রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ১৬১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
ঘুমানোর আগে আগুন নেভানোর নির্দেশ
হাদীছ নং: ১৬১
হযরত আবূ মূসা রাযি. বলেন, একবার রাতের বেলা মদীনায় একটি ঘর তার লোকজনসহ পুড়ে গেল। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তাদের বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হল, তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই এ আগুন তোমাদের শত্রু। কাজেই তোমরা যখন ঘুমাবে তখন এটা নিভিয়ে দেবে -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬২৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০১৬: মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৯৫৭০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৭৭০: বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩০৬৫)
হাদীছ নং: ১৬১
হযরত আবূ মূসা রাযি. বলেন, একবার রাতের বেলা মদীনায় একটি ঘর তার লোকজনসহ পুড়ে গেল। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তাদের বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হল, তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই এ আগুন তোমাদের শত্রু। কাজেই তোমরা যখন ঘুমাবে তখন এটা নিভিয়ে দেবে -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬২৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০১৬: মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৯৫৭০; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৭৭০: বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩০৬৫)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
161 - السادس: عن أَبي موسى - رضي الله عنه - قَالَ: احْتَرقَ بَيْتٌ بالمَدِينَةِ عَلَى أهْلِهِ مِنَ اللَّيلِ، فَلَمَّا حُدِّثَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - بشَأنِهِمْ، قَالَ: «إنَّ هذِهِ النَّارَ عَدُوٌّ لَكُمْ، فَإِذَا نِمْتُمْ، فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ১৬২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
আসমানী ‘ইলম ও হিদায়াতের দৃষ্টান্ত
হাদীছ নং: ১৬২
হযরত আবূ মূসা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে যে হিদায়াত ও 'ইলমসহ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ বৃষ্টির মত, যা কোনও ভূমিতে পতিত হয়। সে ভূমির একটা অংশ উৎকৃষ্ট। তা পানি ধারণ করে নেয়। অতঃপর তা তৃণ ও প্রচুর ঘাস উৎপন্ন করে। তার আরেক অংশ শক্ত জমি, যা পানি ধরে রাখে। তারপর আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা মানুষের উপকার করেন। তারা সেখান থেকে পানি পান করে ও (গবাদি পশুকে) পান করায় এবং চাষাবাদ করে। সে বৃষ্টি ভূমির এমন এক অংশেও পড়ে, যা কিনা এমন ঊষর, যা পানি ধরেও রাখে না এবং তৃণও উৎপন্ন করে না। এ হচ্ছে ওই লোকের উদাহরণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছে এবং আল্লাহ আমাকে যা-সহ পাঠিয়েছেন তা দ্বারা তাকে উপকৃত করেছেন- সে নিজে তা শিখেছে এবং অন্যকেও শিখিয়েছে। আর ওই ব্যক্তির উদাহরণ, যে তার প্রতি মাথা তুলে তাকায়নি এবং আল্লাহর সে হিদায়াত গ্রহণ করেনি, যা-সহ আমি প্রেরিত হয়েছি। -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২২৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৯৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪: শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৩৫)
হাদীছ নং: ১৬২
হযরত আবূ মূসা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে যে হিদায়াত ও 'ইলমসহ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ বৃষ্টির মত, যা কোনও ভূমিতে পতিত হয়। সে ভূমির একটা অংশ উৎকৃষ্ট। তা পানি ধারণ করে নেয়। অতঃপর তা তৃণ ও প্রচুর ঘাস উৎপন্ন করে। তার আরেক অংশ শক্ত জমি, যা পানি ধরে রাখে। তারপর আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা মানুষের উপকার করেন। তারা সেখান থেকে পানি পান করে ও (গবাদি পশুকে) পান করায় এবং চাষাবাদ করে। সে বৃষ্টি ভূমির এমন এক অংশেও পড়ে, যা কিনা এমন ঊষর, যা পানি ধরেও রাখে না এবং তৃণও উৎপন্ন করে না। এ হচ্ছে ওই লোকের উদাহরণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছে এবং আল্লাহ আমাকে যা-সহ পাঠিয়েছেন তা দ্বারা তাকে উপকৃত করেছেন- সে নিজে তা শিখেছে এবং অন্যকেও শিখিয়েছে। আর ওই ব্যক্তির উদাহরণ, যে তার প্রতি মাথা তুলে তাকায়নি এবং আল্লাহর সে হিদায়াত গ্রহণ করেনি, যা-সহ আমি প্রেরিত হয়েছি। -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২২৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৯৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪: শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৩৫)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
162 - السابع: عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ مَثَلَ مَا بَعَثَنِي الله بِهِ مِنَ الهُدَى والعِلْم كَمَثَلِ غَيثٍ أَصَابَ أرْضًا فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفةٌ طَيِّبَةٌ، قَبِلَتِ المَاءَ فَأَنْبَتَتِ الكَلأَ [ص:74] والعُشْبَ الكَثِيرَ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ (1) أمسَكَتِ المَاء فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ، فَشَربُوا مِنْهَا وَسَقُوا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَ طَائفةً مِنْهَا أخْرَى إنَّمَا هِيَ قيعَانٌ لا تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ في دِينِ اللهِ وَنَفَعَهُ بمَا بَعَثَنِي الله بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأسًا وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
«فَقُهَ» بضم القافِ عَلَى المشهور وقيل بكسرِها: أي صار فقيهًا.
«فَقُهَ» بضم القافِ عَلَى المشهور وقيل بكسرِها: أي صار فقيهًا.
হাদীস নং: ১৬৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
উম্মতের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরদ
হাদীছ নং: ১৬৩
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার ও তোমাদের উদাহরণ হচ্ছে ওই ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালাল । ফলে ফড়িং ও প্রজাপতিরা তাতে পড়তে শুরু করল আর সে ব্যক্তি তা থেকে তাদেরকে ফেরাতে থাকল। আমি আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য তোমাদের কোমর ধরে রেখেছি, অথচ তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ. মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪৯৩০)
হাদীছ নং: ১৬৩
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার ও তোমাদের উদাহরণ হচ্ছে ওই ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালাল । ফলে ফড়িং ও প্রজাপতিরা তাতে পড়তে শুরু করল আর সে ব্যক্তি তা থেকে তাদেরকে ফেরাতে থাকল। আমি আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য তোমাদের কোমর ধরে রেখেছি, অথচ তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ. মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২২৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪৯৩০)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
163 - الثامن: عن جابر - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا فَجَعَلَ الجَنَادِبُ وَالفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا، وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا، وَأَنَا آخذٌ بحُجَزكُمْ عَنِ النَّارِ، وَأنْتُمْ تَفَلَّتونَ مِنْ يَدَيَّ (1)». رواه مسلم. (2)
«الجَنَادِبُ»: نَحوُ الجرادِ وَالفَرَاشِ، هَذَا هُوَ المَعْرُوف الَّذِي يَقَعُ في النَّارِ. وَ «الحُجَزُ»: جَمْعُ حُجْزَة وَهِيَ مَعْقدُ الإزَار وَالسَّراويل.
«الجَنَادِبُ»: نَحوُ الجرادِ وَالفَرَاشِ، هَذَا هُوَ المَعْرُوف الَّذِي يَقَعُ في النَّارِ. وَ «الحُجَزُ»: جَمْعُ حُجْزَة وَهِيَ مَعْقدُ الإزَار وَالسَّراويل.
হাদীস নং: ১৬৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
খানা খাওয়ার কয়েকটি আদব
হাদীছ নং : ১৬৪
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঙ্গুল ও থালা চেটে খাওয়ার আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, তোমরা জান না তার কোথায় বরকত আছে. মুসলিম।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমাদের কারও খাদ্যের লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয় এবং তাতে কোনও ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে নেয়, তারপর তা খেয়ে ফেলে। সে যেন তা শয়তানের জন্য রেখে না দেয়। আর সে যেন আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত নিজ হাত রুমাল দিয়ে না মোছে। কেননা সে জানে না তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের নিকট তার প্রতিটি ব্যাপারে উপস্থিত হয়। এমনকি সে তার খাবার সময়ও তার কাছে হাজির হয়। সুতরাং তোমাদের কারও থেকে যদি লোকমা পড়ে যায়, তবে সে যেন তার ময়লা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয় আর শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৩৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪২৫৯)
হাদীছ নং : ১৬৪
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঙ্গুল ও থালা চেটে খাওয়ার আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, তোমরা জান না তার কোথায় বরকত আছে. মুসলিম।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমাদের কারও খাদ্যের লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয় এবং তাতে কোনও ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে নেয়, তারপর তা খেয়ে ফেলে। সে যেন তা শয়তানের জন্য রেখে না দেয়। আর সে যেন আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত নিজ হাত রুমাল দিয়ে না মোছে। কেননা সে জানে না তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের নিকট তার প্রতিটি ব্যাপারে উপস্থিত হয়। এমনকি সে তার খাবার সময়ও তার কাছে হাজির হয়। সুতরাং তোমাদের কারও থেকে যদি লোকমা পড়ে যায়, তবে সে যেন তার ময়লা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয় আর শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৩৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪২৫৯)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
164 - التاسع: عَنْهُ: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - أَمَرَ بِلَعْقِ (1) الأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ (2)، وَقَالَ: «إنَّكُمْ لا تَدْرونَ في أَيِّها البَرَكَةُ». رواه مسلم. (3)
وفي رواية لَهُ: «إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأخُذْهَا، فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذىً، وَلْيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيطَانِ، وَلا يَمْسَحْ يَدَهُ بالمنْدِيلِ حَتَّى يَلْعَقَ أصَابعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي في أيِّ طَعَامِهِ البَرَكَةُ».
وفي رواية لَهُ: «إنَّ الشَّيطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيءٍ مِنْ شَأنِهِ، حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ، فَإذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمْ اللُّقْمَةُ فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذَىً، فَلْيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيطَانِ».
وفي رواية لَهُ: «إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأخُذْهَا، فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذىً، وَلْيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيطَانِ، وَلا يَمْسَحْ يَدَهُ بالمنْدِيلِ حَتَّى يَلْعَقَ أصَابعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي في أيِّ طَعَامِهِ البَرَكَةُ».
وفي رواية لَهُ: «إنَّ الشَّيطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيءٍ مِنْ شَأنِهِ، حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ، فَإذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمْ اللُّقْمَةُ فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذَىً، فَلْيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيطَانِ».
হাদীস নং: ১৬৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
হাশরের ময়দানের বিভীষিকা ও বিদ‘আতের পরিণাম
হাদীছ নং: ১৬৫
হযরত ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদের মধ্যে নসীহত করতে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, হে লোকসকল! তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে সমবেত করা হবে খালি পায়ে, নগ্ন শরীরে, খতনাবিহীন অবস্থায়। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ (104)
'আমি পুনরায় তাকে সৃষ্টি করব, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম। এটা এক প্রতিশ্রুতি, যা পূরণ করার দায় আমার। আমি তা অবশ্যই করব।'[সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪]
শোন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিকে কাপড় পরানো হবে তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। জেনে রেখ, আমার উম্মতের কিছু লোককে ধরে এনে বাম দিকে (অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে) নিয়ে যাওয়া হবে।
তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সঙ্গী!! তখন বলা হবে, আপনি জানেন না তারা আপনার পর কী কী নতুন কাজ করেছে। আমি তখন আল্লাহর নেক বান্দা (‘ঈসা আলাইহিস সালাম)-এর মত বলব-
وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ (117) إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (118)
“এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম। তারপর আপনি যখন আমাকে তুলে নিয়েছেন তখন আপনি স্বয়ং তাদের তত্ত্বাবধায়ক থেকেছেন। বস্তুত আপনি সবকিছুর সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনিই মহাপরাক্রান্ত,প্রজ্ঞাময়।'[সুরা মায়িদা, আয়াত: ১১৭-১১৮)
আমাকে বলা হবে, আপনি তাদেরকে ছেড়ে আসার পর তারা ক্রমাগত তাদের (দীন থেকে) পেছনগামী থেকেছে -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৮৬০: জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪২৩; নাসাঈ, হাদীছ নং ২০৮৭)
হাদীছ নং: ১৬৫
হযরত ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদের মধ্যে নসীহত করতে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, হে লোকসকল! তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে সমবেত করা হবে খালি পায়ে, নগ্ন শরীরে, খতনাবিহীন অবস্থায়। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ (104)
'আমি পুনরায় তাকে সৃষ্টি করব, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম। এটা এক প্রতিশ্রুতি, যা পূরণ করার দায় আমার। আমি তা অবশ্যই করব।'[সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪]
শোন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিকে কাপড় পরানো হবে তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। জেনে রেখ, আমার উম্মতের কিছু লোককে ধরে এনে বাম দিকে (অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে) নিয়ে যাওয়া হবে।
তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সঙ্গী!! তখন বলা হবে, আপনি জানেন না তারা আপনার পর কী কী নতুন কাজ করেছে। আমি তখন আল্লাহর নেক বান্দা (‘ঈসা আলাইহিস সালাম)-এর মত বলব-
وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ (117) إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (118)
“এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম। তারপর আপনি যখন আমাকে তুলে নিয়েছেন তখন আপনি স্বয়ং তাদের তত্ত্বাবধায়ক থেকেছেন। বস্তুত আপনি সবকিছুর সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয়ই আপনিই মহাপরাক্রান্ত,প্রজ্ঞাময়।'[সুরা মায়িদা, আয়াত: ১১৭-১১৮)
আমাকে বলা হবে, আপনি তাদেরকে ছেড়ে আসার পর তারা ক্রমাগত তাদের (দীন থেকে) পেছনগামী থেকেছে -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৮৬০: জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪২৩; নাসাঈ, হাদীছ নং ২০৮৭)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
165 - العاشر: عن ابن عباس رضي الله عنهما، قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بِمَوعِظَةٍ، فَقَالَ: «يَا أيُّهَا النَّاسُ، إنَّكُمْ مَحْشُورونَ إِلَى الله تَعَالَى حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ} [الأنبياء: 103] ألا وَإنَّ أَوَّلَ الخَلائِقِ يُكْسَى يَومَ القِيَامَةِ إبراهيمُ - صلى الله عليه وسلم - ألا وَإِنَّهُ سَيُجَاءُ بِرجالٍ مِنْ أُمَّتي فَيُؤخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشَّمالِ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ أصْحَابِي. فَيُقَالُ: إنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا أحْدَثُوا بَعْدَكَ. فَأقُولُ كَما قَالَ العَبدُ الصَّالِحُ: {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ} إِلَى قولِهِ: {العَزِيزُ الحَكِيمُ} [المائدة: 117 - 118] (1) فَيُقَالُ لِي: إنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ (2)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (3)
«غُرْلًا»: أي غَيرَ مَخْتُونِينَ.
«غُرْلًا»: أي غَيرَ مَخْتُونِينَ.
হাদীস নং: ১৬৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
যে কাজে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তা থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব
হাদীছ নং: ১৬৬
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'খাযফ' করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা কোনও শিকারও হত্যা করতে পারে না এবং দুশমনকেও ঘায়েল করে না; বরং চোখ ফুঁড়ে দেয় ও দাঁত ভেঙে ফেলে -বুখারী ও মুসলিম।
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাযি.-এর জনৈক আত্মীয় একবার খাযফ করেছিল। তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাযফ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা কোনও শিকার বধ করে না। লোকটি পুনরায় তা করল। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে বলছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন, তবুও তুমি আবার খাযফ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬২২০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৯৫৪; সুনানে আবূ দাউদ,হাদীছ নং ৫২৭০)
হাদীছ নং: ১৬৬
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'খাযফ' করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা কোনও শিকারও হত্যা করতে পারে না এবং দুশমনকেও ঘায়েল করে না; বরং চোখ ফুঁড়ে দেয় ও দাঁত ভেঙে ফেলে -বুখারী ও মুসলিম।
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাযি.-এর জনৈক আত্মীয় একবার খাযফ করেছিল। তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাযফ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা কোনও শিকার বধ করে না। লোকটি পুনরায় তা করল। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে বলছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন, তবুও তুমি আবার খাযফ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬২২০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৯৫৪; সুনানে আবূ দাউদ,হাদীছ নং ৫২৭০)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
166 - الحادي عشر: عن أَبي سعيد عبد الله بن مُغَفَّلٍ - رضي الله عنه - قَالَ: نَهَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - عَنِ الخَذْفِ (1)، وقالَ: «إنَّهُ لاَ يَقْتُلُ الصَّيْدَ، وَلاَ يَنْكَأُ (2) العَدُوَّ، وإنَّهُ يَفْقَأُ (3) العَيْنَ، وَيَكْسِرُ السِّنَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (4)
وفي رواية: أنَّ قَريبًا لابْنِ مُغَفَّل خَذَفَ فَنَهَاهُ، وَقالَ: إنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم -
نَهَى عَن الخَذْفِ، وَقَالَ: «إنَّهَا لاَ تَصِيدُ صَيدًا» ثُمَّ عادَ، فَقَالَ: أُحَدِّثُكَ أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - نَهَى عَنْهُ، ثُمَّ عُدْتَ تَخذفُ!؟ لا أُكَلِّمُكَ أَبَدًا (5).
وفي رواية: أنَّ قَريبًا لابْنِ مُغَفَّل خَذَفَ فَنَهَاهُ، وَقالَ: إنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم -
نَهَى عَن الخَذْفِ، وَقَالَ: «إنَّهَا لاَ تَصِيدُ صَيدًا» ثُمَّ عادَ، فَقَالَ: أُحَدِّثُكَ أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - نَهَى عَنْهُ، ثُمَّ عُدْتَ تَخذفُ!؟ لا أُكَلِّمُكَ أَبَدًا (5).
হাদীস নং: ১৬৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
হাজারে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার কারণ এবং শরী‘আত অনুসরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি
হাদীছ নং: ১৬৭
আবিস ইবন রাবী'আ রহ. বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-কে দেখেছি যে, তিনি হাজারে আসওয়াদে চুমু দিচ্ছেন আর বলছেন, আমি জানি তুমি একটা পাথর মাত্র। তুমি কোনও উপকারও করতে পার না এবং অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৫৯৭, ১৬০৫, ১৬১০: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১২৭০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৮৭৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৯৩৮)
হাদীছ নং: ১৬৭
আবিস ইবন রাবী'আ রহ. বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-কে দেখেছি যে, তিনি হাজারে আসওয়াদে চুমু দিচ্ছেন আর বলছেন, আমি জানি তুমি একটা পাথর মাত্র। তুমি কোনও উপকারও করতে পার না এবং অপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমাকে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না -বুখারী ও মুসলিম। (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৫৯৭, ১৬০৫, ১৬১০: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১২৭০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৮৭৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৯৩৮)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
167 - وعَن عابس بن رَبيعة، قَالَ: رَأيْتُ عُمَرَ بن الخطاب - رضي الله عنه - يُقَبِّلُ الحَجَرَ [ص:76] يَعْنِي: الأسْوَدَ - وَيَقُولُ: إني أَعْلَمُ أنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ، وَلَولا أنِّي رَأيْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ (1). مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
হাদীস নং: ১৬৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশের অপরিহার্যতা এবং যাকে সেদিকে ডাকা হয় এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা হয়, তার যা বলা উচিত।
আল্লাহর বান্দা হিসেবে মানুষের কর্তব্য তাঁর যেকোনও ফায়সালা খুশিমনে মেনে নেওয়া। তা তার পছন্দ হোক বা না-ই হোক। বান্দা হিসেবে আল্লাহ তা'আলার ফায়সালার বিপরীতে নিজের কোনও পছন্দ থাকাই উচিত নয়। কেননা তার জন্য কোনটা কল্যাণকর কোনটা কল্যাণকর নয় তা তার চেয়ে আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। তিনি তার সৃষ্টিকর্তা। আপন সৃষ্টি সম্পর্কে সৃষ্টি অপেক্ষা তার স্রষ্টা বেশি জানবেন “এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আল্লাহ তা'আলার কোনও ফায়সালা সম্পর্কে কারও যদি মনে হয় এটা তার বিরুদ্ধে গেল তবে মনে মনে ভাবতে হবে- বাহ্যত সেটি তার বিরুদ্ধে হলেও প্রকৃতপক্ষে তাতেই তার কল্যাণ নিহিত। আপাতত সে ফায়সালা দ্বারা তার প্রতিপক্ষ উপকৃত হয়েছে, কিন্তু পরিণামে উপকার সকলেরই। কেননা প্রথমত : যে ফায়সালা প্রতিপক্ষের অনুকূলে সেটিই ন্যায়সম্মত। সে ফায়সালা পরিবর্তন করে তার নিজের অনুকূলে আনা হলে তা হবে জুলুম ও অন্যায়। অন্যায় ফায়সালা দ্বারা যে সুবিধা ভোগ করা হবে তা সম্পূর্ণ হারাম ও পাপ। কাজেই আল্লাহপ্রদত্ত ফায়সালা মেনে নেয়ার দ্বারা এ পাপ থেকে সে বেঁচে গেল। এও তো এক কল্যাণই বটে। দ্বিতীয়ত : ন্যায়বিচার ও ইনসাফসম্মত ফায়সালা দ্বারা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হলে আখেরে তার ফায়দা ভোগ করে পক্ষ-বিপক্ষ সকলেই। কেননা যে ঘটনার ব্যাপারে ফায়সালা দেয়া হয়েছে সেটিই যে একমাত্র ঘটনা—এমন তো নয়। কালপরিক্রমায় নিত্যনতুন ঘটনা ঘটতে থাকে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতিরও পালাবদল হতে থাকে। বলা যায় না কখন এমন কী ঘটনা ঘটে যায় যখন ইনসাফসম্মত ফায়সালাটি নিজেরই অনুকূলে আসবে। আগে থেকে কার্যকর হয়ে আসলে এক্ষেত্রে সে ফায়সালাটি পাওয়ার নিশ্চয়তা লাভ হয়। পক্ষান্তরে আগে নিজের পক্ষ থেকে ন্যায়সম্মত ফায়সালা অগ্রাহ্য করার উদাহরণ সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে সে নিশ্চয়তাও থাকে না। এইযে অনিশ্চয়তার ক্ষতি, এটাতো আগেকার ন্যায়বিচার না মানারই পরিণাম। এ ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় একটাই, আর তা হচ্ছে সর্বাবস্থায় ন্যায়বিচার মেনে নেওয়া।
বলাবাহুল্য, ন্যায়বিচার সেটাই যা আল্লাহ তা'আলার ফায়সালা মোতাবেক হয়। কুরআন-সুন্নাহয় প্রদত্ত বিধানই আল্লাহর ফায়সালা। প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বাবস্থায় এ ফায়সালা খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া। আর তা কেবল সাধারণ বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নয়, আইন-আদালতের ক্ষেত্রেও। আদালতী বিচারাচারও কুরআন-সুন্নাহয় প্রদর নীতিমালা অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ দীন, তাই আইন. আদালতকে আলাদা করে দেখার কোনও অবকাশ নেই।
যাহোক, মূলকথা হচ্ছে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই বান্দার কর্তব্য আল্লাহর ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশ করা। এক্ষেত্রে কারো দ্বারা ব্যতিক্রম ঘটলে অন্যদের কর্তব্য তাকে উপদেশ দেওয়া এবং তাকে আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। আর তারও কর্তব্য যখন তাকে সঠিক পথের দিকে ডাকা হবে তখন অসংকোচে সে ডাকে সাড়া দেওয়া।
আল্লাহ তা'আলার ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশ যে প্রত্যেক বান্দার অবশ্যকর্তব্য এবং তাঁর আদেশ অমান্যকারী ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্তব্যক্তিকে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার দিকে ডাকা হলে তাতে সাড়া দেওয়া যে তার জন্য অপরিহার্য সেসম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত রয়েছে এবং আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদীস।
ইমাম নববী এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আল তাওফীক দান করুন- আমীন।
‘আল্লাহর ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশের অপরিহার্যতা এবং যাকে সেদিকে ডাকা হয় এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা হয়,তার যা বলা উচিত' সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (65)
অর্থ : না, (হে নবী!) তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজেদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে তোমাকে বিচারক মানবে, তারপর তুমি যে রায় দাও সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোনওরূপ কুণ্ঠাবোধ না করবে এবং অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করে নেবে।সূরা নিসা (৪), আয়াত ৬৫
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিজের শপথ করে জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন ও মুসলিম হতে পারে না, যতক্ষণ না সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি সিদ্ধান্ত অকুন্ঠ ও সন্তুষ্টমনে মেনে নেবে।
আল্লাহ তা'আলা কসম করেছেন তাঁর 'রব্ব' নামের। রব্ব অর্থ প্রতিপালক। তিনি বান্দার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ তথা দৈহিক ও আত্মিক উভয় রকম প্রতিপালন করেন। অর্থাৎ তিনি যেমন বান্দার দৈহিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করেন, তেমনি তার আত্মিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের জন্য যা-কিছু দরকার তারও যোগান দেন। বান্দার আত্মিক বিশেষ প্রয়োজন হচ্ছে- সে যে উপায়ে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে তা বাতলে দেওয়া। নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে তিনি মূলত তা-ই বাতলে দিয়ে থাকেন। সুতরাং তিনি তাঁর 'রব্ব' নামের কসম করে ইঙ্গিত করছেন যে, আমি রব্ব হিসেবে তোমাদের আত্মিক চাহিদা পূরণার্থে তোমাদের কাছে আমার রাসূল পাঠিয়েছি। তোমাদের কর্তব্য তাঁর হিদায়াত মোতাবেক চলা। যার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে তোমাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহে তিনি যে মীমাংসা দান করেন, অকুণ্ঠচিত্তে তা মেনে নেওয়া।
বস্তুত নবীর নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে নেওয়া, তাঁর প্রতিটি ফয়সালায় খুশি থাকা ও তাঁর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ বজায় রাখা। নবীর প্রতি বিশ্বাস কেবল ভক্তি প্রদর্শন ও গুণগান করার জন্য নয় এবং নয় কেবল তাঁর নাম নিয়ে গর্ব করার জন্য। সুতরাং তিনি যখন যে ফয়সালা দান করেন, সন্তুষ্টচিত্তে তা মেনে না নেওয়া হলে এ বিশ্বাসের কোনও সার্থকতা থাকে না। সেজন্যই এ আয়াতে তাঁর সিদ্ধান্ত মানার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ তাগিদের দাবি হচ্ছে প্রত্যেকে তাঁর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যে বদ্ধপরিকর থাকবে, এমনকি তাঁর কোনও সিদ্ধান্ত যদি নিজ রুচি-অভিরুচির পরিপন্থীও হয়। তাঁর কোনও ফয়সালা মানতে গেলে যদি নিজ স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় কিংবা লোকসম্মুখে আপাতদৃষ্টিতে ছোট হতে হয়, তাও খুশিমনে তা মেনে নেওয়া চাই । কোনও সন্দেহ নেই তা মেনে নেওয়ার মধ্যেই গৌরব। তারই মধ্যে প্রকৃত মর্যাদা। নবীর ফয়সালা না মানা তাঁর অবাধ্যতা করার শামিল, যা ইসলাম ও মুসলমানিত্বের পরিপন্থী এবং প্রকৃতপক্ষে তা নিজ খেয়াল-খুশির গোলামী ও শয়তানের আনুগত্য। এর পরিণতিতে মানুষ গোমরাহীর শিকার হয়ে যায় ও সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এমনকি এটা মুনাফিকীরও আলামত। এ আয়াতের শানে নুযূলও সেদিকে ইঙ্গিত করে।
ইমাম কুরতুবী রহ. এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে, বিশর নামক জনৈক মুনাফিক ও এক ইয়াহুদীর মধ্যে কোনও এক বিষয়ে বিবাদ চলছিল। এর ফয়সালার জন্য ইয়াহুদী বলল, চল আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাই। কারণ ইয়াহুদী জানত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ন্যায়বিচারই করবেন এবং তা তার পক্ষেই যাবে। কেননা তার দাবি সঠিক ছিল। অপরদিকে বিশর বলল, না, আমরা কা'ব ইবন আশরাফের কাছে যাব। কা'ব ইবন আশরাফ ছিল ইয়াহুদীদের নেতা। কিন্তু ইয়াহুদীর অনড়। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছেই যাবে। অগত্যা বিশর তাতে রাজি হল। তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে আপন আপন বক্তব্য পেশ করল। তিনি ইয়াহুদীর পক্ষে রায় দিলেন। তাঁর সামনে বিশর তা মেনে নিলেও পরে তা প্রত্যাখ্যান করল। সে বলল, চল আমরা আবূ বকরের কাছে যাই। তিনিও একই রায় দিলেন। তখন সে বলল, চল 'উমরের কাছে যাই। তারা হযরত “উমর রাযি.-এর কাছে গিয়ে উপস্থিত হল। ইয়াহুদী হযরত উমর রাযি.-এর কাছে সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করল। তিনি বিশরকে বললেন, সে যা বলছে তা সঠিক? বিশর বলল, হাঁ। তিনি বললেন, ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি আসছি। তিনি ভেতর থেকে তরবারি নিয়ে আসলেন এবং বিশরকে এই বলে কতল করে ফেললেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফয়সালায় রাজি হয় না, তার ব্যাপারে এই হচ্ছে আমার ফয়সালা। এ অবস্থা দেখে ইয়াহুদী ভয়ে পালিয়ে গেল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব শুনে হযরত উমর রাযি.-কে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি 'আল ফারূক'- সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী। তখন থেকেই হযরত উমর ফারূক রাযি, 'আল-ফারূক' উপাধিতে পরিচিতি লাভ করেন।কুরতুবী, আল-জামে লি আহকামিল কুরআন, ৫ম খণ্ড, ১৭০ পৃ.
প্রকাশ থাকে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ নিঃশর্ত আনুগত্যের হুকুম কেবল তাঁর জীবদ্দশার জন্যই নির্দিষ্ট নয়; বরং তাঁর ওফাতের পরও এ হুকুম বলবৎ রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এখন তাঁর আনুগত্য করার অর্থ হচ্ছে তাঁর জীবনাদর্শের অনুসরণ করা তথা জীবনের প্রতিটি কাজ কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক সম্পন্ন করা।
দুই নং আয়াত
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (51)
অর্থ : মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রাসূল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন, তখন তাদের কথা কেবল এটাই হয় যে, তারা বলে আমরা (হুকুম) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আর তারাই সফলকাম।সূরা নূর (২৪), আয়াত ৫১
ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগের কয়েকটি আয়াতে মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে যে, মুনাফিকরা মুখে তো বলে আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি, কিন্তু যখন কোনও বিষয়ে কারও সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব-কলহ দেখা দেয় আর তার মীমাংসার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতে বলা হয়, তখন তারা তাতে সম্মত হয় না। কারণ তাদের জানা আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ন্যয়বিচারই করবেন। তারা ঈমান আনার দাবি করায় ন্যায়- অন্যায় নির্বিচারে তাদের পক্ষে রায় দিয়ে দেবেন—এমন নয়। কাজেই তাঁর কাছে গেলে আমাদের স্বার্থ হাসিল হবে না। ফলে কোনও না কোনও বাহানায় তারা তাঁর কাছে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত। হাঁ, কোনও বিষয়ে যদি তাদের দাবি ন্যায্য হত, তখন আবার মীমাংসার জন্য খুব সহজেই তাঁর কাছে যেতে রাজি হয়ে যেত এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারও কাছে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত। তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুম মানা ও তাঁর আনুগত্য করার খুব জযবা দেখাত। কথা তো ছিল রায় নিজেদের পক্ষে যাক বা বিপক্ষে, সর্বাবস্থায়ই একমাত্র নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই মীমাংসাকারী মানবে এবং সর্বান্তঃকরণে ফয়সালা মেনে নেবে। তারা যখন নিজেদেরকে মু'মিন বলে প্রকাশ করছে, তখন এরকমই তাদের নীতি হওয়া উচিত ছিল। কেননা এটাই ঈমানের দাবি।
মুনাফিকদের বিপরীতে আলোচ্য আয়াতে সাচ্চা মু'মিনদের নীতি তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে যে, কোনও বিষয়ে দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের জন্য তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে আসতে বলা হলে তৎক্ষণাৎ তারা রাজি হয়ে যায় এবং তিনি যে রায় দেন তা খুশিমনে মেনে নেয়। তারা বলে ওঠে, আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং রায় মেনে নিলাম, তাতে বাহ্যিকভাবে আমাদের লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন। এ আয়াত জানাচ্ছে, লাভ-লোকসানের তোয়াক্কা না করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালা মেনে নেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সফলতা। সুতরাং এই সাচ্চা মু'মিনগণ অকুণ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ দ্বারা সফল হয়ে গেছে। সে সফলতা দুনিয়ায়ও এবং আখিরাতেও। দুনিয়ায় এরূপ আনুগত্য দ্বারা সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় আর আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যায়।
এ আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালা মেনে নেওয়াকে মু'মিনদের কথা ও তাদের শান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা মৌলিকভাবে মুনাফিকদের বিপরীতে সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ উল্লেখ করা হলেও সাধারণভাবে মুমিন শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সব কালেই প্রকৃত মু'মিন হবে তারাই, যারা তাদের যাবতীয় দ্বন্দ্ব-কলহের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূল তথা কুরআন-সুন্নাহ'র ফয়সালা মেনে নেবে। সুতরাং আমাদের জন্য এ আয়াতে অতি মূল্যবান শিক্ষা আছে এবং আছে কঠোর সতর্কবাণীও।
আল্লাহর বান্দা হিসেবে মানুষের কর্তব্য তাঁর যেকোনও ফায়সালা খুশিমনে মেনে নেওয়া। তা তার পছন্দ হোক বা না-ই হোক। বান্দা হিসেবে আল্লাহ তা'আলার ফায়সালার বিপরীতে নিজের কোনও পছন্দ থাকাই উচিত নয়। কেননা তার জন্য কোনটা কল্যাণকর কোনটা কল্যাণকর নয় তা তার চেয়ে আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। তিনি তার সৃষ্টিকর্তা। আপন সৃষ্টি সম্পর্কে সৃষ্টি অপেক্ষা তার স্রষ্টা বেশি জানবেন “এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আল্লাহ তা'আলার কোনও ফায়সালা সম্পর্কে কারও যদি মনে হয় এটা তার বিরুদ্ধে গেল তবে মনে মনে ভাবতে হবে- বাহ্যত সেটি তার বিরুদ্ধে হলেও প্রকৃতপক্ষে তাতেই তার কল্যাণ নিহিত। আপাতত সে ফায়সালা দ্বারা তার প্রতিপক্ষ উপকৃত হয়েছে, কিন্তু পরিণামে উপকার সকলেরই। কেননা প্রথমত : যে ফায়সালা প্রতিপক্ষের অনুকূলে সেটিই ন্যায়সম্মত। সে ফায়সালা পরিবর্তন করে তার নিজের অনুকূলে আনা হলে তা হবে জুলুম ও অন্যায়। অন্যায় ফায়সালা দ্বারা যে সুবিধা ভোগ করা হবে তা সম্পূর্ণ হারাম ও পাপ। কাজেই আল্লাহপ্রদত্ত ফায়সালা মেনে নেয়ার দ্বারা এ পাপ থেকে সে বেঁচে গেল। এও তো এক কল্যাণই বটে। দ্বিতীয়ত : ন্যায়বিচার ও ইনসাফসম্মত ফায়সালা দ্বারা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হলে আখেরে তার ফায়দা ভোগ করে পক্ষ-বিপক্ষ সকলেই। কেননা যে ঘটনার ব্যাপারে ফায়সালা দেয়া হয়েছে সেটিই যে একমাত্র ঘটনা—এমন তো নয়। কালপরিক্রমায় নিত্যনতুন ঘটনা ঘটতে থাকে এবং পরিবেশ-পরিস্থিতিরও পালাবদল হতে থাকে। বলা যায় না কখন এমন কী ঘটনা ঘটে যায় যখন ইনসাফসম্মত ফায়সালাটি নিজেরই অনুকূলে আসবে। আগে থেকে কার্যকর হয়ে আসলে এক্ষেত্রে সে ফায়সালাটি পাওয়ার নিশ্চয়তা লাভ হয়। পক্ষান্তরে আগে নিজের পক্ষ থেকে ন্যায়সম্মত ফায়সালা অগ্রাহ্য করার উদাহরণ সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে সে নিশ্চয়তাও থাকে না। এইযে অনিশ্চয়তার ক্ষতি, এটাতো আগেকার ন্যায়বিচার না মানারই পরিণাম। এ ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় একটাই, আর তা হচ্ছে সর্বাবস্থায় ন্যায়বিচার মেনে নেওয়া।
বলাবাহুল্য, ন্যায়বিচার সেটাই যা আল্লাহ তা'আলার ফায়সালা মোতাবেক হয়। কুরআন-সুন্নাহয় প্রদত্ত বিধানই আল্লাহর ফায়সালা। প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বাবস্থায় এ ফায়সালা খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া। আর তা কেবল সাধারণ বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নয়, আইন-আদালতের ক্ষেত্রেও। আদালতী বিচারাচারও কুরআন-সুন্নাহয় প্রদর নীতিমালা অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ দীন, তাই আইন. আদালতকে আলাদা করে দেখার কোনও অবকাশ নেই।
যাহোক, মূলকথা হচ্ছে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই বান্দার কর্তব্য আল্লাহর ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশ করা। এক্ষেত্রে কারো দ্বারা ব্যতিক্রম ঘটলে অন্যদের কর্তব্য তাকে উপদেশ দেওয়া এবং তাকে আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। আর তারও কর্তব্য যখন তাকে সঠিক পথের দিকে ডাকা হবে তখন অসংকোচে সে ডাকে সাড়া দেওয়া।
আল্লাহ তা'আলার ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশ যে প্রত্যেক বান্দার অবশ্যকর্তব্য এবং তাঁর আদেশ অমান্যকারী ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্তব্যক্তিকে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার দিকে ডাকা হলে তাতে সাড়া দেওয়া যে তার জন্য অপরিহার্য সেসম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত রয়েছে এবং আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদীস।
ইমাম নববী এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আল তাওফীক দান করুন- আমীন।
‘আল্লাহর ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশের অপরিহার্যতা এবং যাকে সেদিকে ডাকা হয় এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা হয়,তার যা বলা উচিত' সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (65)
অর্থ : না, (হে নবী!) তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজেদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে তোমাকে বিচারক মানবে, তারপর তুমি যে রায় দাও সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোনওরূপ কুণ্ঠাবোধ না করবে এবং অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করে নেবে।সূরা নিসা (৪), আয়াত ৬৫
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নিজের শপথ করে জানিয়েছেন, কোনও ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন ও মুসলিম হতে পারে না, যতক্ষণ না সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি সিদ্ধান্ত অকুন্ঠ ও সন্তুষ্টমনে মেনে নেবে।
আল্লাহ তা'আলা কসম করেছেন তাঁর 'রব্ব' নামের। রব্ব অর্থ প্রতিপালক। তিনি বান্দার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ তথা দৈহিক ও আত্মিক উভয় রকম প্রতিপালন করেন। অর্থাৎ তিনি যেমন বান্দার দৈহিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করেন, তেমনি তার আত্মিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের জন্য যা-কিছু দরকার তারও যোগান দেন। বান্দার আত্মিক বিশেষ প্রয়োজন হচ্ছে- সে যে উপায়ে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে তা বাতলে দেওয়া। নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে তিনি মূলত তা-ই বাতলে দিয়ে থাকেন। সুতরাং তিনি তাঁর 'রব্ব' নামের কসম করে ইঙ্গিত করছেন যে, আমি রব্ব হিসেবে তোমাদের আত্মিক চাহিদা পূরণার্থে তোমাদের কাছে আমার রাসূল পাঠিয়েছি। তোমাদের কর্তব্য তাঁর হিদায়াত মোতাবেক চলা। যার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে তোমাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহে তিনি যে মীমাংসা দান করেন, অকুণ্ঠচিত্তে তা মেনে নেওয়া।
বস্তুত নবীর নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে নেওয়া, তাঁর প্রতিটি ফয়সালায় খুশি থাকা ও তাঁর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ বজায় রাখা। নবীর প্রতি বিশ্বাস কেবল ভক্তি প্রদর্শন ও গুণগান করার জন্য নয় এবং নয় কেবল তাঁর নাম নিয়ে গর্ব করার জন্য। সুতরাং তিনি যখন যে ফয়সালা দান করেন, সন্তুষ্টচিত্তে তা মেনে না নেওয়া হলে এ বিশ্বাসের কোনও সার্থকতা থাকে না। সেজন্যই এ আয়াতে তাঁর সিদ্ধান্ত মানার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ তাগিদের দাবি হচ্ছে প্রত্যেকে তাঁর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যে বদ্ধপরিকর থাকবে, এমনকি তাঁর কোনও সিদ্ধান্ত যদি নিজ রুচি-অভিরুচির পরিপন্থীও হয়। তাঁর কোনও ফয়সালা মানতে গেলে যদি নিজ স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় কিংবা লোকসম্মুখে আপাতদৃষ্টিতে ছোট হতে হয়, তাও খুশিমনে তা মেনে নেওয়া চাই । কোনও সন্দেহ নেই তা মেনে নেওয়ার মধ্যেই গৌরব। তারই মধ্যে প্রকৃত মর্যাদা। নবীর ফয়সালা না মানা তাঁর অবাধ্যতা করার শামিল, যা ইসলাম ও মুসলমানিত্বের পরিপন্থী এবং প্রকৃতপক্ষে তা নিজ খেয়াল-খুশির গোলামী ও শয়তানের আনুগত্য। এর পরিণতিতে মানুষ গোমরাহীর শিকার হয়ে যায় ও সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এমনকি এটা মুনাফিকীরও আলামত। এ আয়াতের শানে নুযূলও সেদিকে ইঙ্গিত করে।
ইমাম কুরতুবী রহ. এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে, বিশর নামক জনৈক মুনাফিক ও এক ইয়াহুদীর মধ্যে কোনও এক বিষয়ে বিবাদ চলছিল। এর ফয়সালার জন্য ইয়াহুদী বলল, চল আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাই। কারণ ইয়াহুদী জানত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ন্যায়বিচারই করবেন এবং তা তার পক্ষেই যাবে। কেননা তার দাবি সঠিক ছিল। অপরদিকে বিশর বলল, না, আমরা কা'ব ইবন আশরাফের কাছে যাব। কা'ব ইবন আশরাফ ছিল ইয়াহুদীদের নেতা। কিন্তু ইয়াহুদীর অনড়। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছেই যাবে। অগত্যা বিশর তাতে রাজি হল। তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে আপন আপন বক্তব্য পেশ করল। তিনি ইয়াহুদীর পক্ষে রায় দিলেন। তাঁর সামনে বিশর তা মেনে নিলেও পরে তা প্রত্যাখ্যান করল। সে বলল, চল আমরা আবূ বকরের কাছে যাই। তিনিও একই রায় দিলেন। তখন সে বলল, চল 'উমরের কাছে যাই। তারা হযরত “উমর রাযি.-এর কাছে গিয়ে উপস্থিত হল। ইয়াহুদী হযরত উমর রাযি.-এর কাছে সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করল। তিনি বিশরকে বললেন, সে যা বলছে তা সঠিক? বিশর বলল, হাঁ। তিনি বললেন, ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি আসছি। তিনি ভেতর থেকে তরবারি নিয়ে আসলেন এবং বিশরকে এই বলে কতল করে ফেললেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফয়সালায় রাজি হয় না, তার ব্যাপারে এই হচ্ছে আমার ফয়সালা। এ অবস্থা দেখে ইয়াহুদী ভয়ে পালিয়ে গেল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব শুনে হযরত উমর রাযি.-কে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি 'আল ফারূক'- সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী। তখন থেকেই হযরত উমর ফারূক রাযি, 'আল-ফারূক' উপাধিতে পরিচিতি লাভ করেন।কুরতুবী, আল-জামে লি আহকামিল কুরআন, ৫ম খণ্ড, ১৭০ পৃ.
প্রকাশ থাকে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ নিঃশর্ত আনুগত্যের হুকুম কেবল তাঁর জীবদ্দশার জন্যই নির্দিষ্ট নয়; বরং তাঁর ওফাতের পরও এ হুকুম বলবৎ রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এখন তাঁর আনুগত্য করার অর্থ হচ্ছে তাঁর জীবনাদর্শের অনুসরণ করা তথা জীবনের প্রতিটি কাজ কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক সম্পন্ন করা।
দুই নং আয়াত
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (51)
অর্থ : মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রাসূল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন, তখন তাদের কথা কেবল এটাই হয় যে, তারা বলে আমরা (হুকুম) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আর তারাই সফলকাম।সূরা নূর (২৪), আয়াত ৫১
ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগের কয়েকটি আয়াতে মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে যে, মুনাফিকরা মুখে তো বলে আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি, কিন্তু যখন কোনও বিষয়ে কারও সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব-কলহ দেখা দেয় আর তার মীমাংসার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতে বলা হয়, তখন তারা তাতে সম্মত হয় না। কারণ তাদের জানা আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ন্যয়বিচারই করবেন। তারা ঈমান আনার দাবি করায় ন্যায়- অন্যায় নির্বিচারে তাদের পক্ষে রায় দিয়ে দেবেন—এমন নয়। কাজেই তাঁর কাছে গেলে আমাদের স্বার্থ হাসিল হবে না। ফলে কোনও না কোনও বাহানায় তারা তাঁর কাছে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত। হাঁ, কোনও বিষয়ে যদি তাদের দাবি ন্যায্য হত, তখন আবার মীমাংসার জন্য খুব সহজেই তাঁর কাছে যেতে রাজি হয়ে যেত এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারও কাছে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত। তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুম মানা ও তাঁর আনুগত্য করার খুব জযবা দেখাত। কথা তো ছিল রায় নিজেদের পক্ষে যাক বা বিপক্ষে, সর্বাবস্থায়ই একমাত্র নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই মীমাংসাকারী মানবে এবং সর্বান্তঃকরণে ফয়সালা মেনে নেবে। তারা যখন নিজেদেরকে মু'মিন বলে প্রকাশ করছে, তখন এরকমই তাদের নীতি হওয়া উচিত ছিল। কেননা এটাই ঈমানের দাবি।
মুনাফিকদের বিপরীতে আলোচ্য আয়াতে সাচ্চা মু'মিনদের নীতি তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে যে, কোনও বিষয়ে দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের জন্য তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে আসতে বলা হলে তৎক্ষণাৎ তারা রাজি হয়ে যায় এবং তিনি যে রায় দেন তা খুশিমনে মেনে নেয়। তারা বলে ওঠে, আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং রায় মেনে নিলাম, তাতে বাহ্যিকভাবে আমাদের লাভ-লোকসান যাই হোক না কেন। এ আয়াত জানাচ্ছে, লাভ-লোকসানের তোয়াক্কা না করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালা মেনে নেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সফলতা। সুতরাং এই সাচ্চা মু'মিনগণ অকুণ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ দ্বারা সফল হয়ে গেছে। সে সফলতা দুনিয়ায়ও এবং আখিরাতেও। দুনিয়ায় এরূপ আনুগত্য দ্বারা সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় আর আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যায়।
এ আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালা মেনে নেওয়াকে মু'মিনদের কথা ও তাদের শান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা মৌলিকভাবে মুনাফিকদের বিপরীতে সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ উল্লেখ করা হলেও সাধারণভাবে মুমিন শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সব কালেই প্রকৃত মু'মিন হবে তারাই, যারা তাদের যাবতীয় দ্বন্দ্ব-কলহের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূল তথা কুরআন-সুন্নাহ'র ফয়সালা মেনে নেবে। সুতরাং আমাদের জন্য এ আয়াতে অতি মূল্যবান শিক্ষা আছে এবং আছে কঠোর সতর্কবাণীও।
আল্লাহর ফায়সালায় আনুগত্য প্রকাশের শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত
হাদীছ নং : ১৬৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি (আয়াত) নাযিল হল-
لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ ….
[যা-কিছু আছে আকাশমণ্ডলে এবং যা-কিছু আছে পৃথিবীতে, সব আল্লাহরই। তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা তোমরা প্রকাশ কর বা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৪
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের পক্ষে এটা খুব কঠিন মনে হল। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির হলেন। তারপর নতজানু হয়ে বসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে এমন এমন আমলের আদেশ করা হয়েছিল, যা আমরা পালন করার ক্ষমতা রাখি- নামায, জিহাদ, রোযা ও সদাকা । কিন্তু এখন তো আপনার প্রতি এ আয়াত নাযিল হল। অথচ আমরা এটা পালন করার ক্ষমতা রাখি না।
তাদের এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা কি তোমাদের পূর্ববর্তী দুই আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও নাসারা)-এর মত বলতে চাচ্ছ যে, আমরা শুনলাম কিন্তু মানলাম না? বরং তোমরা বল, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনারই কাছে প্রত্যাবর্তন।
যখন তারা এ কথা বললেন এবং তাদের জিহ্বা এতে আনুগত্য প্রকাশ করল, তখন এর পরই আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন-
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ (285)
[রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, যা তার ওপর তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল করা হয়েছে এবং (তার সাথে) মু'মিনগণও। তারা সকলে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না। (যে, কারও প্রতি ঈমান আনব এবং কারও প্রতি আনব না)। এবং তাঁরা বলে, আমরা (আল্লাহ ও রাসূলের বিধানসমূহ মনোযোগ সহকারে) শুনেছি এবং তা (খুশিমনে) পালন করছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মাগফিরাতের ভিখারী, আর আপনারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৫
যখন তারা এটা করলেন (অর্থাৎ তাদেরকে যা বলতে বলা হয়েছিল তা বললেন), তখন আল্লাহ তা'আলা এটা রহিত করে দিলেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন-
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
[আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না। তার কল্যাণ হবে সে কাজেই যা সে স্বেচ্ছায় করে এবং তার ক্ষতিও হবে সে কাজেই, যা সে স্বেচ্ছায় করে। (হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে এই দু'আ কর যে,) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দ্বারা যদি কোনও ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তবে সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না।
তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম)।
তারপর তারা তিলাওয়াত করলেন-
رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا
[হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি সেই রকমের দায়িত্বভার অর্পণ করো না, যেমন তা অর্পণ করেছিলে আমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি। তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম)।
তারপর তারা তিলাওয়াত করলেন-
رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ
[হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন ভার চাপিয়ো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।] তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম)।
তারপর তারা তিলাওয়াত করলেন-
وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (286)
[আমাদের (ত্রুটিসমূহ) মার্জনা কর, আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৬
তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম) -মুসলিম। সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১২৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩২২
হাদীছ নং : ১৬৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি (আয়াত) নাযিল হল-
لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ ….
[যা-কিছু আছে আকাশমণ্ডলে এবং যা-কিছু আছে পৃথিবীতে, সব আল্লাহরই। তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা তোমরা প্রকাশ কর বা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৪
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের পক্ষে এটা খুব কঠিন মনে হল। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির হলেন। তারপর নতজানু হয়ে বসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে এমন এমন আমলের আদেশ করা হয়েছিল, যা আমরা পালন করার ক্ষমতা রাখি- নামায, জিহাদ, রোযা ও সদাকা । কিন্তু এখন তো আপনার প্রতি এ আয়াত নাযিল হল। অথচ আমরা এটা পালন করার ক্ষমতা রাখি না।
তাদের এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা কি তোমাদের পূর্ববর্তী দুই আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও নাসারা)-এর মত বলতে চাচ্ছ যে, আমরা শুনলাম কিন্তু মানলাম না? বরং তোমরা বল, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনারই কাছে প্রত্যাবর্তন।
যখন তারা এ কথা বললেন এবং তাদের জিহ্বা এতে আনুগত্য প্রকাশ করল, তখন এর পরই আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন-
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ (285)
[রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, যা তার ওপর তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল করা হয়েছে এবং (তার সাথে) মু'মিনগণও। তারা সকলে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না। (যে, কারও প্রতি ঈমান আনব এবং কারও প্রতি আনব না)। এবং তাঁরা বলে, আমরা (আল্লাহ ও রাসূলের বিধানসমূহ মনোযোগ সহকারে) শুনেছি এবং তা (খুশিমনে) পালন করছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মাগফিরাতের ভিখারী, আর আপনারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৫
যখন তারা এটা করলেন (অর্থাৎ তাদেরকে যা বলতে বলা হয়েছিল তা বললেন), তখন আল্লাহ তা'আলা এটা রহিত করে দিলেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন-
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
[আল্লাহ কারও ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না। তার কল্যাণ হবে সে কাজেই যা সে স্বেচ্ছায় করে এবং তার ক্ষতিও হবে সে কাজেই, যা সে স্বেচ্ছায় করে। (হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে এই দু'আ কর যে,) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দ্বারা যদি কোনও ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় তবে সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না।
তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম)।
তারপর তারা তিলাওয়াত করলেন-
رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا
[হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি সেই রকমের দায়িত্বভার অর্পণ করো না, যেমন তা অর্পণ করেছিলে আমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি। তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম)।
তারপর তারা তিলাওয়াত করলেন-
رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ
[হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন ভার চাপিয়ো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।] তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম)।
তারপর তারা তিলাওয়াত করলেন-
وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ (286)
[আমাদের (ত্রুটিসমূহ) মার্জনা কর, আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। -সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৬
তিনি বললেন, হাঁ (অর্থাৎ তোমাদের এ দু'আ কবুল করে নিলাম) -মুসলিম। সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১২৫; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩২২
مقدمة الامام النووي
17 - باب في وجوب الانقياد لحكم الله وما يقوله من دُعِيَ إِلَى ذلِكَ وأُمِرَ بمعروف أَوْ نُهِيَ عن منكر
قَالَ الله تَعَالَى: {فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا} [النساء: 65]، وَقالَ تَعَالَى: {إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [النور: 51].
وفيه من الأحاديث: حديث أَبي هريرة المذكور (1) في أول الباب قبله وغيره من الأحاديث فِيهِ.
قَالَ الله تَعَالَى: {فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا} [النساء: 65]، وَقالَ تَعَالَى: {إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [النور: 51].
وفيه من الأحاديث: حديث أَبي هريرة المذكور (1) في أول الباب قبله وغيره من الأحاديث فِيهِ.
168 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: {للهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَو تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللهُ} الآية [البقرة: 283] اشْتَدَّ ذلِكَ عَلَى أصْحَابِ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَأتَوا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ، فَقَالُوا: أيْ (1) رسولَ الله، كُلِّفْنَا مِنَ الأَعمَالِ مَا نُطِيقُ: الصَّلاةَ والجِهَادَ والصِّيامَ والصَّدَقَةَ، وَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيْكَ هذِهِ الآيَةُ وَلا نُطيقُها. قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «أتُرِيدُونَ أَنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الكتَابَينِ (2) مِنْ قَبْلِكُمْ: سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا؟ بَلْ قُولُوا: سَمِعنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ المَصِيرُ» فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا (3) القومُ، وَذَلَّتْ بِهَا ألْسنَتُهُمْ أنْزَلَ اللهُ تَعَالَى في إثرِهَا: {آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ} [البقرة: 285]. [ص:77] فَلَمَّا فَعَلُوا ذلِكَ نَسَخَهَا اللهُ تَعَالَى، فَأنزَلَ الله - عز وجل: {لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا} [البقرة: 286] قَالَ: نَعَمْ {رَبَّنَا وَلا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا} قَالَ: نَعَمْ {رَبَّنَا وَلا تُحَمِّلْنَا مَا لا طَاقَةَ لَنَا بِه} قَالَ: نَعَمْ {وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ} قَالَ: نَعَمْ. رواه مسلم. (4)
হাদীস নং: ১৬৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দীনের মধ্যে নব-উদ্ভাবিত বিষয়াবলী ও বিদ'আতে লিপ্ত হওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
বিদ'আত অৰ্থ নতুন উদ্ভাবন। একে 'ইহদাছ'-ও বলা হয়। নতুন উদ্ভাবিত বিষয়কে বলা হয় 'মুহদাছ'। আবার একে বিদআতও বলা হয়। সুতরাং বিদ'আত ও মুহদাছ শব্দদু'টি সমার্থবোধক। শরী'আতে বিদ'আত বলা হয় এমন কাজকে, যাকে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের অন্তর্ভুক্ত না করা সত্ত্বেও তাকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করা ও দীনের অঙ্গ বানিয়ে নেওয়া এবং তাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করা বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে বিশ্বাস করা।
ইসলামে বিদ'আত অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা কালিমা তায়্যিবার দাবি ও চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কালিমা তায়্যিবার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল। এ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা হয় আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য আমি কেবল ওই পন্থাই অবলম্বন করব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর শিক্ষা পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৩)
আল্লাহ তা'আলা তাঁর দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি সমবেত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল, হাঁ, আপনি যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন।
দীন যখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমাদের কাছে তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছানোও হয়েছে, তখন আর এর মধ্যে কারও কোনওকিছু যোগ বা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।। কেউ যদি নতুন কোনও আমল তৈরি করে তাকে দীনের অংশ বানিয়ে দেয় এবং দীনের অন্যান্য বিধানাবলীর মত সেটাকেও পালন করা জরুরি মনে করে, তবে সে যেন দাবি করছে- আল্লাহ তাঁর দীন পরিপূর্ণ করেননি বা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাননি। আমি এ আমলটির মাধ্যমে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে দিলাম!
বলাবাহুল্য, এ দাবি হবে কুরআন মাজীদের ওই ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সেইসঙ্গে এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে- যেন তিনি তাঁর দা'ওয়াতী দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেননি। তদুপরি এটা কালেমা তায়্যিবায় দেওয়া সাক্ষ্যেরও পরিপন্থী হবে। কেননা সে সাক্ষ্যে বলা হয়েছিল আমি ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষারই অনুসরণ করব, তার বাইরে যাব না। বিদ'আত দ্বারা কার্যত তার বাইরে যাওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে বিদ'আতী কর্ম দ্বারা প্রথমত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাকে আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়ত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতী দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয়ত কালেমা পাঠের মধ্যে নিহিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়।
এজন্যই বিদ'আত অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। এর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং কুফর ও শিরকের পর বিদ'আতকে একটি কঠিনতম গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটা এমনই এক গুনাহ, যা থেকে সাধারণত তাওবাও নসীব হয় না। কারণ যে ব্যক্তি বিদ'আতী কর্ম করে, সে তো তা করে দীনের অংশ ও ছাওয়াবের কাজ মনে করে। তাই সে তা থেকে তাওবা করার কথা চিন্তাই করতে পারে না। ফলে এ গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়েই তাকে কবরে যেতে হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে কোনওরকম বিদ'আতী কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ি।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা, নিন্দা ও এর কদর্যতা সম্পর্কে আছে কুরআন মাজীদের বহু আয়াত এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা নিচে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
অর্থ : সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? সূরা ইউনুস (১০), আয়াত ৩২
ব্যাখ্যা
হক ও সত্য তাই, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। যেমন কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ
'হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রাসূল এসেছেন সত্য নিয়ে। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৭০
তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার কিছু তো কুরআন ও হাদীছে বিস্তারিত বলা হয়েছে, আর কিছু আছে মৌলিক আকারে। যা মৌলিক আকারে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম ও মুজতাহিদগণ তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মাসাইল উদ্ভাবন করেছেন। পরোক্ষভাবে তাও কুরআন ও হাদীছের কথাই। সুতরাং কুরআন ও হাদীছে যা সরাসরি এবং যা-কিছু পরোক্ষভাবে বর্ণিত হয়েছে তা সবই আল্লাহর দেওয়া এবং তা সবই সত্য। সূরা ইউনুসের এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্যের পর গোমরাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে? তার মানে দাঁড়ায় কুরআন ও হাদীছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যা বলা হয়েছে তার বাইরের সবই গোমরাহী। যাবতীয় বিদ'আত এর মধ্যে পড়ে। কারণ তা কুরআন ও হাদীছ থেকে নেওয়া নয়; বরং মানুষের মনগড়া। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দুই নং আয়াত
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَبِ مِنْ شَيْءٍ
অর্থ : আমি কিতাবে কিছুমাত্র ত্রুটি রাখিনি। সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৩৮
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে 'কিতাব' দ্বারা যদি লাওহে মাহফুজ বোঝানো হয়ে থাকে, তখন এর অর্থ হবে- মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তাতে লিপিবদ্ধ আছে, কোনওকিছুই বাদ যায়নি। যেমন মানুষের ক্ষেত্রে তাতে লেখা আছে, কার কী রকম জন্ম হবে, কোথায় জন্ম হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেমন হবে, গায়ের রঙ কেমন হবে, আখলাক-চরিত্র কেমন হবে, কতদিন বাঁচবে, জীবিকার ব্যবস্থা কী হবে, জীবনযাপন কেমন হবে। মোটকথা প্রত্যেক ব্যক্তির খুঁটিনাটি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ তাতে লিপিবদ্ধ আছে। এমনিভাবে সমস্ত সৃষ্টির সবকিছু।
কারও মতে, এ আয়াতে কিতাব দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে। তখন হাদীছও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কুরআন ও হাদীছ পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কুরআন ছাড়া যেমন হাদীছ যথেষ্ট নয়, তেমনি হাদীছ ছাড়াও কারও পক্ষে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। তো এ আয়াতে যে বলা হয়েছে, কিতাবে কোনওকিছুই বাদ দেওয়া হয়নি, তার মানে দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় কুরআন ও হাদীছে বলে দেওয়া হয়েছে, যেমনটা উপরের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। এ অবস্থায় দীনের নামে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনওকিছু যোগ করা হলে তা হবে বাড়তি জঞ্জাল এবং এ আয়াতের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বিষয়। সব বিদ'আতই এরকম। তাই তা পরিত্যাজ্য।
তিন নং আয়াত
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَ الرَّسُولِ
অর্থ : অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ন্যস্ত কর। সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আমাদেরকে অতি মূল্যবান একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। কোনও আকীদা বা আমল নিয়ে যদি নিজেদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, কেউ বলে সেটি শরী'আতসম্মত এবং কেউ বলে সেটি শরী'আতবিরোধী, তবে তার ফয়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর এখন কর্তব্য হবে বিষয়টিকে কুরআন ও হাদীছের সামনে নিয়ে আসা। যদি তা কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সমর্থিত হয় তবে তো ঠিক আছে, অন্যথায় তা পরিত্যাজ্য। কুরআন ও হাদীছে তার সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও পক্ষ তা নিয়ে জিদ ধরে এবং তারা সেটিকে দীনের অংশ বলে চালিয়ে দেয়, তবে তা বিদ'আত নামে আখ্যায়িত হবে এবং প্রথম আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী তা হবে সুস্পষ্ট গোমরাহী।
চার নং আয়াত
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
অর্থ : (হে নবী! তাদেরকে) আরও বল, এটা আমার সরল-সঠিক পথ। সুতরাং এর অনুসরণ কর, অন্য কোনও পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।সূরা আন'আম (৬), আয়াত ১৫৩
ব্যাখ্যা
এটি সূরা আন'আমের ১৫৩ নং আয়াত। এর আগের কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ বর্ণিত হয়েছে। সারা কুরআন ও হাদীছেই এরকম বহু আদেশ-নিষেধ আছে এবং তার সমষ্টি দ্বারা দীন ও শরী'আত পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহপ্রদত্ত সে দীন ও শরী'আত হচ্ছে তাঁর দেওয়া সরল-সঠিক পথ। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ। যারা আল্লাহ তা'আলাকে পেতে চায় তাদের কর্তব্য এ সরল পথের অনুসরণ করা। সে আদেশই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে নিষেধ করে দিয়েছেন যেন এ পথ ছাড়া অন্য কোনও পথে চলা না হয়। ইসলামী শরী'আতের বাইরে দুনিয়ায় হাজারও পথ আছে। যারা ইসলামের অনুসরণ করার দাবি করে তাদের মধ্যেও অনেকে মনগড়া পথ বানিয়ে নিয়েছে। তা সবই বাঁকা পথ। শিরক ও বিদ'আতের পথ। সে পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছেনি। যারা সে পথে চলবে তারা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। তারা বিপথগামী হয়ে আল্লাহকে হারাবে এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যাবে। এভাবে এ আয়াত দ্বারাও শিরক ও কুফর পরিত্যাগের পাশাপাশি বিদ'আত পরিত্যাগের গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়।
পাঁচ নং আয়াত
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
অর্থ : (হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ৩১
ব্যাখ্যা
কাউকে ভালোবাসার উদ্দেশ্য হয় তার ভালোবাসা লাভ করা। এ আয়াত বলছে, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক এবং তাঁর সত্যিকারের আশেক হও, তবে তো স্বাভাবিকভাবেই তাঁরও ভালোবাসা পেতে চাইবে। আর তা পাওয়ার একমাত্র উপায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। তিনি আল্লাহ তা'আলার হাবীব এবং তাঁর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করবে এবং তাঁর সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপন করবে, সেও আল্লাহর মাহবূব ও প্রিয় হয়ে যাবে। কেননা এটাই সাধারণ নিয়ম যে, প্রিয়জনের অনুসারীও প্রীতিভাজন হয়ে যায়।
এ আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী চলার জন্য দু'টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আল্লাহর মাহবূব হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করবে, সে আল্লাহ তা'আলার মহব্বতের পাত্র হয়ে যাবে, আল্লাহ তা'আলা নিজেই তাকে ভালোবাসবেন। দ্বিতীয় হচ্ছে মাগফিরাত লাভ। আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ, কত বড় পুরস্কার! এর পরও কি কারও সুন্নতপরিপন্থী জীবনযাপন করা উচিত? বিদ'আত সরাসরিই সুন্নতের পরিপন্থী। বিদ'আতের ওপর চলার দ্বারা কখনও এ মহাপুরস্কার লাভ করা যেতে পারে না। কাজেই আল্লাহপ্রেমিকের উচিত সর্বাবস্থায় বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকা।
বিদ'আত অৰ্থ নতুন উদ্ভাবন। একে 'ইহদাছ'-ও বলা হয়। নতুন উদ্ভাবিত বিষয়কে বলা হয় 'মুহদাছ'। আবার একে বিদআতও বলা হয়। সুতরাং বিদ'আত ও মুহদাছ শব্দদু'টি সমার্থবোধক। শরী'আতে বিদ'আত বলা হয় এমন কাজকে, যাকে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের অন্তর্ভুক্ত না করা সত্ত্বেও তাকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করা ও দীনের অঙ্গ বানিয়ে নেওয়া এবং তাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করা বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে বিশ্বাস করা।
ইসলামে বিদ'আত অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা কালিমা তায়্যিবার দাবি ও চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কালিমা তায়্যিবার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল। এ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা হয় আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য আমি কেবল ওই পন্থাই অবলম্বন করব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর শিক্ষা পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৩)
আল্লাহ তা'আলা তাঁর দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি সমবেত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল, হাঁ, আপনি যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন।
দীন যখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমাদের কাছে তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছানোও হয়েছে, তখন আর এর মধ্যে কারও কোনওকিছু যোগ বা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।। কেউ যদি নতুন কোনও আমল তৈরি করে তাকে দীনের অংশ বানিয়ে দেয় এবং দীনের অন্যান্য বিধানাবলীর মত সেটাকেও পালন করা জরুরি মনে করে, তবে সে যেন দাবি করছে- আল্লাহ তাঁর দীন পরিপূর্ণ করেননি বা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাননি। আমি এ আমলটির মাধ্যমে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে দিলাম!
বলাবাহুল্য, এ দাবি হবে কুরআন মাজীদের ওই ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সেইসঙ্গে এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে- যেন তিনি তাঁর দা'ওয়াতী দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেননি। তদুপরি এটা কালেমা তায়্যিবায় দেওয়া সাক্ষ্যেরও পরিপন্থী হবে। কেননা সে সাক্ষ্যে বলা হয়েছিল আমি ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষারই অনুসরণ করব, তার বাইরে যাব না। বিদ'আত দ্বারা কার্যত তার বাইরে যাওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে বিদ'আতী কর্ম দ্বারা প্রথমত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাকে আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়ত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতী দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয়ত কালেমা পাঠের মধ্যে নিহিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়।
এজন্যই বিদ'আত অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। এর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং কুফর ও শিরকের পর বিদ'আতকে একটি কঠিনতম গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটা এমনই এক গুনাহ, যা থেকে সাধারণত তাওবাও নসীব হয় না। কারণ যে ব্যক্তি বিদ'আতী কর্ম করে, সে তো তা করে দীনের অংশ ও ছাওয়াবের কাজ মনে করে। তাই সে তা থেকে তাওবা করার কথা চিন্তাই করতে পারে না। ফলে এ গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়েই তাকে কবরে যেতে হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে কোনওরকম বিদ'আতী কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ি।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা, নিন্দা ও এর কদর্যতা সম্পর্কে আছে কুরআন মাজীদের বহু আয়াত এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা নিচে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
অর্থ : সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? সূরা ইউনুস (১০), আয়াত ৩২
ব্যাখ্যা
হক ও সত্য তাই, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। যেমন কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ
'হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রাসূল এসেছেন সত্য নিয়ে। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৭০
তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার কিছু তো কুরআন ও হাদীছে বিস্তারিত বলা হয়েছে, আর কিছু আছে মৌলিক আকারে। যা মৌলিক আকারে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম ও মুজতাহিদগণ তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মাসাইল উদ্ভাবন করেছেন। পরোক্ষভাবে তাও কুরআন ও হাদীছের কথাই। সুতরাং কুরআন ও হাদীছে যা সরাসরি এবং যা-কিছু পরোক্ষভাবে বর্ণিত হয়েছে তা সবই আল্লাহর দেওয়া এবং তা সবই সত্য। সূরা ইউনুসের এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্যের পর গোমরাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে? তার মানে দাঁড়ায় কুরআন ও হাদীছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যা বলা হয়েছে তার বাইরের সবই গোমরাহী। যাবতীয় বিদ'আত এর মধ্যে পড়ে। কারণ তা কুরআন ও হাদীছ থেকে নেওয়া নয়; বরং মানুষের মনগড়া। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দুই নং আয়াত
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَبِ مِنْ شَيْءٍ
অর্থ : আমি কিতাবে কিছুমাত্র ত্রুটি রাখিনি। সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৩৮
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে 'কিতাব' দ্বারা যদি লাওহে মাহফুজ বোঝানো হয়ে থাকে, তখন এর অর্থ হবে- মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তাতে লিপিবদ্ধ আছে, কোনওকিছুই বাদ যায়নি। যেমন মানুষের ক্ষেত্রে তাতে লেখা আছে, কার কী রকম জন্ম হবে, কোথায় জন্ম হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেমন হবে, গায়ের রঙ কেমন হবে, আখলাক-চরিত্র কেমন হবে, কতদিন বাঁচবে, জীবিকার ব্যবস্থা কী হবে, জীবনযাপন কেমন হবে। মোটকথা প্রত্যেক ব্যক্তির খুঁটিনাটি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ তাতে লিপিবদ্ধ আছে। এমনিভাবে সমস্ত সৃষ্টির সবকিছু।
কারও মতে, এ আয়াতে কিতাব দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে। তখন হাদীছও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কুরআন ও হাদীছ পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কুরআন ছাড়া যেমন হাদীছ যথেষ্ট নয়, তেমনি হাদীছ ছাড়াও কারও পক্ষে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। তো এ আয়াতে যে বলা হয়েছে, কিতাবে কোনওকিছুই বাদ দেওয়া হয়নি, তার মানে দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় কুরআন ও হাদীছে বলে দেওয়া হয়েছে, যেমনটা উপরের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। এ অবস্থায় দীনের নামে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনওকিছু যোগ করা হলে তা হবে বাড়তি জঞ্জাল এবং এ আয়াতের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বিষয়। সব বিদ'আতই এরকম। তাই তা পরিত্যাজ্য।
তিন নং আয়াত
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَ الرَّسُولِ
অর্থ : অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ন্যস্ত কর। সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আমাদেরকে অতি মূল্যবান একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। কোনও আকীদা বা আমল নিয়ে যদি নিজেদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, কেউ বলে সেটি শরী'আতসম্মত এবং কেউ বলে সেটি শরী'আতবিরোধী, তবে তার ফয়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর এখন কর্তব্য হবে বিষয়টিকে কুরআন ও হাদীছের সামনে নিয়ে আসা। যদি তা কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সমর্থিত হয় তবে তো ঠিক আছে, অন্যথায় তা পরিত্যাজ্য। কুরআন ও হাদীছে তার সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও পক্ষ তা নিয়ে জিদ ধরে এবং তারা সেটিকে দীনের অংশ বলে চালিয়ে দেয়, তবে তা বিদ'আত নামে আখ্যায়িত হবে এবং প্রথম আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী তা হবে সুস্পষ্ট গোমরাহী।
চার নং আয়াত
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
অর্থ : (হে নবী! তাদেরকে) আরও বল, এটা আমার সরল-সঠিক পথ। সুতরাং এর অনুসরণ কর, অন্য কোনও পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।সূরা আন'আম (৬), আয়াত ১৫৩
ব্যাখ্যা
এটি সূরা আন'আমের ১৫৩ নং আয়াত। এর আগের কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ বর্ণিত হয়েছে। সারা কুরআন ও হাদীছেই এরকম বহু আদেশ-নিষেধ আছে এবং তার সমষ্টি দ্বারা দীন ও শরী'আত পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহপ্রদত্ত সে দীন ও শরী'আত হচ্ছে তাঁর দেওয়া সরল-সঠিক পথ। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ। যারা আল্লাহ তা'আলাকে পেতে চায় তাদের কর্তব্য এ সরল পথের অনুসরণ করা। সে আদেশই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে নিষেধ করে দিয়েছেন যেন এ পথ ছাড়া অন্য কোনও পথে চলা না হয়। ইসলামী শরী'আতের বাইরে দুনিয়ায় হাজারও পথ আছে। যারা ইসলামের অনুসরণ করার দাবি করে তাদের মধ্যেও অনেকে মনগড়া পথ বানিয়ে নিয়েছে। তা সবই বাঁকা পথ। শিরক ও বিদ'আতের পথ। সে পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছেনি। যারা সে পথে চলবে তারা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। তারা বিপথগামী হয়ে আল্লাহকে হারাবে এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যাবে। এভাবে এ আয়াত দ্বারাও শিরক ও কুফর পরিত্যাগের পাশাপাশি বিদ'আত পরিত্যাগের গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়।
পাঁচ নং আয়াত
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
অর্থ : (হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ৩১
ব্যাখ্যা
কাউকে ভালোবাসার উদ্দেশ্য হয় তার ভালোবাসা লাভ করা। এ আয়াত বলছে, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক এবং তাঁর সত্যিকারের আশেক হও, তবে তো স্বাভাবিকভাবেই তাঁরও ভালোবাসা পেতে চাইবে। আর তা পাওয়ার একমাত্র উপায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। তিনি আল্লাহ তা'আলার হাবীব এবং তাঁর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করবে এবং তাঁর সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপন করবে, সেও আল্লাহর মাহবূব ও প্রিয় হয়ে যাবে। কেননা এটাই সাধারণ নিয়ম যে, প্রিয়জনের অনুসারীও প্রীতিভাজন হয়ে যায়।
এ আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী চলার জন্য দু'টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আল্লাহর মাহবূব হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করবে, সে আল্লাহ তা'আলার মহব্বতের পাত্র হয়ে যাবে, আল্লাহ তা'আলা নিজেই তাকে ভালোবাসবেন। দ্বিতীয় হচ্ছে মাগফিরাত লাভ। আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ, কত বড় পুরস্কার! এর পরও কি কারও সুন্নতপরিপন্থী জীবনযাপন করা উচিত? বিদ'আত সরাসরিই সুন্নতের পরিপন্থী। বিদ'আতের ওপর চলার দ্বারা কখনও এ মহাপুরস্কার লাভ করা যেতে পারে না। কাজেই আল্লাহপ্রেমিকের উচিত সর্বাবস্থায় বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকা।
ইসলামে নব-উদ্ভাবিত বিষয় পরিত্যাজ্য
হাদীছ নং : ১৬৯
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত-বুখারী ও মুসলিম।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি এমন কোনও আমল করে যার ওপর আমাদের হুকুম নেই (অর্থাৎ যা আমাদের তরিকামত নয়), তা প্রত্যাখ্যাত।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৮, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪)
হাদীছ নং : ১৬৯
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত-বুখারী ও মুসলিম।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি এমন কোনও আমল করে যার ওপর আমাদের হুকুম নেই (অর্থাৎ যা আমাদের তরিকামত নয়), তা প্রত্যাখ্যাত।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৮, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪)
مقدمة الامام النووي
18 - باب في النهي عن البدع ومحدثات الأمور
قَالَ الله تَعَالَى: {فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلال} [يونس: 32]، وَقالَ تَعَالَى: {مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْء} [الأنعام: 38]، وَقالَ تَعَالَى: {فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ} [النساء: 59] أيِ الكِتَابِ وَالسُّنَّةِ. وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ} [الأنعام: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ} [آل عمران:31] وَالآياتُ في البَابِ كَثيرةٌ مَعلُومَةٌ.
قَالَ الله تَعَالَى: {فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلال} [يونس: 32]، وَقالَ تَعَالَى: {مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْء} [الأنعام: 38]، وَقالَ تَعَالَى: {فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ} [النساء: 59] أيِ الكِتَابِ وَالسُّنَّةِ. وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ} [الأنعام: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ} [آل عمران:31] وَالآياتُ في البَابِ كَثيرةٌ مَعلُومَةٌ.
169 - عن عائشة رَضِي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ
أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
وفي رواية لمسلم: «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ (2)». (3)
أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
وفي رواية لمسلم: «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ (2)». (3)
হাদীস নং: ১৭০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ দীনের মধ্যে নব-উদ্ভাবিত বিষয়াবলী ও বিদ'আতে লিপ্ত হওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ভাষণ
হাদীছ নং: ১৭০
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ভাষণ দিতেন তখন তাঁর দুই চোখ লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত এবং তাঁর রাগ তীব্র হয়ে উঠত, এমনকি মনে হত যেন তিনি কোনও শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ককারী, যিনি বলছেন- শত্রুবাহিনী সকালবেলা তোমাদের ওপর হামলা করবে, তারা সন্ধ্যাবেলা তোমাদের ওপর হামলা করবে। তিনি বলতেন, আমি এবং কিয়ামত এভাবে প্রেরিত হয়েছি। এই বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদুটি মিলিয়ে দেখাতেন। তিনি আরও বলতেন, সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব, সর্বোত্তম তরিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা,
সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বিষয় নব-উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ আর প্রত্যেকটি বিদ'আত গোমরাহী। তারপর তিনি বলতেন, আমি প্রত্যেক মু'মিনের ওপর তার নিজের চেয়েও বেশি হকদার। কেউ যদি সম্পদ রেখে যায় তবে তা তার পরিবারবর্গের। আর যদি ঋণ বা অসহায় সন্তান রেখে যায়, তবে তার (সন্তানের) অভিভাবকত্ব আমারই এবং আমারই ওপর তার (ঋণ পরিশোধের) দায়িত্ব. মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৬৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৯৫৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৯৬২)
হযরত ইরবায ইবন সারিয়া রাযি. থেকে পূর্বে ১৬ নং অধ্যায়ে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সে হাদীছেও বিদ'আত ও নব-উদ্ভাবিত বিষয় পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে হাদীছটিও এ অধ্যায়ের উপযুক্ত। কিন্তু পুনরাবৃত্তি হবে বলে এখানে উদ্ধৃত করা হল না।
দ্রষ্টব্য : হাদীছ নং ১৫৭,
হাদীছ নং: ১৭০
হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ভাষণ দিতেন তখন তাঁর দুই চোখ লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত এবং তাঁর রাগ তীব্র হয়ে উঠত, এমনকি মনে হত যেন তিনি কোনও শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ককারী, যিনি বলছেন- শত্রুবাহিনী সকালবেলা তোমাদের ওপর হামলা করবে, তারা সন্ধ্যাবেলা তোমাদের ওপর হামলা করবে। তিনি বলতেন, আমি এবং কিয়ামত এভাবে প্রেরিত হয়েছি। এই বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদুটি মিলিয়ে দেখাতেন। তিনি আরও বলতেন, সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব, সর্বোত্তম তরিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা,
সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বিষয় নব-উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ আর প্রত্যেকটি বিদ'আত গোমরাহী। তারপর তিনি বলতেন, আমি প্রত্যেক মু'মিনের ওপর তার নিজের চেয়েও বেশি হকদার। কেউ যদি সম্পদ রেখে যায় তবে তা তার পরিবারবর্গের। আর যদি ঋণ বা অসহায় সন্তান রেখে যায়, তবে তার (সন্তানের) অভিভাবকত্ব আমারই এবং আমারই ওপর তার (ঋণ পরিশোধের) দায়িত্ব. মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৬৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৯৫৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৯৬২)
হযরত ইরবায ইবন সারিয়া রাযি. থেকে পূর্বে ১৬ নং অধ্যায়ে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সে হাদীছেও বিদ'আত ও নব-উদ্ভাবিত বিষয় পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে হাদীছটিও এ অধ্যায়ের উপযুক্ত। কিন্তু পুনরাবৃত্তি হবে বলে এখানে উদ্ধৃত করা হল না।
দ্রষ্টব্য : হাদীছ নং ১৫৭,
مقدمة الامام النووي
18 - باب في النهي عن البدع ومحدثات الأمور
170 - وعن جابر - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَينَاهُ، وَعَلا صَوتُهُ، وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ، حَتَّى كَأنَّهُ مُنْذِرُ جَيشٍ، يَقُولُ: «صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ» وَيَقُولُ: «بُعِثتُ أنَا والسَّاعَةُ كَهَاتَينِ» وَيَقْرِنُ بَيْنَ أُصبُعَيهِ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى، وَيَقُولُ: «أمَّا بَعْدُ، فَإنَّ خَيْرَ الحَديثِ كِتَابُ الله، وَخَيرَ الهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ - صلى الله عليه وسلم - وَشَرَّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا،[ص:78] وَكُلَّ بِدْعَة ضَلالَةٌ» ثُمَّ يَقُولُ: «أنَا أوْلَى بِكُلِّ مُؤمِنٍ مِنْ نَفسِهِ، مَنْ تَرَكَ مَالًا فَلأَهْلِهِ، وَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيَاعًا (1) فَإلَيَّ وَعَلَيَّ» (2) رواه مسلم.
وعِنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ حَدِيثُهُ السَّابِقُ فِي بَابِ الْمُحَافَظَةِ عَلَى السُّنَّةِ
وعِنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ حَدِيثُهُ السَّابِقُ فِي بَابِ الْمُحَافَظَةِ عَلَى السُّنَّةِ
হাদীস নং: ১৭১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ভালো ও মন্দ পন্থা চালু করার প্রতিদান।
ভালো পন্থা বলতে এমন পন্থা ও এমন রীতিনীতি বোঝানো উদ্দেশ্য, যা শরী'আতের কোনও মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং যার প্রতি কুরআন-হাদীছ দ্বারা কোনও না কোনওভাবে উৎসাহ পাওয়া যায়। এমন পন্থা চালু করা অতি বড় নেককাজ। এমন কোনও পন্থা যে ব্যক্তি চালু করে, সে সদকায়ে জারিয়ার ছাওয়াব পায়। অর্থাৎ পরবর্তীকালে যারাই তার চালু করা কাজটি করবে, তাতে তারা যে ছাওয়াব পাবে, ওই প্রথম ব্যক্তিও তাদের সকলের সমপরিমাণ ছাওয়াবের অধিকারী হবে। যেমন রোগীর সেবাযত্ন করা অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। হাদীছে এ কাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি রোগীর চিকিৎসা ও সেবাযত্নের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা চালু করে— যেমন হাসপাতাল করা, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনা করা, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা, এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা, গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য তহবিল গড়ে তোলা ইত্যাদি-তবে সে ব্যক্তি প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ কাজের ছাওয়াব তো পাবেই, সেইসঙ্গে পরে যে-কেউ এ কাজে শরীক হবে বা তার দেখাদেখি এ জাতীয় কাজের উদ্যোগ নেবে, তাদের সকলের সম্মিলিত ছাওয়াবের সমান ছাওয়াব তার আমলনামায়ও লেখা হবে।
মন্দ পন্থা বলতে এমন প্রথা ও কাজ বোঝানো উদ্দেশ্য, যার শর'ঈ কোনও ভিত্তি নেই এবং কুরআন-সুন্নাহ সেরকম কাজের উৎসাহ ও অনুমোদন দেয়নি। যদি কোনও ব্যক্তি এরকম কোনও প্রথা চালু করে, তবে প্রথম চালুকারী হিসেবে নিজ কাজের গুনাহ তো তার হবেই, সেইসঙ্গে তার দেখাদেখি যারাই সে কাজ করবে তাদের সকলের সম্মিলিত গুনাহ'র সমান গুনাহ তার আমলনামায় লেখা হবে। যেমন বিবাহে গায়ে হলুদের প্রথা, কবরে মোমবাতি জ্বালানোর রেওয়াজ, জন্মদিন ও মৃত দিবসের অনুষ্ঠান, বিবাহ বার্ষিকী পালন ইত্যাদি।
ভালো পন্থা চালুর প্রশংসা ও মন্দ প্রথা চালুর নিন্দা সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত আছে এবং আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীছও। ইমাম নববী রহ. সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ এ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এবার আমরা তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
ভালো ও মন্দ পন্থা চালু করার প্রতিদান
সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا (74)
অর্থ : এবং যারা (এই) বলে (দুআ করে যে), হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ হতে দান কর নয়নপ্রীতি এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানাও।সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৭৪
ব্যাখ্যা
এটি সূরা ফুরকানের শেষদিকের আয়াত, যে আয়াতগুলোতে দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। সেরকম একটি গুণ হচ্ছে এ আয়াতে বর্ণিত বিষয়ে আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা। এ আয়াতে মৌলিকভাবে দু'টি দু'আ করা হয়েছে। একটি দু'আ করা হয়েছে স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে এমন বানাও, যাতে তাদের দ্বারা আমাদের চোখ জুড়ায়। অর্থাৎ তাদেরকে তোমার অনুগত বানাও। নেককার স্বামীর কামনা থাকে- তার স্ত্রী আল্লাহ তা'আলার অনুগত থাকুক এবং শরী'আতের অনুসরণ করে চলুক। স্ত্রীকে সেরকম দেখতে পেলে সে খুশি হয়। এমনিভাবে নেককার পিতামাতা চায় তার সন্তান দীনের ওপর চলুক ও আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হয়ে উঠুক। তারা তাদের সন্তানকে সেরকম দেখতে পেলে আনন্দিত হয়।
এ আনন্দ পবিত্র, যেহেতু এর সম্পর্ক আল্লাহ তা'আলার তাবেদারীর সাথে। সে কারণে এ আনন্দ একটা নি'আমতও বটে। এটা যেমন দুনিয়ার এক নগদ লাভ, তেমনি আখিরাতেরও এক পরম প্রাপ্তি। কেননা বাবা-মায়ের পাশাপাশি সন্তান নেককার হলে তারা জান্নাতেও পাশাপাশি থাকতে পারবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
“যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।সূরা তূর (৫২), আয়াত ২১
স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য দু'আর বহুবিধ ফায়দা
প্রকাশ থাকে যে, দু'আ ও আমল পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। নেককার স্বামী ও নেককার পিতামাতা কেবল দু'আ করেই ক্ষান্ত হয় না, সেইসঙ্গে তাদেরকে দীনদাররূপে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। ফলে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি যা-কিছু নেক আমল করে, তাতে স্বামী ও পিতামাতাও ছাওয়াবের অংশীদার হয়। স্থায়ীভাবে সে ছাওয়াব তাদের আমলনামায় লেখা হতে থাকে। কাজেই তাদের জন্য দু'আ করার দ্বারা দু'আকারীর নিজেরও উপকার হয়।
এক তো দু'আ একটি ইবাদত। ফলে দু'আ করলে আমলনামায় ইবাদতের ছাওয়াব লেখা হয়।
দ্বিতীয়ত দু'আর পাশাপাশি যেহেতু চেষ্টাও করা হয়, তাই সে চেষ্টার জন্যও ছাওয়াব লেখা হয়।
তৃতীয়ত সে চেষ্টার বদৌলতে তারা যত আমল করবে তার জন্যও তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা হতে থাকে।
চতুর্থত তাদের সংশোধনের চেষ্টা করতে থাকলে নিজের সংশোধনের প্রতিও বিশেষ লক্ষ দেওয়া হয়। কেননা নিজেকে সংশোধন না করে অন্যের সংশোধনের চেষ্টা বিশেষ ফল দেয় না; বরং অনেক সময় তা হাসির খোরাক যোগায়। সুতরাং বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন অন্যকে নসীহত করবে, তখন স্বাভাবিকভাবে নিজে আমলের প্রতিও বিশেষ যত্নবান থাকবে।
এভাবে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির সংশোধন-চেষ্টার দ্বারা নিজ আমলেরও উন্নতি হয়। এতে করে তার আমলনামায় নেকি শুধু বাড়তেই থাকে। কাজেই স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য দু'আ করার দ্বারা যেমন তাদের উপকার হয়, তেমনি নিজেরও অনেক লাভ। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, কিয়ামতের দিন বান্দা তার আমলনামায় অনেক পুণ্য দেখে জিজ্ঞেস করবে, এসব পুণ্য আমি কিভাবে পেলাম? বলা হবে, তোমার সন্তানদের জন্য যে দু'আ করেছিলে—এসব তার ছাওয়াব।
এ আয়াতে যে দু'আর উল্লেখ আছে, তাতে স্ত্রীকে সন্তান-সন্তুতির আগে রাখা হয়েছে। কেননা স্ত্রী নেককার হলে তার গর্ভের সন্তানদের নেককার হওয়ার বেশি আশা থাকে। তার নেক আমলের আছর গর্ভস্থ সন্তানের ওপর পড়ে থাকে। তাছাড়া জন্মের পর সন্তানদের শৈশবকাল যেহেতু মায়ের কোলে কাটে, তাই এক তো কুদরতীভাবে মায়ের নেক আমল দ্বারা সন্তান প্রভাবিত হতে থাকবে। দ্বিতীয়ত মা নিজে নেককার হওয়ার কারণে কোলের সন্তানকেও সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। কাজেই যারা নেককার সন্তান কামনা করে, তাদের উচিত নিজ স্ত্রীর আমল-আখলাকের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া।
উল্লেখ্য, আরবীতে زوج শব্দটি স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। এর বহুবচন ازواج । এ আয়াতে বহুবচনে أزواج ই ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই এর দ্বারা স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থ নেওয়ারই অবকাশ আছে। যখন স্বামী এ দু'আটি করবে তখন এর দ্বারা স্ত্রীকে বোঝানো হবে যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার স্ত্রীকে তোমার আনুগত্য করার তাওফীক দিয়ে আমার জন্য নয়নপ্রীতিকর বানিয়ে দাও। আবার যখন স্ত্রী এ দু'আ করবে তখন এর দ্বারা তার স্বামীকে বোঝানো হবে। তখন অর্থ হবে- হে আল্লাহ! তুমি আমার স্বামীকে তোমার অনুগত বান্দা বানিয়ে আমার জন্য নয়নপ্রীতিকর করে দাও।
এ আয়াতের দ্বিতীয় দু'আ হচ্ছে আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দাও। অর্থাৎ ইবাদত-আনুগত্য ও আমল-আখলাকে আমাদেরকে এমন বানিয়ে দাও, যাতে মানুষ আমাদের অনুসরণ করে তোমার মুত্তাকী বান্দা হয়ে যেতে পারে।
সারকথা, আমরা নিজেরা মুত্তাকী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েই যেন ক্ষান্ত না থাকি; বরং অন্যদের তাকওয়া-পরহেযগারী ও হিদায়াতেও যেন ভূমিকা রাখতে পারি, যাতে আমাদের বংশধরগণসহ অপরাপর লোকজনও আমাদের দেখানো পথের অনুসরণ করে এবং হিদায়াতের পথে চলার ব্যাপারে আমরা তাদের ইমাম ও অনুসরণযোগ্য হয়ে থাকি।
বলাবাহুল্য দু'আর এ অংশটিও উপরের অংশের মত নিজের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। এর সুফল যেমন নিজ বংশধরগণ এবং দু'আর আওতাভুক্ত অন্যান্য লোকও পাবে, তেমনি পাবে দু'আকারী নিজেও। তার আমলনামায়ও স্থায়ীভাবে ছাওয়াব লেখা হতে থাকবে।
দুই নং আয়াত
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا
অর্থ : আমি তাদেরকে করেছিলাম নেতা, যারা আমার হুকুমে মানুষকে পথ দেখাত। সূরা আম্বিয়া (২১), আয়াত ৭৩
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে নেতা ও ইমামের কাজ বলা হয়েছে মানুষকে আল্লাহর পথ দেখানো। আল্লাহ তা'আলা বলছেন- আমি তাদেরকে বানালাম এমন ইমাম ও নেতা, যাদের কাজ হচ্ছে আমার হুকুম অনুযায়ী মানুষকে দীনের পথ দেখানো। তো নেতা যাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকবে এবং ইবাদত-আনুগত্য ও নেককাজের পথ দেখাবে, তারা আপন আমলের মাধ্যমে যে ছাওয়াব অর্জন করবে, তাদের সমপরিমাণ ছাওয়াব নেতার আমলনামায়ও লেখা হবে, তাতে তাদের ছাওয়াব কিছুমাত্র কমবে না।
আয়াতে নেতার কর্তব্য বলা হয়েছে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পথ দেখানো। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যে কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে যে আদেশ-নিষেধ দিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষকে পরিচালনা করা। এর দ্বারা নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে কিছুটা অনুমান পাওয়া যায়। আজ যারা জনগণের নেতা তারা এ দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে কিংবা আদৌ পালন করছে কি?
ভালো পন্থা বলতে এমন পন্থা ও এমন রীতিনীতি বোঝানো উদ্দেশ্য, যা শরী'আতের কোনও মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং যার প্রতি কুরআন-হাদীছ দ্বারা কোনও না কোনওভাবে উৎসাহ পাওয়া যায়। এমন পন্থা চালু করা অতি বড় নেককাজ। এমন কোনও পন্থা যে ব্যক্তি চালু করে, সে সদকায়ে জারিয়ার ছাওয়াব পায়। অর্থাৎ পরবর্তীকালে যারাই তার চালু করা কাজটি করবে, তাতে তারা যে ছাওয়াব পাবে, ওই প্রথম ব্যক্তিও তাদের সকলের সমপরিমাণ ছাওয়াবের অধিকারী হবে। যেমন রোগীর সেবাযত্ন করা অনেক বড় ছাওয়াবের কাজ। হাদীছে এ কাজের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এখন কেউ যদি রোগীর চিকিৎসা ও সেবাযত্নের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা চালু করে— যেমন হাসপাতাল করা, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনা করা, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা, এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা, গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য তহবিল গড়ে তোলা ইত্যাদি-তবে সে ব্যক্তি প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে নিজ কাজের ছাওয়াব তো পাবেই, সেইসঙ্গে পরে যে-কেউ এ কাজে শরীক হবে বা তার দেখাদেখি এ জাতীয় কাজের উদ্যোগ নেবে, তাদের সকলের সম্মিলিত ছাওয়াবের সমান ছাওয়াব তার আমলনামায়ও লেখা হবে।
মন্দ পন্থা বলতে এমন প্রথা ও কাজ বোঝানো উদ্দেশ্য, যার শর'ঈ কোনও ভিত্তি নেই এবং কুরআন-সুন্নাহ সেরকম কাজের উৎসাহ ও অনুমোদন দেয়নি। যদি কোনও ব্যক্তি এরকম কোনও প্রথা চালু করে, তবে প্রথম চালুকারী হিসেবে নিজ কাজের গুনাহ তো তার হবেই, সেইসঙ্গে তার দেখাদেখি যারাই সে কাজ করবে তাদের সকলের সম্মিলিত গুনাহ'র সমান গুনাহ তার আমলনামায় লেখা হবে। যেমন বিবাহে গায়ে হলুদের প্রথা, কবরে মোমবাতি জ্বালানোর রেওয়াজ, জন্মদিন ও মৃত দিবসের অনুষ্ঠান, বিবাহ বার্ষিকী পালন ইত্যাদি।
ভালো পন্থা চালুর প্রশংসা ও মন্দ প্রথা চালুর নিন্দা সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত আছে এবং আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীছও। ইমাম নববী রহ. সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ এ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এবার আমরা তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
ভালো ও মন্দ পন্থা চালু করার প্রতিদান
সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا (74)
অর্থ : এবং যারা (এই) বলে (দুআ করে যে), হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ হতে দান কর নয়নপ্রীতি এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানাও।সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৭৪
ব্যাখ্যা
এটি সূরা ফুরকানের শেষদিকের আয়াত, যে আয়াতগুলোতে দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। সেরকম একটি গুণ হচ্ছে এ আয়াতে বর্ণিত বিষয়ে আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা। এ আয়াতে মৌলিকভাবে দু'টি দু'আ করা হয়েছে। একটি দু'আ করা হয়েছে স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে এমন বানাও, যাতে তাদের দ্বারা আমাদের চোখ জুড়ায়। অর্থাৎ তাদেরকে তোমার অনুগত বানাও। নেককার স্বামীর কামনা থাকে- তার স্ত্রী আল্লাহ তা'আলার অনুগত থাকুক এবং শরী'আতের অনুসরণ করে চলুক। স্ত্রীকে সেরকম দেখতে পেলে সে খুশি হয়। এমনিভাবে নেককার পিতামাতা চায় তার সন্তান দীনের ওপর চলুক ও আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হয়ে উঠুক। তারা তাদের সন্তানকে সেরকম দেখতে পেলে আনন্দিত হয়।
এ আনন্দ পবিত্র, যেহেতু এর সম্পর্ক আল্লাহ তা'আলার তাবেদারীর সাথে। সে কারণে এ আনন্দ একটা নি'আমতও বটে। এটা যেমন দুনিয়ার এক নগদ লাভ, তেমনি আখিরাতেরও এক পরম প্রাপ্তি। কেননা বাবা-মায়ের পাশাপাশি সন্তান নেককার হলে তারা জান্নাতেও পাশাপাশি থাকতে পারবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
“যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।সূরা তূর (৫২), আয়াত ২১
স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য দু'আর বহুবিধ ফায়দা
প্রকাশ থাকে যে, দু'আ ও আমল পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। নেককার স্বামী ও নেককার পিতামাতা কেবল দু'আ করেই ক্ষান্ত হয় না, সেইসঙ্গে তাদেরকে দীনদাররূপে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। ফলে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি যা-কিছু নেক আমল করে, তাতে স্বামী ও পিতামাতাও ছাওয়াবের অংশীদার হয়। স্থায়ীভাবে সে ছাওয়াব তাদের আমলনামায় লেখা হতে থাকে। কাজেই তাদের জন্য দু'আ করার দ্বারা দু'আকারীর নিজেরও উপকার হয়।
এক তো দু'আ একটি ইবাদত। ফলে দু'আ করলে আমলনামায় ইবাদতের ছাওয়াব লেখা হয়।
দ্বিতীয়ত দু'আর পাশাপাশি যেহেতু চেষ্টাও করা হয়, তাই সে চেষ্টার জন্যও ছাওয়াব লেখা হয়।
তৃতীয়ত সে চেষ্টার বদৌলতে তারা যত আমল করবে তার জন্যও তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা হতে থাকে।
চতুর্থত তাদের সংশোধনের চেষ্টা করতে থাকলে নিজের সংশোধনের প্রতিও বিশেষ লক্ষ দেওয়া হয়। কেননা নিজেকে সংশোধন না করে অন্যের সংশোধনের চেষ্টা বিশেষ ফল দেয় না; বরং অনেক সময় তা হাসির খোরাক যোগায়। সুতরাং বুদ্ধিমান ব্যক্তি যখন অন্যকে নসীহত করবে, তখন স্বাভাবিকভাবে নিজে আমলের প্রতিও বিশেষ যত্নবান থাকবে।
এভাবে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির সংশোধন-চেষ্টার দ্বারা নিজ আমলেরও উন্নতি হয়। এতে করে তার আমলনামায় নেকি শুধু বাড়তেই থাকে। কাজেই স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য দু'আ করার দ্বারা যেমন তাদের উপকার হয়, তেমনি নিজেরও অনেক লাভ। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, কিয়ামতের দিন বান্দা তার আমলনামায় অনেক পুণ্য দেখে জিজ্ঞেস করবে, এসব পুণ্য আমি কিভাবে পেলাম? বলা হবে, তোমার সন্তানদের জন্য যে দু'আ করেছিলে—এসব তার ছাওয়াব।
এ আয়াতে যে দু'আর উল্লেখ আছে, তাতে স্ত্রীকে সন্তান-সন্তুতির আগে রাখা হয়েছে। কেননা স্ত্রী নেককার হলে তার গর্ভের সন্তানদের নেককার হওয়ার বেশি আশা থাকে। তার নেক আমলের আছর গর্ভস্থ সন্তানের ওপর পড়ে থাকে। তাছাড়া জন্মের পর সন্তানদের শৈশবকাল যেহেতু মায়ের কোলে কাটে, তাই এক তো কুদরতীভাবে মায়ের নেক আমল দ্বারা সন্তান প্রভাবিত হতে থাকবে। দ্বিতীয়ত মা নিজে নেককার হওয়ার কারণে কোলের সন্তানকেও সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। কাজেই যারা নেককার সন্তান কামনা করে, তাদের উচিত নিজ স্ত্রীর আমল-আখলাকের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া।
উল্লেখ্য, আরবীতে زوج শব্দটি স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। এর বহুবচন ازواج । এ আয়াতে বহুবচনে أزواج ই ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই এর দ্বারা স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থ নেওয়ারই অবকাশ আছে। যখন স্বামী এ দু'আটি করবে তখন এর দ্বারা স্ত্রীকে বোঝানো হবে যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার স্ত্রীকে তোমার আনুগত্য করার তাওফীক দিয়ে আমার জন্য নয়নপ্রীতিকর বানিয়ে দাও। আবার যখন স্ত্রী এ দু'আ করবে তখন এর দ্বারা তার স্বামীকে বোঝানো হবে। তখন অর্থ হবে- হে আল্লাহ! তুমি আমার স্বামীকে তোমার অনুগত বান্দা বানিয়ে আমার জন্য নয়নপ্রীতিকর করে দাও।
এ আয়াতের দ্বিতীয় দু'আ হচ্ছে আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দাও। অর্থাৎ ইবাদত-আনুগত্য ও আমল-আখলাকে আমাদেরকে এমন বানিয়ে দাও, যাতে মানুষ আমাদের অনুসরণ করে তোমার মুত্তাকী বান্দা হয়ে যেতে পারে।
সারকথা, আমরা নিজেরা মুত্তাকী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েই যেন ক্ষান্ত না থাকি; বরং অন্যদের তাকওয়া-পরহেযগারী ও হিদায়াতেও যেন ভূমিকা রাখতে পারি, যাতে আমাদের বংশধরগণসহ অপরাপর লোকজনও আমাদের দেখানো পথের অনুসরণ করে এবং হিদায়াতের পথে চলার ব্যাপারে আমরা তাদের ইমাম ও অনুসরণযোগ্য হয়ে থাকি।
বলাবাহুল্য দু'আর এ অংশটিও উপরের অংশের মত নিজের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। এর সুফল যেমন নিজ বংশধরগণ এবং দু'আর আওতাভুক্ত অন্যান্য লোকও পাবে, তেমনি পাবে দু'আকারী নিজেও। তার আমলনামায়ও স্থায়ীভাবে ছাওয়াব লেখা হতে থাকবে।
দুই নং আয়াত
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا
অর্থ : আমি তাদেরকে করেছিলাম নেতা, যারা আমার হুকুমে মানুষকে পথ দেখাত। সূরা আম্বিয়া (২১), আয়াত ৭৩
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে নেতা ও ইমামের কাজ বলা হয়েছে মানুষকে আল্লাহর পথ দেখানো। আল্লাহ তা'আলা বলছেন- আমি তাদেরকে বানালাম এমন ইমাম ও নেতা, যাদের কাজ হচ্ছে আমার হুকুম অনুযায়ী মানুষকে দীনের পথ দেখানো। তো নেতা যাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকবে এবং ইবাদত-আনুগত্য ও নেককাজের পথ দেখাবে, তারা আপন আমলের মাধ্যমে যে ছাওয়াব অর্জন করবে, তাদের সমপরিমাণ ছাওয়াব নেতার আমলনামায়ও লেখা হবে, তাতে তাদের ছাওয়াব কিছুমাত্র কমবে না।
আয়াতে নেতার কর্তব্য বলা হয়েছে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী পথ দেখানো। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যে কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে যে আদেশ-নিষেধ দিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষকে পরিচালনা করা। এর দ্বারা নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে কিছুটা অনুমান পাওয়া যায়। আজ যারা জনগণের নেতা তারা এ দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে কিংবা আদৌ পালন করছে কি?
দান-খয়রাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং সুন্নত ও বিদ‘আত প্রসঙ্গ
হাদীছ নং: ১৭১
হযরত আবূ আমর জারীর ইবন 'আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন একদল লোক তাঁর নিকট আসল, যাদের শরীর ছিল অনাবৃত। তারা চট অথবা ‘আবা' পরিহিত ছিল এবং গলায় তরবারি ঝুলানো ছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল মুদার গোত্রের লোক; বরং সবাই-ই মুদার গোত্রের লোক ছিল। তাদের দারিদ্র্যাবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি গৃহে প্রবেশ করলেন। তারপর বের হয়ে আসলেন এবং বিলাল রাযি.-কে আযান দিতে হুকুম করলেন। হযরত বিলাল রাযি. আযান ও ইকামত দিলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আদায় করে ভাষণ দিলেন। তিনি প্রথমে আয়াত পাঠ করলেন-
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (1)
'হে লোক সকল! নিজ প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি হতে এবং তারই থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয় থেকে বহু নর-নারী (পৃথিবীতে) ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার অছিলা দিয়ে তোমরা একে অন্যের কাছে (নিজেদের হক) চেয়ে থাক। এবং আত্মীয়দের (অধিকার খর্ব করা)-কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১
তারপর সূরা হাশরের শেষের দিকের এ আয়াতটি পড়লেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (18)
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা-কিছু কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি অবগত।সূরা হাশর (৫৯), আয়াত ১৮
তারপর বললেন, প্রত্যেক ব্যক্তি দান করুক তার দীনার থেকে, তার দিরহাম থেকে, তার কাপড় থেকে এবং তার গম ও খেজুর থেকে। এমনকি এ কথাও বললেন যে, এক টুকরো খেজুর হলেও যেন দান করে।
অতঃপর জনৈক আনসারী ব্যক্তি একটি থলি নিয়ে আসলেন। (তা এত ভারী ছিল যে, তা বহন করতে) তার হাত প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ছিল। বরং অক্ষম হয়েই পড়েছিল। তারপর লোকেরা একের পর এক দান করতে থাকল। এমনকি আমি কাপড় ও খাদ্যের দু'টি স্তুপ দেখতে পেলাম। আমি দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা ঝলমল করছে, যেন তাতে স্বর্ণের রং মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনও ভালো নিয়ম চালু করবে, সে ব্যক্তি তার ছাওয়াব পাবে এবং পরে যারা সে অনুযায়ী আমল করবে—তাদের সমপরিমাণ ছাওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের ছাওয়াব কিছুমাত্র কমবে না। পক্ষান্তরে ইসলামে যে ব্যক্তি কোনও মন্দ নিয়ম চালু করবে, তার ওপর তার বোঝা পড়বে এবং পরে যারা সে অনুযায়ী কাজ করবে, তাদের সকলের বোঝার সমপরিমাণও তার ওপর পড়বে, তাতে তাদের বোঝা কিছুমাত্র কমবে না. মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৭: আবূ দাউদ তয়ালিসী, হাদীছ নং ৭০৫। সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৩০৮, বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৪৮: তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ২৪৩; ইবনুল জা'দ, মুসনাদ, হাদীছ নং ৫১৬)
হাদীছ নং: ১৭১
হযরত আবূ আমর জারীর ইবন 'আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন একদল লোক তাঁর নিকট আসল, যাদের শরীর ছিল অনাবৃত। তারা চট অথবা ‘আবা' পরিহিত ছিল এবং গলায় তরবারি ঝুলানো ছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল মুদার গোত্রের লোক; বরং সবাই-ই মুদার গোত্রের লোক ছিল। তাদের দারিদ্র্যাবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি গৃহে প্রবেশ করলেন। তারপর বের হয়ে আসলেন এবং বিলাল রাযি.-কে আযান দিতে হুকুম করলেন। হযরত বিলাল রাযি. আযান ও ইকামত দিলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আদায় করে ভাষণ দিলেন। তিনি প্রথমে আয়াত পাঠ করলেন-
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (1)
'হে লোক সকল! নিজ প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি হতে এবং তারই থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয় থেকে বহু নর-নারী (পৃথিবীতে) ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার অছিলা দিয়ে তোমরা একে অন্যের কাছে (নিজেদের হক) চেয়ে থাক। এবং আত্মীয়দের (অধিকার খর্ব করা)-কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১
তারপর সূরা হাশরের শেষের দিকের এ আয়াতটি পড়লেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (18)
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা-কিছু কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি অবগত।সূরা হাশর (৫৯), আয়াত ১৮
তারপর বললেন, প্রত্যেক ব্যক্তি দান করুক তার দীনার থেকে, তার দিরহাম থেকে, তার কাপড় থেকে এবং তার গম ও খেজুর থেকে। এমনকি এ কথাও বললেন যে, এক টুকরো খেজুর হলেও যেন দান করে।
অতঃপর জনৈক আনসারী ব্যক্তি একটি থলি নিয়ে আসলেন। (তা এত ভারী ছিল যে, তা বহন করতে) তার হাত প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ছিল। বরং অক্ষম হয়েই পড়েছিল। তারপর লোকেরা একের পর এক দান করতে থাকল। এমনকি আমি কাপড় ও খাদ্যের দু'টি স্তুপ দেখতে পেলাম। আমি দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা ঝলমল করছে, যেন তাতে স্বর্ণের রং মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনও ভালো নিয়ম চালু করবে, সে ব্যক্তি তার ছাওয়াব পাবে এবং পরে যারা সে অনুযায়ী আমল করবে—তাদের সমপরিমাণ ছাওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের ছাওয়াব কিছুমাত্র কমবে না। পক্ষান্তরে ইসলামে যে ব্যক্তি কোনও মন্দ নিয়ম চালু করবে, তার ওপর তার বোঝা পড়বে এবং পরে যারা সে অনুযায়ী কাজ করবে, তাদের সকলের বোঝার সমপরিমাণও তার ওপর পড়বে, তাতে তাদের বোঝা কিছুমাত্র কমবে না. মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৭: আবূ দাউদ তয়ালিসী, হাদীছ নং ৭০৫। সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৩০৮, বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৪৮: তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ২৪৩; ইবনুল জা'দ, মুসনাদ, হাদীছ নং ৫১৬)
مقدمة الامام النووي
19 - باب فيمن سن سنة حسنة أَوْ سيئة
قَالَ الله تَعَالَى: {وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا} [الفرقان: 74]، وَقالَ تَعَالَى: {وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا} [الأنبياء: 73].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا} [الفرقان: 74]، وَقالَ تَعَالَى: {وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا} [الأنبياء: 73].
171 - عن أَبي عمرو جرير بن عبد الله - رضي الله عنه - قَالَ: كنا في صَدْرِ النَّهَارِ عِنْدَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فَجَاءهُ قَومٌ عُرَاةٌ مُجْتَابي النِّمَار أَوْ العَبَاء، مُتَقَلِّدِي السُّيُوف، عَامَّتُهُمْ من مُضر بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ، فَتَمَعَّرَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - لما رَأَى بِهِمْ مِنَ الفَاقَة (1)، فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ، فَأَمَرَ بِلالًا فَأَذَّنَ وَأَقَامَ، فصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ، فَقَالَ: «{يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ} إِلَى آخر الآية: {إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا} [النساء: 1]، والآية الأُخْرَى التي في آخر الحَشْرِ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ} [الحشر: 18] تَصَدَّقَ رَجُلٌ مِنْ دِينَارِهِ، مِنْ دِرهمِهِ، مِنْ ثَوبِهِ، مِنْ صَاعِ بُرِّهِ، مِنْ صَاعِ تَمْرِهِ - حَتَّى قَالَ - وَلَوْ بِشقِّ تَمرَةٍ» فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ بِصُرَّةٍ كَادَتْ كَفُّهُ تَعجَزُ عَنهَا، بَلْ قَدْ عَجَزَتْ، ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأيْتُ كَومَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ، حَتَّى رَأيْتُ وَجْهَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يَتَهَلَّلُ كَأنَّهُ مُذْهَبَةٌ. فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ سَنَّ في الإسلامِ سنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أجْرُهَا، وَأجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورهمْ شَيءٌ، وَمَنْ سَنَّ في الإسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيهِ وِزْرُهَا، وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أوْزَارِهمْ شَيءٌ» (2) رواه مسلم. (3) [ص:79]
قَولُهُ: «مُجْتَابِي النِّمَارِ» هُوَ بالجيم وبعد الألِف باءٌ مُوَحَّدَةٌ، والنِّمَارِ جَمْعُ نَمِرَةٍ وَهِيَ كِسَاءٌ مِنْ صُوفٍ مُخَطَّطٌ. وَمَعْنَى «مُجْتَابِيهَا»، أي: لاَبِسيهَا قَدْ خَرَقُوهَا في رُؤوسِهِم. وَ «الجَوْبُ» القَطْعُ، ومِنْهُ قَولُهُ تعالى: {وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ} [الفجر: 9] أي نَحتُوهُ وَقَطَعُوهُ. وَقَولُهُ: «تَمَعَّرَ» هُوَ بالعين المهملة: أيْ تَغَيَّرَ. وَقَولُهُ: «رَأَيْتُ كَوْمَينِ» بفتح الكافِ وَضَمِّهَا: أي صُبْرَتَيْنِ. وَقَولُهُ: «كَأَنَّهُ مُذْهَبَةٌ» هُوَ بالذال المُعْجَمَةِ وفتح الهاءِ والباءِ الموحَّدةِ قالَهُ القاضي عِيَاضٌ وَغَيرُهُ وَصَحَّفَهُ بَعْضُهُمْ، فَقَالَ: «مُدْهُنَةٌ» بدَال مهملة وَضَمِّ الهاءِ وبالنونِ وكذا ضبطه الحميدي (4). والصحيح المشهور هُوَ الأول. والمراد بهِ عَلَى الوجهين: الصفاءُ والاستنارة.
قَولُهُ: «مُجْتَابِي النِّمَارِ» هُوَ بالجيم وبعد الألِف باءٌ مُوَحَّدَةٌ، والنِّمَارِ جَمْعُ نَمِرَةٍ وَهِيَ كِسَاءٌ مِنْ صُوفٍ مُخَطَّطٌ. وَمَعْنَى «مُجْتَابِيهَا»، أي: لاَبِسيهَا قَدْ خَرَقُوهَا في رُؤوسِهِم. وَ «الجَوْبُ» القَطْعُ، ومِنْهُ قَولُهُ تعالى: {وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ} [الفجر: 9] أي نَحتُوهُ وَقَطَعُوهُ. وَقَولُهُ: «تَمَعَّرَ» هُوَ بالعين المهملة: أيْ تَغَيَّرَ. وَقَولُهُ: «رَأَيْتُ كَوْمَينِ» بفتح الكافِ وَضَمِّهَا: أي صُبْرَتَيْنِ. وَقَولُهُ: «كَأَنَّهُ مُذْهَبَةٌ» هُوَ بالذال المُعْجَمَةِ وفتح الهاءِ والباءِ الموحَّدةِ قالَهُ القاضي عِيَاضٌ وَغَيرُهُ وَصَحَّفَهُ بَعْضُهُمْ، فَقَالَ: «مُدْهُنَةٌ» بدَال مهملة وَضَمِّ الهاءِ وبالنونِ وكذا ضبطه الحميدي (4). والصحيح المشهور هُوَ الأول. والمراد بهِ عَلَى الوجهين: الصفاءُ والاستنارة.
হাদীস নং: ১৭২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ভালো ও মন্দ পন্থা চালু করার প্রতিদান।
সর্বপ্রথম নরহত্যাকারী কাবীলের পরিণাম
হাদীছ নং: ১৭২
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে-কোনও ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, তার রক্তপাতের গুনাহের একটা অংশ (হযরত) আদম (আলাইহিস সালাম)-এর প্রথম পুত্রের ওপরও পড়ে। কারণ সে-ই প্রথম ব্যক্তি, যে নরহত্যার সূচনা করেছিল. বুখারী ও মুসলিম। ("সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭৩২১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৬২৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৮৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৬১৬)
হাদীছ নং: ১৭২
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে-কোনও ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, তার রক্তপাতের গুনাহের একটা অংশ (হযরত) আদম (আলাইহিস সালাম)-এর প্রথম পুত্রের ওপরও পড়ে। কারণ সে-ই প্রথম ব্যক্তি, যে নরহত্যার সূচনা করেছিল. বুখারী ও মুসলিম। ("সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭৩২১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৬২৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৮৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৬১৬)
مقدمة الامام النووي
19 - باب فيمن سن سنة حسنة أَوْ سيئة
172 - وعن ابنِ مسعود - رضي الله عنه: أن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَيْسَ مِنْ نَفْس تُقْتَلُ ظُلْمًا إلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأوْلِ كِفْلٌ (1) مِنْ دَمِهَا، لأَنَّهُ كَانَ أوَّلَ مَنْ سَنَّ القَتلَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
হাদীস নং: ১৭৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা
আমাদের এ দীনে মানুষকে কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো ও সৎ পথের দিকে ডাকা অনেক বড় ফযীলতের কাজ। এতে রয়েছে প্রচুর ছাওয়াব। অপরদিকে যে কাজে মানুষের ক্ষতি হয় এবং মানুষ বিপথগামিতার শিকার হয়, সেরকম কাজের পথ দেখানো বা সেদিকে ডাকা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এর গুনাহও বিপুল।
বস্তুত সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষকে ভালো কাজের কথা বলা ও সৎ পথে ডাকা একটি নৈতিক কর্তব্যও বটে। কেননা কেউ যদি কোনও মন্দ কাজে লিপ্ত থাকে, তবে তাতে কেবল সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সমাজও দূষিত হয়। এর পরিণামে ন্যায়নিষ্ঠ ও সৎকর্মশীলরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি তাদের ন্যায় ও সৎকাজে টিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই অশুভ পরিণাম থেকে আত্মরক্ষা ও সমাজকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সৎকাজের পথ দেখানো ও সৎ পথের দিকে ডাকা।
সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার জন্য ব্যক্তিবর্গের অন্যায় ও অসৎকর্মই দায়ী।ব্যক্তিবর্গের সংশোধন হয়ে গেলে এবং প্রত্যেকে ন্যায় ও সৎকাজে লিপ্ত থাকলে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা আপনিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজেকে সংশোধন করার পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে ন্যায় ও সত্য বোঝানো এবং প্রত্যেকে যাতে ন্যায্য ও সঠিক কাজ করে সেই প্রচেষ্টা চালানো। যখনই কেউ কাউকে কোনও অন্যায় কাজে লিপ্ত দেখবে, সে তাকে তা থেকে ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। সে কাজে দীন ও দুনিয়ার কী ক্ষতি তাকে তা বোঝাবে। তার বিপরীতে সঠিক ও ন্যায় কাজের কী উপকারিতা তাও তার সামনে তুলে ধরবে। প্রত্যেকে যদি আপন আপন সাধ্য অনুযায়ী এ চেষ্টা চালাতে থাকে, তবে অবশ্যই অন্যায়-অপরাধের মাত্রা কমে আসবে।
সেইসঙ্গে সাধারণ দাওয়াতও অব্যাহত রাখা চাই। সাধারণভাবে সকলের মধ্যে সৎকাজের উপকারিতা ও অসৎকাজের ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা চলতে থাকলে একদিকে মানুষের অপরাধপ্রবণতা দুর্বল হয়ে পড়ে, অন্যদিকে সৎকাজের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়তে থাকে। এ প্রচেষ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে থাকলে একপর্যায়ে অন্যায়-অপরাধ নির্মূল হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ গড়ে উঠবেই ইনশাআল্লাহ। ইসলামের শুরুর দিকে এরকমই তো ছিল। কালক্রমে এ মেহনতে ক্রমাবনতি ঘটেছে এবং তারই অবধারিত পরিণাম হচ্ছে আজকের পাপ-পঙ্কিলতায় জর্জরিত সমাজ-বাস্তবতা। আগেই বলা হয়েছে এর থেকে মুক্তির একই পথ— মানুষকে সৎকাজের পথ দেখানো ও সর্বাত্মক দাওয়াতী মেহনত । কুরআন ও হাদীছে ব্যাপকভাবে এ মেহনতের জরুরতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং প্রত্যেকে যাতে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী এ মেহনত অব্যাহত রাখে তার জোর তাগিদ করা হয়েছে।
ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। এবার আমরা সেসব আয়াত ও হাদীছের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ
অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ
অর্থ : এবং তুমি নিজ প্রতিপালকের দিকে মানুষকে ডাকতে থাক। সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৮৭
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে আদেশ করেছেন যেন তিনি মানুষকে তাঁর প্রতিপালক আল্লাহর দিকে ডাকেন। তিনি তো ডাকতেনই। তারপরও এ নির্দেশ দেওয়ার অর্থ হচ্ছে ডাকার কাজ অব্যাহত রাখা। মূল হুকুমটি তাঁর প্রতি হলেও উম্মতের প্রত্যেকেই এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে এমন আরও হুকুম আছে, যা সরাসরি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর উম্মতের প্রত্যেকেই সে হুকুমের আওতাভুক্ত।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য- আপন আপন শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা এবং ডাকার মেহনত সর্বদা অব্যাহত রাখা। এমন নয় যে, দু'-চারবার ডেকেই ক্ষান্ত হয়ে গেলাম; বরং মৃত্যু পর্যন্ত যখনই এ কাজের অবকাশ হয় তখনই তা করে যেতে হবে।
আয়াতে বলা হয়েছে- ডাক তোমার প্রতিপালকের দিকে। সুতরাং যে ব্যক্তি দাওয়াতের মেহনত করবে, তার তা ভালোভাবে জেনেশুনেই করতে হবে। কেননা জানা যদি সঠিক না হয়, তবে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর দিকে ডাকতে গিয়ে ডাকা হয়ে যাবে অন্য কিছুর দিকে। আল্লাহর পথ তো একটিই, আর তা হচ্ছে দীনে ইসলাম। ইসলাম তা-ই, যা কুরআন-হাদীছ দ্বারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রমাণিত। যে বিষয়টি কুরআন-হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়, তা ইসলামও নয় এবং নয় আল্লাহর পথও। কাজেই কেউ যদি না জেনেশুনে মানুষকে কোনওকিছুর দিকে দাওয়াত দেয় তাহলে অসম্ভব নয় যে, তা আল্লাহর পথের দাওয়াত হবে না, ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
দুই নং আয়াত
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
অর্থ : তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে।সূরা নাহল (১৬), আয়াত ১২৫
ব্যাখ্যা
এখানে আয়াতে অংশবিশেষ আনা হয়েছে। এর পরে আছে-
وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ (125)
আর (যদি কখনও বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সাথে বিতর্ক করবে উৎকৃষ্ট পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞাত, যারা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত।'
দাওয়াতের তিনটি মূলনীতি
এ আয়াতে আল্লাহর পথে ডাকার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত
মূলনীতি হল তিনটি-
ক. হিকমত
খ. সদুপদেশ ও
গ. উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক।
হিকমতের মর্ম হল- সত্য-সঠিক বিষয়বস্তুকে অকাট্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে স্থান-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় রেখে উপস্থাপন করা। মূলত কুরআন মাজীদে এ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোথাও এর দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে, কোথাও হাদীছ বোঝানো হয়েছে, কোথাও বোঝানো হয়েছে অকাট্য দলীল-প্রমাণ। রূহুল মা'আনী গ্রন্থে 'আল-বাহরুল মুহীত' নামক গ্রন্থের বরাতে হিকমতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম-
إِنَّهَا الْكَلَامُ الصَّوَابُ الْوَاقِعُ مِنَ النَّفْسِ أَجْمَلَ مَوْقِع
হিকমত বলা হয় এমন সঠিক কথাকে, যা মানুষের অন্তরে চমৎকার রেখাপাত করে।' এ ব্যাখ্যাটি সুন্দর এবং ব্যাপক অর্থবোধক। উপরে বর্ণিত সবগুলো অর্থই এর মধ্যে এসে যায়। সারকথা হচ্ছে, আল্লাহর পথে ডাকতে হবে কুরআন দ্বারা, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ দ্বারা এবং অকাট্য দলীল-প্রমাণ দ্বারা। সেইসঙ্গে স্থান-কাল-পাত্রও বিবেচ্য। যাকে ডাকা হবে তার মর্যাদার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেখানে শক্ত কথা বলার প্রয়োজন সেখানে শক্ত কথা বলা এবং যেখানে নরম কথা বলা দরকার সেখানে নরম কথা বলাও দাওয়াত গ্রহণের পক্ষে ফলপ্রসূ। তাছাড়া যেখানে আড়ালে দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন সেখানে আড়ালে দেওয়া এবং যেখানে প্রকাশ্যে দেওয়া প্রয়োজন সেখানে প্রকাশ্যে দেওয়াও ফলপ্রসূ। এসবই হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
সদুপদেশের অর্থ- যাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তার ইজ্জত-সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে তার কল্যাণ কামনার্থে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ও নম্রতার সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা, যাতে তার মনে নম্রতা আসে এবং দাওয়াত গ্রহণের জন্য সে প্রস্তুত হয়ে যায়।
الموعظة (মাও‘ইযা) শব্দটির মূল অর্থের মধ্যে কল্যাণকামিতার একটি দিকও আছে।কাজেই উপদেশ এমনভাবে দেওয়া চাই, যাতে ব্যক্তি মনে করে উপদেশদাতা আমার পরম কল্যাণকামী। তার উপদেশ আমার গ্রহণ করা উচিত। সুতরাং এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করা বা এমন ভাব-ভঙ্গি অবলম্বন করা কিছুতেই উচিত হবে না, যা ব্যক্তিকে আহত করে বা সে নিজেকে অপমানিত বোধ করে। এতে নসীহত কেবল ব্যর্থই হয় না। বরং উল্টো ফল ফলে। যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় তারা সম্পূর্ণ বিগড়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য কারও উপদেশেও কর্ণপাত করতে চায় না। এজন্যই মাও‘ইযার সাথে "হাসানা' বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে। বোঝানো উদ্দেশ্য, নসীহত যেন অবশ্যই উত্তম পন্থায় হয় এবং যা-কিছু নসীহত গ্রহণের পক্ষে বাধা তা এড়িয়ে চলা হয়।
আর উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক করার অর্থ- সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিপক্ষকে তা বোঝানোর নিয়তে সত্যনিষ্ঠার সাথে ভদ্রোচিত ভাষায় যথোপযুক্ত যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করা, প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে বা জিদ সৃষ্টি হতে পারে—এ জাতীয় আচরণ পরিহার করা এবং সর্বাবস্থায় মাত্রাবোধ ও ন্যায়-ইনসাফের পরিচয় দেওয়া।
উদ্দেশ্য যখন মানুষের সামনে সত্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং তাদেরকে সত্যগ্রহণে উৎসাহিত করা, তখন বিতর্কের পন্থা অবশ্যই ন্যায়নিষ্ঠ হওয়া উচিত এবং হওয়া উচিত হৃদয়গ্রাহী। আল্লাহ তা'আলা তো হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মত জালীলুল কদর নবীকে ফির'আউনের মত মহাপাপিষ্ঠ ব্যক্তির সামনে নম্র পন্থায় দাওয়াত পেশের হুকুম দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44)
'তোমরা গিয়ে তার সাথে নম্র কথা বলবে। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা (আল্লাহকে) ভয় করবে। সূরা ত্বহা (২০), আয়াত ৪৪
এমনিভাবে আহলে কিতাবের সঙ্গে বিতর্ক করা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
"(হে মুসলিমগণ!) কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না উত্তম পন্থা ছাড়া। সূরা আনকাবুত (২৯), আয়াত ৪৬
দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে বিতর্কের উদ্দেশ্য কেবলই দীন ও শরী'আতের সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা, নিজ যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা নয়। তা জাহিরের চেষ্টা অহমিকার লক্ষণ ও সম্পূর্ণ নাজায়েয। নিজ শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের উদ্দেশ্যে দাওয়াতী মেহনত তো পরের কথা, 'ইলমে দীন শেখাই জায়েয নয়। এক হাদীছে ইরশাদ-
لاَ تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ الْعُلَمَاءَ، وَلاَ لِتُمَارُوا بِهِ السُّفَهَاءَ، وَلاَ تَخَيَّرُوا بِهِ الْمَجَالِسَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارُ النَّارُ
তোমরা এ উদ্দেশ্যে ইলম শিখবে না যে, এর মাধ্যমে উলামার সঙ্গে অহমিকা করে বেড়াবে বা অজ্ঞজনদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে কিংবা এর মাধ্যমে উৎকৃষ্ট আসনে সমাসীন হবে। এমনটা যে করবে তার জন্য জাহান্নাম জাহান্নাম। সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৫৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৭৭
মোটকথা, আল্লাহর পথে ডাকার জন্য দাঈকে কুরআন মাজীদে বর্ণিত এ তিনটি মূলনীতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। দাওয়াত দেওয়া একটি উচ্চস্তরের দীনী কাজ। যে-কোনও দীনী কাজ কুরআন-হাদীছে বর্ণিত পন্থায় করাই বাঞ্ছনীয়। সেভাবে করলেই কৃতকার্যতা লাভের আশা থাকে। অন্যথায় সব মেহনত বেকার হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে দা'ঈ হিসেবে কবুল করুন এবং তাঁর দেখানো পন্থায় দাওয়াতী মেহনতের তাওফীক দিন।
তিন নং আয়াত
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
অর্থ : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ২
ব্যাখ্যা
الْبِرِّ বলা হয় ওই সকল কাজ করাকে, শরী'আতের পক্ষ থেকে যা করতে আদেশ করা হয়েছে, যথা- নামায পড়া, যাকাত দেওয়া, রোযা রাখা, হজ্জ করা, পর্দা করা, হালাল খাওয়া, পিতামাতার হুকুম মানা, বড়কে সম্মান করা, ছোটকে স্নেহ করা, আলেমদের মর্যাদা দেওয়া ইত্যাদি। আর التَّقْوَى হল ওই সকল কাজ থেকে বিরত থাকা, যা করতে শরী'আতে নিষেধ করা হয়েছে, যেমন- জুয়া খেলা, মাদক সেবন করা, চুরি করা, সুদ-ঘুষ খাওয়া, জুলুম করা, অমুসলিমদের অনুকরণ করা, নাচ, গান ও অশ্লীল কাজ করা ইত্যাদি। শরী'আতের যাবতীয় বিষয় এর মধ্যে এসে গেছে। এতে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, আমরা যেন করণীয় ও বর্জনীয় যাবতীয় বিষয়ে একে অন্যকে সাহায্য করি। এ সাহায্য হয় দীনী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখার দ্বারা, বিশেষত মক্তব ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা, মক্তব ও মাদরাসায় শিক্ষকতা করা, দীনী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা ও দাওয়াতী মেহনত পরিচালনা করার দ্বারা। এমনিভাবে আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া এবং কারও আমলের পক্ষে যা-কিছু বাধা হয় তা অপসারণ করার দ্বারাও সৎকর্ম ও তাকওয়া অবলম্বনে সহযোগিতা করা হয়।
সমাজে এমন অনেক কিছুই চালু আছে, যার সংস্পর্শে এসে মানুষ সৎকর্মের উৎসাহ হারায় এবং অসৎকর্মে লিপ্ত হওয়ার উস্কানী পায়। সুতরাং সৎকর্ম ও তাকওয়া- পরহেযগারীতে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন মহলের কর্তব্য শরী'আতবিরোধী কর্মকাণ্ডের দুনিয়াবী ও পরকালীন ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং শরী আতবিরোধী কার্যকলাপের আখড়া ও কেন্দ্রসমূহ উৎখাতে নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা চালানো। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের দীনদারীতে পিতামাতাও বাধা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পিতামাতাকে বোঝানোর চেষ্টা করাও অবশ্যকর্তব্য।
যেহেতু এ আয়াতে সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সাহায্য করতে আদেশ করা হয়েছে, তাই আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য এটা অবশ্যকরণীয়।
চার নং আয়াত
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ
অর্থ : তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা চাই, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে ডাকবে।" সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১০৪
ব্যাখ্যা
এর আগের আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমগণকে আদেশ করেছিলেন- তারা যেন আল্লাহর রজ্জু তথা কুরআন মাজীদকে শক্ত করে ধরে রাখে এবং পরস্পর কলহ- বিবাদে লিপ্ত না হয়। তো আল্লাহর রশি মজবুত করে ধরে রাখা এবং পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এটা জরুরি যে, উম্মতের মধ্যে এমন একটা দল সবসময় থাকবে, যারা তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত ও আদেশ-উপদেশের মাধ্যমে এর প্রতি উৎসাহিত করবে। তারা এ কাজকে নিজেদের যিম্মাদারী হিসেবে গ্রহণ করবে আর সে হিসেবে নিজেদের কথা ও কাজ দ্বারা মানুষকে কুরআন-সুন্নাহ'র দিকে ডাকতে থাকবে। যখনই কাউকে গাফলাতি ও অসৎকর্মে লিপ্ত দেখতে পাবে, তখন সাধ্যমত তাদেরকে বোঝাবে এবং তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করবে।
বলাবাহুল্য, এ কাজ সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব, যারা কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে অভিজ্ঞ, কোনটা সৎকাজ এবং কোটা অসৎকাজ সে সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কেও সচেতন। এরকম যোগ্যতা যাদের মধ্যে নেই, তাদের ওপর যিম্মাদারী অর্পণ করা হলে কিংবা তারা নিজেরাই এ যিম্মাদারী গ্রহণ করে নিলে ভালোর পরিবর্তে মন্দ ফল দেখা দেওয়ার আশঙ্কাই বেশি। হয় তারা ভালো কাজকে মন্দ মনে করে মানুষকে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করবে অথবা মন্দ কাজকে ভালো মনে করে মানুষকে তা করতে উৎসাহ দেবে। কিংবা এমনও হতে পারে যে, নম্রতার স্থলে কঠোরতা বা কঠোরতার স্থলে নম্রতা অবলম্বন করবে। ফলে চেষ্টার কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না কিংবা উল্টো ফলও ফলতে পারে। সম্ভবত এ কারণেই আয়াতে সকলের প্রতি এ যিম্মাদারী অর্পণ না করে বিশেষ এক দলকে এর জন্য মনোনীত করা হয়েছে, যে দলটি এ কাজের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রাখে।
এ আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যারা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে ডাকে তারা উম্মতের শ্রেষ্ঠ লোক। এ কারণেই আলাদাভাবে তাদের উল্লেখ করা হয়েছে।
উম্মতের একটি দলকে এ কাজে নিয়োজিত থাকার তাগিদ করার দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকা চাই। অন্যথায় উম্মত তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যাবে। বর্তমানে আমরা ব্যাপকভাবেই এ অবস্থা লক্ষ করছি।
উম্মতের একটি দলকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের দায়িত্বে নিয়োজিত রাখার মূল দায়িত্ব সরকারের। সরকার এ দায়িত্ব পালন না করলে জনগণের উচিত হবে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে একটা জামাতকে এ কাজে নিয়োজিত রাখা। জনগণও যদি এ ব্যাপারে উদাসীন থাকে, তখন উলামা-মাশায়েখের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দায়িত্ব পালন করা উচিত। বলাবাহুল্য, তারা আপন আপন স্থান থেকে এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেনও। তবে তাদের সে চেষ্টার কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার জন্য জরুরি ছিল জনগণের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ও সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা। কিন্তু সে সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতার অভাব বড় প্রকট। বিষয়টি সকলের গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত।
আমাদের এ দীনে মানুষকে কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো ও সৎ পথের দিকে ডাকা অনেক বড় ফযীলতের কাজ। এতে রয়েছে প্রচুর ছাওয়াব। অপরদিকে যে কাজে মানুষের ক্ষতি হয় এবং মানুষ বিপথগামিতার শিকার হয়, সেরকম কাজের পথ দেখানো বা সেদিকে ডাকা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এর গুনাহও বিপুল।
বস্তুত সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষকে ভালো কাজের কথা বলা ও সৎ পথে ডাকা একটি নৈতিক কর্তব্যও বটে। কেননা কেউ যদি কোনও মন্দ কাজে লিপ্ত থাকে, তবে তাতে কেবল সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সমাজও দূষিত হয়। এর পরিণামে ন্যায়নিষ্ঠ ও সৎকর্মশীলরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি তাদের ন্যায় ও সৎকাজে টিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই অশুভ পরিণাম থেকে আত্মরক্ষা ও সমাজকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সৎকাজের পথ দেখানো ও সৎ পথের দিকে ডাকা।
সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার জন্য ব্যক্তিবর্গের অন্যায় ও অসৎকর্মই দায়ী।ব্যক্তিবর্গের সংশোধন হয়ে গেলে এবং প্রত্যেকে ন্যায় ও সৎকাজে লিপ্ত থাকলে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা আপনিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজেকে সংশোধন করার পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে ন্যায় ও সত্য বোঝানো এবং প্রত্যেকে যাতে ন্যায্য ও সঠিক কাজ করে সেই প্রচেষ্টা চালানো। যখনই কেউ কাউকে কোনও অন্যায় কাজে লিপ্ত দেখবে, সে তাকে তা থেকে ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। সে কাজে দীন ও দুনিয়ার কী ক্ষতি তাকে তা বোঝাবে। তার বিপরীতে সঠিক ও ন্যায় কাজের কী উপকারিতা তাও তার সামনে তুলে ধরবে। প্রত্যেকে যদি আপন আপন সাধ্য অনুযায়ী এ চেষ্টা চালাতে থাকে, তবে অবশ্যই অন্যায়-অপরাধের মাত্রা কমে আসবে।
সেইসঙ্গে সাধারণ দাওয়াতও অব্যাহত রাখা চাই। সাধারণভাবে সকলের মধ্যে সৎকাজের উপকারিতা ও অসৎকাজের ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা চলতে থাকলে একদিকে মানুষের অপরাধপ্রবণতা দুর্বল হয়ে পড়ে, অন্যদিকে সৎকাজের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়তে থাকে। এ প্রচেষ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে থাকলে একপর্যায়ে অন্যায়-অপরাধ নির্মূল হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ গড়ে উঠবেই ইনশাআল্লাহ। ইসলামের শুরুর দিকে এরকমই তো ছিল। কালক্রমে এ মেহনতে ক্রমাবনতি ঘটেছে এবং তারই অবধারিত পরিণাম হচ্ছে আজকের পাপ-পঙ্কিলতায় জর্জরিত সমাজ-বাস্তবতা। আগেই বলা হয়েছে এর থেকে মুক্তির একই পথ— মানুষকে সৎকাজের পথ দেখানো ও সর্বাত্মক দাওয়াতী মেহনত । কুরআন ও হাদীছে ব্যাপকভাবে এ মেহনতের জরুরতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং প্রত্যেকে যাতে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী এ মেহনত অব্যাহত রাখে তার জোর তাগিদ করা হয়েছে।
ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। এবার আমরা সেসব আয়াত ও হাদীছের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ
অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ
অর্থ : এবং তুমি নিজ প্রতিপালকের দিকে মানুষকে ডাকতে থাক। সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ৮৭
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে আদেশ করেছেন যেন তিনি মানুষকে তাঁর প্রতিপালক আল্লাহর দিকে ডাকেন। তিনি তো ডাকতেনই। তারপরও এ নির্দেশ দেওয়ার অর্থ হচ্ছে ডাকার কাজ অব্যাহত রাখা। মূল হুকুমটি তাঁর প্রতি হলেও উম্মতের প্রত্যেকেই এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে এমন আরও হুকুম আছে, যা সরাসরি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁর উম্মতের প্রত্যেকেই সে হুকুমের আওতাভুক্ত।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য- আপন আপন শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা এবং ডাকার মেহনত সর্বদা অব্যাহত রাখা। এমন নয় যে, দু'-চারবার ডেকেই ক্ষান্ত হয়ে গেলাম; বরং মৃত্যু পর্যন্ত যখনই এ কাজের অবকাশ হয় তখনই তা করে যেতে হবে।
আয়াতে বলা হয়েছে- ডাক তোমার প্রতিপালকের দিকে। সুতরাং যে ব্যক্তি দাওয়াতের মেহনত করবে, তার তা ভালোভাবে জেনেশুনেই করতে হবে। কেননা জানা যদি সঠিক না হয়, তবে অজ্ঞতাবশত আল্লাহর দিকে ডাকতে গিয়ে ডাকা হয়ে যাবে অন্য কিছুর দিকে। আল্লাহর পথ তো একটিই, আর তা হচ্ছে দীনে ইসলাম। ইসলাম তা-ই, যা কুরআন-হাদীছ দ্বারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রমাণিত। যে বিষয়টি কুরআন-হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়, তা ইসলামও নয় এবং নয় আল্লাহর পথও। কাজেই কেউ যদি না জেনেশুনে মানুষকে কোনওকিছুর দিকে দাওয়াত দেয় তাহলে অসম্ভব নয় যে, তা আল্লাহর পথের দাওয়াত হবে না, ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
দুই নং আয়াত
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
অর্থ : তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে।সূরা নাহল (১৬), আয়াত ১২৫
ব্যাখ্যা
এখানে আয়াতে অংশবিশেষ আনা হয়েছে। এর পরে আছে-
وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ (125)
আর (যদি কখনও বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সাথে বিতর্ক করবে উৎকৃষ্ট পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞাত, যারা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত।'
দাওয়াতের তিনটি মূলনীতি
এ আয়াতে আল্লাহর পথে ডাকার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত
মূলনীতি হল তিনটি-
ক. হিকমত
খ. সদুপদেশ ও
গ. উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক।
হিকমতের মর্ম হল- সত্য-সঠিক বিষয়বস্তুকে অকাট্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে স্থান-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় রেখে উপস্থাপন করা। মূলত কুরআন মাজীদে এ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোথাও এর দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে, কোথাও হাদীছ বোঝানো হয়েছে, কোথাও বোঝানো হয়েছে অকাট্য দলীল-প্রমাণ। রূহুল মা'আনী গ্রন্থে 'আল-বাহরুল মুহীত' নামক গ্রন্থের বরাতে হিকমতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম-
إِنَّهَا الْكَلَامُ الصَّوَابُ الْوَاقِعُ مِنَ النَّفْسِ أَجْمَلَ مَوْقِع
হিকমত বলা হয় এমন সঠিক কথাকে, যা মানুষের অন্তরে চমৎকার রেখাপাত করে।' এ ব্যাখ্যাটি সুন্দর এবং ব্যাপক অর্থবোধক। উপরে বর্ণিত সবগুলো অর্থই এর মধ্যে এসে যায়। সারকথা হচ্ছে, আল্লাহর পথে ডাকতে হবে কুরআন দ্বারা, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ দ্বারা এবং অকাট্য দলীল-প্রমাণ দ্বারা। সেইসঙ্গে স্থান-কাল-পাত্রও বিবেচ্য। যাকে ডাকা হবে তার মর্যাদার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেখানে শক্ত কথা বলার প্রয়োজন সেখানে শক্ত কথা বলা এবং যেখানে নরম কথা বলা দরকার সেখানে নরম কথা বলাও দাওয়াত গ্রহণের পক্ষে ফলপ্রসূ। তাছাড়া যেখানে আড়ালে দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন সেখানে আড়ালে দেওয়া এবং যেখানে প্রকাশ্যে দেওয়া প্রয়োজন সেখানে প্রকাশ্যে দেওয়াও ফলপ্রসূ। এসবই হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
সদুপদেশের অর্থ- যাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তার ইজ্জত-সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে তার কল্যাণ কামনার্থে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ও নম্রতার সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা, যাতে তার মনে নম্রতা আসে এবং দাওয়াত গ্রহণের জন্য সে প্রস্তুত হয়ে যায়।
الموعظة (মাও‘ইযা) শব্দটির মূল অর্থের মধ্যে কল্যাণকামিতার একটি দিকও আছে।কাজেই উপদেশ এমনভাবে দেওয়া চাই, যাতে ব্যক্তি মনে করে উপদেশদাতা আমার পরম কল্যাণকামী। তার উপদেশ আমার গ্রহণ করা উচিত। সুতরাং এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করা বা এমন ভাব-ভঙ্গি অবলম্বন করা কিছুতেই উচিত হবে না, যা ব্যক্তিকে আহত করে বা সে নিজেকে অপমানিত বোধ করে। এতে নসীহত কেবল ব্যর্থই হয় না। বরং উল্টো ফল ফলে। যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় তারা সম্পূর্ণ বিগড়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য কারও উপদেশেও কর্ণপাত করতে চায় না। এজন্যই মাও‘ইযার সাথে "হাসানা' বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে। বোঝানো উদ্দেশ্য, নসীহত যেন অবশ্যই উত্তম পন্থায় হয় এবং যা-কিছু নসীহত গ্রহণের পক্ষে বাধা তা এড়িয়ে চলা হয়।
আর উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক করার অর্থ- সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিপক্ষকে তা বোঝানোর নিয়তে সত্যনিষ্ঠার সাথে ভদ্রোচিত ভাষায় যথোপযুক্ত যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করা, প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে বা জিদ সৃষ্টি হতে পারে—এ জাতীয় আচরণ পরিহার করা এবং সর্বাবস্থায় মাত্রাবোধ ও ন্যায়-ইনসাফের পরিচয় দেওয়া।
উদ্দেশ্য যখন মানুষের সামনে সত্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং তাদেরকে সত্যগ্রহণে উৎসাহিত করা, তখন বিতর্কের পন্থা অবশ্যই ন্যায়নিষ্ঠ হওয়া উচিত এবং হওয়া উচিত হৃদয়গ্রাহী। আল্লাহ তা'আলা তো হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মত জালীলুল কদর নবীকে ফির'আউনের মত মহাপাপিষ্ঠ ব্যক্তির সামনে নম্র পন্থায় দাওয়াত পেশের হুকুম দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44)
'তোমরা গিয়ে তার সাথে নম্র কথা বলবে। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা (আল্লাহকে) ভয় করবে। সূরা ত্বহা (২০), আয়াত ৪৪
এমনিভাবে আহলে কিতাবের সঙ্গে বিতর্ক করা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
"(হে মুসলিমগণ!) কিতাবীদের সাথে বিতর্ক করবে না উত্তম পন্থা ছাড়া। সূরা আনকাবুত (২৯), আয়াত ৪৬
দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে বিতর্কের উদ্দেশ্য কেবলই দীন ও শরী'আতের সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা, নিজ যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা নয়। তা জাহিরের চেষ্টা অহমিকার লক্ষণ ও সম্পূর্ণ নাজায়েয। নিজ শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের উদ্দেশ্যে দাওয়াতী মেহনত তো পরের কথা, 'ইলমে দীন শেখাই জায়েয নয়। এক হাদীছে ইরশাদ-
لاَ تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ الْعُلَمَاءَ، وَلاَ لِتُمَارُوا بِهِ السُّفَهَاءَ، وَلاَ تَخَيَّرُوا بِهِ الْمَجَالِسَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارُ النَّارُ
তোমরা এ উদ্দেশ্যে ইলম শিখবে না যে, এর মাধ্যমে উলামার সঙ্গে অহমিকা করে বেড়াবে বা অজ্ঞজনদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে কিংবা এর মাধ্যমে উৎকৃষ্ট আসনে সমাসীন হবে। এমনটা যে করবে তার জন্য জাহান্নাম জাহান্নাম। সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৫৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৭৭
মোটকথা, আল্লাহর পথে ডাকার জন্য দাঈকে কুরআন মাজীদে বর্ণিত এ তিনটি মূলনীতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। দাওয়াত দেওয়া একটি উচ্চস্তরের দীনী কাজ। যে-কোনও দীনী কাজ কুরআন-হাদীছে বর্ণিত পন্থায় করাই বাঞ্ছনীয়। সেভাবে করলেই কৃতকার্যতা লাভের আশা থাকে। অন্যথায় সব মেহনত বেকার হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে দা'ঈ হিসেবে কবুল করুন এবং তাঁর দেখানো পন্থায় দাওয়াতী মেহনতের তাওফীক দিন।
তিন নং আয়াত
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
অর্থ : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ২
ব্যাখ্যা
الْبِرِّ বলা হয় ওই সকল কাজ করাকে, শরী'আতের পক্ষ থেকে যা করতে আদেশ করা হয়েছে, যথা- নামায পড়া, যাকাত দেওয়া, রোযা রাখা, হজ্জ করা, পর্দা করা, হালাল খাওয়া, পিতামাতার হুকুম মানা, বড়কে সম্মান করা, ছোটকে স্নেহ করা, আলেমদের মর্যাদা দেওয়া ইত্যাদি। আর التَّقْوَى হল ওই সকল কাজ থেকে বিরত থাকা, যা করতে শরী'আতে নিষেধ করা হয়েছে, যেমন- জুয়া খেলা, মাদক সেবন করা, চুরি করা, সুদ-ঘুষ খাওয়া, জুলুম করা, অমুসলিমদের অনুকরণ করা, নাচ, গান ও অশ্লীল কাজ করা ইত্যাদি। শরী'আতের যাবতীয় বিষয় এর মধ্যে এসে গেছে। এতে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, আমরা যেন করণীয় ও বর্জনীয় যাবতীয় বিষয়ে একে অন্যকে সাহায্য করি। এ সাহায্য হয় দীনী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখার দ্বারা, বিশেষত মক্তব ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা, মক্তব ও মাদরাসায় শিক্ষকতা করা, দীনী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা ও দাওয়াতী মেহনত পরিচালনা করার দ্বারা। এমনিভাবে আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া এবং কারও আমলের পক্ষে যা-কিছু বাধা হয় তা অপসারণ করার দ্বারাও সৎকর্ম ও তাকওয়া অবলম্বনে সহযোগিতা করা হয়।
সমাজে এমন অনেক কিছুই চালু আছে, যার সংস্পর্শে এসে মানুষ সৎকর্মের উৎসাহ হারায় এবং অসৎকর্মে লিপ্ত হওয়ার উস্কানী পায়। সুতরাং সৎকর্ম ও তাকওয়া- পরহেযগারীতে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন মহলের কর্তব্য শরী'আতবিরোধী কর্মকাণ্ডের দুনিয়াবী ও পরকালীন ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং শরী আতবিরোধী কার্যকলাপের আখড়া ও কেন্দ্রসমূহ উৎখাতে নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা চালানো। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের দীনদারীতে পিতামাতাও বাধা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পিতামাতাকে বোঝানোর চেষ্টা করাও অবশ্যকর্তব্য।
যেহেতু এ আয়াতে সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সাহায্য করতে আদেশ করা হয়েছে, তাই আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য এটা অবশ্যকরণীয়।
চার নং আয়াত
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ
অর্থ : তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা চাই, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে ডাকবে।" সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ১০৪
ব্যাখ্যা
এর আগের আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমগণকে আদেশ করেছিলেন- তারা যেন আল্লাহর রজ্জু তথা কুরআন মাজীদকে শক্ত করে ধরে রাখে এবং পরস্পর কলহ- বিবাদে লিপ্ত না হয়। তো আল্লাহর রশি মজবুত করে ধরে রাখা এবং পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এটা জরুরি যে, উম্মতের মধ্যে এমন একটা দল সবসময় থাকবে, যারা তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত ও আদেশ-উপদেশের মাধ্যমে এর প্রতি উৎসাহিত করবে। তারা এ কাজকে নিজেদের যিম্মাদারী হিসেবে গ্রহণ করবে আর সে হিসেবে নিজেদের কথা ও কাজ দ্বারা মানুষকে কুরআন-সুন্নাহ'র দিকে ডাকতে থাকবে। যখনই কাউকে গাফলাতি ও অসৎকর্মে লিপ্ত দেখতে পাবে, তখন সাধ্যমত তাদেরকে বোঝাবে এবং তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করবে।
বলাবাহুল্য, এ কাজ সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব, যারা কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে অভিজ্ঞ, কোনটা সৎকাজ এবং কোটা অসৎকাজ সে সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কেও সচেতন। এরকম যোগ্যতা যাদের মধ্যে নেই, তাদের ওপর যিম্মাদারী অর্পণ করা হলে কিংবা তারা নিজেরাই এ যিম্মাদারী গ্রহণ করে নিলে ভালোর পরিবর্তে মন্দ ফল দেখা দেওয়ার আশঙ্কাই বেশি। হয় তারা ভালো কাজকে মন্দ মনে করে মানুষকে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করবে অথবা মন্দ কাজকে ভালো মনে করে মানুষকে তা করতে উৎসাহ দেবে। কিংবা এমনও হতে পারে যে, নম্রতার স্থলে কঠোরতা বা কঠোরতার স্থলে নম্রতা অবলম্বন করবে। ফলে চেষ্টার কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না কিংবা উল্টো ফলও ফলতে পারে। সম্ভবত এ কারণেই আয়াতে সকলের প্রতি এ যিম্মাদারী অর্পণ না করে বিশেষ এক দলকে এর জন্য মনোনীত করা হয়েছে, যে দলটি এ কাজের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা রাখে।
এ আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যারা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে ডাকে তারা উম্মতের শ্রেষ্ঠ লোক। এ কারণেই আলাদাভাবে তাদের উল্লেখ করা হয়েছে।
উম্মতের একটি দলকে এ কাজে নিয়োজিত থাকার তাগিদ করার দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকা চাই। অন্যথায় উম্মত তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যাবে। বর্তমানে আমরা ব্যাপকভাবেই এ অবস্থা লক্ষ করছি।
উম্মতের একটি দলকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের দায়িত্বে নিয়োজিত রাখার মূল দায়িত্ব সরকারের। সরকার এ দায়িত্ব পালন না করলে জনগণের উচিত হবে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে একটা জামাতকে এ কাজে নিয়োজিত রাখা। জনগণও যদি এ ব্যাপারে উদাসীন থাকে, তখন উলামা-মাশায়েখের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দায়িত্ব পালন করা উচিত। বলাবাহুল্য, তারা আপন আপন স্থান থেকে এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেনও। তবে তাদের সে চেষ্টার কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার জন্য জরুরি ছিল জনগণের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ও সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা। কিন্তু সে সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতার অভাব বড় প্রকট। বিষয়টি সকলের গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত।
নেক কাজের পথ দেখানোর ফযীলত
হাদীছ নং: ১৭৩
হযরত আবূ মাস'উদ 'উকবা ইবন আমর আল-আনসারী আল-বাদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও ভালো কাজের পথ দেখায়, তার জন্য রয়েছে সেই ভালো কাজটি সম্পাদনকারীর মত ছাওয়াব - মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৫১২৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৪০)
হাদীছ নং: ১৭৩
হযরত আবূ মাস'উদ 'উকবা ইবন আমর আল-আনসারী আল-বাদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও ভালো কাজের পথ দেখায়, তার জন্য রয়েছে সেই ভালো কাজটি সম্পাদনকারীর মত ছাওয়াব - মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৭১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৫১২৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৪০)
مقدمة الامام النووي
20 - باب في الدلالة عَلَى خير والدعاء إِلَى هدى أَوْ ضلالة
قَالَ تَعَالَى: {وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ} [القصص: 87]، وَقالَ تَعَالَى: {ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَة} [النحل: 125]، وَقالَ تَعَالَى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى} [المائدة:2]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ} [آل عمران:104].
قَالَ تَعَالَى: {وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ} [القصص: 87]، وَقالَ تَعَالَى: {ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَة} [النحل: 125]، وَقالَ تَعَالَى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى} [المائدة:2]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ} [آل عمران:104].
173 - وعن أَبي مسعود عُقبةَ بنِ عمرو الأنصاري البدري - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ১৭৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা।
হিদায়াতের দিকে ডাকার ফযীলত ও গোমরাহীর পথে ডাকার পরিণাম
হাদীছ নং: ১৭৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও হিদায়াতের দিকে ডাকে, তার জন্য তার অনুসরণকারীদের সমান ছাওয়াব রয়েছে। এটা তাদের ছাওয়াব কোনও অংশে কমাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনও গোমরাহীর দিকে ডাকে, তার ওপর তার অনুসরণকারীদের সমান গুনাহ পড়বে। এটা তাদের গুনাহ কোনও অংশে কমাবে না- মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০৬; সুনানে আবূ দাউদ হাদীছ নং ৪৬০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৭৪)
হাদীছ নং: ১৭৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও হিদায়াতের দিকে ডাকে, তার জন্য তার অনুসরণকারীদের সমান ছাওয়াব রয়েছে। এটা তাদের ছাওয়াব কোনও অংশে কমাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনও গোমরাহীর দিকে ডাকে, তার ওপর তার অনুসরণকারীদের সমান গুনাহ পড়বে। এটা তাদের গুনাহ কোনও অংশে কমাবে না- মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০৬; সুনানে আবূ দাউদ হাদীছ নং ৪৬০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৭৪)
مقدمة الامام النووي
20 - باب في الدلالة عَلَى خير والدعاء إِلَى هدى أَوْ ضلالة
174 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئًا». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ১৭৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা।
জিহাদের আগে ইসলামের দাওয়াত প্রসঙ্গ এবং দাওয়াতের ফযীলত
হাদীছ নং: ১৭৫
হযরত আবুল আব্বাস ছাহল ইবন সা'দ আস-সাইদী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, নিশ্চয়ই আমি আগামীকাল পতাকা দেব এমন এক ব্যক্তিকে, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দেবেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। লোকেরা সে রাত কাটাল এই চিন্তা-ভাবনা ও আলাপ-আলোচনায় যে, কে সে ব্যক্তি, যাকে তা দেওয়া হবে। যখন ভোর হল লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেল এবং প্রত্যেকে আশা করল যে, তাকে তা দেওয়া হোক। (লোকজন একত্র হলে) তিনি বললেন, 'আলী ইবন আবী তালিব কোথায়? বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি চোখের রোগে ভুগছেন। তিনি বললেন, তার কাছে লোক পাঠাও। সুতরাং তাঁকে নিয়ে আসা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু'আ করলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন তাঁর কোনও রোগই ছিল না। তারপর তাঁকে পতাকা দিলেন। আলী রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকব যতক্ষণ না তারা আমাদের মত (মুসলিম) হয়ে যায়? তিনি বললেন, তুমি আপন গতিতে এগিয়ে যেতে থাক, যতক্ষণ না তাদের এলাকায় পৌঁছাও। তারপর তাদেরকে ইসলামের দিকে ডাকবে এবং ইসলাম গ্রহণ করলে তাদের ওপর আল্লাহ তা'আলার যে সকল হক আদায় করা অবশ্যকর্তব্য হয় সে সম্পর্কে তাদেরকে অবগত করবে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তোমার মাধ্যমে কোনও এক ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করলে তা তোমার জন্য একদল লাল উট অপেক্ষাও উত্তম -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩০০৯: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪০৬: সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৯৩২: বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৭)
হাদীছ নং: ১৭৫
হযরত আবুল আব্বাস ছাহল ইবন সা'দ আস-সাইদী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, নিশ্চয়ই আমি আগামীকাল পতাকা দেব এমন এক ব্যক্তিকে, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দেবেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। লোকেরা সে রাত কাটাল এই চিন্তা-ভাবনা ও আলাপ-আলোচনায় যে, কে সে ব্যক্তি, যাকে তা দেওয়া হবে। যখন ভোর হল লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেল এবং প্রত্যেকে আশা করল যে, তাকে তা দেওয়া হোক। (লোকজন একত্র হলে) তিনি বললেন, 'আলী ইবন আবী তালিব কোথায়? বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি চোখের রোগে ভুগছেন। তিনি বললেন, তার কাছে লোক পাঠাও। সুতরাং তাঁকে নিয়ে আসা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু'আ করলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন তাঁর কোনও রোগই ছিল না। তারপর তাঁকে পতাকা দিলেন। আলী রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকব যতক্ষণ না তারা আমাদের মত (মুসলিম) হয়ে যায়? তিনি বললেন, তুমি আপন গতিতে এগিয়ে যেতে থাক, যতক্ষণ না তাদের এলাকায় পৌঁছাও। তারপর তাদেরকে ইসলামের দিকে ডাকবে এবং ইসলাম গ্রহণ করলে তাদের ওপর আল্লাহ তা'আলার যে সকল হক আদায় করা অবশ্যকর্তব্য হয় সে সম্পর্কে তাদেরকে অবগত করবে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তোমার মাধ্যমে কোনও এক ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করলে তা তোমার জন্য একদল লাল উট অপেক্ষাও উত্তম -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩০০৯: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪০৬: সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৬৯৩২: বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৭)
مقدمة الامام النووي
20 - باب في الدلالة عَلَى خير والدعاء إِلَى هدى أَوْ ضلالة
175 - وعن أَبي العباس سهل بن سعد الساعدي - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ يوم خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رجلًا يَفْتَحُ الله عَلَى يَدَيهِ، يُحبُّ اللهَ وَرَسولَهُ، ويُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ»، فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أيُّهُمْ يُعْطَاهَا. فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا. فَقَالَ: «أينَ عَلِيُّ ابنُ أَبي طالب؟» فقيلَ: يَا رسولَ الله، هُوَ يَشْتَكي عَيْنَيهِ. قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْه» فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرِىءَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يكُن بِهِ وَجَعٌ، فأَعْطاهُ الرَّايَةَ. فقَالَ عَليٌّ - رضي الله عنه: يَا رَسُول اللهِ، أُقاتِلُهمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بسَاحَتهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإسْلاَمِ، وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ تَعَالَى فِيهِ، فَوَالله لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَم». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
قوله: «يَدُوكُونَ»: أي يَخُوضُونَ وَيَتَحَدَّثُونَ. وقوله: «رِسْلِكَ» بكسر الراءِ وبفتحها لغتانِ، والكسر أفصح.
قوله: «يَدُوكُونَ»: أي يَخُوضُونَ وَيَتَحَدَّثُونَ. وقوله: «رِسْلِكَ» بكسر الراءِ وبفتحها لغتانِ، والكسر أفصح.
হাদীস নং: ১৭৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা।
আসবাবপত্র দিয়ে জিহাদে গমনেচ্ছু ব্যক্তির সাহায্য করা
হাদীছ নং : ১৭৬
হযরত আনাস রাযি.থেকে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। কিন্তু আমার কাছে এমন কিছু নেই, যা দ্বারা প্রস্তুতি গ্রহণ করব। তিনি বললেন, তুমি অমুকের কাছে যাও। সে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল, কিন্তু তারপর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে তার কাছে গেল এবং বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে সালাম দিয়েছেন এবং তিনি বলছেন যে, তুমি (যুদ্ধে যাওয়ার জন্য) যা-কিছু যোগাড় করেছ তা আমাকে দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি (তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে) বলল, হে অমুক, আমি যা-কিছু সরঞ্জাম যোগাড় করেছিলাম তাকে তা দিয়ে দাও এবং তা থেকে কিছুই রেখে দিও না। আল্লাহর কসম! তা থেকে তুমি কিছু রেখে দিলে তাতে তোমাকে বরকত দেওয়া হবে না. মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৮০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৩১৮৩)
হাদীছ নং : ১৭৬
হযরত আনাস রাযি.থেকে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। কিন্তু আমার কাছে এমন কিছু নেই, যা দ্বারা প্রস্তুতি গ্রহণ করব। তিনি বললেন, তুমি অমুকের কাছে যাও। সে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল, কিন্তু তারপর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে তার কাছে গেল এবং বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে সালাম দিয়েছেন এবং তিনি বলছেন যে, তুমি (যুদ্ধে যাওয়ার জন্য) যা-কিছু যোগাড় করেছ তা আমাকে দিয়ে দাও। সে ব্যক্তি (তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে) বলল, হে অমুক, আমি যা-কিছু সরঞ্জাম যোগাড় করেছিলাম তাকে তা দিয়ে দাও এবং তা থেকে কিছুই রেখে দিও না। আল্লাহর কসম! তা থেকে তুমি কিছু রেখে দিলে তাতে তোমাকে বরকত দেওয়া হবে না. মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৮০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৩১৮৩)
مقدمة الامام النووي
20 - باب في الدلالة عَلَى خير والدعاء إِلَى هدى أَوْ ضلالة
176 - وعن أنس - رضي الله عنه: أن فتىً مِنْ أسلم، قَالَ: يَا رَسُول الله، إنِّي أُرِيدُ الغَزْوَ وَلَيْسَ معِي مَا أتَجَهَّز بِهِ، قَالَ: «ائتِ فُلاَنًا فإنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ» فَأتَاهُ، فَقَالَ: إنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يُقْرِئُكَ السَّلامَ، وَيَقُولُ: أعْطني الَّذِي تَجَهَّزْتَ بِهِ، فَقَالَ: يَا فُلاَنَةُ، أعْطِيهِ الَّذِي تَجَهَّزْتُ بِهِ، وَلا تَحْبِسي مِنْهُ شَيئًا، فَواللهِ لاَ تَحْبِسِين مِنْهُ شَيئًا فَيُبَاركَ لَكِ فِيهِ. رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ১৭৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হওয়ায় একে অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। অন্যের সাহায্য ছাড়া কারও পক্ষেই ইহজীবন যাপন করা সম্ভব নয়। তাই মানুষ প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য চায়। যার কাছে সাহায্য চায় সে নিজ চিন্তা-ভাবনা ও শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী কখনও তার সাহায্য করে আবার কখনও করে না। আবার তারও নিজ প্রয়োজনে অন্যের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাতে হয়। তার সে আবেদনও কখনও শোনা হয়, কখনও শোনা হয় না। আবার কখনও মানুষ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে।
এসকল ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। কারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচি-অভিরুচি বিচিত্র। তার মধ্যে সৎস্বভাব ও অসৎস্বভাব দুই-ই আছে। কখনও মন্দ স্বভাবে তাড়িত হয়ে এমন কাজ করতে চায়, যা তার নিজের জন্যও ক্ষতিকর এবং অন্যের জন্যও ক্ষতিকর। কখনও সে ক্ষতি নিজে বুঝতে পারে, আবার কখনও পারেও না। তা সত্ত্বেও সে কাজটি সম্পন্ন করতে চায় এবং তা করার জন্য অন্যের সাহায্যপ্রার্থী হয়। যার কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়, একইরকম ভালোমন্দ স্বভাব তার মধ্যেও আছে। সে যদি আপন স্বভাবের তাড়নায় তার সাহায্য করে বসে আর এভাবে কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়, তবে সে কাজটির কর্তা সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার হয়ে যায়। ক্ষতির শিকার হয় অন্যরাও। যে ব্যক্তি সাহায্য করল, এ ক্ষতির দায় তার ওপরও বর্তায়, যেহেতু তার সাহায্যেই কাজটি সম্পন্ন হতে পেরেছে।
আবার অনেক সময় মানুষের মধ্যে কোনও ভালো কাজের ইচ্ছা জাগে, কিন্তু কাজটি সম্পন্ন করার ক্ষমতা তার থাকে না। এ অবস্থায় সে যদি কারও কাছে সাহায্য চায় আর সে তাকে সাহায্য করে, তবে তো কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে সে সাহায্যের হাত না বাড়ালে কাজটি সম্পন্ন হতে পারে না। এভাবে একটি নেককাজের সদিচ্ছা অন্যের সাহায্যের অভাবে অপূর্ণ থেকে যায়।
তো দেখা যাচ্ছে যেমন সদিচ্ছা পূরণের জন্য অন্যের সাহায্য প্রয়োজন, তেমনি অন্যের অসদিচ্ছা যাতে পূরণ না হতে পারে সেজন্য তার সাহায্য করা হতে বিরত থাকা জরুরি। কিন্তু কোন্টা সৎ কোন্টা অসৎ তা স্পষ্ট না থাকলে সাহায্য করা বা না করার ক্ষেত্রে মানুষের বিভ্রান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তা স্পষ্ট করবে কে? মানুষ নিজে যেহেতু ভালোমন্দ উভয় স্বভাব ধারণ করে, তাই তার পক্ষে সৎ ও অসৎ নির্ণয় করে দেওয়া সম্ভব নয় । এটা নির্ণয় করা সম্ভব কেবল মানুষের সৃষ্টিকর্তার পক্ষে। সুতরাং তিনি তা করেও দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে পারস্পরিক
সাহায্য-সহযোগিতা সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
অর্থ : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে।সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ২
ব্যাখ্যা
الْبِرِّ বলা হয় ওই সকল কাজকে, শরী'আতের পক্ষ থেকে যা করতে আদেশ করা হয়েছে। আর التَّقْوَى হল ওই সকল কাজ থেকে বিরত থাকা, যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। শরী'আতের যাবতীয় বিষয় এর মধ্যে এসে গেছে। এতে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, আমরা যেন করণীয় ও বর্জনীয় যাবতীয় বিষয়ে একে অন্যকে সাহায্য করি। অর্থাৎ বান্দার কর্তব্য কেবল সে কাজই করা, যা করার অনুমতি শরী'আতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এমনিভাবে বান্দার কর্তব্য ওই সকল কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকা, যা করতে শরী'আত তাকে নিষেধ করেছে। আর এভাবে প্রত্যেকে যাতে করণীয় কাজ সম্পাদন করতে ও বর্জনীয় কাজ পরিহার করতে সক্ষম হয়, সেজন্য অন্যদের কর্তব্য তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। এ সাহায্য হয় শিক্ষাদান দ্বারা। অর্থাৎ কোন কাজ শরী'আতে অনুমোদিত এবং কোন্ কাজ অনুমোদিত নয় তা শেখানো। এমনিভাবে সাহায্য করা যায় নেক আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার দ্বারা এবং মন্দ আমলের দুনিয়াবী ও পরকালীন ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করার দ্বারা। কারও আমলের পক্ষে যা-কিছু বাধা হয় তা অপসারণ দ্বারাও অন্যের সাহায্য করা যায়।
এ আয়াতে একে অন্যকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে কেবল নেককাজ ও তাকওয়া- পরহেযগারীতে। সুতরাং নির্দেশনা পাওয়া গেল যে, কোনও কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য কেবল তখনই করা যাবে, যখন সে কাজটি শরী'আত মোতাবেক হবে। যদি তা শরী'আত মোতাবেক না হয় তবে কোনও অবস্থাতেই সে কাজে সাহায্য করা যাবে না, তাতে সাহায্যপ্রার্থী যত আপন লোকই হোক না কেন। এমনিভাবে শরী'আতবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকাও যেহেতু একটি নেককাজ ও পরহেযগারী, তাই তা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও অন্যের সাহায্য করাও এ আয়াতের দাবি।
যেহেতু এ আয়াতে নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে একে অন্যকে সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই আপন আপন শক্তি ও ক্ষমতা অনুযায়ী এটা করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্যকর্তব্য।
দুই নং আয়াত
وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)
অর্থ : কালের শপথ! বস্তুত মানুষ অতি ক্ষতির মধ্যে আছে। তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দেয় ও একে অন্যকে সবরের উপদেশ দেয়। সূরা 'আসর (১০৩), আয়াত ১-৩
ব্যাখ্যা
এ সূরায় কালের শপথ করে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। কালের শপথ দ্বারা কালের গুরুত্ব ও মূল্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কালই মানবজীবনের মূল পুঁজি। মানুষ মহাকালের সুনির্দিষ্ট একটা সময় নিয়ে পৃথিবীতে আসে। প্রত্যেকের আয়ু নির্ধারিত। তার সে নির্ধারিত আয়ু শেষ হলে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় হবে, তার একমুহূর্ত আগেও নয় পরেও নয়। মৃত্যুর পর কবরের জীবন, তারপর হাশরের ময়দান, তারপর জান্নাত বা জাহান্নাম, সবকিছুর ফয়সালা নির্ভর করে দুনিয়ার নির্দিষ্ট আয়ু ব্যবহারের ওপর। যে ব্যক্তি তার জীবনের আয়ু ভালো কাজে ব্যবহার করবে, তার ফয়সালা হবে সন্তোষজনক। সে কবরে শান্তি পাবে, হাশরে নিরাপদ থাকবে, তারপর জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতবাসী হবে। এটাই মানবজীবনের পরম সফলতা। ইরশাদ হয়েছে-
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ (185)
অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে। আর (জান্নাতের বিপরীতে) পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১৮৫
ব্যক্তি তার আয়ুষ্কালকে ভালো কাজে ব্যবহার করলে তার ব্যক্তিগত জীবন সফল হয়। যদি সমাজ ও সমষ্টি তাদের জীবনায়ু ভালো কাজে ব্যবহার করে, তবে সমষ্টির জীবন সফল হয়। জাতীয় জীবনের উন্নতি-অগ্রগতি সময়ের সদ্ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাস এবং ইতিহাসের যত উত্থান-পতন তা সময়ের সদ্ব্যবহার বা অসদ্ব্যবহারেরই অনিবার্য ফল মাত্র। সুতরাং সময়ের ব্যবহারে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সমষ্টিগত সচেতনতাও অতীব জরুরি। 'কালের শপথ' সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কালের শপথ করার পর বলা হয়েছে, সমস্ত মানুষ ক্ষতি ও লোকসানের মধ্যে আছে। এর দ্বারা মানুষকে একজন ব্যবসায়ী এবং তার আয়ুকে মূলধনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ে মূলধন খাটায় মুনাফার আশায়। মুনাফা না হওয়াই লোকসান। তাতে করে ক্রমান্বয়ে মূলধন হ্রাস পেতে থাকে। একপর্যায়ে সে চরম লোকসানের শিকার হয় এবং তার মূলধন শেষ হয়ে যায়। অনুরূপ মানুষের আয়ু তার ছাওয়াব ও পুণ্য লাভের মূলধন। সে যদি তার মুহূর্তগুলোকে পুণ্যার্জনে ব্যয় না করে, তবে লোকসান বাড়তেই থাকে। কেননা আয়ু দমে দমে কমতে থাকে। একপর্যায়ে গোটা আয়ু নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু আমলনামায় পুণ্য জমা থাকে না। মানুষের জন্য এরচে' বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে? অধিকাংশ মানুষ চরম উদাসীনতার ভেতর জীবন কাটায়। দুনিয়ার ভোগ-উপভোগে মত্ত থেকে তার পরমায়ু বরবাদ করে দেয়। পরিশেষে যখন মৃত্যু হানা দেয় তখন আক্ষেপ করে বলতে থাকে, আমাকে একটুখানি সময় দেওয়া হোক। আমি নিজেকে সংশোধন করে ফেলব। কিন্তু ওই আক্ষেপ কোনও কাজের নয়। প্রত্যেকের উচিত সেই দিন আসার আগে আগে এখনই সময়ের সদ্ব্যবহার করা এবং এ মহামূল্যবান পুঁজির বিনিময়ে যতবেশি সম্ভব পুণ্যের মুনাফা অর্জন করে নেওয়া।
এ আয়াতে সকল মানুষকেই লোকসানগ্রস্ত বলা হয়েছে। অতঃপর এমন কয়েকটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুণগুলো যাদের অর্জন হয়ে যায় তারা ব্যতিক্রম মানুষ। অর্থাৎ তারা লোকসানগ্রস্ত নয়। গুণগুলো হচ্ছে যথাক্রমে- ঈমান আমলে সালিহ, পারস্পরিক সত্যের উপদেশ ও ধৈর্যের উপদেশ।
ঈমান দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর একত্বে বিশ্বাস, আখিরাতে বিশ্বাস ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসসহ এমন যাবতীয় বিষয় মেনে নেওয়া, যা আখিরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে এই বিশ্বাস রাখা যে, কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি তাঁর নিয়ে আসা দীনের অনুসরণের মধ্যেই নিহিত। এর কোনও বিকল্প নেই, যেহেতু তিনি সর্বশেষ নবী, তাঁর পর আর কোনও নবীও নেই, কোনও কিতাবও নেই।
এই ঈমান ও বিশ্বাসের দাবি হচ্ছে আমলে সালিহে লিপ্ত থাকা। অর্থাৎ বিশ্বাসকে কেবল অন্তরের মধ্যে লালন করে রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং তাকে কার্যে পরিণত করতে হবে। ব্যক্তির যাবতীয় কাজকর্ম ওই বিশ্বাসের আলোকে সম্পাদিত হতে হবে। শরী'আত হচ্ছে তার রূপরেখা। শরী'আতে যে কাজ অনুমোদিত তা করা এবং যা অনুমোদিত নয় তা থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে আমলে সালিহ বা সৎকর্ম। জীবনকে লোকসান থেকে বাঁচানোর দ্বিতীয় শর্ত এই আমলে সালিহে লিপ্ত থাকা।
তৃতীয় গুণ হল সত্যের উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ কেবল ব্যক্তিগত সৎকর্মে সন্তুষ্ট থাকাই যথেষ্ট নয়; বরং অন্যকে লোকসান থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করাও জরুরি। প্রত্যেককেই নিজ দীনদারী হেফাজতের পাশাপাশি লক্ষ রাখতে হবে তার আওতাভুক্ত কেউ সত্যদীন থেকে কোনওভাবে বিচ্যুত হচ্ছে কি না। যদি বিচ্যুত হয়ে থাকে তবে তার সংশোধনে সচেষ্ট থাকতে হবে। সর্বদা নিজ আওতাভুক্ত প্রত্যেকের জন্য সদুপোদেশ জারি রাখতে হবে, যাতে তারা সত্যদীনে প্রতিষ্ঠিত থাকে।
লোকসান থেকে বাঁচার জন্য চতুর্থ অপরিহার্য গুণ হচ্ছে একে অন্যকে উপদেশ দেওয়া, যাতে সর্বাবস্থায় সবর ও ধৈর্য রক্ষা করে চলে। ধৈর্য রক্ষা করতে হবে যেমন শরী'আতের যাবতীয় আদেশ মেনে চলার ব্যাপারে, তেমনি শরী'আত যা-কিছু নিষিদ্ধ করেছে তা থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারেও। এমনিভাবে ধৈর্য রক্ষা করতে হবে আপতিত সকল বিপদাপদেও।
প্রকাশ থাকে যে, হক ও সবরের উপদেশদান যেমন কোনও মওসুমী কাজ নয় তেমনি নয় এটা ব্যক্তি বা দলবিশেষের দায়িত্বও। বরং এটা প্রত্যেক মুমিনের সবসময়কার যিম্মাদারী। অর্থাৎ যখনই যার সামনে কারো দ্বারা হক ও সবর পরিপন্থি কিছু ঘটবে তখনই সে তাকে হকের দিকে ফিরে আসার ও সবর অবলম্বনের উপদেশ দেবে। স্বামী তার স্ত্রীকে, স্ত্রী তার স্বামীকে, পিতা তার সন্তানকে, ভাই তার ভাইকে, এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীকে, এক বন্ধু অপর বন্ধুকে, এক পথিক অপর পথিককে, মোটকথা প্রতি দুইজনের একজন অপরজনকে যখনই পরিস্থিতি দেখা দেয় তখনই এ উপদেশ প্রদান করবে। এমনকি পরিস্থিতি ছাড়াও স্বাভাবিক অবস্থায়ও পারস্পরিক উপদেশদান অব্যাহত রাখা চাই। এ সূরা আমাদেরকে ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য এ ব্যবস্থাই অবলম্বন করতে বলেছে।
মোটকথা, যে ব্যক্তি এ সূরায় বর্ণিত চারটি গুণ অর্জন করতে সক্ষম হবে সে লোকসান থেকে বেঁচে যাবে। কেননা এর মাধ্যামে তার জীবনের মুহূর্তগুলো নেককাজে ব্যয় হবে। প্রতি মুহূর্তের বিনিময়ে তার আমলনামায় নেকী লেখা হতে থাকবে। ফলে তার পরমায়ু নিঃশেষ হবে বটে, কিন্তু সে একরকম অমরত্ব লাভ করবে। কেননা পারস্পরিক সত্য ও সবরের উপদেশদানের মাধ্যমে তার দ্বারা যে নেক আমলের প্রবাহ চালু হবে তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ফলে মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় নেকী লেখা জারি থাকবে। অসম্ভব নয় যে, দুনিয়ায় ও কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে তার সুনাম-সুখ্যাতির চর্চা অব্যাহত থাকবে। এমন কত শত মানুষ আছে, যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন কিন্তু মানুষ তাদের ভোলেনি। সত্য ও সবরের পথে মানুষকে প্রতিষ্ঠিত রাখার বহুমুখী মেহনতের কারণে তারা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
এটি অতি ছোট্ট একটি সূরা, কিন্তু বিপুল তাৎপর্যে ভরা। এ যেন সমগ্র দীনের সারকথা। তাই তো ইমাম শাফি'ঈ রহ. বলেন, যদি এই একটি মাত্র সূরাই নাযিল করা হত, তবে (সমঝদার ব্যক্তিদের জন্য) হিদায়াত হিসেবে যথেষ্ট হত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ সূরাটির ব্যাপারে উদাসীন। তারা এর বিষয়বস্তুর মধ্যে চিন্তা করে না।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হওয়ায় একে অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। অন্যের সাহায্য ছাড়া কারও পক্ষেই ইহজীবন যাপন করা সম্ভব নয়। তাই মানুষ প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য চায়। যার কাছে সাহায্য চায় সে নিজ চিন্তা-ভাবনা ও শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী কখনও তার সাহায্য করে আবার কখনও করে না। আবার তারও নিজ প্রয়োজনে অন্যের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাতে হয়। তার সে আবেদনও কখনও শোনা হয়, কখনও শোনা হয় না। আবার কখনও মানুষ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে।
এসকল ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। কারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচি-অভিরুচি বিচিত্র। তার মধ্যে সৎস্বভাব ও অসৎস্বভাব দুই-ই আছে। কখনও মন্দ স্বভাবে তাড়িত হয়ে এমন কাজ করতে চায়, যা তার নিজের জন্যও ক্ষতিকর এবং অন্যের জন্যও ক্ষতিকর। কখনও সে ক্ষতি নিজে বুঝতে পারে, আবার কখনও পারেও না। তা সত্ত্বেও সে কাজটি সম্পন্ন করতে চায় এবং তা করার জন্য অন্যের সাহায্যপ্রার্থী হয়। যার কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়, একইরকম ভালোমন্দ স্বভাব তার মধ্যেও আছে। সে যদি আপন স্বভাবের তাড়নায় তার সাহায্য করে বসে আর এভাবে কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়, তবে সে কাজটির কর্তা সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার হয়ে যায়। ক্ষতির শিকার হয় অন্যরাও। যে ব্যক্তি সাহায্য করল, এ ক্ষতির দায় তার ওপরও বর্তায়, যেহেতু তার সাহায্যেই কাজটি সম্পন্ন হতে পেরেছে।
আবার অনেক সময় মানুষের মধ্যে কোনও ভালো কাজের ইচ্ছা জাগে, কিন্তু কাজটি সম্পন্ন করার ক্ষমতা তার থাকে না। এ অবস্থায় সে যদি কারও কাছে সাহায্য চায় আর সে তাকে সাহায্য করে, তবে তো কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে সে সাহায্যের হাত না বাড়ালে কাজটি সম্পন্ন হতে পারে না। এভাবে একটি নেককাজের সদিচ্ছা অন্যের সাহায্যের অভাবে অপূর্ণ থেকে যায়।
তো দেখা যাচ্ছে যেমন সদিচ্ছা পূরণের জন্য অন্যের সাহায্য প্রয়োজন, তেমনি অন্যের অসদিচ্ছা যাতে পূরণ না হতে পারে সেজন্য তার সাহায্য করা হতে বিরত থাকা জরুরি। কিন্তু কোন্টা সৎ কোন্টা অসৎ তা স্পষ্ট না থাকলে সাহায্য করা বা না করার ক্ষেত্রে মানুষের বিভ্রান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তা স্পষ্ট করবে কে? মানুষ নিজে যেহেতু ভালোমন্দ উভয় স্বভাব ধারণ করে, তাই তার পক্ষে সৎ ও অসৎ নির্ণয় করে দেওয়া সম্ভব নয় । এটা নির্ণয় করা সম্ভব কেবল মানুষের সৃষ্টিকর্তার পক্ষে। সুতরাং তিনি তা করেও দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে পারস্পরিক
সাহায্য-সহযোগিতা সম্পর্কিত কিছু আয়াত
এক নং আয়াত
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
অর্থ : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে।সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ২
ব্যাখ্যা
الْبِرِّ বলা হয় ওই সকল কাজকে, শরী'আতের পক্ষ থেকে যা করতে আদেশ করা হয়েছে। আর التَّقْوَى হল ওই সকল কাজ থেকে বিরত থাকা, যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। শরী'আতের যাবতীয় বিষয় এর মধ্যে এসে গেছে। এতে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, আমরা যেন করণীয় ও বর্জনীয় যাবতীয় বিষয়ে একে অন্যকে সাহায্য করি। অর্থাৎ বান্দার কর্তব্য কেবল সে কাজই করা, যা করার অনুমতি শরী'আতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এমনিভাবে বান্দার কর্তব্য ওই সকল কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকা, যা করতে শরী'আত তাকে নিষেধ করেছে। আর এভাবে প্রত্যেকে যাতে করণীয় কাজ সম্পাদন করতে ও বর্জনীয় কাজ পরিহার করতে সক্ষম হয়, সেজন্য অন্যদের কর্তব্য তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। এ সাহায্য হয় শিক্ষাদান দ্বারা। অর্থাৎ কোন কাজ শরী'আতে অনুমোদিত এবং কোন্ কাজ অনুমোদিত নয় তা শেখানো। এমনিভাবে সাহায্য করা যায় নেক আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়ার দ্বারা এবং মন্দ আমলের দুনিয়াবী ও পরকালীন ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করার দ্বারা। কারও আমলের পক্ষে যা-কিছু বাধা হয় তা অপসারণ দ্বারাও অন্যের সাহায্য করা যায়।
এ আয়াতে একে অন্যকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে কেবল নেককাজ ও তাকওয়া- পরহেযগারীতে। সুতরাং নির্দেশনা পাওয়া গেল যে, কোনও কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য কেবল তখনই করা যাবে, যখন সে কাজটি শরী'আত মোতাবেক হবে। যদি তা শরী'আত মোতাবেক না হয় তবে কোনও অবস্থাতেই সে কাজে সাহায্য করা যাবে না, তাতে সাহায্যপ্রার্থী যত আপন লোকই হোক না কেন। এমনিভাবে শরী'আতবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকাও যেহেতু একটি নেককাজ ও পরহেযগারী, তাই তা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও অন্যের সাহায্য করাও এ আয়াতের দাবি।
যেহেতু এ আয়াতে নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে একে অন্যকে সাহায্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই আপন আপন শক্তি ও ক্ষমতা অনুযায়ী এটা করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্যকর্তব্য।
দুই নং আয়াত
وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)
অর্থ : কালের শপথ! বস্তুত মানুষ অতি ক্ষতির মধ্যে আছে। তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং একে অন্যকে সত্যের উপদেশ দেয় ও একে অন্যকে সবরের উপদেশ দেয়। সূরা 'আসর (১০৩), আয়াত ১-৩
ব্যাখ্যা
এ সূরায় কালের শপথ করে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। কালের শপথ দ্বারা কালের গুরুত্ব ও মূল্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কালই মানবজীবনের মূল পুঁজি। মানুষ মহাকালের সুনির্দিষ্ট একটা সময় নিয়ে পৃথিবীতে আসে। প্রত্যেকের আয়ু নির্ধারিত। তার সে নির্ধারিত আয়ু শেষ হলে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় হবে, তার একমুহূর্ত আগেও নয় পরেও নয়। মৃত্যুর পর কবরের জীবন, তারপর হাশরের ময়দান, তারপর জান্নাত বা জাহান্নাম, সবকিছুর ফয়সালা নির্ভর করে দুনিয়ার নির্দিষ্ট আয়ু ব্যবহারের ওপর। যে ব্যক্তি তার জীবনের আয়ু ভালো কাজে ব্যবহার করবে, তার ফয়সালা হবে সন্তোষজনক। সে কবরে শান্তি পাবে, হাশরে নিরাপদ থাকবে, তারপর জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতবাসী হবে। এটাই মানবজীবনের পরম সফলতা। ইরশাদ হয়েছে-
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ (185)
অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম হবে। আর (জান্নাতের বিপরীতে) পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১৮৫
ব্যক্তি তার আয়ুষ্কালকে ভালো কাজে ব্যবহার করলে তার ব্যক্তিগত জীবন সফল হয়। যদি সমাজ ও সমষ্টি তাদের জীবনায়ু ভালো কাজে ব্যবহার করে, তবে সমষ্টির জীবন সফল হয়। জাতীয় জীবনের উন্নতি-অগ্রগতি সময়ের সদ্ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাস এবং ইতিহাসের যত উত্থান-পতন তা সময়ের সদ্ব্যবহার বা অসদ্ব্যবহারেরই অনিবার্য ফল মাত্র। সুতরাং সময়ের ব্যবহারে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সমষ্টিগত সচেতনতাও অতীব জরুরি। 'কালের শপথ' সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কালের শপথ করার পর বলা হয়েছে, সমস্ত মানুষ ক্ষতি ও লোকসানের মধ্যে আছে। এর দ্বারা মানুষকে একজন ব্যবসায়ী এবং তার আয়ুকে মূলধনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ে মূলধন খাটায় মুনাফার আশায়। মুনাফা না হওয়াই লোকসান। তাতে করে ক্রমান্বয়ে মূলধন হ্রাস পেতে থাকে। একপর্যায়ে সে চরম লোকসানের শিকার হয় এবং তার মূলধন শেষ হয়ে যায়। অনুরূপ মানুষের আয়ু তার ছাওয়াব ও পুণ্য লাভের মূলধন। সে যদি তার মুহূর্তগুলোকে পুণ্যার্জনে ব্যয় না করে, তবে লোকসান বাড়তেই থাকে। কেননা আয়ু দমে দমে কমতে থাকে। একপর্যায়ে গোটা আয়ু নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু আমলনামায় পুণ্য জমা থাকে না। মানুষের জন্য এরচে' বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে? অধিকাংশ মানুষ চরম উদাসীনতার ভেতর জীবন কাটায়। দুনিয়ার ভোগ-উপভোগে মত্ত থেকে তার পরমায়ু বরবাদ করে দেয়। পরিশেষে যখন মৃত্যু হানা দেয় তখন আক্ষেপ করে বলতে থাকে, আমাকে একটুখানি সময় দেওয়া হোক। আমি নিজেকে সংশোধন করে ফেলব। কিন্তু ওই আক্ষেপ কোনও কাজের নয়। প্রত্যেকের উচিত সেই দিন আসার আগে আগে এখনই সময়ের সদ্ব্যবহার করা এবং এ মহামূল্যবান পুঁজির বিনিময়ে যতবেশি সম্ভব পুণ্যের মুনাফা অর্জন করে নেওয়া।
এ আয়াতে সকল মানুষকেই লোকসানগ্রস্ত বলা হয়েছে। অতঃপর এমন কয়েকটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুণগুলো যাদের অর্জন হয়ে যায় তারা ব্যতিক্রম মানুষ। অর্থাৎ তারা লোকসানগ্রস্ত নয়। গুণগুলো হচ্ছে যথাক্রমে- ঈমান আমলে সালিহ, পারস্পরিক সত্যের উপদেশ ও ধৈর্যের উপদেশ।
ঈমান দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর একত্বে বিশ্বাস, আখিরাতে বিশ্বাস ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসসহ এমন যাবতীয় বিষয় মেনে নেওয়া, যা আখিরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে এই বিশ্বাস রাখা যে, কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি তাঁর নিয়ে আসা দীনের অনুসরণের মধ্যেই নিহিত। এর কোনও বিকল্প নেই, যেহেতু তিনি সর্বশেষ নবী, তাঁর পর আর কোনও নবীও নেই, কোনও কিতাবও নেই।
এই ঈমান ও বিশ্বাসের দাবি হচ্ছে আমলে সালিহে লিপ্ত থাকা। অর্থাৎ বিশ্বাসকে কেবল অন্তরের মধ্যে লালন করে রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং তাকে কার্যে পরিণত করতে হবে। ব্যক্তির যাবতীয় কাজকর্ম ওই বিশ্বাসের আলোকে সম্পাদিত হতে হবে। শরী'আত হচ্ছে তার রূপরেখা। শরী'আতে যে কাজ অনুমোদিত তা করা এবং যা অনুমোদিত নয় তা থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে আমলে সালিহ বা সৎকর্ম। জীবনকে লোকসান থেকে বাঁচানোর দ্বিতীয় শর্ত এই আমলে সালিহে লিপ্ত থাকা।
তৃতীয় গুণ হল সত্যের উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ কেবল ব্যক্তিগত সৎকর্মে সন্তুষ্ট থাকাই যথেষ্ট নয়; বরং অন্যকে লোকসান থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করাও জরুরি। প্রত্যেককেই নিজ দীনদারী হেফাজতের পাশাপাশি লক্ষ রাখতে হবে তার আওতাভুক্ত কেউ সত্যদীন থেকে কোনওভাবে বিচ্যুত হচ্ছে কি না। যদি বিচ্যুত হয়ে থাকে তবে তার সংশোধনে সচেষ্ট থাকতে হবে। সর্বদা নিজ আওতাভুক্ত প্রত্যেকের জন্য সদুপোদেশ জারি রাখতে হবে, যাতে তারা সত্যদীনে প্রতিষ্ঠিত থাকে।
লোকসান থেকে বাঁচার জন্য চতুর্থ অপরিহার্য গুণ হচ্ছে একে অন্যকে উপদেশ দেওয়া, যাতে সর্বাবস্থায় সবর ও ধৈর্য রক্ষা করে চলে। ধৈর্য রক্ষা করতে হবে যেমন শরী'আতের যাবতীয় আদেশ মেনে চলার ব্যাপারে, তেমনি শরী'আত যা-কিছু নিষিদ্ধ করেছে তা থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারেও। এমনিভাবে ধৈর্য রক্ষা করতে হবে আপতিত সকল বিপদাপদেও।
প্রকাশ থাকে যে, হক ও সবরের উপদেশদান যেমন কোনও মওসুমী কাজ নয় তেমনি নয় এটা ব্যক্তি বা দলবিশেষের দায়িত্বও। বরং এটা প্রত্যেক মুমিনের সবসময়কার যিম্মাদারী। অর্থাৎ যখনই যার সামনে কারো দ্বারা হক ও সবর পরিপন্থি কিছু ঘটবে তখনই সে তাকে হকের দিকে ফিরে আসার ও সবর অবলম্বনের উপদেশ দেবে। স্বামী তার স্ত্রীকে, স্ত্রী তার স্বামীকে, পিতা তার সন্তানকে, ভাই তার ভাইকে, এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীকে, এক বন্ধু অপর বন্ধুকে, এক পথিক অপর পথিককে, মোটকথা প্রতি দুইজনের একজন অপরজনকে যখনই পরিস্থিতি দেখা দেয় তখনই এ উপদেশ প্রদান করবে। এমনকি পরিস্থিতি ছাড়াও স্বাভাবিক অবস্থায়ও পারস্পরিক উপদেশদান অব্যাহত রাখা চাই। এ সূরা আমাদেরকে ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য এ ব্যবস্থাই অবলম্বন করতে বলেছে।
মোটকথা, যে ব্যক্তি এ সূরায় বর্ণিত চারটি গুণ অর্জন করতে সক্ষম হবে সে লোকসান থেকে বেঁচে যাবে। কেননা এর মাধ্যামে তার জীবনের মুহূর্তগুলো নেককাজে ব্যয় হবে। প্রতি মুহূর্তের বিনিময়ে তার আমলনামায় নেকী লেখা হতে থাকবে। ফলে তার পরমায়ু নিঃশেষ হবে বটে, কিন্তু সে একরকম অমরত্ব লাভ করবে। কেননা পারস্পরিক সত্য ও সবরের উপদেশদানের মাধ্যমে তার দ্বারা যে নেক আমলের প্রবাহ চালু হবে তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ফলে মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় নেকী লেখা জারি থাকবে। অসম্ভব নয় যে, দুনিয়ায় ও কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে তার সুনাম-সুখ্যাতির চর্চা অব্যাহত থাকবে। এমন কত শত মানুষ আছে, যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন কিন্তু মানুষ তাদের ভোলেনি। সত্য ও সবরের পথে মানুষকে প্রতিষ্ঠিত রাখার বহুমুখী মেহনতের কারণে তারা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
এটি অতি ছোট্ট একটি সূরা, কিন্তু বিপুল তাৎপর্যে ভরা। এ যেন সমগ্র দীনের সারকথা। তাই তো ইমাম শাফি'ঈ রহ. বলেন, যদি এই একটি মাত্র সূরাই নাযিল করা হত, তবে (সমঝদার ব্যক্তিদের জন্য) হিদায়াত হিসেবে যথেষ্ট হত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ সূরাটির ব্যাপারে উদাসীন। তারা এর বিষয়বস্তুর মধ্যে চিন্তা করে না।
মুজাহিদ ব্যক্তির আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া ও তার পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর রাখার ফযীলত
হাদীছ নং: ১৭৭
হযরত আবূ আব্দুর রহমান যায়দ ইবন খালিদ জুহানী রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তার কোনও গাযীকে জিহাদের আসবাবপত্র দিয়ে সাহায্য করল, সে যেন নিজেই জিহাদে গেল। আর যে ব্যক্তি কোনও গাযীর পরিবারবর্গের মধ্যে তার স্থলাভিষিক্তরূপে উত্তম দায়িত্বপালন করল, সেও যেন জিহাদ করল -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৮৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৬২৮)
হাদীছ নং: ১৭৭
হযরত আবূ আব্দুর রহমান যায়দ ইবন খালিদ জুহানী রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তার কোনও গাযীকে জিহাদের আসবাবপত্র দিয়ে সাহায্য করল, সে যেন নিজেই জিহাদে গেল। আর যে ব্যক্তি কোনও গাযীর পরিবারবর্গের মধ্যে তার স্থলাভিষিক্তরূপে উত্তম দায়িত্বপালন করল, সেও যেন জিহাদ করল -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৮৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৬২৮)
مقدمة الامام النووي
21 - باب في التعاون على البر والتقوى
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى} [المائدة: 2]، وَقالَ تَعَالَى: {وَالْعَصْرِ إِنَّ الإنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلاَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ} [العصر: 1 - 2] قَالَ الإمام الشافعي - رَحِمَهُ الله - كلامًا معناه: إنَّ النَّاسَ أَوْ أكثرَهم في غفلة عن تدبر هذِهِ السورة (1).
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى} [المائدة: 2]، وَقالَ تَعَالَى: {وَالْعَصْرِ إِنَّ الإنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلاَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ} [العصر: 1 - 2] قَالَ الإمام الشافعي - رَحِمَهُ الله - كلامًا معناه: إنَّ النَّاسَ أَوْ أكثرَهم في غفلة عن تدبر هذِهِ السورة (1).
177 - وعن أَبي عبد الرحمان زيد بن خالد الجهني - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا في سَبيلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازيًا في أهْلِهِ بِخَيرٍ فَقَدْ غَزَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ১৭৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা।
প্রতি দু’জন থেকে একজনের জিহাদে যাওয়া
হাদীছ নং: ১৭৮
হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযায়ল গোত্রের শাখা বনু লিহয়ানের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তখন তিনি বলেন, প্রতি দু'জন থেকে একজন যেন অভিযানে যোগদান করে। তাহলে ছাওয়াবে উভয়ে অংশীদার হবে. মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫১০: মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৩১৯)
হাদীছ নং: ১৭৮
হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযায়ল গোত্রের শাখা বনু লিহয়ানের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তখন তিনি বলেন, প্রতি দু'জন থেকে একজন যেন অভিযানে যোগদান করে। তাহলে ছাওয়াবে উভয়ে অংশীদার হবে. মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৯৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৫১০: মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৩১৯)
مقدمة الامام النووي
21 - باب في التعاون على البر والتقوى
178 - وعن أَبي سعيد الخدري - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بعث بعثًا إِلَى بني لِحْيَان مِنْ هُذَيْلٍ، فَقَالَ: «لِيَنْبَعِثْ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا وَالأجْرُ بَيْنَهُمَا». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ১৭৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা।
চলতিপথে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে করণীয় এবং নাবালেগের হজ্জ প্রসঙ্গ
হাদীছ নং : ১৭৯
হযরত ইবন ‘আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাওহা নামক স্থানে একটি কাফেলার সাক্ষাৎ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারপর তারা পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনি কে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ। তখন এক মহিলা একটি শিশুকে তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর কি হজ্জ হয়? তিনি বললেন, হাঁ, আর ছাওয়াব তোমার -মুসলিম।(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৯২৪; সুনানে নাসাঈ,হাদীছ নং ২৬৪৫)
হাদীছ নং : ১৭৯
হযরত ইবন ‘আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাওহা নামক স্থানে একটি কাফেলার সাক্ষাৎ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারপর তারা পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনি কে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ। তখন এক মহিলা একটি শিশুকে তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর কি হজ্জ হয়? তিনি বললেন, হাঁ, আর ছাওয়াব তোমার -মুসলিম।(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৯২৪; সুনানে নাসাঈ,হাদীছ নং ২৬৪৫)
مقدمة الامام النووي
21 - باب في التعاون على البر والتقوى
179 - وعن ابن عباس رضي الله عنهما: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - لَقِيَ رَكْبًا بالرَّوْحَاءِ (1)، فَقَالَ: «مَنِ القَوْمُ؟» قالوا: المسلمون، فقالوا: من أنتَ؟ قَالَ: «رَسُول الله»، فرفعت إِلَيْه امرأةٌ صبيًا، فَقَالَتْ: ألِهَذَا حَجٌّ؟ قَالَ: «نَعَمْ، وَلَكِ أجْرٌ». رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ১৮০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ নেককাজ ও তাকওয়া-পরহেযগারীতে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা।
মালিকের আদেশ পালনকারী বিশ্বস্ত খাজাঞ্চির ফযীলত
হাদীছ নং: ১৮০
হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চি, যে তাকে যা (কিছু কাউকে দেওয়ার) আদেশ করা হয় তা কার্যকর করে এবং খুশিমনে তা দান করে, অর্থাৎ যাকে তা দিতে আদেশ করা হয় তাকে তা প্রদান করে, সেও একজন সদাকাকারীরূপে গণ্য -বুখারী ও মুসলিম।"
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৩৮, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০২৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৮৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৬০)
হাদীছ নং: ১৮০
হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চি, যে তাকে যা (কিছু কাউকে দেওয়ার) আদেশ করা হয় তা কার্যকর করে এবং খুশিমনে তা দান করে, অর্থাৎ যাকে তা দিতে আদেশ করা হয় তাকে তা প্রদান করে, সেও একজন সদাকাকারীরূপে গণ্য -বুখারী ও মুসলিম।"
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৩৮, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০২৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৬৮৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৬০)
مقدمة الامام النووي
21 - باب في التعاون على البر والتقوى
180 - وعن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - أنَّه قَالَ: «الخَازِنُ المُسْلِمُ الأمِينُ الَّذِي يُنفِذُ مَا أُمِرَ بِهِ فيُعْطيهِ كَامِلًا مُوَفَّرًا طَيِّبَةً بِهِ نَفْسُهُ فَيَدْفَعُهُ إِلَى الَّذِي أُمِرَ لَهُ بِهِ، أحَدُ المُتَصَدِّقين». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: «الَّذِي يُعْطِي مَا أُمِرَ بِهِ» وضبطوا «المُتَصَدِّقَينِ» بفتح القاف مَعَ كسر النون عَلَى التثنية، وعكسه عَلَى الجمعِ وكلاهما صحيح.
وفي رواية: «الَّذِي يُعْطِي مَا أُمِرَ بِهِ» وضبطوا «المُتَصَدِّقَينِ» بفتح القاف مَعَ كسر النون عَلَى التثنية، وعكسه عَلَى الجمعِ وكلاهما صحيح.