরাত’ -এর উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, অচিরেই তোমরা মিশর জয় করবে। তা এমন এক ভূখণ্ড, যেখানে ‘কীরাত’ এর নাম নেওয়া হয়ে থাকে। তোমরা সে দেশবাসীর প্রতি সদ্ব্যবহারের উপদেশ গ্রহণ করো। কেননা তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ অধিকার ও আত্মীয়তা। অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা যখন তা জয় করবে, তখন তার অধিবাসীদের প্রতি উত্তম আচরণ করবে। কেননা তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ অধিকার ও আত্মীয়তা। অথবা তিনি বলেছেন, বিশেষ অধিকার ও বৈবাহিক আত্মীয়তা -মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৪৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৬৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৫২০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১৯৩৭৫; ত্বহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ১২৫৬; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ১১১; বায়হাকী, আসসনানল করবা হাদীছ নং ১৮৭৩৯
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
328 - وعن أَبي ذرّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أرْضًا يُذْكَرُ فِيهَا القِيرَاطُ (1)». وفي رواية: «سَتَفْتَحونَ مِصْرَ، وَهِيَ أَرْضٌ يُسَمَّى فِيهَا القِيراطُ، فَاسْتَوْصُوا بأهْلِهَا خَيْرًا؛ فَإنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا» وفي رواية: «فإذا افتتحتموها، فأحسنوا إلى أهلها؛ فإن لهم ذمة ورحمًا»، أَوْ قَالَ: «ذِمَّةً وصِهْرًا». رواه مسلم. (2)
قَالَ العلماء: «الرَّحِمُ»: الَّتي لَهُمْ كَوْنُ هَاجَرَ أُمِّ إسْمَاعِيلَ - صلى الله عليه وسلم - مِنْهُمْ،
«وَالصِّهْرُ»: كَوْن مَارية أمِّ إبْراهيمَ ابن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - مِنْهُمْ.
হাদীস নং: ৩২৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
আখেরাতের মুক্তি আত্মীয়তার উপর নয়, বরং ঈমানের উপরই নির্ভরশীল
হাদীছ নং : ৩২৯

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আয়াত নাযিল হলো {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ} ‘তোমার নিকটাত্মীয়স্বজনকে সতর্ক কর’৯৯, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শ গোত্রকে ডাকলেন। তারা সকলে একত্র হলো। তিনি প্রথমে সাধারণভাবে এবং তারপর বিশেষ বিশেষ জনকে সম্বোধন করলেন। বললেন, হে বনূ আব্দ শামছ! হে বনূ কা'ব ইবনে লুআঈ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বনূ মুররা ইবনে কা'ব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বনূ আবদে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বনূ হাশিম।তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বনু আব্দিল মুত্তালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাচাও। হে ফাতিমা! নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে কিছুমাত্র বাচানোর ক্ষমতা রাখি না। অবশ্য তোমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে। আমি তার আর্দ্রতা দ্বারা তোমাদেরকে সিঞ্চিত করব -মুসলিম।১০০
ইমাম নববী রহ. বলেন, এর অর্থ 'আমি আত্মীয়তা রক্ষায় যত্নবান থাকব।' আত্মীয়তা ছিন্ন করাকে আগুনের উত্তাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা পানি দ্বারা নেভানো হয়। তেমনিভাবে আত্মীয়তা সজীব রাখা হয় সদাচরণ দ্বারা।
৯৯. সূরা শুআরা (২৬), আয়াত ২১৪
১০০. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩১১৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৬৪৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৬৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৪০২; ত্বহাবী, শারহু মাআনিল আছার, হাদীছ নং ৫৩৮৮; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৪৮; তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৫১১
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
329 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: لما نزلت هذِهِ الآية: {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ} [الشعراء: 214] دَعَا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قُرَيْشًا، فَاجْتَمَعُوا فَعَمَّ وَخَصَّ، وَقالَ: «يَا بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ، يا بَنِي كَعْبِ بْنِ لُؤيٍّ، أَنقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي مُرَّةَ بن كَعْبٍ، أَنْقِذُوا [ص:123] أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي عَبْدِ مَنَاف، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي هاشم، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بني عبد المطلب، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا فَاطِمَةُ، أَنْقِذِي نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ. فَإِنِّي لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيئًا، غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأبُلُّهَا بِبِلالِهَا». رواه مسلم. (1)
قوله - صلى الله عليه وسلم: «بِبِلالِهَا» هُوَ بفتح الباء الثانيةِ وكسرِها، «وَالبِلاَلُ»: الماءُ. ومعنى الحديث: سَأصِلُهَا، شَبّه قَطِيعَتَهَا بالحَرارَةِ تُطْفَأُ بِالماءِ، وهذِهِ تُبَرَّدُ بالصِّلَةِ.
হাদীস নং: ৩৩০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
আত্মীয় অমুসলিম হলেও আত্মীয়তার হক সম্পূর্ণ ছিন্ন হয় না
হাদীছ নং : ৩৩০

