ইসলাম ও ঈমানের দিকে ডাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়? হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৪৩
ইসলাম ও ঈমানের দিকে ডাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়? হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৪৩
মানবজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঈমান ও ইসলাম। সৃষ্টিকুলের ভেতর সবচে দামি নিয়ামতও বটে। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে মহান আল্লাহ সকল জাতির কাছে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন এই ঈমানের দিকে আহ্বান করতে। হেযবুত তওহীদ কী বলে? তাদের দাবি হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈমান ও ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই তারা মানুষের সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান করে, ইসলাম ও ঈমানের দিকে ডাকে না। দেখুন তারা কী বলে? আমরা কাউকে ইসলাম হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা ইহুদী ইত্যাদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করছি না। আমাদের কথা হচ্ছে যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে। –মহাসত্যের আহ্বান, পৃ. ১০৫ মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম পরিবর্তন করা এসলামের উদ্দেশ্য নয়, এসলামের মূল উদ্দেশ্য সামষ্টিক জীবনে ন্যায়-সুবিচার শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। -আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই, পৃ. ১৮ মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা : পৃ. ১০ আমরা বলি না যে, আপনারা আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে যান, মো’মেন হয়ে যান, পরকালে বিশ্বাসী হয়ে যান, আল্লাহর প্রতি কে ঈমান আনবে কে আনবে না আনবে সেটা তারা আল্লাহর সঙ্গে বুঝবে। সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করানো আমাদের কাজ নয়। -শ্রেণীহীন সমাজ সাম্যবাদ প্রকৃত ইসলাম, পৃ. ৫২ মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে কোন বিশেষ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। -সবার উর্ধ্বে মানবতা, পৃ. ১০ ইসলাম কী বলে? এক. ঈমানের দিকে খোদ আল্লাহ তাআলা আহব্বান করেছেন। নিন্মে কয়েকটি আয়াত ও হাদিস উল্লেখ্য করা হলো। মহান রব্ব বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। –সুরা বাকারা : ২০৮ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ হে মুমিনগণ, অন্তরে আল্লাহকে সেইভাবে ভয় করো, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। (সাবধান! অন্য কোনও অবস্থায় যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে, তোমরা মুসলিম। –সুরা আলে ইমরান : ১০২ উপরন্তু আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কেও মুসলিম হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ আমি আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই। –সুরা নামাল : ৯১ তাছাড়া আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আ. সম্পর্কে বলেন, إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ যখন তার রব্ব তাকে বললেন, মুসলিম হয়ে যাও। তখন সে বলে উঠলো, আমি বিশ্ব-জাহানের প্রভুর জন্য মুসলিম হয়ে গেলাম। –সুরা বাকারা : ১৩১ وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরাও সেই রকম ঈমান আনো, যেমন অন্য লোকে ঈমান এনেছে। তখন তারা বলে, আমরাও কি সেই রকম ঈমান আনবো, যে রকম ঈমান এনেছে নির্বোধ লোকেরা? জেনে রেখো, এরাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না। –সুরা বাকারা : ১৩ এছাড়াও সকল নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন, মানুষকে ঈমানের দিকে আহব্বান করতে। নিন্মে দু'টি আয়াত দেখুন। মহান রব্ব বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ আমি যখনই কোন রাসূল পাঠিয়েছি, তাকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের সামনে সত্যকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে। –সুরা ইবরাহীম : ৪ ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে। –সুরা নাহল : ১২৫ উপরন্তু ইসলামের দিকে আহ্বান করতে মহান রব নিজে তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন, قُلْ هَـذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللّهِ وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (হে নবী,) বলে দাও, এই আমার পথ, আমি পরিপূর্ণ উপলব্ধির সাথে আল্লাহর দিকে ডাকি এবং যারা আমার অনুসরণ করে তারাও। আল্লাহ (সব রকম) শিরক থেকে পবিত্র। যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। –সুরা ইউসুফ : ১০৮ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا হে নবী, আমি তো তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও আলো বিস্তারকারী প্রদীপরূপে। –সুরা আহযাব : ৪৫-৪৬ এমন অসংখ্য আয়াত দ্বারা মানুষকে ইসলাম ও ঈমানের দিকে মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে। খোদ আল্লাহ-ই এ আহ্বান করেছেন। যে বিষয়ের দিকে খোদ আল্লাহ-ই আহ্বান করেন, নিশ্চয় সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু যে বিষয়টি আল্লাহর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টি হেযবুত তওহীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তারা তো আদতে মুসলিমই নয়। দুই. তাছাড়া উম্মতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্টত্বের কারণই হলো, মানুষকে ঈমান ও ইসলামের দিকে আহ্বান করার কারণে। মহান রব বলেন, كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ (হে মুসলিমগণ,) তোমরা সেই শ্রেষ্ঠতম দল, মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করে থাকো ও অন্যায় কাজে বাধা দিয়ে থাকো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখো। কিতাবীগণ যদি ঈমান আনতো, তবে তাদের পক্ষে তা কতই না ভালো হতো। তাদের মধ্যে কতক তো ঈমানদার, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান।। –সুরা আলে ইমরান : ১১০ যারা আল্লাহপাকের দিকে মানুষকে ডাকে, তারাই শ্রেষ্ট বলে খোদ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি আনুগত্য স্বীকারকারীদের একজন। –সুরা ফুসসিলাত : ৩৩ এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কাউকে কোনো এলাকার গভর্ণর করে পাঠাতেন, তখন দ্বীন ইসলামের দিকে আহ্বান করার নির্দেশ দিতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا بَعَثَ مُعَاذًا عَلَى الْيَمَنِ قَالَ إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أَهْلِ كِتَابٍ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ فَإِذَا عَرَفُوا اللهَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا فَعَلُوا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِذَا أَطَاعُوا بِهَا فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘আয (ইবনু জাবাল) রা.-কে শাসনকর্তা হিসেবে ইয়ামান দেশে পাঠান, তখন তাঁকে বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাব লোকদের নিকট যাচ্ছো। সেহেতু প্রথমে তাদের আল্লাহর ‘ইবাদাতের দাওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দিয়েছেন। যখন তারা তা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধন-সম্পদ হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে, তখন তাদের হতে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে। –সহিহ বুখারী, হাদিস নং : ১৪৫৮ সুতরাং এতো এতো আয়াত ও হাদিস থাকার পরও যারা বলে, ইসলাম ও ঈমানের দিকে আহ্বান করা আমাদের মিশন নয়, তারা আর যাই হোক মুসলিম হতে পারে না।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
কুরআনের তাফসীর পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ পর্ব–১৭
যদি কেউ বড় শিক্ষিত হয়, তবে তার বক্তব্য বুঝতে হলে নিশ্চয় জ্ঞানী হতে হয়, অথবা জ্ঞানীদের থেকে বুঝে নিতে...
মুফতী রিজওয়ান রফিকী
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১২৩৭
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন