রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৬৭৯ টি

হাদীস নং: ২২১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
জনগণের সম্পদ তসরুফ করার পরিণাম
হাদীছ নং : ২২১

হযরত খাওলা বিনত ছামির আল-আনসারিয়াহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত হামযা রাযি.-এর স্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিছু লোক আল্লাহর মালে (সরকারি অর্থ-সম্পদ) অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম -বুখারী।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩১১৮, মুসনাদে আহমান, হাদীছ নং ২৭৩৫৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৭৩০; মুসনাদে আব্দ ইবন হুমাইদ, হাদীছ নং ১৪৩)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
221 - وعن خولة بنتِ ثامر الأنصارية، وهي امرأة حمزة - رضي الله عنه - وعنها، قَالَتْ: سمعت رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إنَّ رِجَالًا يَتَخَوَّضُونَ (1) في مَالِ الله بغَيرِ حَقٍّ، فَلَهُمُ النَّارُ يَومَ القِيَامَةِ». رواه البخاري. (2)
হাদীস নং: ২২২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা

ঈমান ও ইসলামের বদৌলতে আল্লাহ তা'আলার কাছে একজন লোক অনেক মর্যাদাবান হয়ে যায়। তাঁর কাছে এরকম লোকের জান-মাল-ইজ্জত সবকিছুরই মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি চান মানুষ এই মর্যাদা অনুভব করুক ও তা রক্ষায় যত্নবান থাকুক। তাই কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে ঈমানদারদের এ তিন বস্তুর মর্যাদার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাদের হুকুম দেওয়া হয়েছে যেন প্রত্যেকে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। যেন প্রত্যেকে অন্যের জান-মাল-ইজ্জতের মর্যাদা রক্ষায় আন্তরিক থাকে। এর জন্যে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগানোরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বারবার ঘোষণা করা হয়েছে এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই।
কাজেই তারা যেন ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত থাকে এবং কেউ কারও জান-মাল ইজ্জতের মর্যাদাক্ষুণ্নকারী কোনও কাজে লিপ্ত না হয়। সেরকম কাজে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা অন্যের প্রতি জুলুম করা হয়। তাতে জুলুম হয় নিজের প্রতিও। জুলুম করা মহাপাপ। কাজেই একজন অন্যের প্রতি কোনওভাবেই জুলুম করবে না। নিজে জুলুম তো করবেই না। অন্যেও জুলুম করলে সেই ক্ষেত্রে সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। অর্থাৎ মজলুমকে জুলুম থেকে রক্ষা করবে এবং জালেমকেও জুলুম করা হতে বাঁচাবে।
যেহেতু এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, তাই কেবল জুলুম থেকে নিবৃত্ত থাকাই যথেষ্ট নয়; বরং একজন আরেকজনের প্রতি স্নেহ-মমতার আচরণ করবে। স্নেহ-মমতার দাবি অন্যের সুখে সুখী হওয়া ও অন্যের দুঃখে দুঃখবোধ করা। অন্যের বিপদে সাহায্য করা এবং তার যে-কোনও অভাব ও প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করা।অন্যের মান-সম্ভ্রম রক্ষায় ভূমিকা রাখা এবং যে-কোনও অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে তার হেফাজত করা।
এভাবে চলার দ্বারা পরস্পরের মধ্যে ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়। গড়ে উঠে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সমাজ। ফলে প্রত্যেকের পক্ষে আল্লাহ তাআলার মর্জি মোতাবেক জীবন যাপন করা সহজ হয়। সুগম হয়—অন্তর্নিহিত প্রতিভা, সম্ভাবনা ও মুনষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে আখেরাতের মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।

ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে এসব বিষয়-সম্বলিত কয়েকটি আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। এবার আমরা তার বাংলা তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন-আমীন।


‘মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতা'-সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত

وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ

অর্থ : আর যে ব্যক্তি আল্লাহ যেসব জিনিসকে মর্যাদা দিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করবে, তার পক্ষে তার প্রতিপালকের কাছে এ কাজ অতি উত্তম। সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ৩০

ব্যাখ্যা
حُرُمَاتِ শব্দটি حرمة -এর বহুবচন। এর অর্থ মর্যাদা ও নিষিদ্ধতা। পরিভাষায় ওইসকল বস্তু ও বিষয়কে حُرُمَاتِ বলে, যাকে শরীআত মর্যাদাপূর্ণ করেছে। যেমন বায়তুল্লাহ, হারাম শরীফ, মসজিদ, আযান, নামায, কুরআন, হজ্জ, হজ্জের স্থানসমূহ, কুরবানী, কুরবানীর পশু ইত্যাদি। বস্তুত দীন ও শরীআত এবং শরীআতের যাবতীয় বিধান অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। সুতরাং এ শব্দটি দ্বারা সমগ্র দীন ও শরীআত এবং পৃথকভাবে শরীআতের প্রতিটি বিধানকে বোঝানো হয়ে থাকে।

এ আয়াতটি মূলত হজ্জ ও কুরবানী প্রসঙ্গে অবতীর্ণ। সে হিসেবে এর দ্বারা বিশেষভাবে বোঝানো হচ্ছে যে, মসজিদুল হারাম ও কুরবানীর পশুর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা অবশ্যকর্তব্য। আর এর দাবি হচ্ছে, কেউ হজ্জের উদ্দেশ্যে মসজিদুল হারামের পথে আগমন করলে প্রত্যেকের কর্তব্য তার জান-মালের যে-কোনও রকম ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা এবং কোনও হাজী কুরবানীর পশু নিয়ে আসলে তাতে বাধা সৃষ্টি না করে নির্বিঘ্নে তা সেখানে পৌঁছতে দেওয়া ।

তবে আয়াতটি হজ্জ ও কুরবানী সম্পর্কিত হলেও এর শব্দ ব্যাপক অর্থবোধক। কেননা حُرُمَاتِ শব্দটির মধ্যে শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ এবং শরীআত মর্যাদাপূর্ণ করেছে এমন সবকিছুই এসে যায়। সে হিসেবে আয়াতটি দ্বারা দীনের যাবতীয় বিষয়ের মর্যাদা রক্ষার প্রতি তাকিদ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য শরীআত যা-কিছু করতে আদেশ করেছে তা পূর্ণ ভক্তি-শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা। আর যা-কিছু করতে নিষেধ করেছে, পূর্ণ গুরুত্বের সঙ্গে তা থেকে বিরত থাকা। এর দ্বারাই শরীআতের আদেশ-নিষেধের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

এমনিভাবে মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য মসজিদের আদব রক্ষা করা, নামাযীকে সম্মান করা, আলেমকে ভক্তি করা, দীনের খেদমতে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে মর্যাদা দেওয়া এবং এমনিভাবে দীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের কদর করা। কেননা দীনের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকার কারণে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা বলছেন- আল্লাহ তা'আলা যা-কিছুকে মর্যাদাপূর্ণ করেছেন, যে ব্যক্তি তার মর্যাদা রক্ষা করবে, তার জন্য তা উত্তম ও কল্যাণকর। অর্থাৎ মর্যাদাপূর্ণ বিষয়ের মর্যাদা রক্ষা করার দ্বারা তার নিজেরই কল্যাণ সাধিত হবে।

বলা হয়েছে, فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ (এটা উত্তম ও কল্যাণকর তার প্রতিপালকের কাছে)। এর দ্বারা বান্দার দৃষ্টিকোণ আল্লাহর দিকে ফেরানো হয়েছে। অর্থাৎ এসব বস্তুর মর্যাদা রক্ষা করবে নিজ প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে, তাঁর সন্তুষ্টিবিধানের জন্য এবং তাঁরই কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশায়; মানুষের কাছে কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় নয় এবং নয় পার্থিব কোনও স্বার্থে। আর যেহেতু মানুষের কাছে কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকবে না, তাই মানুষ যদি এ কাজে নিরুৎসাহিত করে বা বাধা দেয় কিংবা সমাজ ও পরিবেশ তা পসন্দ না করে, তবে উৎসাহ হারানো ও দমে যাওয়া চলবে না। সমাজ ও মাখলূক দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে যথারীতি আপন কর্তব্য পালনে রত থাকতে হবে।

আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন যে, এর কল্যাণ ও উত্তম প্রতিদান আল্লাহ তাআলার কাছে আছে। সুতরাং সম্মান প্রদর্শনের কাজটি বৃথা যাওয়ার নয়। আখেরাতে এর বিনিময় তো পাওয়া যাবেই, আল্লাহ চাহেন তো দুনিয়ায়ও এর নগদ পুরস্কার লাভ হতে পারে। বস্তুত দীন ও শরীআতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তথা তার অনুসরণ দ্বারা পার্থিব কল্যাণও লাভ হয়ে থাকে; বরং পার্থিব প্রকৃত কল্যাণ এর মধ্যেই নিহিত ।

দুই নং আয়াত

وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
অর্থ : আর কেউ আল্লাহর ‘শাআইর’-কে সম্মান করলে এটা তো অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই অর্জিত হয়। সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ৩২

ব্যাখ্যা
আল্লাহর শা’আইর মানে আল্লাহর দীনের শাআইর। شَعَائِرَ শব্দটি شعيرة বা شعار-এর বহুবচন। এর অর্থ আলামত ও নিদর্শন। পরিভাষায় শাআইর (شَعَائِرَ) বলা হয় বিষয় ও বস্তুকে, যা কোনও ধর্ম বা মতাদর্শের একান্ত বিষয় ও তার এমনসব পরিচায়ক। সুতরাং ‘দীনে ইসলাম'-এর শাআইর বলতে এমনসব বিষয় ও বস্তুকে বোঝাবে, যা এ দীনের পরিচয় বহন করে বা যা একান্তভাবে এ দীনের সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত। এভাবেও বলা যায় যে, যেসকল বিষয় দেখলে বা শুনলে বোঝা যায় যে, এটা কেবল ইসলামেরই জিনিস, অন্যকিছুর নয়, তাকেই দীনের শাআইর বলে। যেমন ওযূ, আযান, নামায, মসজিদ, বায়তুল্লাহ, হজ্জের স্থানসমূহ, কুরবানীর পশু, কুরআন এবং দীনের প্রকাশ্য বিধানাবলী ।

এ আয়াতে দীনের শাআইরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ এটা অন্তরের তাকওয়া থেকেই অর্জিত হয়'। অর্থাৎ যার অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি আছে, সে-ই এটা করে। সে হিসেবে এটা তাকওয়ার আলামতও বটে। এ আয়াত দ্বারা জানা গেল, তাকওয়া অন্তরের বিষয়। এক হাদীছেও আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ বুকের দিকে ইশারা করে বলেন-
أَلَا إِنَّ التَّقْوَى ههُنَا
‘জেনে রেখ, তাকওয়া এখানে'।

তাকওয়া যেহেতু অন্তরের বিষয়, তাই তা চোখে দেখা যায় না। আলামত দ্বারা বোঝা যায়। শাআইরকে সম্মান করা একটা আলামত। কেউ এটা করলে এর দ্বারা বোঝা যায় তার অন্তরে তাকওয়া আছে।

এ আয়াত দ্বারা মূলত মু'মিন-মুত্তাকীকে তাগিদ করা হয়েছে সে যেন দীনের শা‘আইর ও নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে ও তার আদব বজায় রাখে। সুতরাং মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য মসজিদ ও বায়তুল্লাহর আদব রক্ষা করা, কুরআন ও আযানের তাযীম করা, কুরবানীর পশুকে গুরুত্বদান ও যত্ন করা, দীনী কাজের কেন্দ্রসমূহ ও তাতে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের কদর করা ইত্যাদি।

এর আগের আয়াতে শিরকী কর্মকাণ্ডের নিন্দা করা হয়েছে, যার সারকথা হচ্ছে- গায়রুল্লাহকে সম্মান ও শ্রদ্ধাভক্তি করা একটি নিন্দনীয় কাজ এবং সে শ্রদ্ধাভক্তি যদি আল্লাহ তা'আলাকে শ্রদ্ধাভক্তির সমপর্যায়ের হয়ে যায়, তবে তো তা সম্পূর্ণরূপেই বেঈমানী কাজ। এর দ্বারা কেউ মনে করতে পারত যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনওকিছুকে কোনওপর্যায়েই শ্রদ্ধাভক্তি করা যাবে না। এ আয়াত সে ধারণা খণ্ডন করে দিচ্ছে। এতে বলা হয়েছে যে, যে-কোনও গায়রুল্লাহকে যে-কোনও পর্যায়ের শ্রদ্ধাভক্তি করা নিন্দনীয় নয়; বরং যেসকল ব্যক্তি ও বিষয় আল্লাহ তা'আলার সাথে সম্পৃক্ত, শরীআত প্রদর্শিত পন্থায় তার সম্মান রক্ষা করা আল্লাহ তা'আলারই হুকুম এবং এটা করা তাকওয়া ও আল্লাহভীতির অন্তর্ভুক্ত।

তিন নং আয়াত
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ : আর যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য তোমার (বাৎসল্যের) ডানা নামিয়ে দাও। সূরা হিজর (১৫), আয়াত ৮৮

ব্যাখ্যা
جناح-এর অর্থ ডানা। মৌলিকভাবে শব্দটি পাখির ডানার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। মানুষের হাত বোঝানোর জন্যও এর ব্যবহার আছে। যেমন কুরআন মাজীদে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক আদেশ উদ্ধৃত হয়েছে যে-

وَاضْمُمْ إِلَيْكَ جَنَاحَكَ مِنَ الرَّهْبِ

‘ভয় দূর করার জন্য তোমার বাহু নিজ শরীরে চেপে ধর। সূরা কাসাস (২২), আয়াত ৩২

পিতামাতার প্রতি কোমল ব্যবহারের নির্দেশ সম্পর্কিত এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ

‘তাদের প্রতি মমতায় নম্রতার ডানা নামিয়ে দাও। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ২৪

আলোচ্য আয়াতে ‘ডানা নামানো’ দ্বারা নম্রতা ও মমত্বপূর্ণ আচরণ বোঝানো হয়েছে। ‘ডানা নামানো’ কথাটি আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয় পাখির ক্ষেত্রে। পাখি যখন তার ছানাদেরকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়, তখন প্রথমে ডানা বিস্তার করে দেয়, তারপর ছানারা যখন তার শরীরের সঙ্গে এসে মিশে যায়, তখন তাদের উপর তা নামিয়ে দেয়। এটা ছানাদের প্রতি তার মমত্বের আচরণ। নিজ অনুসারী ও অধীন ব্যক্তিবর্গকে অনুরূপ কাছে নিয়ে আসা ও তাদের প্রতি মমত্বের আচরণ করাকে পাখির এ আচরণের সঙ্গে উপমিত করা হয়েছে এবং সে হিসেবেই পাখির জন্য ব্যবহৃত শব্দমালাকে এস্থলে ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং ‘মুমিনদের প্রতি ডানা নামিয়ে দাও’ -এর অর্থ হবে- যারা তোমার প্রতি ঈমান এনেছে, তুমি তাদের প্রতি নম্র-কোমল ও মমত্বের আচরণ কর, যাতে তারা তোমার কাছে কাছে থাকে, দূরে সরে না যায়।

সরাসরি এ আদেশটি করা হয়েছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। এ আয়াতে প্রথমে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছিল যেন তিনি কাফেরদের বিত্ত-বৈভবের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করেন। কেননা তাঁকে যে-কুরআন ও আসমানী ইলম দেওয়া হয়েছে সে তুলনায় ওসব বিত্ত-বৈভবের কোনও মূল্য নেই। এমনিভাবে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছিল তারা ঈমান না আনার কারণে তিনি যেন তাদের প্রতি দুঃখ ও আক্ষেপ প্রকাশ না করেন। কেননা সত্য সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তাদের ঈমান না আনাটা কেবলই তাদের অহমিকা ও হঠকারিতা। যারা অহংকার ও হঠকারিতার কারণে সত্য প্রত্যাখ্যান করে ও সত্যের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে, তারা এমন মমত্ব ও বাৎসল্য পাওয়ার উপযুক্ত নয়। তা পাওয়ার উপযুক্ত তো ওইসকল মুমিন ও মুসলিম, যারা গরীব ও অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সত্য কবুল করে নিয়েছে এবং সত্যের প্রচার-প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে। তাই আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তাআলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ করেছেন যেন তিনি গরীব মুসলিমদের প্রতি নম্রকোমল হয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি এই চরিত্রেরই ছিলেন। তারপরও তাঁকে এ আদেশদান দ্বারা মূলত আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, আমরা যেন একে অন্যের প্রতি কোমল আচরণ করি ও মায়া-মমতার সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। যেমন সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-

أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ
‘যারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর। সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৫৪

অপর এক আয়াতে আছে-

مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। সূরা ফাত্হ (৪৮), আয়াত ২৯

চার নং আয়াত

مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا

অর্থ : কেউ যদি কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণরক্ষা করল। সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৩২

ব্যাখ্যা
অর্থাৎ অন্যায়ভাবে কোনও এক ব্যক্তিকে হত্যা করার অপরাধ দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলে যে অপরাধ হয় তার সমতুল্য। কেননা কোনও ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে কেবল তখনই হত্যা করতে পারে, যখন তার অন্তরে মানুষের প্রাণের মর্যাদা বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এরূপ ব্যক্তি নিজের তুচ্ছ তুচ্ছ স্বার্থের খাতিরে একের পর এক নরহত্যায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ অন্যায়ভাবে যে ব্যক্তি কোনও একজন মানুষকে হত্যা করে, সে প্রয়োজনে জগতের সমস্ত মানুষকেও হত্যা করতে পারবে। সে হিসেবেই বলা হয়েছে- সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল।

তাছাড়া অন্যায় নরহত্যা দ্বারা যখন কেউ তার হীন স্বার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়, তখন অন্যরাও তা দ্বারা উৎসাহ পায়। তার দেখাদেখি অন্যরাও নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য খুনখারাবি করতে সাহসী হয়ে ওঠে। এভাবে মানুষের অন্তর থেকে ব্যাপকভাবে অন্যের জান-মালের মর্যাদাবোধ লোপ পেয়ে যায়। আর যখন এ জাতীয় মানসিকতা ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন সমস্ত মানুষই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। এদিকে লক্ষ করলে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করার নামান্তর হয়ে যায়।

এর দ্বারা স্পষ্ট করা হয়েছে যে, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা কী গুরুতর পাপ । অর্থাৎ দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করা যে পর্যায়ের পাপ, একজনমাত্র মানুষকে হত্যা করাও যেন সেই পর্যায়ের পাপ।

এ আয়াত মুমিনদের অন্তরে মানুষের প্রাণের মর্যাদাবোধ সঞ্চার করে। মুমিনকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, অন্যায় নরহত্যাকে তুমি দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করার সমতুল্য পাপ মনে করে অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকবে। নিজে তো বিরত থাকবেই, সেইসঙ্গে অন্যকেও বিরত রাখার চেষ্টা করবে। যদি কারও দ্বারা কখনও এ অপরাধ হয়ে যায়, তবে হত্যাকারীকে সমস্ত মানুষের হত্যাকারীরূপে সর্বাপেক্ষা গুরুতর অপরাধী গণ্য করবে এবং তাকে বিচারের আওতায় আনতে ভূমিকা রাখবে; তাতে সে নিহত ব্যক্তি যে-ই হোক না কেন ।

তারপর এ আয়াতে বলা হয়েছে- وَمَنْ أَحْيَاهَا আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করে (সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করল)'। أَحْيَا-এর মূল অর্থ জীবিত করল। এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য জীবনরক্ষায় ভূমিকা রাখল। কেননা জীবিত করা কেবল আল্লাহ তাআলারই কাজ। এটা কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ কেবল জীবনরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। এটা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করা, কোথাও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তার ভেতর থেকে মানুষজনকে বের করে আনার চেষ্টা করা, ভূমিধ্বস বা ভূমিকম্পে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চাপা পড়ামানুষকে উদ্ধার করা, অন্যায় বিচারকার্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির মুক্তিতে সহায়তা করা, মরণব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করা ইত্যাদি। মানুষের জীবনরক্ষামূলক এ জাতীয় প্রচেষ্টা আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই প্রশংসনীয়। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এরূপ প্রচেষ্টাকে 'জীবনরক্ষা' না বলে 'জীবিত করা' শব্দে প্রকাশ করেছেন। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার কাজের একপ্রকার মূল্যায়ন কতইনা মেহেরবান মহান আল্লাহ। সেইসঙ্গে তিনি কোনও এক ব্যক্তির প্রাণরক্ষাকে সমস্ত মানুষের প্রাণরক্ষাতুল্য গণ্য করেছেন। অর্থাৎ এক ব্যক্তির প্রাণরক্ষা করলে ওই পরিমাণ ছাওয়াব পাওয়া যাবে, যা সমস্ত মানুষের প্রাণরক্ষা করে পাওয়া সম্ভব।

এক ব্যক্তির প্রাণরক্ষা বাস্তবিকপক্ষেও সমস্ত মানুষের প্রাণরক্ষা করার সমতুল্য। কেননা যে ব্যক্তি এটা করে, তার অন্তরে মানুষের প্রাণের মর্যাদাবোধ আছে বলে প্রমাণিত হয়। আর যার অন্তরে মানবপ্রাণের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত আছে, তার দিক থেকে দুনিয়ার সমস্ত মানুষই নিরাপদ থাকবে। সে কোনও অবস্থায় অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে না। দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করার ক্ষমতা থাকলেও সে অবশ্যই এ গুরুতর অপরাধ করা হতে নিজেকে বিরত রাখবে।

তাছাড়া যে ব্যক্তি মানুষের জীবনরক্ষায় ভূমিকা রাখে, তার দেখাদেখি অন্য মানুষও এ কাজে অনুপ্রাণিত হয়। অন্যদের অন্তরেও মানুষের প্রাণের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। বলাবাহুল্য- সমাজের সর্বস্তরে মানুষের মর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষের জান- মালের নিরাপত্তাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এ হিসেবে কোনও একজনের প্রাণরক্ষা সমস্ত মানুষের প্রাণরক্ষাতুল্য একটি মহত্তম কাজই বটে।

কাউকে কুফর থেকে ঈমান ও ইসলামের দিকে নিয়ে আসাটাও একরকম জীবনদান। হাসান বসরী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তিকে কুফর থেকে মুক্ত করা জীবনদানের শ্রেষ্ঠতম স্তর। এর প্রমাণ কুরআন মাজীদের আয়াত-
أَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَنْ مَثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِنْهَا
‘একটু বল তো, যে ব্যক্তি ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ওই ব্যক্তির মত হতে পারে, যার অবস্থা এই যে, সে অন্ধকার দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে কখনও বের হতে পারবে না? সূরা আন'আম (৬), আয়াত ১২২

এখানে ‘মৃত’ বলে কাফের ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে আর তাকে জীবিত করা দ্বারা ঈমান দান করা বোঝানো হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা গেল কোনও অমুসলিম ব্যক্তিকে দাওয়াত দিয়ে ঈমানের উপর নিয়ে আসাও তাকে একরকম জীবন দান করাই বটে। আর এটা শ্রেষ্ঠতম জীবনদান এ কারণে যে, এর ভিত্তিতে মৃত্যুর পর স জান্নাতের অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারবে।

এ আয়াতে অন্যায় নরহত্যাকে গুরুতর পাপ সাব্যস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে-

بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ
‘তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়'।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি এমন কাউকে হত্যা করে, যে নিজে কাউকে হত্যা করেনি কিংবা সে পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারমূলক কর্মকাণ্ডও করেনি। এর দ্বারা বোঝা যায়, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে বা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারমূলক কর্মকাণ্ড করে, তাকে হত্যা করা পাপ নয়; বরং তাকে হত্যা করা যাবে। এটা ভিন্ন কথা যে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায় না। আইনপ্রয়োগ সরকারের কাজ। শরীআত হত্যাকারীকে হত্যা করার অধিকার জনসাধারণকে দেয়নি; বরং এ দায়িত্ব অর্পণ করেছে শাসকদের উপর। শাসকদেরই কর্তব্য হত্যাকারীর উপর শরীআতনির্ধারিত দণ্ডবিধান কার্যকর করা।

যাহোক এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় দুই শ্রেণীর লোকের প্রাণের নিরাপত্তা থাকে না- ক. যারা নরহত্যার অপরাধ করে এবং খ. যারা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারমূলক কর্মকাণ্ড করে। শরীআত এদেরকে প্রাণদণ্ডের বিধান দিয়েছে।

‘অশান্তি বিস্তারমূলক’ কথাটি অনেক ব্যাপক। ডাকাতি করা, ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, জনমনে ত্রাস সৃষ্টিকারী তৎপরতায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি সবই অশান্তি বিস্তারমূলক কাজ। এসব কাজের ধরন অনুপাতে শরীআত বিভিন্নরকম শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। কাজটি যদি খুন-খারাবিমূলক হয়, তবে তার জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা। সে হিসেবে এটা প্রথম প্রকারেরই অন্তর্ভুক্ত। তবে অধিকতর ভয়ানক হওয়ার কারণে একে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

এর বাইরেও এমনকিছু অপরাধ আছে, যাতে লিপ্ত ব্যক্তির উপর প্রাণদণ্ডের বিধান আরোপিত হয়। যেমন মুরতাদ অর্থাৎ যে মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম পরিত্যাগ করে, শাসকের কর্তব্য তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া। এটা সম্পূর্ণ ইনসাফভিত্তিক আইন। রাষ্ট্রদ্রোহী যদি মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত হয়, তবে আল্লাহদ্রোহী কেন এ শাস্তির উপযুক্ত হবে না, যখন সে একইসঙ্গে আল্লাহদ্রোহী হওয়ার পাশাপাশি মুসলিম রাষ্ট্রেরও বিদ্রোহী বটে?

এমনিভাবে বিবাহিত নর-নারী ব্যভিচারের অপরাধ করলে শরীআত তাদেরকেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছে।

এই মোট তিন প্রকার হল। ইসলামের কারণে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনও ব্যক্তি এ তিন প্রকারের যে-কোনও একটিতে লিপ্ত হলে তার প্রাণের নিরাপত্তা বাতিল হয়ে যায় এবং ইসলামী আইন অনুযায়ী তাকে হত্যা করা আদালতের দায়িত্ব হয়ে যায়। এছাড়া অন্য কোনও অপরাধের কারণে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা যায় না। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ ، إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ : النَّفْسُ بِالنَّفْسِ ، وَالثَّيِّبُ الزَّانِي ، وَالْمُفَارِقُ لِدِينِهِ , التَّارِكُ لِلْجَمَاعَةِ
‘কোনও মুসলিম ব্যক্তির রক্ত তিনটি কারণের কোনও একটি ছাড়া হালাল হয়। না-(ব্যভিচারের কারণে) বিবাহিত ব্যভিচারকারী(-এর রক্ত হালাল হয়ে যায় অর্থাৎ তার প্রাণের নিরাপত্তা বাতিল হয়ে যায়), কাউকে হত্যার কারণে হত্যাকারীকে হত্যা করা এবং যে ব্যক্তি দীন পরিত্যাগ করে মুসলিম জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় (দীন পরিত্যাগের কারণে তারও প্রাণের নিরাপত্তা রহিত হয়ে যায়)।[১]

[১] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৮৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৪০২; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪৪; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ১১৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৩৭; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৫৩৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪০১৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪০৮
মুমিনদের পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা
হাদীছ নং : ২২২

হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুমিন মুমিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। এই বলে তিনি এক হাতের আঙ্গুলসমূহ অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখান -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৮১০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৮৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৬০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৩১; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৭৯০)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّه} [الحج: 30]، وَقالَ تَعَالَى: {وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ} [الحج: 32]، وَقالَ تَعَالَى: {وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ} [الحجر: 88]، وَقالَ تَعَالَى: {مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا} [المائدة: 32].
222 - وعن أَبي موسى - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «المُؤْمِنُ للْمُؤْمِنِ كَالبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا» وشبَّكَ بَيْنَ أصَابِعِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২২৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
ধারালো অস্ত্র বহনে সতর্কতা অবলম্বনের আবশ্যিকতা
হাদীছ নং : ২২৩

হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তি আমাদের কোনও মসজিদ অথবা বাজারের মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে যদি তার সঙ্গে তীর থাকে, তবে সে যেন তার ফলা নিজ হাত দ্বারা ধরে রাখে, পাছে কোনও মুসলিমের গায়ে তার কিছুটা লেগে যায় -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭০৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬১৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫৮৭; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ৮০৫৭; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৭৭৮; সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীছ নং ১৩১৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫৭৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
223 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ مَرَّ في شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنا، أَوْ [ص:96] أَسْوَاقِنَا، وَمَعَهُ نَبْلٌ فَلْيُمْسِكْ، أَوْ لِيَقْبِضْ عَلَى نِصَالِهَا (1) بكَفّه؛ أَنْ يُصِيبَ أحَدًا مِنَ المُسْلِمِينَ مِنْهَا بِشَيْء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
হাদীস নং: ২২৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
মুমিনদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার সঙ্গে থাকার নির্দেশ
হাদীছ নং : ২২৪

হযরত নু'মান ইবন বাশীর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ামায়া ও সহমর্মিতায় মুমিনদের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মত, যার কোনও এক অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়লে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নির্ঘুম ও জ্বরে তার অংশীদার হয়ে যায় -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬০১১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৮৬; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৪৩০; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৬২৭; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৩৭২)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
224 - وعن النعمان بن بشير رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২২৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
শিশুকে আদর-সোহাগ করা ও চুমু খাওয়া
হাদীছ নং : ২২৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ইবন আলী রাযি.-কে চুমু দিলেন। তখন তাঁর কাছে আকরা‘ ইবন হাবিস উপস্থিত ছিলেন। (তাঁর চুমু দেওয়া দেখে) আকরা‘ বললেন, আমার দশটি সন্তান আছে, আমি তাদের কাউকে কখনও চুমু দেইনি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি দয়া করে না তার প্রতি দয়া করা হয় না -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৩১৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫২১৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯১১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৫৭; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩৫৭৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
225 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَبَّلَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - الحَسَنَ بْنَ عَليٍّ رضي الله عنهما، وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِس، فَقَالَ الأقْرَعُ: إن لِي عَشرَةً مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أحَدًا. فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «مَنْ لا يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২২৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
শিশুদের চুমু দেওয়া অন্তরস্থ রহমতের প্রকাশ
হাদীছ নং : ২২৬

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বেদুঈনদের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসল। তারা বলল, আপনারা কি আপনাদের শিশুদের চুমু দেন? তিনি বললেন, হাঁ। তারা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা কিন্তু চুমু দেই না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে রহমত তুলে নিয়ে থাকেন, তবে আমি কি কিছু করার ক্ষমতা রাখি! বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৩১৭; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৬৫; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৯০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৪০৮; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৪৮)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
226 - وعن عائشة رضي الله عنها، قَالَتْ: قَدِمَ نَاسٌ مِنَ الأعْرَابِ عَلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم فقالوا: أتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ» قالوا: لَكِنَّا والله مَا نُقَبِّلُ! فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أَوَ أَمْلِك إنْ كَانَ اللهُ نَزَعَ مِنْ قُلُوبِكُم الرَّحْمَةَ!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২২৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
মানুষের প্রতি দয়া ও রহমত করার গুরুত্ত
হাদীছ নং : ২২৭

হযরত জারীর ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তা'আলাও তার প্রতি দয়া করেন না -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৩১৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৩৬২; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৮২১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৬৫; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২২৩৮)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
227 - وعن جرير بن عبد الله - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ لاَ يَرْحَم النَّاسَ لاَ يَرْحَمْهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২২৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
জামাতের নামায সংক্ষিপ্ত করার হুকুম
হাদীছ নং : ২২৮

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মানুষকে নিয়ে নামায পড়ে সে যেন সংক্ষেপ করে, কেননা তাদের মধ্যে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোক রয়েছে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যখন একা নামায পড়ে, সে যতটা ইচ্ছা দীর্ঘ করুক -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৬৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৭৯৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১০৩০৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ১৭৬০; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৮২৩)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
228 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ للنَّاسِ فَلْيُخَفِّفْ، فَإنَّ فيهِم الضَّعِيفَ وَالسَّقِيمَ وَالكَبيرَ، وَإِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّل مَا شَاءَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: «وذَا الحَاجَةِ».
হাদীস নং: ২২৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
উম্মতের কষ্ট-ক্লেশ বিবেচনায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাঁর পসন্দনীয় কাজ পরিত্যাগ
হাদীছ নং : ২২৯

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও কোনও আমল একান্তভাবেই করতে চাইতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এই ভয়ে তা ছেড়ে দিতেন যে, লোকেরা তা করতে থাকবে, ফলে তা তাদের উপর ফরয করে দেওয়া হবে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১১২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭১৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১২৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫৪৫১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩১৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৯১৩)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
229 - وعن عائشة رضي الله عنها، قَالَتْ: إنْ كَانَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - لَيَدَعُ العَمَلَ، وَهُوَ يُحبُّ أَنْ يَعْمَلَ بِهِ؛ خَشْيَةَ أَنْ يَعمَلَ بِهِ النَّاسُ فَيُفْرَضَ علَيْهِمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৩০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
সওমে বিসালের প্রতি নিষেধাজ্ঞা
হাদীছ নং : ২৩০

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের প্রতি মমতাবশে তাঁদেরকে ‘বিসাল’ (অর্থাৎ রাতেও অভুক্ত থেকে দুই রোযাকে পরস্পর সংযুক্ত) করতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা বললেন, আপনি যে বিসাল করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মত নই। আমি এই অবস্থায় রাত যাপন করি যে, আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান -বুখারী ও মুসলিম।
এর অর্থ- আল্লাহ তাআলা পানাহারকারী ব্যক্তির মত শক্তি আমাকে দান করেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৯৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১১০২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১০৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং৩৫৭৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৩৭৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৩৩০০)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
230 - وَعَنْهَا رضي الله عنها، قَالَتْ: نَهَاهُمُ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - عنِ الوِصَال (1) رَحمَةً لَهُمْ، فَقَالُوا: إنَّكَ تُوَاصِلُ؟ قَالَ: «إنّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ، إنِّي أبيتُ يُطْعمُني رَبِّي وَيَسقِيني». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
مَعنَاهُ: يَجْعَلُ فِيَّ قُوَّةَ مَنْ أَكَلَ وَشَرِبَ.
হাদীস নং: ২৩১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
শিশু ও তার মায়ের প্রতি সহমর্মিতায় নামায সংক্ষেপ করা
হাদীছ নং : ২৩১

হযরত আবূ কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি নামাযে দাঁড়াই আর আমার ইচ্ছা থাকে তা দীর্ঘায়িত করা। তারপর শিশুর কান্না শুনতে পাই আর (নামায দীর্ঘ করলে) আমি তার মাকে কষ্ট দিয়ে ফেলব এ আশঙ্কায় আমি নামায সংক্ষিপ্ত করি -বুখারী।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭০৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৭৮৯; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৮২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২৬০৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪০৪২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৯৮৯)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
231 - وعن أَبي قَتادةَ الحارثِ بن رِبعِي - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنِّي لأَقُومُ إِلَى الصَّلاة، وَأُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا، فَأَسْمَع بُكَاءَ الصَّبيِّ فَأَتَجَوَّزَ في صَلاتي كَرَاهية أَنْ أشُقَّ عَلَى أُمِّهِ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ২৩২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
ফজরের নামায আদায়কারীকে আল্লাহপ্রদত্ত নিরাপত্তা এবং তা রক্ষায় মুমিনদের বাধ্যবাধকতা
হাদীছ নং : ২৩২

হযরত জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল। সুতরাং আল্লাহ যেন তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তোমাদেরকে তলব না করেন। কেননা আল্লাহ তাঁর যিম্মার ব্যাপারে যাকে তলব করবেন, তাকে অবশ্যই পাকড়াও করবেন, তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন - মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৬৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৮০৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৯৪৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১৮০; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৫৮১; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৬৫৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
232 - وعن جندب بن عبد الله - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ صَلَّى صَلاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ في ذِمَّةِ (1) الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته بشَيءٍ، فَإنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ في نَارِ جَهَنَّمَ». رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ২৩৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কয়েকটি দাবি
হাদীছ নং : ২৩৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে (শত্রুর হাতে অসহায়ভাবে) পরিত্যাগ করবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন সমাধায় রত থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন সমাধা করতে থাকেন। যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমের কোনও একটি বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমকে গোপন রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে গোপন রাখবেন -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৮০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৮৯৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৪২৬ ; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৫৬৪৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
233 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِم، لا يَظْلِمهُ، وَلاَ يُسْلمُهُ. مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَومَ القِيامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৩৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
এক মুসলিমের প্রতি আরেক মুসলিমের কয়েকটি কর্তব্য
হাদীছ নং : ২৩৪

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার সঙ্গে খেয়ানত করে না, তাকে মিথ্যা বলে না এবং তাকে অসহায় ছেড়ে দেয় না। এক মুসলিমের সবই অপর মুসলিমের উপর হারাম- তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত। (তারপর তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন,) তাকওয়া এখানে। এক ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করবে -তিরমিযী।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭২২; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৪৯৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬২৩৩)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
234 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «المُسْلِمُ أخُو المُسْلِمُ، لاَ يَخُونُهُ، وَلاَ يَكْذِبُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِم حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالهُ وَدَمُهُ، التَّقْوى هاهُنَا، بحَسْب امْرىءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أخَاهُ المُسْلِم». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ২৩৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
ইসলামী আখলাক-চরিত্রের বিশেষ কয়েকটি দিক
হাদীছ নং : ২৩৫

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা একে অন্যের প্রতি হাসাদ করো না, প্রতারণামূলক দালালী করো না, ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অন্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, একজনের বেচাকেনার উপর আরেকজন বেচাকেনা করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে তুচ্ছ গণ্য করে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেয় না। তাকওয়া এখানে- তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথাটি তিনবার বললেন। কোনও ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে। এক মুসলিমের সবকিছু অপর মুসলিমের প্রতি হারাম- তার রক্ত, তার সম্পদ ও তার ইজ্জত – মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৭১৩; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৪৯৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬২৩৩)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
235 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «لا تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ يَبعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْع بَعْض، وَكُونُوا عِبَادَ الله إخْوَانًا، المُسْلِمُ أخُو المُسْلم: لاَ يَظْلِمُهُ، وَلا يَحْقِرُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، التَّقْوَى هاهُنَا - ويشير إِلَى صدره ثلاث مرات -- بحَسْب امْرىءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحقِرَ أخَاهُ المُسْلِمَ، كُلُّ المُسْلم عَلَى المُسْلم حَرَامٌ، دَمُهُ ومَالُهُ وعرْضُهُ». رواه مسلم. (1)
«النَّجْشُ»: أَنْ يزيدَ في ثَمَنِ سلْعَة يُنَادَى عَلَيْهَا في السُّوقِ وَنَحْوه، وَلاَ رَغْبَةَ لَهُ في شرَائهَا بَلْ يَقْصدُ أَنْ يَغُرَّ غَيْرَهُ، وهَذَا حَرَامٌ.
وَ «التَّدَابُرُ»: أَنْ يُعْرضَ عَنِ الإنْسَان ويَهْجُرَهُ وَيَجْعَلهُ كَالشَيءِ الَّذِي وَرَاء الظَّهْر وَالدُّبُر.
হাদীস নং: ২৩৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
নিজ পসন্দের বিষয় অন্যের জন্যও পসন্দ করা
হাদীছ নং : ২৩৬

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য পসন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পসন্দ করে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪৫; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৫১৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫০১৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৮০১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৩৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৬১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪৭৫; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২৭৮২)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
236 - وعن أنس - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأخِيهِ مَا يُحِبُّ لنَفْسِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২৩৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
জালেম ও মজলুমকে জুলুম থেকে বাঁচাতে সাহায্য করা
হাদীছ নং : ২৩৭

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালেম হোক বা মজলুম। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে মজলুম হলে তো তাকে সাহায্য করব, কিন্তু বলুন তো সে যদি জালেম হয়, তবে আমি কিভাবে তাকে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তুমি তাকে জুলুম করা হতে বিরত রাখবে অথবা তাকে বাধা দেবে, এটাই তাকে সাহায্য করা -বুখারী।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫১৬৭; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৫০৯ শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭২০১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৫১৭)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
237 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «انْصُرْ أخَاكَ ظَالمًا أَوْ مَظْلُومًا» فَقَالَ رجل: يَا رَسُول اللهِ، أنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا، أرَأيْتَ إنْ كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أنْصُرُهُ؟ قَالَ: «تحْجُزُهُ - أَوْ تمْنَعُهُ - مِنَ الظُلْمِ فَإِنَّ ذلِكَ نَصرُهُ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ২৩৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের কয়েকটি হক
হাদীছ নং : ২৩৮

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক পাঁচটি- সালামের জবাব দেওয়া; অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া; জানাযায় অংশগ্রহণ করা; দাওয়াত কবুল করা ও হাঁচিদাতার (আলহামদুলিল্লাহ বলার) জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা -বুখারী ও মুসলিম।[১]

মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, (এক মুসলিমের উপর অপর) মুসলিমের হক ছয়টি- তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাত করবে, তখন তাকে সালাম দেবে; সে তোমাকে ডাকলে (বা দাওয়াত দিলে) জবাব দেবে; তোমার কাছে কল্যাণকামিতা প্রত্যাশা করলে তুমি তার প্রতি কল্যাণকামিতার আচরণ করবে; সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে তুমি তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে; সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে আর সে মারা গেলে তুমি তার জানাযায় শরীক হবে।

[১] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১২৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২১৬২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪৩৫; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৪১; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৬১৬; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৮০ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৩৭৭; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৯২৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৪০৫
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
238 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم خَمْسٌ: رَدُّ السَّلامِ، وَعِيَادَةُ المَريض، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإجَابَةُ الدَّعْوَة، وتَشْميتُ (1) العَاطِسِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
وفي رواية لمسلم: «حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم سِتٌّ: إِذَا لَقيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَشَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ، وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ».
হাদীস নং: ২৩৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
সাতটি বিষয়ের আদেশ ও সাতটি বিষয়ে নিষেধ
হাদীছ নং : ২৩৯

হযরত বারা ইবন আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয় করতে আদেশ করেছেন ও সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- রোগীর খোঁজখবর নিতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, হাঁচিদাতার জবাব দিতে, কসমকারীর কসম রক্ষায় সহযোগিতা করতে, মজলুমের সাহায্য করতে, দাওয়াতদাতার দাওয়াত কবুল করতে এবং সালামের প্রসার ঘটাতে। আর তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি ব্যবহার করতে, রুপার পাত্রে পান করতে, লাল রঙের রেশমী গদিতে বসতে, কাসসী (রেশম ও তুলার সুতায় তৈরি কাপড়) ব্যবহার করতে, (খালেস) রেশমী পোশাক, ইসতাবরাক ও দীবাজ ব্যবহার করতে -বুখারী ও মুসলিম।

এক বর্ণনায় প্রথম সাতটির মধ্যে ‘হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা’-এর উল্লেখ আছে।

(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১২৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৮০৯; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৯৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৬৪৪; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৯২৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৫৮৪৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
239 - وعن أَبي عُمَارة البراءِ بن عازب رضي الله عنهما، قَالَ: أمرنا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بسبع، ونهانا عن سبع: أمَرَنَا بعيَادَة المَرِيض، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ، وَإبْرار المُقْسِم، ونَصْرِ المَظْلُوم، وَإجَابَةِ الدَّاعِي، وَإِفْشَاءِ السَّلامِ، ونَهَانَا عَنْ خَواتِيمٍ أَوْ تَخَتُّمٍ بالذَّهَبِ، وَعَنْ شُرْبٍ بالفِضَّةِ، وَعَن الميَاثِرِ الحُمْرِ، وَعَن القَسِّيِّ، وَعَنْ لُبْسِ الحَريرِ والإسْتبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ (1).
وفي رواية: وَإنْشَادِ الضَّالَّةِ في السَّبْعِ الأُوَل.
«المَيَاثِرُ» بياء مثَنَّاة قبل الألفِ، وثاء مُثَلَّثَة بعدها: وهي جَمْعُ ميثَرة، وهي شيء يُتَّخَذُ مِنْ حرير وَيُحْشَى قطنًا أَوْ غيره، وَيُجْعَلُ في السَّرْجِ وَكُور البَعير يجلس عَلَيهِ الراكب. «القَسِّيُّ» بفتح القاف وكسر السين المهملة المشددة: وهي ثياب تنسج مِنْ حرير وَكتَّانٍ مختلِطينِ. «وَإنْشَادُ الضَّالَّةِ»: تعريفها.
হাদীস নং: ২৪০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ২৮

মুসলিম ব্যক্তিবর্গের দোষত্রুটি গোপন রাখা প্রসঙ্গ এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

কুরআন ও হাদীছের শিক্ষানুযায়ী এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। প্রকৃত মুসলিম সেই যে নিজের জন্য যা পসন্দ করে থাকে, মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা পসন্দ করে। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে। ফলে তার দ্বারা কোনও না কোনও ত্রুটিও হয়ে যায়। কেউ চায় না তার ত্রুটি সম্পর্কে মানুষ জানুক। নফসের তাড়নায় কখনও কখনও বড় বড় পাপও হয়ে যায়। কিন্তু সে পাপের কথা কোনও মানুষ জানুক তা কেউ পসন্দ করে না। কেউ যখন নিজের জন্য এটা পসন্দ করে না, তখন অন্যের জন্যও এটা পসন্দ করা উচিত না। কাজেই কারও কোনও ভুলত্রুটি বা পাপের কথা জেনে ফেললে যথাসম্ভব তা গোপন করা চাই। গেয়ে বেড়ানো উচিত নয়।
পাপের কথা প্রকাশ পেলে সমাজে সম্মানহানি হয়। অন্যের সম্মানহানি করা কঠিন পাপ। এটা নিকৃষ্ট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। মুমিন ও মুসলিমের চরিত্রে থাকবে মহানুভবতা। সে কখনওই অন্যের দোষ গেয়ে তার সম্মানহানি ঘটানো পসন্দ করতে পারে না। তা সত্ত্বেও অনেকে এরূপ নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত হয়ে নিজের দুনিয়া ও আখেরাত নষ্ট করে। কুরআন ও হাদীছে এ শ্রেণীর লোকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, তারা যেন অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকে, অন্যথায় উভয় জাহানে তাদের দুর্ভোগ আছে। সেইসঙ্গে সকলকে এর থেকে বিরত থাকা এবং অন্যের দোষ গোপন করার প্রতি উৎসাহ করার লক্ষ্যে দোষ গোপনের ফযীলতও বয়ান করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাদানের চেষ্টা করব । আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।

‘মুসলিম ব্যক্তিবর্গের দোষত্রুটি গোপন রাখা’ সম্পর্কিত একটি আয়াত-

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

অর্থ : ‘স্মরণ রেখ, যারা মুমিনদের সম্পর্কে ঘৃণ্য কথার প্রসার হোক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। সূরা নূর (২৪), আয়াত ১৯

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে মুমিনদের সম্পর্কে মন্দকথা প্রচারের অশুভ পরিণাম বর্ণিত হয়েছে। الْفَاحِشَةُ শব্দটির অর্থ ‘ঘৃণ্যকাজ' ও ‘ঘৃণ্যকথা’। মুমিনদের সম্পর্কে ঘৃণ্যকথা প্রচারের দুটি সূরত হতে পারে। এক হচ্ছে, মনগড়া কথা। অর্থাৎ অপবাদ দেওয়া ও কোনও মুমিন সম্পর্কে এমন অশ্রাব্য কর্মের কথা প্রচার করা যা সে আদৌ করেনি। দ্বিতীয় সূরত হল কারও এমন কোনও পাপকর্মের কথা প্রচার করা, যা সে শয়তান ও নফসের প্ররোচনায় করে ফেলেছে এবং এরূপ পাপকর্ম করতে সে অভ্যস্ত নয়; আকস্মিক দুর্ঘটনাস্বরূপ তার দ্বারা এটা হয়ে গেছে। উভয়রকম প্রচারণাই নিষেধ ও নাজায়েয।
কারও কোনও দোষ ও পাপের কথা গেয়ে বেড়ানো গীবত। গীবত মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়াতুল্য ন্যাক্কারজনক কাজ ও কবীরা গুনাহ। অথচ যে দোষটির কথা প্রচার করা হয় তা সেই ব্যক্তির মধ্যে থাকে। এহেন গীবত যখন এত বড় অপরাধ তখন অপবাদ কত বড় গুনাহ হবে, যা কিনা সম্পূর্ণ প্রচারকের মনগড়া এবং যার সম্পর্কে বলা হয় সে এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র?
যাহোক অন্যের দোষ ও অপরাধ বাস্তবিক হোক বা রটনাকারীর মনগড়া, সর্বাবস্থায় তার প্রচার-প্রসারে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা ব্যক্তির নিজের যেমন পাপ হয়, তেমনি যার সম্পর্কে প্রচার করা হয় তার সম্মানহানি হয় এবং পরিবেশ হয় দূষিত। তাই এতে লিপ্ত হতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সঙ্গে সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে যে, যারা এরকম রটনায় লিপ্ত থাকে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
চারিত্রিক অপবাদের ক্ষেত্রে শরীআতী শাস্তি হল আশিটি বেত্রাঘাত। অন্য কোনও অপবাদ হলে বিচারক তার বিবেচনা অনুযায়ী যে-কোনও শাস্তিদান করবে। আদালতী শাস্তি ছাড়াও অপবাদকারী হিসেবে পরিচিত হয়ে গেলে সমাজচোখে সে নিন্দিত হয়। সকলে তাকে ঘৃণা করে। এ শাস্তিও কম কঠিন নয়। আর যারা গীবত করে বেড়ায় তারাও মানুষের কাছে সম্মান হারায়। বুদ্ধিমান লোক তাদেরকে এড়িয়ে চলে। এটা তার মানসিক শাস্তি। এরূপ অপরাধ বেশি বেশি করলে ইসলামী বিচারকও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
আখেরাতের শাস্তি হল জাহান্নামের আগুন। সেটা অবর্ণনীয় কষ্টের ব্যাপার। তার সাথে দুনিয়ার কোনও কষ্টের তুলনা চলে না।
তো যে কাজের দুনিয়ায় কোনও ফায়দা নেই, উপরন্তু আছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও দুঃখ-কষ্ট এবং আখেরাতের কঠিন শাস্তি, শুধু শুধু তাতে কেন লিপ্ত হওয়া?
আয়াতের শেষে আছে- وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না'। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের মনের অবস্থা জানেন। কী উদ্দেশ্যে তোমরা এসব প্রচারণায় লিপ্ত হও সে সম্পর্কে তিনি অবগত। যার সম্পর্কে তোমাদের প্রচারণা তার বাস্তব অবস্থাও তাঁর জানা আছে। আরও জানেন তার পরিণাম। হতে পারে সে তার কৃত পাপ থেকে তাওবা করে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সংশোধন করে ফেলবে এবং পাপমুক্ত হয়ে জান্নাতের অধিকারী হয়ে যাবে। তোমরা এর কিছুই জানো না। আল্লাহর কাছে কার কী মর্যাদা সে সম্পর্কে তোমরা অবহিত নও। হয়তো আল্লাহর কাছে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে তোমরা নিজেদেরই ক্ষতিসাধন করছ । সুতরাং তোমরা এর থেকে বিরত থাক।
অন্যের সম্পর্কে মন্দকথার প্রচারণায় লিপ্ত ব্যক্তিদের যেমন তা থেকে বিরত থাকা উচিত, তেমনি যাদের কাছে তারা তা বলে তাদেরও কর্তব্য তা শোনা হতে বিরত থাকা। অন্যথায় তারাও সে অপপ্রচারের অংশীদার গণ্য হবে এবং আল্লাহর কাছে তারাও সমান অপরাধী সাব্যস্ত হবে। কারও সামনে কোনও নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করা হলে তার বলে দেওয়া কর্তব্য- সুবহানাল্লাহ! এটা তো এক অপবাদ, আমাদের এ জাতীয় কথা বলা উচিত নয়। যারা এর বিপরীতে তা শুনতে আগ্রহী হয় তাদেরকে তিরস্কার করে আল্লাহ তা'আলা বলেন-

وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَذَا سُبْحَانَكَ هَذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ

‘তোমরা যখন এ কথা শুনেছিলে তখনই কেন বলে দিলে না- এ কথা মুখে আনার কোনও অধিকার আমাদের নেই; হে আল্লাহ! তুমি মহান ও পবিত্র। এটা তো মারাত্মক অপবাদ। সূরা নূর (২৪), আয়াত নং ১৬
অন্যের দোষ গোপন রাখার ফযীলত
হাদীছ নং : ২৪০

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে বান্দাই অন্য বান্দাকে দুনিয়ায় আড়াল করে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে আড়াল করে রাখবেন -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৯০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯০৪৫; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯২০৫; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৭৯৯; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১৮৯৩৬, খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৪১৪)
مقدمة الامام النووي
28 - باب ستر عورات المسلمين والنهي عن إشاعتها لغير ضرورة

قَالَ الله تَعَالَى: {إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَة} [النور: 19].
240 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْدًا في الدُّنْيَا إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم. (1)