হজ্ব কোনো ইবাদত নয়, বরং জিহাদের ট্রেণিং! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৩
হজ্ব কোনো ইবাদত নয়, বরং জিহাদের ট্রেণিং! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৮৩
ইসলামে হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজ্ব ফরজ ঐ সকল লোকদের ওপর, যারা হজ্বের মওসুমে বাইতুল্লাহ যেতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে জিহাদের সম্পৃক্ততার কথা কুরআন-সুন্নাহ-য় কোথাও বর্ণিত হয়নি। এ হজ্বের ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত এবং হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
তাদের নিকট হজ্ব কোনো ইবাদত নয়, বরং এটা শুধুমাত্র জিহাদের ট্রেনিং। এ সম্পর্কে তারা অসংখ্য বক্তব্য দিয়েছে। তারা লিখেছে–
এবাদত হচ্ছে আল্লাহর খেলাফত করা , কিন্তুু ভুল করে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদিকে এবাদত বলে মনে করা হচ্ছে । –মহা সত্যের আহ্বান, পৃ . ৯
তারা তাদের ওয়াজে নসিহতে মানুষকে কেবল নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি করার জন্য উপদেশ দেন। এগুলোকে তারা এবাদত ও ধর্মকর্ম বলে মনে করেন। –শিক্ষাব্যবস্থা, পৃ. ৯
নামাজ রোজা হজ্ব পূজা প্রার্থনা তীর্থযাত্রা মানুষের মূল এবাদত নয়। মানবজাতী যেন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে এ লক্ষ্যে নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত। –জঙ্গিবাদ সংকট, পৃ. ৫৬
এখন মোসলেম দাবিদার জাতির সামনে থেকে দীনের এই উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে, তারা কেবল নামাজ, রোজা, হজ্বব করাকেই এবাদত হিসাবে ধোরে নিয়ে ভালো মানুষ সবার জন্য জোর প্রচেষ্টা কোরছে। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৮৯
সেই সত্য দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্ব উপায়ে প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মো'মিনের অবশ্য কর্তব্য, ফরদ। এই দীন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মো'মেনের অবশ্যই কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুন লাগবে। সেই চারিত্রিক, মানসিক আত্মিক গুণ বৈশিষ্ট্য (Attributes) এটা যে সে অর্জন করবে কোথেকে অর্জন করবে? সেটার জন্য আল্লাহ তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন। সেটা হলো সালাহ সওম,হজ্ব,যাকাত এগুলো। এগুলোর মাধ্যমে তার চরিত্রে কিছু গুন অর্জিত হবে। তারপর সে আল্লাহর সত্যদীন পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করে মানবসমাজ থেকে অন্যায় অশান্তি দূর করতে পারবে যেটা উম্মতে মুহাম্মদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য। –সওমের উদ্দেশ্য, পৃ. ৫
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মানেই হচ্ছে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। যারা এই অঙ্গীকার করবে তাদের চরিত্র অর্জনের জন্য আল্লাহ নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত এর হুকুম দিয়েছেন। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৯
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, হজ্ব কোনো ইবাদত নয়। হজ্বকে ইবাদত মনে করা ভুল। এটা জিহাদের ট্রেণিং মাত্র
ইসলাম কী বলে?
জিহাদ ইসলামের অত্যাধিক গুরুত্ববহ একটি বিধান। জিহাদের কোনোরুপ গুরুত্বহীন হয় এমন শব্দ থেকে আল্লাহ আমার কলমকে হিফাযত করেন। কিন্তু হজ্বও তো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বতন্ত্র বিধান। শক্তি ও সামর্থের উপর এটা ফরজ করা হয়েছে। হজ্বকে কোথাও জিহাদের ট্রেনিং বলে আল্লাহ তাআলা বা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেননি, বরং যেখানেই হজ্বের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই কোন শর্ত ছাড়াই উল্লেখ্য করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন,
وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا ؕ وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ
মানুষের মধ্যে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয। কেউ (এটা) অস্বীকার করলে আল্লাহ তো বিশ্ব জগতের সমস্ত মানুষ হতে অমুখাপেক্ষী। –সুরা আলে ইমরান : ৯৭
উক্ত আয়াতসহ অন্য কোথাও হজ্বের ব্যাপারে জিহাদের ট্রেণিং বলা হয়নি। সুতরাং কোনো শর্তহীন আয়াতকে জিহাদের শর্তারোপ করা আয়াতের অপব্যাখ্যার শামিল। উপরন্তু হজ্ব হলো ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
بُنِيَ الإِسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَان
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল,নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা। –সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৮
এ হাদিসে ইসলামের স্তম্ভ করা হয়েছে ৫ টি। এর মধ্যে একটি হলো হজ্ব। অবশ্যই ইসলামে জিহাদও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং জিহাদকে জিহাদের জায়গায় রাখা এবং হজ্বকে হজ্বের জায়গায় রাখা উচিৎ।
তাছাড়া হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
يَا رَسُوْلَ اللهِ تُرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ أَفَلَا نُجَاهِدُ قَالَ لَكِنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُوْرٌ
হে আল্লাহর রাসুল, আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা জিহাদ করব না?’ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে মকবুল হজ্জ। -সহিহ বুখারী, হাদিস : ২৭৮৪
উক্ত হাদিসে হজ্বকেও জিহাদের থেকেও উত্তম আমল বা ইবাদত বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। তাছাড়া হেযবুত তওহীদও লিখেছে–
ইসলামের আমল কি? অবশ্যই নামাজ, যাকাত, হজ্ব, রোজা ইত্যাদি, আরও বহুবিধ ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নত নফল ইত্যাদি। –তাকওয়া ও হেদায়াহ, পৃ. ৯
সুতরাং তাদের বক্তব্য থেকেও জানা গেলো, হজ্বও একটি ইসলামের আমল বা ইবাদত। এরপরও যদি তারা হজ্বকে ইবাদত মনে না করে, তবে তারা মিথ্যুক।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ পর্ব–১৭
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
২৫৪১