ইসলাম যুগোপযোগী নয়, এজন্য এটা সংস্কার করতে হবে? হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৯
ইসলাম যুগোপযোগী নয়, এজন্য এটা সংস্কার করতে হবে? হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৯
প্রিয় পাঠক! শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে রাখি বর্তমানে ইসলাম বিদ্বেষীরা কুরআনের আয়াত গুলো পরিবর্তন করার হাজারও চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কোন ভাবেই সফল হতে না পেরে অবশেষে কুরআনের ধর্ম সংস্কার করার নাম দিয়ে অনেক কার্যক্রম শুরু করেছে। যেমন আমাদের দেশেই আছে ‘আহলে কুরআন’ ‘কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ ইত্যাদী। তাদের মূল দাবি এটাই যে, আগের যুগের ব্যখ্যা তাফসীর এখনকার যুগে আর চলবে না, সুতরাং ইসলাম সংস্কার করতে হবে। আর এ একই সুরে কথা বলছে হেযবুত তওহীদও।
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
হেযবুত তওহীদের দাবী অনুযায়ী যেহেতু ইসলাম তার সঠিকরূপে নেই এবং যুগের চাহিদা মিটাতে পারছে না, সেহেতু ইসলাম ধর্মকে সংস্কার কর যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। তারা লিখেছে,
যুগের চাহিদা মেটানো ধর্মের বৈশিষ্ট্য। -ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৭
যে ইসলাম আজ নানা প্রকার রূপ নিয়ে আমাদের ১৬০ কোটি মুসলমানের দ্বারা চর্চিত হচ্ছে তা কোনোভাবেই বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চিন্তা-চেতনার যুগের উপযোগী নয়। ফলে ইসলাম এ যুগের চাহিদা ও যাবতীয় সমস্যার সমাধানরূপে মানবজাতির দ্বারা বিবেচিত হতে পারছে না। ইসলামের ধারক বাহক আলেমসমাজ তারাও যুক্তির যুগে অন্ধবিশ্বাসকেই ধর্মের ভিত্তি বানিয়ে রেখেছেন। -ধর্মব্যবসার ফাঁদে : পৃ. ১১৫; (pdf) পৃ. ১৪১
মুসলিমদেরকে এখন প্রাচীন ধারণা ও মাসলা মাসায়েলের কেতাব থেকে বেরিয়ে বাস্তবমুখী চিন্তা করতে হবে, ইসলামকে বর্তমান যুগে গ্রহণযোগ্য, প্রয়োগযোগ্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। ইসলাম নিঃসন্দেহে সেই অনন্য গুণাবলীর অধিকারী। তা না হলে ইসলামেরই অবমাননা হবে। –ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৭
ইসলামের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাগুলো কোর'আনের মূলনীতি বজায় রেখে বর্তমান যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে। –ইসলাম কেন আবেদন হারাচ্ছে : পৃ. ২৭
অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, ইসলামকে যুগের আলোকে সংস্কার করতে হবে।
ইসলাম কি বলে?
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সমাজের আলোকে ইসলামের পরিরর্তন নয়, বরং ইসলামের আলোতেই সমাজ সংস্কার করা আমাদের চেতনা। কারণ সমাজের এমন কোনো সমস্যা নেই, যার সমাধান ইসলামে নেই। মহান আল্লাহ বলেন,
مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ
আমি কুরআনে কোন বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে ছাড়িনি। –সুরা আনআম : ৩৮
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ আরও বলেন,
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে এটা প্রতিটি বিষয় সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দেয় এবং মুসলিমদের জন্য হয় হিদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ।। –সুরা নাহল : ৮৯
এজন্য রঈসুল মুফাসসিরিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
لوْ ضَاعَ لِيْ عِقَالُ بَعِيْرٍ لَوَجَدْتُهُ فِيْ كِتَابِ اللهِ
আমার উট বাঁধার একটি দড়িও যদি হারিয়ে যায়, তাহলে আমি তা আল্লাহর কিতাবের মধ্যে খুঁজে পাই। –তাফসীরে রুহুল মাআনী , খ. ২৭ পৃ. ৫৮
অর্থাৎ সকল বিষয় পবিত্র কুরআনে মহান রব বলে দিয়েছেন। আর সেগুলো বুঝার জন্য রাসুলুল্লাহ সাà কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মহান রব বলেন,
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
(হে নবী,) আমি তোমার প্রতিও এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের সামনে সেই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা করে। –সুরা নাহল : ৪৪
তাহলে বোঝা গেলো, কুরআন-হাদিস মানুষের জিবনের সকল বিষয় বলে গেছে। ফলে মহান রব ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইসলামকে এমন একটি চুড়ান্ত ধর্ম হিসাবে ঘোষণা করলেন, যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সর্বকালের, সর্বযুগের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। –সুরা মায়েদা : ৩
সুতরাং যে দ্বীন ইসলামকে মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই পূর্ণাঙ্গ করেছেন, সে দ্বীনকে যুগের আলোকে সংস্কার করার মত সাহস করা কতবড় বিপদজনক বিষয় তা পাঠকমহল একটু ভেবে দেখুন। এমন হিম্মত বা সাহস কি কোন মুসলিম করতে পারে? নিশ্চয় না।
উপরন্তু আল্লাহর দ্বীন তথা ইসলাম যে সর্বকালে অপরিবর্তনশীল, এই মহাসত্যটু আল্লাহ তাআলা ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ থেকেই অনেক সময় তাদের অজান্তেই বের করে দেন। তেমনি হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও। তারা স্পষ্ট করে তাদের অজান্তেই লিখেছে ফেলেছে,
কাজেই এর (ইসলামের) মধ্যে এমন কোন আইন-কানুন নিয়ম আল্লাহ দিলেন না যা পৃথিবীর এক জায়গায় জন্য ঠিক অন্য জায়গার জন্য অঠিক, পালন করা মুশকিল বা অচল। এমনও দিলেন না যা আজ ঠিক আগামীতে কঠিন বা অচল। এক কথায় স্থান বা কালের প্রভাবাধীন নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম : পৃ. ৬৪
মনে রাখা চাই, যারা ইসলামকে এ আধুনিক যুগে অচল বলতে চায়, তারা মূলত ইসলামবিদ্বেষী, বেঈমান। এটা খোদ হেযবুত তওহীদই লিখেছে,
এ কথাও বলে এসেছি যে, এই শ্রেণিটির (ইসলাম বিদ্বেষীদের) মন মগজ তারা কিনে নিয়েছিল। এদের নিজস্ব সত্তা বলতে কিছুই নেই। পাশ্চাত্যের রাজনীতিক, আর্থনীতিক, সামরিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার ব্যবস্থাই হচ্ছে একমাত্র সঠিক ব্যবস্থা, পৃথিবীতে আর কিছুর কোনো অস্তিত্ব নেই। স্রষ্টা, আল্লাহ ঐ সব ব্যাপারে যে ব্যবস্থা বিশ্বনবীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তা তাদের কাছে চৌদ্দশ' বছর আগের এক অশিক্ষিত নিরক্ষর বেদুইন জাতির জন্য প্রযোজ্য হলেও বর্তমান আধুনিক যুগে অচল, তাই পরিত্যাজ্য। একথা তাদের বিগত প্রভুরাই শিখিয়েছেন, তারা শিখেছেন, তাই বিশ্বাস করেন। -শিক্ষ্যাব্যবস্থা : পৃ. ৬৭
ইসলাম বিরোধি শক্তিগুলো ইসলামের নাম শুনলেই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। -সম্মানিত আলেমদের প্রতি : পৃ. ১৫
প্রিয় পাঠক, তারা নিজেরাই যখন এমনটা লিখলো যে, যারা এ যুগে ইসলামকে অচল বলতে চায়, মূলত তাদের পরিচয় হলো, তারা ইসলামবিদ্বেষী। তাহলে সেই একই কথা যখন হেযবুত তওহীদও নিজেদের মুখে আওড়াচ্ছ, তাহলে কী আমরা ধরে নেব না যে, হেযবুত তওহীদও ইসলামবিদ্বেষী?
সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য কী?
প্রিয় পাঠক, হেযবুত তওহীদের 'যুগের আলোকে ধর্মসংস্কার করতে হবে' এ দাবির পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের লুকিয়ে রয়েছে। কারণ যখন তারা ইসলাম সংস্কারের কথা বলে, ইসলামের বিধিবিধানে হাত দেয়ার সুযোগ করে নিতে পারবে, তখন তারা তাদের নিজস্ব মতবাদকে ইসলামের নামে চালিয়ে দিতে পারবে, বানাতে পারবে ধর্মের নামে অধর্ম। যেমনটি করেছিল পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসারী তথা ইহুদী-খ্রিষ্টানরা। ফলে এমন একটা ধর্মের আবিস্কার করবে, যেটা দিয়ে সকল ধর্ম পালন করার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। যুগে যুগে মিথ্যা বিলিন হয়ে যায়, সত্য হয় বিকশিত। মহান রব বলেন,
يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
তারা তাদের মুখ দিয়ে আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন, তা কাফেরদের জন্য যতই অপ্রীতিকর হোক। –সুরা আস-সফ : ৮