সাহাবাদের প্রতি মহাব্বত ইমানের শর্ত কি না? এবং জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোন বাধা কি না?
প্রশ্নঃ ১১৬৪৯২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, সাহাবায়ে কেরামকে যদি কেউ অন্তর থেকে মহাব্বত না করে তাহলে কি তার ইমানের কোন ক্ষতি হবে? এবং তার জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোন বাধা হবে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুসলমান হিসেবে আমাদের কাছে সমগ্র সাহাবায়ে কিরামের (রাঃ) প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা রাখা ঈমানেরই অংশ। তাঁদের মধ্যে কারও মর্যাদায় সামান্যতম অবমাননাও বড় ধরনের বঞ্চনা ও ক্ষতির কারণ। তবে সত্য এই যে, তাঁদের মধ্যে কিছু সাহাবি (রাঃ) অন্যদের তুলনায় অধিক শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অধিকারী।
সাহাবায়ে কিরামের সম্পর্ক ও মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সুস্পষ্ট বাণী রয়েছে:
مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَالَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ تَرٰىہُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَرِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاہُمۡ فِیۡ وُجُوۡہِہِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ وَمَثَلُہُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔہٗ فَاٰزَرَہٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِہٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ الۡکُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّاَجۡرًا عَظِیۡمًا
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে, (কখনও) সিজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। তাদের আলামত তাদের চেহারায় পরিস্ফুট, সিজদার ফলে। এই হল তাদের সেই গুণাবলী, যা তাওরাতে বর্ণিত আছে। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত এই, যেন এক শস্যক্ষেত্র, যা তার কুঁড়ি বের করল, তারপর তাকে শক্ত করল। তারপর তা পুষ্ট হল। তারপর তা নিজ কাণ্ডের উপর এভাবে সোজা দাঁড়িয়ে গেল যে, তা কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে ফেলে। এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (সূরা ফাতহ, আয়াত নং: ২৯)
তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন:
সাহাবায়ে কিরাম সবাই জান্নাতী, তাঁদের পাপ মার্জনীয় এবং তাঁদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা গোনাহ্ঃ কোরআন পাকের অনেক আয়াত এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ। তন্মধ্যে কতিপয় আয়াত এই সূরাতেই উল্লিখিত হয়েছে : لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ এবং وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَى وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا এছাড়া আরও অনেক আয়াতে এই বিষয়বস্তু রয়েছে :
لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ - وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ
সূরা হাদীদে সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে বলা হয়েছে وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى অর্থাৎ তাঁদের সবাইকে আল্লাহ্ ‘হুসনা’ তথা উত্তম পরিণতির ওয়াদা দিয়েছেন। এরপর সূরা আম্বিয়ায় হুসনা’ সম্পর্কে বলা হয়েছে:إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِنَّا الْحُسْنَى أُولَئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ অর্থাৎ যাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে পূর্বেই হুসনার ফয়সালা হয়ে গেছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে। রসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন : خير القرون قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم অর্থাৎ সমগ্র সময়কালের মধ্যে আমার সময়কাল উত্তম। এরপর সেই সময়কালের লোক উত্তম, যাদের সময়কাল আমার সময়কালের সংলগ্ন, এরপর তারা যারা তাদের সংলগ্ন। আরও এক হাদীসে বলা হয়েছে, আমার সাহাবীগণকে মন্দ বলো না। কেননা, (ঈমানী শক্তির কারণে তাঁদের অবস্থা এই যে, ) তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ বায় করে, তবে তা তাঁদের ব্যয় করা এক মুদের সমানও হতে পারে না এমনকি অর্ধ মুদেরও না। মুদ আরবের একটি ওজনের নাম, যা আমাদের অর্ধ সেরের কাছাকাছি।—(বুখারী) হযরত জাবের (রা)-এর হাদীসে রসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা সারা জাহানের মধ্য থেকে আমার সাহাবীগণকে পছন্দ করেছেন। এরপর আমার সাহাবীগণের মধ্য থেকে চারজনকে আমার জন্য পছন্দ করেছেন— আবূ বকর, ওমর, ওসমান ও আলী (রা)। —(বাযযার) অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে :
اللهَ اللهَ فِي أَصْحَابِي لَا تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا مِنْ بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللهَ وَمَنْ آذَى اللهَ يُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ
আমার সাহাবীগণের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহকে ভয় কর। আমার পর তাঁদেরকে নিন্দা ও দোষারোপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করো না। কেননা, যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালবাসে, সে আমার ভালবাসার কারণে তাঁদেরকে ভালবাসে এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে, সে আমার প্রতি বিদ্বেষের কারণে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে। যে তাঁদেরকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দেয় এবং যে আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দেয়। যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, তাকে অচিরেই আল্লাহ আযাবে গ্রেফতার করবেন।-(তিরমিযী)
আয়াত ও হাদীস এ সম্পর্কে অনেক। ’মকামে-সাহাবা’ নামক গ্রন্থে আমি এগুলো সন্নিবেশ করেছি। সব সাহাবীই যে আদিল ও সিকাহ – এ সম্পর্কে সমগ্র উম্মত একমত। সাহাবায়ে কিরামের পারস্পরিক মতবিরোধ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে আলোচনা, সমালোচনা ও ঘাঁটাঘাঁটি করা অথবা চুপ থাকার বিষয়টিও এই গ্রন্থে বিস্তারিত লিখিত হয়েছে। প্রয়োজন মাফিক তার কিছু অংশ সূরা মুহাম্মদের তফসীরে স্থান পেয়েছে। সেখানে দেখে নেওয়া যেতে পারে।
আরো বিস্তরিত জানতে চাইলে , তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন: https://muslimbangla.com/sura/48/tafsir/29
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই! উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে সাহাবাদের প্রতি ভালোবাসা রাখা ঈমানের অংশ। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা। সাহাবাদের পদাঙ্ক অনুসরণ নিঃসন্দেহে জান্নাতের পথকে সহজ করবে, ইনশাআল্লাহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন