রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ২১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ২ তাওবা।
২১। হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি.-এর তাওবা ও তাঁর সত্যবাদিতা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন কা'ব ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, –হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি. যখন অন্ধ হয়ে যান, তখন তার পুত্রদের মধ্যে ইনিই ছিলেন তার পরিচালক– তিনি বলেন, আমি (আমার পিতা) কা'ব ইবন মালিক রাযি.-কে বর্ণনা করতে শুনেছি- তিনি তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে যাওয়া থেকে তার পিছিয়ে থাকার বৃত্তান্ত বর্ণনা করছিলেন। হযরত কা'ব রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে এক তাবুকের যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও যুদ্ধে আমি তাঁর সংগে যাত্রা হতে বিরত থাকিনি। অবশ্য আমি বদরের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করিনি। তবে সেই যুদ্ধে যারা অংশ নেয়নি, তাদের কেউ তিরষ্কৃত হয়নি। কেননা তখন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ বের হয়েছিলেন কুরায়শের বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা (উভয়পক্ষের) পূর্বপ্রতিশ্রুতি ছাড়াই তাদের ও তাদের শত্রুদের (রণক্ষেত্রে) মুখোমুখি করে দেন। আমি তো আকাবার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম, যখন আমরা ইসলামের উপর (অটল থাকতে) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। তার বিপরীতে (অর্থাৎ আকাবার অঙ্গীকারের বিপরীতে) বদর যুদ্ধের উপস্থিতিকে আমি পছন্দ করব না, যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে 'আকাবা' অপেক্ষা বেশি আলোচিত।
তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ হতে আমি যে পিছিয়ে থেকেছিলাম আমার সেই বৃত্তান্ত এই যে, ওই যুদ্ধে আমি যখন তাঁর থেকে পিছিয়ে থাকি, তখন আমি যতবেশি সক্ষম ও সচ্ছল ছিলাম অতটা আর কখনও ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর আগে আমি কখনও একত্রে দু'টি বাহনের মালিক হইনি। অথচ এই যুদ্ধকালে দু'টি বাহন আমি জমা করে ফেলেছিলাম। যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও যুদ্ধে গমনের ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি (কৌশলস্বরূপ) তার বিপরীত দিকের ইঙ্গিত করতেন। অতঃপর যখন এই যুদ্ধের পালা আসল এবং এই যুদ্ধ অভিযানটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন প্রচণ্ড গরমে এবং অভিমুখী হয়েছিলেন দূরবর্তী সফর ও মরুপ্রান্তরের আর অভিমুখী হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক শত্রুবাহিনীর, তাই তিনি মুসলিমদের কাছে তাদের ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেন (আগের মত কোনদিকে যাচ্ছেন তা গোপন রাখেননি), যাতে তারা তাদের যুদ্ধাভিযানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং তিনি কোন দিকে যাওয়ার ইচ্ছা করছেন তা তাদের জানিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে মুসলিমগণ ছিলেন প্রচুরসংখ্যক। কোনও সংরক্ষণকারী বই তাদের সংরক্ষণ করত না, এর দ্বারা তিনি রেজিষ্ট্রার বোঝাচ্ছিলেন।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, কোনও লোক তাতে অনুপস্থিত থাকতে চাইলে অবশ্যই তার ধারণা হত তার সে অনুপস্থিতির কথা গোপন থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার ব্যাপারে ওহী নাযিল হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ যুদ্ধাভিযানটি চালিয়েছিলেন এমন এক সময়, যখন গাছের ফল ও ছায়া ছিল সুখকর। আর আমি তো তার প্রতি বেশি আসক্ত।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেললেন এবং তাঁর সংগে মুসলিমগণও। আমি প্রতিদিন ভোরবেলা তাঁর সংগে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বের হতাম। কিন্তু কোনোকিছু সম্পন্ন না করেই ফিরে আসতাম। মনে মনে বলতাম, আমি যখন ইচ্ছা করি তখনই তা করতে সক্ষম। এভাবেই আমার এই গড়িমসি চলতে থাকল। অবশেষে মানুষের যাত্রা শুরুর সময় এসে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ভোরবেলা বের হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সংগে মুসলিমগণও। কিন্তু আমি আমার প্রস্তুতি কিছুমাত্র সম্পন্ন করতে পারলাম না। তারপর আবার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বের হলাম, আবার ফিরে আসলাম কিন্তু কিছুই সম্পন্ন করলাম না। এভাবে আমার গড়িমসি চলল। ওদিকে তারা দ্রুত চলতে থাকলেন এবং অভিযানকারীগণ সামনে এগিয়ে গেলেন। পরিশেষে আমি ইচ্ছা করলাম রওয়ানা হয়ে যাব এবং তাদের ধরে ফেলব। আহা! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু তা করা আমার পক্ষে সম্ভব হল না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বের হয়ে যাওয়ার পর যখনই আমি লোকজনের মধ্যে বের হতাম, তখন এই দৃশ্য আমাকে কষ্ট দিত যে, যুদ্ধে অনুপস্থিতিতে আমার অনুরূপ দেখতাম এমন কোনও লোককে, যে মুনাফিকীর অভিযোগে অভিযুক্ত। অথবা এমন দুর্বল শ্রেণীভুক্ত কোনও লোককে, যাদের আল্লাহ তা'আলা নিষ্কৃতি দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকে না পৌছা পর্যন্ত আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবুকে পৌঁছার পর তিনি লোকজনের মধ্যে বসা। এ অবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, কা'ব ইবনে মালিক কী করল (অর্থাৎ তার খবর কী)? বনু সালিমার জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে আটকে রেখেছে তার কাপড়জোড়া এবং নিজের দুই কাঁধের প্রতি দৃষ্টিপাত (অর্থাৎ আত্মাভিমান)। কিন্তু হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. তার এ কথার প্রতিবাদ করলেন এবং) তাকে বললেন, তুমি নেহাত মন্দ বলেছ। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমরা তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া কিছুই জানি না ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। তিনি এ অবস্থায়ই ছিলেন। সহসা সাদা পোশাকের জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, যার থেকে ক্রমে মরীচিকা সরে যাচ্ছে (অর্থাৎ ক্রমেই সামনে এগিয়ে আসছে)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আবু খায়ছামা হও। সহসা দেখা গেল তিনি আবু খায়ছামা আনসারীই বটে। তিনিই ওই ব্যক্তি, এক সা' খেজুর সদাকা করলে মুনাফিকরা যাকে কটাক্ষ করেছিল।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, পরিশেষে যখন আমি খবর পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক থেকে ফেরত রওয়ানা হয়ে গেছেন, তখন আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল। মনে মনে আমি মিথ্যা রচনা করছিলাম আর বলছিলাম, আমি আগামীকাল তাঁর ক্রোধ থেকে কিভাবে নিষ্কৃতি পাব? এ ব্যাপারে আমি আমার খান্দানের প্রত্যেক বিচক্ষণ ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য নিতে থাকি? যখন বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা মুনাওয়ারায়) এসে পৌঁছেছেন, তখন আমার অন্তর থেকে সব মিথ্যা দূর হয়ে গেল। আমি বুঝে ফেললাম, মিথ্যা কোনও কিছুর দ্বারা আমি কখনোই তাঁর (ক্রোধ) থেকে নিস্তার পাব না। সুতরাং আমি সত্য বলতে স্থিরসংকল্প হলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পৌঁছালেন। তিনি যখনই কোনও সফর থেকে ফিরে আসতেন, প্রথমে মসজিদে ঢুকতেন এবং দু'রাকআত নামায পড়তেন। তারপর লোকজনের সংগে বসতেন। (এ বারও) যখন তা করে সারলেন, মুনাফিকগণ তাঁর কাছে এসে অজুহাত দেখাতে লাগল এবং তারা তাঁর কাছে শপথ করতে লাগল (যে, তারা যা বলছে সত্যই বলছে)। তারা ছিল আশিজনের কিছু বেশি। তিনি তাদের প্রকাশ্য ওজর-অজুহাত গ্রহণ করে নিলেন, তাদেরকে বাইআত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের মনের অবস্থা আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলেন।
অবশেষে আমি আসলাম। আমি যখন সালাম দিলাম, তিনি মুচকি হাসলেন ক্রুদ্ধ ব্যক্তির মুচকি হাসার মত। তারপর বললেন, এস। আমি হেঁটে হেঁটে আসলাম এবং তাঁর সম্মুখে বসলাম। তিনি বললেন, তুমি অনুপস্থিত থাকলে কেন? তুমি না তোমার বাহন কিনে রেখেছিলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! যদি আপনি ছাড়া দুনিয়াদার কোনও ব্যক্তির সামনে আমি বসতাম, তবে আমি বিশ্বাস করি কোনও ওজর দেখিয়ে তার ক্রোধ থেকে আমি নিষ্কৃতি পেয়ে যেতাম। আমাকে যথেষ্ট বাগবৈদগ্ধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তো জানি আজ যদি আপনাকে এমন কোনও মিথ্যাকথা বলি, যা দ্বারা আপনি আমার প্রতি খুশি হয়ে যান, তবে অচিরেই আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আপনাকে অসন্তুষ্ট করে দেবেন।
আর যদি আমি আপনাকে সত্যকথা বলি, যে কথায় আপনি আমার প্রতি মনক্ষুন্ন হন, তবে সে ব্যাপারে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম পরিণামের আশা করি। আল্লাহর কসম! আমার কোনও ওজর ছিল না। এবং আল্লাহর কসম! আমি যখন আপনার সংগে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকি, তখন যতটা সক্ষম ও সচ্ছল ছিলাম, অতটা আর কখনও ছিলাম না।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথা শুনে বললেন, এই লোক সত্যকথা বলেছে। তারপর বললেন, ওঠ (এবং অপেক্ষায় থাক), যাবত না আল্লাহ তোমার সম্পর্কে ফয়সালা দান করেন।
বনু সালিমার কিছু লোক আমার পেছনে পেছনে চলল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম! তুমি এর আগে আর কোনও অপরাধ করেছ বলে তো আমরা জানি না। অন্যান্য যারা যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিল, তারা যেমনটা ওজর-অজুহাত প্রদর্শন করেছে, তেমনি তুমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনও অজুহাত প্রদর্শন করতে পারলে না? তোমার অপরাধ মোচনের জন্য তো তোমার পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইস্তিগফারই যথেষ্ট ছিল। এভাবে তারা আমাকে ভর্ৎসনা করতে থাকল। পরিশেষে আমি ইচ্ছা করে ফেললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে যাব এবং (তাঁর কাছে দেওয়া পূর্বের বক্তব্যের জন্য) নিজেকে মিথ্যুক ঠাওরাব (অর্থাৎ আমি আগে ভুল বলেছিলাম, আসলে আমার এই এই ওজর ছিল) ।
তারপর আমি তাদের বললাম, আমার মত এ অবস্থার সম্মুখীন আর কেউ হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, তোমার মত অবস্থার সম্মুখীন আরও দু'জন লোক হয়েছেন। তারাও তোমার অনুরূপ কথা বলেছেন এবং তাদেরকেও তোমার অনুরূপ বলে দেওয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তারা বলল, মুরারা ইবন রাবীআ আমিরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী। তারা দু'জন নেককার লোকের নাম আমার কাছে উল্লেখ করল, যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমি বললাম, তাদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ রয়েছে।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, তারা যখন ওই দুই ব্যক্তির কথা আমাকে বলল, আমি (আমার সত্যে অবিচল থাকার সংকল্পে) চলে গেলাম। ওদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা যুদ্ধাভিযানে যোগদান থেকে বিরত থেকেছিল, তাদের মধ্য থেকে আমাদের এই তিনজনের সংগে লোকজনকে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন। ফলে মানুষ আমাদের পরিত্যাগ করল। কিংবা তিনি বললেন, আমাদের কাছে তারা বদলে গেল । এমনকি আমার কাছে পৃথিবীটাই অপরিচিত হয়ে গেল। এ যেন সেই পৃথিবী নয়, যাকে আমি চিনি। এ অবস্থায় আমাদের কাটল পঞ্চাশ রাত।
ওদিকে আমার দুই সংগী দুর্বল হয়ে পড়ল এবং তারা নিজ ঘরে বসে কাঁদতে থাকল। আর আমি ছিলাম সকলের মধ্যে যুবক এবং তাদের চেয়ে বেশি শক্তিমান। তাই আমি বের হতাম এবং মুসলিমদের সংগে নামাযে হাজির হতাম। আমি বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম, কিন্তু কেউ আমার সংগে কথা বলত না।
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতাম এবং তাঁকে সালাম দিতাম যখন তিনি নামাযের পর আপন স্থানে বসা থাকতেন। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি কি সালামের জবাবে ওষ্ঠদ্বয় নেড়েছেন, না নাড়েননি? তারপর আমি তাঁর কাছাকাছি স্থানে নামায পড়তাম এবং চোরা চোখে তাঁকে দেখতাম। যখন আমি নামাযে অভিনিবিষ্ট হতাম, তিনি আমার দিকে তাকাতেন। আবার যখন তাঁর দিকে ফিরতাম, আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে যখন আমার প্রতি মুসলিমদের কঠোরতা দীর্ঘায়িত হল, তখন একদিন আমি এগিয়ে গেলাম এবং আবু কাতাদার বাগানের প্রাচীর টপকালাম। তিনি আমার চাচাত ভাই এবং আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। আমি তাকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। তখন তাকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করি তুমি কি আমার সম্পর্কে জান যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি? তিনি নীরব থাকলেন। আমি ফের তাকে কসম দিয়ে ওই কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি নীরবই থাকলেন। ফের তাকে কসম দিয়ে ওই কথা বললাম। এবার তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তার এ কথায় আমার দু'চোখ ছাপিয়ে পানি নামল। আমি সরে আসলাম এবং প্রাচীর টপকালাম।
একদিনকার কথা, আমি মদীনার বাজারে হাঁটছি। সহসা দেখি শামের যারা মদীনায় খাদ্যশস্য বিক্রি করতে এসেছে তাদের মধ্যকার এক নাবাতী (কৃষক) বলছে, কে আমায় বলতে পারে কা'ব ইবন মালিককে কোথায় পাব? তখন লোকজন আমার দিকে ইশারা করতে লাগল । শেষে সে আমার কাছে আসল এবং আমার হাতে গাসসান রাজার একটি চিঠি অর্পণ করল। আমি লিখতে পড়তে জানতাম। সুতরাং চিঠিটি পড়লাম। দেখি কি, তাতে লেখা আছে- অতঃপর বক্তব্য এই যে, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে তোমার নেতা তোমার প্রতি কঠোরতা করছেন। আল্লাহ তা'আলা তো তোমাকে এমন ঘরে জন্ম দেননি, যেখানে তুমি লাঞ্ছিত হবে এবং তোমার অধিকার খর্ব করা হবে। (তা সত্ত্বেও যখন তুমি সেই অবস্থার শিকার) অতএব তুমি আমাদের কাছে চলে এস। আমরা তোমার সমব্যাথী হব। চিঠিটি পড়ে আমি বললাম, এটাও একটা পরীক্ষা। সুতরাং আমি সেটি নিয়ে চুলার কাছে গেলাম এবং সেটি জ্বালিয়ে দিলাম।
এভাবে যখন পঞ্চাশ দিন থেকে চল্লিশ দিন গত হল আর এ সময় ওহীও থেমে থাকল, তখন সহসা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত আমার নিকট এসে উপস্থিত। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে আদেশ করছেন, যেন নিজ স্ত্রী থেকে দূরে থাক। আমি বললাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দেব? কিংবা আমি কী করব? তিনি বললেন, না, তার থেকে দূরে থাকবে। তার কাছে যাবে না। আমার দুই সঙ্গীর কাছেও তিনি অনুরূপ নির্দেশ দিয়ে পাঠান। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পরিবারে চলে যাও। তাদের কাছেই থাকতে থাক, যাবত না আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে ফয়সালা দান করেন।
এ নির্দেশের পর হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আবেদন জানাল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন উমাইয়া একজন অথর্ব বৃদ্ধ । তার কোনও খাদেম নেই। আমি যদি তার খেদমত করি, আপনি কি অপসন্দ করবেন? তিনি বললেন, না। তবে সে যেন তোমার সাথে মিলিত না হয়। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তার অবস্থা তো এই যে, কোনও কিছুর প্রতিই তার কোনও নড়াচড়া নেই। এবং আল্লাহর কসম! তার এই ঘটনা ঘটার পর থেকে এই পর্যন্ত তিনি অবিরাম কেঁদে যাচ্ছেন।
হযরত কা'ব রাঃ বলেন, (হিলাল ইবনে উমাইয়া সম্পর্কে এ কথা জানার পর) আমার পরিবারের কেউ কেউ আমাকে বলল, তুমিও যদি তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইতে? তিনি তো হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তার স্বামীর খেদমত করার অনুমতি দিয়েছেন।
আমি বললাম, আমি তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাব না। কি জানি, তার ব্যাপারে আমি তাঁর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে কী বলবেন? আমি যে একজন যুবা পুরুষ!
এভাবে আরও দশদিন কাটালাম। আমাদের সংগে কথা বলা নিষেধ করে দেওয়ার পর থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল। পঞ্চাশতম রাতের ভোরে আমি আমাদের একটি ঘরের ছাদে ফজরের নামায পড়লাম। নামাযের পরে আমি বসা আছি। আর আমার অবস্থা তো সেটাই, যা আল্লাহ তাআলা আমদের সম্পর্কে (কুরআন মাজীদে) বর্ণনা করেছেন। আমার পক্ষে আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এই প্রশস্ত পৃথিবী আমার জন্যে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তো ওই বসা অবস্থায় হঠাৎ আমি জনৈক আওয়াজদাতার আওয়াজ শুনতে পেলাম। সে সালা' পাহাড়ের উপর উঠে উচ্চস্বরে বলছে, হে কা'ব ইবন মালিক, সুসংবাদ নাও! এ কথা শুনতেই আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। বুঝে ফেললাম মুক্তি এসে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায আদায়ের পর ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন। ফলে লোকজন আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়ে পড়েছে। আমার দুই সঙ্গীর কাছে সুসংবাদদাতাগণ চলে গেছে।
এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে আমার দিকে ছুটে পড়েছে। আর আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি আমার দিকে দৌড় দিয়েছে। সে-ই পাহাড়ের উপর উঠে আওয়াজ দিয়েছে। ঘোড়ার চেয়ে তার আওয়াজই ছিল বেশি দ্রুতগামী। তারপর আমি যার আওয়াজ শুনেছিলাম সে যখন সুসংবাদ জানাতে আমার কাছে আসল, আমি আমার কাপড়দু'টি খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম- তার সুসংবাদ দানের পুরস্কারে। আল্লাহর কসম! সেদিন ওই দু'টি ছাড়া আমি আর কোনও কাপড়ের মালিক ছিলাম না। পরে আমি দু'টি কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লাম। তারপর লোকজন তাওবা কবুলের জন্য মুবারকবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে দলে দলে এসে আমার সংগে সাক্ষাত করল। তারা আমাকে বলছিল, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা কবুল তোমার জন্য শুভ হোক। অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন। তাঁর চারপাশে লোকজন বসা। তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাযি. আমার দিকে ছুটে আসলেন। তিনি এসে আমার সংগে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে শুভেচ্ছা জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া আর একজন লোকও ওঠেনি।
হযরত কা'ব ইবনে মালিক রাঃ হযরত তালহা রাযি.-এর এ আচরণ কখনও ভোলেননি।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলাম, তখন আনন্দে তাঁর চেহারায় বিদ্যুৎ খেলছিল। তিনি বললেন, সুসংবাদ নাও তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিবসের! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ সুসংবাদ কি আপনার পক্ষ থেকে, না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, না, বরং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আনন্দিত হতেন, তখন তাঁর চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। মনে হত যেন তাঁর চেহারা চাঁদের একটি টুকরো। আমরা তাঁর এ অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম । আমি তাঁর সামনে বসার পর বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার তাওবার একটা অংশ এই যে, আমি আমার যাবতীয় সম্পদ থেকে মুক্ত হয়ে যাব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে সদাকা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু সম্পদ নিজের কাছে রেখে দাও। এটাই তোমার পক্ষে শ্রেয়। আমি বললাম, (ঠিক আছে) খায়বারে (গনীমতের হিস্যা হিসেবে) আমার যে অংশ আছে তা রেখে দেব।
আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আমাকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন কেবলই সত্য বলার সুবাদে। সুতরাং আমার তাওবার একটা অংশ এও যে, আমি যতদিন জীবিত থাকি কেবল সত্য কথাই বলব।
(হযরত কা'ব রাযি. বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলার কারণে আল্লাহ তা'আলা আমাকে যেমন পুরস্কৃত করেছেন, অন্য কোনও মুসলিমকে সত্য বলার দরুন আল্লাহ তা'আলা এর চেয়ে উত্তম পুরস্কার দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি ওই কথা বলার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনও কোনও মিথ্যা বলার ইচ্ছা করিনি। আমি আশা করি বাকি জীবনেও আল্লাহ তা'আলা আমাকে হেফাজত করবেন।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেন-
لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (117)
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (118) يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119)
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ সদয় দৃষ্টি দিয়েছেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মুহূর্তে নবীর সঙ্গে থেকেছিল, যখন তাদের একটি দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান, পরম দয়ালু। এবং সেই তিন জনের প্রতিও (আল্লাহ সদয় হলেন), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না এ পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল, তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠল এবং তারা উপলব্ধি করল, আল্লাহর (ধরা) থেকে খোদ তাঁর আশ্রয় ছাড়া কোথাও আশ্রয় পাওয়া যাবে না, পরে আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হলেন, যাতে তারা তারই দিকে রুজু করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।- তাওবাঃ ১১৭-১১৯
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমাকে হিদায়াত দান করার পর আল্লাহ তা'আলা আমার দৃষ্টিতে আমাকে এরচে' বড় কোনও নি'আমত দেননি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলেছিলাম, তাঁর সংগে আমি মিথ্যা বলিনি। নতুবা আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়েছে ওই সকল লোক, যারা মিথ্যা বলেছিল। কেননা যারা মিথ্যা বলেছিল, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সর্বাপেক্ষা কঠিন কথা বলেছেন । আল্লাহ তা'আলা বলেন-
{سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (95) يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ (96)} [التوبة: 95، 96]
অর্থ : তোমরা যখন তাদের কাছে ফিরে যাবে, তখন তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর কসম করবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। নিশ্চয়ই তারা (আপাদমস্তক) অপবিত্র। আর তারা যা অর্জন করছে তজ্জন্য তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তোমরা যাতে তাদের প্রতি খুশি হয়ে যাও সেজন্য তারা তোমাদের সামনে কসম করবে, অথচ তোমরা তাদের প্রতি খুশি হলেও আল্লাহ (এরূপ) অবাধ্য লোকদের প্রতি খুশি হবেন না। তাওবাঃ ৯৫-৯৬
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমাদের তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কসম করে মিথ্যা বলেছিল, তিনি তাদের অজুহাত গ্রহণ করেছিলেন, তাদের বাই'আত করেছিলেন এবং তাদের পক্ষে ইস্তিগফার করেছিলেন। তাদের থেকে আলাদা করে আমাদের তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা বিলম্বিত রাখেন। পরিশেষে আল্লাহ তা'আলা সে ব্যাপারে ফয়সালা দান করেন। এ বিষয়টিই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে বলেন-
وَعَلَى الثَّلَثَةِ الَّذِينَ خَلِفُوا
'এবং সেই তিন জনের প্রতিও (আল্লাহ সদয় হলেন), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল।
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা যে বলেছেন, এর দ্বারা যুদ্ধাভিযান থেকে আমাদের পিছিয়ে থাকার কথা বোঝানো হয়নি; বরং যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে শপথ করেছিল ও মিথ্যা অজুহাত দেখিয়েছিল, যা তিনি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, তাদের থেকে আলাদাভাবে আমাদের পিছিয়ে রাখা ও আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখার কথা বোঝানো হয়েছে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৪৪১৮,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৯)
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধাভিযানে বের হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি বৃহস্পতিবার বের হওয়া পছন্দ করতেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি দিনের প্রথম প্রহর ছাড়া সফর থেকে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসার পর তিনি প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং দু' রাক'আত নামায পড়তেন। তারপর সেখানে বসতেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন কা'ব ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, –হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি. যখন অন্ধ হয়ে যান, তখন তার পুত্রদের মধ্যে ইনিই ছিলেন তার পরিচালক– তিনি বলেন, আমি (আমার পিতা) কা'ব ইবন মালিক রাযি.-কে বর্ণনা করতে শুনেছি- তিনি তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে যাওয়া থেকে তার পিছিয়ে থাকার বৃত্তান্ত বর্ণনা করছিলেন। হযরত কা'ব রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে এক তাবুকের যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও যুদ্ধে আমি তাঁর সংগে যাত্রা হতে বিরত থাকিনি। অবশ্য আমি বদরের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করিনি। তবে সেই যুদ্ধে যারা অংশ নেয়নি, তাদের কেউ তিরষ্কৃত হয়নি। কেননা তখন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ বের হয়েছিলেন কুরায়শের বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা (উভয়পক্ষের) পূর্বপ্রতিশ্রুতি ছাড়াই তাদের ও তাদের শত্রুদের (রণক্ষেত্রে) মুখোমুখি করে দেন। আমি তো আকাবার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম, যখন আমরা ইসলামের উপর (অটল থাকতে) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। তার বিপরীতে (অর্থাৎ আকাবার অঙ্গীকারের বিপরীতে) বদর যুদ্ধের উপস্থিতিকে আমি পছন্দ করব না, যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে 'আকাবা' অপেক্ষা বেশি আলোচিত।
তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ হতে আমি যে পিছিয়ে থেকেছিলাম আমার সেই বৃত্তান্ত এই যে, ওই যুদ্ধে আমি যখন তাঁর থেকে পিছিয়ে থাকি, তখন আমি যতবেশি সক্ষম ও সচ্ছল ছিলাম অতটা আর কখনও ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর আগে আমি কখনও একত্রে দু'টি বাহনের মালিক হইনি। অথচ এই যুদ্ধকালে দু'টি বাহন আমি জমা করে ফেলেছিলাম। যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও যুদ্ধে গমনের ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি (কৌশলস্বরূপ) তার বিপরীত দিকের ইঙ্গিত করতেন। অতঃপর যখন এই যুদ্ধের পালা আসল এবং এই যুদ্ধ অভিযানটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন প্রচণ্ড গরমে এবং অভিমুখী হয়েছিলেন দূরবর্তী সফর ও মরুপ্রান্তরের আর অভিমুখী হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক শত্রুবাহিনীর, তাই তিনি মুসলিমদের কাছে তাদের ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেন (আগের মত কোনদিকে যাচ্ছেন তা গোপন রাখেননি), যাতে তারা তাদের যুদ্ধাভিযানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং তিনি কোন দিকে যাওয়ার ইচ্ছা করছেন তা তাদের জানিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে মুসলিমগণ ছিলেন প্রচুরসংখ্যক। কোনও সংরক্ষণকারী বই তাদের সংরক্ষণ করত না, এর দ্বারা তিনি রেজিষ্ট্রার বোঝাচ্ছিলেন।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, কোনও লোক তাতে অনুপস্থিত থাকতে চাইলে অবশ্যই তার ধারণা হত তার সে অনুপস্থিতির কথা গোপন থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার ব্যাপারে ওহী নাযিল হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ যুদ্ধাভিযানটি চালিয়েছিলেন এমন এক সময়, যখন গাছের ফল ও ছায়া ছিল সুখকর। আর আমি তো তার প্রতি বেশি আসক্ত।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেললেন এবং তাঁর সংগে মুসলিমগণও। আমি প্রতিদিন ভোরবেলা তাঁর সংগে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বের হতাম। কিন্তু কোনোকিছু সম্পন্ন না করেই ফিরে আসতাম। মনে মনে বলতাম, আমি যখন ইচ্ছা করি তখনই তা করতে সক্ষম। এভাবেই আমার এই গড়িমসি চলতে থাকল। অবশেষে মানুষের যাত্রা শুরুর সময় এসে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ভোরবেলা বের হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সংগে মুসলিমগণও। কিন্তু আমি আমার প্রস্তুতি কিছুমাত্র সম্পন্ন করতে পারলাম না। তারপর আবার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বের হলাম, আবার ফিরে আসলাম কিন্তু কিছুই সম্পন্ন করলাম না। এভাবে আমার গড়িমসি চলল। ওদিকে তারা দ্রুত চলতে থাকলেন এবং অভিযানকারীগণ সামনে এগিয়ে গেলেন। পরিশেষে আমি ইচ্ছা করলাম রওয়ানা হয়ে যাব এবং তাদের ধরে ফেলব। আহা! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু তা করা আমার পক্ষে সম্ভব হল না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বের হয়ে যাওয়ার পর যখনই আমি লোকজনের মধ্যে বের হতাম, তখন এই দৃশ্য আমাকে কষ্ট দিত যে, যুদ্ধে অনুপস্থিতিতে আমার অনুরূপ দেখতাম এমন কোনও লোককে, যে মুনাফিকীর অভিযোগে অভিযুক্ত। অথবা এমন দুর্বল শ্রেণীভুক্ত কোনও লোককে, যাদের আল্লাহ তা'আলা নিষ্কৃতি দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকে না পৌছা পর্যন্ত আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবুকে পৌঁছার পর তিনি লোকজনের মধ্যে বসা। এ অবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, কা'ব ইবনে মালিক কী করল (অর্থাৎ তার খবর কী)? বনু সালিমার জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে আটকে রেখেছে তার কাপড়জোড়া এবং নিজের দুই কাঁধের প্রতি দৃষ্টিপাত (অর্থাৎ আত্মাভিমান)। কিন্তু হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. তার এ কথার প্রতিবাদ করলেন এবং) তাকে বললেন, তুমি নেহাত মন্দ বলেছ। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমরা তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া কিছুই জানি না ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। তিনি এ অবস্থায়ই ছিলেন। সহসা সাদা পোশাকের জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, যার থেকে ক্রমে মরীচিকা সরে যাচ্ছে (অর্থাৎ ক্রমেই সামনে এগিয়ে আসছে)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আবু খায়ছামা হও। সহসা দেখা গেল তিনি আবু খায়ছামা আনসারীই বটে। তিনিই ওই ব্যক্তি, এক সা' খেজুর সদাকা করলে মুনাফিকরা যাকে কটাক্ষ করেছিল।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, পরিশেষে যখন আমি খবর পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক থেকে ফেরত রওয়ানা হয়ে গেছেন, তখন আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল। মনে মনে আমি মিথ্যা রচনা করছিলাম আর বলছিলাম, আমি আগামীকাল তাঁর ক্রোধ থেকে কিভাবে নিষ্কৃতি পাব? এ ব্যাপারে আমি আমার খান্দানের প্রত্যেক বিচক্ষণ ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য নিতে থাকি? যখন বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা মুনাওয়ারায়) এসে পৌঁছেছেন, তখন আমার অন্তর থেকে সব মিথ্যা দূর হয়ে গেল। আমি বুঝে ফেললাম, মিথ্যা কোনও কিছুর দ্বারা আমি কখনোই তাঁর (ক্রোধ) থেকে নিস্তার পাব না। সুতরাং আমি সত্য বলতে স্থিরসংকল্প হলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পৌঁছালেন। তিনি যখনই কোনও সফর থেকে ফিরে আসতেন, প্রথমে মসজিদে ঢুকতেন এবং দু'রাকআত নামায পড়তেন। তারপর লোকজনের সংগে বসতেন। (এ বারও) যখন তা করে সারলেন, মুনাফিকগণ তাঁর কাছে এসে অজুহাত দেখাতে লাগল এবং তারা তাঁর কাছে শপথ করতে লাগল (যে, তারা যা বলছে সত্যই বলছে)। তারা ছিল আশিজনের কিছু বেশি। তিনি তাদের প্রকাশ্য ওজর-অজুহাত গ্রহণ করে নিলেন, তাদেরকে বাইআত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের মনের অবস্থা আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলেন।
অবশেষে আমি আসলাম। আমি যখন সালাম দিলাম, তিনি মুচকি হাসলেন ক্রুদ্ধ ব্যক্তির মুচকি হাসার মত। তারপর বললেন, এস। আমি হেঁটে হেঁটে আসলাম এবং তাঁর সম্মুখে বসলাম। তিনি বললেন, তুমি অনুপস্থিত থাকলে কেন? তুমি না তোমার বাহন কিনে রেখেছিলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! যদি আপনি ছাড়া দুনিয়াদার কোনও ব্যক্তির সামনে আমি বসতাম, তবে আমি বিশ্বাস করি কোনও ওজর দেখিয়ে তার ক্রোধ থেকে আমি নিষ্কৃতি পেয়ে যেতাম। আমাকে যথেষ্ট বাগবৈদগ্ধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তো জানি আজ যদি আপনাকে এমন কোনও মিথ্যাকথা বলি, যা দ্বারা আপনি আমার প্রতি খুশি হয়ে যান, তবে অচিরেই আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আপনাকে অসন্তুষ্ট করে দেবেন।
আর যদি আমি আপনাকে সত্যকথা বলি, যে কথায় আপনি আমার প্রতি মনক্ষুন্ন হন, তবে সে ব্যাপারে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম পরিণামের আশা করি। আল্লাহর কসম! আমার কোনও ওজর ছিল না। এবং আল্লাহর কসম! আমি যখন আপনার সংগে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকি, তখন যতটা সক্ষম ও সচ্ছল ছিলাম, অতটা আর কখনও ছিলাম না।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথা শুনে বললেন, এই লোক সত্যকথা বলেছে। তারপর বললেন, ওঠ (এবং অপেক্ষায় থাক), যাবত না আল্লাহ তোমার সম্পর্কে ফয়সালা দান করেন।
বনু সালিমার কিছু লোক আমার পেছনে পেছনে চলল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম! তুমি এর আগে আর কোনও অপরাধ করেছ বলে তো আমরা জানি না। অন্যান্য যারা যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিল, তারা যেমনটা ওজর-অজুহাত প্রদর্শন করেছে, তেমনি তুমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনও অজুহাত প্রদর্শন করতে পারলে না? তোমার অপরাধ মোচনের জন্য তো তোমার পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইস্তিগফারই যথেষ্ট ছিল। এভাবে তারা আমাকে ভর্ৎসনা করতে থাকল। পরিশেষে আমি ইচ্ছা করে ফেললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে যাব এবং (তাঁর কাছে দেওয়া পূর্বের বক্তব্যের জন্য) নিজেকে মিথ্যুক ঠাওরাব (অর্থাৎ আমি আগে ভুল বলেছিলাম, আসলে আমার এই এই ওজর ছিল) ।
তারপর আমি তাদের বললাম, আমার মত এ অবস্থার সম্মুখীন আর কেউ হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, তোমার মত অবস্থার সম্মুখীন আরও দু'জন লোক হয়েছেন। তারাও তোমার অনুরূপ কথা বলেছেন এবং তাদেরকেও তোমার অনুরূপ বলে দেওয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তারা বলল, মুরারা ইবন রাবীআ আমিরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী। তারা দু'জন নেককার লোকের নাম আমার কাছে উল্লেখ করল, যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমি বললাম, তাদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ রয়েছে।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, তারা যখন ওই দুই ব্যক্তির কথা আমাকে বলল, আমি (আমার সত্যে অবিচল থাকার সংকল্পে) চলে গেলাম। ওদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা যুদ্ধাভিযানে যোগদান থেকে বিরত থেকেছিল, তাদের মধ্য থেকে আমাদের এই তিনজনের সংগে লোকজনকে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন। ফলে মানুষ আমাদের পরিত্যাগ করল। কিংবা তিনি বললেন, আমাদের কাছে তারা বদলে গেল । এমনকি আমার কাছে পৃথিবীটাই অপরিচিত হয়ে গেল। এ যেন সেই পৃথিবী নয়, যাকে আমি চিনি। এ অবস্থায় আমাদের কাটল পঞ্চাশ রাত।
ওদিকে আমার দুই সংগী দুর্বল হয়ে পড়ল এবং তারা নিজ ঘরে বসে কাঁদতে থাকল। আর আমি ছিলাম সকলের মধ্যে যুবক এবং তাদের চেয়ে বেশি শক্তিমান। তাই আমি বের হতাম এবং মুসলিমদের সংগে নামাযে হাজির হতাম। আমি বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম, কিন্তু কেউ আমার সংগে কথা বলত না।
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতাম এবং তাঁকে সালাম দিতাম যখন তিনি নামাযের পর আপন স্থানে বসা থাকতেন। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি কি সালামের জবাবে ওষ্ঠদ্বয় নেড়েছেন, না নাড়েননি? তারপর আমি তাঁর কাছাকাছি স্থানে নামায পড়তাম এবং চোরা চোখে তাঁকে দেখতাম। যখন আমি নামাযে অভিনিবিষ্ট হতাম, তিনি আমার দিকে তাকাতেন। আবার যখন তাঁর দিকে ফিরতাম, আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে যখন আমার প্রতি মুসলিমদের কঠোরতা দীর্ঘায়িত হল, তখন একদিন আমি এগিয়ে গেলাম এবং আবু কাতাদার বাগানের প্রাচীর টপকালাম। তিনি আমার চাচাত ভাই এবং আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। আমি তাকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। তখন তাকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করি তুমি কি আমার সম্পর্কে জান যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি? তিনি নীরব থাকলেন। আমি ফের তাকে কসম দিয়ে ওই কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি নীরবই থাকলেন। ফের তাকে কসম দিয়ে ওই কথা বললাম। এবার তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তার এ কথায় আমার দু'চোখ ছাপিয়ে পানি নামল। আমি সরে আসলাম এবং প্রাচীর টপকালাম।
একদিনকার কথা, আমি মদীনার বাজারে হাঁটছি। সহসা দেখি শামের যারা মদীনায় খাদ্যশস্য বিক্রি করতে এসেছে তাদের মধ্যকার এক নাবাতী (কৃষক) বলছে, কে আমায় বলতে পারে কা'ব ইবন মালিককে কোথায় পাব? তখন লোকজন আমার দিকে ইশারা করতে লাগল । শেষে সে আমার কাছে আসল এবং আমার হাতে গাসসান রাজার একটি চিঠি অর্পণ করল। আমি লিখতে পড়তে জানতাম। সুতরাং চিঠিটি পড়লাম। দেখি কি, তাতে লেখা আছে- অতঃপর বক্তব্য এই যে, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে তোমার নেতা তোমার প্রতি কঠোরতা করছেন। আল্লাহ তা'আলা তো তোমাকে এমন ঘরে জন্ম দেননি, যেখানে তুমি লাঞ্ছিত হবে এবং তোমার অধিকার খর্ব করা হবে। (তা সত্ত্বেও যখন তুমি সেই অবস্থার শিকার) অতএব তুমি আমাদের কাছে চলে এস। আমরা তোমার সমব্যাথী হব। চিঠিটি পড়ে আমি বললাম, এটাও একটা পরীক্ষা। সুতরাং আমি সেটি নিয়ে চুলার কাছে গেলাম এবং সেটি জ্বালিয়ে দিলাম।
এভাবে যখন পঞ্চাশ দিন থেকে চল্লিশ দিন গত হল আর এ সময় ওহীও থেমে থাকল, তখন সহসা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত আমার নিকট এসে উপস্থিত। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে আদেশ করছেন, যেন নিজ স্ত্রী থেকে দূরে থাক। আমি বললাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দেব? কিংবা আমি কী করব? তিনি বললেন, না, তার থেকে দূরে থাকবে। তার কাছে যাবে না। আমার দুই সঙ্গীর কাছেও তিনি অনুরূপ নির্দেশ দিয়ে পাঠান। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পরিবারে চলে যাও। তাদের কাছেই থাকতে থাক, যাবত না আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে ফয়সালা দান করেন।
এ নির্দেশের পর হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আবেদন জানাল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন উমাইয়া একজন অথর্ব বৃদ্ধ । তার কোনও খাদেম নেই। আমি যদি তার খেদমত করি, আপনি কি অপসন্দ করবেন? তিনি বললেন, না। তবে সে যেন তোমার সাথে মিলিত না হয়। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তার অবস্থা তো এই যে, কোনও কিছুর প্রতিই তার কোনও নড়াচড়া নেই। এবং আল্লাহর কসম! তার এই ঘটনা ঘটার পর থেকে এই পর্যন্ত তিনি অবিরাম কেঁদে যাচ্ছেন।
হযরত কা'ব রাঃ বলেন, (হিলাল ইবনে উমাইয়া সম্পর্কে এ কথা জানার পর) আমার পরিবারের কেউ কেউ আমাকে বলল, তুমিও যদি তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইতে? তিনি তো হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তার স্বামীর খেদমত করার অনুমতি দিয়েছেন।
আমি বললাম, আমি তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাব না। কি জানি, তার ব্যাপারে আমি তাঁর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে কী বলবেন? আমি যে একজন যুবা পুরুষ!
এভাবে আরও দশদিন কাটালাম। আমাদের সংগে কথা বলা নিষেধ করে দেওয়ার পর থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল। পঞ্চাশতম রাতের ভোরে আমি আমাদের একটি ঘরের ছাদে ফজরের নামায পড়লাম। নামাযের পরে আমি বসা আছি। আর আমার অবস্থা তো সেটাই, যা আল্লাহ তাআলা আমদের সম্পর্কে (কুরআন মাজীদে) বর্ণনা করেছেন। আমার পক্ষে আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এই প্রশস্ত পৃথিবী আমার জন্যে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তো ওই বসা অবস্থায় হঠাৎ আমি জনৈক আওয়াজদাতার আওয়াজ শুনতে পেলাম। সে সালা' পাহাড়ের উপর উঠে উচ্চস্বরে বলছে, হে কা'ব ইবন মালিক, সুসংবাদ নাও! এ কথা শুনতেই আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। বুঝে ফেললাম মুক্তি এসে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায আদায়ের পর ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন। ফলে লোকজন আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়ে পড়েছে। আমার দুই সঙ্গীর কাছে সুসংবাদদাতাগণ চলে গেছে।
এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে আমার দিকে ছুটে পড়েছে। আর আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি আমার দিকে দৌড় দিয়েছে। সে-ই পাহাড়ের উপর উঠে আওয়াজ দিয়েছে। ঘোড়ার চেয়ে তার আওয়াজই ছিল বেশি দ্রুতগামী। তারপর আমি যার আওয়াজ শুনেছিলাম সে যখন সুসংবাদ জানাতে আমার কাছে আসল, আমি আমার কাপড়দু'টি খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম- তার সুসংবাদ দানের পুরস্কারে। আল্লাহর কসম! সেদিন ওই দু'টি ছাড়া আমি আর কোনও কাপড়ের মালিক ছিলাম না। পরে আমি দু'টি কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লাম। তারপর লোকজন তাওবা কবুলের জন্য মুবারকবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে দলে দলে এসে আমার সংগে সাক্ষাত করল। তারা আমাকে বলছিল, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা কবুল তোমার জন্য শুভ হোক। অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন। তাঁর চারপাশে লোকজন বসা। তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাযি. আমার দিকে ছুটে আসলেন। তিনি এসে আমার সংগে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে শুভেচ্ছা জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া আর একজন লোকও ওঠেনি।
হযরত কা'ব ইবনে মালিক রাঃ হযরত তালহা রাযি.-এর এ আচরণ কখনও ভোলেননি।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলাম, তখন আনন্দে তাঁর চেহারায় বিদ্যুৎ খেলছিল। তিনি বললেন, সুসংবাদ নাও তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিবসের! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ সুসংবাদ কি আপনার পক্ষ থেকে, না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, না, বরং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আনন্দিত হতেন, তখন তাঁর চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। মনে হত যেন তাঁর চেহারা চাঁদের একটি টুকরো। আমরা তাঁর এ অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম । আমি তাঁর সামনে বসার পর বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার তাওবার একটা অংশ এই যে, আমি আমার যাবতীয় সম্পদ থেকে মুক্ত হয়ে যাব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে সদাকা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু সম্পদ নিজের কাছে রেখে দাও। এটাই তোমার পক্ষে শ্রেয়। আমি বললাম, (ঠিক আছে) খায়বারে (গনীমতের হিস্যা হিসেবে) আমার যে অংশ আছে তা রেখে দেব।
আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আমাকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন কেবলই সত্য বলার সুবাদে। সুতরাং আমার তাওবার একটা অংশ এও যে, আমি যতদিন জীবিত থাকি কেবল সত্য কথাই বলব।
(হযরত কা'ব রাযি. বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলার কারণে আল্লাহ তা'আলা আমাকে যেমন পুরস্কৃত করেছেন, অন্য কোনও মুসলিমকে সত্য বলার দরুন আল্লাহ তা'আলা এর চেয়ে উত্তম পুরস্কার দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি ওই কথা বলার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনও কোনও মিথ্যা বলার ইচ্ছা করিনি। আমি আশা করি বাকি জীবনেও আল্লাহ তা'আলা আমাকে হেফাজত করবেন।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেন-
لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (117)
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (118) يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119)
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ সদয় দৃষ্টি দিয়েছেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মুহূর্তে নবীর সঙ্গে থেকেছিল, যখন তাদের একটি দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান, পরম দয়ালু। এবং সেই তিন জনের প্রতিও (আল্লাহ সদয় হলেন), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না এ পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল, তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠল এবং তারা উপলব্ধি করল, আল্লাহর (ধরা) থেকে খোদ তাঁর আশ্রয় ছাড়া কোথাও আশ্রয় পাওয়া যাবে না, পরে আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হলেন, যাতে তারা তারই দিকে রুজু করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।- তাওবাঃ ১১৭-১১৯
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমাকে হিদায়াত দান করার পর আল্লাহ তা'আলা আমার দৃষ্টিতে আমাকে এরচে' বড় কোনও নি'আমত দেননি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলেছিলাম, তাঁর সংগে আমি মিথ্যা বলিনি। নতুবা আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়েছে ওই সকল লোক, যারা মিথ্যা বলেছিল। কেননা যারা মিথ্যা বলেছিল, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সর্বাপেক্ষা কঠিন কথা বলেছেন । আল্লাহ তা'আলা বলেন-
{سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (95) يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ (96)} [التوبة: 95، 96]
অর্থ : তোমরা যখন তাদের কাছে ফিরে যাবে, তখন তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর কসম করবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। নিশ্চয়ই তারা (আপাদমস্তক) অপবিত্র। আর তারা যা অর্জন করছে তজ্জন্য তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তোমরা যাতে তাদের প্রতি খুশি হয়ে যাও সেজন্য তারা তোমাদের সামনে কসম করবে, অথচ তোমরা তাদের প্রতি খুশি হলেও আল্লাহ (এরূপ) অবাধ্য লোকদের প্রতি খুশি হবেন না। তাওবাঃ ৯৫-৯৬
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমাদের তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কসম করে মিথ্যা বলেছিল, তিনি তাদের অজুহাত গ্রহণ করেছিলেন, তাদের বাই'আত করেছিলেন এবং তাদের পক্ষে ইস্তিগফার করেছিলেন। তাদের থেকে আলাদা করে আমাদের তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা বিলম্বিত রাখেন। পরিশেষে আল্লাহ তা'আলা সে ব্যাপারে ফয়সালা দান করেন। এ বিষয়টিই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে বলেন-
وَعَلَى الثَّلَثَةِ الَّذِينَ خَلِفُوا
'এবং সেই তিন জনের প্রতিও (আল্লাহ সদয় হলেন), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল।
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা যে বলেছেন, এর দ্বারা যুদ্ধাভিযান থেকে আমাদের পিছিয়ে থাকার কথা বোঝানো হয়নি; বরং যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে শপথ করেছিল ও মিথ্যা অজুহাত দেখিয়েছিল, যা তিনি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, তাদের থেকে আলাদাভাবে আমাদের পিছিয়ে রাখা ও আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখার কথা বোঝানো হয়েছে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৪৪১৮,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৯)
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধাভিযানে বের হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি বৃহস্পতিবার বের হওয়া পছন্দ করতেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি দিনের প্রথম প্রহর ছাড়া সফর থেকে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসার পর তিনি প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং দু' রাক'আত নামায পড়তেন। তারপর সেখানে বসতেন।
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
21 - وعن عبدِ الله بن كعبِ بنِ مالكٍ، وكان قائِدَ كعبٍ - رضي الله عنه - مِنْ بَنِيهِ حِينَ عمِيَ، قَالَ: سَمِعتُ كَعْبَ بنَ مالكٍ - رضي الله عنه - يُحَدِّثُ بحَديثهِ حينَ تَخلَّفَ عن رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةِ تَبُوكَ. قَالَ كعبٌ: لَمْ أتَخَلَّفْ عَنْ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةٍ غزاها قط إلا في غزوة تَبُوكَ، غَيْرَ أنّي قَدْ تَخَلَّفْتُ في غَزْوَةِ بَدْرٍ، ولَمْ يُعَاتَبْ أَحَدٌ تَخَلَّفَ عَنْهُ؛ إِنَّمَا خَرَجَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - والمُسْلِمُونَ يُريدُونَ عِيرَ (1) قُرَيْشٍ حَتَّى جَمَعَ الله تَعَالَى بَيْنَهُمْ وبَيْنَ عَدُوِّهمْ عَلَى غَيْر ميعادٍ. ولَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - لَيلَةَ العَقَبَةِ حينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلامِ، وما أُحِبُّ أنَّ لي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ، وإنْ كَانَتْ بدرٌ أذْكَرَ في النَّاسِ مِنْهَا.
وكانَ مِنْ خَبَري حينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةِ تَبُوكَ أنِّي لم أكُنْ قَطُّ أَقْوى ولا أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عنْهُ في تِلكَ الغَزْوَةِ، وَالله ما جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا في تِلْكَ الغَزْوَةِ وَلَمْ يَكُنْ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - يُريدُ غَزْوَةً إلاَّ وَرَّى (2) بِغَيرِها حَتَّى كَانَتْ تلْكَ الغَزْوَةُ، فَغَزَاها رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في حَرٍّ شَديدٍ، واسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيدًا وَمَفَازًا، وَاستَقْبَلَ عَدَدًا كَثِيرًا، فَجَلَّى للْمُسْلِمينَ أمْرَهُمْ ليتَأهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهمْ فأَخْبرَهُمْ بوَجْهِهِمُ الَّذِي يُريدُ، والمُسلِمونَ مَعَ رسولِ الله كثيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابٌ حَافِظٌ «يُريدُ بذلِكَ الدّيوَانَ» (3) قَالَ كَعْبٌ: فَقَلَّ رَجُلٌ يُريدُ أَنْ يَتَغَيَّبَ إلاَّ ظَنَّ أنَّ ذلِكَ سيخْفَى بِهِ ما لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْيٌ مِنَ الله، وَغَزا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - تِلْكَ الغَزوَةَ حِينَ طَابَت الثِّمَارُ وَالظِّلالُ، فَأنَا إلَيْهَا أصْعَرُ (4)، فَتَجَهَّزَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - وَالمُسْلِمُونَ مَعَهُ وطَفِقْتُ أغْدُو لكَيْ أتَجَهَّزَ مَعَهُ،
فأرْجِعُ وَلَمْ أقْضِ شَيْئًا، وأقُولُ في نفسي: أنَا قَادرٌ عَلَى ذلِكَ إِذَا أَرَدْتُ، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمادى بي حَتَّى اسْتَمَرَّ بالنَّاسِ الْجِدُّ، فأصْبَحَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - غَاديًا والمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أقْضِ مِنْ جِهَازي شَيْئًا، ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أقْضِ شَيئًا، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بي حَتَّى أسْرَعُوا وتَفَارَطَ الغَزْوُ، فَهَمَمْتُ أَنْ أرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ، فَيَا لَيْتَني فَعَلْتُ، ثُمَّ لم يُقَدَّرْ ذلِكَ لي، فَطَفِقْتُ إذَا خَرَجْتُ في النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَحْزُنُنِي أنِّي لا أرَى لي أُسْوَةً، إلاّ رَجُلًا مَغْمُوصًا (1) عَلَيْهِ في النِّفَاقِ، أوْ رَجُلًا مِمَّنْ عَذَرَ اللهُ تَعَالَى مِنَ الضُّعَفَاءِ، وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى بَلَغَ تَبُوكَ، فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ في القَوْمِ بِتَبُوكَ: «ما فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ: يا رَسُولَ اللهِ، حَبَسَهُ بُرْدَاهُ والنَّظَرُ في عِطْفَيْهِ (2). فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ - رضي الله عنه: بِئْسَ مَا قُلْتَ! واللهِ يا رَسُولَ اللهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ إلاَّ خَيْرًا، فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم. فَبَيْنَا هُوَ عَلى ذَلِكَ رَأى رَجُلًا مُبْيِضًا يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم: «كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ»، فَإذَا هُوَ أبُو خَيْثَمَةَ الأنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِيْنَ لَمَزَهُ المُنَافِقُونَ.
قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا بَلَغَنِي أنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلًا مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَثِّي، فَطَفِقْتُ أتَذَكَّرُ الكَذِبَ وأقُولُ: بِمَ أخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غَدًا؟ وأسْتَعِيْنُ عَلى ذَلِكَ بِكُلِّ ذِي رأْيٍ مِنْ أهْلِي، فَلَمَّا قِيْلَ: إنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قّدْ أظَلَّ قَادِمًا، زَاحَ عَنّي البَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَيءٍ أَبَدًا، فَأجْمَعْتُ صدْقَهُ وأَصْبَحَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم - قَادِمًا، وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ، فَلَمَّا فَعَلَ ذلِكَ جَاءهُ المُخَلَّفُونَ يَعْتَذِرونَ إِلَيْه ويَحْلِفُونَ لَهُ، وَكَانُوا بِضْعًا وَثَمانينَ رَجُلًا، فَقَبِلَ مِنْهُمْ عَلانِيَتَهُمْ وَبَايَعَهُمْ واسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلى الله تَعَالَى، حَتَّى جِئْتُ، فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ المُغْضَبِ. ثُمَّ قَالَ: «تَعَالَ»، فَجِئْتُ أمْشي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ، فقالَ لي: «مَا خَلَّفَكَ؟ ألَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ؟» قَالَ: قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنّي والله لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا لَرَأيتُ أنِّي سَأخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ؛ لقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلًا، ولَكِنِّي والله لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ اليوم حَدِيثَ كَذبٍ تَرْضَى به عنِّي
لَيُوشِكَنَّ الله أن يُسْخِطَكَ عَلَيَّ، وإنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدقٍ تَجِدُ عَلَيَّ فِيهِ إنّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى الله - عز وجل - والله ما كَانَ لي مِنْ عُذْرٍ، واللهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ.
قَالَ: فقالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أمَّا هَذَا فقَدْ صَدَقَ، فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ فيكَ». وَسَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَة فاتَّبَعُوني فَقالُوا لِي: واللهِ مَا عَلِمْنَاكَ أذْنَبْتَ ذَنْبًا قَبْلَ هذَا لَقَدْ عَجَزْتَ في أَنْ لا تَكونَ اعتَذَرْتَ إِلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بما اعْتَذَرَ إليهِ المُخَلَّفُونَ، فَقَدْ كَانَ كَافِيكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - لَكَ.
