খ্রিস্টানদের অপকর্মের জন্য ঈসা আ. নিজেও দায়ী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–২৯
খ্রিস্টানদের অপকর্মের জন্য ঈসা আ. নিজেও দায়ী! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–২৯
হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম মহান রবের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী। নবী হিশাবে তিনিও মাসুম বা নিস্পাপ। তিনি নিজে কখনও অপরাধ করেননি, অপরাধীকে প্রশ্রয়ও দেননি। সুতরাং কিয়ামতে তিনি অপরাধী হিশেবে উঠবেন না। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের প্রতিষ্ঠাতা বায়াজীদ খান পন্নী খুব কৌশলী শব্দে লিখেছে, এমন হতে পারে যে, আসমানে উঠিয়ে নেবার পর আল্লাহ ঈসাকে (আ.) ভবিষ্যতে তাঁর উম্মাহর কাজের ফলে যে দাজ্জালের জন্ম হবে তা দেখিয়ে দিলেন, যা দেখে ঈসা (আ.) আল্লাহকে বললেন- ইয়া আল্লাহ! আমার উম্মতের কাজের ফলের জন্য আমিও অন্তত আংশিকভাবে দায়ী । কাজেই আমার উম্মতের সৃষ্ট দানবকে ধ্বংস করার দায়িত্ব আমাকেই দাও । অথবা এমনও হতে পারে যে, আল্লাহই ঈসাকে (আ.) বললেন- ঈসা! দ্যাখো, তোমরা উম্মতের ভুলের, বিপথগামীতার ফলে কেমন মহাশক্তিধর দানব সৃষ্টি হয়েছে যে আমার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে নিজেকে রব, প্রভু বলে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমার শেষ নবীর উম্মতসহ মানবজাতি তাকে রব বলে মেনে নিয়েছে । যেহেতু তোমার উম্মত থেকেই এই কাফের দানবের জন্ম, কাজেই তোমাকেই আমি দায়িত্ব দিচ্ছি একে ধ্বংস করার জন্য । দাজ্জালকে হত্যা বা ধ্বংস করার জন্য আল্লাহর প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে আসমান থেকে হাজার হাজার বছরের অতীতের একজন নির্দিষ্ট নবীকে পৃথিবীতে পাঠাবার অন্য কোনো কারণ আমি দেখি না । যদি কেউ অন্য কারণ বের করতে পারেন তবে তা প্রকাশ করলে আমার ভুল সংশোধন করবো। –দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা, পৃ. ৫৫ উক্ত বক্তব্যে জনাব পন্নী বললো, ঈসা আ. কিয়ামতে আল্লাহকে বলবেন, 'আমার উম্মতের কাজের ফলের জন্য আমিও অন্তত আংশিকভাবে দায়ী' বাক্যটা দিয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে চাইলো যে, ঈসা আ. খ্রীস্টানদের অপরাধে আংশিকভাবে দায়ী বা অপরাধী। ইসলাম কী বলে? এক. আমরা যদি জনাব পন্নীকে প্রশ্ন করি যে, ঈসা আ. এই কথাটা যে কিয়ামতে বলবেন এটা আপনি কোথায় পেলেন? কুরআনে? হাদিসে? না কোথায়? পন্নীকে কবর থেকে উঠিয়ে পৃথিবীর সকল কিতাবাদী তার সামনে দিলেও কিয়ামতের আগে কী এর কোনো জবাব সে কী দিতে পারবে? তাহলে সে কোথায় পেলো এ উদ্ভট কথা? এমন ডাহা মিথ্যাচার করে একজন গুরুত্বপূর্ণ নবীকে অপমান করার বৈধতা সে কোথায় পেলো? এমন একজন জ্বলিলুল ক্বদর রাসুলের শানে এমন বেয়াদবীমূলক অপবাদ দিতে পন্নী সাহেবের হাত কী একবারও কাঁপেনি? দুই. তাছাড়া কুরআনুল কারীমের খ্রীস্টানদের যাবতীয় অপকর্মের সাথে ঈসা আ.-এর সংশ্লিষ্টতা সুষ্পষ্টভাবে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۚ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ ۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ এবং (সেই সময়ের বর্ণনাও শোনো,) যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা ইবনে মারয়াইম! তুমিই কী মানুষকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার মা’ কে মাবুদরূপে গ্রহণ করো? সে বলবে, আমি তো আপনার সত্তাকে (শিরক থেকে) পবিত্র মনে করি। যে কথা বলার কোনও অধিকার নেই, সে কথা বলার সাধ্য আমার ছিল না। আমি এরূপ বলে থাকলে, আপনি অবশ্যই তা জানতেন। আমার অন্তরে যা গোপন আছে, আপনি তা জানেন, কিন্তু আপনার গুপ্ত বিষয় আমি জানি না। নিশ্চয়ই যাবতীয় গুপ্ত বিষয়ে আপনি সম্যক জ্ঞাত। আপনি আমাকে যে বিষয়ের আদেশ করেছিলেন তা ছাড়া অন্য কিছু আমি তাদেরকে বলিনি। তা এই যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমারও প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম। তারপর আপনি যখন আমাকে তুলে নিয়েছেন, তখন আপনি স্বয়ং তাদের তত্ত্বাবধায়ক থেকেছেন। বস্তুত আপনি সব কিছুর সাক্ষী। –সুরা মায়িদা, ১১৬-১১৭ উপরিউক্ত আয়াত দু’টি থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, খ্রীস্টানদের অপকর্মের সাথে ঈসা আ.-এর কোনও যোগসূত্র নেই। তিনি এ থেকে সম্পূর্ণ পূত মুক্ত। যা ঈসা আ. নিজেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এবং সত্য হিশাবে আল্লাহ তাআলা নিজেও স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ্য করেছেন। তাহলে বোঝা গেলো, আল্লাহ নিজেও এ কথা বোঝাতে চাচ্ছেন যে, ঈসা আ. দায়ী নন। তাছাড়া কেউ কারো অপরাধের দায় নিজের কাঁধে নেবে না বা কারও উপর অন্যের অপরাধের দায় চাপানো হবে না। মহা রব্ব বলেন, وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ কেউ কারও অপরাধের বোঝা বহন করবে না। –সুরা ফাতির : ১৮ উপরিউক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো যে, সবাই নিজ নিজ অপরাধে নিজেই অপরাধী। কারও অপরাধ আরেকজনের উপর চাপানো পবিত্র কুরআন বিরোধী। সুতরাং একজন প্রশিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসুলের শানে ‘দায়ী’ বা ‘অপরাধী’ অপবাদ লাগাতে যাদের হাঁত কাঁপেনা তারা আসলে কারা?
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ফিরিস্তা এবং দেবতা একই জিনিষ! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–১০
সমস্ত মুসলামানকে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসমানী কিতাবের মতো ফেরেশতাদের অস্ত...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৩১৮