প্রশ্নঃ ১১৭৪১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বাসা টাংগাইল জেলায় অবস্থিত । টাংগাইল জেলা ১২ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আমি টাংগাইল ডিস্ট্রিক্ট এ একটি কম্পিউটারের দোকানে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন, দলিল লেখা, মামলা লেখা, বিভিন্ন চুক্তিপত্র কম্পিউটারে কম্পজ করে থাকি। সারাদিন শেষে যা টাকা অর্জন করি তার অর্ধেক টাকা দোকানের মালিককে দিতে হয় আর আমার অর্ধেক টাকা থাকে। যে টাকা অর্জন করি তাতে এই বর্তমান সময়ে চলা খুবই কঠিন। আমাদের দোকানে অনলাইনের কাজ বেশি হয়, বেশির ভাগই ই- পাসপোর্ট এর আবেদনের কাজ করা হয়। আমাদের দোকানের পাশে প্রায় ৭৭ টির চেয়েও বেশি দোকান সেখানে একই কাজ করা হয়। মূল কথা হলো, আমাদের টাংগাইল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যে ধরনের কাজ হয় তা হলো: যে ব্যক্তি ক্ষমতাশালী, পুলিশ,র্যাব, বিডিআর, আনসার, ব্যাংক এ চাকরি, সরকারি চাকরি, ডিসি অফিসে চাকরি এই সব ব্যক্তিগনের পাসপোর্ট এর আবেদন অফিসে জমা নেয় এবং টাংগাইল উপজেলার হাতেগুনা দু এক জন সাধারণ পাবলিকেরটা জমা নেয়। কিন্তু সাধারন জনগণ বিশেষ করে টাংগাইল উপজেলার বাহিরে থেকে কেউ আসলে তাদের আবেদনে কোথাও কোন ভূল নাই একদম ১০০% নির্ভূল তার পরেও তাদেরটা জমা নেয় না, বলে যে, যে দোকান থেকে আবেদন করেছেন সেখান থেকে ঠিক করে নিয়ে আসেন আর হাতে একটা অভিযোগ পত্র ধরিয়ে দেয়? কারণ পাসপোর্ট অফিসের লোকেরা জানে একবার যদি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ১০০০ টাকা পাবো। প্রতিটি দোকানের সাথে পাসপোর্ট অফিসের লিংক আছে। দোকানদার ফাইল জমা দিতে নেয় ২০০০ টাকা আর পাসপোর্ট অফিসে দেয় ১০০০ টাকা দোকানদারের থাকে ১০০০ টাকা। ৫০০ টাকা দোকানের মালিকের, ৫০০ টাকা দোকানের কর্মচারীর। কেউ কেউ আবার ১৮০০ টাকাও করে নিয়ে থাকে কেউ বা তার চেয়েও কম কিন্তু সব দোকানেই এইসব কাজ করে থাকে। দিন শেষে যা টাকা হয় সন্ধ্যার সময় পাসপোর্ট অফিসের লোকেরা এসে টাকা গুনে নিয়ে যায়। মাত্র ২০০০ টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট এর আবেদন জমা দেয় এবং তখন ভূল হলেও সঠিক এই ভাবে তারা সাধারন পাবলিকের কাছে টাকা নিয়ে থাকে। আমার এখন প্রশ্ন হলো আমি যে ঐ ব্যক্তির কাজটা করে দিয়ে টাকা নিলাম সেটাকি আমার জন্য হালাল হলো নাকি হারাম হলো। আমি না করলে অন্য জনে করবেই।কিন্তু তখন ঐ ব্যক্তির পাসপোর্ট হয়ে যায়। আমার কী করা উচিত হবে? দয়া করে খুব দ্রুত জানাবেন।আসসালামু আলাইকুম।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
লোকজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংকটে ফেলে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা, তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া কিছুতেই জায়েয নয়। এটি প্রতারণা। জুলুম ও অবৈধ ইনকাম। যার সবগুলোই ভিন্ন ভিন্নভাবে হারাম।
বৈধভাবে যেটুকু ইনকাম করবেন এতে আল্লাহ বরাকাহ নসিব করবেন। তার উপর সন্তুষ্ট হতে না পারলে অথবা এই কামাই যথেষ্ট না হলে পাশাপাশি আরও দু-একটি ছোটখাটো ব্যবসা অথবা জব করতে পারেন।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, বর্তমানে প্রচলিত ঐ ধারায় আমি কাজ না করে দিলে লোকজন এরকম কাজ করে দিবে। এই কথার প্রতি উত্তরে বলতে হবে, লোকজন তার কাছ থেকে অবৈধ ইনকাম করবে, তাই বলে কি আপনিও করবেন?
মনে রাখবেন, কিয়ামতের দিন তাদের কৃতকর্মের জবাব আপনাকে দিতে হবে না। তাই নিজেকে সেইফ রাখুন।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَلَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।
—আন নিসা - ২৯
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন