নবীজি সা. সাহাবাদেরকে রা. শুধু যুদ্ধই শিখিয়েছেন! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫২
নবীজি সা. সাহাবাদেরকে রা. শুধু যুদ্ধই শিখিয়েছেন! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৫২
সাহাবায়ে কেরাম রা. ছিলেন নিজদের মধ্যে দয়াশীল, আর বেঈমানদের ব্যাপারে কঠোর। কিন্তু তাঁরা অন্যায়ভাবে কারও ওপর তরবারী উঠাননি। তবে কাফেররা মুসলমিদের ওপর অজস্র নির্যাতন করেছে, তারপরও তাঁরা প্রতিশোধ নেননি। কিন্তু মহান রব্বের পক্ষ থেকে যখনই জিহাদের বিধান নাযিল হলো, তখনই তাঁরা ন্যায়সঙ্গতভাবে জিহাদ করে গেছেন। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের দাবী হলো, আল্লাহ রসুলের এসলাম যে জাতি গঠন কোরেছিল সে জাতির চরিত্রের সর্ব প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যোদ্ধার চরিত্র। তার প্রমাণ জাতির নেতা আল্লাহর রাসূল (দঃ) সহ সমস্ত জাতির মধ্যে এমন একটা লোক খুঁজে পাওয়া যেতনা যার শরীরে অস্ত্রের আঘাত নেই। –এ জাতির পায়ে লুটিয়ে পড়বে বিশ্ব, পৃ. ৬৬ অর্থাৎ তারা বোঝাতে চাচ্ছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে শুধু যুদ্ধই শিখিয়েছেন। ইসলাম কী বলে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে পূর্ণ দীন হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। এমনকি বাথরুমে যাওয়া থেকে নিয়ে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জিবন, সামাজিক জিবন, জাতীয় জিবন, আন্তর্জাতিক জিবনের প্রত্যেকটি বিষয় খুলে খুলে শিখিয়েছেন। সাথে জিহাদও শিখিয়েছেন। কারণ জিহাদও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। কিন্তু তিনি শুধু জিহাদই শিখিয়েছেন এটা চরম ভ্রান্তি ও অপবাদ। দেখুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রা.-কে গুরুত্বপূর্ণ একটি বায়আত নেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত উবাদাহ ইবনু সামিত রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- إِنِّيْ مِنْ النُّقَبَاءِ الَّذِيْنَ بَايَعُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ بَايَعْنَاهُ عَلَى أَنْ لَا نُشْرِكَ بِاللهِ شَيْئًا وَلَا نَسْرِقَ وَلَا نَزْنِيَ وَلَا نَقْتُلَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ وَلَا نَنْتَهِبَ وَلَا نَعْصِيَ بِالْجَنَّةِ إِنْ فَعَلْنَا ذَلِكَ فَإِنْ غَشِيْنَا مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا كَانَ قَضَاءُ ذَلِكَ إِلَى اللهِ আমি ঐ মনোনীত প্রতিনিধি দলে ছিলাম, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা তাঁর কাছে বায়আত গ্রহণ করেছিলাম–জান্নাত লাভের জন্য যদি আমরা এই কাজগুলো করি এই শর্তে যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করবো না, ব্যভিচার করবো না, চুরি করবো না। আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবো না, লুটতরাজ করবো না এবং নাফরমানী করবো না। আর যদি আমরা এর মধ্যে কোনটিতে লিপ্ত হই, তাহলে এর ফয়সালা আল্লাহ্ তাআলার ওপর। –সহিহ বুখারী, হাদিস : ৩৮৯৩ প্রিয় পাঠক, উক্ত হাদিসটি আরেকবার পড়ে দেখুন তো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী তাদের প্রধান শিক্ষা হিসাবে যুদ্ধ শিখিয়েছেন? নিশ্চয় না। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের রা.-কে পারস্পরিক আচরণ কেমন হবে, তাও শিখিয়েছেন। হযরত নুমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু’মিনদের একটি দেহের মতো দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। –সহিহ বুখারী, হাদিস : ৬০১১ সাহাবায়ে কেরাম রা. হলেন, দ্বীন ইসলামের পূর্ণ ধারক-বাহক। তাঁদেরকে শুধু যোদ্ধা ট্যাগ লাগানোর এই গভীর ষড়যন্ত্রের মূল টার্গেট হলো, দ্বীন ইসলামকে উগ্রপন্থী ধর্ম হিশাবে আখ্যায়িত করা। যা কখনই সফল হওয়ার নয়।