ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন নয়, বরং শান্তি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৬
ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পন নয়, বরং শান্তি! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩৬
‘ইসলাম' শব্দের অর্থ আত্মসমার্পন করা। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের সকল আইন-কানুনকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়া। হেযবুত তওহীদ কী বলে? কিন্তু হেযবুত তওহীদের দাবি অনুযায়ী ‘ইসলাম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ ‘শান্তি’৷ কিন্তু প্রচলিত ধারণায় ‘ইসলাম’মানে যে আত্মসমর্পণ করা এটা সঠিক অর্থ নয়। তারা কী লিখেছে, আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণের নাম ইসলাম। এটাও ভুল। –এ ইসলাম ইসলামই নয়, পৃ. ৩১ ইসলাম শব্দটি এসেছে সালাম থেকে আর সালাম মানেই শান্তি। --মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৩ সবচেয়ে অশান্তির মধ্যে আছে মুসলিম নামের এ জনসংখ্যা। তাদের মধ্যে ইসলাম নেই অর্থাৎ শান্তি নেই। -মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ৪৩ সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। এই সালাম শব্দ থেকেই এসেছে এসলাম। অর্থাৎ শান্তি ও এসলাম সমার্থক শব্দ। ; এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ১৩০; (pdf) পৃ. ১৩২ আল্লাহর দেওয়া এসলামের উদ্দেশ্য হোচ্ছে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, এই দীন অনুসরণের অনিবার্য পরিণতি হোচ্ছে শান্তি এবং অনুসরণ না করার অনিবার্য পরিণতি হোচ্ছে অশান্তি। তাই যেখানে শান্তি নেই, আমরা বোলতে পারি সেখানে এসলাম নেই। -এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৮৯ ইসলাম কী বলে? 'ইসলাম' শব্দটি আরবী। আরবী ভাষার বিশ্ববিখ্যাত অভিধান 'লিসানুল আরব' সহ অন্যান্য অবিধান অনুযায়ী শব্দটির অর্থ হলো, 'আত্মসমর্পণ করা' বা 'রবের বিধান মেনে নেওয়া’। এটা শুধু আরবী অবিধানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এ অর্থটি খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও প্রমাণিত। হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, لما كان يومُ الفتح قال رسولُ اللهِ ﷺ لأبي قحافةَ أسلِمْ تسلَمْ মক্কা বিজয়ের দিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু কুহাফাকে বললেন, আত্মসমার্পন করো, নিরাপত্তা লাভ করবে। –মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খ. ৫ পৃ. ৩০৮ অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি, আপনার প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করেছি, আপনার উপরই ভরসা করেছি, আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি এবং আপনার সহযোগিতায়ই শত্রুদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছি। –সহিহ মুসলিম : হাদিস নং : ২৭১৭ উক্ত হাদিসদ্বয় থেকে বুঝা গেলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'ইসলাম' শব্দটি আত্মসমার্পন করা তথা ‘আল্লাহপাকের বিধানাবলীসমেত তাঁর কাছে আত্মসমার্পন করা’ অর্থেই ব্যবহার করতেন। উপরন্তু জিবরাঈল আ. এর প্রশ্নের জবাবে 'ইসলাম' এর পরিচয় দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً . قَالَ صَدَقْتَ ইসলাম হচ্ছে এই– তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মাবুদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১০ উপরিউক্ত হাদিস থেকেও বুঝা গেলো, ‘ইসলাম’-এর মূলই হলো, রবের বিধানসমেত আত্মসমার্পন করা। কিন্তু হাস্যকর ব্যাপার হলো, হেযবুত তওহীদ 'ইসলাম'-এর অর্থ 'আত্মসমার্পন করা' বা 'রবের বিধান মেনে নেওয়া' না মানলেও 'মুসলিম' শব্দের অর্থ ঠিকই 'রবের বিধান স্বসম্মানে গ্রহণ করা' হিশাবে মেনে নেয়। দেখুন তারা কী লিখেছে, মোসলেম শব্দ এসেছে সালাম থেকে। যিনি বা যারা আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা, দীনকে সামগ্রিকভাবে তসলিম অর্থাৎ সসম্মানে গ্রহণ কোরে তা জাতীয়, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা কোরেছেন, অন্যসব রকম ব্যবস্থাকে বর্জন কোরেছেন তিনি বা তারা মোসলেম। -বিশ্বনবীর (দ:) ভাষণ : ১৬৯ পাঠক, কী হাস্যকর! ভেবে দেখেছেন? ইসলামের মানে 'আত্মসমার্পন করা' অর্থটি তাদের কাছে ভুল। অথচ সেই ইসলামের অনুসারী 'মুসলিম' শব্দের অর্থ আত্মসমার্পনকারী সঠিক। এতবড় মূর্খতা! কিন্তু কেন? কারণ এ মূর্খ পণ্ডিতদের মহাগুরু জনাব পন্নী তার আরবী জ্ঞান সম্পর্কে কী বলেছে দেখুন। পন্নী লিখেছে, আমি বাংলা জানি,যেটুকু জানা দরকার মানুষের, ইংলিশ জানি, যতটুকু মানুষের জানা দরকার, আমি আরবী জানি না, আরবীতে আমি নিরক্ষর। ঠিক আক্ষরিকভাবে নয়, কিন্তু আমি আরবী জানি না। আর যে এসলাম নিয়ে কথা সেই এসলাম রোয়েছে কোর'আন-হাদীসে আর সেটার ভাষা আরবী। ওখানে আমি বাস্তবিক অর্থে নিরক্ষর। –আল্লাহর মো'জেজা হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৫৫ সুতরাং মূর্খরা নিজের অজ্ঞতাকে বিবেচনায় না এনে, শিক্ষিতদের ভূল ধরাটা নির্লজ্জতা নয় কী?
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ পর্ব–১৭
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১২৩৭