সুদের গুনাহ কি কি?
প্রশ্নঃ ১০৯৬৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুদের সাথে কারা জরিত? এবং সুদের ৭৩ টি গুনাহ কী কী কুরআন সুন্নাহ দ্বারা জানতে চাই?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআনে কারীমে সুদের প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুদ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
১নং আয়াত :
اَلَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا یَقُوْمُ الَّذِیْ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْۤا اِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَ اَمْرُهٗۤ اِلَی اللهِ وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ.
যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। যার নিকট তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই। আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫
২নং আয়াত :
یَمْحَقُ اللهُ الرِّبٰوا وَ یُرْبِی الصَّدَقٰتِ وَ اللهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیْمٍ.
আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৬
৩য় ও ৪র্থ আয়াত :
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ.
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও।যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৮-২৭৯
৫ম আয়াত :
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَاْكُلُوا الرِّبٰۤوا اَضْعَافًا مُّضٰعَفَةً وَّ اتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.
হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩০
৬ষ্ঠ ও ৭ম আয়াত :
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَیْهِمْ طَیِّبٰتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ كَثِیْرًا وَّ اَخْذِهِمُ الرِّبٰوا وَ قَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَ اَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا.
ভালো ভালো যা ইহুদীদের জন্য বৈধ ছিল আমি তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি; তাদের সীমালংঘনের জন্য, আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেওয়ার জন্য এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল; এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। -সূরা নিসা (৪) : ১৬০-১৬১
সুদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসসমূহ
(১) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اجْتَنِبُوا السّبْعَ المُوبِقَاتِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللّهِ وَمَا هُنّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللّهِ... وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ...
তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ কী? তিনি বললেন-
১. আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, ২. জাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬. জিহাদের ময়দান থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়া। ৭. সতী-সাধ্বী সরলমনা-উদাসীনা মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৬, ৬৮৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৭৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩৬৭১
(২)হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি স্বপ্নের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে-
‘আমি দেখলাম আজ রাতে আমার কাছে দু’জন মানুষ আসল এবং তারা আমাকে একটি পবিত্র ভূখ-ে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে একটি রক্তের নদীর কিনারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেই নদীতে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। আর নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন পুরুষ। তার সামনে রয়েছে পাথর। যখন নদীর লোকটি কিনারে উঠতে চায় তখন কিনারে থাকা লোকটি তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করে। পাথরের আঘাতে লোকটি যেখানে ছিল সেখানে ফিরে যায়। এরপর সে আবারও নদীর কিনারে উঠতে চায়, এভাবে সে যখনই কিনারে উঠতে চায় তখনই তাকে পাথর মেরে যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আমি আমার সাথে থাকা লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, রক্তের নদীতে অবস্থিত লোকটি, যার মুখের উপর পাথর মেরে আপন জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে লোকটি কে? তখন তাদের একজন আমাকে বললেন, এ লোকটি সুদখোর।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৮৬, ২০৮৫
(৩) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ.
যে ব্যক্তি সুদ খায় এবং যে সুদ খাওয়ায় উভয়কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৫১০৪
(৪)হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে ৭টি গুনাহকে বড় গুনাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল সুদ খাওয়া। -মুসনাদে বাযযার; আল মু‘জামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১০২; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৫৭০৯
(৫) অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤكِلَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَكَاتِبَهُ.
যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সকলের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩৩৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৬
এ ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদীসে সুদ খাওয়া, সুদ দেওয়া এবং সুদের সাথে সকল সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১০৭৩৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুদের কী কী গুনাহ সবগুলো কোরআন সুন্নাহ দ্বারা জানতে চাই?এবং কারা জরিত ?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সুদ খাওয়ার ৭০টি গুনাহ।
সুদ খাওয়ার ৭০টি গুনাহের মধ্যে ১টি হচ্ছে নিজ মায়ের সাথে যিনা করা। এটা কি গুনাহের ভয়াবহতা বুঝাতে বলা হয়েছে, নাকি আসলেই
সমান গুনাহ?
পূর্বের রাসূলগনের মধ্যেও সুদ হারাম ছিল এবং বর্তমানেও হারাম আছে, যা প্রত্যেক মুসলিম জানে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন:
বস্তুত: ইয়াহুদীদের জন্যে আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্যে হালাল ছিল, তাদের পাপের কারনে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমানে বাধা দেয়ার দরুন। আর এ কারনে যে তারা সুদ গ্রহন করত। অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারনে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করত অন্যায় ভাবে। বস্তুত: আমি
কাফিরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব…
[সূরা আন-নিসা: ১৬০-১৬১]
কুরআনে আরও আছে:
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার…
(সুরা আলে ইমরান-১৩০)
সুদ একটি মারাত্মক পাপ, যার দ্বারা ক্ষতি সাধন হয় মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের, সামাজিক জীবনের এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ আছে:
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় যা কিছু তোমরা সুদে দিয়ে থাক; মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট তা বর্ধিত হয় না । পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে…
(সূরা- রুম, আয়াত-৩৯)
যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে (কিয়ামতের দিন), যাকে (জ্বীন) শয়তান স্পর্শ করেই পাগল করে দেয় । এটা এই জন্যেই যে তারা বলে বেচা-কেনা তো সুদেরই মত…(সূরা-বাকারা, আয়াত-২৭৫)
অতঃপর তোমরা যদি তা (বকেয়া সুদ) না ছাড়, তবে জেনে রাখ এটা আল্লাহ তায়া’লা ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ । কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই । এতে তোমরা অত্যাচার করবেনা,
অত্যাচারিতও হবে না…
(সূরা-বাকারা, আয়াত-২৭৯)
হাদীসে উল্লেখ আছে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন, সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান…
[মুসলিম/জাবির (রাঃ), আবূ দাউদ, তিরমীযী]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
সুদ হল সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি । তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হল-আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা…[ইবনে মাজাহ/ আবূ হুরাইরা (রাঃ)]
নিশ্চয়ই যে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম…
[বুখারী, মিশকাত]
হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবেনা…[মিশকাত]
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন:
শবে মেরাজ রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ করানোর সময় আমি আমার মাথার উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম,
যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল (আ:) ! এরা কারা? তিনি উত্তরে বললেনঃ এরা সুদখোরের দল…[ইবনে মাযা ও আহমদ]
হযরত আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে,
তখন আল্লাহ পাক সেই জাতিকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন…
[আবু ইয়া’লা ও হাকেম]
সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬ বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ…[ইবনে মাজা, বায়হাকী]
হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রা:) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম (সা:) বলেছেন:
আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’জন লোক আমার কাছে আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চলছে। যেতে যেতে আমরা
রক্তে পরিপূর্ণ এক নহরের পাড়ে দাঁড়ালাম। এ সময় আমরা দু’জন লোককে দেখতে পেলাম,
একজন এ নহরের মাঝে দাঁড়ানো, আরেকজন নহরের পাড়ে দাঁড়ানো। কিনারে দাঁড়ানো লোকটির সম্মুখে অনেকগুলো পাথর। নহরের ভিতরে দাঁড়ানোর লোকটি কিনারার দিকে আসতে ইচ্ছা করলে, পাড়ের লোকটি তার মুখে স্বজোরে পাথর নিক্ষেপ করে যে, লোকটি পুনরায় পূর্বেকার জায়গায় পৌঁছে যায়। সে যতবারই পাড়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে
পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
রাসূলে আকরাম (সা:) জিজ্ঞাসা করলেন: এ লোকটি কে?
যার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। উত্তরে বলা হল: এ হচ্ছে সুদখোর ব্যক্তি…[বুখারী]
রাসূলুল্লাহ্ (সা:) তার স্বপ্ন সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীসের একাংশে বলেন: সুদখোর মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আযাব দেয়া হবে। আর তার আযাব হবে, তাকে এমন নদীতে সাঁতার কাটতে হবে, যার পানি হবে রক্তের মত লাল। সুদের ভিত্তিতে দুনিয়ায় বসে সে সম্পদ সঞ্চয় করেছে আর হারাম সম্পদ সঞ্চয় করার জন্য তাকে আগুনের পাথর খেতে হবে।
এটাই হচ্ছে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত বরযাখী জীবনের শাস্তি এর সাথে থাকবে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ…[বূখারী]
কোন ব্যক্তির এক দিরহাম পরিমান সুদ উপার্জন করা মুসলমান অবস্থায় তেত্রিশ বার যিনা করা হতেও বেশি গুনাহের কাজ…
[তাবরানী]
সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার মধ্যে অপরাধের দিক থেকে সর্বনিম্ন গুনাহটি হল, আপন মায়ের সাথে যৌনাচারের গুনাহের সমান।
আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো, সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা…
[ইবনে মাজা, তাবারানী]
এর থেকে বুঝা যায় যে সুদের গুনাহ্ নিজ মায়ের সাথে যিনা করার করার থেকেও মারাত্মক গুনাহ্। অর্থাৎ তার শাস্তি হবে যিনার পাপের থেকেও মারাত্মক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সুদ থেকে এবং সুদী কারবারে জড়িত লোকদের থেকে হেফাজত করুক। আমীন
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন