প্রবন্ধ
নারী-পুরুষের নামাজে পার্থক্য নেই! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭৮
নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই ভিন্ন, সেহেতু ইবাদতের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে, যা হাদিস শরীফ থেকে প্রমাণিত। কিন্তু নারীদের সমানাধিকারের স্লোগানধারী হেযবুত তওহীদ ইবাদতের ক্ষেত্রেও সমানাধিকার দেওয়ার মত দুঃসাহস দেখিয়েছে। তারা লিখেছে–
মেয়েদের সালাহ্ ইবলিসের প্ররোচনায় সঠিক, প্রকৃত ইসলামের আকীদা বিকৃত ও বিপরীতমুখী হয়ে যাওয়ার ফলে ইসলামের প্রকৃত সালাহ্ ও তার উদ্দেশ্যও বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। এর অন্যতম হলো পুরুষ ও নারীর সালাহ্-কে ভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। মেয়েদের সালাতের প্রক্রিয়া, পুরুষের প্রক্রিয়া থেকে কিছুটা অন্যরকম করে দেয়া হয়েছে; যেমন বুকের ওপর হাত বাঁধা, সেজদার সময় মেঝের সাথে মিশে থাকা ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের সালাতে পুরুষ-নারীর প্রক্রিয়ার কোন তফাৎ নেই, উভয়ের একই রকম। –ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪৮
উক্ত লেখায় তারা নারী-পুরুষের নামাজের মধ্যে তারতম্য করতে নারাজ। অর্থাৎ তারা বুঝাতে চায় যে, নারী-পুরুষ একভাবেই নামাজ পড়বে। বিশেষ করে তারা এখানে তিনটা বিষয় উল্লেখ্য করেছে–
১. নারী-পুরুষের নামাজ এক ও অভিন্ন।
২. নারীদের বুকে হাত রাখা।
৩. সিজদার সময় মাটির সাথে মিশে থাকা।
ইসলাম কী বলে?
সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, শক্তি-সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন–
১. আযান-ইকামত শুধু পুরুষই দেবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
২. নামাজে ইমামের ভুল হলে, পুরুষ তাসবীহ আর মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার মাধ্যমে লোকমা দেয়ার নিয়ম।
৩. ইমামতি ও খুৎবা শুধু পুরুষই দিতে পারে, কোন নারীর জন্য ইমাম বা খতীব হওয়া জায়েয নয়।
৪. পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
এমন অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যেখানে নারী-পুরুষের ইবাদতের নিয়মে পার্থক্য করা হয়েছে। উপরন্তু ওড়না ছাড়া নারীদের নামাজ কবুল হয় না। হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةَ حَائِضٍ إِلَّا بِخِمَارٍ
কোন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা ওড়না ছাড়া সালাত আদায় করলে, আল্লাহ তার সালাত কবুল করেন না। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ৬৪১
এখন যদি বলতে হয় যে, নারী-পুরুষের নামাজে কোনো পার্থক্য নেই। তাহলে নামাজে নারীদের যেমন ওড়না লাগে, ঠিক নারী-পুরুষের নামাজে পার্থক্য যারা করতে চাননা, তাদেরকেও তো তাহলে ওড়না পরিয়ে নামাজ পড়ানো উচিত। অথচ হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐসব পুরুষকে যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরে এবং ঐসব নারীকে যে পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে। –সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৯৮
তাহলে বলুন, নারী-পুরুষের নামাজ কী কখনও এক রকম হতে পারে? অবশ্য তারা বিশেষ করে দুটি বিষয় উল্লেখ্য করেছে।
১. নামাজে নারীদের বুকে হাত রাখা।
২. সিজদার সময় নারীরা মাটির সাথে মিশে থাকা। চলুন, উভয় বিষয়টি দলীলসহ জেনে নেওয়া যাক।
নামাজে নারীদের বুকে হাত রাখা।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আতা রহি. বলেন,
تَجْمَعُ الْمَرْأَةُ يَدَيْهَا فِي قِيَامِهَا مَا اسْتَطَاعَتْ
মহিলারা নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের হাতকে যতদূর সম্ভব গুটিয়ে রাখবে। –মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, বর্ণনা নং : ৫০৬৭
আর এজন্য হযরত আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌবী রহি. লিখেছেন,
اما فى حق النساء فاتفقوا على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে সকলেই ঐক্যমত যে, তাদের ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, তাদের উভয় হাতকে বুকের উপর রাখবে। –আসসিয়ায়াহ, খ. ২ পৃ. ১৫৬
সুতরাং মহিলাদের বুকের উপর হাত বাঁধাটি তাবেয়ীগণ ও উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রমানিত।
মহিলাদের সিজদা করার নিয়ম
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহি. বলেন, একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন,
إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل
যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। –সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং : ৩০১৬
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছন,
إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا
মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে, তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে বলেন–ওহে আমার ফেরেস্তারা, তোমরা সাক্ষী থাকো। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। –সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং : ৩৩২৪
হযরত আলী রা. বলেছেন,
إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها
মহিলা যখন সেজদা করে, তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। –মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং : ৫০৭২
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন,
تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ
খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং : ২৭৯৪
সুতরাং এরপরও যদি বলা হয়, ইসলামের নামাজ পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে, তাহলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামই রা. কী সে নামাজ নষ্টকারী? আল্লাহ এই হেযবুত তওহীদ থেকে মুসলিমদের ঈমানের হিফাযত করেন। আমীন!
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ (৫ম পর্ব)
শূলবি দ্ধ হওয়ার বিশ্বাস হযরত ঈসা (আ)-এর সম্পর্কে খ্রিষ্টধর্মের বিশ্বাস হল, ইহুদীরা তাঁকে পন্থীয় পী...
কুরআন-হাদীসের ভুল বা অপব্যাখ্যার ব্যাপারে শরী‘আতের নির্দেশ
হিদায়াত কাকে বলে ? আল্লাহ তা ‘ আলা দুনিয়াতে দুটি রাস্তা চালু করেছেন , একটি হিদায়াত এবং জান্নাতের রাস...
সত্য ইমাম মাহদী ও ভণ্ড ইমাম মাহদী [শেষ পর্ব]
...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন