ইসলাম তের'শ বছর আগেই হারিয়ে গেছে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩২
ইসলাম তের'শ বছর আগেই হারিয়ে গেছে! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৩২
প্রিয় পাঠক, আমি আগাগোড়াই বলে আসছি, হেযবুত তওহীদ একটি ভ্রান্ত ও কুফরী দল। তাদের এ ভ্রান্তির পেছনে ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের মিশন বাস্তবায়ণ করে যাচ্ছে। মূলত ইসলাম বিদ্বেষীদের মিশন বাস্তবায়ণে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা ইসলামকে বিকৃত প্রমাণ করতে একটি হাদিসের অপব্যাখ্যা করেছে। চলুন তারা কী বলে দেখা যাক। হেযবুত তাওহীদ কী বলে? এ ব্যাপারে তারা দলীল হিসাবে একটা হাদিস পেশ করে থাকে। তারা লিখেছেন, মহানবী ভবিষ্যদ্বাণী কোরেছেন –আমার উম্মাহর আয়ূ ৬০/৭০ বছর (হাদিস –আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে তিরমিযি ও ইবনে মাযাহ, মেশকাত) অর্থাৎ তাঁর উম্মাহ পৃথিবীতে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা হবে সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়। –এসলামের প্রকৃত রূপরেখা : পৃ. ৪৯ অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিরমিযি শরীফের হাদিসে বলেছেন, আমার উম্মতের আয়ু হবে ৬০/৭০ বছর। এজন্য তারা বলে যেহেতু উম্মত টিকে ছিলো ৬০/৭০ বছর এরপর আর কোনো উম্মাহ ছিলো না, সেহেতু আসল ইসলামও তখন থেকেই পৃথিবীতে নেই। এজন্য তারা বলে থাকে, প্রকৃত এসলাম হারিয়ে গেছে রসুলুল্লাহর ৬০/৭০ বছর পরেই। –আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১১ প্রকৃত এসলাম তেরশ’ বছর আগে হারিয়ে গেছে। –এসলাম শুধু নাম থাকবে, পৃ. ৬১ আল্লাহর দেওয়া প্রকৃত এসলাম মহানবী যেভাবে পৃথিবীতে রেখে গিয়েছিলেন, সেটা গত ১৩০০ বছরের কাল পরিক্রমায় বিকৃত হোতে হোতে বর্তমানে একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। –আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ৫ অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায়, প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরেই। তথা আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে। ইসলাম কী বলে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই ইসলাম বিকৃতির পক্ষে তারা যে হাদিসটি পেশ করেছে, চলুন, সেটা আগে দেখে নেওয়া যাক। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, عُمُرُ أُمَّتِي مِنْ سِتِّينَ سَنَةً إِلَى سَبْعِينَ سَنَةً আমার উম্মতের বয়স হল ষাট থেকে সত্তর বছর পর্যন্ত। –জামে তিরমিযি, হাদীস নং : ২৩৩১ পন্নী সাহেব যেহেতু আরবি জানতেন না, এজন্য এই হাদিসটি বুঝতে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন। কারণ হাদিসটির মূল বিষয় হলো, উম্মতে মুহাম্মাদীর সদস্যদের বয়সসীমা নিয়ে। অর্থাৎ সাধারণভাবে এই উম্মতের লোকদের আয়ুষ্কাল হবে তাদের জীবনের ষাট ও সত্তর দশকের সীমায়। এ ব্যাখ্যাটাই ১৪০০ বছর যাবৎ সমস্ত মুসলিম বুঝে আসছেন। কিন্তু আরবিতে অজ্ঞ পন্নী সাহেব বুঝালেন ভিন্ন কথা। তিনি বুঝলেন, উম্মতে মুহাম্মাদী জাতিটিই টিকে থাকবে ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত। কী হাস্যকর ব্যাপার! যাইহোক, এরপরও যদি পন্নী সাহেবের এ দাবি সত্য হিশাবে আমাদের মানতেই হয় যে, 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মাহ পৃথিবিতে টিকে থাকবে ৬০/৭০ বছর, তারপর যেটা হবে, সেটা নামে মাত্র উম্মতে মোহাম্মদী, সেটা প্রকৃত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদী নয়।' তাহলে অসংখ্য সাহাবিকে বেঈমান বলতে হয় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অগণিত হাদিস মিথ্যা হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ। নিন্মে দুটি হাদিস খেয়াল করুন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী যুগের। এরপরে এমন সব লোক আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেওয়ার আগে কসম করে বসবে। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ২৬৫২ উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহি. বলেন, والصحيح أن قرنه صلى الله عليه وسلم الصحابة والثاني التابعون والثالث تابعوهم নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগ বলতে সাহাবাদের যুগ, দ্বিতীয় যুগ তাবেয়ীনদের যুগ, তৃতীয় যুগ হলো, তাবে তাবেয়ীনদের যুগ। –আল মিনহাজ (শরহে মুসলিম লিননববী), খ. ১৬ পৃ. ৮৫ উক্ত হাদিসে বর্ণিত ৩ যুগের সময়কাল হিসাব করলে অন্তত দেড়'শ বছর হবে। তাহলে হেযবুত তওহীদেে ব্যখ্যানুযায়ী 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সত্যিকারের উম্মত থাকবে ৬০/৭০ বছর' এ কথাটা কী এ হাদিসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক নয়? উপরন্তু হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন। -সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৫৬ যেখানে বলা হয়েছে, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত একদল লোক সত্যের উপর থাকবে। সুতরাং সত্যিকারের উম্মতে মুহাম্মাদী যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকালের পর মাত্র ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত জিবিত থাকেন, আর এরপর সবাই যদি উম্মত মুহাম্মাদী না হয়, তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভাষ্য অনুযায়ী এই বিজয়ী দলটিও কী তাহলে উম্মতে মুহাম্মাদী নয়? বুঝা গেলো, তিরমিযি শরীফের বয়সসীমা সংক্রান্ত হাদিসটির অপব্যখ্যা করে ইসলামকে বিকৃত বলতে ব্যার্থ প্রচেষ্টা করেছেন। উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম সারাখসী রহি. বলেন, وَشَيْء من الْمَعْقُول يَشْهَد بِهِ فَإِن الله تعالى جعل الرَّسُول خاتم النَّبِيين وحكم بِبَقَاءِ شَرِيعَته إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَأَنه لَا نَبي بعده وَإِلَى ذَلِكَ أَشَارَ رَسُول الله صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم أن في قَوْله لَا تزال طَائِفَة من أمتي على الحق ظَاهِرين لا يضرهم من ناوأهم فَلَا بُد من ان تكون شَرِيعَته ظَاهِرَة فِي النَّاسِ إِلَى قيام السَّاعَة وَقد انْقَطع الْوَحْيِ بوفاته فَعرفنَا ضَرُورَة أن طَرِيق بَقَاء شَرِيعَته عصمة الله أمته من أن يجتمعوا على الضَّلَالَة فَإِن في الاجتماع على الضَّلَالَة رفع الشَّرِيعَة وَذَلِكَ يضاد الْمَوْعُود من الْبَقَاء. 'রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আর কোনো নবি আসবে না' হাদিসটি এ যুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সর্বশেষ নবি হিশাবে নির্বাচিত করেছেন এবং তাঁর আনীত শরীয়তকে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য ঘোষণা করেছেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান, “সর্বদা আমার উম্মতের একটি জামায়াত হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে বিরোধিতা কারীগণ তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সুতরাং অনিবার্য ও আবশ্যক হল রাসূল সা. এর শরীয়ত কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানুষদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত থাকা । আর যেহেতু রাসূল সা. এর তিরোধানের মাধ্যমে ওহীর দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আমরা অকাট্যভাবে জানতে পেরেছি যে, শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত বাকী থাকার একমাত্র পদ্ধতিহল আল্লাহ উম্মতকে এক সাথে পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে হেফাযত করা। সকলে এক সাথে পথভ্রষ্ট হওয়ার অর্থ হল শরীয়ত বিনাশ ও ধ্বংস হওয়া আর এ ধ্বংস হওয়া শরীয়ত বাকি থাকার দাবি ও অঙ্গীকারের সম্পূর্ণ বিপরীত। -উসূলে সরখসী খ.১ পৃ. ৩১০-৩১১ তবে কী সাহাবায়ে কেরামও রা. উম্মতে মুহাম্মাদী নন? আরও দেখুন, হেযবুত তওহীদের দাবি হলো, সাহাবায়ে কেরামই রা. মূলত উম্মতে মুহাম্মাদী। [আকীদা : পৃ. ৮] অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরও কিন্তু অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম রা. বেঁচে ছিলেন। যেমন হযরত আনাস রা. ৯৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেছেন। সর্বশেষ যে সাহাবী ইন্তেকাল করেন, তাঁর নাম হযরত আবু তুফায়েল আমের ইবনে ওয়াসিলা রা.। তিনি ইন্তেকাল করেন ১১০ হিজরীতে। তাঁর ব্যাপারে হযরত ওয়াহাব ইবনে জারীর রহি. বলেন, سمعت أبي يقول كنت بمكة سنة عشر ومائة فرأيت جنازة فسألت عنها فقالوا هذا أبو الطفيل আমি আমার বাবাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আমি মক্কায় ১১০ হিজরীতে একটি জানাজা দেখলাম দেখলাম। অতপর তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে লোকেরা বললো, তিনি সাহাবি আবু তুফায়েল। -তাদরীবুর রাবী : খ. ১ পৃ. ১৩১ তাহলে বুঝতে পারলাম, ১১০ হিজরিতেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবী আবু তুফায়েল আমের ইবনে ওয়াসিলা রা. বেঁচে ছিলেন। এভাবে অসংখ্য সাহাবীদের নাম বলা যাবে, যাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরও বেঁচে ছিলেন। তাহলে তাঁরাও কী উম্মতে মুহাম্মাদী ছিলেন না? আসলে একটা হাদিসের অপব্যাখ্যার কারণে কতো হাদিসকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে হচ্ছে, কতো সাহাবিকে বেঈমান বানাতে হচ্ছে! নাউযুবিল্লাহ। তবে কী হাদিসগ্রন্থের লেখকরাও উম্মাতে মুহাম্মাদী নন? শুধু কি তাই? যদি হেযবুত তওহীদের কথা সত্য বলে মানতে হয়, তাহলে তাদের দাবি অনুযায়ী ইমাম বুখারী ও মুসলিম, তিরমিযি রহি. সহ সকল লেখকদের হাদিসগ্রন্থ গুলোও তো মানা যাবে না। কারণ তাঁরাও তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের কয়েক'শ বছর পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাহলে তারও তো উম্মতে মুহাম্মাদী ছিলেন না। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকাল হয়েছে ১১ হিজরীতে। আর ইমাম বুখারী রহি. জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৯৪ হিজরীতে। তার মানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালে ১৮৩ বছর পর ইমাম বুখারী রহি. এর জন্ম। ওদিকে বুখারী শরীফ লিখতে লিখতে আরও অনেক বছর চলে গেছে। তাহলে বুঝা গেলো, বুখারী শরীফের অস্তিত্ব আসছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ২০০ বছর পর। এমনিভাবে ইমাম মুসলিম রহি. জন্মগ্রহণ করেন ২০২ হিজরীর পরে, ইমাম তিরমিযি রহি. জন্মগ্রহণ করেছেন ২০৯ হিজরীর পরে। আর তাঁদের লেখা কিতাবগুলো দিয়েই পন্নী সাহেব ইসলামের বাস্তব রুপ বুঝতে পারলেন, অথচ তারা দাবি করেছেন, ‘ইসলামের রুপ হারিয়ে গেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই।’ বিষয়টি কতবড় হাস্যকর ভেবে দেখেছেন? তবে তো হেযবুত তওহীদের কেউ মুসলমান নয়: বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে, 'কারো জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেও সেখানে পড়তে হয়' 'উপরে থুথু ফেললে নিজের মুখে আগে পড়ে' এটাই হয়েছে হেযবুত তওহীদের বেলায়ও। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর যদি কেউ উম্মতে মুহাম্মাদী না থাকে, তাহলে হেযবুত তওহীদও তো তাহলে উম্মতে মুহাম্মাদী নয়। কারণ তাদের দাবি হলো, ইসলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পরই হারিয়ে গেছে এবং দলিল হিশাবে তারা হাদিস দিয়েছিলো 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পর উম্মত থাকবে না'। তার মানে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাবে। অথচ হেযবুত তওহীদের জন্ম হয়েছে ১৯৯৫ সালে। তাহলে ১৪০০ বছর পর সে ইসলাম অবিকৃতভাবে হেযবুত তওহীদের কাছে অস্তিত্বে আসলো কেমনে? কারণ তাদের দাবিতে তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি বলেছেন, ৬০/৭০ বছর পর আর উম্মত থাকবে না, মানে ইসলাম থাকবে না! তাহলে ইসলাম তো ৬০/৭০ বছর পরেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, সে ইসলাম আবার অবিকৃত অবস্থায় টিকে থাকলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাবী মিথ্যা হয়ে যাবে না? তাদের দাবি অনুযায়ী তো তাহলে তাদের এসলামও আসল ইসলাম নয়। আসলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথাকে বিকৃত করে ইসলামকে বিকৃত করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। তাদের সে বিকৃতি ঢেকে রাখতেই খোদ ইসলামকেই বিকৃত করতে এদের হাত কাঁপে না। সুতরাং প্রমাণ হলো, তাদের দাবিটা অসাড় ও অযৌক্তিক। মনে রাখা চাই, ইসলাম অবিকৃত ছিলো, আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কোনো মূর্খদের অযৌক্তিক অপব্যাখ্যার কারণে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে না। ইনশাআল্লাহ।