রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين

ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস ৬৭৯ টি

হাদীস নং: ২০১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আমানত আদায় প্রসঙ্গ।
হাশরের বিভীষিকা ও শাফা‘আত প্রসঙ্গ
হাদীছ নং : ২০১

হযরত হুযায়ফা রাযি ও আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ (হাশরের দিন) সমস্ত মানুষকে একত্র করবেন। তখন জান্নাতকে মু'মিনদের নিকটবর্তী করা হবে। এ অবস্থায় তারা উঠে আদম 'আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তারা তাঁকে বলবে, হে আমাদের পিতা, আমাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার আবেদন করুন! তিনি বলবেন, তোমাদের পিতার গুনাহই কি তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করেনি? আমি এর উপযুক্ত নই। তোমরা আমার পুত্র ইবরাহীম খলীলুল্লাহর কাছে যাও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। আমি তো আল্লাহর খলীল ছিলাম অনেক পেছন থেকে। তোমরা মূসার কাছে যাও, আল্লাহ যার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন।
তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই। তোমরা আল্লাহর কালিমা ও তাঁর রূহ ঈসার কাছে যাও। ঈসা আলাইহিস সালাম বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই।
পরিশেষে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসবে। সুতরাং তিনি উঠবেন এবং তাঁকে (শাফাআতের) অনুমতি দেওয়া হবে। তারপর আমানত ও আত্মীয়তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা উঠে পুলসিরাতের দু'পাশে ডানে ও বামে দাঁড়াবে। তারপর তোমাদের প্রথম দল বিজলীর গতিতে (পুলসিরাত) পার হয়ে যাবে। আমি বললাম, আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গিত হোক, বিজলীর গতিতে পার হওয়ার অর্থ কী?
তিনি বললেন, তোমরা কি বিজলী দেখনি, কিভাবে তা চোখের পলকে আসে যায়? তারপর পার হবে বাতাসের বেগে, তারপর পাখির গতিতে এবং তারপর মানুষের দ্রুততম দৌড়ের গতিতে। তাদের আমলসমূহ (এভাবে বিভিন্ন গতিতে) তাদেরকে (পুলসিরাত পার করিয়ে দেবে। আর তোমাদের নবী পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে থাকবেন, হে আমার প্রতিপালক! (আমার উম্মতকে) নিরাপদ রাখুন, নিরাপদ রাখুন। একপর্যায়ে বান্দাদের আমলসমূহ (তাদেরকে পুলসিরাত পার করাতে) অক্ষম হয়ে যাবে। এমনকি কোনও লোক আসবে, যে (পুলসিরাতের ওপর) চলতেই পারবে না, কেবল পাছা হেঁচড়িয়ে এগুতে থাকবে। পুলসিরাতের উভয় পাশে থাকবে ঝুলন্ত ও আদিষ্ট আঁকড়া। যাকে আটকানোর আদেশ করা হবে, সেগুলো তাকে ধরবে। তাতে একদল লোক আঁচড় খাবে, কিন্তু মুক্তি লাভ করবে। আরেকদল লোক সজোরে ধৃত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ! জাহান্নামের গভীরতা ৭০ বছরের পথের দূরত্ব সমান- মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৯৫। মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৮৭৪৯। বাগাবী, হাদীছ নং ৪৩৪৭। মুসনাদুল বাযযার, হাদীছ নং ৬২২৩)
مقدمة الامام النووي
25 - باب الأمر بأداء الأمانة
201 - وعن حُذَيفَة وأبي هريرة رضي الله عنهما، قالا: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَجمَعُ اللهُ تبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ فَيَقُومُ المُؤمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ (1) لَهُمُ الجَنَّةُ، فَيَأتُونَ آدَمَ صَلَواتُ اللهِ عَلَيهِ، فَيقُولُونَ: يَا أَبَانَا اسْتَفْتِحْ لَنَا الجَنَّةَ، فَيقُولُ: وَهَلْ أَخْرَجَكُمْ مِنَ الجَنَّةِ إلاَّ خَطيئَةُ أبيكُمْ! لَسْتُ بِصَاحِبِ ذلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى ابْنِي إِبْراهيمَ خَلِيل اللهِ. قَالَ: فَيَأتُونَ إبرَاهِيمَ فَيَقُولُ إبراهيم: لَسْتُ بِصَاحِبِ ذلِكَ إِنَّمَا كُنْتُ خَليلًا مِنْ وَرَاءَ وَرَاءَ، اعْمَدُوا إِلَى مُوسَى الَّذِي كَلَّمَهُ الله تَكليمًا. فَيَأتُونَ مُوسَى، فَيَقُولُ: لستُ بِصَاحِبِ ذلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى عِيسى كلمةِ اللهِ ورُوحه، فيقول عيسى: لستُ بصَاحبِ ذلِكَ، فَيَأتُونَ مُحَمَّدًا - صلى الله عليه وسلم - فَيَقُومُ فَيُؤذَنُ لَهُ، وتُرْسَلُ الأَمَانَةُ وَالرَّحِمُ (2) فَيَقُومانِ جَنْبَتَي الصِّرَاطِ يَمِينًا وَشِمَالًا فَيَمُرُّ أوَّلُكُمْ كَالبَرْقِ» قُلْتُ: بأبي وَأمِّي، أيُّ شَيءٍ كَمَرِّ البَرقِ؟ قَالَ: «ألَمْ تَرَوا كَيْفَ يمُرُّ وَيَرْجِعُ في طَرْفَةِ عَيْن، ثُمَّ كَمَرّ الرِّيحِ، ثُمَّ كَمَرِّ الطَّيْرِ، وَشَدِّ (3) الرِّجَال تَجْري بهمْ أعْمَالُهُمْ، وَنَبيُّكُمْ قَائِمٌ عَلَى الصِّراطِ، يَقُولُ: رَبِّ سَلِّمْ سَلِّمْ، حَتَّى تَعْجِزَ أعْمَالُ العِبَادِ، حَتَّى يَجِيء الرَّجُلُ لا يَسْتَطِيعُ السَّيْرَ إلاَّ زَحْفًا، وَفي حَافَتي الصِّراطِ كَلاَلِيبُ معَلَّقَةٌ مَأمُورَةٌ بِأخْذِ مَنْ أُمِرَتْ بِهِ، فَمَخْدُوشٌ نَاجٍ، وَمُكَرْدَسٌ (4) في النَّارِ»
وَالَّذِي نَفْسُ أَبي هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ، إنَّ قَعْرَ جَهَنَّمَ لَسَبْعُونَ خَرِيفًا (5). رواه مسلم. (6) [ص:89]
قوله: «وراء وراء» هُوَ بالفتح فيهما. وقيل: بالضم بلا تنوين ومعناه: لست بتلك الدرجة الرفيعة، وهي كلمة تذكر عَلَى سبيل التواضع. وقد بسطت معناها في شرح صحيح مسلم (7)، والله أعلم.
হাদীস নং: ২০২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আমানত আদায় প্রসঙ্গ।
হযরত যুবায়র ইবনুল আউওয়াম রাযি.-এর ঋণ পরিশোধের ঘটনা
হাদীছ নং: ২০২

হযরত আবূ খুবায়ব আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র ইবনুল আওয়াম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আল জামাল'-এর (যুদ্ধের) দিন যুবায়র যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন আমাকে ডাকলেন। আমি তার পাশে দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, হে বাছা! আজ কেবল জালেম বা মজলূমই নিহত হবে। আমি নিজের সম্পর্কে মনে করি যে, আজ আমি মজলূমরূপেই নিহত হব। আমার সবচে' বড় চিন্তা হচ্ছে আমার দেনা নিয়ে। তুমি কি মনে কর আমাদের দেনা আমাদের সম্পদ থেকে কিছু অবশিষ্ট রাখবে? তারপর বললেন, হে বাছা! আমাদের সম্পদ বিক্রি করে আমার দেনা পরিশোধ করো। তারপর তিনি তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ সম্পর্কে অসিয়ত করলেন আর তার (অর্থাৎ সেই এক-তৃতীয়াংশের) এক-তৃতীয়াংশ সম্পর্কে অসিয়ত করলেন তার পুত্রদের জন্য। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়রের পুত্রদেরকে এক-তৃতীয়াংশের তিন ভাগের এক ভাগ দেওয়ার অসিয়ত করলেন। বললেন, দেনা পরিশোধের পর আমাদের সম্পদ থেকে কিছু অবশিষ্ট থাকলে তার তিন ভাগের এক ভাগ তোমার পুত্রদের। হিশাম* বলেন, আব্দুল্লাহর কোনও কোনও পুত্র যেমন খুবায়ব ও আব্বাদ—–যুবায়রের কোনও কোনও পুত্রের সমবয়সী ছিল। তখন যুবায়র রাযি.-এর ৯ পুত্র ও ৯ কন্যাসন্তান বর্তমান ছিল। আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি তার দেনা সম্পর্কে অসিয়ত করছিলেন এবং বলছিলেন, হে বাছা! তুমি যদি দেনার কোনও অংশ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়, তবে সে ব্যাপারে আমার মাওলার কাছে সাহায্য চেয়ো। আব্দুল্লাহ বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝতে পারিনি। তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছিলেন। শেষে বললাম, আব্বাজী, আপনার মাওলা কে? তিনি বললেন, আল্লাহ।
আব্দুল্লাহ বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তার দেনা পরিশোধ করতে সংকটে পড়ে যেতাম তখনই বলতাম- হে যুবায়রের মাওলা! আপনি তার পক্ষ থেকে দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিতেন।
তারপর যুবায়র নিহত হলেন। তিনি কোনও দীনার ও দিরহাম রেখে যাননি। রেখে গিয়েছিলেন স্থাবর সম্পত্তি আর তা হল- গাবা (-এর এক লপ্ত ভূমি), মদীনায় এগারোটি বাড়ি, বসরায় দু'টি বাড়ি, কুফায় একটি বাড়ি এবং মিসরে একটি বাড়ি।
আব্দুল্লাহ বলেন, তার দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণ ছিল এই যে, কোনও লোক তার কাছে এসে কিছু অর্থ গচ্ছিত রাখতে চাইলে তিনি বলতেন, না, বরং এটা আমি তোমার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিলাম। কেননা (আমানত হিসেবে থাকলে) আমার আশঙ্কা তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তিনি কখনও শাসনকার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি এবং না কর আদায়, না খারাজ আদায় আর না অন্য কিছুর দায়িত্ব। তবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আবূ বকর রাযি, উমর রাযি, ও উছমান রাযি.- এর সঙ্গেও।
আব্দুল্লাহ বলেন, আমি তার সমস্ত দেনা হিসাব করলাম। দেখলাম তার পরিমাণ হয় ২২ লাখ দিরহাম।
এ অবস্থায় হযরত হাকিম ইবন হিযাম রাযি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ওহে ভাতিজা! আমার ভাইয়ের দেনার পরিমাণ কত?
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র রাযি. বলেন,) আমি তার কাছে তা গোপন করলাম এবং বললাম এক লক্ষ দিরহাম। তা শুনে হাকিম বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের যা সম্পদ, আমি মনে করি না তা দ্বারা এসব পরিশোধ সম্ভব হবে।
আব্দুল্লাহ বললেন, আচ্ছা বলুন তো, তা যদি হয় ২২ লাখ দিরহাম? তিনি বললেন, তাহলে আমি মনে করি না তোমরা তা পরিশোধে সক্ষম হবে। যদি তোমরা তা থেকে কিছু আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়, তবে আমার সাহায্য নিয়ো। আব্দুল্লাহ বলেন, যুবায়র গাবা কিনেছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার দিরহামে।
(হিশাম বলেন,) আব্দুল্লাহ সেটি বিক্রি করলেন ১৬ লাখ দিরহামে। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, যুবায়রের কাছে যার কিছু পাওনা আছে সে যেন গাবায় এসে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
সেমতে আব্দুল্লাহ ইবন জা'ফর তার কাছে আসলেন। যুবায়রের কাছে তার ৪ লাখ দিরহাম পাওনা ছিল। তিনি আব্দুল্লাহকে বললেন, যদি তোমরা চাও তোমাদের জন্য আমি তা ছেড়ে দিতে পারি। আব্দুল্লাহ বললেন, না। তিনি বললেন, তোমরা চাইলে তা ওইসব দেনার মধ্যে রাখতে পার, যা তোমরা পরে পরিশোধের ইচ্ছা রাখ। আব্দুল্লাহ বললেন, না। তিনি বললেন, তাহলে আমার জন্য একখণ্ড জমি নির্দিষ্ট করে দাও। আব্দুল্লাহ বললেন, এখান থেকে ওই পর্যন্ত তোমার।
তারপর আব্দুল্লাহ গাবার জমি থেকে একটা অংশ বিক্রি করে তার দেনা পরিশোধ করলেন এবং তাতে তার সবটা দেনা পরিশোধ হয়ে গেল। তারপর সে জমি থেকে সাড়ে চার খণ্ড অবশিষ্ট থাকল। তারপর তিনি হযরত মুআবিয়া রাযি.-এর কাছে আসলেন। তখন সেখানে আমর ইবন উছমান, মুনযির ইবন যুবায়র ও ইবন যাম'আ উপস্থিত ছিলেন।
হযরত মু'আবিয়া রাযি, তাকে বললেন, গাবা'র দাম কত ধরা হয়েছে? তিনি বললেন, প্রতি খণ্ড ১ লাখ দিরহাম। হযরত মু'আবিয়া রাযি. বললেন, তার কত খণ্ড বাকি আছে? তিনি বললেন, সাড়ে চার খণ্ড। তখন মুনযির ইবন যুবায়র বললেন, আমি তা থেকে এক খণ্ড ১ লাখ দিরহামে নিলাম। আমর ইবন উছমান বললেন, আমিও এক খণ্ড ১ লাখ নিরহামে নিলাম। ইবন যাম'আ বললেন, আমিও এক খণ্ড ১ লাখ দিরহামে নিয়ে নিলাম। তারপর হযরত মু'আবিয়া রাযি. বললেন, এখন তার কী পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আব্দুল্লাহ বললেন, দেড় খণ্ড। তিনি বললেন, আমি তা দেড় লাখ দিরহামে নিয়ে নিলাম।
হিশাম বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন জাফর তার অংশ মু'আবিয়া রাযি.-এর কাছে ৬ লাখ নিরহামে বিক্রি করে দেন। আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র যখন তার দেনা পরিশোধ করে সারলেন তখন যুবায়রের পুত্রগণ বলল, আমাদের মধ্যে আমাদের মীরাছ বন্টন করে দিন। তিনি বললেন, আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করব না যাবৎ না চার বছর হজ্জের মওসুমে ঘোষণা করি যে, মুবায়রের কাছে যে-কারও কিছু পাওনা আছে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করে দেব। তিনি প্রতি বছর হজ্জের মওসুমে এ ঘোষণা দিতে থাকেন। এভাবে চার বছর গত হওয়ার পর তিনি তাদের মধ্যে তা বণ্টন করে দেন এবং (অসিয়ত মোতাবেক) এক-তৃতীয়াংশও (যাদের জন্য অসিয়ত করা হয়েছিল তাদেরকে) প্রদান করেন। যুবায়রের ছিল চারজন স্ত্রী। প্রত্যেক স্ত্রীর ভাগে ১২ লাখ দিরহাম করে পড়ল। সুতরাং তার সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ হয় ৫ কোটি ২ লাখ দিরহাম- বুখারী।
*হিশাম হচ্ছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র রাযি.-এর ভাতিজা। তিনি নিজ পিতা উরওয়া ইবনু যুবায়র রহ.-এর সূত্রে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় তাবি'ঈ ছিলেন। আলেম ও মুহাদ্দিছ হিসেবে হযরত হাসান বসরী রহ. ও মুহাম্মাদ ইবন সীরীন রহ.-এর সমপর্যায়ের। তাঁর জন্য হিজরী ৬১ সালে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. হযরত সাহল ইবন সা'দ রাযি. হযরত জাবির রাযি. ও হযরত আনাস রাযি.-কে দেখেছেন। হিজরী ১৪৬ সালে তিনি ইন্তিকাল করেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩১২৯; ইবন সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, খ. ৩, পৃ. ১০৮, ইবন আসাকির, তারীখু দিমাশক, খ. ১৮, পৃ. ৪৩০; যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, খ.৩, পৃ.২১৪)
مقدمة الامام النووي
25 - باب الأمر بأداء الأمانة
202 - وعن أَبي خُبيب - بضم الخاء المعجمة - عبد الله بن الزبير رضي الله عنهما، قَالَ: لَمَّا وَقفَ الزُّبَيْرُ يَوْمَ الجَمَل (1) دَعَانِي فَقُمْتُ إِلَى جَنْبه، فَقَالَ: يَا بُنَيَّ، إنَّهُ لاَ يُقْتَلُ اليَومَ إلاَّ ظَالِمٌ أَوْ مَظْلُومٌ، وَإنِّي لاَ أراني إلاَّ سَأُقْتَلُ اليومَ مظلومًا، وإنَّ مِنْ أكبرَ هَمِّي لَدَيْنِي، أفَتَرَى دَيْننا يُبقي من مالِنا شَيئًا؟ ثُمَّ قَالَ: يَا بُنَيَّ، بِعْ مَا لَنَا وَاقْضِ دَيْنِي، وَأَوْصَى بِالثُّلُثِ وَثُلُثِهِ لِبَنِيهِ، يعني لبني عبد الله بن الزبير ثُلُثُ الثُّلُث. قَالَ: فَإنْ فَضَلَ مِنْ مَالِنَا بَعْدَ قَضَاءِ الدَّينِ شَيء فَثُلُثُه لِبَنِيكَ. قَالَ هِشَام: وَكَانَ بَعْضُ وَلَدِ عَبْدِ اللهِ قَدْ وَازى (2) بَعْضَ بَنِي الزُّبَيْرِ خُبيبٍ وَعَبَّادٍ، وَلهُ يَوْمَئذٍ تِسْعَةُ بَنينَ وَتِسْعُ بَنَات. قَالَ عَبدُ الله: فَجَعلَ يُوصينِي بدَيْنِهِ وَيَقُولُ: يَا بُنَيَّ، إنْ عَجَزْتَ عَن شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِنْ عَلَيهِ بِمَوْلاَيَ. قَالَ: فَوَاللهِ مَا دَرَيْتُ مَا أرَادَ حَتَّى قُلْتُ: يَا أبَتِ مَنْ مَوْلاَكَ؟ قَالَ: الله. قَالَ: فَوَاللهِ مَا وَقَعْتُ في كُرْبةٍ مِنْ دَيْنِهِ إلاَّ قُلْتُ: يَا مَوْلَى الزُّبَيْرِ اقْضِ عَنْهُ دَيْنَهُ فَيَقْضِيَهُ. قَالَ: فَقُتِلَ الزُّبَيْرُ وَلَم يَدَعْ دِينَارًا وَلاَ دِرْهمًا إلاَّ أرَضِينَ، مِنْهَا الغَابَةُ (3) وإحْدَى عَشْرَةَ دَارًا بالمَدِينَةِ، وَدَارَيْنِ بالبَصْرَةِ، ودَارًا بالكُوفَةِ، ودَارًا بمِصْرَ. قَالَ: وَإِنَّمَا كَانَ دَيْنُهُ الَّذِي كَانَ عَلَيهِ أنَّ الرَّجُلَ كَانَ يَأتِيهِ بالمال، فَيَسْتَودِعُهُ إيَّاهُ، فَيَقُولُ الزُّبَيْرُ: لا، وَلَكِنْ هُوَ سَلَفٌ إنِّي أخْشَى عَلَيهِ الضَّيْعَةَ (4). وَمَا وَليَ إمَارَةً قَطُّ وَلا جِبَايَةً (5) ولا خراجًا (6) وَلاَ شَيئًا إلاَّ أَنْ يَكُونَ في
[ص:90] غَزْوٍ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - أَوْ مَعَ أَبي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ - رضي الله عنهم - قَالَ عَبدُ الله: فَحَسَبْتُ مَا كَانَ عَلَيهِ مِن الدَّيْنِ فَوَجَدْتُهُ ألْفيْ ألْفٍ وَمئَتَي ألْف! فَلَقِيَ حَكِيمُ بنُ حِزَام عَبْدَ الله بْنَ الزُّبَيْرِ، فَقَالَ: يَا ابْنَ أخِي، كَمْ عَلَى أخي مِنَ الدَّيْنِ؟ فَكَتَمْتُهُ وَقُلْتُ: مِائَةُ ألْف. فَقَالَ حَكيمٌ: واللهِ مَا أرَى أمْوَالَكُمْ تَسَعُ هذِهِ. فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: أرَأيْتُكَ إنْ كَانَتْ ألْفَي ألف وَمئَتَيْ ألْف؟ قَالَ: مَا أرَاكُمْ تُطيقُونَ هَذَا، فَإنْ عَجَزْتُمْ عَنْ شَيءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِينُوا بي، قَالَ: وَكَانَ الزُّبَيرُ قَد اشْتَرَى الغَابَةَ بِسَبْعِينَ ومئة ألف، فَبَاعَهَا عَبدُ اللهِ بِألْفِ ألْف وَسِتّمِئَةِ ألْف، ثُمَّ قَامَ فَقَالَ: مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ شَيْء فَلْيُوافِنَا بِالغَابَةِ، فَأتَاهُ عَبدُ اللهِ بنُ جَعفَر، وَكَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ أرْبَعمئةِ ألْف، فَقَالَ لعَبدِ الله: إنْ شِئْتُمْ تَرَكْتُهَا لَكمْ؟ قَالَ عَبدُ الله: لا، قَالَ: فَإنْ شِئتُمْ جَعَلْتُمُوهَا فِيمَا تُؤَخِّرُونَ إنْ إخَّرْتُمْ، فَقَالَ عَبدُ الله: لا، قَالَ: فَاقْطَعُوا لِي قطْعَةً، قَالَ عَبدُ الله: لَكَ مِنْ هاهُنَا إِلَى هَاهُنَا. فَبَاعَ عَبدُ اللهِ مِنهَا فَقَضَى عَنْهُ دَينَه وَأوْفَاهُ، وَبَقِيَ مِنْهَا أرْبَعَةُ أسْهُم وَنِصْفٌ، فَقَدِمَ عَلَى مُعَاوِيَة وَعنْدَهُ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، وَالمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ، وَابْنُ زَمْعَةَ، فَقَالَ لَهُ مُعَاويَةُ: كَمْ قُوِّمَتِ الغَابَةُ؟ قَالَ: كُلُّ سَهْم بمئَة ألف، قَالَ: كَمْ بَقِيَ مِنْهَا؟ قَالَ: أرْبَعَةُ أسْهُم وَنصْفٌ، فَقَالَ المُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيرِ: قَدْ أخَذْتُ مِنْهَا سَهمًا بِمئَةِ ألف، قَالَ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ: قَدْ أخَذْتُ مِنْهَا سَهْمًا بمئَةِ ألْف. وَقالَ ابْنُ زَمْعَةَ: قَدْ أخَذْتُ سَهْمًا بِمئَةِ ألْف، فَقَالَ مُعَاويَةُ: كَمْ بَقِيَ مِنْهَا؟ قَالَ: سَهْمٌ ونصْفُ سَهْم، قَالَ: قَدْ أخَذْتُهُ بخَمْسِينَ وَمئَةِ ألْف. قَالَ: وَبَاعَ عَبدُ الله بْنُ جَعفَر نَصيبهُ مِنْ مَعَاوِيَةَ بستِّمِئَةِ ألْف، فَلَمَّا فَرَغَ ابْنُ الزُّبَيرِ مِنْ قَضَاءِ دَيْنِهِ، قَالَ بَنُو الزُّبَيرِ: اقسمْ بَينَنَا ميراثَنا، قَالَ: وَاللهِ لا أقْسِمُ بَيْنَكُمْ حَتَّى أنَادِي بالمَوْسم أرْبَعَ سنينَ: ألا مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ دَيْنٌ فَلْيَأتِنَا فَلْنَقْضِهِ. فَجَعَلَ كُلّ سَنَةٍ يُنَادِي في المَوْسِمِ، فَلَمَّا مَضَى أرْبَعُ سنينَ قَسَمَ بيْنَهُمْ وَدَفَعَ الثُّلُثَ. وَكَانَ للزُّبَيْرِ أرْبَعُ نِسْوَةٍ، فَأصَابَ كُلَّ امرَأةٍ ألْفُ ألف وَمِئَتَا ألْف، فَجَميعُ مَالِه خَمْسُونَ ألف ألْف وَمِئَتَا ألْف. رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ২০৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবংজুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম

‘জুলুম'-এর শাব্দিক অর্থ কোনও বস্তু এমন স্থানে রাখা, যা তার প্রকৃত স্থান নয়। শরী'আতের পরিভাষায় জুলুম বলা হয় অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা বা অন্যের হক নষ্ট করা ও অনধিকার চর্চাকে। শরী'আত যে বস্তুর যে সীমা স্থির করে দিয়েছে, তা লঙ্ঘন করাকেও জুলুম বলা হয়। সুতরাং অন্যের জমি দখল করা, অন্যের টাকা-পয়সা কেড়ে নেওয়া, সম্মানী ব্যক্তিকে সম্মান না করা, অন্যায়ভাবে কাউকে তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি সবই জুলুমের মধ্যে পড়ে।
জুলুম প্রথমত দুই প্রকার। এক জুলুম হচ্ছে হাক্কুল্লাহর ক্ষেত্রে, আরেক জুলুম হাক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে। আল্লাহর হক বলতে – তাঁকে এক জানা ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা-সহ–তাঁর সম্পর্কিত যাবতীয় আকীদা-বিশ্বাস অন্তরে লালন করা এবং তাঁর দেওয়া শরী'আত মেনে চলাকে বোঝায়। সুতরাং ঈমান ও আকীদায় যে-কোনও ত্রুটি এবং আল্লাহর যে-কোনও আদেশ-নিষেধ অমান্য করা জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তো তাঁর ইজতিহাদভিত্তিক ভুলকেও 'জুলুম' নামে অভিহিত করেছেন, যা কিনা গুনাহর মধ্যেই পড়ে না। সুতরাং তিনি ও তাঁর স্ত্রী হযরত হাওয়া আলাইহিমাস সালাম সে ভুলের পর এই বলে আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করেছিলেন যে-

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজ সত্তার ওপর জুলুম করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন ও আমাদের প্রতি রহম না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ'রাফ (৭), আয়াত ২৩)
হাক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে জুলুমকে মৌলিকভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
ক. অন্যের জানের প্রতি জুলুম;
খ. অন্যের মালের ওপর জুলুম এবং
গ. অন্যের ইজ্জতের ওপর জুলুম।
তা এভাবে যে, মানুষের মূল সম্পদ হচ্ছে তিনটি তার জান, তার মাল ও তার ইজ্জত। সুতরাং এ তিন বস্তুর নিরাপত্তা লাভ প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। অন্যায়ভাবে এর কোনওটিতে আঘাত করা জায়েয নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের দিন ঘোষণা করেনঃ-

فإن دماءكم وأموالكم وأعراضكم بينكم حرام كحرمة يومكم هذا في شهركم هذا في بلدكم هذا

“তোমাদের এই (মক্কা) নগরে এই (হজ্জের) মাসে আজকের এই দিনটির যেমন মর্যাদা, তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইজ্জতের মর্যাদা তেমনই। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৭৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২১৫৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩০৫৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৩৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৫০৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৯৪১)
অর্থাৎ প্রত্যেকের কর্তব্য অন্যের এ তিনটি বিষয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করা।এমন কোনও কাজ করা জায়েয নয়, যা দ্বারা অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। যদি তা করা হয়, তবে সে কাজটি জুলুমরূপে গণ্য হবে।
সুতরাং কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, অঙ্গহানি করা, মারধর করা এবং যে কোনওভাবে শারীরিক কষ্ট দেওয়া হচ্ছে তার জানের ওপর জুলুম।
কারও বাড়িঘর ও জমি-জায়েদাদ দখল করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি করা, টাকা পয়সা কেড়ে নেওয়া এবং যে-কোনও রকম বৈষয়িক ক্ষতি করা তার মালের ওপর জুলুম বলে বিবেচিত হবে।
কারও নামে অপবাদ দেওয়া, তার গীবত করা, তাকে গালাগাল করা এবং তার প্রতি মানহানিকর যে-কোনও আচরণ করা ইজ্জতের ওপর জুলুম করার অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম এর প্রত্যেকটিকেই কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং যে-কোনও প্রকার জুলুমকে কঠিন পাপ ঘোষণা করেছে।
চিন্তা করলে বোঝা যায় 'হাক্কুল ইবাদ' জাতীয় জুলুম হাক্কুল্লাহ'র ক্ষেত্রে জুলুম অপেক্ষাও কঠিন। কেননা হাক্কুল ইবাদ আদায় করাও আল্লাহ তা'আলা হুকুম। কাজেই এটা লঙ্ঘন করলে যেমন বান্দার হক নষ্ট করার জুলুম হয়, তেমনি আল্লাহর হক নষ্ট করারও জুলুম হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকের কর্তব্য এর থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা।অন্যথায় আখিরাতে এর জন্য কঠিন শাস্তির সম্মুখীন তো হতেই হবে, দুনিয়ায়ও এর অশুভ পরিণাম ভোগ করার আশঙ্কা আছে।
ইতোমধ্যে কারও দ্বারা যদি কোনও প্রকার জুলুম হয়ে থাকে, তবে তার কর্তব্য এখনই সে ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া। পরিষ্কার হওয়ার উপায় হচ্ছে, হালুল্লাহর ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার কাছে তাওবা করা এবং হাক্কুল ইবাদের ক্ষেত্রে তাওবার পাশাপাশি সে যার ওপর জুলুম করেছে তার থেকে দায়মুক্তি লাভ করা। অর্থাৎ যদি তার জানের ওপর আঘাত করে থাকে বা কোনওভাবে তার মানহানি করে থাকে, তবে তার কাছে সরাসরি ক্ষমা চাওয়া এবং আন্তরিকভাবে তার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করে নেওয়া। যদি তার মৃত্যু হয়ে থাকে, তবে তার ওয়ারিশদের প্রতি সদাচরণ করা, তাদেরকে খুশি করার চেষ্টা করা এবং সেই মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দু'আ করতে থাকা। এতে আশা করা যায় আল্লাহ তা'আলা তার পক্ষ থেকে ক্ষমার ব্যবস্থা করে দেবেন।
আর যদি অর্থ-সম্পদ সংক্রান্ত জুলুম হয়ে থাকে, তবে সে যদি জীবিত থাকে এবং তাকে পাওয়া সম্ভব হয়, তাহলে তার যে পরিমাণ অর্থ সে আত্মসাৎ করেছে তা তাকে ফেরত দেবে। যদি সে মারা গিয়ে থাকে, তবে তার ওয়ারিশদের কাছে ফেরত দেবে। যদি তাকে বা তার ওয়ারিশদের কাউকেই না পাওয়া যায়, তবে তার নামে তা দান সদাকা করে দেবে। অর্থাৎ এই নিয়ত রাখবে যে, এর ছাওয়াব যেন সে ব্যক্তি পায়। এর বিস্তারিত মাসাইল বিজ্ঞ আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া চাই।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ওপরও নিজের হক আছে। যেমন এক হাদীছে বলা হয়েছেঃ-

وإن لنفسك عليك حقا

“নিশ্চয়ই তোমার ওপর তোমার নিজেরও হক আছে।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪১৩; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৬৯০০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৬৩৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৩০৮; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৩১৯)
সুতরাং বান্দার হকের মধ্যে নিজের হকও শামিল। এ ক্ষেত্রে অবহেলাও জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। এমন কোনও কাজ করা জায়েয হবে না, যা দ্বারা নিজ জান, মাল ও ইজ্জত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সর্বপ্রকার জুলুমই শেষটায় নিজ সত্তার ওপরই জুলুম। কেননা তাতে যে পাপ হয় তার খেসারত তো নিজেকেই দিতে হয়। তাই অন্ততপক্ষে নিজের ক্ষতি চিন্তা করেও সবরকম জুলুম থেকে বিরত থাকা উচিত।

‘জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম' সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত

مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ (18)

অর্থ : জালেমদের থাকবে না কোনও বন্ধু এবং কোনও সুপারিশকারী, যার কথা গ্রহণ করা হবে। সূরা মু'মিন (৪০), আয়াত ১৮.

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আখিরাতে জালেমদেরকে কী কঠিন পরিণাম ভোগ করতে হবে সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তারা সেদিন এমন কোনও বন্ধু পাবে না, যারা তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং পাবে না এমন কোনও সুপারিশকারী, যারা তাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহর কাছে সে সুপারিশ গৃহীত হবে। সুপারিশ গৃহীত হতে পারে তো তখনই, যখন সুপারিশ করা হবে। আর সেদিন সুপারিশ করতে পারবে কেবল সে-ই, যাকে আল্লাহ তা'আলা অনুমতি দেবেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ

'কে আছে, যে তাঁর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? সূরা বাকারা (২), আয়াত ২৫৫
তো এ আয়াতে যে বলা হয়েছে জালেমগণ কোনও সুপারিশকারী পাবে না, তা এ কারণে যে, তাদের পক্ষে কাউকে সুপারিশ করার অনুমতিই দেওয়া হবে না। 'কোনও সুপারিশকারী পাবে না' কথাটি ব্যাপক। সে হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও এর অন্তর্ভুক্ত। এটা কতই না ভয়ের কথা যে, যাঁর সুপারিশ ছাড়া কারওই মুক্তি লাভ হবে না, জালেমগণ তাঁর সুপারিশ থেকেও বঞ্চিত থাকবে। রাহমাতুল লিল- আলামীনের রহমত তারা সেদিন পাবে না। তাদের জন্য আছে কেবলই লা'নত।
ইরশাদ হয়েছে-

الَا لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّلِمِينَ

“সকলে শুনে নিক, জালেমদের ওপর আল্লাহর লানত। সূরা হুদ (১১), আয়াত ১৮
এর দ্বারা জুলুম করা যে কত বড় কঠিন পাপ তা উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এ কঠিন পাপ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।

দুই নং আয়াত

وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ (71)

অর্থ : (আখিরাতে) জালেমদের কোনও সাহায্যকারী থাকবে না। সূরা হজ্ব (২২), আয়াত ৭১

ব্যাখ্যা

অর্থাৎ জুলুমের পরিণামে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। তারা এমন কোনও সাহায্যকারী পাবে না, যারা তাদেরকে সে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। দুনিয়ায় শক্তিমানেরা দুর্বলদের প্রতি জুলুম-অবিচার করতে গিয়ে কোনওকিছুর ভয় করে না। তার কারণ এক তো নিজেদের শক্তি-ক্ষমতা, দ্বিতীয়ত এই শ্রেণীর লোকদের জুলুমবাজ সমর্থক সহযোগীও থাকে। সেই সহযোগীরা তাদেরকে জুলুমের কাজেও সাহায্য করে, তারপর সেই জুলুমের কারণে কেউ যাতে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে না পারে সে ব্যাপারেও তদবীর ও দৌড়ঝাঁপ করে। কিন্তু আখিরাতে এসব চলার নয়। সেদিন তারা বুঝতে পারবে শক্তি-ক্ষমতার অপব্যবহারের কী পরিণাম। ইরশাদ হয়েছে-

وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنْقَلَبٍ يَنْقَلِبُونَ (227)

“যারা জুলুম করেছে তারা অচিরেই জানতে পারবে কোন্ পরিণামের দিকে ফিরে
যাচ্ছে। সূরা শু'আরা (২৬), আয়াত ২২৭

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ-

إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا

'আমি জালেমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার প্রাচীর তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে। সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ২৯
এ কঠিন শাস্তি থেকে তাদেরকে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। সেদিন আল্লাহর বিরুদ্ধে কারও কোনও শক্তি ও তদবীর চলবে না। সে কঠিন পরিণতি থেকে বাঁচতে চাইলে এখনই সাবধান হয়ে যাওয়া দরকার, যাতে কারও প্রতি কোনওরকম জুলুম না হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের হেফাজত করুন।
পূর্বে 'মুজাহাদা' অধ্যায়ে সবশেষে হযরত আবূ যার রাযি. থেকে বর্ণিত যে হাদীছটি উল্লেখ করা হয়েছে, সে হাদীছটি এ অধ্যায়ের সাথেও সম্পর্ক রাখে (কেননা তাতে জুলুমের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কথা আছে)। দেখুন : রিয়াযুস সালেহীন, হাদীছ নং ১১১,
জুলুম ও কৃপণতার নিন্দা
হাদীছ নং : ২০৩

হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা জুলুম করা হতে বিরত থাক, কেননা জুলুম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকারে পরিণত হবে। এবং তোমরা লোভ-লালসা হতে বিরত থাক, কেননা লোভ-লালসা তোমাদের পূর্বের লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। তা তাদেরকে তাদের রক্তপাত করতে প্ররোচিত করেছিল এবং তারা তাদের জন্য নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে হালাল করে নিয়েছিল —মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৭৮; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৩৩৮; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৪৮৩; তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৫৬১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৬১)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم

قَالَ الله تَعَالَى: {مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلا شَفِيعٍ يُطَاعُ} [غافر:18]، وَقالَ تَعَالَى: {وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ} [الحج:71].
وأمّا الأحاديث فمنها: حديث أبي ذر - رضي الله عنه - المتقدم (1) في آخر باب المجاهدة.
203 - وعن جابر - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «اتَّقُوا الظُّلْمَ؛ فَإنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ. وَاتَّقُوا الشُّحَّ؛ فَإِنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ. حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ، وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ২০৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
অন্যের হক অনাদায়ের পরকালীন প্রায়শ্চিত্ত
হাদীছ নং : ২০৪

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন হকসমূহ তার প্রাপকদের আদায় করিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি শিংওয়ালা বকরী থেকে শিংবিহীন বকরীর প্রতিশোধ নিয়ে দেওয়া হবে। - মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭২০৪: জামে তিরমিযী হাদীছ নং ২৪২০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭৩৬৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৬৪; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১৮৩)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
204 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَتُؤَدُّنَّ الحُقُوقَ إِلَى أهْلِهَا يَومَ القِيَامَةِ، حَتَّى يُقَادَ للشَّاةِ الجَلْحَاءِ (1) مِنَ الشَّاةِ القَرْنَاءِ». رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ২০৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
মু’মিন ব্যক্তির জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা এবং দাজ্জালের আলামত
হাদীছ নং: ২০৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন, আমরা বিদায় হজ্জ সম্পর্কে আলাপ- আলোচনা করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা জানতাম না বিদায় হজ্জ কী। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করলেন। তারপর মাসীহুদ- দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং তার সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করলেন আর বললেন, আল্লাহ তা'আলা যত নবী পাঠিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই নিজ উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন নূহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরবর্তী নবীগণ। সে যদি তোমাদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে, তবে তার অবস্থা সম্পর্কে তোমাদের যা-কিছুই অজানা থাকুক না কেন, এ বিষয়টা তো অজানা থাকতে পারে না যে, তোমাদের প্রতিপালক কানা নন, অথচ সে হবে ডান চোখের কানা। তার চোখ যেন (আঙ্গুরের থোকার) উপরে ভাসমান একটি আঙ্গুর।
শোন হে! আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপর তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ হারাম (মর্যাদাপূর্ণ এবং সে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা নিষিদ্ধ) করেছেন, যেমন তোমাদের এই মাসে তোমাদের এই শহরে তোমাদের এই দিনটি হারাম। বল তো আমি কি পৌঁছিয়ে দিয়েছি? উপস্থিত সবাই বলল, হাঁ, অবশ্যই আপনি পৌছিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। তিনি তিনবার এ কথা বললেন। তারপর বললেন, সাবধান! লক্ষ রেখো, তোমরা আমার পর কাফের অবস্থার দিকে ফিরে যেয়ো না যে, তোমাদের একে অন্যের গর্দান উড়াতে থাকবে বুখারী, মুসলিম এর আংশিক বর্ণনা করেছেন।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৪০২: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৬৬: বাগাবী,হাদীছ নং ৩৮২১)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
205 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، قال: كُنَّا نَتَحَدَّثُ عَنْ حَجَّةِ الوَدَاعِ، والنَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - بَيْنَ أظْهُرِنَا، وَلا نَدْرِي مَا حَجَّةُ الوَدَاعِ حَتَّى حَمِدَ اللهَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - وَأَثْنَى عَلَيهِ، ثُمَّ ذَكَرَ المَسْيحَ الدَّجَّال، فَأطْنَبَ في ذِكْرِهِ، وَقَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبيٍّ إلاَّ أنْذَرَهُ أُمَّتَهُ، أنْذَرَهُ نُوحٌ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ بَعْدِهِ، وَإِنَّهُ إنْ يَخْرُجْ فِيكُمْ فَما خَفِيَ عَليْكُمْ مِنْ شَأنِه فَلَيْسَ يَخْفَى عَليْكُم، إنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بِأَعْوَرَ، وإنَّهُ أعْوَرُ عَيْنِ اليُمْنَى، كَأنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ. ألاَ إنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ دِمَاءكُمْ وَأمْوَالَكُمْ كحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، في بلدكم هذا، في شَهْرِكُمْ هَذَا، ألا هَلْ بَلَّغْتُ؟» قالُوا: نَعَمْ، قَالَ: «اللَّهُمَّ اشْهَدْ» ثلاثًا «وَيْلَكُمْ - أَوْ وَيْحَكُمْ -، انْظُروا: لا تَرْجعُوا بَعْدِي كُفّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ». رواه البخاري، وروى مسلم بعضه. (1)
হাদীস নং: ২০৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
অন্যের জমি জবরদখলের শাস্তি
হাদীছ নং : ২০৬

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত জমিতে জুলুম করল (অর্থাৎ তা জবরদখল করে নিল), কিয়ামতের দিন তাকে (অর্থাৎ তার গলায়) সাত তবকসহ তার বেড়ি পরানো হবে – বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬১২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬২৯; তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৪৮৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩১৯৫; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২১৬৬;)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
206 - وعن عائشة رضي الله عنها: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ ظَلَمَ قيدَ شِبْرٍ مِنَ الأرْضِ، طُوِّقَهُ مِنْ سبْعِ أرَضينَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২০৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
জালেম ও পাপী ব্যক্তিকে অবকাশ দেওয়ার কারণ
হাদীছ নং : ২০৭

হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা জালেমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর যখন তাকে ধরেন, তখন আর তাকে ছাড়েন না। তারপর তিনি (কুরআন মাজীদের আয়াত) পাঠ করেন-
وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ (102)
(যে সকল জনপদ জুলুমে লিপ্ত হয়, তোমার প্রতিপালক যখন তাদের ধরেন, তখন তাঁর ধরা এমনই হয়ে থাকে। বাস্তবিকই তাঁর ধরা অতি মর্মন্তুদ, অতি কঠিন।) সূরা হূদ (১১), আয়াত ১০২
-বুখারী ও মুসলিম।"
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৬৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৮৩: জামে তিরমিযী, নং ৩১১০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪০১৮; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭০৬৩; মুসনাদুল বাযযার, হাদীছ নং ৩১৮৩)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
207 - وعن أَبي موسى - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الله لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ، فَإِذَا أخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ»، ثُمَّ قَرَأَ: {وكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ} [هود: 102] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২০৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
দা‘ঈর করণীয় ও মজলুমের বদদুআ প্রসঙ্গ
হাদীছ নং: ২০৮

হযরত মুআয রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে (ইয়ামানের আমীর ও শাসক করে) পাঠালেন। তখন বললেন, তুমি আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত একটি সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। তুমি তাদেরকে এই সাক্ষ্যদানের আহ্বান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তবে তাদেরকে শিক্ষা দেবে যে, আল্লাহ তা'আলা প্রতি দিবারাত্রে তাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা এটা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানাবে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের ওপর সদাকা (যাকাত) ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এটা মেনে নেয়, তবে (যাকাত হিসেবে) তাদের উৎকৃষ্ট সম্পদ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে আর মাজলুমদের দু'আকে (অর্থাৎ বদদুআকে) ভয় করবে, কেননা তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোনও আড়াল থাকে না -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২০১৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৫৮৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫২২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৭৮৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৭১)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
208 - وعن معاذ - رضي الله عنه - قَالَ: بَعَثَنِي رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «إنَّكَ تَأتِي قَوْمًا مِنْ [ص:92] أهلِ الكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لا إلَهَ إلاَّ الله، وَأنِّي رسولُ الله، فَإنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ قَدِ افْتَرضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَواتٍ في كُلِّ يَوْمٍ وَلَيلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤخَذُ مِنْ أغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإنْ هُمْ أطَاعُوا لِذَلِكَ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ (1) أمْوَالِهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ؛ فإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَها وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ (2)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (3)
হাদীস নং: ২০৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সতর্কবাণী
হাদীছ নং : ২০৯

হযরত আবূ হুমাইদ আব্দুর রহমান আস-সাইদী রাযি. বলেন, আযদ গোত্রীয় জনৈক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাত আদায়ের দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। তাকে 'ইবনুল-লুতবিয়্যাহ' নামে ডাকা হত। সে (যাকাত আদায় করার পর) এসে বলল, এই মাল আপনাদের আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন। তারপর বললেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে যে সকল বিষয়ের অভিভাবক বানিয়েছেন, তার কোনও কোনওটিতে আমি তোমাদের কোনও ব্যক্তিকে নিযুক্ত করি, তারপর সে আমার কাছে ফিরে এসে বলে- এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। তার এ কথা যদি সত্য হয় তবে সে কেন তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থাকে না, যাতে তার হাদিয়া তার কাছে পৌঁছে যায়?
আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায়ভাবে কোনও বস্তু গ্রহণ করলে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ওই বস্তু বহনরত অবস্থায়। সুতরাং আমি তোমাদের কাউকে যেন এমন অবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে না দেখি যে, সে উট বহন করছে আর সেটি ডাকাডাকি করছে অথবা গরু বহন করছে আর সেটি হাম্বা- হাম্বা করছে কিংবা ছাগল বহন করছে আর সেটি ভ্যা-ভ্যা করছে। তারপর তিনি দু'হাত তুললেন, এমনকি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? তিনি এ কথা তিনবার বললেন -বুখারী ও মুসলিম.
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৯৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৩২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ২৯৪৬; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৬৯৫১; আত-তাবারানী, আ-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৭৭৩০; মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীছ নং ৮৬৩)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
209 - وعن أبي حُمَيدٍ عبد الرحمان بن سعد السَّاعِدِي - رضي الله عنه - قَالَ: اسْتَعْمَلَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - رَجُلًا مِنَ الأزْدِ (1) يُقَالُ لَهُ: ابْنُ اللُّتْبِيَّةِ عَلَى الصَّدَقَةِ، فَلَمَّا قَدِمَ، قَالَ: هَذَا لَكُمْ، وَهَذَا أُهْدِيَ إِلَيَّ، فَقَامَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - عَلَى المِنْبَرِ فَحَمِدَ الله وَأثْنَى عَلَيهِ، ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بَعدُ، فَإِنِّي أسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ منْكُمْ عَلَى العَمَلِ مِمَّا وَلاَّنِي اللهُ، فَيَأتِي فَيَقُولُ: هَذَا لَكُمْ وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ إلَيَّ، أفَلاَ جَلَسَ في بيتِ أبِيهِ أَوْ أُمِّهِ حَتَّى تَأتِيَهُ هَدِيَّتُهُ إنْ كَانَ صَادِقًا، واللهِ لاَ يَأخُذُ أحَدٌ مِنْكُمْ شَيئًا بِغَيرِ حَقِّهِ إلاَّ لَقِيَ اللهَ تَعَالَى، يَحْمِلُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَلا أَعْرِفَنَّ أحَدًا مِنْكُمْ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُ بَعيرًا لَهُ رُغَاءٌ (2)، أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ، أَوْ شَاةً تَيْعَرُ» ثُمَّ رفع يديهِ حَتَّى رُؤِيَ بَيَاضُ إبْطَيْهِ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ». ثلاثًا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (3)
হাদীস নং: ২১০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
মজলুমের কাছ থেকে জুলুমের দাবি মাফ করিয়ে নেওয়া
হাদীছ নং : ২১০

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যার কাছে তার ভাইয়ের ইজ্জত-সম্মান বা অন্যকিছু সম্পর্কিত কোনও জুলুম (-এর দাবি) আছে, তবে সে যেন আজই তার কাছ থেকে তা ক্ষমা করিয়ে নেয় ওই দিন আসার আগে, যেদিন কোনও দীনার ও দিরহাম থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তবে তার কাছ থেকে তার জুলুম পরিমাণে তা নিয়ে যাওয়া হবে। আর যদি তার কোনও নেক আমল না থাকে, তবে তার প্রতিপক্ষের গুনাহ থেকে (তার জুলুমের সমপরিমাণ) কেটে নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে -বুখারী।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪১৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৭৩৬১; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৩৭০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৬৩; মুসনাদ আবূ দাউদ ওয়ালিসী, হাদীছ নং ২৪৪০)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
210 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلمَةٌ لأَخِيهِ، مِنْ عِرضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ اليَوْمَ قبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ؛ إنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلمَتِهِ، وَإنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيهِ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ২১১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
প্রকৃত মুসলিম ও প্রকৃত মুহাজির
হাদীছ নং : ২১১

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলিম ওই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির ওই ব্যক্তি, যে পরিত্যাগ করে ওইসকল বিষয়, যা আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪০ সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ২৪৮১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৫১৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৬৯৯৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ১৮০,)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
211 - وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «المُسْلِمُ منْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ২১২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
গনীমতের মাল আত্মসাতের পরিণাম
হাদীছ নং : ২১২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মালপত্রের দায়িত্বে ছিল। সে মারা গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী। (এ কথা শুনে) তারা (অর্থাৎ সাহাবীগণ) তার প্রতি লক্ষ করার জন্য (তার কাছে গেলেন (যে, তার জাহান্নামী হওয়ার কারণ কী?)। সেখানে তারা একটি 'আবা" (পোশাকবিশেষ) পেলেন, যা সে আত্মসাৎ করেছিল।- বুখারী, (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩০৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৮৪৯; মুসনাদে আহমান, হাদীছ নং ৬৪৯৩; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৯৫০৪; বায়হাকী, আস-সুনানুস সাগীর, হাদীছ নং ২৮৭৪)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
212 - وعنه - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ عَلَى ثَقَل النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كِرْكِرَةُ، فَمَاتَ، فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «هُوَ في النَّارِ». فَذَهَبُوا يَنْظُرُونَ إِلَيْه، فَوَجَدُوا عَبَاءَةً قَدْ غَلَّهَا. رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ২১৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
বিদায় হজ্জের ভাষণের একটি অংশ : মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা
হাদীছ নং : ২১৩

হযরত আবূ বাকরা রাযি. নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা যেদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন, সেদিন থেকে কাল তার নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তন করছে- বছরে বারো মাস, তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, যার তিনটি পরপর। সে তিনটি হচ্ছে যূ-কা'দা, যুলহিজ্জা ও মুহাররাম আর (চতুর্থটি) মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শা'বান মাসের মাঝখানে।
(তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন,) এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম তিনি হয়তো এর (প্রচলিত নাম ছাড়া) অন্য কোনও নাম রাখবেন। (অবশেষে) তিনি বললেন, এটি কি যুলহিজ্জা নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই।
তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন নগর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম তিনি হয়তো এর (প্রচলিত নাম ছাড়া) অন্য কোনও নাম রাখবেন। (অবশেষে) তিনি বললেন, এটা কি (মক্কা) নগর নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই।
(তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন,) এটি কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম তিনি হয়তো এর (প্রচলিত নাম ছাড়া) অন্য কোনও নাম রাখবেন। (অবশেষে) তিনি বললেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই।
তারপর তিনি বললেন, তোমাদের এই মাসে এই নগরে এ দিনটি যেমন মর্যাদাপূর্ণ (যা ক্ষুণ্ণ করা হারাম), তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের মান-সম্মানও তোমাদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ (যা ক্ষুণ্ণ করা হারাম)। তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান! তোমরা আমার পরে কাফের অবস্থায় ফিরে যেও না যে, তোমাদের একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে দেবে। শোন! উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। কেননা অসম্ভব নয় যে, যারা এটা (আমার কাছ থেকে) শুনেছে তাদের কতক অপেক্ষা যাদের কাছে পৌঁছানো হবে তাদের কতক বেশি সংরক্ষণকারী হবে।
তারপর তিনি বললেন, বল তো আমি কি পৌঁছে দিয়েছি, বল তো আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমরা বললাম, হাঁ (আপনি পৌঁছে দিয়েছেন)। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! সাক্ষী থাকুন -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৭, ১৭৪১, ৪৪০৬: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৭৯; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৯৭৪: বায়হাকী, 'শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫১০২; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৯৬৫)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
213 - وعن أَبي بكْرة نُفَيْع بن الحارث - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَته يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرضَ: السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثٌ مُتَوالِياتٌ: ذُو القَعْدَة، وذُو الحِجَّةِ، وَالمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ (1) الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشعْبَانَ، أيُّ شَهْرٍ هَذَا؟» قُلْنَا: اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَننَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: «ألَيْسَ ذَا الحِجَّةِ؟» قُلْنَا: بَلَى. قَالَ: «فَأيُّ بَلَد هَذَا؟» قُلْنَا: اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيرِ اسْمِهِ. قَالَ: «ألَيْسَ البَلْدَةَ؟» قُلْنَا: بَلَى. قَالَ: «فَأيُّ يَوْمٍ هَذَا؟» قُلْنَا: اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بغَيرِ اسْمِهِ. قَالَ: «ألَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ؟» قُلْنَا: بَلَى. قَالَ: «فَإنَّ دِمَاءكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا في بَلَدِكُمْ هَذَا في شَهْرِكُمْ هَذَا، وَسَتَلْقُونَ رَبَّكُمْ فَيَسْألُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، ألاَ فَلا تَرْجعوا بعدي كُفّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْض، ألا لَيُبَلِّغ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ يَبْلُغُهُ أَنْ يَكُونَ أوْعَى لَهُ مِنْ بَعْض مَنْ سَمِعَهُ»، ثُمَّ قَالَ: «إلاَّ هَلْ بَلَّغْتُ، ألاَ هَلْ بَلَّغْتُ؟» قُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: «اللَّهُمَّ اشْهَدْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
হাদীস নং: ২১৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
মিথ্যা কসম দ্বারা অন্যের অধিকার হরণের পরিণাম
হাদীছ নং : ২১৪

হযরত আবূ উমামা ইয়াস হবন ছা'লাবা আল-হারিছী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি (মিথ্যা) শপথের মাধ্যমে কোনও মুসলিমের হক আত্মসাৎ করল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করবেন এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন। তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদিও তা কোনও তুচ্ছ জিনিস হয়? তিনি বললেন, যদিও তা আরাক গাছের একটা ডালাও হয়- মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৭: মুআত্তা মালিক, হাদীছ নং ১১। সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৪১৯; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৪৯৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫০৮, তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৯২১৯)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
214 - وعن أَبي أمامة إياس بن ثعلبة الحارثي - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَن اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِم بيَمِينه، فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيهِ الجَنَّةَ» فَقَالَ رَجُلٌ: وَإنْ كَانَ شَيْئًا يَسِيرًا يَا رَسُول الله؟ فَقَالَ: «وإنْ قَضِيبًا مِنْ أَرَاك». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ২১৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
সরকারি দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তির অসততার পরিণাম
হাদীছ নং : ২১৫

হযরত 'আদী ইবন 'আমীরা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমরা তোমাদের মধ্য থেকে যাকেই কোনও দায়িত্বে নিযুক্ত করি, তারপর সে একটা সুই পরিমাণ বা তার উপরের কোনও বস্তু গোপন করে, তবে তা আত্মসারূপে গণ্য হবে। সে কিয়ামতের দিন ওই বস্তুসহ হাজির হবে। একথা শুনে আনসার সম্প্রদায়ের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি উঠে তাঁর কাছে আসলেন, যাকে আমি এখনও যেন দেখতে পাচ্ছি, তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার কাছ থেকে আপনার (দেওয়া) দায়িত্ব বুঝে নিন। তিনি বললেন, কেন, তোমার কী হয়েছে? কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বললেন, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছি। তিনি বললেন, আমি এখনও তাই বলছি যে, তোমাদের মধ্য থেকে যাকেই আমরা কোনও দায়িত্বে নিযুক্ত করি, সে যেন কম-বেশি সবই নিয়ে আসে। তা থেকে তাকে যা দেওয়া হবে তাই সে নেবে, আর তাকে যা দেওয়া হবে না তা থেকে বিরত থাকবে -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৩৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৫৮১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭৭১৭: মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৯১৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৭৮; সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীছ নং ২৩৩৮)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
215 - وعن عَدِيّ بن عَميْرَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: سمعت رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ، فَكَتَمَنَا مِخْيَطًا فَمَا فَوْقَهُ، كَانَ غُلُولًا يَأتِي بهِ يَومَ القِيَامَةِ». فَقَامَ [ص:94] إليه رَجُلٌ أسْوَدُ مِنَ الأنْصَارِ، كَأنِّي أنْظُرُ إِلَيْهِ، فَقَالَ: يَا رَسُول الله، اقْبَلْ عَنِّي عَمَلَكَ، قَالَ: «وَمَا لَكَ؟» قَالَ: سَمِعْتُكَ تَقُولُ كَذَا وكَذَا، قَالَ: «وَأَنَا أقُولُه الآنَ: مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَلْيَجِيءْ بقَلِيلِه وَكَثيره، فَمَا أُوتِيَ مِنْهُ أخَذَ، وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهَى». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ২১৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
গনীমতের মাল আত্মসাৎ দ্বারা শাহাদাতের মর্যাদা বাতিল হওয়া
হাদীছ নং : ২১৬

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন, খায়বারের যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একদল সাহাবী তাঁর কাছে এসে বললেন, অমুক শহীদ, অমুক শহীদ। একপর্যায়ে তারা আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, অমুক শহীদ। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে উঠলেন, কক্ষণও নয়, আমি তাকে একটি চাদর বা একটি আবার কারণে জাহান্নামে দেখতে পেয়েছি -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৮৫৭: বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪০২২; মুসনাদুল বাযযার, হাদীছ নং ১৯৮)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
216 - وعن عمر بن الخطاب - رضي الله عنه - قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيبَر أقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ أصْحَابِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فقَالُوا: فُلاَنٌ شَهِيدٌ، وفُلانٌ شَهِيدٌ، حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ، فقالوا: فُلانٌ شَهِيدٌ. فَقَالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «كَلاَّ، إنِّي رَأيْتُهُ في النَّار في بُرْدَةٍ غَلَّهَا (1) أَوْ عَبَاءة». رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ২১৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
জিহাদ ও শাহাদাতের ফযীলত এবং বান্দার হক আদায়ের গুরুত্ব
হাদীছ নং: ২১৭

হযরত আবূ কাতাদা হারিছ ইবন রিব'ঈ রাযি. থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মধ্যে দাঁড়ালেন। তিনি তাদেরকে জানালেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ করা ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা শ্রেষ্ঠতম আমল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন তো, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই, তবে কি আমার গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে? রাসলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, ছাওয়াবের আশাবাদী ও সামনে অগ্রগামী হয়ে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী না হয়ে আল্লাহর পথে নিহত হও। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কী বললে? সে (ব্যক্তি) উত্তর দিলেন, বলুন তো, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই, তবে কি আমার গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, তুমি যদি ধৈর্যশীল, ছাওয়াবের আশাবাদী ও সামনে অগ্রগামী এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী না হয়ে (নিহত হয়ে) থাক। তবে দেনা ব্যতিক্রম (অর্থাৎতা মাফ হবে না)। জিবরাঈল আমাকে এ কথা বলেছেন -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৮৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩১৫৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭১২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮০৬২: বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫১৪৬: তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ৩৬৩৮)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
217 - وعن أَبي قتادة الحارث بن ربعي - رضي الله عنه - عن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: أَنَّهُ قَامَ فيهم، فَذَكَرَ لَهُمْ أنَّ الجِهَادَ في سبيلِ الله، وَالإِيمَانَ بالله أفْضَلُ الأعْمَالِ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله، أرَأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سبيلِ الله، تُكَفَّرُ عَنّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «نَعَمْ، إنْ قُتِلْتَ في سبيلِ اللهِ، وَأنْتَ صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبر». ثُمَّ قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَيْفَ قُلْتَ؟» قَالَ: أرَأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سبيلِ الله، أتُكَفَّرُ عَنّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «نَعمْ، وَأنْتَ صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبِرٍ، إلاَّ الدَّيْنَ؛ فإنَّ جِبريلَ - عليه السلام - قَالَ لِي ذلِكَ (1)» رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ২১৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
প্রকৃত মিসকীন কে?
হাদীছ নং : ২১৮

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব-গরীব কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব-গরীব হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যার কোনও অর্থ-সম্পদ নেই। তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব-গরীব ওই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে হাজির হবে। সেইসঙ্গে সে হাজির হবে এ অবস্থায় যে, (দুনিয়ায়) সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও প্রতি অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারও রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। সুতরাং এই ব্যক্তিকে তার নেক আমলের একাংশ দেওয়া হবে, ওই ব্যক্তিকে তার নেক আমলের একাংশ দেওয়া হবে (এভাবে দেওয়া হতে থাকবে)। যদি তার নেক আমলসমূহ তার দেনা পরিশোধ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়, তবে তাদের থেকে তাদের গুনাহসমূহ নিয়ে তার ওপর নিক্ষেপ করা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৮১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪১৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮০১৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪১১; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩৩: আত-তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৭৭৮)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
218 - وعن أبي هُريرةَ - رضي الله عنه: أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «أتدرونَ مَنِ المُفْلِسُ؟» قالوا: المفْلسُ فِينَا مَنْ لا دِرهَمَ لَهُ ولا مَتَاع، فَقَالَ: «إنَّ المُفْلسَ مِنْ أُمَّتي مَنْ يأتي يَومَ القيامَةِ بِصَلاَةٍ وصِيامٍ وَزَكاةٍ، ويأتي وقَدْ شَتَمَ هَذَا، وقَذَفَ (1) هَذَا، وَأَكَلَ مالَ هَذَا، وسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وهَذَا مِنْ حَسناتهِ، فإنْ فَنِيَتْ حَسَناتُه قَبْل أَنْ يُقضى مَا عَلَيهِ، أُخِذَ منْ خَطَاياهُم فَطُرِحَتْ عَلَيهِ، ثُمَّ طُرِحَ في النَّارِ». رواه مُسلم. (2)
হাদীস নং: ২১৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
মিথ্যা মামলায় জেতা সম্পদের পরিণতি
হাদীছ নং : ২১৯

উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি একজন মানুষই। তোমরা তোমাদের ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসার জন্য আমার কাছে এসে থাক। হয়তো তোমাদের একজন দলীল-প্রমাণ উত্থাপনে অপরজন অপেক্ষা বেশি পারদর্শী। ফলে আমি তার কাছ থেকে যেভাবে শুনি, সে অনুযায়ী ফয়সালা দিয়ে দিই। সুতরাং এভাবে আমি তার ভাইয়ের হক তাকে দিয়ে দেওয়ার ফয়সালা করলে প্রকৃতপক্ষে আমি তাকে জাহান্নামের একটা টুকরাই দিয়ে দিই -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৯৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৩৫৮৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৪০১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩৮৮; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৩১৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫৬৭০)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
219 - وعن أم سلمة رضي الله عنها: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّمَا أنا بَشَرٌ، وَإنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُونَ ألْحَنَ بِحُجّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، فأَقْضِيَ لَهُ بِنَحْوِ مَا أسْمعُ، فَمَنْ قَضَيتُ لَهُ بِحَقِّ أخِيهِ فَإِنَّما أقطَعُ لَهُ قِطعةً مِنَ النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
«ألْحَن» أي: أعلم.
হাদীস নং: ২২০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ জুলুমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ফেরত দেওয়ার হুকুম।
অন্যায় রক্তপাতের কঠিন পরিণাম
হাদীছ নং : ২২০

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুমিন ব্যক্তি সর্বদা তার দীনের ক্ষেত্রে অবকাশের মধ্যে থাকে, যতক্ষণ না কোনও অন্যায় রক্তপাতে লিপ্ত হয় -বুখারী।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬৮৬২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৫৬৮১; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৮০২৯; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৪৯৫৩; তাবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ১৪০১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৫১৯)
مقدمة الامام النووي
26 - باب تحريم الظلم والأمر بردِّ المظالم
220 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «لَنْ يَزَالَ المُؤْمِنُ في فُسْحَةٍ (1) مِنْ دِينهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا». رواه البخاري. (2)