আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রবাস থেকে সঠিক পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো/বিকাশ করা।

প্রশ্নঃ ২৭৯১৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সম্মানিত মুফতি সাহেব! প্রবাসে থেকে অনেকে বিকাশের ব্যবসা করে! সিস্টেমটা হলো এরকম! যিনি ব্যবসা করছেন তিনি দেশে কোন একজন বিকাশ এজেন্টের ব্যাংক একাউন্টে ১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন! এরপর অন্যান্য প্রবাসী যারা দেশে প্রিয়জনের কাছে বিকাশে টাকা পাঠাতে চান তারা তাকে উক্ত আত্মীয়র নাম্বারটি দিলে তিনি সেই বিকাশ এজেন্টের কাছে তার নাম্বারটি হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমুতে দিয়ে দেন। এবং ওই এজেন্ট টাকা পাঠিয়ে ওনার জমাকৃত অর্থ থেকে ওই টাকাটা মাইনাস করে দেন। এখন এভাবে যারা ব্যবসা করছেন তাদের অধিকাংশ কাস্টমারই এমন যে মাসের শুরুতে প্রিয়জনের কাছে টাকাটা পাঠান। অর্থাৎ বাকিতে। মাস শেষে বেতন পেলে ওই বিকাশ ব্যবসায়ীকে সেই টাকা দিয়ে দেন। এবং এই দীর্ঘ সময় বাকি থাকার কারণে ওই ব্যবসায়ী ও গ্রাহককে ব্যাংক রেট এর চেয়ে কিছুটা রেট কম দেন। যেমন মানি এক্সচেঞ্জে এক রিয়াল বাংলাদেশের ৩১ টাকা হয়। কিন্তু তিনি দেন 27 টাকা। এখন এভাবে ব্যবসা করলে কি সুদ হবে কিনা এটাই আমার মূল প্রশ্ন!

২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
Street ৮২৫، কাতার

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মুদ্রার লেনদেন নগদ করতে হয়। এই লেনদেন বাকিতে জায়েয নয়।

একই দেশের মুদ্রা লেনদেনে নগদ এবং সমান সমান হওয়া জরুরি।

অবশ্য একই দেশের মুদ্রা প্রয়োজনে সময় নিয়ে ঋণ করা যাবে। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানে মূল্যমান কম-বেশ করা যাবে না।
যেমন মাসের শুরুতে কারো কাছে ১০ হাজার টাকা ঋণ করলে মাসের শেষে পরিশোধের সময় ঐ ১০ হাজার টাকাই পরিশোধ করবে। এখানে পরিশোধের সময় কিছু বেশি পরিমাণ পরিশোধের শর্ত লাগানো সুদ এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশের মুদ্রার সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে নগদেই দামের তারতম্য করা যাবে। ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের থেকে কমে অথবা বেশিতে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় সুদ নয়।
অবশ্য মাসের শুরুতে কারো কাছে ১০ হাজার টাকা ঋণ করলে মাসের শেষে ঐ দশ হাজার টাকার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে পরিশোধ করলে আজকের দিনের ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করবে।
যেমন মাসের শুরুতে কারো কাছে ১০ হাজার টাকা ঋণ করা হলো মাস শেষে ঐ ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে রিয়াল পরিশোধ করতে চাইলে আজকে ব্যাংকে রিয়ালের যে মূল্য, সে মূল্যে পরিশোধ করবে। ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের থেকে কমবেশি করবে না।

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ مَحْبُوبٍ، - الْمَعْنَى وَاحِدٌ - قَالاَ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ كُنْتُ أَبِيعُ الإِبِلَ بِالْبَقِيعِ فَأَبِيعُ بِالدَّنَانِيرِ وَآخُذُ الدَّرَاهِمَ وَأَبِيعُ بِالدَّرَاهِمِ وَآخُذُ الدَّنَانِيرَ آخُذُ هَذِهِ مِنْ هَذِهِ وَأُعْطِي هَذِهِ مِنْ هَذِهِ فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِي بَيْتِ حَفْصَةَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ رُوَيْدَكَ أَسْأَلُكَ إِنِّي أَبِيعُ الإِبِلَ بِالْبَقِيعِ فَأَبِيعُ بِالدَّنَانِيرِ وَآخُذُ الدَّرَاهِمَ وَأَبِيعُ بِالدَّرَاهِمِ وَآخُذُ الدَّنَانِيرَ آخُذُ هَذِهِ مِنْ هَذِهِ وَأُعْطِي هَذِهِ مِنْ هَذِهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ بَأْسَ أَنْ تَأْخُذَهَا بِسَعْرِ يَوْمِهَا مَا لَمْ تَفْتَرِقَا وَبَيْنَكُمَا شَىْءٌ " .

৩৩২১. মূসা ইবনে ইসমা’ঈল (রাহঃ) ..... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বাকী নামক স্থানে উট বিক্রি করতাম। তখন আমি দীনারের হিসাবে বিক্রি করে মূল্য গ্রহণের সময় দিরহাম নিতাম এবং একইরূপে দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে মূল্য গ্রহণের সময় দীনার গ্রহণ করতাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হই, আর এ সময় তিনি হাফ্‌সা (রাযিঃ)-এর গৃহে ছিলেন। তখন আমি বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! মেহেরবাণী করে একটু বাইরে আসুন, আমি আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, আমি ’বাকী’ নামক স্থানে উট বেচা-কেনার ব্যবসা করি এবং আমি দীনারের বিনিময়ে বিক্রি করে মূল্য গ্রহণের সময় দিরহাম নেই, আর কোন সময় দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে মূল্য গ্রহণের সময় দীনার নেই; অর্থাৎ আমি দীনারের পরিবর্তে বিক্রি করে দিরহাম নেই এবং দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দীনার গ্রহণ করি- এরূপ লেন-দেন কি বৈধ? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ এতে কোন দোষ নেই, তবে শর্ত হলো-সেদিনের বাজার দর অনুসারে লেন-দেন করবে এবং তোমরা দু’জন (ক্রেতা-বিক্রেতা) বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই ব্যাপারটি সম্পন্ন করবে।

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩২১ (আন্তর্জাতিক নং ৩৩৫৪)
বর্ণনাকারী: আব্দুল্লাহ্‌ ইবনু উমর (রাঃ) (মৃত্যু ৭৩ হিজরী)

সুতরাং প্রশ্নের উল্লেখিত লেনদেনটি শরীয়তের নীতিমালার আলোকে শুদ্ধ
নয়। এই লেনদেন শুদ্ধ করার পদ্ধতি হলো এই-
মাসের শুরুতে প্রবাসী ব্যক্তি ঐ বিকাশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা রিয়াল/ডলার ঋণ করবে। এরপর ঐ ব্যবসায়ীর কাছেই বৈদেশিক মুদ্রাগুলো স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেবে। বিনিময়ের দেশি মুদ্রাগুলো দেশের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে বিকাশ করে দেওয়ার জন্য বলে দিবে। মাস শেষে যত বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ করেছিল সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রিয়াল/ডলার পরিশোধ করে দেবে। এই পদ্ধতিতে বিকাশ ব্যবসায়ী মাসের শুরুতে স্বল্পমূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে লাভবান হলো। লেনদেন শুদ্ধ হলো।

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন