প্রশ্নঃ ১০০০০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
১.মেয়েরা কোন জায়গায় যদি পর্দায রক্ষার্থে হাত, পা, মুখ ঢেকে নামাজ পড়ে অর্থাৎ মুখোশ অথবা পাট্টা পড়ে নামায আদায় করে তবে কি নামাজ হবে?
২.কোন জায়গায় মেয়েরা ঘুরতে গেলে পর্দার ওরকম ব্যবস্থা না থাকলে যেখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারবে পর্দার সহিত, তাহলে কি গাড়িতে বসে নামাজ আদায় করতে পারবে?(উল্লেখ্য ওয়াক্ত চলে যাওয়ার ভয় থাকলে।)
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১. পর্দা ও নামাযের বিধান সংক্রান্ত ফোকাহায়ে কেরামদের তাত্ত্বিক আলোচনা অধ্যয়নে অনুভুত যে,
মহিলাদের জন্য বাহিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘নেকাবযুক্ত বোরখা’ ঘরে থাকা অবস্থায় স্বাভাবিক পোশাকের মতই। মহিলাদের জন্য নামাজে সতর ঢাকা যেমনিভাবে জরুরি, তেমনিভাবে পরপুরুষ হতে পর্দা রক্ষা করাও জরুরি তথা ফরজ বিধান। অপরদিকে মহিলাদের জন্য নামাজের সময় হাত, মুখ খোলা রাখা জরুরি নয়, যদিও কিছু হাদিসের মধ্যে পাওয়া যায় যে- রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবায়েকেরাদের সিজদার সময় সামনে কাপড় ফেলে রাখতে নিষেধ করেছেন। উক্ত হাদিসের উত্তরে বলা যায় যে- তা পুরুষের জন্য অথবা সাধারণ অবস্থার জন্য প্রযজ্য। আর মহিলা যখন বাইরে যায় এটা সাধারণ অবস্থা নয় বরং তা ওজরের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে বর্তমান ফিতনার যুগে নারীরা যখন বাইরে যাবে তখন তাদের প্রতিটি পদে-পদে থাকে ফিতনা ও দুর্ঘটনার আশংকা।
তাই পুরুষের দৃষ্টিগোচর হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন স্থানে পর্দা রক্ষার্থে হাত, পা, মুখ ঢেকে নামাজ পড়া অর্থাৎ মুখোশ অথবা পাট্টা পড়ে নামায আদায় করা জায়েজ হবে।
২.গাড়ির সফরে নামাজ আদায়ের দুইটি সুরত হতে পারে—
এক. নামাজে সমস্যা হতে পারে, এমন সময় যানবাহনে ওঠা উচিত নয়। তবে প্রয়োজনে রওয়ানা করতে হলে যেন নামাজ কাজা না হয়; এ ব্যাপারে যত্নবান থাকা চাই।
গাড়ি থেকে বার বার ওঠানামা কষ্টকর হওয়ার কারণে নামাজ কাজা করা যাবে না, বরং নামাজের সময়গুলোতে বাস থামিয়ে নিচে কোনো স্থানে কিয়াম ও রুকু-সিজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করে নেবে।
এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অনেক সময় পুরুষেরা বাস থামিয়ে নামাজ পড়লেও মহিলারা পর্দা অথবা লজ্জার কারণে নামাজ পড়েন না। অথচ এটা গোনাহের কাজ। বরং তারা যথা নিয়মে ওজু করে মসজিদের একপাশে বা অন্য কোনো স্থানে বোরকা পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করবেন।
দুই. কিন্তু যদি গাড়ি, যানবাহান বা বাস থামানো না যায় কিংবা গাড়ি থেকে নামলে সঙ্গী ও বাস চলে যাবে এবং পরবর্তীতে সে বাসে আর উঠতে পারবে না বা তাকে নেওয়া হবে না—এমন আশঙ্কা থাকলে বাসে নামাজ পড়া জায়েজ। এ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ থাকলে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে নেবে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ বসে নামাজ পড়ে, তবে নামাজ হবে না।
যদি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে কিছুতে হেলান দিয়ে দাঁড়াবে। কারণ হাত বাঁধা সুন্নত আর দাঁড়ানো ফরজ। তাই ফরজ রক্ষার্থে সুন্নতের ক্ষেত্রে শিথিলতা মার্জনীয়। পক্ষান্তরে দাঁড়ানোর কোনো প্রকার সুযোগ না থাকলে, বসে ইশারা করে নামাজ পড়ে নেবে। পরে এই নামাজ আর পুনরায় পড়তে হবে না।
যানবাহনে নামাজ পড়ার সময় কেবলামুখি হতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। যদি গাড়ি কেবলামুখ থেকে অন্যদিকে ঘুরে যায়, তবে নামাজে থাকা অবস্থায় কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে যেদিকে মুখ হয়, সেদিকে মুখ রেখেই নামাজ শেষ করবে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেবলামুখি হয়ে নামাজ আদায় না করলে, এই নামাজ পরে আবার পড়ে নিতে হবে। কেবলামুখি হয়ে নামাজ আদায় করতে পারলে, পরে তা আবার আদায় করার প্রয়োজন নেই।
অনুরূপভাবে যদি পানি না থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ে নেবে। এই নামাজও পুনরায় পড়তে হবেনা। আর যদি তায়াম্মুম করারও সুযোগ না থাকে, তবু ইশারায় নামাজ পড়ে নেবে। অবশ্য পরে এই নামাজের কাজা করতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন