রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৬৭৯ টি
হাদীস নং: ৪১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪১। পূর্ববর্তীদের সবর থেকে শিক্ষাগ্রহণ:
হযরত আবু আব্দুল্লাহ খাব্বাব ইবনে আরাত রাযি. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (কাফিরদের জুলুম-নির্যাতন সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি মাথার নিচে একটি চাদর রেখে কা'বার ছায়ায় শুয়েছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য দুআ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা তো এই ছিল যে, তাদের একেকজন লোককে ধরে আনা হত, তারপর তার জন্য মাটিতে গর্ত করে তাকে তার ভেতর স্থাপিত করা হত। তারপর করাত এনে তার মাথায় রাখা হত এবং তাকে দু'টুকরো করে ফেলা হত। লোহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়িয়ে তার হাড় থেকে গোশত আলাদা করে ফেলা হত। কিন্তু এসব (নির্যাতন) তাকে তার দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ অবশ্যই এ দীনকে পরিপূর্ণ (-রূপে বিজয়ী) করবেন, এমনকি একেকজন আরোহী (ইয়ামানের) সানআ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত (একাকী) সফর করবে, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া সে কাউকে ভয় করবে না। হ্যাঁ, নিজ মেষপালের জন্য নেকড়ের ভয় থাকতে পারে। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ - বুখারী।
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত খাব্বাব রাযি. বলেন, তিনি (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথার নিচে চাঁদর রেখে শোয়া ছিলেন। আমরা মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করছিলাম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৬১২)
হযরত আবু আব্দুল্লাহ খাব্বাব ইবনে আরাত রাযি. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (কাফিরদের জুলুম-নির্যাতন সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি মাথার নিচে একটি চাদর রেখে কা'বার ছায়ায় শুয়েছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য দুআ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা তো এই ছিল যে, তাদের একেকজন লোককে ধরে আনা হত, তারপর তার জন্য মাটিতে গর্ত করে তাকে তার ভেতর স্থাপিত করা হত। তারপর করাত এনে তার মাথায় রাখা হত এবং তাকে দু'টুকরো করে ফেলা হত। লোহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়িয়ে তার হাড় থেকে গোশত আলাদা করে ফেলা হত। কিন্তু এসব (নির্যাতন) তাকে তার দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ অবশ্যই এ দীনকে পরিপূর্ণ (-রূপে বিজয়ী) করবেন, এমনকি একেকজন আরোহী (ইয়ামানের) সানআ থেকে হাযরামাওত পর্যন্ত (একাকী) সফর করবে, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া সে কাউকে ভয় করবে না। হ্যাঁ, নিজ মেষপালের জন্য নেকড়ের ভয় থাকতে পারে। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ - বুখারী।
অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত খাব্বাব রাযি. বলেন, তিনি (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথার নিচে চাঁদর রেখে শোয়া ছিলেন। আমরা মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করছিলাম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৬১২)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
41 - وعن أبي عبد الله خَبَّاب بنِ الأَرتِّ - رضي الله عنه - قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - وَهُوَ متَوَسِّدٌ بُرْدَةً (1) لَهُ في ظلِّ الكَعْبَةِ، فقُلْنَا: أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا ألاَ تَدْعُو لَنا؟ فَقَالَ: «قَدْ [ص:31] كَانَ مَنْ قَبْلَكُمْ يُؤْخَذُ الرَّجُلُ فَيُحْفَرُ لَهُ في الأرضِ فَيُجْعَلُ فِيهَا، ثُمَّ يُؤْتَى بِالمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأسِهِ فَيُجْعَلُ نصفَينِ، وَيُمْشَطُ بأمْشَاطِ الحَديدِ مَا دُونَ لَحْمِه وَعَظْمِهِ، مَا يَصُدُّهُ ذلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَاللهِ لَيُتِمَّنَّ الله هَذَا الأَمْر حَتَّى يَسيرَ الرَّاكبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَموتَ لاَ يَخَافُ إلاَّ اللهَ والذِّئْب عَلَى غَنَمِهِ، ولكنكم تَسْتَعجِلُونَ». رواه البخاري. (2)
وفي رواية: «وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً وَقَدْ لَقِينا مِنَ المُشْرِكِينَ شدَّةً».
وفي رواية: «وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً وَقَدْ لَقِينا مِنَ المُشْرِكِينَ شدَّةً».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৪২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪২। হুনাইনের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বন্টন প্রসংগে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সবরের উল্লেখ:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বণ্টনে কিছু লোককে (অন্যদের উপর) প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি আকরা ইবনে হাবিসকে একশত উট এবং উয়াইনা ইবনে হিসনকে অনুরূপ (পরিমাণ উট) দিয়েছিলেন। তাছাড়া আরবের কিছু অভিজাত লোককেও (বেশি বেশি) দিয়েছিলেন। তাদেরকে সেদিন বণ্টনে (অন্যদের উপর) অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এতে এক ব্যক্তি বলে উঠল, আল্লাহর কসম! এই বণ্টনে সুবিচার করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। আমি (মনে মনে) বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটা অবহিত করব। সুতরাং আমি তাঁর কাছে চলে আসলাম এবং ওই ব্যক্তি যা বলেছে
তা তাঁকে জানালাম। তা শুনে তাঁর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল এবং তা রক্তিম হয়ে উঠল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যদি সুবিচার না করেন, তবে আর কে সুবিচার করবে? তারপর বললেন, আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি রহম করুন। তাঁকে এরচে' আরও বেশি কষ্ট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন। তখন আমি (মনে মনে) বললাম, এরপর আমি কিছুতেই তাঁর কাছে কোনও কথা পৌঁছাব না - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩১৫০, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১০৬২)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বণ্টনে কিছু লোককে (অন্যদের উপর) প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি আকরা ইবনে হাবিসকে একশত উট এবং উয়াইনা ইবনে হিসনকে অনুরূপ (পরিমাণ উট) দিয়েছিলেন। তাছাড়া আরবের কিছু অভিজাত লোককেও (বেশি বেশি) দিয়েছিলেন। তাদেরকে সেদিন বণ্টনে (অন্যদের উপর) অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এতে এক ব্যক্তি বলে উঠল, আল্লাহর কসম! এই বণ্টনে সুবিচার করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। আমি (মনে মনে) বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটা অবহিত করব। সুতরাং আমি তাঁর কাছে চলে আসলাম এবং ওই ব্যক্তি যা বলেছে
তা তাঁকে জানালাম। তা শুনে তাঁর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল এবং তা রক্তিম হয়ে উঠল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যদি সুবিচার না করেন, তবে আর কে সুবিচার করবে? তারপর বললেন, আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি রহম করুন। তাঁকে এরচে' আরও বেশি কষ্ট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন। তখন আমি (মনে মনে) বললাম, এরপর আমি কিছুতেই তাঁর কাছে কোনও কথা পৌঁছাব না - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩১৫০, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১০৬২)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
42 - وعن ابن مسعودٍ - رضي الله عنه - قَالَ: لَمَّا كَانَ يَومُ حُنَينٍ آثَرَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - نَاسًا في القسْمَةِ، فَأعْطَى الأقْرَعَ بْنَ حَابسٍ مئَةً مِنَ الإِبِلِ، وَأَعْطَى عُيَيْنَة بْنَ حصن مِثْلَ ذلِكَ، وَأَعطَى نَاسًا مِنْ أشْرافِ العَرَبِ وآثَرَهُمْ يَوْمَئِذٍ في القسْمَةِ. فَقَالَ رَجُلٌ: واللهِ إنَّ هذِهِ قِسْمَةٌ مَا عُدِلَ فِيهَا، وَمَا أُريدَ فيهَا وَجْهُ اللهِ، فَقُلْتُ: وَاللهِ لأُخْبِرَنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأَتَيْتُهُ فَأخْبَرتُهُ بمَا قَالَ، فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ حَتَّى كَانَ كالصِّرْفِ. ثُمَّ قَالَ: «فَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لم يَعْدِلِ اللهُ وَرسولُهُ؟» ثُمَّ قَالَ: «يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِيَ بأكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبر». فَقُلْتُ: لاَ جَرَمَ لاَ أرْفَعُ إِلَيْه بَعدَهَا حَدِيثًا (1). مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
وَقَوْلُهُ: «كالصِّرْفِ» هُوَ بِكَسْرِ الصَّادِ المُهْمَلَةِ: وَهُوَ صِبْغٌ أحْمَر.
وَقَوْلُهُ: «كالصِّرْفِ» هُوَ بِكَسْرِ الصَّادِ المُهْمَلَةِ: وَهُوَ صِبْغٌ أحْمَر.
হাদীস নং: ৪৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৩। পার্থিব জীবনে মু'মিনদের শাস্তিভোগ আল্লাহর অনুগ্রহবিশেষ এবং যতবড় পরীক্ষা ততবড় প্রতিদান:
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর কোনও বান্দার কল্যাণ চান, তখন দুনিয়াতেই তাকে নগদ শাস্তি দান করেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন তাঁর কোনও বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তার শাস্তি বিলম্বিত করে তাকে পাপে লিপ্ত রাখেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি বদলা দেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, নিশ্চয়ই বিরাট প্রতিদান বিরাট মুসিবতের সংগে যুক্ত। আল্লাহ যখন কোনও জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীছ বর্ণনা করেন এবং বলেন, এটি একটি 'হাসান' হাদীছ। (হাদীস নং ২৩৯৮)
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর কোনও বান্দার কল্যাণ চান, তখন দুনিয়াতেই তাকে নগদ শাস্তি দান করেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ যখন তাঁর কোনও বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তার শাস্তি বিলম্বিত করে তাকে পাপে লিপ্ত রাখেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি বদলা দেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, নিশ্চয়ই বিরাট প্রতিদান বিরাট মুসিবতের সংগে যুক্ত। আল্লাহ যখন কোনও জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীছ বর্ণনা করেন এবং বলেন, এটি একটি 'হাসান' হাদীছ। (হাদীস নং ২৩৯৮)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
43 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إِذَا أَرَادَ الله بعبدِهِ الخَيرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ في الدُّنْيا، وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبدِهِ الشَّرَّ أمْسَكَ عَنْهُ بذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يومَ القِيَامَةِ».
وَقالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلاَءِ، وَإنَّ اللهَ تَعَالَى إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
وَقالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلاَءِ، وَإنَّ اللهَ تَعَالَى إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ৪৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৪। জনৈকা আনসারী সাহাবিয়ার ধৈর্যের দৃষ্টান্ত:
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু তালহা রাযি.- এর এক পুত্র অসুস্থ ছিলেন। এ অবস্থায় হযরত আবু তালহা রাযি. বাইরে কোথাও গেলেন। ইত্যবসরে ছেলেটির মৃত্যু হল। হযরত আবু তালহা রাযি. ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার পুত্রের কী অবস্থা? বাচ্চাটির মা উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, সে এখন আগের তুলনায় বেশি শান্ত আছে। তারপর তিনি তাঁর সামনে রাত্রের খাবার পেশ করলেন। তিনি তা খেলেন। তারপর তিনি (সে রাতে) স্ত্রী-সহবাস করলেন। শেষে উম্মু সুলায়ম রাযি. (শিশুর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করলেন এবং) বললেন, ছেলেকে দাফন করুন।
ভোরবেলা আবু তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি আজ রাতে সহবাস করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে বরকত দান করুন। অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. এক পুত্র সন্তানের জন্মদান করলেন। (হযরত আনাস রাযি. বলেন) আবু তালহা রাযি. আমাকে বললেন, একে তুলে নাও এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাও । তিনি তার সংগে কয়েকটি খেজুরও পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে দেখে) বললেন, এর সংগে কিছু আছে কি? হযরত আনাস রাযি. বললেন, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং চিবালেন। তারপর নিজ মুখ থেকে তা নিয়ে শিশুটির মুখে দিলেন। এভাবে তার ‘তাহনীক' করলেন আর তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ - বুখারী ও মুসলিম ।
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন, জনৈক আনসারী ব্যক্তি বলেছেন, আমি তার (অর্থাৎ আব্দুল্লাহর) ৯জন পুত্র দেখেছি, যাদের সকলেই কুরআন পড়েছিল (অর্থাৎ কুরআনের হাফেজ ছিল বা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেছিল)।
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী আবু তালহার ঔরসজাত এক পুত্র মারা গেল। উম্মু সুলায়ম রাযি. পরিবারের সকলকে বলে রাখলেন, তোমরা আবু তালহাকে তার পুত্রের মৃত্যুর খবর দিও না। আমিই তাকে তার সংবাদ জানাব। তারপর আবু তালহা রাযি. আসলে তিনি রাত্রের খাবার তার সামনে পেশ করলেন। আবু তালহা রাযি. তা খেলেন ও পান করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. স্বামীর জন্য ইতোপূর্বে যেমন সাজসজ্জা করতেন, তারচে' আরও ভালোভাবে সাজলেন। তারপর আবু তালহা রাযি. তার সংগে মিলন করলেন।
উম্মু সুলায়ম রাযি. যখন দেখলেন, আবু তালহা রাযি. তৃপ্তিলাভ করেছেন এবং তার সংগে মিলনও করেছেন। তখন বললেন, হে তালহার বাবা! বলুন তো কোনও কওম যদি কোনও পরিবারকে কিছু ধার দেয়, তারপর তাদের সেই ধার ফেরত চায়, তবে কি সেই পরিবার তাদেরকে তা (ফেরত) না দেওয়ার অধিকার রাখে? তিনি বললেন, না। উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, তবে আপনার পুত্রের ব্যাপারে (ধৈর্যধারণ করুন ও) ছওয়াবের আশা রাখুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, এ কথা শুনে আবু তালহা রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি আমাকে আগে কিছু বললে না। অবশেষে যখন নাপাক হয়ে গেলাম, এখন কিনা আমার পুত্রের খবর আমাকে জানাচ্ছ! তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে যা-কিছু হয়েছে সব তাঁকে জানালেন। (সব শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ রাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের বরকত দান করুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. গর্ভবতী হলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মু সুলায়ম রাযি.- ও তাঁর সংগে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, যখন কোনও সফর থেকে মদীনায় ফিরে আসতেন, তখন রাতে মদীনায় প্রবেশ করতেন না। এ সফরে যখন তাঁরা মদীনার কাছাকাছি পৌঁছলেন, তখন উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল । ফলে আবু তালহা রাযি. তাঁর সংগে থেকে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আবু তালহা বলতে লাগলেন, হে রব্ব! তুমি তো জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোথাও যান, তখন আমি তাঁর সংগে যেতে ভালোবাসি এবং যখন তিনি মদীনায় প্রবেশ করেন, তাঁর সংগে প্রবেশ করা আমার পসন্দ। কিন্তু তুমি দেখছ আমি এখানে আটকে গেছি। উম্মু সুলায়ম রাযি. বলতে লাগলেন, হে তালহার বাবা! এতক্ষণ যে বেদনা অনুভব করছিলাম, এখন আর তা অনুভব করছি না। সুতরাং সামনে চলুন। তো আমরা চলতে লাগলাম। তাঁরা মদীনায় পৌঁছে যাওয়ার পর উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল। তখন আমার মা (উম্মু সুলায়ম রাযি.) আমাকে বললেন, হে আনাস! এ বাচ্চাকে কেউ দুধপান করানোর আগে ভোরে ভোরে তুমি একে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাবে। সুতরাং ভোরবেলা আমি তাকে কোলে তুলে নিলাম এবং তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। এভাবে তিনি পূর্ণ হাদীছ বর্ণনা করলেন। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৪৬০, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২১৪৪)
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু তালহা রাযি.- এর এক পুত্র অসুস্থ ছিলেন। এ অবস্থায় হযরত আবু তালহা রাযি. বাইরে কোথাও গেলেন। ইত্যবসরে ছেলেটির মৃত্যু হল। হযরত আবু তালহা রাযি. ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার পুত্রের কী অবস্থা? বাচ্চাটির মা উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, সে এখন আগের তুলনায় বেশি শান্ত আছে। তারপর তিনি তাঁর সামনে রাত্রের খাবার পেশ করলেন। তিনি তা খেলেন। তারপর তিনি (সে রাতে) স্ত্রী-সহবাস করলেন। শেষে উম্মু সুলায়ম রাযি. (শিশুর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করলেন এবং) বললেন, ছেলেকে দাফন করুন।
ভোরবেলা আবু তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি আজ রাতে সহবাস করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে বরকত দান করুন। অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. এক পুত্র সন্তানের জন্মদান করলেন। (হযরত আনাস রাযি. বলেন) আবু তালহা রাযি. আমাকে বললেন, একে তুলে নাও এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাও । তিনি তার সংগে কয়েকটি খেজুরও পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে দেখে) বললেন, এর সংগে কিছু আছে কি? হযরত আনাস রাযি. বললেন, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং চিবালেন। তারপর নিজ মুখ থেকে তা নিয়ে শিশুটির মুখে দিলেন। এভাবে তার ‘তাহনীক' করলেন আর তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ - বুখারী ও মুসলিম ।
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন, জনৈক আনসারী ব্যক্তি বলেছেন, আমি তার (অর্থাৎ আব্দুল্লাহর) ৯জন পুত্র দেখেছি, যাদের সকলেই কুরআন পড়েছিল (অর্থাৎ কুরআনের হাফেজ ছিল বা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেছিল)।
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী আবু তালহার ঔরসজাত এক পুত্র মারা গেল। উম্মু সুলায়ম রাযি. পরিবারের সকলকে বলে রাখলেন, তোমরা আবু তালহাকে তার পুত্রের মৃত্যুর খবর দিও না। আমিই তাকে তার সংবাদ জানাব। তারপর আবু তালহা রাযি. আসলে তিনি রাত্রের খাবার তার সামনে পেশ করলেন। আবু তালহা রাযি. তা খেলেন ও পান করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. স্বামীর জন্য ইতোপূর্বে যেমন সাজসজ্জা করতেন, তারচে' আরও ভালোভাবে সাজলেন। তারপর আবু তালহা রাযি. তার সংগে মিলন করলেন।
উম্মু সুলায়ম রাযি. যখন দেখলেন, আবু তালহা রাযি. তৃপ্তিলাভ করেছেন এবং তার সংগে মিলনও করেছেন। তখন বললেন, হে তালহার বাবা! বলুন তো কোনও কওম যদি কোনও পরিবারকে কিছু ধার দেয়, তারপর তাদের সেই ধার ফেরত চায়, তবে কি সেই পরিবার তাদেরকে তা (ফেরত) না দেওয়ার অধিকার রাখে? তিনি বললেন, না। উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, তবে আপনার পুত্রের ব্যাপারে (ধৈর্যধারণ করুন ও) ছওয়াবের আশা রাখুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, এ কথা শুনে আবু তালহা রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি আমাকে আগে কিছু বললে না। অবশেষে যখন নাপাক হয়ে গেলাম, এখন কিনা আমার পুত্রের খবর আমাকে জানাচ্ছ! তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে যা-কিছু হয়েছে সব তাঁকে জানালেন। (সব শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ রাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের বরকত দান করুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. গর্ভবতী হলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মু সুলায়ম রাযি.- ও তাঁর সংগে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, যখন কোনও সফর থেকে মদীনায় ফিরে আসতেন, তখন রাতে মদীনায় প্রবেশ করতেন না। এ সফরে যখন তাঁরা মদীনার কাছাকাছি পৌঁছলেন, তখন উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল । ফলে আবু তালহা রাযি. তাঁর সংগে থেকে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আবু তালহা বলতে লাগলেন, হে রব্ব! তুমি তো জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোথাও যান, তখন আমি তাঁর সংগে যেতে ভালোবাসি এবং যখন তিনি মদীনায় প্রবেশ করেন, তাঁর সংগে প্রবেশ করা আমার পসন্দ। কিন্তু তুমি দেখছ আমি এখানে আটকে গেছি। উম্মু সুলায়ম রাযি. বলতে লাগলেন, হে তালহার বাবা! এতক্ষণ যে বেদনা অনুভব করছিলাম, এখন আর তা অনুভব করছি না। সুতরাং সামনে চলুন। তো আমরা চলতে লাগলাম। তাঁরা মদীনায় পৌঁছে যাওয়ার পর উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল। তখন আমার মা (উম্মু সুলায়ম রাযি.) আমাকে বললেন, হে আনাস! এ বাচ্চাকে কেউ দুধপান করানোর আগে ভোরে ভোরে তুমি একে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাবে। সুতরাং ভোরবেলা আমি তাকে কোলে তুলে নিলাম এবং তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। এভাবে তিনি পূর্ণ হাদীছ বর্ণনা করলেন। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৪৬০, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২১৪৪)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
44 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ - رضي الله عنه - يَشتَكِي، فَخَرَجَ أبُو طَلْحَةَ، فَقُبِضَ الصَّبيُّ، فَلَمَّا رَجَعَ أَبُو طَلْحَةَ، قَالَ: مَا فَعَلَ ابْنِي؟ قَالَتْ أمُّ سُلَيم وَهِيَ أمُّ الصَّبيِّ: هُوَ أَسْكَنُ مَا كَانَ، فَقَرَّبَتْ إليه العَشَاءَ فَتَعَشَّى، ثُمَّ أَصَابَ منْهَا، فَلَمَّا فَرَغَ، قَالَتْ: وَارُوا الصَّبيَّ فَلَمَّا أَصْبحَ أَبُو طَلْحَةَ أَتَى رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأخْبَرَهُ، فَقَالَ: «أعَرَّسْتُمُ اللَّيلَةَ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمَا»، فَوَلَدَتْ غُلامًا، فَقَالَ لي أَبُو طَلْحَةَ: احْمِلْهُ حَتَّى تَأْتِيَ بِهِ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - وَبَعَثَ مَعَهُ بِتَمَراتٍ، فَقَالَ: «أَمَعَهُ شَيءٌ؟» قَالَ: نَعَمْ، تَمَراتٌ، فَأخَذَهَا النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - فَمَضَغَهَا، ثُمَّ أَخَذَهَا مِنْ فِيهِ فَجَعَلَهَا في فِيِّ الصَّبيِّ، ثُمَّ حَنَّكَهُ وَسَمَّاهُ عَبدَ الله. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية للبُخَارِيِّ: قَالَ ابنُ عُيَيْنَةَ: فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصارِ: فَرَأيْتُ تِسعَةَ أوْلادٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَؤُوا القُرْآنَ، يَعْنِي: مِنْ أوْلادِ عَبدِ الله المَولُودِ.
وَفي رواية لمسلمٍ: مَاتَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ مِنْ أمِّ سُلَيمٍ، فَقَالَتْ لأَهْلِهَا: لاَ تُحَدِّثُوا أَبَا طَلْحَةَ بابْنِهِ حَتَّى أَكُونَ أَنَا أُحَدِّثُهُ، فَجَاءَ فَقَرَّبَتْ إِلَيْه عَشَاءً فَأَكَلَ وَشَرِبَ، ثُمَّ تَصَنَّعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنَّعُ قَبْلَ ذلِكَ، فَوَقَعَ بِهَا. فَلَمَّا أَنْ رَأَتْ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وأَصَابَ مِنْهَا، قَالَتْ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، أَرَأَيتَ لو أنَّ قَومًا أعارُوا عَارِيَتَهُمْ أَهْلَ بَيتٍ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمْ، أَلَهُمْ أن يَمْنَعُوهُمْ؟ قَالَ: لا، فَقَالَتْ: فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ، قَالَ: فَغَضِبَ، ثُمَّ قَالَ: تَرَكْتِني حَتَّى إِذَا تَلطَّخْتُ، ثُمَّ أخْبَرتني بِابْنِي؟! فانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأخْبَرَهُ بِمَا كَانَ فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «بَارَكَ اللهُ في لَيْلَتِكُمَا»، قَالَ: فَحَمَلَتْ. قَالَ: وَكانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ وَهيَ مَعَهُ، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا أَتَى المَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لاَ يَطْرُقُهَا طُرُوقًا فَدَنَوا مِنَ المَدِينَة، فَضَرَبَهَا المَخَاضُ، فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا أَبُو طَلْحَةَ، وانْطَلَقَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم. قَالَ: يَقُولَ أَبُو طَلْحَةَ: إنَّكَ لَتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أَنْ أخْرُجَ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا خَرَجَ وَأَدْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى، تَقُولُ أُمُّ سُلَيْمٍ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، مَا أَجِدُ الَّذِي كُنْتُ أجدُ، انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا المَخَاضُ حِينَ قَدِمَا، فَوَلدَت غُلامًا. فَقَالَتْ لِي أمِّي: يَا أنَسُ، لا يُرْضِعْهُ أحَدٌ حَتَّى تَغْدُو بِهِ عَلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم. فَلَمَّا أصْبَحَ [ص:33] احْتَمَلْتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم ... وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيثِ.
وفي رواية للبُخَارِيِّ: قَالَ ابنُ عُيَيْنَةَ: فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصارِ: فَرَأيْتُ تِسعَةَ أوْلادٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَؤُوا القُرْآنَ، يَعْنِي: مِنْ أوْلادِ عَبدِ الله المَولُودِ.
وَفي رواية لمسلمٍ: مَاتَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ مِنْ أمِّ سُلَيمٍ، فَقَالَتْ لأَهْلِهَا: لاَ تُحَدِّثُوا أَبَا طَلْحَةَ بابْنِهِ حَتَّى أَكُونَ أَنَا أُحَدِّثُهُ، فَجَاءَ فَقَرَّبَتْ إِلَيْه عَشَاءً فَأَكَلَ وَشَرِبَ، ثُمَّ تَصَنَّعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنَّعُ قَبْلَ ذلِكَ، فَوَقَعَ بِهَا. فَلَمَّا أَنْ رَأَتْ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وأَصَابَ مِنْهَا، قَالَتْ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، أَرَأَيتَ لو أنَّ قَومًا أعارُوا عَارِيَتَهُمْ أَهْلَ بَيتٍ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمْ، أَلَهُمْ أن يَمْنَعُوهُمْ؟ قَالَ: لا، فَقَالَتْ: فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ، قَالَ: فَغَضِبَ، ثُمَّ قَالَ: تَرَكْتِني حَتَّى إِذَا تَلطَّخْتُ، ثُمَّ أخْبَرتني بِابْنِي؟! فانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأخْبَرَهُ بِمَا كَانَ فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «بَارَكَ اللهُ في لَيْلَتِكُمَا»، قَالَ: فَحَمَلَتْ. قَالَ: وَكانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ وَهيَ مَعَهُ، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا أَتَى المَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لاَ يَطْرُقُهَا طُرُوقًا فَدَنَوا مِنَ المَدِينَة، فَضَرَبَهَا المَخَاضُ، فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا أَبُو طَلْحَةَ، وانْطَلَقَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم. قَالَ: يَقُولَ أَبُو طَلْحَةَ: إنَّكَ لَتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أَنْ أخْرُجَ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا خَرَجَ وَأَدْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى، تَقُولُ أُمُّ سُلَيْمٍ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، مَا أَجِدُ الَّذِي كُنْتُ أجدُ، انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا المَخَاضُ حِينَ قَدِمَا، فَوَلدَت غُلامًا. فَقَالَتْ لِي أمِّي: يَا أنَسُ، لا يُرْضِعْهُ أحَدٌ حَتَّى تَغْدُو بِهِ عَلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم. فَلَمَّا أصْبَحَ [ص:33] احْتَمَلْتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم ... وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيثِ.
হাদীস নং: ৪৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৫। প্রকৃত বীর কে ?
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (প্রকৃত) বীর সে নয় যে অন্যকে ধরাশায়ী করে। প্রকৃত বীর সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে – বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬১১৪, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৬৬০৯)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (প্রকৃত) বীর সে নয় যে অন্যকে ধরাশায়ী করে। প্রকৃত বীর সেই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে – বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬১১৪, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৬৬০৯)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
45 - وعن أبي هريرةَ - رضي الله عنه - أنّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لَيْسَ الشَّدِيدُ بالصُّرَعَةِ، إنَّمَا الشَدِيدُ الَّذِي يَملكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الغَضَبِ» (1) مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
«وَالصُّرَعَةُ»: بضَمِّ الصَّادِ وَفَتْحِ الرَّاءِ وأَصْلُهُ عِنْدَ العَرَبِ مَنْ يَصْرَعُ النَّاسَ كَثيرًا.
«وَالصُّرَعَةُ»: بضَمِّ الصَّادِ وَفَتْحِ الرَّاءِ وأَصْلُهُ عِنْدَ العَرَبِ مَنْ يَصْرَعُ النَّاسَ كَثيرًا.
হাদীস নং: ৪৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৬। ক্রোধ নিরাময়ের উপায়:
হযরত সুলায়মান ইবন সুরাদ রাযি. বলেন, একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলাম। এ সময় দুই ব্যক্তি পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার গলার শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি, তা যদি ওই ব্যক্তি বলত তবে তার এ অবস্থা দূর হয়ে যেত। যদি সে বলত, أعُوذ باللهِ منَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ
আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম।
তবে তার (রাগের) এ অবস্থা দূর হয়ে যেত। লোকেরা তাকে গিয়ে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে أعُوذ باللهِ منَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ বলার আদেশ করেছেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩২৮২, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৬১০)
হযরত সুলায়মান ইবন সুরাদ রাযি. বলেন, একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলাম। এ সময় দুই ব্যক্তি পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার গলার শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন একটি কথা জানি, তা যদি ওই ব্যক্তি বলত তবে তার এ অবস্থা দূর হয়ে যেত। যদি সে বলত, أعُوذ باللهِ منَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ
আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম।
তবে তার (রাগের) এ অবস্থা দূর হয়ে যেত। লোকেরা তাকে গিয়ে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে أعُوذ باللهِ منَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ বলার আদেশ করেছেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩২৮২, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৬১০)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
46 - وعن سُلَيْمَانَ بن صُرَدٍ - رضي الله عنه - قَالَ: كُنْتُ جالِسًا مَعَ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - وَرَجُلانِ يَسْتَبَّانِ، وَأَحَدُهُمَا قدِ احْمَرَّ وَجْهُهُ، وانْتَفَخَتْ أوْدَاجُهُ (1)، فَقَالَ رَسُول اللهِ - صلى الله عليه وسلم: «إنِّي لأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ، لَوْ قَالَ: أعُوذ باللهِ منَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ، ذَهَبَ منْهُ مَا يَجِدُ». فَقَالُوا لَهُ: إنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «تَعَوّذْ باللهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৪৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৭। ক্রোধ সংবরণের ফযীলত:
হযরত মুআয ইবনে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ক্রোধ কার্যকর করার ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও তা দমন করে রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডাকবেন এবং তাকে আয়তলোচনা যে-কোনও হুর বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেবেন – আবু দাউদ ও তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
হযরত মুআয ইবনে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ক্রোধ কার্যকর করার ক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও তা দমন করে রাখে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডাকবেন এবং তাকে আয়তলোচনা যে-কোনও হুর বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেবেন – আবু দাউদ ও তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান হাদীছ।
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
47 - وعن معاذِ بنِ أَنسٍ - رضي الله عنه: أنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ كَظَمَ غَيظًا (1)، وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ، دَعَاهُ اللهُ سُبحَانَهُ وَتَعَالى عَلَى رُؤُوسِ الخَلائِقِ يَومَ القِيامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنَ الحُورِ العِينِ مَا شَاءَ». رواه أَبو داود والترمذي، (2) وَقالَ: «حديث حسن».
তাহকীক:
হাদীস নং: ৪৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৮। রাগ না করার উপদেশ:
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরয করল, আমাকে নসীহত করুন। তিনি বললেন, রাগ করো না। ওই ব্যক্তি বার বার একই আবেদন করল। প্রতিবারই তিনি বললেন, রাগ করো না - বুখারী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬১১৬)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরয করল, আমাকে নসীহত করুন। তিনি বললেন, রাগ করো না। ওই ব্যক্তি বার বার একই আবেদন করল। প্রতিবারই তিনি বললেন, রাগ করো না - বুখারী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬১১৬)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
48 - وعن أبي هريرةَ - رضي الله عنه: أنَّ رَجُلًا قَالَ للنبي - صلى الله عليه وسلم: أوصِني. قَالَ: «لا تَغْضَبْ» فَرَدَّدَ مِرارًا، قَالَ: «لاَ تَغْضَبْ». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ৪৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৯। বিপদ-আপদ দ্বারা পর্যায়ক্রমে পাপ মোচন হয়
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু'মিন নর-নারীর উপর তার নিজের, তার সন্তান-সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদের দিক থেকে বালা-মুসিবত আসতে থাকে। পরিশেষে সে আল্লাহ তাআলার সংগে এমনভাবে মিলিত হয় যে, তার একটি গুনাহও অবশিষ্ট থাকে না।
ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীস। (হাদীস নং ২৩৯৯)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু'মিন নর-নারীর উপর তার নিজের, তার সন্তান-সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদের দিক থেকে বালা-মুসিবত আসতে থাকে। পরিশেষে সে আল্লাহ তাআলার সংগে এমনভাবে মিলিত হয় যে, তার একটি গুনাহও অবশিষ্ট থাকে না।
ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীস। (হাদীস নং ২৩৯৯)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
49 - وعن أبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا يَزَالُ البَلاَءُ بِالمُؤمِنِ وَالمُؤْمِنَةِ فِي نَفسِهِ ووَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَمَا عَلَيهِ خَطِيئَةٌ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
হাদীস নং: ৫০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৫০। কুরআনের আদেশ মোতাবেক বিশেষভাবে অজ্ঞদের আচরণে ধৈর্যধারণ ও ক্ষমাপ্রদর্শন:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উয়াইনা ইবনে হিসন (মদীনায়) আগমন করল এবং তার ভাতিজা হুর ইবন কায়স রাযি.-এর মেহমান হল। হুর ইবনে কায়স রাযি. ছিলেন ওইসব লোকদের একজন, যাদেরকে হযরত উমর রাযি. (তাঁর মজলিসে) নিজের কাছে বসাতেন। হযরত উমর রাযি.-এর মজলিস ও পরামর্শসভার সদস্য হত কারী-আলেমগণ, প্রৌঢ় হোক বা যুবক।
উয়াইনা তার ভাতিজাকে বলল, ওহে ভাতিজা! এই আমীরের দরবারে তোমার বিশেষ মর্যাদা আছে। সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর সংগে সাক্ষাতের অনুমতি চাও। তিনি অনুমতি চাইলেন। হযরত উমর রাযি. তাঁকে অনুমতি দিলেন। উয়াইনা তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, ওহে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহর কসম! তুমি আমাদেরকে বেশি কিছু দিচ্ছ না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করছ না। এ কথায় উমর রাযি. রেগে যান। এমনকি তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হন। তখন হুর ইবন কায়স রাযি. তাঁকে বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন-
خُذِ الْعَفْوَ وَ أْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَهِلِينَ
"(হে নবী!) তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর এবং (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দাও আর অজ্ঞদের অগ্রাহ্য করো।" আ'রাফঃ ১৯৮.
আর নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি অজ্ঞদের একজন। আল্লাহর কসম! হুর যখন এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘উমর রাযি. আর সামনে বাড়লেন না। (অর্থাৎ আয়াতের নির্দেশ লঙ্ঘন করলেন না)। বস্তুত তিনি আল্লাহর কিতাবের (সীমারেখার ভেতর) অতি স্থিরকদম ছিলেন (অর্থাৎ কুরআনের হুকুমের বাইরে পা ফেলতেন না) - বুখারী। (হাদীস নং ৪৬৪২)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উয়াইনা ইবনে হিসন (মদীনায়) আগমন করল এবং তার ভাতিজা হুর ইবন কায়স রাযি.-এর মেহমান হল। হুর ইবনে কায়স রাযি. ছিলেন ওইসব লোকদের একজন, যাদেরকে হযরত উমর রাযি. (তাঁর মজলিসে) নিজের কাছে বসাতেন। হযরত উমর রাযি.-এর মজলিস ও পরামর্শসভার সদস্য হত কারী-আলেমগণ, প্রৌঢ় হোক বা যুবক।
উয়াইনা তার ভাতিজাকে বলল, ওহে ভাতিজা! এই আমীরের দরবারে তোমার বিশেষ মর্যাদা আছে। সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর সংগে সাক্ষাতের অনুমতি চাও। তিনি অনুমতি চাইলেন। হযরত উমর রাযি. তাঁকে অনুমতি দিলেন। উয়াইনা তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, ওহে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহর কসম! তুমি আমাদেরকে বেশি কিছু দিচ্ছ না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করছ না। এ কথায় উমর রাযি. রেগে যান। এমনকি তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হন। তখন হুর ইবন কায়স রাযি. তাঁকে বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন-
خُذِ الْعَفْوَ وَ أْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَهِلِينَ
"(হে নবী!) তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর এবং (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দাও আর অজ্ঞদের অগ্রাহ্য করো।" আ'রাফঃ ১৯৮.
আর নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি অজ্ঞদের একজন। আল্লাহর কসম! হুর যখন এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘উমর রাযি. আর সামনে বাড়লেন না। (অর্থাৎ আয়াতের নির্দেশ লঙ্ঘন করলেন না)। বস্তুত তিনি আল্লাহর কিতাবের (সীমারেখার ভেতর) অতি স্থিরকদম ছিলেন (অর্থাৎ কুরআনের হুকুমের বাইরে পা ফেলতেন না) - বুখারী। (হাদীস নং ৪৬৪২)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
50 - وعن ابْنِ عباسٍ رضي الله عنهما، قَالَ: قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ، فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أخِيهِ الحُرِّ بنِ قَيسٍ، وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيهِمْ عُمرُ - رضي الله عنه - وَكَانَ القُرَّاءُ (1) أصْحَابَ مَجْلِس عُمَرَ - رضي الله عنه - وَمُشاوَرَتِهِ كُهُولًا (2) كانُوا أَوْ شُبَّانًا، فَقَالَ عُيَيْنَةُ لابْنِ أخيهِ: يَا ابْنَ أخِي، لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الأمِيرِ فَاسْتَأذِنْ لِي عَلَيهِ، فاسْتَأذَن فَأذِنَ لَهُ عُمَرُ. فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ: هِي (3) يَا ابنَ الخَطَّابِ، فَواللهِ مَا تُعْطِينَا الْجَزْلَ (4) وَلا تَحْكُمُ فِينَا بالعَدْلِ. فَغَضِبَ عُمَرُ - رضي الله عنه - حَتَّى هَمَّ أَنْ يُوقِعَ بِهِ. فَقَالَ لَهُ الحُرُّ: يَا أميرَ المُؤْمِنينَ، إنَّ الله تَعَالَى قَالَ لِنَبيِّهِ - صلى الله عليه وسلم: {خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ} [الأعراف: 198] (5) وَإنَّ هَذَا مِنَ الجَاهِلِينَ، واللهِ مَا جَاوَزَهاَ عُمَرُ حِينَ تَلاَهَا، وكَانَ وَقَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى. رواه البخاري. (6)
হাদীস নং: ৫১
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৫১। আপন অধিকারখর্ব ও স্বার্থহানিতে ধৈর্যধারণ:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার পরে অচিরেই (অন্যায়ভাবে) একের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং এমনসব কাজ করা হবে, যা তোমরা পসন্দ করবে না। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেক্ষেত্রে আপনি আমাদের কী হুকুম করেন? তিনি বললেন, তোমাদের উপর অন্যের যে অধিকার আছে তা আদায় করবে আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৬০৩, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৮৪৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার পরে অচিরেই (অন্যায়ভাবে) একের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং এমনসব কাজ করা হবে, যা তোমরা পসন্দ করবে না। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেক্ষেত্রে আপনি আমাদের কী হুকুম করেন? তিনি বললেন, তোমাদের উপর অন্যের যে অধিকার আছে তা আদায় করবে আর তোমাদের যা প্রাপ্য তা আল্লাহর কাছে চাবে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৬০৩, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৮৪৩)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
51 - وعن ابن مسعود - رضي الله عنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّهَا سَتَكونُ بَعْدِي أثَرَةٌ وأُمُورٌ تُنْكِرُونَها!» قَالُوا: يَا رَسُول الله، فَمَّا تَأْمُرُنا؟ قَالَ: «تُؤَدُّونَ الْحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ، وَتَسأَلُونَ الله الَّذِي لَكُمْ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ (2).
«وَالأَثَرَةُ»: الانْفِرادُ بالشَّيءِ عَمنَ لَهُ فِيهِ حَقٌّ.
«وَالأَثَرَةُ»: الانْفِرادُ بالشَّيءِ عَمنَ لَهُ فِيهِ حَقٌّ.
হাদীস নং: ৫২
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৫২। রাষ্ট্রীয় পদ প্রার্থনা হতে বিরত থাকা:
হযরত আবু ইয়াহয়া উসায়দ ইবনে হুযায়র রাযি. থেকে বর্ণিত, জনৈক আনসারী ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যেমন অমুক অমুককে (রাষ্ট্রীয়) কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছেন, তেমনি আমাকে নিযুক্ত করবেন না? তিনি বললেন, আমার পর তোমরা অচিরেই (অন্যায়) অগ্রাধিকার প্রদান দেখবে। তখন ধৈর্যধারণ করো, যাবত না হাওযে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হও - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৭৯২, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৮৪৫)
হযরত আবু ইয়াহয়া উসায়দ ইবনে হুযায়র রাযি. থেকে বর্ণিত, জনৈক আনসারী ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যেমন অমুক অমুককে (রাষ্ট্রীয়) কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছেন, তেমনি আমাকে নিযুক্ত করবেন না? তিনি বললেন, আমার পর তোমরা অচিরেই (অন্যায়) অগ্রাধিকার প্রদান দেখবে। তখন ধৈর্যধারণ করো, যাবত না হাওযে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হও - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৭৯২, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৮৪৫)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
52 - وعن أبي يحيى أُسَيْد بن حُضَير - رضي الله عنه: أنَّ رَجُلًا مِنَ الأنْصارِ، قَالَ: يَا رسولَ الله، ألاَ تَسْتَعْمِلُني كَمَا اسْتَعْمَلْتَ فُلانًا، فَقَالَ: «إنكُمْ سَتَلْقَونَ بَعْدِي أَثَرَةً فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوني عَلَى الحَوْضِ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
«وَأُسَيْدٌ»: بضم الهمزة. «وحُضيْرٌ»: بحاءٍ مهملة مضمومة وضاد معجمة مفتوحة، والله أعلم.
«وَأُسَيْدٌ»: بضم الهمزة. «وحُضيْرٌ»: بحاءٍ مهملة مضمومة وضاد معجمة مفتوحة، والله أعلم.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৩
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৩ সবর।
৫৩। শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার আশা না করে আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করা উচিত:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও এক যুদ্ধের দিন শত্রুর সম্মুখীন হলে তিনি অপেক্ষা করতে থাকলেন। অবশেষে যখন সূর্য হেলে পড়ল, তখন সাহাবীগণের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোকসকল! তোমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করো না। আল্লাহর কাছে শান্তি চাও। তবে যখন তাদের সংগে তোমাদের যুদ্ধ লেগে যাবে, তখন তাতে ধৈর্যধারণ করবে (অবিচল থেকে যুদ্ধ করবে)। জেনে রেখ, জান্নাত তরবারির ছায়াতলে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন-
اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَ مُجْرِي السَّحَابِ وَ هَازِمَ الْأَحْزَابِ اِهْزِمُهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ.
“ওহে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ চালনাকারী ও শত্রুবাহিনীকে পরাস্তকারী আল্লাহ! শত্রুবাহিনীকে পরাস্ত করুন এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। - বুখারী ও মুসলিম। বুখারী শরীফ হাদীস নং ২৯৬৬, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৪২
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও এক যুদ্ধের দিন শত্রুর সম্মুখীন হলে তিনি অপেক্ষা করতে থাকলেন। অবশেষে যখন সূর্য হেলে পড়ল, তখন সাহাবীগণের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোকসকল! তোমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করো না। আল্লাহর কাছে শান্তি চাও। তবে যখন তাদের সংগে তোমাদের যুদ্ধ লেগে যাবে, তখন তাতে ধৈর্যধারণ করবে (অবিচল থেকে যুদ্ধ করবে)। জেনে রেখ, জান্নাত তরবারির ছায়াতলে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন-
اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَ مُجْرِي السَّحَابِ وَ هَازِمَ الْأَحْزَابِ اِهْزِمُهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ.
“ওহে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ চালনাকারী ও শত্রুবাহিনীকে পরাস্তকারী আল্লাহ! শত্রুবাহিনীকে পরাস্ত করুন এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। - বুখারী ও মুসলিম। বুখারী শরীফ হাদীস নং ২৯৬৬, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৪২
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
53 - وعن أبي إبراهيم عبدِ الله بن أبي أوفى رضي الله عنهما: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - في بعْضِ أيامِهِ التي لَقِيَ فِيهَا العَدُوَّ، انْتَظَرَ حَتَّى إِذَا مالَتِ الشَّمْسُ قَامَ فيهمْ، فَقَالَ: «يَا أيُّهَا النَّاسُ، لا تَتَمَنَّوا لِقَاءَ العَدُوِّ، وَاسْأَلُوا الله العَافِيَةَ، فَإِذَا لقيتُمُوهُمْ فَاصْبرُوا (1)، وَاعْلَمُوا أنّ الجَنَّةَ تَحْتَ ظِلالِ السُّيوفِ».
ثُمَّ قَالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الأحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وَانصُرْنَا عَلَيْهمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، (2) وبالله التوفيق.
ثُمَّ قَالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الأحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وَانصُرْنَا عَلَيْهمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، (2) وبالله التوفيق.
হাদীস নং: ৫৪
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ 'সিদক’ এর অর্থ ও ব্যাখ্যা
সিদক অর্থ সততা ও সত্যবাদিতা। মনের বিশ্বাস ও বাস্তবতার সংগে কোনও কথার সংগতিপূর্ণ হওয়াকে সিদক বলে। এরূপ কথাকে বলে 'কওলে সাদিক' (সত্য ও সঠিক কথা)। কোনও কথা সাদিক হওয়ার জন্য তার মধ্যে দু'টি গুণ থাকা অপরিহার্য। কথাটি বাস্তবানুগ হওয়া এবং সেই কথায় মনের বিশ্বাস থাকা। কথাটি যদি বাস্তবানুগ হয় কিন্তু তার প্রতি ব্যক্তির বিশ্বাস না থাকে, তবে সেই কথায় তাকে সাদিক ও সত্যবাদী বলা যায় না। সে কাযিব (মিথ্যাবাদী)। এজন্যই মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেওয়া সত্ত্বেও কুরআন মাজীদে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে। কারণ তারা মুখে তাঁকে রাসূল বললেও মনে বিশ্বাস করত না।
এমনিভাবে যে কথায় ব্যক্তির বিশ্বাস থাকে কিন্তু কথাটি বাস্তবানুগ না হয়, তবে সে কথার বক্তাকেও সত্যবাদী বলা হবে না। কাজেই কোনও ভণ্ডনবীর অনুসারী যদি তাকে নবী বলে, তবে সে কথায় তার যতই বিশ্বাস থাকুক না কেন, বাস্তবতার সাথে মিল না থাকায় তা মিথ্যাই গণ্য হবে।
মনের বিশ্বাসের সাথে বাস্তবসম্মত কথাকে যেমন সাদিক বলে, তেমনি এরূপ কথার বক্তাকেও সাদিক বলা হয়ে থাকে। মৌলিকভাবে এ গুণটি কথার হলেও কর্ম ও বিশ্বাসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ কথার সাথে যদি কর্মের মিল থাকে বা বিশ্বাসের সাথে কর্মের, তবে সেই কর্মও সাদিক (যথার্থ) নামে অভিহিত হয়ে থাকে। কুরআন মাজীদে প্রকৃত মু'মিনকে সাদিক বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে ঈমানদার বলে দাবি করে আর তার বাহ্যিক অবস্থা সেই দাবির সংগে সংগতিপূর্ণ হয় সে সাদিক, যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{ إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ (15)} [الحجرات: 15]
অর্থ: মুমিন তো তারা, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে অন্তর দিয়ে স্বীকার করেছে, তারপর কোনও সন্দেহে পড়েনি এবং তাদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী। হজুরাতঃ ১৫
এ আয়াতে প্রকৃত মু'মিনদের সত্যবাদী বলা হয়েছে। যেহেতু তাদের কর্ম তাদের ঈমানের দাবির সাথে সংগতিপূর্ণ। তারা তাদের কাজ দ্বারা ঈমানের দাবির সত্যতা প্রমাণ করে দেয়। এ হিসেবে বলা যায়, যার কথা ও কাজ এক হয় সে সাদিক। কিংবা বলুন, যার বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল থাকে সে সাদিক। এভাবেও বলা যায় যে, যার মনের অবস্থার সাথে বাহ্যিক অবস্থা সংগতিপূর্ণ হয় সে সাদিক।
কথা ও কাজে মিল না থাকলে তা হয় মুনাফিকী। সুতরাং সিদক ও নিফাক একটা আরেকটার বিপরীত, যেমন মিথ্যা ও সিদকের বিপরীত। এমনিভাবে রিয়া ও সিদক পরস্পরবিরোধী। মুনাফিক ব্যক্তি সাদিক হতে পারে না। কারণ সে মুখে ঈমান প্রকাশ করে অথচ মনে বিশ্বাস নেই। অর্থাৎ তার বিশ্বাসের সাথে মুখের কথার মিল নেই। তাই সে সাদিক নয়, বরং কাযিব (মিথ্যুক)।
তদ্রূপ যে ব্যক্তি আমল করে মানুষকে দেখানোর জন্য, সেও সাদিক নয়। কেননা সে বাহ্যত আল্লাহর জন্য ইবাদত করছে বলে বোঝাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা করছে মানুষের জন্য। মানুষ তাকে আবেদ বলবে সেজন্য। বোঝা গেল আমলে সাদিক হওয়ার জন্য অন্তরে ইখলাস থাকা জরুরি।
যে ব্যক্তি কথা, কর্ম ও বিশ্বাসে সাদিক অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে সর্বদা সত্য-নিষ্ঠার পরিচয় দেয়, কখনও মিথ্যা বলে না, রিয়া পরিহার করে চলে এবং সর্বাবস্থায় মুনাফিকী-শঠতা থেকে দূরে থাকে, সেই প্রকৃত সাদিক ও সত্যবাদী। মূলত এরূপ চরিত্রের লোককে সিদ্দীক বলা হয়ে থাকে।
'সিদক'-এর সম্পর্ক যেহেতু কথা, কর্ম ও বিশ্বাস সবকিছুর সাথে তথা মানুষের সমগ্র জীবনের সাথে, সেহেতু ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটা ইসলামের অন্যতম প্রধান চারিত্ৰিক শিক্ষা। সমস্ত নবী-রাসূলগন এ গুণের সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের আগেও একজন সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার জাতি তাঁকে 'সাদিক' উপাধিতে ভূষিত করেছিল। বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের দৃষ্টিতে তাঁর নবুওয়াতপূর্ব জীবনের সত্যবাদিতা তাঁর নবুওয়াত দাবির সত্যতার পক্ষে অনেক বড় দলীল। নবুওয়াত লাভের পর তিনি মানুষকে যেসকল বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সংগে শিক্ষাদান করতেন, সিদক ও সত্যবাদিতাও তার একটি। কুরআন মাজীদের বহু আয়াতে এর প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। এর গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে আছে বহু হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু হাদীছ উল্লেখ করেছেন। তার আগে ভূমিকাস্বরূপ কয়েকটি আয়াত পেশ করেছেন। আমরা প্রথমে আয়াতসমূহের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি।
সিদক ও সততা সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119)} [التوبة: 119]
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। তাওবাঃ ১১৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগে তাবুক যুদ্ধের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা আছে। এ যুদ্ধের সফর হয়েছিল হিজরী ৯ম সালে প্রচণ্ড গরমের মওসুমে। তখন খেজুর পাকারও মওসুম ছিল। আবার গন্তব্যস্থল ছিল বহুদূরে। তাও প্রচণ্ড শক্তিমান রোমক বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাই বেশিরভাগ মুনাফিক নানান বাহানায় এ যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত থাকে। আলস্যবশত কয়েকজন খাঁটি মু'মিনও পিছিয়ে থেকেছিলেন। হযরত কা'ব রাযি, তাদের অন্যতম। পূর্বে তাওবা অধ্যায়ে তাঁর ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক থেকে ফেরার পর তিনি তাঁর কাছে কোনও মিথ্যা অজুহাত পেশ না করে সত্য প্রকাশ করেছিলেন। অকপটে স্বীকার করেছিলেন, কেবল অলসতাবশেই তার যুদ্ধে যাওয়া হয়নি। যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে সামাজিক বয়কটের কী কঠিন শাস্তি তাঁকে ভোগ করতে হয়েছিল, পূর্বোক্ত বর্ণনায় তা বিবৃত হয়েছে। কিন্তু সত্য বলার পুরস্কারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমার ঘোষণা পেয়ে যান। তাঁর সে ক্ষমার সনদ কুরআন মাজীদের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তা পাঠ করতে থাকবে এবং এই মহান সাহাবীর প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে যাবে। আখিরাতের অফুরন্ত পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়ায় অগণিত মানুষের কাছে ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে চিরঞ্জীব হয়ে থাকার মহাপুরস্কার তিনি লাভ করেছেন কেবলই সত্য বলার বদৌলতে। সন্দেহ নেই কঠিন পরিস্থিতির ভেতর অকপট সত্য বলা কেবল তাকওয়ার কারণেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। তাই এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সকল মুমিনকে লক্ষ্য করে হুকুম দিচ্ছেন, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সংগে থাক। তাকওয়া অবলম্বন করলে সত্য বলা সহজ হবে। আর সত্যবাদীদের সংগে থাকলে অন্তরে তাকওয়া বদ্ধমূল হবে। সত্য বলা মু'মিনের শান। সত্য মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। সত্যবাদীর জন্য রয়েছে আখিরাতের মহাপুরস্কার। সেই সংগে সত্যবাদী ব্যক্তি দুনিয়ায়ও ইজ্জত-সম্মান লাভ করে। তার প্রতি মানুষের আস্থা জন্মায়। মানুষ তাকে বিশ্বাস করে। তার সাথে লেনদেন করতে ভরসা পায়। যে-কোনও কথা তার সাথে নিশ্চিন্তে বলতে পারে। তার কথাও গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে। ফলে তার পার্থিব জীবনযাপন অনেক সহজ হয়। দোজাহানের এতসব প্রাপ্তি যেই 'সিদক'-এর সংগে জড়িত, কোনও অবস্থায়ই তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়। যাতে তা পরিত্যাগ করা না হয় এবং সদা সত্য বলা যায় ও সৎ জীবন যাপন করা হয়, সেজন্যই তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ।
সাদিকীনের সাহচর্য গ্রহণের জরুরত
যারা প্রকৃত মুত্তাকী তাদের সাহচর্য অবলম্বন করলে অর্থাৎ তাদের সাথে চলাফেরা করলে ও তাদের কাছে যাতায়াত করলে অন্তরে তাকওয়ার গুণ জন্মায়। যারা সাদিক তারাই মুত্তাকী, কিংবা বলুন মুত্তাকীগণই সাদিক। তাদের সাথে চলাফেরা করলে তাদের গুণও অন্তরে এসে যাবে। সাহচর্যের কিছু না কিছু প্রভাব থাকেই। তাই তো মানুষের মুখে মুখে চালু আছে, সৎসংগে স্বর্গবাস। আমরা বলব, জান্নাতবাস। মুত্তাকীর ঠিকানা জান্নাত। তার সংগে যে চলবে তার ঠিকানাও জান্নাত হবে বৈকি। তা হবে তার গুণ অর্জনের মাধ্যমে, সিদক ও সত্যতা যার একটি।
কুরআন মাজীদের হুকুম কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের প্রতি। এ আয়াতে যখন বলা হয়েছে সাদিকীনের সাহচর্য অবলম্বন কর, তখন বোঝা যাচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত সাদিকীনের জামাত থাকবে। কাজেই যারা তাকওয়া অবলম্বন করতে চায়, সাদিকীনের সাহচর্যে থেকে নিজের জীবন বদলাতে চায় এবং সিদক ও তাকওয়ার গুনে নিজেকে গুণান্বিত করতে চায়, তাদের কর্তব্য সাদিকীন খুঁজে নেওয়া। খুঁজলে অবশ্যই পাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত সাদিকীনের সাহচর্যে থাকার তাওফীক দান করুন।
শিক্ষা
ক. এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় সাহচর্য অবশ্যই তাছীর ও প্রভাব রাখে।
খ. নিজের জীবনে তাকওয়া ও সিদকের গুণ আনয়নের লক্ষ্যে প্রত্যেকের উচিত মুত্তাকী ও সাদিকীনের সাহচর্য অবলম্বন করা ।
দুই নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
{وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ} [الأحزاب: 35]
এবং সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারীগণ। আহযাবঃ ৩৫
ব্যাখ্যা
এটি সূরা আহযাবের একটি দীর্ঘ আয়াতের অংশবিশেষ। আখিরাতে যারা আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কারের অধিকারী হবে, তাদের কি কি গুণের অধিকারী হওয়া জরুরি, এ আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল সততা ও সত্যবাদিতা। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, আখিরাতে আল্লাহ তা'আলার কাছে মাগফিরাত লাভই প্রত্যেক মুমিনের পরম লক্ষ্য। যে ব্যক্তি মাগফিরাত লাভ করবে, কেবল সেই জান্নাতে যাবে এবং তার কল্পনাতীত নিআমত ভোগ করবে। জান্নাত ও তার নিআমতসমূহই আল্লাহর পক্ষ থেকে নেক বান্দার মহাপুরস্কার। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে সেই মহাপুরস্কার দেওয়ার কথা বলে উৎসাহ যোগাচ্ছেন, যেন সে অবশ্যই এ আয়াতে বর্ণিত সত্যবাদিতাসহ অন্যান্য গুণ অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা অর্জনের তাওফীক দান করুন।
শিক্ষা
ক. মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের জন্য সত্যবাদিতার গুণ অর্জন করা জরুরি।
খ. এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় পুরস্কার ঘোষণা মানুষকে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করার পক্ষে সহায়ক। বলা যায় এটা ভালো কাজে উৎসাহদানের কুরআনী পন্থা।
তিন নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
{طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَعْرُوفٌ فَإِذَا عَزَمَ الْأَمْرُ فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ (21)} [محمد: 21]
অর্থ : তখন যদি তারা আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতার পরিচয় দিত, তবে তাদের জন্য ভালো হত। মুহাম্মাদঃ ২১
ব্যাখ্যা
মুনাফিকরা আল্লাহর সংগেও মিথ্যাচার করত। সবকিছুতে শঠতা প্রদর্শন করত। মনে যা থাকত, মুখে বলত তার বিপরীত কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগেও প্রতারণা করত। প্রকাশ্যে দেখাত তারা যেন তাঁর কত খাঁটি অনুসারী। প্রকৃতপক্ষে ছিল ঘোর বিরোধী। তাদের লক্ষ্য করে এ আয়াতে বলা হয়েছে, তারা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সংগে সততা অবলম্বন করত, মিথ্যাচার ও শঠতা পরিহার করে অকৃত্রিম আচরণ করত, তবে তাদের পক্ষে কতই না মঙ্গলজনক হত। কিন্তু তা না করায় তারা কেবল মঙ্গল থেকেই বঞ্চিত নয়, দুনিয়া ও আখিরাতে নিজেদের চরম লাঞ্ছনায়ও নিক্ষেপ করছে।
এ আয়াতে মূলত মুনাফিকদের অবস্থা তুলে ধরে মুমিনদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন কোনও অবস্থায়ই মিথ্যাচার ও কপটতায় লিপ্ত না হয়। যেন সদা সত্য কথা বলে ও সৎপথে চলে। অন্যথায় মুনাফিকদের অনুরূপ পরিণতি তাদেরও ভোগ করতে হবে।
শিক্ষা
ক. মিথ্যাচার ও শঠতা মুনাফিকদের চরিত্র। মু'মিনদের তা থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
খ. দুষ্টলোকের দুষ্কর্মের উল্লেখও নসীহতের একটি পন্থা। মানুষকে সৎকাজে অনুপ্রাণিত করার পক্ষেও তা বেশ উপকারী।
সিদক অর্থ সততা ও সত্যবাদিতা। মনের বিশ্বাস ও বাস্তবতার সংগে কোনও কথার সংগতিপূর্ণ হওয়াকে সিদক বলে। এরূপ কথাকে বলে 'কওলে সাদিক' (সত্য ও সঠিক কথা)। কোনও কথা সাদিক হওয়ার জন্য তার মধ্যে দু'টি গুণ থাকা অপরিহার্য। কথাটি বাস্তবানুগ হওয়া এবং সেই কথায় মনের বিশ্বাস থাকা। কথাটি যদি বাস্তবানুগ হয় কিন্তু তার প্রতি ব্যক্তির বিশ্বাস না থাকে, তবে সেই কথায় তাকে সাদিক ও সত্যবাদী বলা যায় না। সে কাযিব (মিথ্যাবাদী)। এজন্যই মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেওয়া সত্ত্বেও কুরআন মাজীদে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে। কারণ তারা মুখে তাঁকে রাসূল বললেও মনে বিশ্বাস করত না।
এমনিভাবে যে কথায় ব্যক্তির বিশ্বাস থাকে কিন্তু কথাটি বাস্তবানুগ না হয়, তবে সে কথার বক্তাকেও সত্যবাদী বলা হবে না। কাজেই কোনও ভণ্ডনবীর অনুসারী যদি তাকে নবী বলে, তবে সে কথায় তার যতই বিশ্বাস থাকুক না কেন, বাস্তবতার সাথে মিল না থাকায় তা মিথ্যাই গণ্য হবে।
মনের বিশ্বাসের সাথে বাস্তবসম্মত কথাকে যেমন সাদিক বলে, তেমনি এরূপ কথার বক্তাকেও সাদিক বলা হয়ে থাকে। মৌলিকভাবে এ গুণটি কথার হলেও কর্ম ও বিশ্বাসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ কথার সাথে যদি কর্মের মিল থাকে বা বিশ্বাসের সাথে কর্মের, তবে সেই কর্মও সাদিক (যথার্থ) নামে অভিহিত হয়ে থাকে। কুরআন মাজীদে প্রকৃত মু'মিনকে সাদিক বলা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে ঈমানদার বলে দাবি করে আর তার বাহ্যিক অবস্থা সেই দাবির সংগে সংগতিপূর্ণ হয় সে সাদিক, যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{ إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ (15)} [الحجرات: 15]
অর্থ: মুমিন তো তারা, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে অন্তর দিয়ে স্বীকার করেছে, তারপর কোনও সন্দেহে পড়েনি এবং তাদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী। হজুরাতঃ ১৫
এ আয়াতে প্রকৃত মু'মিনদের সত্যবাদী বলা হয়েছে। যেহেতু তাদের কর্ম তাদের ঈমানের দাবির সাথে সংগতিপূর্ণ। তারা তাদের কাজ দ্বারা ঈমানের দাবির সত্যতা প্রমাণ করে দেয়। এ হিসেবে বলা যায়, যার কথা ও কাজ এক হয় সে সাদিক। কিংবা বলুন, যার বিশ্বাসের সাথে কাজের মিল থাকে সে সাদিক। এভাবেও বলা যায় যে, যার মনের অবস্থার সাথে বাহ্যিক অবস্থা সংগতিপূর্ণ হয় সে সাদিক।
কথা ও কাজে মিল না থাকলে তা হয় মুনাফিকী। সুতরাং সিদক ও নিফাক একটা আরেকটার বিপরীত, যেমন মিথ্যা ও সিদকের বিপরীত। এমনিভাবে রিয়া ও সিদক পরস্পরবিরোধী। মুনাফিক ব্যক্তি সাদিক হতে পারে না। কারণ সে মুখে ঈমান প্রকাশ করে অথচ মনে বিশ্বাস নেই। অর্থাৎ তার বিশ্বাসের সাথে মুখের কথার মিল নেই। তাই সে সাদিক নয়, বরং কাযিব (মিথ্যুক)।
তদ্রূপ যে ব্যক্তি আমল করে মানুষকে দেখানোর জন্য, সেও সাদিক নয়। কেননা সে বাহ্যত আল্লাহর জন্য ইবাদত করছে বলে বোঝাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা করছে মানুষের জন্য। মানুষ তাকে আবেদ বলবে সেজন্য। বোঝা গেল আমলে সাদিক হওয়ার জন্য অন্তরে ইখলাস থাকা জরুরি।
যে ব্যক্তি কথা, কর্ম ও বিশ্বাসে সাদিক অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে সর্বদা সত্য-নিষ্ঠার পরিচয় দেয়, কখনও মিথ্যা বলে না, রিয়া পরিহার করে চলে এবং সর্বাবস্থায় মুনাফিকী-শঠতা থেকে দূরে থাকে, সেই প্রকৃত সাদিক ও সত্যবাদী। মূলত এরূপ চরিত্রের লোককে সিদ্দীক বলা হয়ে থাকে।
'সিদক'-এর সম্পর্ক যেহেতু কথা, কর্ম ও বিশ্বাস সবকিছুর সাথে তথা মানুষের সমগ্র জীবনের সাথে, সেহেতু ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটা ইসলামের অন্যতম প্রধান চারিত্ৰিক শিক্ষা। সমস্ত নবী-রাসূলগন এ গুণের সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের আগেও একজন সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার জাতি তাঁকে 'সাদিক' উপাধিতে ভূষিত করেছিল। বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের দৃষ্টিতে তাঁর নবুওয়াতপূর্ব জীবনের সত্যবাদিতা তাঁর নবুওয়াত দাবির সত্যতার পক্ষে অনেক বড় দলীল। নবুওয়াত লাভের পর তিনি মানুষকে যেসকল বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সংগে শিক্ষাদান করতেন, সিদক ও সত্যবাদিতাও তার একটি। কুরআন মাজীদের বহু আয়াতে এর প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। এর গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে আছে বহু হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু হাদীছ উল্লেখ করেছেন। তার আগে ভূমিকাস্বরূপ কয়েকটি আয়াত পেশ করেছেন। আমরা প্রথমে আয়াতসমূহের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি।
সিদক ও সততা সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119)} [التوبة: 119]
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। তাওবাঃ ১১৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগে তাবুক যুদ্ধের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা আছে। এ যুদ্ধের সফর হয়েছিল হিজরী ৯ম সালে প্রচণ্ড গরমের মওসুমে। তখন খেজুর পাকারও মওসুম ছিল। আবার গন্তব্যস্থল ছিল বহুদূরে। তাও প্রচণ্ড শক্তিমান রোমক বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাই বেশিরভাগ মুনাফিক নানান বাহানায় এ যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত থাকে। আলস্যবশত কয়েকজন খাঁটি মু'মিনও পিছিয়ে থেকেছিলেন। হযরত কা'ব রাযি, তাদের অন্যতম। পূর্বে তাওবা অধ্যায়ে তাঁর ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক থেকে ফেরার পর তিনি তাঁর কাছে কোনও মিথ্যা অজুহাত পেশ না করে সত্য প্রকাশ করেছিলেন। অকপটে স্বীকার করেছিলেন, কেবল অলসতাবশেই তার যুদ্ধে যাওয়া হয়নি। যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে সামাজিক বয়কটের কী কঠিন শাস্তি তাঁকে ভোগ করতে হয়েছিল, পূর্বোক্ত বর্ণনায় তা বিবৃত হয়েছে। কিন্তু সত্য বলার পুরস্কারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমার ঘোষণা পেয়ে যান। তাঁর সে ক্ষমার সনদ কুরআন মাজীদের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তা পাঠ করতে থাকবে এবং এই মহান সাহাবীর প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে যাবে। আখিরাতের অফুরন্ত পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়ায় অগণিত মানুষের কাছে ভক্তি-শ্রদ্ধার সাথে চিরঞ্জীব হয়ে থাকার মহাপুরস্কার তিনি লাভ করেছেন কেবলই সত্য বলার বদৌলতে। সন্দেহ নেই কঠিন পরিস্থিতির ভেতর অকপট সত্য বলা কেবল তাকওয়ার কারণেই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। তাই এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সকল মুমিনকে লক্ষ্য করে হুকুম দিচ্ছেন, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সংগে থাক। তাকওয়া অবলম্বন করলে সত্য বলা সহজ হবে। আর সত্যবাদীদের সংগে থাকলে অন্তরে তাকওয়া বদ্ধমূল হবে। সত্য বলা মু'মিনের শান। সত্য মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। সত্যবাদীর জন্য রয়েছে আখিরাতের মহাপুরস্কার। সেই সংগে সত্যবাদী ব্যক্তি দুনিয়ায়ও ইজ্জত-সম্মান লাভ করে। তার প্রতি মানুষের আস্থা জন্মায়। মানুষ তাকে বিশ্বাস করে। তার সাথে লেনদেন করতে ভরসা পায়। যে-কোনও কথা তার সাথে নিশ্চিন্তে বলতে পারে। তার কথাও গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে। ফলে তার পার্থিব জীবনযাপন অনেক সহজ হয়। দোজাহানের এতসব প্রাপ্তি যেই 'সিদক'-এর সংগে জড়িত, কোনও অবস্থায়ই তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়। যাতে তা পরিত্যাগ করা না হয় এবং সদা সত্য বলা যায় ও সৎ জীবন যাপন করা হয়, সেজন্যই তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ।
সাদিকীনের সাহচর্য গ্রহণের জরুরত
যারা প্রকৃত মুত্তাকী তাদের সাহচর্য অবলম্বন করলে অর্থাৎ তাদের সাথে চলাফেরা করলে ও তাদের কাছে যাতায়াত করলে অন্তরে তাকওয়ার গুণ জন্মায়। যারা সাদিক তারাই মুত্তাকী, কিংবা বলুন মুত্তাকীগণই সাদিক। তাদের সাথে চলাফেরা করলে তাদের গুণও অন্তরে এসে যাবে। সাহচর্যের কিছু না কিছু প্রভাব থাকেই। তাই তো মানুষের মুখে মুখে চালু আছে, সৎসংগে স্বর্গবাস। আমরা বলব, জান্নাতবাস। মুত্তাকীর ঠিকানা জান্নাত। তার সংগে যে চলবে তার ঠিকানাও জান্নাত হবে বৈকি। তা হবে তার গুণ অর্জনের মাধ্যমে, সিদক ও সত্যতা যার একটি।
কুরআন মাজীদের হুকুম কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের প্রতি। এ আয়াতে যখন বলা হয়েছে সাদিকীনের সাহচর্য অবলম্বন কর, তখন বোঝা যাচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত সাদিকীনের জামাত থাকবে। কাজেই যারা তাকওয়া অবলম্বন করতে চায়, সাদিকীনের সাহচর্যে থেকে নিজের জীবন বদলাতে চায় এবং সিদক ও তাকওয়ার গুনে নিজেকে গুণান্বিত করতে চায়, তাদের কর্তব্য সাদিকীন খুঁজে নেওয়া। খুঁজলে অবশ্যই পাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত সাদিকীনের সাহচর্যে থাকার তাওফীক দান করুন।
শিক্ষা
ক. এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় সাহচর্য অবশ্যই তাছীর ও প্রভাব রাখে।
খ. নিজের জীবনে তাকওয়া ও সিদকের গুণ আনয়নের লক্ষ্যে প্রত্যেকের উচিত মুত্তাকী ও সাদিকীনের সাহচর্য অবলম্বন করা ।
দুই নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
{وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ} [الأحزاب: 35]
এবং সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারীগণ। আহযাবঃ ৩৫
ব্যাখ্যা
এটি সূরা আহযাবের একটি দীর্ঘ আয়াতের অংশবিশেষ। আখিরাতে যারা আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কারের অধিকারী হবে, তাদের কি কি গুণের অধিকারী হওয়া জরুরি, এ আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে একটি হল সততা ও সত্যবাদিতা। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, আখিরাতে আল্লাহ তা'আলার কাছে মাগফিরাত লাভই প্রত্যেক মুমিনের পরম লক্ষ্য। যে ব্যক্তি মাগফিরাত লাভ করবে, কেবল সেই জান্নাতে যাবে এবং তার কল্পনাতীত নিআমত ভোগ করবে। জান্নাত ও তার নিআমতসমূহই আল্লাহর পক্ষ থেকে নেক বান্দার মহাপুরস্কার। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে সেই মহাপুরস্কার দেওয়ার কথা বলে উৎসাহ যোগাচ্ছেন, যেন সে অবশ্যই এ আয়াতে বর্ণিত সত্যবাদিতাসহ অন্যান্য গুণ অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তা অর্জনের তাওফীক দান করুন।
শিক্ষা
ক. মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের জন্য সত্যবাদিতার গুণ অর্জন করা জরুরি।
খ. এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় পুরস্কার ঘোষণা মানুষকে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করার পক্ষে সহায়ক। বলা যায় এটা ভালো কাজে উৎসাহদানের কুরআনী পন্থা।
তিন নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
{طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَعْرُوفٌ فَإِذَا عَزَمَ الْأَمْرُ فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ (21)} [محمد: 21]
অর্থ : তখন যদি তারা আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতার পরিচয় দিত, তবে তাদের জন্য ভালো হত। মুহাম্মাদঃ ২১
ব্যাখ্যা
মুনাফিকরা আল্লাহর সংগেও মিথ্যাচার করত। সবকিছুতে শঠতা প্রদর্শন করত। মনে যা থাকত, মুখে বলত তার বিপরীত কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগেও প্রতারণা করত। প্রকাশ্যে দেখাত তারা যেন তাঁর কত খাঁটি অনুসারী। প্রকৃতপক্ষে ছিল ঘোর বিরোধী। তাদের লক্ষ্য করে এ আয়াতে বলা হয়েছে, তারা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সংগে সততা অবলম্বন করত, মিথ্যাচার ও শঠতা পরিহার করে অকৃত্রিম আচরণ করত, তবে তাদের পক্ষে কতই না মঙ্গলজনক হত। কিন্তু তা না করায় তারা কেবল মঙ্গল থেকেই বঞ্চিত নয়, দুনিয়া ও আখিরাতে নিজেদের চরম লাঞ্ছনায়ও নিক্ষেপ করছে।
এ আয়াতে মূলত মুনাফিকদের অবস্থা তুলে ধরে মুমিনদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন কোনও অবস্থায়ই মিথ্যাচার ও কপটতায় লিপ্ত না হয়। যেন সদা সত্য কথা বলে ও সৎপথে চলে। অন্যথায় মুনাফিকদের অনুরূপ পরিণতি তাদেরও ভোগ করতে হবে।
শিক্ষা
ক. মিথ্যাচার ও শঠতা মুনাফিকদের চরিত্র। মু'মিনদের তা থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
খ. দুষ্টলোকের দুষ্কর্মের উল্লেখও নসীহতের একটি পন্থা। মানুষকে সৎকাজে অনুপ্রাণিত করার পক্ষেও তা বেশ উপকারী।
৫৪। সিদ্ক ও সততা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীছ ; সত্যবাদিতার সুফল ও মিথ্যাচারের কুফল
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সত্যবাদিতা নেককাজের পথ দেখায়। আর নেককাজ জান্নাতে পৌঁছায়। ব্যক্তি সত্যকথা বলতে থাকে, এমনকি একসময় সে আল্লাহর কাছে 'সিদ্দীক' নামে লিখিত (অভিহিত) হয়। অন্যদিকে মিথ্যাবাদিতা পাপাচারের পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে পৌঁছায়। ব্যক্তি মিথ্যাচার করতে থাকে। অবশেষে আল্লাহর কাছে সে 'কায্যাব' (মহামিথ্যুক) নামে লিখিত (অভিহিত) হয় - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬০৯৪, মুসলিম হাদীস নং ২৬০৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সত্যবাদিতা নেককাজের পথ দেখায়। আর নেককাজ জান্নাতে পৌঁছায়। ব্যক্তি সত্যকথা বলতে থাকে, এমনকি একসময় সে আল্লাহর কাছে 'সিদ্দীক' নামে লিখিত (অভিহিত) হয়। অন্যদিকে মিথ্যাবাদিতা পাপাচারের পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে পৌঁছায়। ব্যক্তি মিথ্যাচার করতে থাকে। অবশেষে আল্লাহর কাছে সে 'কায্যাব' (মহামিথ্যুক) নামে লিখিত (অভিহিত) হয় - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬০৯৪, মুসলিম হাদীস নং ২৬০৭)
مقدمة الامام النووي
4 - باب الصدق
54 - فالأول: عن ابن مسعود - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّ الصِّدقَ يَهْدِي إِلَى البرِّ، وإنَّ البر يَهدِي إِلَى الجَنَّةِ، وإنَّ الرَّجُلَ لَيَصدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا. وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكتَبَ عِنْدَ الله كَذَّابًا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৫৫
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৪ সিদ্ক ও সততা।
৫৫। সত্য ও মিথ্যার আত্মিক আলামত
হযরত হাসান ইবনে আলী ইবন আবী তালিব রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (তাঁর এই বাণী) স্মরণ রেখেছি যে, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে তা বর্জন করে যা খটকা সৃষ্টি করে না তাতে মগ্ন হও। কেননা সত্য (অন্তরের পক্ষে) স্বস্তিদায়ক আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী – তিরমিযী। (হাদীস নং ২৫১৮)
হযরত হাসান ইবনে আলী ইবন আবী তালিব রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (তাঁর এই বাণী) স্মরণ রেখেছি যে, যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে তা বর্জন করে যা খটকা সৃষ্টি করে না তাতে মগ্ন হও। কেননা সত্য (অন্তরের পক্ষে) স্বস্তিদায়ক আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী – তিরমিযী। (হাদীস নং ২৫১৮)
مقدمة الامام النووي
4 - باب الصدق
55 - الثاني: عن أبي محمد الحسن بنِ عليِّ بن أبي طالب رضي الله عنهما، قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ؛ فإنَّ الصِّدْقَ طُمَأنِينَةٌ، وَالكَذِبَ رِيبَةٌ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث صحيح».
قوله: «يَريبُكَ» هُوَ بفتح الياء وضمها: ومعناه اتركْ مَا تَشُكُّ في حِلِّهِ وَاعْدِلْ إِلَى مَا لا تَشُكُّ فِيهِ.
قوله: «يَريبُكَ» هُوَ بفتح الياء وضمها: ومعناه اتركْ مَا تَشُكُّ في حِلِّهِ وَاعْدِلْ إِلَى مَا لا تَشُكُّ فِيهِ.
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৬
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৪ সিদ্ক ও সততা।
৫৬। সত্যবাদিতা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম প্রধান মৌলিক শিক্ষা:
হযরত আবু সুফয়ান ছখর ইবনে হারব রাযি. থেকে একটি সুদীর্ঘ হাদীছ বর্ণিত আছে। হাদীছটি (রোম সম্রাট) হিরাকলের (কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতী চিঠি পাঠানোকে কেন্দ্র করে তার) সাথে তাঁর সাক্ষাতকার সম্পর্কিত। (হিরাকল তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন এবং তিনি তার জবাব দিয়েছিলেন। তার অংশবিশেষ এরকম-) হিরাকল বললেন, তিনি (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কী নির্দেশ দেন? আবু সুফয়ান বলেন, আমি বললাম, তিনি বলে থাকেন- তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কোনও কিছুকে শরীক করো না। তোমাদের বাপ-দাদাগণ যা বলে তা পরিত্যাগ কর। আর তিনি আমাদেরকে সালাত, সিদক (সততা ও সত্যবাদিতা), আফাফ (সংযম ও শুচিতা) ও আত্মীয়তা রক্ষার নির্দেশ দেন- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ০৭, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৭৩)
হযরত আবু সুফয়ান ছখর ইবনে হারব রাযি. থেকে একটি সুদীর্ঘ হাদীছ বর্ণিত আছে। হাদীছটি (রোম সম্রাট) হিরাকলের (কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতী চিঠি পাঠানোকে কেন্দ্র করে তার) সাথে তাঁর সাক্ষাতকার সম্পর্কিত। (হিরাকল তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন এবং তিনি তার জবাব দিয়েছিলেন। তার অংশবিশেষ এরকম-) হিরাকল বললেন, তিনি (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কী নির্দেশ দেন? আবু সুফয়ান বলেন, আমি বললাম, তিনি বলে থাকেন- তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কোনও কিছুকে শরীক করো না। তোমাদের বাপ-দাদাগণ যা বলে তা পরিত্যাগ কর। আর তিনি আমাদেরকে সালাত, সিদক (সততা ও সত্যবাদিতা), আফাফ (সংযম ও শুচিতা) ও আত্মীয়তা রক্ষার নির্দেশ দেন- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ০৭, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৭৩)
مقدمة الامام النووي
4 - باب الصدق
56 - الثالث: عن أبي سفيانَ صَخرِ بنِ حربٍ - رضي الله عنه - في حديثه الطويلِ في قصةِ هِرَقْلَ (1)، قَالَ هِرقلُ: فَمَاذَا يَأَمُرُكُمْ - يعني: النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ أبو سفيانَ: قُلْتُ: يقولُ: «اعْبُدُوا اللهَ وَحدَهُ لا تُشْرِكوُا بِهِ شَيئًا، وَاتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ، ويَأْمُرُنَا بالصَلاةِ، وَالصِّدْقِ، والعَفَافِ، وَالصِّلَةِ» (2) مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (3)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৫৭
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৪ সিদ্ক ও সততা।
৫৭। সত্যমনে শাহাদাত প্ৰাৰ্থনাঃ
হযরত সাহল ইবন হুনায়ফ রাযি. থেকে- যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন- বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সত্যমনে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মারা যায়- মুসলিম।' (হাদীস নং ১৯০৯)
হযরত সাহল ইবন হুনায়ফ রাযি. থেকে- যিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন- বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সত্যমনে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মারা যায়- মুসলিম।' (হাদীস নং ১৯০৯)
مقدمة الامام النووي
4 - باب الصدق
57 - الرابع: عن أبي ثابت، وقيل: أبي سعيد، وقيل: أبي الوليد، سهل ابن حُنَيْفٍ وَهُوَ بدريٌّ (1) رضي الله عنه: أنَّ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ سَأَلَ اللهَ تَعَالَى الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ». (2) رواه مسلم. (3)
হাদীস নং: ৫৮
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৪ সিদ্ক ও সততা।
৫৮। অসততার কুফল:
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও এক নবী যুদ্ধযাত্রা করলেন। (যাত্রার আগে) তিনি নিজ কওমকে বললেন, আমার সংগে যেন না যায় ওই ব্যক্তি, যে কোনও মহিলাকে বিবাহ করেছে আর সে তার সংগে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার সাথে মিলিত হয়নি। এবং এমন কোনও ব্যক্তি, যে কোনও ঘর নির্মাণ করেছে কিন্তু এখনও তার ছাদ তোলেনি। এবং এমন কোনও ব্যক্তি, যে গর্ভবতী ছাগল বা উট ক্রয় করেছে আর সে তার বাচ্চার অপেক্ষায় আছে। তারপর তিনি যুদ্ধে গেলেন। তিনি (উদ্দিষ্ট) জনপদের নিকটে পৌঁছলেন আসরের নামাযকালে বা তার কাছাকাছি সময়ে। তখন সূর্যকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, তুমি (আল্লাহর আদেশে) আদিষ্ট এবং আমিও (তাঁর) আদেশপ্রাপ্ত। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য একে আটকে রাখুন। সুতরাং সূর্যকে আটকে রাখা হল, যাবত না আল্লাহ তাঁকে জয়যুক্ত করলেন। তারপর তিনি গনীমতের মাল একত্র করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য আগুন আসল। কিন্তু আগুন তা গ্রাস করল না। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে কোনও খেয়ানত হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক গোত্র থেকে একেক ব্যক্তি আমার হাতে বাইআত করুক। এক পর্যায়ে এক ব্যক্তির হাত তাঁর হাতে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই খেয়ানত হয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্র আমার হাতে হাত রাখুক। (তারা একেকজন করে তার হাতে হাত রাখল)। তাতে তাদের দু'জন বা তিনজন লোকের হাত তার হাতে আটকে গেল। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই খেয়ানত হয়েছে। সুতরাং (খেয়ানতকারী ব্যক্তি) গরুর মাথার মত সোনার একটি মাথা নিয়ে আসল এবং তা (গনীমতের অন্যান্য মালের মধ্যে) রাখল। অমনি আগুন এসে তা গ্রাস করল। আমাদের আগে আর কারও জন্য গনীমতের মাল হালাল ছিল না। আল্লাহ তা'আলা গনীমতের মাল আমাদের জন্য হালাল করেছেন। তিনি তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন আমাদের দূর্বলতা ও অক্ষমতার দিকে লক্ষ করে - বুখারী ও মুসলিম । (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩১২৪, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৪৭)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও এক নবী যুদ্ধযাত্রা করলেন। (যাত্রার আগে) তিনি নিজ কওমকে বললেন, আমার সংগে যেন না যায় ওই ব্যক্তি, যে কোনও মহিলাকে বিবাহ করেছে আর সে তার সংগে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার সাথে মিলিত হয়নি। এবং এমন কোনও ব্যক্তি, যে কোনও ঘর নির্মাণ করেছে কিন্তু এখনও তার ছাদ তোলেনি। এবং এমন কোনও ব্যক্তি, যে গর্ভবতী ছাগল বা উট ক্রয় করেছে আর সে তার বাচ্চার অপেক্ষায় আছে। তারপর তিনি যুদ্ধে গেলেন। তিনি (উদ্দিষ্ট) জনপদের নিকটে পৌঁছলেন আসরের নামাযকালে বা তার কাছাকাছি সময়ে। তখন সূর্যকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, তুমি (আল্লাহর আদেশে) আদিষ্ট এবং আমিও (তাঁর) আদেশপ্রাপ্ত। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য একে আটকে রাখুন। সুতরাং সূর্যকে আটকে রাখা হল, যাবত না আল্লাহ তাঁকে জয়যুক্ত করলেন। তারপর তিনি গনীমতের মাল একত্র করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য আগুন আসল। কিন্তু আগুন তা গ্রাস করল না। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে কোনও খেয়ানত হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক গোত্র থেকে একেক ব্যক্তি আমার হাতে বাইআত করুক। এক পর্যায়ে এক ব্যক্তির হাত তাঁর হাতে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই খেয়ানত হয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্র আমার হাতে হাত রাখুক। (তারা একেকজন করে তার হাতে হাত রাখল)। তাতে তাদের দু'জন বা তিনজন লোকের হাত তার হাতে আটকে গেল। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই খেয়ানত হয়েছে। সুতরাং (খেয়ানতকারী ব্যক্তি) গরুর মাথার মত সোনার একটি মাথা নিয়ে আসল এবং তা (গনীমতের অন্যান্য মালের মধ্যে) রাখল। অমনি আগুন এসে তা গ্রাস করল। আমাদের আগে আর কারও জন্য গনীমতের মাল হালাল ছিল না। আল্লাহ তা'আলা গনীমতের মাল আমাদের জন্য হালাল করেছেন। তিনি তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন আমাদের দূর্বলতা ও অক্ষমতার দিকে লক্ষ করে - বুখারী ও মুসলিম । (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩১২৪, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৪৭)
مقدمة الامام النووي
4 - باب الصدق
58 - الخامس: عن أبي هريرةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «غَزَا نبيٌّ مِنَ الأنْبِياءِ - صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلاَمُهُ عَلَيْهمْ - فَقَالَ لِقَومهِ: لا يَتْبَعَنِّي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ (1) امْرَأةٍ وَهُوَ يُريدُ أَنْ يَبْنِي بِهَا وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا، وَلا أحَدٌ بَنَى بُيُوتًا لَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا، وَلا أحَدٌ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ أَوْلادَها (2). فَغَزا فَدَنَا مِنَ القَرْيَةِ صَلاةَ العَصْرِ أَوْ قَريبًا مِنْ ذلِكَ، فَقَالَ لِلشَّمْسِ: إِنَّكِ مَأمُورَةٌ وَأنَا مَأمُورٌ، اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا، فَحُبِسَتْ (3) حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَيهِ، فَجَمَعَ الغَنَائِمَ فَجَاءتْ - يعني النَّارَ - لِتَأكُلَهَا (4) فَلَمْ تَطعَمْها، فَقَالَ: إنَّ فِيكُمْ غُلُولًا (5)، فَلْيُبايعْنِي مِنْ كُلِّ قَبِيلَةٍ رَجُلٌ، فَلَزِقَتْ (6) يَدَ رَجُلٍ بِيَدِهِ فَقَالَ: فِيكُمُ الغُلُولُ فَلتُبَايِعْنِي قَبِيلتَكَ، فَلَزقَت يَدُ رَجُلَين أو ثَلاَثة بيده، فقال: فيكم الغُلُولَ، فَجَاؤُوا بِرَأْس مثلِ رَأسِ بَقَرَةٍ مِنَ الذَّهَبِ، فَوَضَعَهَا فَجَاءَت النَّارُ فَأكَلَتْها. فَلَمْ تَحلَّ الغَنَائِمُ لأحَدٍ قَبْلَنَا، ثُمَّ أحَلَّ الله لَنَا الغَنَائِمَ لَمَّا رَأَى ضَعْفَنا وَعَجْزَنَا فَأحَلَّهَا لَنَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (7)
«الخَلِفَاتُ» بفتحِ الخَاءِ المعجمة وكسر اللامِ: جمع خِلفة وهي الناقة الحامِل.
«الخَلِفَاتُ» بفتحِ الخَاءِ المعجمة وكسر اللامِ: جمع خِلفة وهي الناقة الحامِل.
হাদীস নং: ৫৯
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ অধ্যায় : ৪ সিদ্ক ও সততা।
৫৯। অসততা দ্বারা উপার্জনের বরকত নষ্ট হয়ঃ
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত- যিনি মক্কাবিজয়ের বছর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং যাঁর পিতা জাহিলী ও ইসলামী যুগে কুরায়শের একজন নেতা ছিলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতার (বেচাকেনা বাতিল করে দেওয়ার) এখতিয়ার থাকে, যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়। যদি তারা উভয়ে সত্য বলে এবং (মালামাল সম্পর্কে) স্পষ্ট কথা বলে, তবে তাদের বেচাকেনায় বরকত দেওয়া হয়। আর যদি গোপন করে ও মিথ্যা বলে, তবে তাদের বেচাকেনার বরকত নষ্ট করে দেওয়া হয়- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ২০৭৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৫৩২)
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত- যিনি মক্কাবিজয়ের বছর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং যাঁর পিতা জাহিলী ও ইসলামী যুগে কুরায়শের একজন নেতা ছিলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতার (বেচাকেনা বাতিল করে দেওয়ার) এখতিয়ার থাকে, যতক্ষণ না তারা পরস্পর পৃথক হয়। যদি তারা উভয়ে সত্য বলে এবং (মালামাল সম্পর্কে) স্পষ্ট কথা বলে, তবে তাদের বেচাকেনায় বরকত দেওয়া হয়। আর যদি গোপন করে ও মিথ্যা বলে, তবে তাদের বেচাকেনার বরকত নষ্ট করে দেওয়া হয়- বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ২০৭৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৫৩২)
مقدمة الامام النووي
4 - باب الصدق
59 - السادس: عن أبي خالد حَكيمِ بنِ حزامٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «البَيِّعَانِ بالخِيَار (1) مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، فَإنْ صَدَقا وَبيَّنَا بُوركَ لَهُمَا في بيعِهمَا، وإنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بركَةُ بَيعِهِما». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
তাহকীক:
হাদীস নং: ৬০
ভূমিকা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ মুরাকাবার অর্থ, ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব
'মুরাকাবা' অর্থ অন্তরে এই ধ্যান করা যে, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতিটি কথা শোনেন, প্রতিটি কাজ দেখেন এবং আমার অন্তরের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা ও আকীদা-বিশ্বাস জানেন। এটা 'ইহসান'-এর একটি স্তর। ইহসান সম্পর্কে সামনে এ অধ্যায়ের প্রথম হাদীছে আলোচনা আসছে।
এমনিতে তো প্রত্যেক মুমিনের এ বিশ্বাস আছে যে, মানুষের প্রকাশ্য-গুপ্ত কোনও কাজই আল্লাহর অগোচরে থাকে না। সে যখন যেখানে থাকে, আল্লাহ তার সংগে থাকেন। অর্থাৎ তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন ও তার সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন। সে চোরাচোখে কী দেখছে তাও তিনি দেখেন। মনের গভীরে কী কল্পনা করছে তাও জানেন। দু'জনে পরস্পর কী কানাকানি করছে তাও শোনেন। কারও পক্ষেই তাঁর থেকে কোনও কিছু লুকানো সম্ভব নয়। তাঁর অগোচরে কিছু করবে সে সাধ্য কারও নেই। তিনি যখন সব শোনেন ও জানেন, তখন বান্দার কোনও কিছুই তিনি বৃথা যেতে দেবেন না। তিনি সর্বশক্তিমান। সকলকে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। যেদিন সকলে তাঁর সামনে হাজির হবে, সেদিন তিনি প্রত্যেককে তার যাবতীয় কাজ দেখিয়ে দেবেন। সবকিছুর হিসাব নেবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ কাজের জন্য তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তখন আপন আপন কাজের জন্য যার যা প্রাপ্য, তিনি তা পুরোপুরি দান করবেন। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দেবেন ও মন্দ কাজের বিনিময়ে শাস্তিদান করবেন। এ বিশ্বাস তো প্রত্যেকের আছে, কিন্তু সর্বদা তা অন্তরে জাগ্রত থাকে না। তার মন পড়ে থাকে ইহজাগতিক নানা দৌড়ঝাপ ও ব্যতিব্যস্ততার দিকে। তার পরলৌকিক বিশ্বাস চাপা পড়ে থাকে সেই চিন্তা-ভাবনার নিচে। ফলে তার পক্ষে তার জাগতিক কর্মকাণ্ড পারলৌকিক বিশ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সে হয়ে পড়ে নিজ খেয়াল-খুশির অধীন। হয়ে যায় ইন্দ্রিয়পরবশ। এতে তার পরকালীন জীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ইহজীবনও নষ্ট-ভ্রষ্ট হয়ে যায়। সে এক অপূরণীয় ক্ষতি। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যেই মুরাকাবার ব্যবস্থা। বান্দা যদি প্রতিটি কথায় ও কাজে আল্লাহর প্রতি ধ্যান রাখে আর চিন্তা করে- আমি কী বলছি তিনি শুনছেন এবং কী করছি তা তিনি দেখছেন, তবে সে অবশ্যই শরীআতের গণ্ডির ভেতর থাকার চেষ্টা করবে। কেবল সেই কথাই বলবে, যা আল্লাহর মর্জি মোতাবেক হয় এবং এমন কাজই করবে, যা দ্বারা তাঁর সন্তষ্টি লাভ হয়।
মুরাকাবার প্রয়োজন যেমন শরীআতের গণ্ডির ভেতর থাকার জন্য, তেমনি প্রয়োজন শরীআত মোতাবেক কাজে ইখলাস আনয়নের জন্য। অর্থাৎ পাপ কাজ থেকে বাঁচা ও নেকীর কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, উভয়ের জন্যই মুরাকাবা দরকার। যখন যেই কথা ও কাজ সামনে আসে, তখন অন্তরে আল্লাহর ধ্যান থাকলে একদিকে এই চেষ্টা করা সম্ভব হয় যে, সে কথায় ও কাজে যাতে কোনও পাপ না হয়। সে কথা ও কাজটি পাপের হয়ে থাকলে আল্লাহর ভয়ই তাকে তা থেকে বিরত রাখে। এভাবে মুরাকাবা দ্বারা পাপ থেকে বাঁচা যায়। তেমনি যখন কোনও নেক কাজ করা হয়, তা নামায-রোয়া দান- সদাকা যাই হোক না কেন, মুরাকাবার সাথে করলে তা ইখলাসের সংগে করা হয়। কারণ বান্দা যখন চিন্তা করবে, আমার নামায আল্লাহ তাআলা দেখছেন, যেমন জাহের দেখছেন তেমনি এর বাতেনও দেখছেন, তখন সে অন্তর থেকে রিয়া ও লোকদেখানোর মানসিকতা ঝেড়ে ফেলবে। কারণ মনের ভেতর রিয়া থাকলে তাও তো আল্লাহ দেখেন। এ অবস্থায় সে নামায আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কাজেই আল্লাহর কাছে যাতে কবুল হয়, সেই লক্ষ্যে সে মানুষকে দেখানো ও সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করার জন্যই নামায পড়বে। সেইসংগে নামায পড়বে পরম যত্নের সাথে, যাতে ফরয-ওয়াজিব তো অবশ্যই, সেইসংগে সুন্নত-মুস্তাহাবও যেন যথাযথভাবে আদায় হয়। সে ভাড়াহুড়া করবে না। দায়সারাগোছে নামায পড়বে না। বরং যথাসাধ্য সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নামায আদায়ের চেষ্টা করবে। এমনিভাবে অন্যান্য ইবাদতও সে ইখলাসের সংগে সুন্নত সম্মতভাবে আঞ্জাম দেবে। এমনকি দুনিয়ারী কাজকর্মও সুন্নত তরিকায় করতে সচেষ্ট থাকবে। ফলে তার জাগতিক কাজকর্মও ইবাদতে পরিণত হয়ে যাবে। এটা মুরাকাবার সুফল যে, এর মাধ্যমে বান্দার গোটা জীবনই বন্দেগীর জীবন হয়ে যায়। তার বাহ্যিক ও আত্মিক এবং ব্যবহারিক ও নৈতিক সবরকম উৎকর্ষ এর মাধ্যমে সাধিত হয়।
সুতরাং জীবনে শুদ্ধতা ও সুস্থতা আনয়নের জন্য মুরাকাবা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদীসে এর প্রতি বিশেষ তাকীদ এসেছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে যথাক্রমে তার অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি।
মুরাকাবা সম্পর্কিত আয়াতসমূহ
এক নং আয়াত
{الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ (218) وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ (219)} [الشعراء: 218، 219]
অর্থঃ যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (ইবাদতের জন্য) দাঁড়াও। এবং দেখেন সিজদাকারীদের মধ্যে তোমার যাতায়াতকেও। শুআরাঃ ২১৮-১৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগের আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি আাসাল্লামকে তাঁর প্রতি নির্ভরশীল থাকার হুকুম দিয়েছেন। তারপর বলছেন- তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দাঁড়াও। এখানে দাঁড়ানোর এক অর্থ হতে পারে মানুষকে তাওহীদের দিকে ডাকা ও আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হওয়া। সেই হিসেবে এর দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্বস্ত করা উদ্দেশ্য যে, দাওয়াত ও জিহাদী তৎপরতায় বিরুদ্ধবাদীদের বিরোধিতাকে আপনি পরোয়া করবেন না। আল্লাহ আপনার প্রতি লক্ষ রাখছেন। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন এবং শত্রুদের শত্রুতা থেকে আপনাকে রক্ষা করবেন।
দাঁড়ানোর আরেক অর্থ হতে পারে নামাযে দাঁড়ানো। অর্থাৎ যখন আপনি নামাযে দাঁড়ান, তখন তিনি আপনার প্রতি লক্ষ রাখেন। অর্থাৎ আপনার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল ছিল নামায। তিনি যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন নিজ দেহমন তথা গোটা অস্তিত্বকে আল্লাহর অভিমুখী ও তাঁর জন্য নিবেদন করতেন। আল্লাহর ইবাদতের হক আদায় তো কারও পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে নিষ্ঠা ও অভিনিবেশের যতটা উচ্চতায় পৌঁছা সম্ভব, সেখানে পৌঁছা কেবল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। প্রিয় হাবীবের প্রিয় ইবাদতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সে অভিনিবেশকালে আল্লাহ তা'আলার কী রহমত দৃষ্টি তাঁর উপর পড়েছিল, তা আমাদের পক্ষে কতটুকুই বা অনুমান করা সম্ভব?
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে একথা বলার দ্বারা তাঁর উম্মতকেও বোঝানো হতে পারে যে, তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তিনি লক্ষ রাখেন। তিনি লক্ষ রাখেন, তারা কেমন নামায পড়ছে, তাতে কতটুকু ইখলাস আছে এবং তা কতটা বিশুদ্ধ ও সুন্দরভাবে আদায় করছে। লক্ষ রাখার এক অর্থ কবুল করাও হতে পারে। অর্থাৎ বান্দা যখन নামায পড়ে, আল্লাহ তা দেখেন, তার মূল্য দেন ও তা গ্রহণ করে নেন।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে–এবং দেখেন সিজদাকারীদের মধ্যে তোমার উঠাবসা। সিজদাকারী বলতে নামাযী বোঝানো হয়েছে। দাঁড়ানো, রুকু করা ও সিজদা দেওয়া নামাযের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই এর প্রত্যেকটি দ্বারা সম্পূর্ণ নামায বোঝানো হয়ে থাকে।
আগের আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাকী নামাযের কথা হয়েছিল যে, আল্লাহ তা'আলা তা দেখেন। খুব সম্ভব তা দ্বারা নফল নামায বিশেষত তাহাজ্জুদের নামায বোঝানো হয়েছে। আর এ আয়াতে সিজদাকারীদের সাথে তার নামায অর্থাৎ জামাতে ফরয নামায আদায়ের কথা বোঝানো হয়েছে। এর দ্বারা বিশেষভাবে জামাতে নামায আদায়ের গুরুত্ব বোঝা যায়। ফরয নামায জামাতে আদায় করা জরুরি। কুরআন মাজীদে ফরয নামায আদায়ের বিষয়টা যেভাবে ব্যক্ত হয়েছে, তা দ্বারা কেবল জামাতবদ্ধ নামাযই বোঝা যায়। অর্থাৎ কুরআন মাজীদের ভাষায় প্রকৃষ্ট ফরয নামায যেন সেটাই, যা জামাতের সাথে আদায় করা হয়। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে যে জামাতের সাথে নামায পড়তেন, এ আয়াত বলছে আল্লাহ তা দেখেন। অর্থাৎ তিনি তাতে খুশি হন ও সমাদরে গ্রহণ করেন।
সহীহ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতে নামায পড়ার সময় আল্লাহ তাআলার কুদরতে পেছন দিকেও দেখতে পেতেন। সাহাবায়ে কিরাম কে কিভাবে নামায পড়ছেন, তাঁরা নামাযে কতটুকু 'খুশু-খুযু' রক্ষা করছেন তা তাঁর নজরে আসত। কারও কারও মতে এ আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে যে, সালাতরত মুসল্লীদের প্রতি আপনার ইতস্তত দৃষ্টি নিক্ষেপ আল্লাহ তা'আলা দেখেন। অর্থাৎ নামায অবস্থায়ও যে আপনি তাদের তদারকি করেন এবং নবুওয়াতী দায়িত্ব পালনে সর্বাবস্থায় সচেতন ও যত্নবান থাকেন, তা আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্টির সাথে লক্ষ রাখেন।
যাহোক এ আয়াত দ্বারা মুরাকাবার শিক্ষা পাওয়া যায়। ইবাদত-বন্দেগীতে যেমন বান্দার এই ধ্যান রাখা কর্তব্য যে, আল্লাহ তা'আলা আমার মনের অবস্থাও দেখছেন এবং আমলের বাহ্যিক রূপও লক্ষ রাখছেন, তেমনি জীবনের যাবতীয় কাজকর্মে অন্তরে এই ধ্যান জাগ্রত রাখা উচিত। তাহলে তার যাবতীয় কাজ শরীআতের সীমারেখার ভেতর থাকবে। এ ধ্যান তাকে সবরকম পাপকর্ম থেকে বিরত রাখবে। যে-কোনও কাজেই সে অন্তরে ইখলাস বজায় রাখতে পারবে। অর্থাৎ সে যা-কিছুই করবে তাতে কেবল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিই হবে তার লক্ষ্যবস্তু।
দুই নং আয়াত
{وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ (4)} [الحديد: 4]
“তোমরা যেখানেই থাক, তিনি তোমাদের সাথে আছেন। হাদীদঃ ৪
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ তোমরা জলে-স্থলে, আলোতে- অন্ধকারে, প্রকাশ্যে-গোপনে যখন যেখানে যে অবস্থায়ই থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সংগে থাকেন। অর্থাৎ তোমরা তার ক্ষমতার মধ্যে থাক। তাঁর ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাক। তাঁর দৃষ্টির ভেতর থাক। এবং থাক তাঁর জ্ঞানগোচর। ফলে তোমরা কী কর ও বল, সে সম্পর্কে তিনি সদা অবহিত থাকেন, যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ (13) أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ (14)} [الملك: 13، 14]
অর্থ : তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল বা প্রকাশ্যে বল (সবই তাঁর জানা। কেননা) তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানবেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক জ্ঞাত!
তো তিনি যখন নিজ জ্ঞানশক্তির মাধ্যমে সর্বক্ষণ বান্দার সংগে থাকেন, তখন বান্দার কর্তব্য, যে-কোনও কথা ও কাজের বেলায় সেদিকে ধ্যান রাখা। অতি গোপনে কোনও কথা বলা বা কাজ করার সময় এ চিন্তা রাখা যে, আল্লাহ তো আমার সংগে আছেন। তিনি দেখছেন আমি কী করছি। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَى ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَى مِنْ ذَلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ (7)} [المجادلة: 7]
অর্থ : তুমি কি দেখনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে তা আল্লাহ জানেন? কখনও তিনজনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন এবং কখনও পাঁচজনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাআলা তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা-কিছু করত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। মুজাদালাঃ ৭
এ আয়াতে ধমক দেওয়া হয়েছে, কেউ দেখছে না মনে করে কোনও অন্যায়- অপকর্ম করলে আল্লাহর কাছে তা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। তিনি কিয়ামতের দিন অপরাধীকে তা দেখিয়ে দেবেন এবং তার উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন। সুতরাং যাই করো না কেন, আল্লাহ তা'আলাকে হাজির-নাজির জেনে কর। সেক্ষেত্রে তোমরা শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে এবং তাকে তোমাদের সংগে পাবে ও পদে পদে তাঁর সাহায্য লাভ করবে, যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ (128)} [النحل: 128]
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সাথী, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ইহসানের অধিকারী হয়। নাহলঃ ১২৮
এ আয়াত দ্বারাও মুরাকাবার শিক্ষা পাওয়া যায়। বোঝানো হচ্ছে, আল্লাহ যখন তোমাদের সংগে থাকেন তখন তোমাদের কর্তব্য পাপকাজের ক্ষেত্রে অন্তরে তাঁর শাস্তির ভয় এবং সৎকাজের ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য ও পুরস্কারের আশা রাখা। অন্তরে এই ধ্যান থাকলে সহজে পাপকাজ থেকে বাঁচতে পারবে এবং নেককাজের অনুপ্রেরণা পাবে।
তিন নং আয়াত
{إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ (5) هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (6)} [آل عمران: 5، 6]
অর্থ : নিশ্চিত জেনে রেখ, আল্লাহর কাছে কোনও জিনিস গোপন থাকতে পারেনা- পৃথিবীতেও নয় এবং আকাশেও নয়। আলু ইমরানঃ ৫
ব্যাখ্যা
আল্লাহ তাআলার কাছে আসমান-যমীনের কোনওকিছুই গোপন থাকে না এবং তা থাকতে পারে না। কেননা জগতের মৌলিক ও খুঁটিনাটি সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের ভেতর বিদ্যমান। তাঁর অজানা নেই কোনওকিছুই। যে যত গোপনেই কিছু করুক না কেন, প্রকাশ্য কাজের মতই সমানভাবে তিনি তা জানেন। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
{يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا (108)} [النساء: 108]
অর্থ : তারা মানুষের সাথে তো লজ্জা করে, কিন্তু আল্লাহর সাথে লজ্জা করে না, অথচ তারা রাতের বেলা যখন আল্লাহর অপসন্দনীয় কথা বলে তখনও তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন। তারা যা-কিছু করছে তা সবই আল্লাহর আয়ত্তে।" নিসাঃ ১০৮
আল্লাহর কাছে যখন কোনওকিছুই গোপন থাকে না, তখন বান্দার প্রতিটি কাজের বেলায় শরীআতের সীমারেখা লক্ষ রাখা চাই, যাতে আল্লাহর মর্জিবিরোধী কোনও কাজ না হয়ে যায়। এমনকি নিজ অন্তরেরও পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যাতে কোনও কাজ
রিয়া ও লোকদেখানোর মানসিকতায় করা না হয়; বরং একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তষ্টিই লক্ষ্যবস্তু হয়। এ আয়াতও আমাদেরকে মুরাকাবার শিক্ষা দিচ্ছে।
চার নং আয়াত
{إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ (14)} [الفجر: 14]
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সকলের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। ফাজরঃ ৪
ব্যাখ্যা
এটা সূরা ফাজরের আয়াত। এর আগে আল্লাহ তাআলা আদ জাতি, ছামুদ জাতি ও ফিরআওনের বৃত্তান্ত উল্লেখ করেছেন। জানানো হয়েছে যে, এ তিনও জাতি আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল। নবীর কথায় কর্ণপাত না করে সীমালঙ্ঘনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা তাদের ধ্বংস করে দেন। তাদের সে ধ্বংসকাহিনী উল্লেখ করার পর তিনি বলছেন- তোমার প্রতিপালক তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। কে কী করছে, কেন করছে তা লক্ষ রাখছেন। অতীতে যেমন চরম সীমালঙ্ঘনকারীকে কঠিন শাস্তিদান করেছেন, তেমনি তোমরাও যদি তাঁর অবাধ্যতায় সীমা ছাড়িয়ে যাও, তবে তাদের মত তোমাদেরও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। সুতরাং যা-কিছুই কর না কেন, সীমার মধ্যে থেকে কর। তিনি তোমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন। কুরআনের মাধ্যমে কর্তব্যকর্ম জানিয়ে দিয়েছেন। নবীর মাধ্যমে হিদায়াতের পথ খুলাসা করে দিয়েছেন। সেই হিদায়াতের পথে চলতে থাক। তাহলে আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাবে। গোমরাহীর পথে চলো না। আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমাদের উপর তাঁর শাস্তি নেমে আসবে।
এ আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে, আল্লাহ যখন তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন, তখন তোমাদেরও কর্তব্য, অন্তরে সেই ধ্যান জাগ্রত রেখে নিজ কাজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং নিজ উদ্দেশ্য ও নিয়তের তদারকি করা। এটাই আল্লাহর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র উপায়।
পাঁচ নং আয়াত
{يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ (19)} [غافر: 19]
অর্থ : আল্লাহ জানেন চোখের অসাধুতা এবং সেইসব বিষয়ও, যা বক্ষদেশ লুকিয়ে রাখে। গাফিরঃ ১৯
ব্যাখ্যা
যে দেখা অন্যায় ও খেয়ানত
চোখের অসাধুতা বলতে অন্যায় দেখা বোঝানো উদ্দেশ্য। শরীআত যা দেখার অনুমতি দেয় না তা দেখা বা যেভাবে দেখার অনুমতি দেয় না সেভাবে দেখাই অসাধু ও অন্যায় দেখা, যেমন পরনারীর দিকে তাকানো। তা সরাসরি তাকানো হোক বা চোরাচোখে দেখা হোক, উভয়ই নাজায়েয। দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দান। বান্দার পক্ষে এ আল্লাহর আমানত। এ শক্তির সঠিক ব্যবহার করলে আমানতের হেফাজত হয়। অন্যায় ব্যবহার করলে হয় খেয়ানত। এ আয়াতেও খেয়ানত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যা দেখা নিষিদ্ধ তা দেখলে দৃষ্টিশক্তির অপব্যবহার ও আমানতের খেয়ানত হয়। সুতরাং পরনারীর দিকে তাকানো এক প্রকার খেয়ানত। খেয়ানত করা নাজায়েয এবং এটা মুনাফিকের স্বভাব।
যে বস্তু ভোগ করা হালাল নয়, লোভের দৃষ্টিতে সেদিকে তাকানোও চোখের খেয়ানত। অন্যের সম্পদ দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া ও ঈর্ষার দৃষ্টিতে সেদিকে তাকানোও খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত ও অসাধু দেখা। এর থেকে বিরত থাকা উচিত।
আল্লাহ তা'আলা যাকে যেই নি'আমত দিয়েছেন, প্রত্যেকের উচিত তাতে সন্তুষ্ট থাকা। অনেক সময় এতে ভুল হয়ে যায়। অন্যের কী কী বেশি আছে সেদিকে তাকানো হয়। অন্যের স্বাস্থ্য, অন্যের রূপ ও সৌন্দর্য, অন্যের সম্পদ, অন্যের সুখ্যাতি, অন্যের পদমর্যাদা, অন্যের ক্ষমতা ও যোগ্যতা ইত্যাদি দেখে মনে করা হয় তারা আমার চেয়ে অনেক বেশি সুখী। আমি তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছি। এর ফলে অন্তরে ঈর্ষার জন্ম নেয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা হল পার্থিব বিষয়ে নিজের চেয়ে যারা উপরে তাদের দিকে না তাকানো। কিন্তু আমরা তাকাই এবং ঈর্ষান্বিত হই। এরফলে হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হই। এতে দীন-দুনিয়ার অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য এ অন্যায় তাকানো পরিহার করা উচিত।
অন্যায় তাকানোর একটা দিক হল তাকানোর ভঙ্গি। অন্যের প্রতি কটাক্ষ করা, চোখ কুচকিয়ে তাকানো, চোখ বাঁকিয়ে তাকানো, রক্তচোখে তাকানো এবং এরকম আরও যত অনুচিত ভঙ্গি আছে তা অবলম্বন করাও একরকম অসাধুতা ও দৃষ্টিশক্তির খেয়ানত। এসব ভঙ্গি আড়ালে অবলম্বন করা হয়। অর্থাৎ যাকে লক্ষ্য করে তাকানো হয় তার আড়ালে, সে যাতে বুঝতে না পারে। উদ্দেশ্য থাকে অন্যের সামনে তাকে খাটো করা ও মনের খেদ মেটানো। তো যাকে কটাক্ষ করা হয় সে নাই দেখুক, আল্লাহ তা'আলা ঠিকই দেখছেন। এ আয়াত সতর্ক করছে- তোমরা চোখের যত রকম খেয়ানত কর, যত রকমের অসৎ ও অসাধু দৃষ্টিদান কর, তা আর কেউ না দেখুক আল্লাহ তা'আলা ঠিকই দেখছেন। সেই চিন্তা মাথায় রেখে দৃষ্টিশক্তির ব্যবহার করো।
আয়াতের শেষে বলা হয়েছে- তিনি তোমাদের মনের গোপন করাও জানেন। তোমরা মনে কি কল্পনা কর, সৎ কল্পনা না অসৎ কল্পনা, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পুরোপুরি অবহিত। সুতরাং ইচ্ছা, কল্পনা ও সংকল্প করার ক্ষেত্রে অন্তরে এই ধ্যান রেখো যে, আল্লাহ তা জানেন । তাহলে অসৎ চিন্তা-ভাবনা থেকে বাঁচতে পারবে এবং সৎ চিন্তা ও সৎ সংকল্পের তাওফীক লাভ হবে।
মোটকথা এ আয়াতও মুরাকাবা ও ধ্যানের প্রেরণা যোগায়। এর দ্বারা শিক্ষা লাভ হয় যে, কেবল প্রকাশ্য কাজই নয়, গুপ্ত কাজও এমনকি মনের গোপন ইচ্ছাও যেহেতু আল্লাহ তাআলা জানেন, তাই সতর্ক থাকা উচিত যাতে অন্যায় ও অসৎ চিন্তা মনে ঠাঁই না পায়। যদি কখনও কোনও অসৎ চিন্তা অন্তরে জাগ্রত হয়, তবে আল্লাহর ধরপাকড়ের ভয়ে সংগে সংগেই তা অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেলে তাওবা-ইস্তিগফারে রত হওয়া চাই। আল্লাহ তা'আলা আমাদের তাওফীক দান করুন।
'মুরাকাবা' অর্থ অন্তরে এই ধ্যান করা যে, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতিটি কথা শোনেন, প্রতিটি কাজ দেখেন এবং আমার অন্তরের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা ও আকীদা-বিশ্বাস জানেন। এটা 'ইহসান'-এর একটি স্তর। ইহসান সম্পর্কে সামনে এ অধ্যায়ের প্রথম হাদীছে আলোচনা আসছে।
এমনিতে তো প্রত্যেক মুমিনের এ বিশ্বাস আছে যে, মানুষের প্রকাশ্য-গুপ্ত কোনও কাজই আল্লাহর অগোচরে থাকে না। সে যখন যেখানে থাকে, আল্লাহ তার সংগে থাকেন। অর্থাৎ তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন ও তার সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন। সে চোরাচোখে কী দেখছে তাও তিনি দেখেন। মনের গভীরে কী কল্পনা করছে তাও জানেন। দু'জনে পরস্পর কী কানাকানি করছে তাও শোনেন। কারও পক্ষেই তাঁর থেকে কোনও কিছু লুকানো সম্ভব নয়। তাঁর অগোচরে কিছু করবে সে সাধ্য কারও নেই। তিনি যখন সব শোনেন ও জানেন, তখন বান্দার কোনও কিছুই তিনি বৃথা যেতে দেবেন না। তিনি সর্বশক্তিমান। সকলকে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। যেদিন সকলে তাঁর সামনে হাজির হবে, সেদিন তিনি প্রত্যেককে তার যাবতীয় কাজ দেখিয়ে দেবেন। সবকিছুর হিসাব নেবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ কাজের জন্য তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তখন আপন আপন কাজের জন্য যার যা প্রাপ্য, তিনি তা পুরোপুরি দান করবেন। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দেবেন ও মন্দ কাজের বিনিময়ে শাস্তিদান করবেন। এ বিশ্বাস তো প্রত্যেকের আছে, কিন্তু সর্বদা তা অন্তরে জাগ্রত থাকে না। তার মন পড়ে থাকে ইহজাগতিক নানা দৌড়ঝাপ ও ব্যতিব্যস্ততার দিকে। তার পরলৌকিক বিশ্বাস চাপা পড়ে থাকে সেই চিন্তা-ভাবনার নিচে। ফলে তার পক্ষে তার জাগতিক কর্মকাণ্ড পারলৌকিক বিশ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সে হয়ে পড়ে নিজ খেয়াল-খুশির অধীন। হয়ে যায় ইন্দ্রিয়পরবশ। এতে তার পরকালীন জীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ইহজীবনও নষ্ট-ভ্রষ্ট হয়ে যায়। সে এক অপূরণীয় ক্ষতি। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যেই মুরাকাবার ব্যবস্থা। বান্দা যদি প্রতিটি কথায় ও কাজে আল্লাহর প্রতি ধ্যান রাখে আর চিন্তা করে- আমি কী বলছি তিনি শুনছেন এবং কী করছি তা তিনি দেখছেন, তবে সে অবশ্যই শরীআতের গণ্ডির ভেতর থাকার চেষ্টা করবে। কেবল সেই কথাই বলবে, যা আল্লাহর মর্জি মোতাবেক হয় এবং এমন কাজই করবে, যা দ্বারা তাঁর সন্তষ্টি লাভ হয়।
মুরাকাবার প্রয়োজন যেমন শরীআতের গণ্ডির ভেতর থাকার জন্য, তেমনি প্রয়োজন শরীআত মোতাবেক কাজে ইখলাস আনয়নের জন্য। অর্থাৎ পাপ কাজ থেকে বাঁচা ও নেকীর কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, উভয়ের জন্যই মুরাকাবা দরকার। যখন যেই কথা ও কাজ সামনে আসে, তখন অন্তরে আল্লাহর ধ্যান থাকলে একদিকে এই চেষ্টা করা সম্ভব হয় যে, সে কথায় ও কাজে যাতে কোনও পাপ না হয়। সে কথা ও কাজটি পাপের হয়ে থাকলে আল্লাহর ভয়ই তাকে তা থেকে বিরত রাখে। এভাবে মুরাকাবা দ্বারা পাপ থেকে বাঁচা যায়। তেমনি যখন কোনও নেক কাজ করা হয়, তা নামায-রোয়া দান- সদাকা যাই হোক না কেন, মুরাকাবার সাথে করলে তা ইখলাসের সংগে করা হয়। কারণ বান্দা যখন চিন্তা করবে, আমার নামায আল্লাহ তাআলা দেখছেন, যেমন জাহের দেখছেন তেমনি এর বাতেনও দেখছেন, তখন সে অন্তর থেকে রিয়া ও লোকদেখানোর মানসিকতা ঝেড়ে ফেলবে। কারণ মনের ভেতর রিয়া থাকলে তাও তো আল্লাহ দেখেন। এ অবস্থায় সে নামায আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কাজেই আল্লাহর কাছে যাতে কবুল হয়, সেই লক্ষ্যে সে মানুষকে দেখানো ও সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করার জন্যই নামায পড়বে। সেইসংগে নামায পড়বে পরম যত্নের সাথে, যাতে ফরয-ওয়াজিব তো অবশ্যই, সেইসংগে সুন্নত-মুস্তাহাবও যেন যথাযথভাবে আদায় হয়। সে ভাড়াহুড়া করবে না। দায়সারাগোছে নামায পড়বে না। বরং যথাসাধ্য সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নামায আদায়ের চেষ্টা করবে। এমনিভাবে অন্যান্য ইবাদতও সে ইখলাসের সংগে সুন্নত সম্মতভাবে আঞ্জাম দেবে। এমনকি দুনিয়ারী কাজকর্মও সুন্নত তরিকায় করতে সচেষ্ট থাকবে। ফলে তার জাগতিক কাজকর্মও ইবাদতে পরিণত হয়ে যাবে। এটা মুরাকাবার সুফল যে, এর মাধ্যমে বান্দার গোটা জীবনই বন্দেগীর জীবন হয়ে যায়। তার বাহ্যিক ও আত্মিক এবং ব্যবহারিক ও নৈতিক সবরকম উৎকর্ষ এর মাধ্যমে সাধিত হয়।
সুতরাং জীবনে শুদ্ধতা ও সুস্থতা আনয়নের জন্য মুরাকাবা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদীসে এর প্রতি বিশেষ তাকীদ এসেছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে যথাক্রমে তার অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি।
মুরাকাবা সম্পর্কিত আয়াতসমূহ
এক নং আয়াত
{الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ (218) وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ (219)} [الشعراء: 218، 219]
অর্থঃ যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (ইবাদতের জন্য) দাঁড়াও। এবং দেখেন সিজদাকারীদের মধ্যে তোমার যাতায়াতকেও। শুআরাঃ ২১৮-১৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতের আগের আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি আাসাল্লামকে তাঁর প্রতি নির্ভরশীল থাকার হুকুম দিয়েছেন। তারপর বলছেন- তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দাঁড়াও। এখানে দাঁড়ানোর এক অর্থ হতে পারে মানুষকে তাওহীদের দিকে ডাকা ও আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হওয়া। সেই হিসেবে এর দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্বস্ত করা উদ্দেশ্য যে, দাওয়াত ও জিহাদী তৎপরতায় বিরুদ্ধবাদীদের বিরোধিতাকে আপনি পরোয়া করবেন না। আল্লাহ আপনার প্রতি লক্ষ রাখছেন। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন এবং শত্রুদের শত্রুতা থেকে আপনাকে রক্ষা করবেন।
দাঁড়ানোর আরেক অর্থ হতে পারে নামাযে দাঁড়ানো। অর্থাৎ যখন আপনি নামাযে দাঁড়ান, তখন তিনি আপনার প্রতি লক্ষ রাখেন। অর্থাৎ আপনার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল ছিল নামায। তিনি যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন নিজ দেহমন তথা গোটা অস্তিত্বকে আল্লাহর অভিমুখী ও তাঁর জন্য নিবেদন করতেন। আল্লাহর ইবাদতের হক আদায় তো কারও পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে নিষ্ঠা ও অভিনিবেশের যতটা উচ্চতায় পৌঁছা সম্ভব, সেখানে পৌঁছা কেবল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। প্রিয় হাবীবের প্রিয় ইবাদতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সে অভিনিবেশকালে আল্লাহ তা'আলার কী রহমত দৃষ্টি তাঁর উপর পড়েছিল, তা আমাদের পক্ষে কতটুকুই বা অনুমান করা সম্ভব?
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে একথা বলার দ্বারা তাঁর উম্মতকেও বোঝানো হতে পারে যে, তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তিনি লক্ষ রাখেন। তিনি লক্ষ রাখেন, তারা কেমন নামায পড়ছে, তাতে কতটুকু ইখলাস আছে এবং তা কতটা বিশুদ্ধ ও সুন্দরভাবে আদায় করছে। লক্ষ রাখার এক অর্থ কবুল করাও হতে পারে। অর্থাৎ বান্দা যখन নামায পড়ে, আল্লাহ তা দেখেন, তার মূল্য দেন ও তা গ্রহণ করে নেন।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে–এবং দেখেন সিজদাকারীদের মধ্যে তোমার উঠাবসা। সিজদাকারী বলতে নামাযী বোঝানো হয়েছে। দাঁড়ানো, রুকু করা ও সিজদা দেওয়া নামাযের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই এর প্রত্যেকটি দ্বারা সম্পূর্ণ নামায বোঝানো হয়ে থাকে।
আগের আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাকী নামাযের কথা হয়েছিল যে, আল্লাহ তা'আলা তা দেখেন। খুব সম্ভব তা দ্বারা নফল নামায বিশেষত তাহাজ্জুদের নামায বোঝানো হয়েছে। আর এ আয়াতে সিজদাকারীদের সাথে তার নামায অর্থাৎ জামাতে ফরয নামায আদায়ের কথা বোঝানো হয়েছে। এর দ্বারা বিশেষভাবে জামাতে নামায আদায়ের গুরুত্ব বোঝা যায়। ফরয নামায জামাতে আদায় করা জরুরি। কুরআন মাজীদে ফরয নামায আদায়ের বিষয়টা যেভাবে ব্যক্ত হয়েছে, তা দ্বারা কেবল জামাতবদ্ধ নামাযই বোঝা যায়। অর্থাৎ কুরআন মাজীদের ভাষায় প্রকৃষ্ট ফরয নামায যেন সেটাই, যা জামাতের সাথে আদায় করা হয়। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে যে জামাতের সাথে নামায পড়তেন, এ আয়াত বলছে আল্লাহ তা দেখেন। অর্থাৎ তিনি তাতে খুশি হন ও সমাদরে গ্রহণ করেন।
সহীহ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতে নামায পড়ার সময় আল্লাহ তাআলার কুদরতে পেছন দিকেও দেখতে পেতেন। সাহাবায়ে কিরাম কে কিভাবে নামায পড়ছেন, তাঁরা নামাযে কতটুকু 'খুশু-খুযু' রক্ষা করছেন তা তাঁর নজরে আসত। কারও কারও মতে এ আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে যে, সালাতরত মুসল্লীদের প্রতি আপনার ইতস্তত দৃষ্টি নিক্ষেপ আল্লাহ তা'আলা দেখেন। অর্থাৎ নামায অবস্থায়ও যে আপনি তাদের তদারকি করেন এবং নবুওয়াতী দায়িত্ব পালনে সর্বাবস্থায় সচেতন ও যত্নবান থাকেন, তা আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্টির সাথে লক্ষ রাখেন।
যাহোক এ আয়াত দ্বারা মুরাকাবার শিক্ষা পাওয়া যায়। ইবাদত-বন্দেগীতে যেমন বান্দার এই ধ্যান রাখা কর্তব্য যে, আল্লাহ তা'আলা আমার মনের অবস্থাও দেখছেন এবং আমলের বাহ্যিক রূপও লক্ষ রাখছেন, তেমনি জীবনের যাবতীয় কাজকর্মে অন্তরে এই ধ্যান জাগ্রত রাখা উচিত। তাহলে তার যাবতীয় কাজ শরীআতের সীমারেখার ভেতর থাকবে। এ ধ্যান তাকে সবরকম পাপকর্ম থেকে বিরত রাখবে। যে-কোনও কাজেই সে অন্তরে ইখলাস বজায় রাখতে পারবে। অর্থাৎ সে যা-কিছুই করবে তাতে কেবল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিই হবে তার লক্ষ্যবস্তু।
দুই নং আয়াত
{وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ (4)} [الحديد: 4]
“তোমরা যেখানেই থাক, তিনি তোমাদের সাথে আছেন। হাদীদঃ ৪
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ তোমরা জলে-স্থলে, আলোতে- অন্ধকারে, প্রকাশ্যে-গোপনে যখন যেখানে যে অবস্থায়ই থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সংগে থাকেন। অর্থাৎ তোমরা তার ক্ষমতার মধ্যে থাক। তাঁর ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাক। তাঁর দৃষ্টির ভেতর থাক। এবং থাক তাঁর জ্ঞানগোচর। ফলে তোমরা কী কর ও বল, সে সম্পর্কে তিনি সদা অবহিত থাকেন, যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{وَأَسِرُّوا قَوْلَكُمْ أَوِ اجْهَرُوا بِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ (13) أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ (14)} [الملك: 13، 14]
অর্থ : তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল বা প্রকাশ্যে বল (সবই তাঁর জানা। কেননা) তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানবেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক জ্ঞাত!
তো তিনি যখন নিজ জ্ঞানশক্তির মাধ্যমে সর্বক্ষণ বান্দার সংগে থাকেন, তখন বান্দার কর্তব্য, যে-কোনও কথা ও কাজের বেলায় সেদিকে ধ্যান রাখা। অতি গোপনে কোনও কথা বলা বা কাজ করার সময় এ চিন্তা রাখা যে, আল্লাহ তো আমার সংগে আছেন। তিনি দেখছেন আমি কী করছি। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَى ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَى مِنْ ذَلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ (7)} [المجادلة: 7]
অর্থ : তুমি কি দেখনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে তা আল্লাহ জানেন? কখনও তিনজনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন এবং কখনও পাঁচজনের মধ্যে এমন কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাআলা তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন তারা যা-কিছু করত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। মুজাদালাঃ ৭
এ আয়াতে ধমক দেওয়া হয়েছে, কেউ দেখছে না মনে করে কোনও অন্যায়- অপকর্ম করলে আল্লাহর কাছে তা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। তিনি কিয়ামতের দিন অপরাধীকে তা দেখিয়ে দেবেন এবং তার উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন। সুতরাং যাই করো না কেন, আল্লাহ তা'আলাকে হাজির-নাজির জেনে কর। সেক্ষেত্রে তোমরা শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে এবং তাকে তোমাদের সংগে পাবে ও পদে পদে তাঁর সাহায্য লাভ করবে, যেমন ইরশাদ হয়েছে-
{إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ (128)} [النحل: 128]
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সাথী, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ইহসানের অধিকারী হয়। নাহলঃ ১২৮
এ আয়াত দ্বারাও মুরাকাবার শিক্ষা পাওয়া যায়। বোঝানো হচ্ছে, আল্লাহ যখন তোমাদের সংগে থাকেন তখন তোমাদের কর্তব্য পাপকাজের ক্ষেত্রে অন্তরে তাঁর শাস্তির ভয় এবং সৎকাজের ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য ও পুরস্কারের আশা রাখা। অন্তরে এই ধ্যান থাকলে সহজে পাপকাজ থেকে বাঁচতে পারবে এবং নেককাজের অনুপ্রেরণা পাবে।
তিন নং আয়াত
{إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ (5) هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (6)} [آل عمران: 5، 6]
অর্থ : নিশ্চিত জেনে রেখ, আল্লাহর কাছে কোনও জিনিস গোপন থাকতে পারেনা- পৃথিবীতেও নয় এবং আকাশেও নয়। আলু ইমরানঃ ৫
ব্যাখ্যা
আল্লাহ তাআলার কাছে আসমান-যমীনের কোনওকিছুই গোপন থাকে না এবং তা থাকতে পারে না। কেননা জগতের মৌলিক ও খুঁটিনাটি সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের ভেতর বিদ্যমান। তাঁর অজানা নেই কোনওকিছুই। যে যত গোপনেই কিছু করুক না কেন, প্রকাশ্য কাজের মতই সমানভাবে তিনি তা জানেন। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
{يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا (108)} [النساء: 108]
অর্থ : তারা মানুষের সাথে তো লজ্জা করে, কিন্তু আল্লাহর সাথে লজ্জা করে না, অথচ তারা রাতের বেলা যখন আল্লাহর অপসন্দনীয় কথা বলে তখনও তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন। তারা যা-কিছু করছে তা সবই আল্লাহর আয়ত্তে।" নিসাঃ ১০৮
আল্লাহর কাছে যখন কোনওকিছুই গোপন থাকে না, তখন বান্দার প্রতিটি কাজের বেলায় শরীআতের সীমারেখা লক্ষ রাখা চাই, যাতে আল্লাহর মর্জিবিরোধী কোনও কাজ না হয়ে যায়। এমনকি নিজ অন্তরেরও পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যাতে কোনও কাজ
রিয়া ও লোকদেখানোর মানসিকতায় করা না হয়; বরং একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তষ্টিই লক্ষ্যবস্তু হয়। এ আয়াতও আমাদেরকে মুরাকাবার শিক্ষা দিচ্ছে।
চার নং আয়াত
{إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ (14)} [الفجر: 14]
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সকলের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। ফাজরঃ ৪
ব্যাখ্যা
এটা সূরা ফাজরের আয়াত। এর আগে আল্লাহ তাআলা আদ জাতি, ছামুদ জাতি ও ফিরআওনের বৃত্তান্ত উল্লেখ করেছেন। জানানো হয়েছে যে, এ তিনও জাতি আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল। নবীর কথায় কর্ণপাত না করে সীমালঙ্ঘনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা তাদের ধ্বংস করে দেন। তাদের সে ধ্বংসকাহিনী উল্লেখ করার পর তিনি বলছেন- তোমার প্রতিপালক তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। কে কী করছে, কেন করছে তা লক্ষ রাখছেন। অতীতে যেমন চরম সীমালঙ্ঘনকারীকে কঠিন শাস্তিদান করেছেন, তেমনি তোমরাও যদি তাঁর অবাধ্যতায় সীমা ছাড়িয়ে যাও, তবে তাদের মত তোমাদেরও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। সুতরাং যা-কিছুই কর না কেন, সীমার মধ্যে থেকে কর। তিনি তোমাদেরকে কুরআন দিয়েছেন। কুরআনের মাধ্যমে কর্তব্যকর্ম জানিয়ে দিয়েছেন। নবীর মাধ্যমে হিদায়াতের পথ খুলাসা করে দিয়েছেন। সেই হিদায়াতের পথে চলতে থাক। তাহলে আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাবে। গোমরাহীর পথে চলো না। আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ো না। তাহলে তোমাদের উপর তাঁর শাস্তি নেমে আসবে।
এ আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে, আল্লাহ যখন তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন, তখন তোমাদেরও কর্তব্য, অন্তরে সেই ধ্যান জাগ্রত রেখে নিজ কাজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং নিজ উদ্দেশ্য ও নিয়তের তদারকি করা। এটাই আল্লাহর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র উপায়।
পাঁচ নং আয়াত
{يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ (19)} [غافر: 19]
অর্থ : আল্লাহ জানেন চোখের অসাধুতা এবং সেইসব বিষয়ও, যা বক্ষদেশ লুকিয়ে রাখে। গাফিরঃ ১৯
ব্যাখ্যা
যে দেখা অন্যায় ও খেয়ানত
চোখের অসাধুতা বলতে অন্যায় দেখা বোঝানো উদ্দেশ্য। শরীআত যা দেখার অনুমতি দেয় না তা দেখা বা যেভাবে দেখার অনুমতি দেয় না সেভাবে দেখাই অসাধু ও অন্যায় দেখা, যেমন পরনারীর দিকে তাকানো। তা সরাসরি তাকানো হোক বা চোরাচোখে দেখা হোক, উভয়ই নাজায়েয। দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দান। বান্দার পক্ষে এ আল্লাহর আমানত। এ শক্তির সঠিক ব্যবহার করলে আমানতের হেফাজত হয়। অন্যায় ব্যবহার করলে হয় খেয়ানত। এ আয়াতেও খেয়ানত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যা দেখা নিষিদ্ধ তা দেখলে দৃষ্টিশক্তির অপব্যবহার ও আমানতের খেয়ানত হয়। সুতরাং পরনারীর দিকে তাকানো এক প্রকার খেয়ানত। খেয়ানত করা নাজায়েয এবং এটা মুনাফিকের স্বভাব।
যে বস্তু ভোগ করা হালাল নয়, লোভের দৃষ্টিতে সেদিকে তাকানোও চোখের খেয়ানত। অন্যের সম্পদ দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া ও ঈর্ষার দৃষ্টিতে সেদিকে তাকানোও খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত ও অসাধু দেখা। এর থেকে বিরত থাকা উচিত।
আল্লাহ তা'আলা যাকে যেই নি'আমত দিয়েছেন, প্রত্যেকের উচিত তাতে সন্তুষ্ট থাকা। অনেক সময় এতে ভুল হয়ে যায়। অন্যের কী কী বেশি আছে সেদিকে তাকানো হয়। অন্যের স্বাস্থ্য, অন্যের রূপ ও সৌন্দর্য, অন্যের সম্পদ, অন্যের সুখ্যাতি, অন্যের পদমর্যাদা, অন্যের ক্ষমতা ও যোগ্যতা ইত্যাদি দেখে মনে করা হয় তারা আমার চেয়ে অনেক বেশি সুখী। আমি তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছি। এর ফলে অন্তরে ঈর্ষার জন্ম নেয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা হল পার্থিব বিষয়ে নিজের চেয়ে যারা উপরে তাদের দিকে না তাকানো। কিন্তু আমরা তাকাই এবং ঈর্ষান্বিত হই। এরফলে হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হই। এতে দীন-দুনিয়ার অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। সে ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য এ অন্যায় তাকানো পরিহার করা উচিত।
অন্যায় তাকানোর একটা দিক হল তাকানোর ভঙ্গি। অন্যের প্রতি কটাক্ষ করা, চোখ কুচকিয়ে তাকানো, চোখ বাঁকিয়ে তাকানো, রক্তচোখে তাকানো এবং এরকম আরও যত অনুচিত ভঙ্গি আছে তা অবলম্বন করাও একরকম অসাধুতা ও দৃষ্টিশক্তির খেয়ানত। এসব ভঙ্গি আড়ালে অবলম্বন করা হয়। অর্থাৎ যাকে লক্ষ্য করে তাকানো হয় তার আড়ালে, সে যাতে বুঝতে না পারে। উদ্দেশ্য থাকে অন্যের সামনে তাকে খাটো করা ও মনের খেদ মেটানো। তো যাকে কটাক্ষ করা হয় সে নাই দেখুক, আল্লাহ তা'আলা ঠিকই দেখছেন। এ আয়াত সতর্ক করছে- তোমরা চোখের যত রকম খেয়ানত কর, যত রকমের অসৎ ও অসাধু দৃষ্টিদান কর, তা আর কেউ না দেখুক আল্লাহ তা'আলা ঠিকই দেখছেন। সেই চিন্তা মাথায় রেখে দৃষ্টিশক্তির ব্যবহার করো।
আয়াতের শেষে বলা হয়েছে- তিনি তোমাদের মনের গোপন করাও জানেন। তোমরা মনে কি কল্পনা কর, সৎ কল্পনা না অসৎ কল্পনা, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পুরোপুরি অবহিত। সুতরাং ইচ্ছা, কল্পনা ও সংকল্প করার ক্ষেত্রে অন্তরে এই ধ্যান রেখো যে, আল্লাহ তা জানেন । তাহলে অসৎ চিন্তা-ভাবনা থেকে বাঁচতে পারবে এবং সৎ চিন্তা ও সৎ সংকল্পের তাওফীক লাভ হবে।
মোটকথা এ আয়াতও মুরাকাবা ও ধ্যানের প্রেরণা যোগায়। এর দ্বারা শিক্ষা লাভ হয় যে, কেবল প্রকাশ্য কাজই নয়, গুপ্ত কাজও এমনকি মনের গোপন ইচ্ছাও যেহেতু আল্লাহ তাআলা জানেন, তাই সতর্ক থাকা উচিত যাতে অন্যায় ও অসৎ চিন্তা মনে ঠাঁই না পায়। যদি কখনও কোনও অসৎ চিন্তা অন্তরে জাগ্রত হয়, তবে আল্লাহর ধরপাকড়ের ভয়ে সংগে সংগেই তা অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেলে তাওবা-ইস্তিগফারে রত হওয়া চাই। আল্লাহ তা'আলা আমাদের তাওফীক দান করুন।
৬০। মুরাকাবা সংক্রান্ত হাদীছসমূহ; ইসলাম, ঈমান ও ইহসানের পরিচয় এবং কিয়ামতের আলামত:
অর্থ : হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক লোক আমাদের সামনে আবির্ভূত হল। লোকটির পোশাক ধবধবে সাদা। তার চুল গাঢ় কালো। তার শরীরে সফরের কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। তাকে আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি চিনতেও পারছে না। সে এগিয়ে আসতে থাকল এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে বসল। তারপর সে তার দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুর সাথে মিলিয়ে দিল এবং নিজের দুই হাত তাঁর দুই উরুর উপর রাখল। তারপর বলল, হে মুহাম্মাদ। আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ'য় যাওয়ার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন। আমরা তার প্রতি বিস্ময়বোধ করলাম যে, সে নিজেই তাঁকে প্রশ্ন করছে আবার তাঁর উত্তর সঠিক বলে মন্তব্যও করছে।
তারপর সে বলল, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেষদিবস এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন।
সে (আবার) বলল, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ইহসান এই যে, তুমি আল্লাহর 'ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তবে তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।
তারপর সে বলল, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা অধিক জানে না। সে বলল, তবে তার আলামতসমূহ আমাকে বলে দিন। তিনি বললেন- (ক) দাসী তার কর্ত্রীকে জন্ম দেবে এবং (খ) খালি পা ও নগ্ন শরীরের অভাবী মেষ রাখালদের দেখতে পাবে (একসময়) উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। তারপর সে চলে গেল। তারপর আমি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর! তুমি কি জান প্রশ্নকারী কে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তিনি তো জিবরাঈল আঃ। তিনি তোমাদের কাছে এসেছিলেন তোমাদেরকে দীন শিক্ষা দিতে - মুসলিম। (হাদীসঃ ৮)
‘দাসী তার কর্ত্রীকে জন্ম দেবে' এ কথার অর্থ দাসীদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটবে। ফলে দাসীর গর্ভে তার মনিবের কন্যাসন্তান জন্ম নেবে। মনিবের কন্যা মনিবতুল্য বটে (সেই হিসেবে দাসীর গর্ভে তার কর্ত্রী ও মনীবেরই জন্ম হল)। এর এছাড়া আরও ব্যাখ্যা আছে। العالة (শব্দটি عائل -এর বহুবচন) অর্থ অভাবগ্রস্ত। مليا - এর অর্থ দীর্ঘ সময়। আর তা ছিল তিন দিন।
অর্থ : হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক লোক আমাদের সামনে আবির্ভূত হল। লোকটির পোশাক ধবধবে সাদা। তার চুল গাঢ় কালো। তার শরীরে সফরের কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। তাকে আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি চিনতেও পারছে না। সে এগিয়ে আসতে থাকল এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে বসল। তারপর সে তার দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুর সাথে মিলিয়ে দিল এবং নিজের দুই হাত তাঁর দুই উরুর উপর রাখল। তারপর বলল, হে মুহাম্মাদ। আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ'য় যাওয়ার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন। আমরা তার প্রতি বিস্ময়বোধ করলাম যে, সে নিজেই তাঁকে প্রশ্ন করছে আবার তাঁর উত্তর সঠিক বলে মন্তব্যও করছে।
তারপর সে বলল, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেষদিবস এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন।
সে (আবার) বলল, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ইহসান এই যে, তুমি আল্লাহর 'ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তবে তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।
তারপর সে বলল, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা অধিক জানে না। সে বলল, তবে তার আলামতসমূহ আমাকে বলে দিন। তিনি বললেন- (ক) দাসী তার কর্ত্রীকে জন্ম দেবে এবং (খ) খালি পা ও নগ্ন শরীরের অভাবী মেষ রাখালদের দেখতে পাবে (একসময়) উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। তারপর সে চলে গেল। তারপর আমি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর! তুমি কি জান প্রশ্নকারী কে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তিনি তো জিবরাঈল আঃ। তিনি তোমাদের কাছে এসেছিলেন তোমাদেরকে দীন শিক্ষা দিতে - মুসলিম। (হাদীসঃ ৮)
‘দাসী তার কর্ত্রীকে জন্ম দেবে' এ কথার অর্থ দাসীদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটবে। ফলে দাসীর গর্ভে তার মনিবের কন্যাসন্তান জন্ম নেবে। মনিবের কন্যা মনিবতুল্য বটে (সেই হিসেবে দাসীর গর্ভে তার কর্ত্রী ও মনীবেরই জন্ম হল)। এর এছাড়া আরও ব্যাখ্যা আছে। العالة (শব্দটি عائل -এর বহুবচন) অর্থ অভাবগ্রস্ত। مليا - এর অর্থ দীর্ঘ সময়। আর তা ছিল তিন দিন।
مقدمة الامام النووي
5 - باب المراقبة
60 - وأما الأحاديث، فالأول: عن عمر بن الخطاب - رضي الله عنه - قَالَ: بَيْنَما نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - ذَاتَ يَومٍ، إذْ طَلَعَ عَلَينا رَجُلٌ شَديدُ بَياضِ الثِّيابِ، شَديدُ سَوَادِ الشَّعْرِ، لا يُرَى عَلَيهِ أثَرُ السَّفَرِ، وَلا يَعْرِفُهُ مِنَّا أحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيهِ إِلَى رُكْبتَيهِ، وَوَضعَ كَفَّيهِ عَلَى فَخِذَيهِ (1)، وَقالَ: يَا مُحَمَّدُ، أخْبرني عَنِ الإسلامِ، فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «الإسلامُ: أَنْ تَشْهدَ أَنْ لا إلهَ إلاَّ الله (2) وأنَّ مُحمَّدًا رسولُ الله، وتُقيمَ الصَّلاةَ، وَتُؤتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ البَيتَ إن اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبيلًا». قَالَ: صَدَقْتَ. فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقهُ! قَالَ: فَأَخْبرنِي عَنِ الإِيمَانِ. قَالَ: «أنْ تُؤمِنَ باللهِ، وَمَلائِكَتِهِ، وَكُتُبهِ، وَرُسُلِهِ، وَاليَوْمِ الآخِر، وتُؤْمِنَ بالقَدَرِ خَيرِهِ وَشَرِّهِ». قَالَ: صَدقت. قَالَ: فأَخْبرني عَنِ الإحْسَانِ. قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأنَّكَ تَرَاهُ، فإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فإنَّهُ يَرَاكَ». قَالَ: فَأَخْبِرنِي عَنِ السَّاعَةِ. قَالَ: «مَا المَسْؤُولُ عَنْهَا بأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ». قَالَ: فأخبِرني عَنْ أَمَاراتِهَا. قَالَ: «أنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا، وأنْ تَرَى [ص:39] الحُفَاةَ العُرَاةَ العَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ في البُنْيَانِ». ثُمَّ انْطَلقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ: «يَا عُمَرُ، أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ ورسُولُهُ أعْلَمُ. قَالَ: «فإِنَّهُ جِبْريلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ أَمْرَ دِينكُمْ» (3). رواه مسلم. (4)
ومعنى «تَلِدُ الأَمَةُ رَبَّتَهَا» أيْ سَيِّدَتَهَا؛ ومعناهُ: أَنْ تَكْثُرَ السَّراري حَتَّى تَلِدَ الأَمَةُ السُّرِّيَّةُ بِنْتًا لِسَيِّدِهَا وبنْتُ السَّيِّدِ في مَعنَى السَّيِّدِ وَقيلَ غَيْرُ ذلِكَ. وَ «العَالَةُ»: الفُقَراءُ. وقولُهُ: «مَلِيًّا» أَيْ زَمَنًا طَويلًا وَكانَ ذلِكَ ثَلاثًا.
ومعنى «تَلِدُ الأَمَةُ رَبَّتَهَا» أيْ سَيِّدَتَهَا؛ ومعناهُ: أَنْ تَكْثُرَ السَّراري حَتَّى تَلِدَ الأَمَةُ السُّرِّيَّةُ بِنْتًا لِسَيِّدِهَا وبنْتُ السَّيِّدِ في مَعنَى السَّيِّدِ وَقيلَ غَيْرُ ذلِكَ. وَ «العَالَةُ»: الفُقَراءُ. وقولُهُ: «مَلِيًّا» أَيْ زَمَنًا طَويلًا وَكانَ ذلِكَ ثَلاثًا.