قَالَ: فَوالله ما زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُّ أَنْ أرْجعَ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فأُكَذِّبَ نَفْسِي، ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ: هَلْ لَقِيَ هذَا مَعِيَ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالُوا: نَعَمْ، لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلانِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ، وَقيلَ لَهُمَا مِثْلَ مَا قيلَ لَكَ، قَالَ: قُلْتُ: مَنْ هُما؟ قَالُوا: مُرَارَةُ بْنُ الرَّبيع الْعَمْرِيُّ، وهِلاَلُ ابنُ أُمَيَّةَ الوَاقِفِيُّ؟ قَالَ: فَذَكَرُوا لِي رَجُلَينِ صَالِحَينِ قَدْ شَهِدَا بَدْرًا فيهِما أُسْوَةٌ، قَالَ: فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُما لِي. ونَهَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - عَنْ كَلامِنا أيُّهَا الثَّلاثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ، فاجْتَنَبَنَا النَّاسُ - أوْ قَالَ: تَغَيَّرُوا لَنَا - حَتَّى تَنَكَّرَتْ لي في نَفْسي الأَرْض، فَمَا هِيَ بالأرْضِ الَّتي أعْرِفُ، فَلَبِثْنَا عَلَى ذلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً. فَأمّا صَاحِبَايَ فَاسْتَكَانا وقَعَدَا في بُيُوتِهِمَا يَبْكيَان. وأمَّا أنَا فَكُنْتُ أشَبَّ الْقَومِ وأجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أخْرُجُ فَأشْهَدُ الصَّلاَةَ مَعَ المُسْلِمِينَ، وأطُوفُ في الأَسْوَاقِ وَلا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ، وَآتِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ في مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاةِ، فَأَقُولُ في نَفسِي: هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْه برَدِّ السَّلام أَمْ لاَ؟ ثُمَّ أُصَلِّي قَريبًا مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ، فَإِذَا أقْبَلْتُ عَلَى صَلاتِي نَظَرَ إلَيَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أعْرَضَ عَنِّي، حَتَّى إِذَا طَال ذلِكَ عَلَيَّ مِنْ جَفْوَةِ المُسْلِمينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جِدارَ حائِط أبي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وأَحَبُّ النَّاس إِلَيَّ، فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ فَوَاللهِ مَا رَدَّ عَليَّ السَّلامَ، فَقُلْتُ لَهُ: يَا أَبَا قَتَادَةَ، أنْشُدُكَ بالله هَلْ تَعْلَمُنِي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ - صلى الله عليه وسلم -؟ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ، فَقَالَ: اللهُ ورَسُولُهُ أَعْلَمُ. فَفَاضَتْ عَيْنَايَ، وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ الجِدَارَ، فَبَيْنَا أَنَا أمْشِي في سُوقِ الْمَدِينة إِذَا نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ (1) أهْلِ الشَّام مِمّنْ قَدِمَ بالطَّعَامِ يَبيعُهُ بِالمَدِينَةِ يَقُولُ: مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ؟ فَطَفِقَ النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إلَيَّ حَتَّى جَاءنِي فَدَفَعَ إِلَيَّ كِتَابًا مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ، وَكُنْتُ كَاتبًا.
فَقَرَأْتُهُ فإِذَا فِيهِ: أَمَّا بَعْدُ، فإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنا أنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللهُ بدَارِ هَوانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ (1)، فَالْحَقْ بنَا نُوَاسِكَ، فَقُلْتُ حِينَ قَرَأْتُهَا: وَهَذِهِ أَيضًا مِنَ البَلاءِ، فَتَيَمَّمْتُ بهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا، حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْيُ إِذَا رسولُ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - يَأتِيني، فَقالَ: إنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَأمُرُكَ أَنْ تَعْتَزِلَ امْرَأتَكَ، فَقُلْتُ: أُطَلِّقُهَا أمْ مَاذَا أفْعَلُ؟ فَقالَ: لاَ، بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا، وَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَيَّ بِمِثْلِ ذلِكَ. فَقُلْتُ لامْرَأتِي: الْحَقِي بِأهْلِكِ (2) فَكُوني عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ في هَذَا الأمْرِ. فَجَاءتِ امْرَأةُ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَتْ لَهُ: يَا رَسُولَ الله، إنَّ هِلاَلَ بْنَ أمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ، فَهَلْ تَكْرَهُ أَنْ أخْدُمَهُ؟ قَالَ: «لاَ، وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ» فَقَالَتْ: إِنَّهُ واللهِ ما بِهِ مِنْ حَرَكَةٍ إِلَى شَيْءٍ، وَوَالله مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَومِهِ هَذَا. فَقَالَ لي بَعْضُ أهْلِي: لَو اسْتَأْذَنْتَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - في امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِن لاِمْرَأةِ هلاَل بْنِ أمَيَّةَ أَنْ تَخْدُمَهُ؟ فَقُلْتُ: لاَ أسْتَأذِنُ فيها رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - وَمَا يُدْرِيني مَاذَا يقُول رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ، وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ! فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ (3) لَنا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنا، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا، فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحالِ الَّتي ذَكَرَ الله تَعَالَى مِنَّا، قَدْ ضَاقَتْ عَلَيَّ نَفْسي وَضَاقَتْ عَلَيَّ الأرْضُ بِمَا رَحُبَتْ، سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أوفَى عَلَى سَلْعٍ (4) يَقُولُ بِأعْلَى صَوتِهِ: يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أبْشِرْ، فَخَرَرْتُ سَاجِدًا (5)، وَعَرَفْتُ أنَّهُ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ. فآذَنَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - النَّاسَ بِتَوْبَةِ الله - عز وجل - عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاةَ الفَجْر فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا، فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَيَّ مُبَشِّرونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَيَّ فَرَسًا وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أسْلَمَ قِبَلِي، وَأَوْفَى عَلَى الْجَبَلِ، فَكانَ الصَّوْتُ أسْرَعَ مِنَ الفَرَسِ، فَلَمَّا جَاءني الَّذِيسَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُني نَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَيَّ فَكَسَوْتُهُمَا إيَّاهُ بِبشارته، وَاللهِ مَا أمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ، وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ فَلَبسْتُهُما، وَانْطَلَقْتُ أتَأمَّمُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَتَلَقَّاني النَّاسُ فَوْجًا فَوْجًا يُهنِّئونَني بالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِي: لِتَهْنِكَ تَوْبَةُ الله عَلَيْكَ. حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - جَالِسٌ حَوْلَه النَّاسُ، فَقَامَ (1) طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ - رضي الله عنه - يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَني وَهَنَّأَنِي، والله مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ المُهَاجِرينَ غَيرُهُ - فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ.قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُور: «أبْشِرْ بِخَيْرِ يَومٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُذْ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ» فَقُلْتُ: أمِنْ عِنْدِكَ يَا رَسُول الله أَمْ مِنْ عِندِ الله؟ قَالَ: «لاَ، بَلْ مِنْ عِنْدِ الله - عز وجل -»، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ وَكُنَّا نَعْرِفُ ذلِكَ مِنْهُ، فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُولهِ. فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أمْسِكَ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ». فقلتُ: إِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيبَر. وَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى إِنَّمَا أنْجَانِي بالصِّدْقِ، وإنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ لا أُحَدِّثَ إلاَّ صِدْقًا مَا بَقِيتُ، فوَالله مَا عَلِمْتُ أَحَدًا مِنَ المُسْلِمينَ أبْلاهُ الله تَعَالَى في صِدْقِ الحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - أحْسَنَ مِمَّا أبْلانِي الله تَعَالَى، واللهِ مَا تَعَمَّدْتُ كِذْبَةً مُنْذُ قُلْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِلَى يَومِيَ هَذَا، وإنِّي لأرْجُو أَنْ يَحْفَظَنِي الله تَعَالَى فيما بَقِيَ، قَالَ: فأَنْزَلَ الله تَعَالَى: {لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ} حَتَّى بَلَغَ: {إِنَّهُ بِهِمْ رَؤُوفٌ رَحِيم وَعَلَى الثَّلاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ} حَتَّى بَلَغَ: {اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ} [التوبة: 117 - 119] قَالَ كَعْبٌ: واللهِ ما أنْعَمَ الله عَليَّ مِنْ نعمةٍ
قَطُّ بَعْدَ إذْ هَدَاني اللهُ للإِسْلامِ أَعْظَمَ في نَفْسِي مِنْ صِدقِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - أَنْ لا أكونَ كَذَبْتُهُ، فَأَهْلِكَ كما هَلَكَ الَّذينَ كَذَبُوا؛ إنَّ الله تَعَالَى قَالَ للَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أنْزَلَ الوَحْيَ شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ، فقال الله تَعَالَى: {سَيَحْلِفُونَ بِاللهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ} [التوبة: 95 - 96] قَالَ كَعْبٌ: كُنّا خُلّفْنَا أيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أمْرِ أُولئكَ الذينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وأرجَأَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - أمْرَنَا حَتَّى قَضَى الله تَعَالَى فِيهِ بذِلكَ. قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَلَى الثَّلاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا} وَليْسَ الَّذِي ذَكَرَ مِمَّا خُلِّفْنَا تَخلُّفُنَا عن الغَزْو، وإنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إيّانا وإرْجَاؤُهُ أمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ واعْتَذَرَ إِلَيْهِ فقبِلَ مِنْهُ (1). مُتَّفَقٌ عليه. (2)
وفي رواية: أنَّ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - خَرَجَ في غَزْوَةِ تَبْوكَ يَومَ الخَميسِ وكانَ يُحِبُّ أَنْ يخْرُجَ يومَ الخمِيس.
وفي رواية: وكانَ لاَ يقْدمُ مِنْ سَفَرٍ إلاَّ نَهَارًا في الضُّحَى، فإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بالمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيهِ
وكانَ مِنْ خَبَري حينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةِ تَبُوكَ أنِّي لم أكُنْ قَطُّ أَقْوى ولا أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عنْهُ في تِلكَ الغَزْوَةِ، وَالله ما جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا في تِلْكَ الغَزْوَةِ وَلَمْ يَكُنْ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - يُريدُ غَزْوَةً إلاَّ وَرَّى (2) بِغَيرِها حَتَّى كَانَتْ تلْكَ الغَزْوَةُ، فَغَزَاها رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في حَرٍّ شَديدٍ، واسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيدًا وَمَفَازًا، وَاستَقْبَلَ عَدَدًا كَثِيرًا، فَجَلَّى للْمُسْلِمينَ أمْرَهُمْ ليتَأهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهمْ فأَخْبرَهُمْ بوَجْهِهِمُ الَّذِي يُريدُ، والمُسلِمونَ مَعَ رسولِ الله كثيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابٌ حَافِظٌ «يُريدُ بذلِكَ الدّيوَانَ» (3) قَالَ كَعْبٌ: فَقَلَّ رَجُلٌ يُريدُ أَنْ يَتَغَيَّبَ إلاَّ ظَنَّ أنَّ ذلِكَ سيخْفَى بِهِ ما لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْيٌ مِنَ الله، وَغَزا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - تِلْكَ الغَزوَةَ حِينَ طَابَت الثِّمَارُ وَالظِّلالُ، فَأنَا إلَيْهَا أصْعَرُ (4)، فَتَجَهَّزَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - وَالمُسْلِمُونَ مَعَهُ وطَفِقْتُ أغْدُو لكَيْ أتَجَهَّزَ مَعَهُ،
فأرْجِعُ وَلَمْ أقْضِ شَيْئًا، وأقُولُ في نفسي: أنَا قَادرٌ عَلَى ذلِكَ إِذَا أَرَدْتُ، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمادى بي حَتَّى اسْتَمَرَّ بالنَّاسِ الْجِدُّ، فأصْبَحَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - غَاديًا والمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أقْضِ مِنْ جِهَازي شَيْئًا، ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أقْضِ شَيئًا، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بي حَتَّى أسْرَعُوا وتَفَارَطَ الغَزْوُ، فَهَمَمْتُ أَنْ أرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ، فَيَا لَيْتَني فَعَلْتُ، ثُمَّ لم يُقَدَّرْ ذلِكَ لي، فَطَفِقْتُ إذَا خَرَجْتُ في النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَحْزُنُنِي أنِّي لا أرَى لي أُسْوَةً، إلاّ رَجُلًا مَغْمُوصًا (1) عَلَيْهِ في النِّفَاقِ، أوْ رَجُلًا مِمَّنْ عَذَرَ اللهُ تَعَالَى مِنَ الضُّعَفَاءِ، وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى بَلَغَ تَبُوكَ، فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ في القَوْمِ بِتَبُوكَ: «ما فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ: يا رَسُولَ اللهِ، حَبَسَهُ بُرْدَاهُ والنَّظَرُ في عِطْفَيْهِ (2). فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ - رضي الله عنه: بِئْسَ مَا قُلْتَ! واللهِ يا رَسُولَ اللهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ إلاَّ خَيْرًا، فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم. فَبَيْنَا هُوَ عَلى ذَلِكَ رَأى رَجُلًا مُبْيِضًا يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم: «كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ»، فَإذَا هُوَ أبُو خَيْثَمَةَ الأنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِيْنَ لَمَزَهُ المُنَافِقُونَ.
قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا بَلَغَنِي أنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلًا مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَثِّي، فَطَفِقْتُ أتَذَكَّرُ الكَذِبَ وأقُولُ: بِمَ أخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غَدًا؟ وأسْتَعِيْنُ عَلى ذَلِكَ بِكُلِّ ذِي رأْيٍ مِنْ أهْلِي، فَلَمَّا قِيْلَ: إنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قّدْ أظَلَّ قَادِمًا، زَاحَ عَنّي البَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَيءٍ أَبَدًا، فَأجْمَعْتُ صدْقَهُ وأَصْبَحَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم - قَادِمًا، وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ، فَلَمَّا فَعَلَ ذلِكَ جَاءهُ المُخَلَّفُونَ يَعْتَذِرونَ إِلَيْه ويَحْلِفُونَ لَهُ، وَكَانُوا بِضْعًا وَثَمانينَ رَجُلًا، فَقَبِلَ مِنْهُمْ عَلانِيَتَهُمْ وَبَايَعَهُمْ واسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلى الله تَعَالَى، حَتَّى جِئْتُ، فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ المُغْضَبِ. ثُمَّ قَالَ: «تَعَالَ»، فَجِئْتُ أمْشي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ، فقالَ لي: «مَا خَلَّفَكَ؟ ألَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ؟» قَالَ: قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنّي والله لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا لَرَأيتُ أنِّي سَأخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ؛ لقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلًا، ولَكِنِّي والله لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ اليوم حَدِيثَ كَذبٍ تَرْضَى به عنِّي
لَيُوشِكَنَّ الله أن يُسْخِطَكَ عَلَيَّ، وإنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدقٍ تَجِدُ عَلَيَّ فِيهِ إنّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى الله - عز وجل - والله ما كَانَ لي مِنْ عُذْرٍ، واللهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ.
قَالَ: فقالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أمَّا هَذَا فقَدْ صَدَقَ، فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ فيكَ». وَسَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَة فاتَّبَعُوني فَقالُوا لِي: واللهِ مَا عَلِمْنَاكَ أذْنَبْتَ ذَنْبًا قَبْلَ هذَا لَقَدْ عَجَزْتَ في أَنْ لا تَكونَ اعتَذَرْتَ إِلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بما اعْتَذَرَ إليهِ المُخَلَّفُونَ، فَقَدْ كَانَ كَافِيكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - لَكَ.
قَالَ: فَوالله ما زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُّ أَنْ أرْجعَ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فأُكَذِّبَ نَفْسِي، ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ: هَلْ لَقِيَ هذَا مَعِيَ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالُوا: نَعَمْ، لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلانِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ، وَقيلَ لَهُمَا مِثْلَ مَا قيلَ لَكَ، قَالَ: قُلْتُ: مَنْ هُما؟ قَالُوا: مُرَارَةُ بْنُ الرَّبيع الْعَمْرِيُّ، وهِلاَلُ ابنُ أُمَيَّةَ الوَاقِفِيُّ؟ قَالَ: فَذَكَرُوا لِي رَجُلَينِ صَالِحَينِ قَدْ شَهِدَا بَدْرًا فيهِما أُسْوَةٌ، قَالَ: فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُما لِي. ونَهَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - عَنْ كَلامِنا أيُّهَا الثَّلاثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ، فاجْتَنَبَنَا النَّاسُ - أوْ قَالَ: تَغَيَّرُوا لَنَا - حَتَّى تَنَكَّرَتْ لي في نَفْسي الأَرْض، فَمَا هِيَ بالأرْضِ الَّتي أعْرِفُ، فَلَبِثْنَا عَلَى ذلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً. فَأمّا صَاحِبَايَ فَاسْتَكَانا وقَعَدَا في بُيُوتِهِمَا يَبْكيَان. وأمَّا أنَا فَكُنْتُ أشَبَّ الْقَومِ وأجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أخْرُجُ فَأشْهَدُ الصَّلاَةَ مَعَ المُسْلِمِينَ، وأطُوفُ في الأَسْوَاقِ وَلا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ، وَآتِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ في مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاةِ، فَأَقُولُ في نَفسِي: هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْه برَدِّ السَّلام أَمْ لاَ؟ ثُمَّ أُصَلِّي قَريبًا مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ، فَإِذَا أقْبَلْتُ عَلَى صَلاتِي نَظَرَ إلَيَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أعْرَضَ عَنِّي، حَتَّى إِذَا طَال ذلِكَ عَلَيَّ مِنْ جَفْوَةِ المُسْلِمينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جِدارَ حائِط أبي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وأَحَبُّ النَّاس إِلَيَّ، فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ فَوَاللهِ مَا رَدَّ عَليَّ السَّلامَ، فَقُلْتُ لَهُ: يَا أَبَا قَتَادَةَ، أنْشُدُكَ بالله هَلْ تَعْلَمُنِي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ - صلى الله عليه وسلم -؟ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ، فَقَالَ: اللهُ ورَسُولُهُ أَعْلَمُ. فَفَاضَتْ عَيْنَايَ، وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ الجِدَارَ، فَبَيْنَا أَنَا أمْشِي في سُوقِ الْمَدِينة إِذَا نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ (1) أهْلِ الشَّام مِمّنْ قَدِمَ بالطَّعَامِ يَبيعُهُ بِالمَدِينَةِ يَقُولُ: مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ؟ فَطَفِقَ النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إلَيَّ حَتَّى جَاءنِي فَدَفَعَ إِلَيَّ كِتَابًا مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ، وَكُنْتُ كَاتبًا.
فَقَرَأْتُهُ فإِذَا فِيهِ: أَمَّا بَعْدُ، فإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنا أنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللهُ بدَارِ هَوانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ (1)، فَالْحَقْ بنَا نُوَاسِكَ، فَقُلْتُ حِينَ قَرَأْتُهَا: وَهَذِهِ أَيضًا مِنَ البَلاءِ، فَتَيَمَّمْتُ بهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا، حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْيُ إِذَا رسولُ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - يَأتِيني، فَقالَ: إنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَأمُرُكَ أَنْ تَعْتَزِلَ امْرَأتَكَ، فَقُلْتُ: أُطَلِّقُهَا أمْ مَاذَا أفْعَلُ؟ فَقالَ: لاَ، بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا، وَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَيَّ بِمِثْلِ ذلِكَ. فَقُلْتُ لامْرَأتِي: الْحَقِي بِأهْلِكِ (2) فَكُوني عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ في هَذَا الأمْرِ. فَجَاءتِ امْرَأةُ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَتْ لَهُ: يَا رَسُولَ الله، إنَّ هِلاَلَ بْنَ أمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ، فَهَلْ تَكْرَهُ أَنْ أخْدُمَهُ؟ قَالَ: «لاَ، وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ» فَقَالَتْ: إِنَّهُ واللهِ ما بِهِ مِنْ حَرَكَةٍ إِلَى شَيْءٍ، وَوَالله مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَومِهِ هَذَا. فَقَالَ لي بَعْضُ أهْلِي: لَو اسْتَأْذَنْتَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - في امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِن لاِمْرَأةِ هلاَل بْنِ أمَيَّةَ أَنْ تَخْدُمَهُ؟ فَقُلْتُ: لاَ أسْتَأذِنُ فيها رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - وَمَا يُدْرِيني مَاذَا يقُول رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ، وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ! فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ (3) لَنا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنا، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا، فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحالِ الَّتي ذَكَرَ الله تَعَالَى مِنَّا، قَدْ ضَاقَتْ عَلَيَّ نَفْسي وَضَاقَتْ عَلَيَّ الأرْضُ بِمَا رَحُبَتْ، سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أوفَى عَلَى سَلْعٍ (4) يَقُولُ بِأعْلَى صَوتِهِ: يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أبْشِرْ، فَخَرَرْتُ سَاجِدًا (5)، وَعَرَفْتُ أنَّهُ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ. فآذَنَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - النَّاسَ بِتَوْبَةِ الله - عز وجل - عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاةَ الفَجْر فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا، فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَيَّ مُبَشِّرونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَيَّ فَرَسًا وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أسْلَمَ قِبَلِي، وَأَوْفَى عَلَى الْجَبَلِ، فَكانَ الصَّوْتُ أسْرَعَ مِنَ الفَرَسِ، فَلَمَّا جَاءني الَّذِيسَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُني نَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَيَّ فَكَسَوْتُهُمَا إيَّاهُ بِبشارته، وَاللهِ مَا أمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ، وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ فَلَبسْتُهُما، وَانْطَلَقْتُ أتَأمَّمُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَتَلَقَّاني النَّاسُ فَوْجًا فَوْجًا يُهنِّئونَني بالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِي: لِتَهْنِكَ تَوْبَةُ الله عَلَيْكَ. حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - جَالِسٌ حَوْلَه النَّاسُ، فَقَامَ (1) طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ - رضي الله عنه - يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَني وَهَنَّأَنِي، والله مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ المُهَاجِرينَ غَيرُهُ - فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ.قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُور: «أبْشِرْ بِخَيْرِ يَومٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُذْ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ» فَقُلْتُ: أمِنْ عِنْدِكَ يَا رَسُول الله أَمْ مِنْ عِندِ الله؟ قَالَ: «لاَ، بَلْ مِنْ عِنْدِ الله - عز وجل -»، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ وَكُنَّا نَعْرِفُ ذلِكَ مِنْهُ، فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُولهِ. فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أمْسِكَ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ». فقلتُ: إِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيبَر. وَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى إِنَّمَا أنْجَانِي بالصِّدْقِ، وإنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ لا أُحَدِّثَ إلاَّ صِدْقًا مَا بَقِيتُ، فوَالله مَا عَلِمْتُ أَحَدًا مِنَ المُسْلِمينَ أبْلاهُ الله تَعَالَى في صِدْقِ الحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - أحْسَنَ مِمَّا أبْلانِي الله تَعَالَى، واللهِ مَا تَعَمَّدْتُ كِذْبَةً مُنْذُ قُلْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِلَى يَومِيَ هَذَا، وإنِّي لأرْجُو أَنْ يَحْفَظَنِي الله تَعَالَى فيما بَقِيَ، قَالَ: فأَنْزَلَ الله تَعَالَى: {لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ} حَتَّى بَلَغَ: {إِنَّهُ بِهِمْ رَؤُوفٌ رَحِيم وَعَلَى الثَّلاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ} حَتَّى بَلَغَ: {اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ} [التوبة: 117 - 119] قَالَ كَعْبٌ: واللهِ ما أنْعَمَ الله عَليَّ مِنْ نعمةٍ
قَطُّ بَعْدَ إذْ هَدَاني اللهُ للإِسْلامِ أَعْظَمَ في نَفْسِي مِنْ صِدقِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - أَنْ لا أكونَ كَذَبْتُهُ، فَأَهْلِكَ كما هَلَكَ الَّذينَ كَذَبُوا؛ إنَّ الله تَعَالَى قَالَ للَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أنْزَلَ الوَحْيَ شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ، فقال الله تَعَالَى: {سَيَحْلِفُونَ بِاللهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ} [التوبة: 95 - 96] قَالَ كَعْبٌ: كُنّا خُلّفْنَا أيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أمْرِ أُولئكَ الذينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وأرجَأَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - أمْرَنَا حَتَّى قَضَى الله تَعَالَى فِيهِ بذِلكَ. قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَلَى الثَّلاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا} وَليْسَ الَّذِي ذَكَرَ مِمَّا خُلِّفْنَا تَخلُّفُنَا عن الغَزْو، وإنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إيّانا وإرْجَاؤُهُ أمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ واعْتَذَرَ إِلَيْهِ فقبِلَ مِنْهُ (1). مُتَّفَقٌ عليه. (2)
وفي رواية: أنَّ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - خَرَجَ في غَزْوَةِ تَبْوكَ يَومَ الخَميسِ وكانَ يُحِبُّ أَنْ يخْرُجَ يومَ الخمِيس.
وفي رواية: وكانَ لاَ يقْدمُ مِنْ سَفَرٍ إلاَّ نَهَارًا في الضُّحَى، فإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بالمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيهِ
হাদীস নং: ২২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ২ তাওবা।
২২। জনৈকা মহিলা সাহাবীর অসাধারণ তাওবা:
আবু নুজায়দ ইমরান ইবনে হুসাইন খুযা'ঈ রাঃ বর্ণনা করেন যে, জুহায়না গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে উপস্থিত হল। সে ব্যভিচারের কারণে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি 'হদ' (-এর উপযুক্ত অপরাধে) লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং আমার উপর হদ্দ জারি করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকলেন। তাকে বললেন, এর প্রতি ভালো ব্যবহার কর। যখন সে সন্তান প্রসব করবে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে আদেশ করলেন (যেন তার উপর হদ্দ জারি করা হয়)। সেমতে তার কাপড়-চোপড় ভালো করে বেঁধে দেওয়া হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে তাকে রজম (অর্থাৎ পাথর মেরে তাকে হত্যা) করা হল। তারপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। হযরত উমর রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তার জানাযা পড়বেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছে? তিনি বললেন, সে এমন তাওবাই করেছে, যদি তা মদীনাবাসীদের মধ্য থেকে সত্তরজনের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়, তবে তা তাদের (সকলের পাপমোচনের) জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। তুমি কি ওই নারীর তাওবা অপেক্ষা উত্তম কোনও তাওবা পেয়েছ, যে কিনা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজ প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছে? - মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ১৬৯৬)
আবু নুজায়দ ইমরান ইবনে হুসাইন খুযা'ঈ রাঃ বর্ণনা করেন যে, জুহায়না গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে উপস্থিত হল। সে ব্যভিচারের কারণে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি 'হদ' (-এর উপযুক্ত অপরাধে) লিপ্ত হয়েছি। সুতরাং আমার উপর হদ্দ জারি করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকলেন। তাকে বললেন, এর প্রতি ভালো ব্যবহার কর। যখন সে সন্তান প্রসব করবে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে আদেশ করলেন (যেন তার উপর হদ্দ জারি করা হয়)। সেমতে তার কাপড়-চোপড় ভালো করে বেঁধে দেওয়া হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে তাকে রজম (অর্থাৎ পাথর মেরে তাকে হত্যা) করা হল। তারপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। হযরত উমর রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তার জানাযা পড়বেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছে? তিনি বললেন, সে এমন তাওবাই করেছে, যদি তা মদীনাবাসীদের মধ্য থেকে সত্তরজনের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়, তবে তা তাদের (সকলের পাপমোচনের) জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। তুমি কি ওই নারীর তাওবা অপেক্ষা উত্তম কোনও তাওবা পেয়েছ, যে কিনা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজ প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছে? - মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ১৬৯৬)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
22 - وَعَنْ أبي نُجَيد - بضَمِّ النُّونِ وفتحِ الجيم - عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ الخُزَاعِيِّ رضي الله عنهما: أنَّ امْرَأةً مِنْ جُهَيْنَةَ أتَتْ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَى، فقالتْ: يَا رسولَ الله، أصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا نَبيُّ الله - صلى الله عليه وسلم - وَليَّها، فقالَ: «أَحْسِنْ (1) إِلَيْهَا، فإذا وَضَعَتْ فَأْتِني» فَفَعَلَ فَأَمَرَ بهَا نبيُّ الله - صلى الله عليه وسلم - فَشُدَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا. فقالَ لَهُ عُمَرُ: تُصَلِّي عَلَيْهَا يَا رَسُول الله وَقَدْ زَنَتْ؟ قَالَ: «لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ سَبْعِينَ مِنْ أهْلِ المَدِينَةِ لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ أَفضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بنفْسِها لله - عز وجل؟!». رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ২৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ২ তাওবা।
২৩। মানুষের বিত্তবাসনা ও তা থেকে মুক্তির উপায়
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. ও হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও আদম সন্তানের যদি এক উপত্যকা (ভর্তি) সোনা থাকে, তবে সে কামনা করবে যাতে তার (সোনার) দু'টি উপত্যকা হয়। মাটি ছাড়া অন্যকিছু তার মুখ ভরতে পারবে না। যে ব্যক্তি তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬৪৩৭, মুসলিম হাদীস নং ১০৪৯)
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. ও হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও আদম সন্তানের যদি এক উপত্যকা (ভর্তি) সোনা থাকে, তবে সে কামনা করবে যাতে তার (সোনার) দু'টি উপত্যকা হয়। মাটি ছাড়া অন্যকিছু তার মুখ ভরতে পারবে না। যে ব্যক্তি তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬৪৩৭, মুসলিম হাদীস নং ১০৪৯)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
23 - وعن ابنِ عباسٍ - رضي الله عنهما - أنَّ رَسُولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَوْ أنَّ لابنِ آدَمَ وَادِيًا مِنْ ذَهَبٍ أحَبَّ أَنْ يكُونَ لَهُ وَادِيانِ، وَلَنْ يَمْلأَ فَاهُ إلاَّ التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ». مُتَّفَقٌ عليه. (1)
হাদীস নং: ২৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায়: ২ তাওবা।
২৪। যখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি দু'জনই জান্নাতবাসী
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা দুই ব্যক্তির প্রতি হাসেন (সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন)। যাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করে, তারপর দু'জনই জান্নাতে প্রবেশ করে। এই ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হয়। তারপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীকে তাওবার তাওফীক দান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে, তারপর শহীদ হয়ে যায় - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ২৮২৬, মুসলিম হাদীস নং ১৮৯০)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা দুই ব্যক্তির প্রতি হাসেন (সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন)। যাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করে, তারপর দু'জনই জান্নাতে প্রবেশ করে। এই ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হয়। তারপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীকে তাওবার তাওফীক দান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে, তারপর শহীদ হয়ে যায় - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ২৮২৬, মুসলিম হাদীস নং ১৮৯০)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
24 - وعن أبي هريرة - رضي الله عنه - أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يَضْحَكُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتلُ أَحَدهُمَا الآخَرَ يَدْخُلانِ الجَنَّةَ، يُقَاتِلُ هَذَا في سَبيلِ اللهِ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يتُوبُ اللهُ عَلَى القَاتلِ فَيُسْلِم فَيُسْتَشْهَدُ». مُتَّفَقٌ عليه. (1)
হাদীস নং: ২৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ সবরের ব্যাখ্যা ও তার প্রকারভেদ
'সবর'-এর আভিধানিক অর্থ আবদ্ধ করা ও সংযত করা। শরী'আত নির্দেশিত পথ ও পন্থার উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে সবর বলা হয়। এ হিসেবে সবর তিন প্রকার-
ক. আল্লাহ তা'আলা যা কিছু করার আদেশ করেছেন তা পালন করার উপর তথা আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
খ. আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু নিষেধ করেছেন, তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে আটকে রাখা ও সংযত করা
গ. বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা।
আল্লাহর আদেশ পালনে সবর আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন ও ইবাদত-আনুগত্যে যত্নবান থাকতে কিছু না কিছু কষ্ট হয়ই। কখনও সে কষ্ট হয় মানসিক, কখনও দৈহিক এবং কখনও উভয় রকমের। উদাহরণত: পরনারী বা পরপুরুষ থেকে পর্দা রক্ষা করে চলায় কোনও দৈহিক কষ্ট নেই। এতে যা কষ্ট তা কেবলই মানসিক। কেননা এ কারণে নানা লোকে নানা কথা বলে। তাতে মনের উপর চাপ পড়ে। সেই চাপ উপেক্ষা করে পর্দা রক্ষা করে যাওয়া সবরের মাধ্যমেই সম্ভব। বেপর্দা হওয়ার প্রতি মনেরও কিছু আগ্রহ থাকে। মনকে তা থেকে সংযত রাখতে হয়। তো লোকের কথায় কান না দিয়ে এবং মনের আগ্রহকে প্রশ্রয় না দিয়ে পর্দা রক্ষা করে চলতে যে কষ্ট হয় তা কেবল মানসিক কষ্ট। কিন্তু শরী'আত যেহেতু পর্দা রক্ষার আদেশ করেছে, তাই সে আদেশ পালনার্থে ওই কষ্ট স্বীকার করে নেওয়াই হচ্ছে সবর।
রোযা রাখা ও হজ্জ পালনে হয় দৈহিক কষ্ট। নামায আদায়েও কিছু না কিছু দৈহিক কষ্ট আছে। সেই কষ্ট সত্ত্বেও এসব বিধান পালন করে যাওয়া সবরের পরিচায়কই বটে। লোভনীয় খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও তা খাওয়া হতে বিরত থেকে রোযা পালন করতে দৈহিক কষ্টের সংগে কিছু না কিছু মানসিক কষ্টও হয়। এ অবস্থায় রোযা রাখার দ্বারা সবরের পরীক্ষা হয়ে যায়।
নিষেধাজ্ঞা পালনে সবর
শরী'আত যা-কিছু নিষেধ করেছে তার প্রতি মানুষের কুপ্রবৃত্তির লোভ থাকে, যেমন সুদ-ঘুষ খাওয়া, মদপান করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা ইত্যাদি। সেই লোভ দমন করে এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকার জন্য মনকে শাসন করতে হয়। এতেও কিছু না কিছু কষ্ট আছেই। সেই কষ্ট স্বীকার করে শরীআতের সমস্ত নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বেঁচে থাকাটাও এক প্রকার সবর। কেননা এতে মনকে কঠিন বাঁধনে বাঁধতে হয়, যাতে সে লোভের শিকার হয়ে নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত না হয়ে পড়ে।
মুসিবতে সবর
বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণের যে সবর, তাতেও এক প্রকারের বাঁধন আছে। কেননা বিপদ-আপদে পড়লে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। সেই অস্থিরতায় নানা রকমের অবৈধ কাজ করে ফেলে ও নাজায়েয কথাবার্তা বলে ফেলে। সেই নাজায়েয কাজ ও কথা যাতে না হয়ে যায়, সেজন্য যে-কোনও বিপদে নিজেকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখতে হয়।
বস্তুত বিপদ-আপদ পার্থিব জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ইহজীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এই জীবনের পথে পথে কাঁটা। আছে ঝড়-ঝঞ্ঝা, আছে নানা দুঃখ-কষ্ট। কখনও ফসলহানি হয়, কখনও প্রিয়জনের মৃত্যু ঘটে। সম্মুখীন হতে হয় অন্যের অপ্রীতিকর আচরণের। কখনও ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত আসে। সম্পূর্ণ বাধা-বিপত্তিহীন নিরোগ নির্ঝঞ্ঝাট জীবন ইহলোকে অসম্ভব। তা যখন অসম্ভব তখন এসব মেনে নেওয়ার ভেতরেই জীবনের সচলতা রক্ষা সম্ভব।
এই যে মেনে নেওয়া অর্থাৎ প্রতিকূল প্রতিটি অবস্থাকে ইহজীবনের স্বাভাবিকতা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া, এটাই সবর। এই সবর অবলম্বন করতে পারলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। তখন যেকোনও ভাঙন ও পতনের পর আবার উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। জীবনকে সফল করে তুলতে হলে উঠে তো দাঁড়াতেই হবে। নিজেকে চলমান রাখতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত।
মৃত্যুর পরই শুরু হয় আসল জীবন। সেই জীবনের সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজন ইহজীবনকে কর্মময় করে রাখা। অর্থাৎ যখনকার যেই কাজ তা করে যাওয়া। কোনও মুহূর্তকেই নষ্ট হতে না দেওয়া।
কাজ তো বিস্তর। প্রসিদ্ধ চার ইবাদতের বাইরেও আল্লাহ ও বান্দার হকের আছে সুদীর্ঘ তালিকা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সংগে সম্পৃক্ত সেই তালিকার সবগুলো কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়ার ভেতরেই পরকালীন জীবনের সার্থকতা নিহিত। বিপদ-আপদ ও ঝড় ঝাপটায় যে ব্যক্তি ভেঙে পড়বে, তার পক্ষে তো এই যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। করণীয় অনেক কাজই তার করা হয় না। ফলে জীবন হয়ে যাবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা থেকে রক্ষার জন্যই দরকার কঠিন ধৈর্য। তাই কুরআন ও হাদীছ মানুষকে পদে পদে ধৈর্য রক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেছে। এবং এর অপরিসীম গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আসুন মনোযোগ সহকারে সেগুলো পাঠ করি।
ধৈর্য সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)} [آل عمران: 200]
অর্থ : হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মুকাবিলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত থাক।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে তিনটি বিষয়ের হুকুম দেওয়া হয়েছে। (ক) সবর; (খ) মুসাবারা এবং (গ) মুরাবাতা ।
প্রথমে বলা হয়েছে, তোমরা সবর ও ধৈর্যধারণ কর। অর্থাৎ দীনের অনুসরণ, শরী'আতের বিধানাবলী পালন, খেয়ালখুশির বিরোধিতা এবং আল্লাহর মহব্বত ও আনুগত্যে অটল-অবিচল থাক। যত অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টই হোক না কেন, এর ব্যতিক্রম করো না এবং সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দেও সীমালঙ্ঘন করো না। বালা-মুসিবত ও শান্তি- স্বস্তি সর্বাবস্থায় ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখাও। হযরত জুনায়দ রহ. বলেন, কোনওরূপ বিচলতা ছাড়া নফসকে তার অপসন্দের বিষয়ে ধরে রাখার নামই সবর।
দ্বিতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুসাবারা অর্থাৎ মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শনের। তার মানে যুদ্ধকালে শত্রু অপেক্ষা নিজেদের ধৈর্য বলিষ্ঠ রাখ। কেননা তোমাদের মত তারাও দুঃখ-কষ্ট পায় এবং জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তাদের কোনও প্রাপ্তির আশা নেই। কিন্তু তোমাদের পুরস্কার লাভের আশা আছে। তাই ধৈর্যও তোমাদের বেশি থাকা উচিত।
মুসাবারা অর্থাৎ ধৈর্যের প্রতিযোগিতা যেমন কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, যাকে 'জিহাদে আসগার' বলা হয়ে থাকে, তেমনি এর প্রয়োজন 'জিহাদে আকবার' অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে। কেননা নফস বা কুপ্রবৃত্তি সর্বদা দুনিয়া ও এর ভোগ্যবস্তুর প্রতি আকৃষ্ট থাকে। নিজেকে সে আকর্ষণ থেকে ফিরিয়ে আখিরাতের অভিমুখী করা ও আল্লাহপ্রেমে আবদ্ধ রাখার জন্য কঠোর সাধনা ও মুজাহাদার প্রয়োজন। সেই মুজাহাদা ও সাধনায় উত্তীর্ণ হওয়া কেবল সবরের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রকাশ থাকে যে, নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিষয়টা কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যেও থাকে। এ হিসেবে তাকে জিহাদে আসগার বলা হয় কেবল বাহ্যিক দিকের প্রতি লক্ষ করে । না হয় অভ্যন্তরীণ দিক থেকে সেটিও জিহাদে আকবার।
তৃতীয়ত হুকুম দেওয়া হয়েছে মুরাবাতা অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকার। শব্দটি ربط মূলধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ বেঁধে রাখা। অর্থাৎ সীমান্তে ঘোড়া বেঁধে রাখা। পরে শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থ পরিগ্রহ করে। ফলে এর অর্থ হয় সীমান্ত পাহারায় নিযুক্ত থাকা, তাতে ঘোড়া থাক বা না থাক। আরও পরে শব্দটি অধিকতর ব্যাপকতা লাভ করে। ফলে যেকোনও কাজে অন্তরায় সৃষ্টিকারীর প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকাকে মুরাবাতা বলা হতে থাকে, সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকাও যার অন্তর্ভুক্ত।
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষার ফযীলত
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকা খুবই ফযীলতের কাজ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে –
رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَ ما عَلَيْهَا، وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرُ مِنَ الدُّنْيَا وَ مَا عَلَيْهَا، وَالرَّوْحَةُ يَرُوْحُهَا الْعَبْدُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوِ الْعَدْوَة خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا
"আল্লাহর পথে একদিনের সীমান্ত পাহারা দুনিয়া ও এর অন্তর্গত সবকিছু থেকে উত্তম। তোমাদের একটি চাবুক পরিমাণ জান্নাতের স্থান দুনিয়া ও এর অন্তর্গত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহর পথে এক সকাল বা এক বিকালের মেহনত দুনিয়া ও এর অন্তৰ্গত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম।”
অপর এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ربَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامٍ شَهرٍ وَ قِيَامِهِ وإن مات جرى عَلَيْهِ عَمَلهُ الذي كان يعملة وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَ أَمِنَ الْفَتَانَ .
“একদিন ও একরাতের সীমান্ত পাহারা একমাস দিনে রোযা রাখা ও রাতে ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম। এ অবস্থায় মারা গেলে তার ছওয়াব জারি থাকবে। সে শহীদের মত রিযিকপ্রাপ্ত হবে এবং কবরের সওয়ালকারীদের পক্ষ হতে সে নিরাপদ থাকবে। (অর্থাৎ তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে।)
অন্যরকম সীমান্ত পাহারা
বাগাবী রহ. বলেন যে, আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে 'রিবাত' বা সীমান্ত পাহারার কোনও ব্যাপার ছিল না। তখনকার রিবাত ছিল এক নামাযের পর অন্য নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এক হাদীস দ্বারাও তা সমর্থিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلا أُخبِرُكُمْ بِمَا يُمْحُو الله به الخطايا ويَرْفَعُ به الدرجات إسباغ الوضوء على المكاره و كثرة الخط إلى المساجد والنظارُ الصَّلاةِ بَعْدَ الصَّلاة، فالكُمُ الرباط فذالكم الرياض قدالِكُمُ الرباط.
"আমি কি তোমাদেরকে সেই জিনিস সম্পর্কে অবগত করব না, যার সাহায্যে আল্লাহ গুনাহ মুছে ফেলেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? তা হচ্ছে, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এটিই রিবাত (সীমান্ত পাহারা)। এটিই রিবাত। এটিই রিবাত।
দুই নং আয়াত
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَاتِ وَبَشَرِ الضَّبِرِينَ )
অর্থ : আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়।
ব্যাখ্যা
ভয়-ভীতি দ্বারা পরীক্ষা : এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে একটা হচ্ছে কিছুটা ভয়-ভীতি। ভয় বলতে শত্রুর ভয় বোঝানো হয়েছে, যাতে প্রাণে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পূর্ণাঙ্গ ভয়ের কথা বলা হয়নি, যাতে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যায়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার নিতান্তই মেহেরবানী যে, তিনি পরিপূর্ণ ভয় নয়; বরং সামান্য ভয়ের দ্বারা পরীক্ষা করেন। অবশ্য বান্দা যেহেতু দুর্বল, তাই সামান্য ভয়ও অনেক সময় তার পক্ষে অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার প্রতি যার পূর্ণ আস্থা এবং অন্তরে তাকওয়া-পরহেযগারী থাকে, আল্লাহ তা'আলা তাকে সেই অগ্নিপরীক্ষায়ও পাশ করিয়ে দেন। খন্দকের যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামকে শত্রুভীতি দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় তারা শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কুরআন মাজীদে সে সম্পর্কেই ইরশাদ হয়েছে –
{ إِذْ جَاءُوكُمْ مِنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِاللَّهِ الظُّنُونَا (10) هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُونَ وَزُلْزِلُوا زِلْزَالًا شَدِيدًا (11)} [الأحزاب: 10، 11]
স্মরণ কর, যখন তারা তোমাদের উপর চড়াও হয়েছিল উপর এবং নিচের দিক থেকেও এবং যখন চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং প্রাণ মুখের কাছে এসে পড়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকমের ভাবনা ভাবতে শুরু করেছিলে। তখন মু'মিনগণ কঠিনভাবে পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তাদেরকে তীব্র প্রকম্পনে কাঁপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ক্ষুধার দ্বারা পরীক্ষা : দ্বিতীয়ত পরীক্ষা করা হয় কিছুটা ক্ষুধার দ্বারা। এমন ক্ষুধা নয়, যাতে বিলকুল খাদ্য জোটে না। ফলে অনাহারে মৃত্যু ঘটে। কখনও খাদ্যাভাব হয় ব্যক্তিবিশেষের এবং কখনও হয় এলাকাবিশেষে। অর্থাৎ কোনও এলাকা দুর্ভিক্ষ কবলিত হয়ে পড়ে। ফলে সেই এলাকায় তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। কিন্তু সে অভাব বিশ্বব্যাপী হয় না যে, কোনওভাবেই মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হয় না। ব্যক্তিবিশেষ বা এলাকাবিশেষে অভাব দেখা দেওয়ায় অন্য ব্যক্তি বা অন্য স্থান থেকে খাদ্য আমদানি করে অভাব মেটানোর চেষ্টা করা যায়। যাহোক চূড়ান্ত পর্যায়ের খাদ্যাভাব দ্বারা পরীক্ষা না করা বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ দয়া। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষা নেওয়া উদ্দেশ্য, তাই জানে না মারা হলেও একটা পর্যায়ের খাদ্যকষ্টের সম্মুখীন তো করা হয়ই। সে কষ্ট ব্যক্তিভেদে বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। ব্যক্তি উচ্চপর্যায়ের হলে পরীক্ষাও একটু বেশি কঠিনই হয় বৈকি। তাই সাহাবায়ে কিরামকে ক্ষুধার কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছিল। ওই খন্দকের যুদ্ধেই এমন তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন তাদের হতে হয়েছিল যে, খাদ্যাভাবে তাদের পেটে পাথর পর্যন্ত বাঁধতে হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ করেননি। সেই অবর্ণনীয় ক্ষুধার কষ্ট নিয়েই তারা কর্তব্যকর্মে অবিচল থেকেছিলেন। তারা আমাদের আদর্শ। সুতরাং ভয়-ভীতি বা ক্ষুধাকষ্ট দেখা দিলে আমাদেরও কর্তব্য তাদের মত ধৈর্যধারণ করা।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা : তৃতীয়ত পরীক্ষা নেওয়া হয় অর্থ-সম্পদের ক্ষতি দ্বারা। অর্থাৎ বান্দাকে অভাব-অনটনে ফেলে পরীক্ষা করা হয় সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, নাকি ধৈর্যহারা হয়ে অন্যের প্রতি ঈর্ষাতুর হয় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ তা'আলা এ পরীক্ষাও সহনীয় পর্যায়েই নিয়ে থাকেন। এমন কঠিন অভাবে বান্দাকে ফেলেন না, যদ্দরুণ সে সম্পূর্ণরূপে নিরুপায় হয়ে যায় এবং সবরকম প্রয়োজন পূরনে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। হ্যাঁ, বিষয়টা যেহেতু পরীক্ষা, তাই অভাব-অনটনের একটা পর্যায়ের কষ্ট তো হবেই। কিন্তু সেই কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারলে আল্লাহ তাআলা খুশী হন এবং অভাবের স্থলে স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন। সাহাবায়ে কিরামের জীবন তো দীর্ঘকাল যাবত অভাব-অনটনের ভেতরেই কেটেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় অধিকাংশ সাহাবারই অবস্থা এমন ছিল যে, তাদের নিম্নাংশে ও ঊর্ধ্বাংশে পরার মত একজোড়া কাপড় ছিল না। হয় কেবল লুঙ্গি ছিল, নয়তো কেবল একটি চাঁদর। কিন্তু এই সুদীর্ঘ জীবনে এ বিষয়ে তাদের মুখে অভিযোগের একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। তারা ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে তাদের সেই অর্থাভাব থাকেনি। ইসলামের দিগ্বিজয় শুরু হয়ে গেলে তাদের জীবনে প্রাচুর্য চলে এসেছিল। অবশ্য তারা তো সাহাবীই ছিলেন। প্রাচুর্যকালে তারা বিলাসী হয়ে পড়েননি। আল্লাহর পথে দু'হাতে খরচ করতেন এবং শোকরগুযার হয়ে থাকতেন। বস্তুত কষ্টে সবর এবং স্বাচ্ছন্দ্যে শোকর, এ-ই ছিল তাদের শান।
প্রাণহানি দ্বারা পরীক্ষা:
চতুর্থত পরীক্ষা করা হয় জানের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। হয়তো চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় সন্তানের মৃত্যু ঘটল কিংবা স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু হয়ে গেল। এরকম পরীক্ষা দ্বারাও আল্লাহ তাআলা বান্দার সবরের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। সমস্ত জানের মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি তাঁর মালিকানাধীন যেকোনও বস্তু যখন ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারেন। সেই নিয়ে যাওয়াকে মেনে নেওয়াই বান্দা হিসেবে প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। শোক প্রকাশ এক জিনিস আর আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া আরেক জিনিস। প্রিয়জনের বিয়োগে শোকার্ত হওয়া আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া ও সবরের পরিপন্থী নয়। প্রতিটি মানুষের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা দয়া-মায়া রেখেছেন। কাজেই প্রিয় কারও মৃত্যুতে তার শোকাহত হওয়াই স্বাভাবিক। সবরের পরিপন্থী হচ্ছে বেসামাল হয়ে পড়া, যার আলামত বুক চাপড়ানো, কপাল থাপড়ানো, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা, মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া, ভাগ্যকে নিন্দা করা, আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা, ফিরিশতাকে দোষারোপ করা ইত্যাদি। এসব করার অর্থ সে মনেপ্রাণে আল্লাহর ফয়সালা মেনে নিতে পারেনি। এটাই সবরহীনতা। মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য এসব থেকে বেঁচে থাকা। তবেই সে সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
ফসলহানি দ্বারা পরীক্ষা :
পঞ্চমত পরীক্ষা নেওয়া হয় ফল ও ফসলহানির দ্বারা। হয়তো ঘূর্ণিঝড়ে ফসলের মাঠ তছনছ হয়ে গেল বা বানের পানিতে ক্ষেত-খামার ডুবে গেল কিংবা খরার উত্তাপে ফলের বাগান পুড়ে গেল ইত্যাদি। ফসলহানির একটা দিক এও যে, ক্ষেতের ফসল বা বাগানের ফল যখন পেকে গেল এবং তা ঘরে তোলার সময় হল, ঠিক সেই সময়ে আমীরের পক্ষ থেকে জিহাদের ডাক পড়ল আর ফল ও ফসল সেই অবস্থায় রেখেই বের হয়ে যেতে হল। হয়তো ফিরে আসার পর দেখা গেল
সব নষ্ট হয়ে গেছে বা সামান্যই ঘরে তোলা গেছে। এই যাবতীয় অবস্থাকে আল্লাহর ফয়সালায় মেনে নিয়ে মনেপ্রাণে সন্তুষ্ট থাকা গেলে সবরের পরীক্ষায় পাশ বলে গণ্য হয়। পক্ষান্তরে এ অবস্থায় যদি ভাগ্যকে দোষারোপ করা হয় বা মুখে অসমীচীন কথাবার্তা বলা হয়, তা হবে সবরের পরিপন্থী।
প্রকাশ থাকে যে, কোনও কোনও ব্যাখ্যাতা وَالثَّمَراتِ (ফল ও ফসল)-এর দ্বারা সন্তান-সন্তুতি বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সন্তান-সন্ততির মৃত্যু দ্বারাও পিতামাতাকে পরীক্ষা করে থাকেন। সন্দেহ নেই পিতামাতার পক্ষে তাদের সন্তান- সন্তুতি শ্রেষ্ঠতম ফলই বটে। এই ফল নিয়ে যাওয়া হলে তাদের পক্ষে সেই বিয়োগ বেদনা অত্যন্ত কঠিন হয়। কঠিন হওয়া সত্ত্বেও যারা ধৈর্যের পরিচয় দেয়, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অপরিমিত পুরস্কার দান করেন। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
سنن الترمذي ت شاكر (3/ 332)
" إذا مات ولد العبد قال الله لملائكته: قبضتم ولد عبدي، فيقولون: نعم، فيقول: قبضتم ثمرة فؤاده، فيقولون: نعم، فيقول: ماذا قال عبدي؟ فيقولون: حمدك واسترجع، فيقول الله: ابنوا لعبدي بيتا في الجنة، وسموه بيت الحمد "
"যখন কোনও বান্দার সন্তান মারা যায় আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তান কবজা করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা কি তার হৃদয়ের ফল নিয়ে এসেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তা'আলা জিজ্ঞেস করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ পড়েছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর। তার নাম দাও বায়তুল হামদ (প্রশংসার ঘর)।
যারা আল্লাহ তা'আলার যতবেশি প্রিয়, তাদের পরীক্ষাও তত কঠিন হয়ে থাকে। সুতরাং সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল নবী-রাসূলগণের। তারপর সাহাবায়ে কিরামের। তারপর নবী-রাসূলগণের আদর্শ অনুসরণে যারা তাদের যতবেশি ঘনিষ্ঠ, তাদের পরীক্ষাও সেই অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এরকম পরীক্ষার বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। সেই অনুযায়ী আমরা যারা সাধারণ, তাদের পরীক্ষা অনেক সহজ। আমাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এটাও এক মেহেরবানী যে, তাদের মত কঠিন পরীক্ষায় আমাদের ফেলেন না। এজন্য আমাদের অনেক বেশি শোকর আদায় করা দরকার। সেইসংগে দরকার তাদের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে সবরের পরীক্ষায় যাতে উত্তীর্ণ হতে পারি সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা আছে। আলোচ্য আয়াতেরই শেষে ইরশাদ হয়েছে-
{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (155)} [البقرة: 155]
অর্থ : যারা সবর অবলম্বন করে তাদেরকে সুসংবাদ শোনাও।' বাকারাঃ ১৫৫
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এর তাৎপর্য ও ফযীলত
সবরকারী কারা, আল্লাহ তা'আলা পরের আয়াতে তাদের পরিচয় প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
{الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (156)} [البقرة: 156]
অর্থ : যারা তাদের কোনও মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, 'আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। বাকারাঃ ১৫৬
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছ থেকে যা-কিছুই নিয়ে নেন, তা অর্থ-সম্পদ হোক বা সন্তান-সন্ততি, তারা আল্লাহ তাআলার ফয়সালা হিসেবে তা মনেপ্রাণে মেনে নেয় এবং বলে, সমস্ত জানমালের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলাই এবং আল্লাহ তাআলা আমার নিজেরও মালিক। তিনি যাকে যা ইচ্ছা দান করেন আবার যখন ইচ্ছা নিয়ে নেন। মালিকের তার নিজ দেওয়া সম্পদ এবং সৃষ্টিকর্তার পক্ষে তাঁর নিজ সৃষ্টি যে-কোনও সময় নিয়ে নেওয়ার অধিকার আছে। সে নিয়ে যাওয়াটা কোনোক্রমেই অন্যায় নয়; বরং তাতে আপত্তি করাই অন্যায়। তাঁর দানের মধ্যেও হিকমত থাকে এবং হিকমত থাকে নিয়ে নেওয়ার মধ্যেও। একটা বড় হিকমত তো পরীক্ষা করা। আল্লাহ তা'আলা এর মাধ্যমে পরীক্ষা করেন বান্দা কতটুকু ধৈর্যধারণ করছে। ধৈর্যধারণ করতে পারলে তিনি যা নেন তারচে' অনেক বেশি দান করেন। তিনি দান করেন দুনিয়ায়ও এবং আখিরাতেও। আখিরাতের দানই শ্রেষ্ঠতম দান। সেই শ্রেষ্ঠতম দান লাভের আশায় আমি তাঁর এ নিয়ে যাওয়াকে সর্বান্তকরণে মেনে নিলাম। তিনি চাইলে যে-কোনও সময় আমাকেও নিয়ে যেতে পারেন। আর একদিন তো আমাকে তাঁর কাছে চলে যেতেই হবে। কাজেই যারা চলে গেছে তাদের জন্য আক্ষেপ না করে আমার কর্তব্য নিজের চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সক্ষম হলে আল্লাহর কাছে চলে যাওয়া নেককারদের সংগে আমি গিয়ে মিলিত হতে পারব। এটাই إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ এর তাৎপর্য। এ বাক্যটি অত্যন্ত মূল্যবান। এটা সবরকারীর সবরের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে এ উম্মতকে এ বাক্যটি দান করেছেন। এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَعْطِبَتْ أُمَّتِي شَيْئًا لَمْ يُعْطَهُ أَحَدٌ مِنَ الْأُمَمِ عِنْدَ الْمُصِيبَةِ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
'আমার উম্মতকে একটা জিনিস দেওয়া হয়েছে, যা আর কোনও উম্মতকে দেওয়া হয়নি। তা হল, বিপদ ও মুসিবতের সময় বলা- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি'উন।
সবরকারীর পুরস্কার
বস্তুত কথায় ও কর্মে যারা “ইন্না লিল্লাহ'-এর পাঠ ও শিক্ষা অবলম্বন করতে পারে। তারাই প্রকৃত সবরকারী । এরকম সবরকারীর জন্যে উপরে যে সুসংবাদের কথা বলা হয়েছে, সামনের আয়াতে সেই সুসংবাদের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে যে-
{أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (157)} [البقرة: 157]
অর্থ : এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হিদায়াতের উপর। বাকারাঃ ১৫৭
এদের তিনটি পুরস্কারের কথা এখানে ঘোষিত হয়েছে। হযরত উমর ফারূক রাঃ এর ভাষায়- “কতই না চমৎকার পাশাপাশি দুই দান। (ক) বিশেষ করুণা ও (খ) দয়া। এবং কতই না চমৎকার অতিরিক্ত দান হিদায়াতপ্রাপ্তি।”
তিন নং আয়াত
{إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ (10) } [الزمر: 10]
অর্থ : যারা সবর অবলম্বন করে, তাদেরকে তাদের ছওয়াব দেওয়া হবে অপরিমিত। যুমারঃ ১০
ব্যাখ্যা
কুরআন ও হাদীছে বিভিন্ন আমলের বিভিন্ন ছওয়াবের কথা ঘোষিত হয়েছে, যেমন আল্লাহ তা'আলার পথে দান করলে তার ছওয়াব সাতগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি বৃদ্ধি করা হয়। কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করলে প্রত্যেক হরফে এক নেকী দেওয়া হয়, যা বৃদ্ধি করে দশ নেকীতে পরিণত করা হয়। আলোচ্য আয়াতে সবর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা তার ছওয়াব দান করেন বিনা হিসাবে, সাতশ' বা সাত হাজার গুণ নয়, কোনও পাত্র দ্বারা মেপে নয় কিংবা দাড়িপাল্লা দ্বারা ওজন করেও নয়। বিনা হিসাবে যখন, তখন কী দেওয়া হবে তা কেবল আল্লাহ তাআলা জানেন। কোনও মানুষের পক্ষে তা কল্পনা করা সম্ভব নয়। এজন্যই আবু উছমান মাগরিবী রহ. বলেন, সবরের বদলার উপর আর কোনও বদলা নেই।
চার নং আয়াত
{ وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (43)} [الشورى: 43
অর্থ : প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। শুরাঃ ৪৩
ব্যাখ্যা
কারও উপর যদি জুলুম করা হয় আর তার প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয় ও ধৈর্যধারণ করে, তবে তা অতি বড় পুণ্যের কাজ। এরূপ করা কেবল উঁচু হিম্মত ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ ও মনকে সংযত করার মত ক্ষমতা রাখে না, তার পক্ষে সহজে ক্ষমা করা সম্ভব হয় না। সে উত্তেজনাবশে প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে এবং সেই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক সময়ই তার দ্বারা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। ফলে মজলুম ব্যক্তি উল্টো জালিমে পরিণত হয়। জালিম হওয়া অপেক্ষা মজলুম হয়ে থাকা ঢের ভালো। কারণ মজলুম ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হয় আর জালিমের প্রতি আল্লাহর ক্রোধ নিপতিত হয়। সেই ক্রোধ থেকে বাঁচা ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের কর্তব্য ক্ষমাপ্রবণ হওয়া ও ধৈর্যধারণ করা। এটা যেহেতু দৃঢ় হিম্মত ও মনোবলের উপর নির্ভর করে, তাই অন্তরে এ গুণ পয়দা করার জন্যে সম্ভাব্য সকল পন্থা অবলম্বন করা উচিত, যেমন ক্ষমাপ্রবণ ও মনোবলসম্পন্ন ব্যক্তির সাহচর্য অবলম্বন করা, তাদের ঘটনাবলী পাঠ করা, ধৈর্যধারণ ও ক্ষমার ফযীলত সম্পর্কে অবহিত হওয়া ইত্যাদি।
প্রকাশ থাকে যে, ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে জালিম ও অপরাধী ব্যক্তির স্পর্ধা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ক্ষমা না করে প্রতিশোধ গ্রহণও জায়েয; বরং ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিশোধ নেওয়া উত্তম, যেমন এর আগের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
{وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ (39) وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (40)} [الشورى: 39، 40]
অর্থ : এবং যখন তাদের প্রতি কোনও জুলুম করা হয়, তখন তারা তা প্রতিহত করে। মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। শুরাঃ ৩৯-৪০
তবে মন্দের বদলা যেহেতু অনুরূপ মন্দ অর্থাৎ জালিম যে পরিমাণ জুলুম ও কষ্টদান করে, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাকেও সমপরিমাণ কষ্টই দেওয়া যাবে, এর বেশি নয়। তাই প্রতিশোধ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, যাতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে জুলুম না হয়ে যায়। সেজন্যই সাধারণ অবস্থায় প্রতিশোধগ্রহণ অপেক্ষা ক্ষমা করাই শ্রেয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য উলামায়ে কিরামের শরণাপন্ন হওয়া কর্তব্য।
পাঁচ নং আয়াত
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ (153) } [البقرة: 153]
অর্থ : হে মুমিনগণ! সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য লাভ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। বাকারাঃ ১৫৩
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে মানুষকে তার যাবতীয় বিষয়ে দু'টি কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। একটি হল সবর, দ্বিতীয়টি নামায। সবর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার হুকুম-আহকাম পালন, নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিহার ও বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারে সাহায্য লাভ হয়। এক তো তাতে অন্তরে দৃঢ়তা আসে ও সাহস সঞ্চার হয়। ফলে কষ্টের ভেতরেও ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ হয়, শত প্রলোভনেও গুনাহ থেকে বাঁচা যায় এবং বিপদ-আপদে নিজেকে সংযত রাখা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত সবর করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। ফলে উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই তিনি বান্দাকে সাহায্য করেন। তিনি তো বলেই দিয়েছেন- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সংগে আছেন। আল্লাহ যার সংগে, তার আর কিসের প্রয়োজন? যিনি আসমান-যমীনের মালিক, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সংগে থাকলে আর কিসের ভয়? জগতে এমন কোন শক্তি আছে, আল্লাহ সংগে থাকলে যার পরওয়া করতে হবে? এমন কোন শত্রু আছে, আল্লাহর মোকাবেলায় যে কোনও কিছু করার ক্ষমতা রাখে? কিংবা এমন কী বিপদ আছে, আল্লাহর সাহায্যে যা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব নয়? সুতরাং "আল্লাহ সবরকারীর সংগে", একজন বান্দার পক্ষে এরচে' বড় কোনও সুসংবাদ হতে পারে না এবং এরচেয়ে বড় আশ্বাসবাণীও আর কিছু থাকতে পারে না। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
وَاعْلَمْ أَنَّ النَّضْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَ أَنَّ الْفَرَحْ مَعَ الْكَرْبِ وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسرًا ‘
জেনে রেখ, আল্লাহর সাহায্য সবরের সাথে, স্বস্তি-সাবলীলতা কষ্ট-ক্লেশের সাথে এবং সহজতা কাঠিন্যের সাথে। মুসনাদে আহমদঃ ২৮০৪
নামায আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভের প্রকৃষ্ট উপায়। নামাযে বান্দা আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়। তাঁর সামনে নতিস্বীকার করে। তার কাছে নিজ ক্ষুদ্রতা ও বন্দেগীভাব প্রকাশ করে। আর এভাবে আল্লাহর সংগে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ অবস্থায় সে তার সর্বাপেক্ষা বেশি কাছে চলে যায়। তখন সে আল্লাহর কাছে যা-ই প্রার্থনা করে তা অতি সহজে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং দুনিয়াবী ও দীনী যে-কোনও প্রয়োজনই দেখা দেয় তা পুরণের জন্য বান্দার উচিত নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের নীতিও এ রকমই ছিল। হাদীছে এসেছে,
إِذا حَرْبَهُ أَمْرُ صَلَّى
যখনই কোনও বিষয় তাঁকে বিচলিত করে তুলত, তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন।- আবু দাউদঃ ১২১৩
ছয় নং আয়াত
{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ (31)} [محمد: 31]
অর্থ : (হে মুসলিমগণ!) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে দেখে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল। মুহাম্মদঃ ৩১
ব্যাখ্যা
আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে দীনের জন্য জিহাদ ও সংগ্রাম করার এবং জান-মাল খরচের যে হুকুম দিয়েছেন, এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তার কারণ বর্ণনা করেছেন যে, এর মাধ্যমে তিনি বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা করেন যে, কে কঠিন কষ্ট-ক্লেশ সত্ত্বেও আল্লাহর হুকুম পালনে রত থাকে, অর্থব্যয়ে কোনও কার্পণ্য করে না এবং প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করে না, আর কে অধৈর্য হয়ে পড়ে, ফলে এসব হুকুম পালনে গড়িমসি করে ও পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে?
প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ তা'আলা তো 'আলিমুল গায়ব', তিনি প্রকাশ্য-গুপ্ত যাবতীয় বিষয় জানেন, সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল, তা সত্ত্বেও এ আয়াতে এ কথা বলার অর্থ কী যে, যাতে আমি জানতে পারি, কে তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ এবং ধৈর্যশীল?
এর উত্তর এই যে, এখানে জানা অর্থ জ্ঞাত বিষয়কে প্রকাশ করা। অর্থাৎ তিনি তো জানেনই কোন ব্যক্তি কালক্ষেপণ না করে এবং কোনওরকম গড়িমসিতে লিপ্ত না হয়ে পূর্ণোদ্যমে দীনের পথে জিহাদ ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং অকাতরে জান-মাল কুরবান করবে, আর কে গা বাঁচানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মানুষের তা জানা না থাকায় অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং মুনাফিক শ্রেণীর লোক সেই সুযোগ গ্রহণ করে। তাই অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতির দাবি হয়, আল্লাহর জানা বিষয়কে মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া। তা প্রকাশ করার ভেতর এ ছাড়া আরও বহুবিধ হিকমত নিহিত আছে। তো এই প্রকাশ করে দেওয়াকেই আয়াতে 'জানা' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইমাম নববী রহ. সবরের ফযীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে এই ছয়টি আয়াত এখানে উল্লেখ করেছেন। কুরআন মাজীদে এ বিষয়ে আরও বহু আয়াত আছে। মনোযোগী তিলাওয়াতকারীর নজরে মাঝেমধ্যেই এ রকমের আয়াত পড়ে যায়, যা দ্বারা তার ক্ষণে- ক্ষণে সবরের শিক্ষালাভের সুযোগ হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সেই শিক্ষা অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। এবার আমরা সবর সংক্রান্ত হাদীছসমূহ পাঠ করছি।
'সবর'-এর আভিধানিক অর্থ আবদ্ধ করা ও সংযত করা। শরী'আত নির্দেশিত পথ ও পন্থার উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে সবর বলা হয়। এ হিসেবে সবর তিন প্রকার-
ক. আল্লাহ তা'আলা যা কিছু করার আদেশ করেছেন তা পালন করার উপর তথা আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
খ. আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু নিষেধ করেছেন, তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে আটকে রাখা ও সংযত করা
গ. বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা।
আল্লাহর আদেশ পালনে সবর আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন ও ইবাদত-আনুগত্যে যত্নবান থাকতে কিছু না কিছু কষ্ট হয়ই। কখনও সে কষ্ট হয় মানসিক, কখনও দৈহিক এবং কখনও উভয় রকমের। উদাহরণত: পরনারী বা পরপুরুষ থেকে পর্দা রক্ষা করে চলায় কোনও দৈহিক কষ্ট নেই। এতে যা কষ্ট তা কেবলই মানসিক। কেননা এ কারণে নানা লোকে নানা কথা বলে। তাতে মনের উপর চাপ পড়ে। সেই চাপ উপেক্ষা করে পর্দা রক্ষা করে যাওয়া সবরের মাধ্যমেই সম্ভব। বেপর্দা হওয়ার প্রতি মনেরও কিছু আগ্রহ থাকে। মনকে তা থেকে সংযত রাখতে হয়। তো লোকের কথায় কান না দিয়ে এবং মনের আগ্রহকে প্রশ্রয় না দিয়ে পর্দা রক্ষা করে চলতে যে কষ্ট হয় তা কেবল মানসিক কষ্ট। কিন্তু শরী'আত যেহেতু পর্দা রক্ষার আদেশ করেছে, তাই সে আদেশ পালনার্থে ওই কষ্ট স্বীকার করে নেওয়াই হচ্ছে সবর।
রোযা রাখা ও হজ্জ পালনে হয় দৈহিক কষ্ট। নামায আদায়েও কিছু না কিছু দৈহিক কষ্ট আছে। সেই কষ্ট সত্ত্বেও এসব বিধান পালন করে যাওয়া সবরের পরিচায়কই বটে। লোভনীয় খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও তা খাওয়া হতে বিরত থেকে রোযা পালন করতে দৈহিক কষ্টের সংগে কিছু না কিছু মানসিক কষ্টও হয়। এ অবস্থায় রোযা রাখার দ্বারা সবরের পরীক্ষা হয়ে যায়।
নিষেধাজ্ঞা পালনে সবর
শরী'আত যা-কিছু নিষেধ করেছে তার প্রতি মানুষের কুপ্রবৃত্তির লোভ থাকে, যেমন সুদ-ঘুষ খাওয়া, মদপান করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা ইত্যাদি। সেই লোভ দমন করে এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকার জন্য মনকে শাসন করতে হয়। এতেও কিছু না কিছু কষ্ট আছেই। সেই কষ্ট স্বীকার করে শরীআতের সমস্ত নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বেঁচে থাকাটাও এক প্রকার সবর। কেননা এতে মনকে কঠিন বাঁধনে বাঁধতে হয়, যাতে সে লোভের শিকার হয়ে নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত না হয়ে পড়ে।
মুসিবতে সবর
বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণের যে সবর, তাতেও এক প্রকারের বাঁধন আছে। কেননা বিপদ-আপদে পড়লে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। সেই অস্থিরতায় নানা রকমের অবৈধ কাজ করে ফেলে ও নাজায়েয কথাবার্তা বলে ফেলে। সেই নাজায়েয কাজ ও কথা যাতে না হয়ে যায়, সেজন্য যে-কোনও বিপদে নিজেকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখতে হয়।
বস্তুত বিপদ-আপদ পার্থিব জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ইহজীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এই জীবনের পথে পথে কাঁটা। আছে ঝড়-ঝঞ্ঝা, আছে নানা দুঃখ-কষ্ট। কখনও ফসলহানি হয়, কখনও প্রিয়জনের মৃত্যু ঘটে। সম্মুখীন হতে হয় অন্যের অপ্রীতিকর আচরণের। কখনও ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত আসে। সম্পূর্ণ বাধা-বিপত্তিহীন নিরোগ নির্ঝঞ্ঝাট জীবন ইহলোকে অসম্ভব। তা যখন অসম্ভব তখন এসব মেনে নেওয়ার ভেতরেই জীবনের সচলতা রক্ষা সম্ভব।
এই যে মেনে নেওয়া অর্থাৎ প্রতিকূল প্রতিটি অবস্থাকে ইহজীবনের স্বাভাবিকতা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া, এটাই সবর। এই সবর অবলম্বন করতে পারলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। তখন যেকোনও ভাঙন ও পতনের পর আবার উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। জীবনকে সফল করে তুলতে হলে উঠে তো দাঁড়াতেই হবে। নিজেকে চলমান রাখতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত।
মৃত্যুর পরই শুরু হয় আসল জীবন। সেই জীবনের সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজন ইহজীবনকে কর্মময় করে রাখা। অর্থাৎ যখনকার যেই কাজ তা করে যাওয়া। কোনও মুহূর্তকেই নষ্ট হতে না দেওয়া।
কাজ তো বিস্তর। প্রসিদ্ধ চার ইবাদতের বাইরেও আল্লাহ ও বান্দার হকের আছে সুদীর্ঘ তালিকা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সংগে সম্পৃক্ত সেই তালিকার সবগুলো কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়ার ভেতরেই পরকালীন জীবনের সার্থকতা নিহিত। বিপদ-আপদ ও ঝড় ঝাপটায় যে ব্যক্তি ভেঙে পড়বে, তার পক্ষে তো এই যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। করণীয় অনেক কাজই তার করা হয় না। ফলে জীবন হয়ে যাবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা থেকে রক্ষার জন্যই দরকার কঠিন ধৈর্য। তাই কুরআন ও হাদীছ মানুষকে পদে পদে ধৈর্য রক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেছে। এবং এর অপরিসীম গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আসুন মনোযোগ সহকারে সেগুলো পাঠ করি।
ধৈর্য সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)} [آل عمران: 200]
অর্থ : হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মুকাবিলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত থাক।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে তিনটি বিষয়ের হুকুম দেওয়া হয়েছে। (ক) সবর; (খ) মুসাবারা এবং (গ) মুরাবাতা ।
প্রথমে বলা হয়েছে, তোমরা সবর ও ধৈর্যধারণ কর। অর্থাৎ দীনের অনুসরণ, শরী'আতের বিধানাবলী পালন, খেয়ালখুশির বিরোধিতা এবং আল্লাহর মহব্বত ও আনুগত্যে অটল-অবিচল থাক। যত অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টই হোক না কেন, এর ব্যতিক্রম করো না এবং সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দেও সীমালঙ্ঘন করো না। বালা-মুসিবত ও শান্তি- স্বস্তি সর্বাবস্থায় ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখাও। হযরত জুনায়দ রহ. বলেন, কোনওরূপ বিচলতা ছাড়া নফসকে তার অপসন্দের বিষয়ে ধরে রাখার নামই সবর।
দ্বিতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুসাবারা অর্থাৎ মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শনের। তার মানে যুদ্ধকালে শত্রু অপেক্ষা নিজেদের ধৈর্য বলিষ্ঠ রাখ। কেননা তোমাদের মত তারাও দুঃখ-কষ্ট পায় এবং জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তাদের কোনও প্রাপ্তির আশা নেই। কিন্তু তোমাদের পুরস্কার লাভের আশা আছে। তাই ধৈর্যও তোমাদের বেশি থাকা উচিত।
মুসাবারা অর্থাৎ ধৈর্যের প্রতিযোগিতা যেমন কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, যাকে 'জিহাদে আসগার' বলা হয়ে থাকে, তেমনি এর প্রয়োজন 'জিহাদে আকবার' অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে। কেননা নফস বা কুপ্রবৃত্তি সর্বদা দুনিয়া ও এর ভোগ্যবস্তুর প্রতি আকৃষ্ট থাকে। নিজেকে সে আকর্ষণ থেকে ফিরিয়ে আখিরাতের অভিমুখী করা ও আল্লাহপ্রেমে আবদ্ধ রাখার জন্য কঠোর সাধনা ও মুজাহাদার প্রয়োজন। সেই মুজাহাদা ও সাধনায় উত্তীর্ণ হওয়া কেবল সবরের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রকাশ থাকে যে, নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিষয়টা কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যেও থাকে। এ হিসেবে তাকে জিহাদে আসগার বলা হয় কেবল বাহ্যিক দিকের প্রতি লক্ষ করে । না হয় অভ্যন্তরীণ দিক থেকে সেটিও জিহাদে আকবার।
তৃতীয়ত হুকুম দেওয়া হয়েছে মুরাবাতা অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকার। শব্দটি ربط মূলধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ বেঁধে রাখা। অর্থাৎ সীমান্তে ঘোড়া বেঁধে রাখা। পরে শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থ পরিগ্রহ করে। ফলে এর অর্থ হয় সীমান্ত পাহারায় নিযুক্ত থাকা, তাতে ঘোড়া থাক বা না থাক। আরও পরে শব্দটি অধিকতর ব্যাপকতা লাভ করে। ফলে যেকোনও কাজে অন্তরায় সৃষ্টিকারীর প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকাকে মুরাবাতা বলা হতে থাকে, সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকাও যার অন্তর্ভুক্ত।
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষার ফযীলত
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকা খুবই ফযীলতের কাজ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে –
رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَ ما عَلَيْهَا، وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرُ مِنَ الدُّنْيَا وَ مَا عَلَيْهَا، وَالرَّوْحَةُ يَرُوْحُهَا الْعَبْدُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوِ الْعَدْوَة خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا
"আল্লাহর পথে একদিনের সীমান্ত পাহারা দুনিয়া ও এর অন্তর্গত সবকিছু থেকে উত্তম। তোমাদের একটি চাবুক পরিমাণ জান্নাতের স্থান দুনিয়া ও এর অন্তর্গত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহর পথে এক সকাল বা এক বিকালের মেহনত দুনিয়া ও এর অন্তৰ্গত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম।”
অপর এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ربَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامٍ شَهرٍ وَ قِيَامِهِ وإن مات جرى عَلَيْهِ عَمَلهُ الذي كان يعملة وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَ أَمِنَ الْفَتَانَ .
“একদিন ও একরাতের সীমান্ত পাহারা একমাস দিনে রোযা রাখা ও রাতে ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম। এ অবস্থায় মারা গেলে তার ছওয়াব জারি থাকবে। সে শহীদের মত রিযিকপ্রাপ্ত হবে এবং কবরের সওয়ালকারীদের পক্ষ হতে সে নিরাপদ থাকবে। (অর্থাৎ তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে।)
অন্যরকম সীমান্ত পাহারা
বাগাবী রহ. বলেন যে, আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে 'রিবাত' বা সীমান্ত পাহারার কোনও ব্যাপার ছিল না। তখনকার রিবাত ছিল এক নামাযের পর অন্য নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এক হাদীস দ্বারাও তা সমর্থিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلا أُخبِرُكُمْ بِمَا يُمْحُو الله به الخطايا ويَرْفَعُ به الدرجات إسباغ الوضوء على المكاره و كثرة الخط إلى المساجد والنظارُ الصَّلاةِ بَعْدَ الصَّلاة، فالكُمُ الرباط فذالكم الرياض قدالِكُمُ الرباط.
"আমি কি তোমাদেরকে সেই জিনিস সম্পর্কে অবগত করব না, যার সাহায্যে আল্লাহ গুনাহ মুছে ফেলেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? তা হচ্ছে, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এটিই রিবাত (সীমান্ত পাহারা)। এটিই রিবাত। এটিই রিবাত।
দুই নং আয়াত
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَاتِ وَبَشَرِ الضَّبِرِينَ )
অর্থ : আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়।
ব্যাখ্যা
ভয়-ভীতি দ্বারা পরীক্ষা : এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে একটা হচ্ছে কিছুটা ভয়-ভীতি। ভয় বলতে শত্রুর ভয় বোঝানো হয়েছে, যাতে প্রাণে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পূর্ণাঙ্গ ভয়ের কথা বলা হয়নি, যাতে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যায়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার নিতান্তই মেহেরবানী যে, তিনি পরিপূর্ণ ভয় নয়; বরং সামান্য ভয়ের দ্বারা পরীক্ষা করেন। অবশ্য বান্দা যেহেতু দুর্বল, তাই সামান্য ভয়ও অনেক সময় তার পক্ষে অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার প্রতি যার পূর্ণ আস্থা এবং অন্তরে তাকওয়া-পরহেযগারী থাকে, আল্লাহ তা'আলা তাকে সেই অগ্নিপরীক্ষায়ও পাশ করিয়ে দেন। খন্দকের যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামকে শত্রুভীতি দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় তারা শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কুরআন মাজীদে সে সম্পর্কেই ইরশাদ হয়েছে –
{ إِذْ جَاءُوكُمْ مِنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِاللَّهِ الظُّنُونَا (10) هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُونَ وَزُلْزِلُوا زِلْزَالًا شَدِيدًا (11)} [الأحزاب: 10، 11]
স্মরণ কর, যখন তারা তোমাদের উপর চড়াও হয়েছিল উপর এবং নিচের দিক থেকেও এবং যখন চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং প্রাণ মুখের কাছে এসে পড়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকমের ভাবনা ভাবতে শুরু করেছিলে। তখন মু'মিনগণ কঠিনভাবে পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তাদেরকে তীব্র প্রকম্পনে কাঁপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ক্ষুধার দ্বারা পরীক্ষা : দ্বিতীয়ত পরীক্ষা করা হয় কিছুটা ক্ষুধার দ্বারা। এমন ক্ষুধা নয়, যাতে বিলকুল খাদ্য জোটে না। ফলে অনাহারে মৃত্যু ঘটে। কখনও খাদ্যাভাব হয় ব্যক্তিবিশেষের এবং কখনও হয় এলাকাবিশেষে। অর্থাৎ কোনও এলাকা দুর্ভিক্ষ কবলিত হয়ে পড়ে। ফলে সেই এলাকায় তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। কিন্তু সে অভাব বিশ্বব্যাপী হয় না যে, কোনওভাবেই মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হয় না। ব্যক্তিবিশেষ বা এলাকাবিশেষে অভাব দেখা দেওয়ায় অন্য ব্যক্তি বা অন্য স্থান থেকে খাদ্য আমদানি করে অভাব মেটানোর চেষ্টা করা যায়। যাহোক চূড়ান্ত পর্যায়ের খাদ্যাভাব দ্বারা পরীক্ষা না করা বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ দয়া। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষা নেওয়া উদ্দেশ্য, তাই জানে না মারা হলেও একটা পর্যায়ের খাদ্যকষ্টের সম্মুখীন তো করা হয়ই। সে কষ্ট ব্যক্তিভেদে বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। ব্যক্তি উচ্চপর্যায়ের হলে পরীক্ষাও একটু বেশি কঠিনই হয় বৈকি। তাই সাহাবায়ে কিরামকে ক্ষুধার কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছিল। ওই খন্দকের যুদ্ধেই এমন তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন তাদের হতে হয়েছিল যে, খাদ্যাভাবে তাদের পেটে পাথর পর্যন্ত বাঁধতে হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ করেননি। সেই অবর্ণনীয় ক্ষুধার কষ্ট নিয়েই তারা কর্তব্যকর্মে অবিচল থেকেছিলেন। তারা আমাদের আদর্শ। সুতরাং ভয়-ভীতি বা ক্ষুধাকষ্ট দেখা দিলে আমাদেরও কর্তব্য তাদের মত ধৈর্যধারণ করা।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা : তৃতীয়ত পরীক্ষা নেওয়া হয় অর্থ-সম্পদের ক্ষতি দ্বারা। অর্থাৎ বান্দাকে অভাব-অনটনে ফেলে পরীক্ষা করা হয় সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, নাকি ধৈর্যহারা হয়ে অন্যের প্রতি ঈর্ষাতুর হয় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ তা'আলা এ পরীক্ষাও সহনীয় পর্যায়েই নিয়ে থাকেন। এমন কঠিন অভাবে বান্দাকে ফেলেন না, যদ্দরুণ সে সম্পূর্ণরূপে নিরুপায় হয়ে যায় এবং সবরকম প্রয়োজন পূরনে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। হ্যাঁ, বিষয়টা যেহেতু পরীক্ষা, তাই অভাব-অনটনের একটা পর্যায়ের কষ্ট তো হবেই। কিন্তু সেই কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারলে আল্লাহ তাআলা খুশী হন এবং অভাবের স্থলে স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন। সাহাবায়ে কিরামের জীবন তো দীর্ঘকাল যাবত অভাব-অনটনের ভেতরেই কেটেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় অধিকাংশ সাহাবারই অবস্থা এমন ছিল যে, তাদের নিম্নাংশে ও ঊর্ধ্বাংশে পরার মত একজোড়া কাপড় ছিল না। হয় কেবল লুঙ্গি ছিল, নয়তো কেবল একটি চাঁদর। কিন্তু এই সুদীর্ঘ জীবনে এ বিষয়ে তাদের মুখে অভিযোগের একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। তারা ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে তাদের সেই অর্থাভাব থাকেনি। ইসলামের দিগ্বিজয় শুরু হয়ে গেলে তাদের জীবনে প্রাচুর্য চলে এসেছিল। অবশ্য তারা তো সাহাবীই ছিলেন। প্রাচুর্যকালে তারা বিলাসী হয়ে পড়েননি। আল্লাহর পথে দু'হাতে খরচ করতেন এবং শোকরগুযার হয়ে থাকতেন। বস্তুত কষ্টে সবর এবং স্বাচ্ছন্দ্যে শোকর, এ-ই ছিল তাদের শান।
প্রাণহানি দ্বারা পরীক্ষা:
চতুর্থত পরীক্ষা করা হয় জানের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। হয়তো চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় সন্তানের মৃত্যু ঘটল কিংবা স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু হয়ে গেল। এরকম পরীক্ষা দ্বারাও আল্লাহ তাআলা বান্দার সবরের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। সমস্ত জানের মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি তাঁর মালিকানাধীন যেকোনও বস্তু যখন ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারেন। সেই নিয়ে যাওয়াকে মেনে নেওয়াই বান্দা হিসেবে প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। শোক প্রকাশ এক জিনিস আর আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া আরেক জিনিস। প্রিয়জনের বিয়োগে শোকার্ত হওয়া আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া ও সবরের পরিপন্থী নয়। প্রতিটি মানুষের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা দয়া-মায়া রেখেছেন। কাজেই প্রিয় কারও মৃত্যুতে তার শোকাহত হওয়াই স্বাভাবিক। সবরের পরিপন্থী হচ্ছে বেসামাল হয়ে পড়া, যার আলামত বুক চাপড়ানো, কপাল থাপড়ানো, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা, মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া, ভাগ্যকে নিন্দা করা, আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা, ফিরিশতাকে দোষারোপ করা ইত্যাদি। এসব করার অর্থ সে মনেপ্রাণে আল্লাহর ফয়সালা মেনে নিতে পারেনি। এটাই সবরহীনতা। মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য এসব থেকে বেঁচে থাকা। তবেই সে সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
ফসলহানি দ্বারা পরীক্ষা :
পঞ্চমত পরীক্ষা নেওয়া হয় ফল ও ফসলহানির দ্বারা। হয়তো ঘূর্ণিঝড়ে ফসলের মাঠ তছনছ হয়ে গেল বা বানের পানিতে ক্ষেত-খামার ডুবে গেল কিংবা খরার উত্তাপে ফলের বাগান পুড়ে গেল ইত্যাদি। ফসলহানির একটা দিক এও যে, ক্ষেতের ফসল বা বাগানের ফল যখন পেকে গেল এবং তা ঘরে তোলার সময় হল, ঠিক সেই সময়ে আমীরের পক্ষ থেকে জিহাদের ডাক পড়ল আর ফল ও ফসল সেই অবস্থায় রেখেই বের হয়ে যেতে হল। হয়তো ফিরে আসার পর দেখা গেল
সব নষ্ট হয়ে গেছে বা সামান্যই ঘরে তোলা গেছে। এই যাবতীয় অবস্থাকে আল্লাহর ফয়সালায় মেনে নিয়ে মনেপ্রাণে সন্তুষ্ট থাকা গেলে সবরের পরীক্ষায় পাশ বলে গণ্য হয়। পক্ষান্তরে এ অবস্থায় যদি ভাগ্যকে দোষারোপ করা হয় বা মুখে অসমীচীন কথাবার্তা বলা হয়, তা হবে সবরের পরিপন্থী।
প্রকাশ থাকে যে, কোনও কোনও ব্যাখ্যাতা وَالثَّمَراتِ (ফল ও ফসল)-এর দ্বারা সন্তান-সন্তুতি বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সন্তান-সন্ততির মৃত্যু দ্বারাও পিতামাতাকে পরীক্ষা করে থাকেন। সন্দেহ নেই পিতামাতার পক্ষে তাদের সন্তান- সন্তুতি শ্রেষ্ঠতম ফলই বটে। এই ফল নিয়ে যাওয়া হলে তাদের পক্ষে সেই বিয়োগ বেদনা অত্যন্ত কঠিন হয়। কঠিন হওয়া সত্ত্বেও যারা ধৈর্যের পরিচয় দেয়, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অপরিমিত পুরস্কার দান করেন। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
سنن الترمذي ت شاكر (3/ 332)
" إذا مات ولد العبد قال الله لملائكته: قبضتم ولد عبدي، فيقولون: نعم، فيقول: قبضتم ثمرة فؤاده، فيقولون: نعم، فيقول: ماذا قال عبدي؟ فيقولون: حمدك واسترجع، فيقول الله: ابنوا لعبدي بيتا في الجنة، وسموه بيت الحمد "
"যখন কোনও বান্দার সন্তান মারা যায় আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তান কবজা করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা কি তার হৃদয়ের ফল নিয়ে এসেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তা'আলা জিজ্ঞেস করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ পড়েছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর। তার নাম দাও বায়তুল হামদ (প্রশংসার ঘর)।
যারা আল্লাহ তা'আলার যতবেশি প্রিয়, তাদের পরীক্ষাও তত কঠিন হয়ে থাকে। সুতরাং সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল নবী-রাসূলগণের। তারপর সাহাবায়ে কিরামের। তারপর নবী-রাসূলগণের আদর্শ অনুসরণে যারা তাদের যতবেশি ঘনিষ্ঠ, তাদের পরীক্ষাও সেই অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এরকম পরীক্ষার বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। সেই অনুযায়ী আমরা যারা সাধারণ, তাদের পরীক্ষা অনেক সহজ। আমাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এটাও এক মেহেরবানী যে, তাদের মত কঠিন পরীক্ষায় আমাদের ফেলেন না। এজন্য আমাদের অনেক বেশি শোকর আদায় করা দরকার। সেইসংগে দরকার তাদের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে সবরের পরীক্ষায় যাতে উত্তীর্ণ হতে পারি সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা আছে। আলোচ্য আয়াতেরই শেষে ইরশাদ হয়েছে-
{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (155)} [البقرة: 155]
অর্থ : যারা সবর অবলম্বন করে তাদেরকে সুসংবাদ শোনাও।' বাকারাঃ ১৫৫
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এর তাৎপর্য ও ফযীলত
সবরকারী কারা, আল্লাহ তা'আলা পরের আয়াতে তাদের পরিচয় প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
{الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (156)} [البقرة: 156]
অর্থ : যারা তাদের কোনও মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, 'আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। বাকারাঃ ১৫৬
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছ থেকে যা-কিছুই নিয়ে নেন, তা অর্থ-সম্পদ হোক বা সন্তান-সন্ততি, তারা আল্লাহ তাআলার ফয়সালা হিসেবে তা মনেপ্রাণে মেনে নেয় এবং বলে, সমস্ত জানমালের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলাই এবং আল্লাহ তাআলা আমার নিজেরও মালিক। তিনি যাকে যা ইচ্ছা দান করেন আবার যখন ইচ্ছা নিয়ে নেন। মালিকের তার নিজ দেওয়া সম্পদ এবং সৃষ্টিকর্তার পক্ষে তাঁর নিজ সৃষ্টি যে-কোনও সময় নিয়ে নেওয়ার অধিকার আছে। সে নিয়ে যাওয়াটা কোনোক্রমেই অন্যায় নয়; বরং তাতে আপত্তি করাই অন্যায়। তাঁর দানের মধ্যেও হিকমত থাকে এবং হিকমত থাকে নিয়ে নেওয়ার মধ্যেও। একটা বড় হিকমত তো পরীক্ষা করা। আল্লাহ তা'আলা এর মাধ্যমে পরীক্ষা করেন বান্দা কতটুকু ধৈর্যধারণ করছে। ধৈর্যধারণ করতে পারলে তিনি যা নেন তারচে' অনেক বেশি দান করেন। তিনি দান করেন দুনিয়ায়ও এবং আখিরাতেও। আখিরাতের দানই শ্রেষ্ঠতম দান। সেই শ্রেষ্ঠতম দান লাভের আশায় আমি তাঁর এ নিয়ে যাওয়াকে সর্বান্তকরণে মেনে নিলাম। তিনি চাইলে যে-কোনও সময় আমাকেও নিয়ে যেতে পারেন। আর একদিন তো আমাকে তাঁর কাছে চলে যেতেই হবে। কাজেই যারা চলে গেছে তাদের জন্য আক্ষেপ না করে আমার কর্তব্য নিজের চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সক্ষম হলে আল্লাহর কাছে চলে যাওয়া নেককারদের সংগে আমি গিয়ে মিলিত হতে পারব। এটাই إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ এর তাৎপর্য। এ বাক্যটি অত্যন্ত মূল্যবান। এটা সবরকারীর সবরের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে এ উম্মতকে এ বাক্যটি দান করেছেন। এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَعْطِبَتْ أُمَّتِي شَيْئًا لَمْ يُعْطَهُ أَحَدٌ مِنَ الْأُمَمِ عِنْدَ الْمُصِيبَةِ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
'আমার উম্মতকে একটা জিনিস দেওয়া হয়েছে, যা আর কোনও উম্মতকে দেওয়া হয়নি। তা হল, বিপদ ও মুসিবতের সময় বলা- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি'উন।
সবরকারীর পুরস্কার
বস্তুত কথায় ও কর্মে যারা “ইন্না লিল্লাহ'-এর পাঠ ও শিক্ষা অবলম্বন করতে পারে। তারাই প্রকৃত সবরকারী । এরকম সবরকারীর জন্যে উপরে যে সুসংবাদের কথা বলা হয়েছে, সামনের আয়াতে সেই সুসংবাদের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে যে-
{أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (157)} [البقرة: 157]
অর্থ : এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হিদায়াতের উপর। বাকারাঃ ১৫৭
এদের তিনটি পুরস্কারের কথা এখানে ঘোষিত হয়েছে। হযরত উমর ফারূক রাঃ এর ভাষায়- “কতই না চমৎকার পাশাপাশি দুই দান। (ক) বিশেষ করুণা ও (খ) দয়া। এবং কতই না চমৎকার অতিরিক্ত দান হিদায়াতপ্রাপ্তি।”
তিন নং আয়াত
{إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ (10) } [الزمر: 10]
অর্থ : যারা সবর অবলম্বন করে, তাদেরকে তাদের ছওয়াব দেওয়া হবে অপরিমিত। যুমারঃ ১০
ব্যাখ্যা
কুরআন ও হাদীছে বিভিন্ন আমলের বিভিন্ন ছওয়াবের কথা ঘোষিত হয়েছে, যেমন আল্লাহ তা'আলার পথে দান করলে তার ছওয়াব সাতগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি বৃদ্ধি করা হয়। কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করলে প্রত্যেক হরফে এক নেকী দেওয়া হয়, যা বৃদ্ধি করে দশ নেকীতে পরিণত করা হয়। আলোচ্য আয়াতে সবর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা তার ছওয়াব দান করেন বিনা হিসাবে, সাতশ' বা সাত হাজার গুণ নয়, কোনও পাত্র দ্বারা মেপে নয় কিংবা দাড়িপাল্লা দ্বারা ওজন করেও নয়। বিনা হিসাবে যখন, তখন কী দেওয়া হবে তা কেবল আল্লাহ তাআলা জানেন। কোনও মানুষের পক্ষে তা কল্পনা করা সম্ভব নয়। এজন্যই আবু উছমান মাগরিবী রহ. বলেন, সবরের বদলার উপর আর কোনও বদলা নেই।
চার নং আয়াত
{ وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (43)} [الشورى: 43
অর্থ : প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। শুরাঃ ৪৩
ব্যাখ্যা
কারও উপর যদি জুলুম করা হয় আর তার প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয় ও ধৈর্যধারণ করে, তবে তা অতি বড় পুণ্যের কাজ। এরূপ করা কেবল উঁচু হিম্মত ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ ও মনকে সংযত করার মত ক্ষমতা রাখে না, তার পক্ষে সহজে ক্ষমা করা সম্ভব হয় না। সে উত্তেজনাবশে প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে এবং সেই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক সময়ই তার দ্বারা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। ফলে মজলুম ব্যক্তি উল্টো জালিমে পরিণত হয়। জালিম হওয়া অপেক্ষা মজলুম হয়ে থাকা ঢের ভালো। কারণ মজলুম ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হয় আর জালিমের প্রতি আল্লাহর ক্রোধ নিপতিত হয়। সেই ক্রোধ থেকে বাঁচা ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের কর্তব্য ক্ষমাপ্রবণ হওয়া ও ধৈর্যধারণ করা। এটা যেহেতু দৃঢ় হিম্মত ও মনোবলের উপর নির্ভর করে, তাই অন্তরে এ গুণ পয়দা করার জন্যে সম্ভাব্য সকল পন্থা অবলম্বন করা উচিত, যেমন ক্ষমাপ্রবণ ও মনোবলসম্পন্ন ব্যক্তির সাহচর্য অবলম্বন করা, তাদের ঘটনাবলী পাঠ করা, ধৈর্যধারণ ও ক্ষমার ফযীলত সম্পর্কে অবহিত হওয়া ইত্যাদি।
প্রকাশ থাকে যে, ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে জালিম ও অপরাধী ব্যক্তির স্পর্ধা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ক্ষমা না করে প্রতিশোধ গ্রহণও জায়েয; বরং ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিশোধ নেওয়া উত্তম, যেমন এর আগের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
{وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ (39) وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (40)} [الشورى: 39، 40]
অর্থ : এবং যখন তাদের প্রতি কোনও জুলুম করা হয়, তখন তারা তা প্রতিহত করে। মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। শুরাঃ ৩৯-৪০
তবে মন্দের বদলা যেহেতু অনুরূপ মন্দ অর্থাৎ জালিম যে পরিমাণ জুলুম ও কষ্টদান করে, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাকেও সমপরিমাণ কষ্টই দেওয়া যাবে, এর বেশি নয়। তাই প্রতিশোধ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, যাতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে জুলুম না হয়ে যায়। সেজন্যই সাধারণ অবস্থায় প্রতিশোধগ্রহণ অপেক্ষা ক্ষমা করাই শ্রেয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য উলামায়ে কিরামের শরণাপন্ন হওয়া কর্তব্য।
পাঁচ নং আয়াত
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ (153) } [البقرة: 153]
অর্থ : হে মুমিনগণ! সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য লাভ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। বাকারাঃ ১৫৩
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে মানুষকে তার যাবতীয় বিষয়ে দু'টি কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। একটি হল সবর, দ্বিতীয়টি নামায। সবর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার হুকুম-আহকাম পালন, নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিহার ও বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারে সাহায্য লাভ হয়। এক তো তাতে অন্তরে দৃঢ়তা আসে ও সাহস সঞ্চার হয়। ফলে কষ্টের ভেতরেও ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ হয়, শত প্রলোভনেও গুনাহ থেকে বাঁচা যায় এবং বিপদ-আপদে নিজেকে সংযত রাখা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত সবর করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। ফলে উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই তিনি বান্দাকে সাহায্য করেন। তিনি তো বলেই দিয়েছেন- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সংগে আছেন। আল্লাহ যার সংগে, তার আর কিসের প্রয়োজন? যিনি আসমান-যমীনের মালিক, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সংগে থাকলে আর কিসের ভয়? জগতে এমন কোন শক্তি আছে, আল্লাহ সংগে থাকলে যার পরওয়া করতে হবে? এমন কোন শত্রু আছে, আল্লাহর মোকাবেলায় যে কোনও কিছু করার ক্ষমতা রাখে? কিংবা এমন কী বিপদ আছে, আল্লাহর সাহায্যে যা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব নয়? সুতরাং "আল্লাহ সবরকারীর সংগে", একজন বান্দার পক্ষে এরচে' বড় কোনও সুসংবাদ হতে পারে না এবং এরচেয়ে বড় আশ্বাসবাণীও আর কিছু থাকতে পারে না। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
وَاعْلَمْ أَنَّ النَّضْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَ أَنَّ الْفَرَحْ مَعَ الْكَرْبِ وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسرًا ‘
জেনে রেখ, আল্লাহর সাহায্য সবরের সাথে, স্বস্তি-সাবলীলতা কষ্ট-ক্লেশের সাথে এবং সহজতা কাঠিন্যের সাথে। মুসনাদে আহমদঃ ২৮০৪
নামায আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভের প্রকৃষ্ট উপায়। নামাযে বান্দা আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়। তাঁর সামনে নতিস্বীকার করে। তার কাছে নিজ ক্ষুদ্রতা ও বন্দেগীভাব প্রকাশ করে। আর এভাবে আল্লাহর সংগে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ অবস্থায় সে তার সর্বাপেক্ষা বেশি কাছে চলে যায়। তখন সে আল্লাহর কাছে যা-ই প্রার্থনা করে তা অতি সহজে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং দুনিয়াবী ও দীনী যে-কোনও প্রয়োজনই দেখা দেয় তা পুরণের জন্য বান্দার উচিত নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের নীতিও এ রকমই ছিল। হাদীছে এসেছে,
إِذا حَرْبَهُ أَمْرُ صَلَّى
যখনই কোনও বিষয় তাঁকে বিচলিত করে তুলত, তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন।- আবু দাউদঃ ১২১৩
ছয় নং আয়াত
{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ (31)} [محمد: 31]
অর্থ : (হে মুসলিমগণ!) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে দেখে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল। মুহাম্মদঃ ৩১
ব্যাখ্যা
আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে দীনের জন্য জিহাদ ও সংগ্রাম করার এবং জান-মাল খরচের যে হুকুম দিয়েছেন, এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তার কারণ বর্ণনা করেছেন যে, এর মাধ্যমে তিনি বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা করেন যে, কে কঠিন কষ্ট-ক্লেশ সত্ত্বেও আল্লাহর হুকুম পালনে রত থাকে, অর্থব্যয়ে কোনও কার্পণ্য করে না এবং প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করে না, আর কে অধৈর্য হয়ে পড়ে, ফলে এসব হুকুম পালনে গড়িমসি করে ও পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে?
প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ তা'আলা তো 'আলিমুল গায়ব', তিনি প্রকাশ্য-গুপ্ত যাবতীয় বিষয় জানেন, সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল, তা সত্ত্বেও এ আয়াতে এ কথা বলার অর্থ কী যে, যাতে আমি জানতে পারি, কে তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ এবং ধৈর্যশীল?
এর উত্তর এই যে, এখানে জানা অর্থ জ্ঞাত বিষয়কে প্রকাশ করা। অর্থাৎ তিনি তো জানেনই কোন ব্যক্তি কালক্ষেপণ না করে এবং কোনওরকম গড়িমসিতে লিপ্ত না হয়ে পূর্ণোদ্যমে দীনের পথে জিহাদ ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং অকাতরে জান-মাল কুরবান করবে, আর কে গা বাঁচানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মানুষের তা জানা না থাকায় অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং মুনাফিক শ্রেণীর লোক সেই সুযোগ গ্রহণ করে। তাই অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতির দাবি হয়, আল্লাহর জানা বিষয়কে মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া। তা প্রকাশ করার ভেতর এ ছাড়া আরও বহুবিধ হিকমত নিহিত আছে। তো এই প্রকাশ করে দেওয়াকেই আয়াতে 'জানা' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইমাম নববী রহ. সবরের ফযীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে এই ছয়টি আয়াত এখানে উল্লেখ করেছেন। কুরআন মাজীদে এ বিষয়ে আরও বহু আয়াত আছে। মনোযোগী তিলাওয়াতকারীর নজরে মাঝেমধ্যেই এ রকমের আয়াত পড়ে যায়, যা দ্বারা তার ক্ষণে- ক্ষণে সবরের শিক্ষালাভের সুযোগ হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সেই শিক্ষা অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। এবার আমরা সবর সংক্রান্ত হাদীছসমূহ পাঠ করছি।
২৫। ধৈর্য সম্পর্কে কয়েকটি হাদীছ ; সবর, নামায, রোযা ইত্যাদির ফযীলতঃ
হযরত আবু মালিক আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। "আলহামদুলিল্লাহ" মীযান ভরে ফেলে। “সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ" আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান ভরে ফেলে। 'সালাত' নূর। 'সদাকা' প্রমাণ। 'সবর' আলো। কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ সকালবেলা বের হয়, অতঃপর নিজেকে বিক্রি করে, যাতে সে হয়তো নিজেকে মুক্ত করে, নয়তো নিজেকে ধ্বংস করে- মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২২৩)
হযরত আবু মালিক আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। "আলহামদুলিল্লাহ" মীযান ভরে ফেলে। “সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ" আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান ভরে ফেলে। 'সালাত' নূর। 'সদাকা' প্রমাণ। 'সবর' আলো। কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ সকালবেলা বের হয়, অতঃপর নিজেকে বিক্রি করে, যাতে সে হয়তো নিজেকে মুক্ত করে, নয়তো নিজেকে ধ্বংস করে- মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২২৩)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا} [آل عمران: 200]، وقال تعالى: {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الأَمْوَالِ وَالأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ} [ص:24][البقرة: 155]، وَقالَ تَعَالَى: {إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَاب} [الزمر:10]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43]، وَقالَ تَعَالَى: {اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ} [البقرة: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ} [محمد: 31]، وَالآياتُ في الأمر بالصَّبْر وَبَيانِ فَضْلهِ كَثيرةٌ مَعْرُوفةٌ.
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا} [آل عمران: 200]، وقال تعالى: {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الأَمْوَالِ وَالأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ} [ص:24][البقرة: 155]، وَقالَ تَعَالَى: {إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَاب} [الزمر:10]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43]، وَقالَ تَعَالَى: {اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ} [البقرة: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ} [محمد: 31]، وَالآياتُ في الأمر بالصَّبْر وَبَيانِ فَضْلهِ كَثيرةٌ مَعْرُوفةٌ.
25 - وعن أبي مالكٍ الحارث بن عاصم الأشعريِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمان، والحَمدُ لله تَمْلأُ الميزَانَ، وَسُبْحَانَ الله والحَمدُ لله تَملآن - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَينَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ، والصَّلاةُ نُورٌ، والصَّدقةُ بُرهَانٌ، والصَّبْرُ ضِياءٌ، والقُرْآنُ حُجةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ (1). كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائعٌ نَفسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُها». رواه مسلم. (2)
হাদীস নং: ২৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
২৬। সবর আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দানঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, একদল আনসার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু চাইল। তিনি তাদের তা দিলেন। তারা আবার চাইল। তিনি আবার তাদের দিলেন। পরিশেষে তাঁর কাছে যা ছিল শেষ হয়ে গেল। নিজ হাতের সবটা খরচ করে ফেলার পর তিনি তাদের বললেন, আমার হাতে যা-কিছু মাল থাকে, আমি কখনোই তা তোমাদের না দিয়ে জমা করে রাখি না। তবে মনে রেখ, যে ব্যক্তি (অন্যের কাছে হাত পাতার লাঞ্ছনা থেকে) নিজেকে পবিত্র রাখতে চায়, আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র রাখেন। যে ব্যক্তি নিজেকে (অন্যের কাছে যা আছে তা থেকে) ঐশ্বর্যশালী করে রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে ঐশ্বর্যশালী করে দেন। যে ব্যক্তি (কষ্ট-ক্লেশে) ধৈর্যের ভাব বজায় রাখে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রকৃত ধৈর্যশীল করে দেন। কাউকে ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও প্রশস্ত কোনও দান দেওয়া হয়নি - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬৪৭০, মুসলিম হাদীস নং ১০৫৩)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, একদল আনসার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু চাইল। তিনি তাদের তা দিলেন। তারা আবার চাইল। তিনি আবার তাদের দিলেন। পরিশেষে তাঁর কাছে যা ছিল শেষ হয়ে গেল। নিজ হাতের সবটা খরচ করে ফেলার পর তিনি তাদের বললেন, আমার হাতে যা-কিছু মাল থাকে, আমি কখনোই তা তোমাদের না দিয়ে জমা করে রাখি না। তবে মনে রেখ, যে ব্যক্তি (অন্যের কাছে হাত পাতার লাঞ্ছনা থেকে) নিজেকে পবিত্র রাখতে চায়, আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র রাখেন। যে ব্যক্তি নিজেকে (অন্যের কাছে যা আছে তা থেকে) ঐশ্বর্যশালী করে রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে ঐশ্বর্যশালী করে দেন। যে ব্যক্তি (কষ্ট-ক্লেশে) ধৈর্যের ভাব বজায় রাখে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রকৃত ধৈর্যশীল করে দেন। কাউকে ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও প্রশস্ত কোনও দান দেওয়া হয়নি - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬৪৭০, মুসলিম হাদীস নং ১০৫৩)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
26 - وعن أبي سَعيد سعدِ بن مالكِ بنِ سنانٍ الخدري رضي الله عنهما: أَنَّ نَاسًا مِنَ الأَنْصَارِ سَألوا رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأعْطَاهُمْ، ثُمَّ سَألوهُ فَأعْطَاهُمْ، حَتَّى نَفِدَ مَا عِندَهُ، فَقَالَ لَهُمْ حِينَ أنْفْقَ كُلَّ شَيءٍ بِيَدِهِ: «مَا يَكُنْ عِنْدي مِنْ خَيْر فَلَنْ أدَّخِرَهُ عَنْكُمْ، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ. وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأوْسَعَ مِنَ الصَّبْر (1)». مُتَّفَقٌ عليه. (2)
হাদীস নং: ২৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
২৭। মু'মিনের পক্ষে তার সর্বাবস্থাই কল্যাণকরঃ
হযরত সুহায়ব ইবনে সিনান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু'মিনের ব্যাপার বড় বিস্ময়কর। তার পক্ষে তার প্রতিটি বিষয় কল্যাণকর। মু'মিন ছাড়া এ বিশেষত্ব অন্য কারও নেই। তার যদি আনন্দদায়ক কিছু ঘটে, তখন সে শোকর আদায় করে । ফলে এটা তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার কোনও দুঃখ-কষ্ট দেখা দেয়, ধৈর্যধারণ করে। ফলে এটাও তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। (মুসলিম হাদীস নং ২৯৯৯)
হযরত সুহায়ব ইবনে সিনান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু'মিনের ব্যাপার বড় বিস্ময়কর। তার পক্ষে তার প্রতিটি বিষয় কল্যাণকর। মু'মিন ছাড়া এ বিশেষত্ব অন্য কারও নেই। তার যদি আনন্দদায়ক কিছু ঘটে, তখন সে শোকর আদায় করে । ফলে এটা তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার কোনও দুঃখ-কষ্ট দেখা দেয়, ধৈর্যধারণ করে। ফলে এটাও তার পক্ষে কল্যাণকর হয়। (মুসলিম হাদীস নং ২৯৯৯)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
27 - وعن أبي يحيى صهيب بن سنانٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «عَجَبًا لأمْرِ المُؤمنِ إنَّ أمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خيرٌ، ولَيسَ ذلِكَ لأَحَدٍ إلاَّ للمُؤْمِن: إنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكانَ خَيرًا لَهُ، وإنْ أصَابَتْهُ ضرَاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْرًا لَهُ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ২৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
২৮। মৃত্যুযন্ত্রণাকালে ধৈর্যধারণঃ
হযরত আনাস রাযি. বলেন, (ওফাতের আগে আগে) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন অসুস্থ হয়ে পড়লে মৃত্যুযন্ত্রণা তাঁকে আচ্ছাদিত করে ফেলছিল। (এ অবস্থা দেখে) হযরত ফাতিমা রাযি. বলে উঠলেন, আহা! আমার আব্বার কত কষ্ট! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তা শুনে) বললেন, আজকের পরে তোমার আব্বার আর কোনও কষ্ট নেই। যখন তাঁর ওফাত হয়ে গেল, হযরত ফাতিমা রাযি. (শোকার্ত হয়ে) বললেন, আহা! আমার আব্বা প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আহা! আমার আব্বা (চলে গেছেন), জান্নাতুল ফিরদাওস তাঁর ঠিকানা। আহা! আমার আব্বা (চলে গেছেন), আমরা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানাব। (তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর) হযরত ফাতিমা রাযি. বললেন, হে আনাস! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মাটি নিক্ষেপ করতে তোমাদের মন সায় দিল? - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৪৪৬২)
হযরত আনাস রাযি. বলেন, (ওফাতের আগে আগে) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন অসুস্থ হয়ে পড়লে মৃত্যুযন্ত্রণা তাঁকে আচ্ছাদিত করে ফেলছিল। (এ অবস্থা দেখে) হযরত ফাতিমা রাযি. বলে উঠলেন, আহা! আমার আব্বার কত কষ্ট! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তা শুনে) বললেন, আজকের পরে তোমার আব্বার আর কোনও কষ্ট নেই। যখন তাঁর ওফাত হয়ে গেল, হযরত ফাতিমা রাযি. (শোকার্ত হয়ে) বললেন, আহা! আমার আব্বা প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আহা! আমার আব্বা (চলে গেছেন), জান্নাতুল ফিরদাওস তাঁর ঠিকানা। আহা! আমার আব্বা (চলে গেছেন), আমরা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানাব। (তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর) হযরত ফাতিমা রাযি. বললেন, হে আনাস! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মাটি নিক্ষেপ করতে তোমাদের মন সায় দিল? - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৪৪৬২)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
28 - وعن أنَسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: لَمَّا ثَقُلَ (1) النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - جَعلَ يَتَغَشَّاهُ الكَرْبُ، فَقَالَتْ فَاطِمَةُ رضي الله عنها: وَاكَربَ أَبَتَاهُ. فقَالَ: «لَيْسَ عَلَى أَبيكِ كَرْبٌ بَعْدَ اليَوْمِ». فَلَمَّا مَاتَ، قَالَتْ: يَا أَبَتَاهُ، أَجَابَ رَبًّا دَعَاهُ! يَا أَبتَاهُ، جَنَّةُ الفِردَوسِ مَأْوَاهُ! يَا أَبَتَاهُ، إِلَى جبْريلَ نَنْعَاهُ! فَلَمَّا دُفِنَ قَالَتْ فَاطِمَةُ رَضي الله عنها: أَطَابَتْ أنْفُسُكُمْ أَنْ تَحْثُوا عَلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - التُّرَابَ؟! رواه البخاري. (2)
হাদীস নং: ২৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
২৯। সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণঃ
হযরত উসামা ইবনে যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাওলা ( আযাদকৃত গোলাম) যায়দ ইবনে হারিছা রাযি.-এর পুত্র এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়পাত্র ও প্রিয়পাত্রের পুত্র। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার পুত্র মৃত্যুমুখে উপনীত। আপনি আমাদের কাছে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম পাঠের সাথে বলে পাঠালেন যে, আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু গ্রহণ করেছেন তা তাঁরই এবং তিনি যা-কিছু দিয়েছেন তাও তাঁরই। তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা রাখে। কিন্তু তিনি (অর্থাৎ তাঁর কন্যা) তাঁকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলে পাঠালেন যে, অবশ্যই যেন তিনি তাঁর কাছে আসেন। সুতরাং তিনি উঠলেন এবং তাঁর সংগে ছিলেন সা'দ ইবনে ‘উবাদা রাযি., মু'আয ইবনে জাবাল রাযি., উবাঈ ইবনে কা'ব রাযি., যায়দ ইবনে ছাবিত রাযি. ও আরও কয়েক ব্যক্তি। (তিনি সেখানে পৌঁছলে) শিশুটিকে তাঁর কাছে তুলে দেওয়া হল। তিনি তাকে নিজের কোলে বসালেন। তখন তার প্রাণ ছটফট করছিল। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকল। হযরত সা'দ রাযি. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কী? তিনি বললেন, এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপিত করেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চেয়েছেন তার অন্তরে স্থাপিত করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা দয়াশীল, তাদের প্রতি দয়া করে থাকেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ১২৮৪,মুসলিম হাদীস নং ৯২৩)
হযরত উসামা ইবনে যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাওলা ( আযাদকৃত গোলাম) যায়দ ইবনে হারিছা রাযি.-এর পুত্র এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়পাত্র ও প্রিয়পাত্রের পুত্র। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার পুত্র মৃত্যুমুখে উপনীত। আপনি আমাদের কাছে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম পাঠের সাথে বলে পাঠালেন যে, আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু গ্রহণ করেছেন তা তাঁরই এবং তিনি যা-কিছু দিয়েছেন তাও তাঁরই। তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা রাখে। কিন্তু তিনি (অর্থাৎ তাঁর কন্যা) তাঁকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলে পাঠালেন যে, অবশ্যই যেন তিনি তাঁর কাছে আসেন। সুতরাং তিনি উঠলেন এবং তাঁর সংগে ছিলেন সা'দ ইবনে ‘উবাদা রাযি., মু'আয ইবনে জাবাল রাযি., উবাঈ ইবনে কা'ব রাযি., যায়দ ইবনে ছাবিত রাযি. ও আরও কয়েক ব্যক্তি। (তিনি সেখানে পৌঁছলে) শিশুটিকে তাঁর কাছে তুলে দেওয়া হল। তিনি তাকে নিজের কোলে বসালেন। তখন তার প্রাণ ছটফট করছিল। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকল। হযরত সা'দ রাযি. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কী? তিনি বললেন, এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে স্থাপিত করেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চেয়েছেন তার অন্তরে স্থাপিত করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা দয়াশীল, তাদের প্রতি দয়া করে থাকেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ১২৮৪,মুসলিম হাদীস নং ৯২৩)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
29 - وعن أبي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ زيدِ بنِ حارثةَ مَوْلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - وحِبِّه وابنِ حبِّه رضي اللهُ عنهما، قَالَ: أرْسَلَتْ بنْتُ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - إنَّ ابْني قَد احْتُضِرَ فَاشْهَدنَا، فَأَرْسَلَ يُقْرىءُ السَّلامَ، ويقُولُ: «إنَّ لله مَا أخَذَ وَلَهُ مَا أعطَى، وَكُلُّ شَيءٍ عِندَهُ بِأجَلٍ مُسَمًّى فَلتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ». فَأَرسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيهِ لَيَأتِينَّهَا. فقامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، وَمُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، وَأُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ، وَزَيْدُ بْنُ ثَابتٍ، وَرجَالٌ - رضي الله عنهم - فَرُفعَ إِلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - الصَّبيُّ، فَأقْعَدَهُ في حِجْرِهِ وَنَفْسُهُ تَقَعْقَعُ، فَفَاضَتْ عَينَاهُ فَقالَ سَعدٌ: يَا رسولَ الله، مَا هَذَا؟ فَقالَ: «هذِهِ [ص:26] رَحمَةٌ جَعَلَها اللهُ تَعَالَى في قُلُوبِ عِبَادِهِ» وفي رواية: «فِي قُلُوبِ مَنْ شَاءَ مِنْ عِبَادِهِ، وَإِنَّما يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبادِهِ الرُّحَماءَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
হাদীস নং: ৩০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩০। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকায় ধৈর্যধারণ ও তার অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত:
হযরত সুহায়ব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক বাদশা ছিল। তার ছিল এক জাদুকর। সে যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল তখন বাদশাকে বলল, আমি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি। কাজেই আমার কাছে একটি বালক পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে জাদু শিক্ষা দেব। বাদশা জাদুবিদ্যা শেখানোর জন্যে তার কাছে একটি বালক পাঠিয়ে দিল। তার (অর্থাৎ বালকটির) যাতায়াতপথে ছিলেন এক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী)। (একদিন) সে তার কাছে বসল এবং তার কথা শুনল। তাতে সে মুগ্ধ হয়ে গেল। অতঃপর যখনই সে জাদুকরের কাছে আসত, তখন পথে ওই রাহিবের কাছে (কিছুক্ষণ) বসত। (এতে জাদুকরের কাছে পৌঁছতে তার দেরি হয়ে যেত) ফলে যখন জাদুকরের কাছে আসত, সে তাকে মারপিট করত। সুতরাং (একদিন) সে রাহিবের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল। রাহিব বললেন, যখন তোমার জাদুকরকে ভয় হয় (যে, সে তোমাকে মারবে) তখন তাকে বলবে, আমার পরিবারবর্গ আমাকে আটকে রেখেছিল। আর যখন পরিবারবর্গকে ভয় করবে তাদেরকে বলবে, জাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিল। এভাবেই সে চলছিল। সহসা সে একদিন এক বিশাল প্রাণীর সম্মুখীন হল, যেটি লোকদের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। বালকটি তখন (মনে মনে) বলল, আজ আমি জেনে নেব জাদুকর শ্রেষ্ঠ, নাকি রাহিব শ্রেষ্ঠ? সুতরাং সে একটি পাথরখণ্ড হাতে নিয়ে বলল, হে আল্লাহ! যদি রাহিবের কাজকর্ম আপনার নিকট জাদুকরের কাজকর্ম অপেক্ষা বেশি পসন্দনীয় হয়, তবে এই প্রাণীটি মেরে ফেলুন, যাতে লোকজন পথ চলতে পারে। এই বলে সে পাথরখণ্ডটি নিক্ষেপ করল এবং প্রাণীটিকে মেরে ফেলল। আর মানুষজনও চলাচল করতে পারল।
তারপর বালকটি রাহিবের কাছে গিয়ে এ বৃত্তান্ত তাকে অবহিত করল। রাহিব তাকে বললেন, ওহে বাছা! আজ তুমি আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তোমার ব্যাপার কোন স্তরে পৌঁছেছে আমি তা দেখতে পাচ্ছি। অচিরেই তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হও, তবে আমার কথা কিন্তু বলে দিও না। বালকটি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিত এবং মানুষের সর্বপ্রকার রোগের চিকিৎসা করত। বাদশার এক পারিষদ এ কথা শুনতে পেল। সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সে বিপুল হাদিয়া নিয়ে তার কাছে আসল এবং বলল, তুমি যদি আমাকে নিরাময় করে দিতে পার, তবে এই সবকিছু তোমার। সে বলল, আমি কাউকে নিরাময় করতে পারি না। নিরাময় তো আল্লাহ তাআলাই করেন। তুমি যদি আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আন, আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দু'আ করব, তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। এ কথায় সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে বাদশার কাছে আসল এবং আগে যেমন বসত, তেমনি তার দরবারে বসল। বাদশা তাকে বললেন, কে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল? সে বলল, আমার রব (প্রতিপালক)। বাদশা বললেন, আমি ছাড়াও কি তোমার কোনও রব আছে? সে বলল, আমার ও আপনার রব্ব আল্লাহ। এতে বাদশা তাকে পাকড়াও করল এবং তাকে শাস্তি দিতে থাকল। অবশেষে সে বালকটির কথা বলে দিল। তখন বালকটিকে নিয়ে আসা হল। বাদশা তাকে বলল, ওহে বাছা! তোমার জাদু এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করে থাক। তাছাড়াও তুমি এই এই কর। সে বলল, আমি কাউকে আরোগ্য দান করতে পারি না। আল্লাহ তাআলাই আরোগ্য দান করেন। এ কথায় বাদশা তাকে পাকড়াও করল এবং তাকে শাস্তি দিতে থাকল। শেষে সে রাহিবের কথা বলে দিল। তখন রাহিবকে নিয়ে আসা হল। তাকে বলা হল, তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এস। তিনি অস্বীকার করলেন। তখন বাদশা করাত আনতে বলল। করাত তার মাথার মাঝখানে রাখা হল এবং তা দিয়ে তাকে চিরে ফেলা হল। এমনকি তার দুই ভাগ দু'পাশে পড়ে রইলো ।
তারপর বাদশার পারিষদকে নিয়ে আসা হল। তাকে বলা হল, তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এস। কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তারও মাথার মাঝখানে করাত রাখা হল এবং তাকে তা দ্বারা চিরে ফেলা হল। এমনকি তার দুই ভাগ দু'পাশে পড়ে রইলো।
তারপর বালককে নিয়ে আসা হল। তাকেও বলা হল, তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এস। সেও অস্বীকার করল। ফলে বাদশা তাঁকে তার একদল অনুচরের হাতে সমর্পণ করল এবং হুকুম দিল, তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে পাহাড়টির উপর ওঠাও। যখন তোমরা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছবে (তাকে আবার তার দীন পরিত্যাগের আহ্বান জানাবে), তখন যদি সে তার দীন থেকে ফিরে আসে তবে তো ভালো, অন্যথায় তাকে সেখান থেকে নিচে ফেলে দিও। সেমতে তারা তাকে নিয়ে গেল এবং পাহাড়ে চড়ল । তখন সে দুআ করল, হে আল্লাহ! তুমি যেভাবে ইচ্ছা কর, আমার পক্ষ থেকে তাদের বুঝে নাও। তখন পাহাড়টি তাদের নিয়ে প্রকম্পিত হল। ফলে তারা নিচে পড়ে গেল। তারপর সে হেঁটে হেঁটে বাদশার কাছে চলে আসল। বাদশা তাকে বলল, তোমার সঙ্গীদের খবর কী? সে বলল, আল্লাহ তাআলা আমার পক্ষ থেকে তাদের বুঝে নিয়েছেন। তারপর বাদশা তাকে তার আরেকদল অনুচরের হাতে সমর্পণ করল এবং বল্ল, তাকে নিয়ে যাও। তারপর তাকে একটা বড় নৌকায় তুলে সাগরের মাঝখানে নিয়ে যাও। তখন যদি সে তার দীন থেকে ফিরে আসে তো ভালো, অন্যথায় তাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। সেমতে তারা তাকে নিয়ে গেল (এবং সাগরের মাঝখানে পৌঁছে গেল)। তখন বালকটি দুআ করল, হে আল্লাহ! তুমি আমার হয়ে যেভাবে চাও তাদের বুঝে নাও। ফলে নৌকাটি তাদের নিয়ে উল্টে গেল এবং তারা সকলে পানিতে ডুবে (মারা) গেল আর বালকটি হেঁটে হেঁটে বাদশার কাছে চলে আসল। বাদশা তাকে বলল, তোমার সঙ্গীদের খবর কী? সে বলল, আল্লাহ তাআলা আমার হয়ে তাদের বুঝে নিয়েছেন। তারপর বাদশাকে লক্ষ্য করে বলল, আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হুকুম মত কাজ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে হত্যা করতে পারবেন না। বাদশা বলল, তা কী? সে বলল, আপনি একটি মাঠে লোকজনকে সমবেত করবেন এবং আমাকে একটি খেজুর গাছে লটকাবেন (অর্থাৎ আমাকে শূলে চড়াবেন)। তারপর আমার তূনীর (তীর রাখার থলি) থেকে একটি তীর নিয়ে ধনুকের মাঝখানে রাখবেন। তারপর "বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম" (এই বালকের প্রতিপালকের নামে) বলে আমার প্রতি নিক্ষেপ করবেন। এরূপ করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন। সেমতে বাদশা এক মাঠে লোকজনকে জমা করল এবং তাকে শূলে চড়াল। তারপর তার তূনীর থেকে একটি তীর নিয়ে ধনুকে স্থাপন করল। তারপর 'বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম' বলে তার প্রতি নিক্ষেপ করল। অমনি সেটা তাঁর কানের গোড়ায় গিয়ে বিদ্ধ হল। তখন বালকটি তার কানের গোড়ায় হাত রাখল এবং মারা গেল।
এ অবস্থা দেখে উপস্থিত লোকজন (সমঃস্বরে) বলে উঠল, আমরা বালকটির রব্বের প্রতি ঈমান আনলাম। তখনই এ খবর বাদশার কাছে পৌঁছে দেওয়া হল। তাকে বলা হল, দেখলেন তো, আপনি যা আশংকা করছিলেন তাই ঘটে গেল। আল্লাহর কসম! সমস্ত মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে ফেলেছে। আপনার আশংকা ফলে গেছে। তখন বাদশা রাস্তার মুখে মুখে গর্ত খননের হুকুম দিল। গর্ত খনন করা হল এবং তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশা বলল, যে কেউ তার দীন থেকে না ফিরবে, তাকেই এতে নিক্ষেপ করবে। তারা তাই করল। পরিশেষে এক মহিলার পালা আসল। তার সংগে তার একটি শিশু ছিল। সে আগুনে পড়তে ইতস্তত করছিল। তখন তার শিশুটি বলে উঠল, মা! ধৈর্যধারণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি সত্যের উপর আছেন - মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ৩০০৫)
হযরত সুহায়ব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক বাদশা ছিল। তার ছিল এক জাদুকর। সে যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল তখন বাদশাকে বলল, আমি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি। কাজেই আমার কাছে একটি বালক পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে জাদু শিক্ষা দেব। বাদশা জাদুবিদ্যা শেখানোর জন্যে তার কাছে একটি বালক পাঠিয়ে দিল। তার (অর্থাৎ বালকটির) যাতায়াতপথে ছিলেন এক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী)। (একদিন) সে তার কাছে বসল এবং তার কথা শুনল। তাতে সে মুগ্ধ হয়ে গেল। অতঃপর যখনই সে জাদুকরের কাছে আসত, তখন পথে ওই রাহিবের কাছে (কিছুক্ষণ) বসত। (এতে জাদুকরের কাছে পৌঁছতে তার দেরি হয়ে যেত) ফলে যখন জাদুকরের কাছে আসত, সে তাকে মারপিট করত। সুতরাং (একদিন) সে রাহিবের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল। রাহিব বললেন, যখন তোমার জাদুকরকে ভয় হয় (যে, সে তোমাকে মারবে) তখন তাকে বলবে, আমার পরিবারবর্গ আমাকে আটকে রেখেছিল। আর যখন পরিবারবর্গকে ভয় করবে তাদেরকে বলবে, জাদুকর আমাকে আটকে রেখেছিল। এভাবেই সে চলছিল। সহসা সে একদিন এক বিশাল প্রাণীর সম্মুখীন হল, যেটি লোকদের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। বালকটি তখন (মনে মনে) বলল, আজ আমি জেনে নেব জাদুকর শ্রেষ্ঠ, নাকি রাহিব শ্রেষ্ঠ? সুতরাং সে একটি পাথরখণ্ড হাতে নিয়ে বলল, হে আল্লাহ! যদি রাহিবের কাজকর্ম আপনার নিকট জাদুকরের কাজকর্ম অপেক্ষা বেশি পসন্দনীয় হয়, তবে এই প্রাণীটি মেরে ফেলুন, যাতে লোকজন পথ চলতে পারে। এই বলে সে পাথরখণ্ডটি নিক্ষেপ করল এবং প্রাণীটিকে মেরে ফেলল। আর মানুষজনও চলাচল করতে পারল।
তারপর বালকটি রাহিবের কাছে গিয়ে এ বৃত্তান্ত তাকে অবহিত করল। রাহিব তাকে বললেন, ওহে বাছা! আজ তুমি আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তোমার ব্যাপার কোন স্তরে পৌঁছেছে আমি তা দেখতে পাচ্ছি। অচিরেই তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যদি তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হও, তবে আমার কথা কিন্তু বলে দিও না। বালকটি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিত এবং মানুষের সর্বপ্রকার রোগের চিকিৎসা করত। বাদশার এক পারিষদ এ কথা শুনতে পেল। সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সে বিপুল হাদিয়া নিয়ে তার কাছে আসল এবং বলল, তুমি যদি আমাকে নিরাময় করে দিতে পার, তবে এই সবকিছু তোমার। সে বলল, আমি কাউকে নিরাময় করতে পারি না। নিরাময় তো আল্লাহ তাআলাই করেন। তুমি যদি আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আন, আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দু'আ করব, তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। এ কথায় সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে বাদশার কাছে আসল এবং আগে যেমন বসত, তেমনি তার দরবারে বসল। বাদশা তাকে বললেন, কে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিল? সে বলল, আমার রব (প্রতিপালক)। বাদশা বললেন, আমি ছাড়াও কি তোমার কোনও রব আছে? সে বলল, আমার ও আপনার রব্ব আল্লাহ। এতে বাদশা তাকে পাকড়াও করল এবং তাকে শাস্তি দিতে থাকল। অবশেষে সে বালকটির কথা বলে দিল। তখন বালকটিকে নিয়ে আসা হল। বাদশা তাকে বলল, ওহে বাছা! তোমার জাদু এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করে থাক। তাছাড়াও তুমি এই এই কর। সে বলল, আমি কাউকে আরোগ্য দান করতে পারি না। আল্লাহ তাআলাই আরোগ্য দান করেন। এ কথায় বাদশা তাকে পাকড়াও করল এবং তাকে শাস্তি দিতে থাকল। শেষে সে রাহিবের কথা বলে দিল। তখন রাহিবকে নিয়ে আসা হল। তাকে বলা হল, তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এস। তিনি অস্বীকার করলেন। তখন বাদশা করাত আনতে বলল। করাত তার মাথার মাঝখানে রাখা হল এবং তা দিয়ে তাকে চিরে ফেলা হল। এমনকি তার দুই ভাগ দু'পাশে পড়ে রইলো ।
তারপর বাদশার পারিষদকে নিয়ে আসা হল। তাকে বলা হল, তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এস। কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তারও মাথার মাঝখানে করাত রাখা হল এবং তাকে তা দ্বারা চিরে ফেলা হল। এমনকি তার দুই ভাগ দু'পাশে পড়ে রইলো।
তারপর বালককে নিয়ে আসা হল। তাকেও বলা হল, তুমি তোমার দীন থেকে ফিরে এস। সেও অস্বীকার করল। ফলে বাদশা তাঁকে তার একদল অনুচরের হাতে সমর্পণ করল এবং হুকুম দিল, তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে পাহাড়টির উপর ওঠাও। যখন তোমরা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছবে (তাকে আবার তার দীন পরিত্যাগের আহ্বান জানাবে), তখন যদি সে তার দীন থেকে ফিরে আসে তবে তো ভালো, অন্যথায় তাকে সেখান থেকে নিচে ফেলে দিও। সেমতে তারা তাকে নিয়ে গেল এবং পাহাড়ে চড়ল । তখন সে দুআ করল, হে আল্লাহ! তুমি যেভাবে ইচ্ছা কর, আমার পক্ষ থেকে তাদের বুঝে নাও। তখন পাহাড়টি তাদের নিয়ে প্রকম্পিত হল। ফলে তারা নিচে পড়ে গেল। তারপর সে হেঁটে হেঁটে বাদশার কাছে চলে আসল। বাদশা তাকে বলল, তোমার সঙ্গীদের খবর কী? সে বলল, আল্লাহ তাআলা আমার পক্ষ থেকে তাদের বুঝে নিয়েছেন। তারপর বাদশা তাকে তার আরেকদল অনুচরের হাতে সমর্পণ করল এবং বল্ল, তাকে নিয়ে যাও। তারপর তাকে একটা বড় নৌকায় তুলে সাগরের মাঝখানে নিয়ে যাও। তখন যদি সে তার দীন থেকে ফিরে আসে তো ভালো, অন্যথায় তাকে সাগরে নিক্ষেপ কর। সেমতে তারা তাকে নিয়ে গেল (এবং সাগরের মাঝখানে পৌঁছে গেল)। তখন বালকটি দুআ করল, হে আল্লাহ! তুমি আমার হয়ে যেভাবে চাও তাদের বুঝে নাও। ফলে নৌকাটি তাদের নিয়ে উল্টে গেল এবং তারা সকলে পানিতে ডুবে (মারা) গেল আর বালকটি হেঁটে হেঁটে বাদশার কাছে চলে আসল। বাদশা তাকে বলল, তোমার সঙ্গীদের খবর কী? সে বলল, আল্লাহ তাআলা আমার হয়ে তাদের বুঝে নিয়েছেন। তারপর বাদশাকে লক্ষ্য করে বলল, আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হুকুম মত কাজ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে হত্যা করতে পারবেন না। বাদশা বলল, তা কী? সে বলল, আপনি একটি মাঠে লোকজনকে সমবেত করবেন এবং আমাকে একটি খেজুর গাছে লটকাবেন (অর্থাৎ আমাকে শূলে চড়াবেন)। তারপর আমার তূনীর (তীর রাখার থলি) থেকে একটি তীর নিয়ে ধনুকের মাঝখানে রাখবেন। তারপর "বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম" (এই বালকের প্রতিপালকের নামে) বলে আমার প্রতি নিক্ষেপ করবেন। এরূপ করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন। সেমতে বাদশা এক মাঠে লোকজনকে জমা করল এবং তাকে শূলে চড়াল। তারপর তার তূনীর থেকে একটি তীর নিয়ে ধনুকে স্থাপন করল। তারপর 'বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম' বলে তার প্রতি নিক্ষেপ করল। অমনি সেটা তাঁর কানের গোড়ায় গিয়ে বিদ্ধ হল। তখন বালকটি তার কানের গোড়ায় হাত রাখল এবং মারা গেল।
এ অবস্থা দেখে উপস্থিত লোকজন (সমঃস্বরে) বলে উঠল, আমরা বালকটির রব্বের প্রতি ঈমান আনলাম। তখনই এ খবর বাদশার কাছে পৌঁছে দেওয়া হল। তাকে বলা হল, দেখলেন তো, আপনি যা আশংকা করছিলেন তাই ঘটে গেল। আল্লাহর কসম! সমস্ত মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে ফেলেছে। আপনার আশংকা ফলে গেছে। তখন বাদশা রাস্তার মুখে মুখে গর্ত খননের হুকুম দিল। গর্ত খনন করা হল এবং তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশা বলল, যে কেউ তার দীন থেকে না ফিরবে, তাকেই এতে নিক্ষেপ করবে। তারা তাই করল। পরিশেষে এক মহিলার পালা আসল। তার সংগে তার একটি শিশু ছিল। সে আগুনে পড়তে ইতস্তত করছিল। তখন তার শিশুটি বলে উঠল, মা! ধৈর্যধারণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি সত্যের উপর আছেন - মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ৩০০৫)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
30 - وعن صهيب - رضي الله عنه: أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كَانَ مَلِكٌ فيمَنْ كَانَ قَبلَكمْ وَكَانَ لَهُ سَاحِرٌ فَلَمَّا كَبِرَ قَالَ للمَلِكِ: إنِّي قَدْ كَبِرْتُ فَابْعَثْ إلَيَّ غُلامًا أُعَلِّمْهُ السِّحْرَ؛ فَبَعثَ إِلَيْهِ غُلامًا يُعَلِّمُهُ، وَكانَ في طرِيقِهِ إِذَا سَلَكَ رَاهِبٌ، فَقَعدَ إِلَيْه وسَمِعَ كَلامَهُ فَأعْجَبَهُ، وَكانَ إِذَا أتَى السَّاحِرَ، مَرَّ بالرَّاهبِ وَقَعَدَ إِلَيْه، فَإذَا أَتَى السَّاحِرَ ضَرَبَهُ، فَشَكَا ذلِكَ إِلَى الرَّاهِب، فَقَالَ: إِذَا خَشيتَ السَّاحِرَ، فَقُلْ: حَبَسَنِي أَهْلِي، وَإذَا خَشِيتَ أهلَكَ، فَقُلْ: حَبَسَنِي السَّاحِرُ (1).
فَبَيْنَما هُوَ عَلَى ذلِكَ إِذْ أَتَى عَلَى دَابَّةٍ عَظِيمَةٍ قَدْ حَبَسَتِ النَّاسَ، فَقَالَ: اليَوْمَ أعْلَمُ السَّاحرُ أفْضَلُ أم الرَّاهبُ أفْضَلُ؟ فَأخَذَ حَجَرًا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إنْ كَانَ أمْرُ الرَّاهِبِ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ أمْرِ السَّاحِرِ فَاقْتُلْ هذِهِ الدّابَّةَ حَتَّى يَمضِي النَّاسُ، فَرَمَاهَا فَقَتَلَها ومَضَى النَّاسُ، فَأتَى الرَّاهبَ فَأَخبَرَهُ. فَقَالَ لَهُ الرَّاهبُ: أَيْ بُنَيَّ أَنْتَ اليَومَ أفْضَل منِّي قَدْ بَلَغَ مِنْ أَمْرِكَ مَا أَرَى، وَإنَّكَ سَتُبْتَلَى، فَإن ابْتُلِيتَ فَلاَ تَدُلَّ عَلَيَّ؛ وَكانَ الغُلامُ يُبْرىءُ الأكْمَهَ وَالأَبْرصَ، ويداوي النَّاسَ مِنْ سَائِرِ الأَدْوَاء. فَسَمِعَ جَليسٌ لِلملِكِ كَانَ قَدْ عَمِيَ، فأتاه بَهَدَايا كَثيرَةٍ، فَقَالَ: مَا ها هُنَا لَكَ أَجْمعُ إنْ أنتَ شَفَيتَنِي، فَقَالَ: إنّي لا أشْفِي أحَدًا إِنَّمَا يَشفِي اللهُ تَعَالَى، فَإنْ آمَنْتَ بالله تَعَالَى دَعَوتُ اللهَ فَشفَاكَ، فَآمَنَ بالله تَعَالَى فَشفَاهُ اللهُ تَعَالَى، فَأَتَى المَلِكَ فَجَلسَ إِلَيْهِ كَما كَانَ يَجلِسُ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: مَنْ رَدّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ؟ قَالَ: رَبِّي، قَالَ: وَلَكَ رَبٌّ غَيري؟ قَالَ: رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ، فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلَّ عَلَى الغُلامِ، فَجيء بالغُلاَمِ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: أيْ بُنَيَّ، قَدْ بَلَغَ مِنْ سِحْرِكَ مَا تُبْرىء الأَكْمَهَ وَالأَبْرَصَ (2)
وتَفْعَلُ وتَفْعَلُ! فَقَالَ: إنِّي لا أَشْفي أحَدًا، إِنَّمَا يَشفِي الله تَعَالَى. فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلَّ عَلَى الرَّاهبِ؛ فَجِيء بالرَّاهبِ فَقيلَ لَهُ: ارجِعْ عَنْ دِينكَ، فَأَبَى، فَدَعَا بِالمِنْشَارِ (1) فَوُضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرق رَأسِهِ، فَشَقَّهُ حَتَّى وَقَعَ شِقَّاهُ، ثُمَّ جِيءَ بِجَليسِ المَلِكِ فقيل لَهُ: ارْجِعْ عَنْ دِينِكَ، فَأَبَى، فَوضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرِق رَأسِهِ، فَشَقَّهُ بِهِ حَتَّى وَقَعَ شِقَّاهُ، ثُمَّ جِيءَ بالغُلاَمِ فقيلَ لَهُ: ارْجِعْ عَنْ دِينكَ، فَأَبَى، فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أصْحَابهِ، فَقَالَ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَاصْعَدُوا بِهِ الجَبَل، فَإِذَا بَلَغْتُمْ ذِرْوَتَهُ فَإِنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ وَإلاَّ فَاطْرَحُوهُ. فَذَهَبُوا بِهِ فَصَعِدُوا بِهِ الجَبَلَ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ أكْفنيهمْ بِمَا شِئْتَ، فَرَجَفَ بهِمُ الجَبلُ فَسَقَطُوا (2)، وَجاءَ يَمشي إِلَى المَلِكِ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: مَا فَعَلَ أصْحَابُكَ؟ فَقَالَ: كَفَانِيهمُ الله تَعَالَى، فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: اذْهَبُوا بِهِ فاحْمِلُوهُ في قُرْقُورٍ وتَوَسَّطُوا بِهِ البَحْرَ، فَإنْ رَجعَ عَنْ دِينِهِ وإِلاَّ فَاقْذِفُوهُ. فَذَهَبُوا بِهِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ أكْفِنيهمْ بمَا شِئْتَ، فانْكَفَأَتْ بِهمُ السَّفينةُ فَغَرِقُوا، وَجَاء يَمْشي إِلَى المَلِكِ. فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: مَا فعلَ أصْحَابُكَ؟ فَقَالَ: كَفَانيهمُ الله تَعَالَى. فَقَالَ لِلمَلِكِ: إنَّكَ لَسْتَ بقَاتلي حَتَّى تَفْعَلَ مَا آمُرُكَ بِهِ. قَالَ: مَا هُوَ؟ قَالَ: تَجْمَعُ النَّاسَ في صَعيدٍ وَاحدٍ وتَصْلُبُني عَلَى جِذْعٍ، ثُمَّ خُذْ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتي، ثُمَّ ضَعِ السَّهْمَ في كَبدِ القَوْسِ ثُمَّ قُلْ: بسْم الله ربِّ الغُلاَمِ (3)، ثُمَّ ارْمِني، فَإنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذلِكَ قَتَلتَني، فَجَمَعَ النَّاسَ في صَعيد واحدٍ، وَصَلَبَهُ عَلَى جِذْعٍ، ثُمَّ أَخَذَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ، ثُمَّ وَضَعَ السَّهْمَ في كَبِدِ القَوْسِ، ثُمَّ قَالَ: بِسمِ اللهِ ربِّ الغُلامِ، ثُمَّ رَمَاهُ فَوقَعَ في صُدْغِهِ (4)، فَوَضَعَ يَدَهُ في صُدْغِهِ فَمَاتَ، فَقَالَ النَّاسُ: آمَنَّا بِرَبِّ الغُلامِ، فَأُتِيَ المَلِكُ فقيلَ لَهُ: أَرَأَيْتَ مَا كُنْتَ تَحْذَرُ قَدْ والله نَزَلَ بكَ حَذَرُكَ. قَدْ آمَنَ النَّاسُ. فَأَمَرَ بِالأُخْدُودِ بأفْواهِ السِّكَكِ فَخُدَّتْ (5) [ص:28] وأُضْرِمَ فيهَا النِّيرانُ وَقَالَ: مَنْ لَمْ يَرْجعْ عَنْ دِينهِ فَأقْحموهُ فيهَا، أَوْ قيلَ لَهُ: اقتَحِمْ فَفَعَلُوا حَتَّى جَاءت امْرَأةٌ وَمَعَهَا صَبيٌّ لَهَا، فَتَقَاعَسَتْ أَنْ تَقَعَ فيهَا، فَقَالَ لَهَا الغُلامُ: يَا أُمهْ اصْبِري فَإِنَّكِ عَلَى الحَقِّ!». رواه مسلم.
فَبَيْنَما هُوَ عَلَى ذلِكَ إِذْ أَتَى عَلَى دَابَّةٍ عَظِيمَةٍ قَدْ حَبَسَتِ النَّاسَ، فَقَالَ: اليَوْمَ أعْلَمُ السَّاحرُ أفْضَلُ أم الرَّاهبُ أفْضَلُ؟ فَأخَذَ حَجَرًا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إنْ كَانَ أمْرُ الرَّاهِبِ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ أمْرِ السَّاحِرِ فَاقْتُلْ هذِهِ الدّابَّةَ حَتَّى يَمضِي النَّاسُ، فَرَمَاهَا فَقَتَلَها ومَضَى النَّاسُ، فَأتَى الرَّاهبَ فَأَخبَرَهُ. فَقَالَ لَهُ الرَّاهبُ: أَيْ بُنَيَّ أَنْتَ اليَومَ أفْضَل منِّي قَدْ بَلَغَ مِنْ أَمْرِكَ مَا أَرَى، وَإنَّكَ سَتُبْتَلَى، فَإن ابْتُلِيتَ فَلاَ تَدُلَّ عَلَيَّ؛ وَكانَ الغُلامُ يُبْرىءُ الأكْمَهَ وَالأَبْرصَ، ويداوي النَّاسَ مِنْ سَائِرِ الأَدْوَاء. فَسَمِعَ جَليسٌ لِلملِكِ كَانَ قَدْ عَمِيَ، فأتاه بَهَدَايا كَثيرَةٍ، فَقَالَ: مَا ها هُنَا لَكَ أَجْمعُ إنْ أنتَ شَفَيتَنِي، فَقَالَ: إنّي لا أشْفِي أحَدًا إِنَّمَا يَشفِي اللهُ تَعَالَى، فَإنْ آمَنْتَ بالله تَعَالَى دَعَوتُ اللهَ فَشفَاكَ، فَآمَنَ بالله تَعَالَى فَشفَاهُ اللهُ تَعَالَى، فَأَتَى المَلِكَ فَجَلسَ إِلَيْهِ كَما كَانَ يَجلِسُ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: مَنْ رَدّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ؟ قَالَ: رَبِّي، قَالَ: وَلَكَ رَبٌّ غَيري؟ قَالَ: رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ، فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلَّ عَلَى الغُلامِ، فَجيء بالغُلاَمِ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: أيْ بُنَيَّ، قَدْ بَلَغَ مِنْ سِحْرِكَ مَا تُبْرىء الأَكْمَهَ وَالأَبْرَصَ (2)
وتَفْعَلُ وتَفْعَلُ! فَقَالَ: إنِّي لا أَشْفي أحَدًا، إِنَّمَا يَشفِي الله تَعَالَى. فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلَّ عَلَى الرَّاهبِ؛ فَجِيء بالرَّاهبِ فَقيلَ لَهُ: ارجِعْ عَنْ دِينكَ، فَأَبَى، فَدَعَا بِالمِنْشَارِ (1) فَوُضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرق رَأسِهِ، فَشَقَّهُ حَتَّى وَقَعَ شِقَّاهُ، ثُمَّ جِيءَ بِجَليسِ المَلِكِ فقيل لَهُ: ارْجِعْ عَنْ دِينِكَ، فَأَبَى، فَوضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرِق رَأسِهِ، فَشَقَّهُ بِهِ حَتَّى وَقَعَ شِقَّاهُ، ثُمَّ جِيءَ بالغُلاَمِ فقيلَ لَهُ: ارْجِعْ عَنْ دِينكَ، فَأَبَى، فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أصْحَابهِ، فَقَالَ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَاصْعَدُوا بِهِ الجَبَل، فَإِذَا بَلَغْتُمْ ذِرْوَتَهُ فَإِنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ وَإلاَّ فَاطْرَحُوهُ. فَذَهَبُوا بِهِ فَصَعِدُوا بِهِ الجَبَلَ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ أكْفنيهمْ بِمَا شِئْتَ، فَرَجَفَ بهِمُ الجَبلُ فَسَقَطُوا (2)، وَجاءَ يَمشي إِلَى المَلِكِ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: مَا فَعَلَ أصْحَابُكَ؟ فَقَالَ: كَفَانِيهمُ الله تَعَالَى، فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: اذْهَبُوا بِهِ فاحْمِلُوهُ في قُرْقُورٍ وتَوَسَّطُوا بِهِ البَحْرَ، فَإنْ رَجعَ عَنْ دِينِهِ وإِلاَّ فَاقْذِفُوهُ. فَذَهَبُوا بِهِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ أكْفِنيهمْ بمَا شِئْتَ، فانْكَفَأَتْ بِهمُ السَّفينةُ فَغَرِقُوا، وَجَاء يَمْشي إِلَى المَلِكِ. فَقَالَ لَهُ المَلِكُ: مَا فعلَ أصْحَابُكَ؟ فَقَالَ: كَفَانيهمُ الله تَعَالَى. فَقَالَ لِلمَلِكِ: إنَّكَ لَسْتَ بقَاتلي حَتَّى تَفْعَلَ مَا آمُرُكَ بِهِ. قَالَ: مَا هُوَ؟ قَالَ: تَجْمَعُ النَّاسَ في صَعيدٍ وَاحدٍ وتَصْلُبُني عَلَى جِذْعٍ، ثُمَّ خُذْ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتي، ثُمَّ ضَعِ السَّهْمَ في كَبدِ القَوْسِ ثُمَّ قُلْ: بسْم الله ربِّ الغُلاَمِ (3)، ثُمَّ ارْمِني، فَإنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذلِكَ قَتَلتَني، فَجَمَعَ النَّاسَ في صَعيد واحدٍ، وَصَلَبَهُ عَلَى جِذْعٍ، ثُمَّ أَخَذَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ، ثُمَّ وَضَعَ السَّهْمَ في كَبِدِ القَوْسِ، ثُمَّ قَالَ: بِسمِ اللهِ ربِّ الغُلامِ، ثُمَّ رَمَاهُ فَوقَعَ في صُدْغِهِ (4)، فَوَضَعَ يَدَهُ في صُدْغِهِ فَمَاتَ، فَقَالَ النَّاسُ: آمَنَّا بِرَبِّ الغُلامِ، فَأُتِيَ المَلِكُ فقيلَ لَهُ: أَرَأَيْتَ مَا كُنْتَ تَحْذَرُ قَدْ والله نَزَلَ بكَ حَذَرُكَ. قَدْ آمَنَ النَّاسُ. فَأَمَرَ بِالأُخْدُودِ بأفْواهِ السِّكَكِ فَخُدَّتْ (5) [ص:28] وأُضْرِمَ فيهَا النِّيرانُ وَقَالَ: مَنْ لَمْ يَرْجعْ عَنْ دِينهِ فَأقْحموهُ فيهَا، أَوْ قيلَ لَهُ: اقتَحِمْ فَفَعَلُوا حَتَّى جَاءت امْرَأةٌ وَمَعَهَا صَبيٌّ لَهَا، فَتَقَاعَسَتْ أَنْ تَقَعَ فيهَا، فَقَالَ لَهَا الغُلامُ: يَا أُمهْ اصْبِري فَإِنَّكِ عَلَى الحَقِّ!». رواه مسلم.
হাদীস নং: ৩১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩১। শোক-দুঃখ দেখা দেওয়া মাত্র ধৈর্যধারণই প্রকৃত সবরঃ
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে একটি কবরের পাশে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় কর ও ধৈর্যধারণ কর। সে বলল, তুমি আমার কাছ থেকে দূর হও। আমার মত মুসিবতে তো তুমি পড়নি। বস্তুত সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারেনি। তাকে বলা হল, তিনি তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন সে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরজায় এসে হাজির হল। সেখানে সে কোনও দারোয়ান দেখতে পেল না। সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তখন তিনি বললেন, প্রকৃত সবর তো সেটাই, যা শোকাঘাতের শুরুতে অবলম্বন করা হয়- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ১২৮৩, মুসলিম হাদীস নং ৯২৬)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, সে তার একটি শিশুর প্রতি (শোকে) কাঁদছিল।
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে একটি কবরের পাশে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় কর ও ধৈর্যধারণ কর। সে বলল, তুমি আমার কাছ থেকে দূর হও। আমার মত মুসিবতে তো তুমি পড়নি। বস্তুত সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারেনি। তাকে বলা হল, তিনি তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন সে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরজায় এসে হাজির হল। সেখানে সে কোনও দারোয়ান দেখতে পেল না। সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তখন তিনি বললেন, প্রকৃত সবর তো সেটাই, যা শোকাঘাতের শুরুতে অবলম্বন করা হয়- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ১২৮৩, মুসলিম হাদীস নং ৯২৬)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, সে তার একটি শিশুর প্রতি (শোকে) কাঁদছিল।
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
31 - وعن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: مَرَّ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - بامرأةٍ تَبكي عِنْدَ قَبْرٍ، فَقَالَ: «اتّقِي اللهَ وَاصْبِري» فَقَالَتْ: إِليْكَ عَنِّي؛ فإِنَّكَ لم تُصَبْ بمُصِيبَتي وَلَمْ تَعرِفْهُ، فَقيلَ لَهَا: إنَّه النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - فَأَتَتْ بَابَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابينَ، فقالتْ: لَمْ أعْرِفكَ، فَقَالَ: «إنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُولى (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
وفي رواية لمسلم: «تبكي عَلَى صَبيٍّ لَهَا».
وفي رواية لمسلم: «تبكي عَلَى صَبيٍّ لَهَا».
হাদীস নং: ৩২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩২। প্রিয়জনের বিয়োগ-বেদনায় সবরের প্রতিদানঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার মু'মিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ছাড়া আর কোনও প্রতিদান নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয়জনকে তুলে নেই আর সে তাতে ছওয়াবের আশা করে - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৬৪২৪)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার মু'মিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ছাড়া আর কোনও প্রতিদান নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয়জনকে তুলে নেই আর সে তাতে ছওয়াবের আশা করে - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৬৪২৪)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
32 - وعن أبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: مَا لعَبدِي المُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ (1) مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إلاَّ الجَنَّةَ». رواه البخاري (2).
হাদীস নং: ৩৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৩। প্লেগরোগে সবরের ফযীলত:
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্লেগরোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটা ছিল এক প্রকার আযাব, যা আল্লাহ তাআলা যাদের প্রতি ইচ্ছা পাঠাতেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা মু'মিনদের জন্য একে রহমতে পরিণত করেছেন। সুতরাং যদি কোনও বান্দা প্লেগে আক্রান্ত হয় আর সে ছওয়াব লাভের আশায় ধৈর্যের সাথে নিজ শহরে অবস্থান করে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য যা লিখে রেখেছেন, কেবল সেই মুসিবতই তাকে আক্রান্ত করতে পারে (অন্য কিছু নয়), তবে সে অবশ্যই শহীদের অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে- বুখারী। (হাদীসঃ ৫৭৩৪)
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্লেগরোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটা ছিল এক প্রকার আযাব, যা আল্লাহ তাআলা যাদের প্রতি ইচ্ছা পাঠাতেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা মু'মিনদের জন্য একে রহমতে পরিণত করেছেন। সুতরাং যদি কোনও বান্দা প্লেগে আক্রান্ত হয় আর সে ছওয়াব লাভের আশায় ধৈর্যের সাথে নিজ শহরে অবস্থান করে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য যা লিখে রেখেছেন, কেবল সেই মুসিবতই তাকে আক্রান্ত করতে পারে (অন্য কিছু নয়), তবে সে অবশ্যই শহীদের অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে- বুখারী। (হাদীসঃ ৫৭৩৪)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
33 - وعن عائشةَ - رضيَ الله عنها: أَنَّهَا سَألَتْ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - عَنِ الطّاعُونِ (1)، فَأَخْبَرَهَا أنَّهُ كَانَ عَذَابًا يَبْعَثُهُ اللهُ تَعَالَى عَلَى مَنْ يشَاءُ، فَجَعَلَهُ اللهُ تعالى رَحْمَةً للْمُؤْمِنينَ، فَلَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَقَعُ في الطَّاعُونِ فيمكثُ في بلدِهِ صَابرًا مُحْتَسِبًا يَعْلَمُ أنَّهُ لا يصيبُهُ إلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ إلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أجْرِ الشّهيدِ. رواه البخاري. (2)
হাদীস নং: ৩৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৪। দৃষ্টিশক্তি লোপের প্রতিদান
হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার বান্দাকে তার দুই প্রিয়বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করি আর সে তাতে সবর অবলম্বন করে, তখন তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি। দুই প্রিয়বস্তু দ্বারা তিনি দুই চোখ বোঝাচ্ছেন – বুখারী, ৫৬৫৩।
হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমি যখন আমার বান্দাকে তার দুই প্রিয়বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করি আর সে তাতে সবর অবলম্বন করে, তখন তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি। দুই প্রিয়বস্তু দ্বারা তিনি দুই চোখ বোঝাচ্ছেন – বুখারী, ৫৬৫৩।
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
34 - وعن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: سمعتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إنَّ الله - عز وجل - قَالَ: إِذَا ابْتَلَيْتُ عبدي بحَبيبتَيه فَصَبرَ عَوَّضتُهُ مِنْهُمَا الجَنَّةَ» يريد عينيه، رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৩৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৫। মৃগীরোগে সবরের ফযীলত
হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রহ. বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. আমাকে বললেন, তোমাকে কি একজন জান্নাতবাসী নারী দেখাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, ওই কালো মহিলা। তিনি একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমি মৃগীরোগে ভুগছি এবং তাতে আমার কাপড়-চোপড় খুলে যায়। আপনি আল্লাহ তাআলার কাছে আমার জন্য দু'আ করুন। তিনি বললেন, চাইলে তুমি সবর কর। তাতে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর যদি চাও, তো আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করব, যেন তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেন, আমি সবরই করব। তারপর বললেন, আমার যে কাপড়-চোপড় খুলে যায়, আল্লাহ তাআলার কাছে আমার জন্য দুআ করুন, যেন তা খুলে না যায়। তিনি তার জন্য দুআ করলেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭৭,মুসলিম হাদীস নং ১৭৯২)
হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রহ. বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. আমাকে বললেন, তোমাকে কি একজন জান্নাতবাসী নারী দেখাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, ওই কালো মহিলা। তিনি একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমি মৃগীরোগে ভুগছি এবং তাতে আমার কাপড়-চোপড় খুলে যায়। আপনি আল্লাহ তাআলার কাছে আমার জন্য দু'আ করুন। তিনি বললেন, চাইলে তুমি সবর কর। তাতে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর যদি চাও, তো আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করব, যেন তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেন, আমি সবরই করব। তারপর বললেন, আমার যে কাপড়-চোপড় খুলে যায়, আল্লাহ তাআলার কাছে আমার জন্য দুআ করুন, যেন তা খুলে না যায়। তিনি তার জন্য দুআ করলেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭৭,মুসলিম হাদীস নং ১৭৯২)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
35 - وعن عطَاء بن أبي رَباحٍ، قَالَ: قَالَ لي ابنُ عَباسٍ رضي اللهُ عنهما: ألاَ أُريكَ امْرَأةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّة؟ فَقُلْتُ: بَلَى، قَالَ: هذِهِ المَرْأةُ السَّوداءُ أتتِ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَتْ: إنّي أُصْرَعُ (1)، وإِنِّي أتَكَشَّفُ، فادْعُ الله تَعَالَى لي. قَالَ: «إنْ شئْتِ صَبَرتِ وَلَكِ الجَنَّةُ، وَإنْ شئْتِ دَعَوتُ الله تَعَالَى أَنْ يُعَافِيكِ» فَقَالَتْ: أَصْبِرُ، فَقَالَتْ: إنِّي أتَكَشَّفُ فَادعُ الله أَنْ لا أَتَكَشَّف، فَدَعَا لَهَا. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
হাদীস নং: ৩৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৬। জুলুম-নির্যাতনে নবীগণের সবর এবং জালিমদের সাথে তাদের আচরণ:
হযরত আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, যেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাচ্ছি তিনি কোনও এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করছেন। তাঁকে তাঁর জাতি মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ তারা জানে না - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৪৭৭, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৯৭২)
হযরত আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, যেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাচ্ছি তিনি কোনও এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করছেন। তাঁকে তাঁর জাতি মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ তারা জানে না - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৪৭৭, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৯৭২)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
36 - وعن أبي عبد الرحمانِ عبدِ الله بنِ مسعودٍ - رضي الله عنه - قَالَ: كَأَنِّي أنْظُرُ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - يَحْكِي نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِياءِ، صَلَواتُ الله وَسَلامُهُ عَلَيْهمْ، ضَرَبه قَوْمُهُ فَأدْمَوهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، يَقُولُ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَومي، فَإِنَّهُمْ لا يَعْلَمونَ». مُتَّفَقٌ علَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৩৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৭। যেকোনও কষ্ট-ক্লেশে সবর করলে গুনাহ মাফ হয়
হযরত আবু সাঈদ রাযি. ও আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলিম ব্যক্তির যে-কোনও ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানী দেখা দেয়, এমনকি তার যদি কোনও কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার পাপ মোচন করে থাকেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৪২, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৫৭৩)
হযরত আবু সাঈদ রাযি. ও আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুসলিম ব্যক্তির যে-কোনও ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট ও পেরেশানী দেখা দেয়, এমনকি তার যদি কোনও কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার পাপ মোচন করে থাকেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৪২, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৫৭৩)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
37 - وعن أبي سعيدٍ وأبي هريرةَ رضيَ الله عنهما، عن النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ، وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ، وَلاَ حَزَنٍ، وَلاَ أذًى، وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوكَةُ يُشَاكُهَا إلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَاياهُ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
و «الوَصَبُ»: المرض.
و «الوَصَبُ»: المرض.
হাদীস নং: ৩৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৮। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের মত দু'জনের সমান জ্বরে ভুগছি। বললাম, তা কি এজন্য যে, আপনার দ্বিগুণ ছওয়াব লাভ হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তা এরকমই। কোনও মুসলিম ব্যক্তি যে-কোনও কষ্ট ভোগ করে, তা কাঁটা বিঁধা বা তার বেশি কষ্টদায়ক কিছু হোক না কেন, সে কারণে আল্লাহ অবশ্যই তার পাপ মোচন করেন। আর তার গুনাহসমূহ ঝরে পড়ে, যেমন গাছ তার পাতা ঝেড়ে ফেলে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৪৮, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৫৭১)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
38 - وعن ابنِ مسعودٍ - رضي الله عنه - قَالَ: دخلتُ عَلَى النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - وهو يُوعَكُ، فقلت: يَا رسُولَ الله، إنَّكَ تُوْعَكُ وَعْكًا شَدِيدًا، قَالَ: «أجَلْ، إنِّي أوعَكُ كمَا يُوعَكُ رَجُلانِ مِنكُمْ» قلْتُ: ذلِكَ أن لَكَ أجْرينِ؟ قَالَ: «أَجَلْ، ذلِكَ كَذلِكَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أذًى، شَوْكَةٌ فَمَا فَوقَهَا إلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا سَيِّئَاتِهِ، وَحُطَّتْ عَنْهُ ذُنُوبُهُ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وَ «الوَعْكُ»: مَغْثُ الحُمَّى، وَقيلَ: الحُمَّى.
وَ «الوَعْكُ»: مَغْثُ الحُمَّى، وَقيلَ: الحُمَّى.
হাদীস নং: ৩৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৯। আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বালা-মুসিবত দেন:
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে বালা-মুসিবত দেন - বুখারী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৪৫)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে বালা-মুসিবত দেন - বুখারী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৪৫)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
39 - وعن أبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ». رواه البخاري. (1)
وَضَبَطُوا «يُصِبْ» بفَتْح الصَّاد وكَسْرها (2).
وَضَبَطُوا «يُصِبْ» بفَتْح الصَّاد وكَسْرها (2).
হাদীস নং: ৪০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪০। কোনও বিপদে পড়ে মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়:
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন কোনও কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ, যাবত জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৭১, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৬৮০)
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যেন কোনও কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। একান্ত যদি করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ, যাবত জীবিত থাকা আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন মৃত্যু আমার পক্ষে কল্যাণকর হয় - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৬৭১, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৬৮০)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
40 - وعن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوتَ لضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلًا، فَليَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيرًا لِي، وَتَوفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيرًا لي». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)