হযরত আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উচ্চ আওয়াজে বলতে শুনেছি, চুপিসারে নয় - অমুক গোত্রের লোকজন আমার বন্ধু নয়। আমার বন্ধু তো আল্লাহ ও সৎকর্মশীল মুমিনগণ। অবশ্য তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে, যার আর্দ্রতা দ্বারা তাদেরকে সিঞ্চিত করব -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২১৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৮০৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৪১
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
330 - وعن أَبي عبد الله عمرو بن العاص رضي الله عنهما، قَالَ: سمعت رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - جِهَارًا غَيْرَ سِرٍّ، يَقُولُ: «إنَّ آل بَني فُلاَن لَيْسُوا بِأولِيَائِي، إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللهُ وَصَالِحُ المُؤْمِنينَ، وَلَكِنْ لَهُمْ رَحِمٌ أبُلُّهَا بِبلاَلِهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، (1) واللفظ للبخاري.
হাদীস নং: ৩৩১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
যে আমল দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়
হাদীছ নং : ৩৩১

হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে ও আত্মীয়তা রক্ষা করবে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৩৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪৬৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৫২৮; আল- আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৪৯; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৯২৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৫৪৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৯
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
331 - وعن أَبي أيوب خالد بن زيد الأنصاري - رضي الله عنه: أنَّ رجلًا قَالَ: يَا رَسُول الله، أخْبِرْني بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ، وَيُبَاعِدُني مِنَ النَّارِ. فَقَالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاةَ، وتُؤتِي الزَّكَاةَ، وتَصِلُ الرَّحمَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩৩২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
আত্মীয়-স্বজনকে দান-খয়রাত করলে দ্বিগুণ ছাওয়াব
হাদীছ নং : ৩৩২

হযরত সালমান ইবন ‘আমির রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা এটা বরকত। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা, কেননা এটা পবিত্রকারক। তিনি আরও বলেন, মিসকিনকে দান করা কেবলই দান। আর আত্মীয়স্বজনকে দান করলে দুটি হয়, এক তো দান এবং আরেক হচ্ছে আত্মীয়ের প্রতি সৌজন্য -তিরমিযী।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৬৫৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৮২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩৩৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬২৩৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৮৪৪; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ১০৫৪১; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৭২৩; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৮৪৪
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
332 - وعن سلمان بن عامر - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا أَفْطَرَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُفْطرْ عَلَى تَمْرٍ؛ فَإنَّهُ بَرَكةٌ، فَإنْ لَمْ يَجِدْ تَمْرًا، فالمَاءُ؛ فَإنَّهُ طَهُورٌ»، وَقالَ: «الصَّدَقَةُ عَلَى المِسكينِ صَدَقةٌ، وعَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ৩৩৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
পিতার হুকুম পালনার্থে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া
হাদীছ নং : ৩৩৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার এক স্ত্রী ছিল। আমি তাকে বড় ভালোবাসতাম। কিন্তু উমর তাকে অপসন্দ করতেন। তিনি আমাকে বললেন, একে তালাক দিয়ে দাও। আমি তা অস্বীকার করলাম। শেষে উমর রাযি. সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন এবং তাকে বিষয়টা জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও -আবু দাউদ ও তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১১৮৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৫০১১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ১৯০৫৮; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৩২৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৮৯৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩৪৮
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
333 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: كَانَتْ تَحْتِي امْرَأةٌ، وَكُنْتُ أحِبُّهَا، وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لي: طَلِّقْهَا، فَأبَيْتُ، فَأتَى عُمَرُ - رضي الله عنه - النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ، فَقَالَ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم: «طَلِّقْهَا». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح». (1)
হাদীস নং: ৩৩৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মায়ের হুকুম পালনার্থে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া
হাদীছ নং : ৩৩৪

হযরত আবূদ্ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল, আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা আমাকে আদেশ করছেন যেন তাকে তালাক দিয়ে দিই। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, পিতা জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম দরজা। এখন তুমি চাইলে সে দরজাটি ভেঙে ফেল কিংবা চাইলে হেফাজত কর – তিরমিযী।১১৬
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ২০৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৭৫১১; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৩৯৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৪৬৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪২১
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
334 - وعن أَبي الدرداءِ - رضي الله عنه: أن رجلًا أتاه، قَالَ: إنّ لي امرأةً، وإنّ أُمِّي تَأمُرُنِي بِطَلاقِهَا؟ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «الوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، فَإنْ شِئْتَ، فَأَضِعْ ذلِكَ البَابَ، أَو احْفَظْهُ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
হাদীস নং: ৩৩৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
খালার মর্যাদা
হাদীছ নং : ৩৩৫

হযরত বারা' ইবন আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, খালা মায়ের মত -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৪; সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২২৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৮৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩১; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ৩০২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩১১১৮; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২২২১; শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২৩০

এ অধ্যায় সম্পর্কিত আরও কিছু হাদীছ
ইমাম নববী রহ. বলেন, এ অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও বহু হাদীছ আছে। যেমন গুহায় আশ্রয়গ্রহণকারীদের ঘটনা সম্পর্কিত হাদীছ ও জুরাইজের ঘটনা সম্বলিত হাদীছ। এ হাদীছদু'টি পেছনে গত হয়েছে। (দ্রঃ যথাক্রমে, হাদীছ নং ১১ ও, হাদীছ নং ২০৭)।
এছাড়াও বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও অনেক প্রসিদ্ধ হাদীছ আছে, এ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ততা রক্ষার স্বার্থে যা আমি উল্লেখ করিনি। তার মধ্যে হযরত আমর ইবন আবাসা রাখি, থেকে বর্ণিত সুদীর্ঘ হাদীছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে হাদীছটি অনেকগুলি বাক্য সম্বলিত। তাতে ইসলামের অনেক মূলনীতি ও আদব-কায়দার উল্লেখ আছে। ইনশাআল্লাহ باب الرجاء (আশা) অধ্যায়ে সম্পূর্ণ হাদীছটি উল্লেখ করব। তার অংশবিশেষ এরকম-
হযরত আমর ইবন আবাসা রাযি. বলেন, নবুওয়াতের প্রথমদিকে আমি মক্কা মুকাররামায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, নবী। বললাম, নবী কী? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঠিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কী জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিমা বিনাশ এবং এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭০১৯; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৩৮৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৭৭৭
مقدمة الامام النووي
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
335 - وعن البراءِ بن عازب رضي اللهُ عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «الخَالةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».

وفي الباب أحاديث كثيرة في الصحيح مشهورة؛ مِنْهَا حديث أصحاب الغار (2)، وحديث جُرَيْجٍ (3) وقد سبقا، وأحاديث مشهورة في الصحيح حذفتها اختِصَارًا، وَمِنْ أهَمِّهَا حديث عَمْرو بن عَبسَة - رضي الله عنه - الطَّويلُ المُشْتَمِلُ عَلَى جُمَلٍ كَثيرةٍ مِنْ قَواعِدِ الإسْلامِ وآدابِهِ، وَسَأذْكُرُهُ بتَمَامِهِ إنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى في باب الرَّجَاءِ (4)، قَالَ فِيهِ:

دَخَلْتُ عَلَى النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - بمَكَّةَ - يَعْني: في أوَّلِ النُّبُوَّةِ - فقلتُ لَهُ: مَا أَنْتَ؟
قَالَ: «نَبيٌّ»، فَقُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ؟ قَالَ: «أرْسَلنِي اللهُ تَعَالَى»، فقلت: بأيِّ شَيءٍ أرْسَلَكَ؟ قَالَ: «أرْسَلَنِي بِصِلَةِ الأَرْحَامِ، وَكَسْرِ الأَوثَانِ، وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكَ بِهِ شَيء ... » وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيث. والله أعلم.
হাদীস নং: ৩৩৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ৪১

পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা

পিতা-মাতার আনুগত্য করাকে যেমন بر বলে, তেমনি তাদের অবাধ্যতা করাকে عقوق বলে। এ শব্দটির উৎপত্তি عق থেকে। এর অর্থ ছিন্ন করা, বিরোধিতা করা। সন্তানের যেসকল আচার-আচরণ দ্বারা পিতা-মাতার অমর্যাদা হয় এবং তারা কষ্ট পায়, পরিভাষায় তাকে عقوق বলা হয়ে থাকে। এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কবীরা গুনাহ। পিতা মাতার প্রতি এরূপ আচরণকারী সন্তানকে عاق বলা হয়। যে-কোনও সন্তানের পক্ষে এটি অত্যন্ত মন্দ বিশেষণ। কোনও সন্তানের প্রতি যাতে এ বিশেষণ আরোপিত না হয়, তাই তার কর্তব্য সর্বাবস্থায় পিতা-মাতাকে খুশি রাখার চেষ্টা করা এবং শরীআতবিরোধী নয় এমন যাবতীয় বিষয়ে পিতা-মাতার অনুগত থাকা।
قطيعة الرحم -এর অর্থ আত্মীয়তা ছিন্ন করা। অর্থাৎ আত্মীয়ের প্রতি দুর্ব্যবহার করা, তাদের অধিকার খর্ব করা ও তাদের খোঁজখবর না রাখা। এটা صلة الأرحام এর বিপরীত। এটাও নাজায়েয ও কবীরা গুনাহ।
কুরআন-হাদীছে পিতা-মাতার আনুগত্য করা ও আত্মীয়তা রক্ষার যেমন তাকীদ এসেছে, তেমনি পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা ও আত্মীয়তা ছিন্ন করা সম্পর্কেও এসেছে কঠিন সতর্কবাণী। বিভিন্নভাবে এর মন্দত্ব ও কদর্যতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যা দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায় পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা ও আত্মীয়ের প্রতি দুর্ব্যবহার করা কাফের-মুশরিকেরই বৈশিষ্ট্য; এটা কোনও মুমিন-মুসলিমের কাজ হতে পারে না। ইমাম নববী রহ. বক্ষ্যমাণ অধ্যায়ে এরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। নিচে
তার বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।

‘পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা’-সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (22) أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ

অর্থ : অতঃপর তোমরা (জিহাদ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলে কি তোমাদের দ্বারা ভূমিতে অশান্তি বিস্তার এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করার সম্ভাবনা আছে? এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন (অর্থাৎ তার রহমত থেকে দূর করে দিয়েছেন।) কলে তাদেরকে বধির বানিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন।১১৯

ব্যাখ্যা

আত্মীয়তা ছিন্ন করার পরিণাম যে কত ভয়াবহ তা কুরআন মাজীদের এ আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে-

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ

অতঃপর তোমরা (জিহাদ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলে কি তোমাদের দ্বারা ভূমিতে অশান্তি বিস্তার এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করার সম্ভাবনা আছে?' অর্থাৎ জিহাদের ব্যতিব্যস্ততা ছেড়ে দিলে সমাজে অশান্তি বিস্তারে লিপ্ত হয়ে পড়ার ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার আশঙ্কা থাকে। জিহাদ করা অবস্থায় সবটা শক্তি ব্যয় হয় আল্লাহ তাআলার দুশমনদের দমন করার কাজে। মন-মস্তিষ্কও সেই ফিকিরেই রত থাকে। পক্ষান্তরে জিহাদ থেকে অবসর হয়ে কেবল দুনিয়াবী কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়লে পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ দেখা দেয় এবং তার পরিণামে দেখা দেয় আত্মকলহ। এভাবে যে শক্তি ব্যয় হত দীনের শত্রুদমনে, তা আত্মঘাতী ভ্রাতৃদমনে নিঃশেষ করা হয়। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, বর্তমানকার মুসলিম জাতির আত্মকলহ ও সর্বাত্মক পশ্চাদপদতা তাদের জিহাদবিমুখতারই পরিণাম।
تَوَلَّيْتُمْ এর এক অর্থ হতে পারে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করা। এ হিসেবে আয়াতটির অর্থ হবে- 'তোমরা যদি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হও, তবে কি তোমাদের দ্বারা ভূমিতে অশান্তি বিস্তার এবং রক্তের আত্মীয়তা ছিন্ন করার সম্ভাবনা আছে?' অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা মানুষকে আত্মকলহ ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার পথে টেনে নেয়। ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা রক্ষার লোভ এমনই সর্বনাশা ব্যাধি, যা মানুষের অন্তর থেকে মায়া-মমতা কেড়ে নেয়। ক্ষমতালোভী ব্যক্তির কাছে আত্মীয়তার কোনও মূল্য থাকে না। ফলে কেবল আত্মীয়তা ছিন্ন করাই নয়, পরমাত্মীয় রক্তের ভাইকে পর্যন্ত হত্যা করতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে না।
পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করা ও আত্মীয়তা ছিন্ন করা অত্যন্ত কঠিন পাপ। এ পাপের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। পরের আয়াতে সে পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হচ্ছে- أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ 'এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন (অর্থাৎ তার রহমত থেকে দূর করে দিয়েছেন।) ফলে তাদেরকে বধির বানিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন'। অর্থাৎ এরূপ লোক আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় এবং তাদের জীবন হয়ে পড়ে অভিশপ্ত জীবন । কান থাকা সত্ত্বেও তারা বধির হয়ে যায় এবং চোখ থাকা সত্ত্বেও অন্ধ হয়ে যায়। না তারা সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখতে পায় আর না সত্য-ন্যায়ের বাণী শুনতে পায়।

দুই নং আয়াত

وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ

অর্থ : (অপর দিকে) যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে অশান্তি বিস্তার করে, তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং প্রকৃত নিবাসে নিকৃষ্ট পরিণাম তাদেরই জন্য।১২০

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে তিনটি কঠিন গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গের অশুভ পরিণাম জানানো হয়েছে যে, তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার লা'নত বর্ষিত হয় এবং মৃত্যুর পর তারা হবে নিকৃষ্টতম ঠিকানা জাহান্নামের বাসিন্দা। সে তিনটি গুনাহ হচ্ছে- ক. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা; খ. আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং গ. পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ বিস্তার করা।
‘আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে'- এর অর্থ রূহানী জগতে কৃত রব্ব হিসেবে আল্লাহ তাআলার প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার, যার দাবি হচ্ছে দুনিয়ায় তাঁর দেওয়া দীন ও শরীআত মোতাবেক চলা। কাজেই দীন ও শরীআত মোতাবেক না চললে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়। এ দুনিয়ায় মানুষ একে অন্যের সঙ্গে যেসব ওয়াদা-অঙ্গীকার করে থাকে তা ভঙ্গ করার আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল, যেহেতু তা রক্ষা করাও শরীআতের হুকুম। সুতরাং সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনি শরীআতসম্মত মানুষের পারস্পরিক ওয়াদা-অঙ্গীকার রক্ষা করাও সমান জরুরি। যে-কোনও প্রকারের অঙ্গীকার ভঙ্গ করাই মহাপাপ এবং তা আল্লাহ তাআলার লানত কুড়ানো ও জাহান্নামবাসের কারণ।
আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম দিয়েছেন তা ছিন্ন করে'- এর অর্থ আত্মীয়তার সম্পর্ক। কুরআন ও হাদীছে আত্মীয়তা রক্ষার জোর তাকীদ করা হয়েছে। এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং আত্মীয়তা ছিন্ন করা একটি মহাপাপ। যারা তা ছিন্ন করে তারা আল্লাহ তাআলার লা‘নতে পতিত হয় এবং আখেরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি।
‘যমীনে অশান্তি বিস্তার করে'- এর অর্থ অন্যের উপর জুলুম করা ও অন্যকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা । জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা প্রত্যেকের আল্লাহপ্রদত্ত অধিকার। এ অধিকার খর্ব করার দ্বারা অন্যের উপর জুলুম হয়। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।
এমনিভাবে মানুষের আরও একটি মৌলিক অধিকার হলো সত্য-সঠিক দীনের অনুসরণ করতে পারা। এতে বাধাদানও ফাসাদ সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। সত্য দীনের অপব্যাখ্যা, মনগড়া ধর্মমত বা ভ্রান্ত ধর্মের প্রচার-প্রচারণাও এক প্রকার বাধাদানই বটে। কেননা এর ফলে মানুষ বিভ্রান্তির শিকার হয় এবং সত্য দীনের অনুসরণে জটিলতা দেখা দেয়। কাজেই যারা এ জাতীয় কাজে লিপ্ত হয় তারাও আল্লাহর যমীনে ফিতনা-ফাসাদ বিস্তারেই ভূমিকা রাখে। মোটকথা দীনী ও দুনিয়াবী যে-কোনও প্রকার ফাসাদ সৃষ্টিই কঠিন পাপ। এরূপ পাপে লিপ্ত হওয়ার পরিণাম আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া ও জাহান্নামের শাস্তিভোগ । প্রত্যেক মুমিনের এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।

তিন নং আয়াত

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا (23) وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

অর্থ : তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ পর্যন্ত বলো না। এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো আর দু'আ করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন।১২১

ব্যাখ্যা

এ দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার সম্পর্কে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। শুরুতে কেবল আল্লাহ তাআলারই ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তারপর ইরশাদ হয়েছে-

وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

(পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো)। এটা তাদের প্রতি সাধারণভাবে সদ্ব্যবহারের হুকুম। এরপর এ হুকুমের খানিকটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা দ্বারা সদ্ব্যবহারের বিশেষ কয়েকটি দিক পরিস্ফুট হয়েছে।

সুতরাং ইরশাদ হয়েছে—

إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ

(পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ্ পর্যন্ত বলো না)। ‘উফ্’ শব্দটি বিরক্তি প্রকাশক ও অপ্রীতিব্যাঞ্জক। উফ পর্যন্ত বলো না—এর অর্থ, তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করো না এবং তাদেরকে বিরক্তিসূচক কোনও কথা বলো না।
পিতা-মাতার প্রতি যখন বিরক্তি প্রকাশ করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তখন তাদেরকে সরাসরি কষ্ট দেওয়া যে আরও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ হবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদেরকে শারীরিক বা মানসিক কষ্ট নানাভাবেই দেওয়া হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক সন্তানের সচেতন থাকা উচিত। আবার অনেকে তো পিতা-মাতাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণও করে। আয়াতে পরের বাক্যে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে- وَلَا تَنْهَرْهُمَا (এবং তাদেরকে ধমক দিও না)। অনেক সময় পিতা-মাতার কোনও কথা বা কোনও কাজ পসন্দ না হলে সন্তান তাদেরকে ধমক দিয়ে বসে। কোনও কোনও দুর্ভাগা তো রীতিমত গালাগালিই করে। এটা অত্যন্ত ধ্বংসকর আচরণ। এরূপ অবাধ্য সন্তান নিজ আখেরাত তো বরবাদ করেই, দুনিয়ায়ও তাকে কঠিন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

كُل الذُّنُوبِ يَغْفِرُ اللهُ مِنْهَا مَا شَاءَ إِلَّا عُقوقَ الْوَالِدَيْنِ، فَإِنَّهُ يُعَجِّلُ لِصَاحِبِهِ فِي الْحَيَاةِ قَبْلَ الْمَمَاتِ

'সমস্ত পাপের ক্ষেত্রেই নিয়ম এই যে, আল্লাহ তাআলা তা থেকে যা ইচ্ছা মাফ করে দেবেন। কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতা এর ব্যতিক্রম। কেননা আল্লাহ এই অপরাধের অপরাধীকে মৃত্যুর আগে এ দুনিয়ায়ই নগদ শাস্তি দিয়ে দেন।১২২
সর্বাবস্থায়ই সন্তানদেরকে পিতা-মাতার সঙ্গে শান্তিদায়ী আচরণ করতে হবে। কথা বলতে হবে সম্মানজনক। সুতরাং এর পরবর্তী বাক্যে ইরশাদ হয়েছে-

وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا (বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো)। অর্থাৎ যখনই তাদের সঙ্গে কথা বলবে, তখন মাথায় এই চিন্তা-চেতনা জাগ্রত রেখে কথা বলবে যে, তারা আমার পিতা-মাতা, সর্বাপেক্ষা শ্রদ্ধাভক্তির পাত্র। একজন কঠোর স্বভাবের মনিবের সঙ্গে তার অনুগত ও বাধ্যগত গোলাম যেমন নম্র ও বিনীত ভঙ্গিতে কথা বলে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে ঠিক সেইভাবে কথা বলতে হবে। পরবর্তী আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ (এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সঙ্গে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো)। অর্থাৎ তাদের জন্য তোমার দু'হাত নম্র- কোমল রাখ। এর দ্বারা তাদের প্রতি বিনীত ও উদার থাকতে হুকুম করা হয়েছে। কাজেই তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে বিনয়ের সাথে এবং আচার-আচরণ করতে হবে পূর্ণ আদব সহকারে।
বলা হয়েছে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি আচরণ করতে হবে মমতাপূর্ণ। কেননা আজ তারা বার্ধক্যের কারণে তোমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্মরণ কর, আজ তারা যেমন তোমার উপর নির্ভরশীল, তেমনি তুমিও একদিন তাদের উপর এরকম নির্ভরশীল ছিলে। তখন তারা পরম মমতায় নিজেদের সুখ ও আরাম ভুলে তোমার সুখ ও আরামের প্রতি লক্ষ রাখতেন। কাজেই আজ তাদের এই দুর্বল অবস্থায় তোমারও উচিত সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে তাদের প্রতি মমত্বপূর্ণ আচরণ করে যাওয়া।

পিতা-মাতার প্রতি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি তাদের দোজাহানের শান্তি ও মুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করাও প্রত্যেক সন্তানের অবশ্যকর্তব্য। আয়াতের পরবর্তী অংশে সে দুআই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে-

وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا (আর দু'আ করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন)। অর্থাৎ আমি যখন নিতান্তই দুর্বল ছিলাম, তখন তারা আমার লালন-পালনের জন্য নিজের সমস্ত সুখ ও আরাম বিসর্জন দিয়েছিলেন। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তারা আমার আরাম ও কল্যাণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। আজ তারা বয়সের ভারে ক্লান্ত-শ্রান্ত। হে আল্লাহ! আপনার তাওফীকে আমি তো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের খেদমত করে যাচ্ছি। কিন্তু সন্তান হিসেবে যা কর্তব্য তা ঠিক পালন করা হচ্ছে না। সুতরাং হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নিবেদন করছি, আপনি আজ তাদের প্রতি নিজ রহমত জারি রাখুন এবং মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি আপন দয়ামায়ার আচরণ করুন। এ আয়াতের খানিকটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা এর আগের অধ্যায়ে গত য়েছে। সেখানে দ্রষ্টব্য।

১১৯. সূরা মুহাম্মাদ (৪৭), আয়াত ২২-২৩

১২০. সূরা রাদ (১৩), আয়াত ২৫

১২১. সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৩,২৪

১২২. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৫০৬; খারাইতী, মাসাবিউল আখলাক, হাদীছ নং ২৩৬
সর্বাপেক্ষা গুরুতর কয়েকটি পাপ
হাদীছ নং : ৩৩৬

হযরত আবূ বাকরা নুফাই' ইবনুল হারিছ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে সর্বাপেক্ষা কঠিন পাপ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি এ কথা তিনবার বললেন। আমরা বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলুল্লাহ। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা। এতক্ষণ তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসলেন। তারপর বললেন শোন, এবং মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। তিনি এ কথা বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, আহা! তিনি যদি ক্ষান্ত হতেন! -বুখারী ও মুসলিম।(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩০১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ২৯৩; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২০৩৮০; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৪৮২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪২৫)
مقدمة الامام النووي
41 - باب تحريم العقوق وقطيعة الرحم

قَالَ الله تَعَالَى: {فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ} [محمد: 22 - 23]، وَقالَ تَعَالَى: {وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ
عَهْدَ اللهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ} [الرعد: 25]، وَقالَ تَعَالَى: {وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا} [الإسراء: 23 - 24].
336 - وعن أَبي بكرة نُفَيع بن الحارث - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «ألا أُنَبِّئُكُمْ بأكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» - ثلاثًا - قُلْنَا: بَلَى، يَا رَسُول الله، قَالَ: «الإشْرَاكُ بالله، وَعُقُوقُ [ص:125] الوَالِدَيْنِ»، وكان مُتَّكِئًا فَجَلَسَ، فَقَالَ: «ألاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ» فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩৩৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা
বড় বড় চারটি গুনাহ
হাদীছ নং : ৩৩৭

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন্ আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহাপাপ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা, নরহত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা -বুখারী।সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৬৭৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩০২১; নাসাঈ, হাদীছ নং ৪০১১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৮৮৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৫৬৩; তবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৫০; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৮৫০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫১৭
مقدمة الامام النووي
41 - باب تحريم العقوق وقطيعة الرحم
337 - وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «الكَبَائِرُ: الإشْرَاكُ بالله، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْس، وَاليَمِينُ الغَمُوسُ». رواه البخاري. (1)
«اليمين الغموس»: التي يحلفها كاذبًا عامدًا، سميت غموسًا؛ لأنها تغمس الحالِفَ في الإثم.
হাদীস নং: ৩৩৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা
অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দেওয়ার পরিণাম
হাদীছ নং : ৩৩৮

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন্ আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কারও তার পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া মহাপাপসমূহের একটি। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোনও লোক কি তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়? তিনি বললেন, হাঁ, অন্য লোকের পিতাকে গালি দেয়। ফলে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। অন্যের মাকে গালি দেয়। ফলে সেও তার মাকে গালি দেয় -বুখারী ও মুসলিম।১৪১
অপর এক বর্ণনায় আছে, কারও তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেওয়া বড় গুনাহসমূহের মধ্যে অধিকতর বড় গুনাহের একটি। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোনও লোক তার পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ দেয়? তিনি বললেন, হাঁ, অন্য লোকের পিতাকে অভিশাপ দেয়। ফলে সেও তার পিতাকে অভিশাপ দেয়। অন্যের মাকে অভিশাপ দেয়। ফলে সেও তার মাকে অভিশাপ দেয়।
১৪১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৫১৪১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫২৯, ৭০২৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৬৫৭৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৫১৮০,৭৪৮৫, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪২৮
مقدمة الامام النووي
41 - باب تحريم العقوق وقطيعة الرحم
338 - وعنه أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ!»، قالوا: يَا رَسُولَ الله، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟! قَالَ: «نَعَمْ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أبَاه، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: «إنَّ مِنْ أَكْبَرِ الكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ!»، قِيلَ: يَا رَسُول الله، كَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيهِ؟! قَالَ: «يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ».
হাদীস নং: ৩৩৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা
আত্মীয়তা ছিন্নকারীর পরিণাম
হাদীছ নং : ৩৩৯

হযরত জুবায়র ইবন্ মুতঈম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কর্তনকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সুফয়ান রহ. তার বর্ণনায় বলেন, অর্থাৎ আত্মীয়তা ছিন্নকারী-বুখারী ও মুসলিম।(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৫৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১১০৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৫৪; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৬৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৫০৯; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২১৮)
مقدمة الامام النووي
41 - باب تحريم العقوق وقطيعة الرحم
339 - وعن أَبي محمد جبيرِ بن مطعم - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ» قَالَ سفيان في روايته: يَعْنِي: قَاطِع رَحِم. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩৪০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা
বিশেষ কয়েকটি নিষিদ্ধ কর্ম
হাদীছ নং : ৩৪০

হযরত মুগীরা ইবন্ শু'বা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা, কৃপণতা করা, অন্যের সম্পদ দাবি করা এবং কন্যা সন্তানকে জ্যান্ত মাটিচাপা দেওয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপসন্দ করেছেন অনর্থক কথা বলা, অতিরিক্ত সুওয়াল করা ও সম্পদ নষ্ট করা -বুখারী ও মুসলিম। ১৪৪
ইমাম নববী রহ. বলেন, مَنْعًا এর অর্থ কারও উপর যা ওয়াজিব, তা আদায় করা হতে বিরত থাকা।
هَاتِ এর অর্থ যা নিজের নয় তা দাবি করা।
وَأدَ الْبَنَاتِ এর অর্থ, কন্যাসন্তানদের জীবিত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে দেওয়া।
قِيْلَ وَقَالَ (বলা হয়েছে এবং বলেছে) এর অর্থ যাকিছু শোনা হয় তাই বলতে থাকা। যেমন বলা, এই এই কথা বলা হয়েছে, অমুকে এমন এমন বলেছে। অথচ সে কথাটি সঠিক কিনা তা জানা নেই এবং সঠিক হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণাও নেই। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ কোনও ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তাই বলে বেড়ায়।
إِضَاعَةُ الْمَالِ অর্থ সম্পদ অপচয় করা এবং শরীআত যেসকল ক্ষেত্রে ব্যয়ের অনুমতি দেয়নি তাতে ব্যয় করা। শরীআত অর্থব্যয়ের অনুমতি দিয়েছে কেবল এমনসব ক্ষেত্রে, যার মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনও কল্যাণ নিহিত আছে। এমনিভাবে ধন-সম্পদ হেফাজত করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা হেফাজত না করা হলে সেটাও সম্পদ বিনষ্ট করাই বটে।
كَثْرَةُ السُّؤَالِ এর অর্থ, যে জিনিসের প্রয়োজন নেই তা পীড়াপীড়ি করে চাওয়া।
১৪৪. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৫৯৩; নাসাঈ, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৭৮৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৫৫৫; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৪৬০; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৯০১; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৩৪০; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৪৮৮; শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪২৬
مقدمة الامام النووي
41 - باب تحريم العقوق وقطيعة الرحم
340 - وعن أَبي عيسى المغيرة بن شعبة - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ عَلَيْكُمْ: عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ، وَمَنع وَهَاتِ، وَوَأْدَ البَنَاتِ، وكَرِهَ لَكُمْ: قِيلَ وَقالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإضَاعَةَ المَالِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ (1).
قوله: «مَنْعًا» مَعنَاهُ: مَنْعُ مَا وَجَب عَلَيهِ، وَ «هَاتِ»: طَلَبُ مَا لَيْسَ لَهُ. وَ «وَأْد البَنَاتِ» مَعنَاهُ: دَفنُهُنَّ في الحَيَاةِ، وَ «قيلَ وَقالَ» مَعْنَاهُ: الحَديث بكُلّ مَا يَسمَعهُ، فيَقُولُ: قِيلَ كَذَا، وقَالَ فُلانٌ كَذَا مِمَّا لا يَعْلَمُ صِحَّتَهُ، وَلا يَظُنُّهَا، وَكَفَى بالمَرْءِ كذِبًا [ص:126] أَنْ يُحَدّثَ بكُلِّ مَا سَمِعَ. وَ «إضَاعَةُ المَال»: تَبذِيرُهُ وَصَرفُهُ في غَيْرِ الوُجُوهِ المأذُونِ فِيهَا مِنْ مَقَاصِدِ الآخِرةِ وَالدُّنْيَا، وتَرْكُ حِفظِهِ مَعَ إمكَانِ الحِفظِ. وَ «كَثْرَةُ السُّؤَال»: الإلحَاحُ فيما لاَ حَاجَة إِلَيْهِ.