প্রবন্ধ
বর্তমানে জুম'আর নামাজ পড়া যাবে না! হেযবুত তওহীদ। পর্ব–৭৪
জুমআর সালাত ইসলামে অবর্ণনীয় গুরুত্ব রাখে। যে-কারণে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
من ترَكَ الجمعةَ ثلاثَ جمعٍ متوالياتٍ فقد نَبذَ الإسلامَ وراءَ ظَهْرِهِ
যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। –আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খ. ১ পৃ. ৩৫
হেযবুত তওহীদ কী বলে?
জুমআর সালাত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কিন্তু হেযবুত তওহীদ তাদের দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রথম ১৫ বছর জুমআ পড়েনি বলে তাদের ২য় এমাম সেলিম নিজেই সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য দিয়েছে এবং সে জোর গলায় বলে বেড়াচ্ছে যে, 'যেখানে আল্লাহর আইন চলে না, সেখানে জুমআ পড়া জায়েয নয়। আর তাদের যুক্তি হলো, বাংলাদেশ যেহেতু দারুল ইসলাম নয়, সেহেতু এখানে জুমআ পড়া যাবে না। চলুন, তারা তাদের বইয়ের ভেতর কী বলেছে একটু দেখে নেওয়া যাক–
জুমা একটি স্বাধীন মোসলেম জাতির জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয় এবাদত। যে অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং একজন কেন্দ্রীয় এমাম বা নেতা থাকবেন যিনি এসলামের শরিয়াহ দ্বারা আইন কানুন অর্থনীতি দন্ডবিধি, সমাজ বিধি শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি পরিচালনা কোরবেন, শুধু ঐ অঞ্চলে জুমা জায়েজ হবে এমন এলাকাকে এসলামের পরিভাষায় বলা হয় দারুল এসলাম। আর যেখানে আল্লাহ শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত নেই সে এলাকাকে বলা হয় দারুল হারব। দারুল হারবে জুমা কায়েম না-জায়েজ। –বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (দ:) এর ভাষণ, পৃ. ১৯৫
বর্তমানে দুনিয়ার কোথাও আল্লাহর সার্বভৌমত্ব নেই, আল্লাহর দীনের হুকুম কার্যকরী নেই, আল্লাহর খেলাফত নেই, তাই সারা দুনিয়াযই এখন দারুল হারব। তাই পৃথিবীতে কোথাও এখন জুমার সালাত কায়েম করা বিধিসম্মত নয়। –বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (দ:) এর ভাষণ, পৃ. ১৯৭
জুমার সালাতে এসলামী রাষ্ট্রের খলিফা অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধান অথবা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। খলিফা অথবা খলীফার প্রতিনিধির নেতৃত্ব ব্যতিত জুমা কায়েম করা না জায়েয। –বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (দ:) এর ভাষণ, পৃ. ১৯৫
রসূল মক্কায় থাকতে কোনদিন জুমা কায়েম করেন নি। কারণ ঐ স্থানটি তখনও "দারুল হারর" ছিল অর্থাৎ এসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় নাই'। –বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (দ:) এর ভাষণ, পৃ. ১৯৬
এ ছাড়াও হেযবুত তওহীদের ২য় এমাম সেলিম এক ভিডিওতে বলেছে– আমরা হেযবুত তওহীদ দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রথম ১৫ বছর জুম'আ পড়িনি। অর্থাৎ তাদের দাবী হলো, জুমার জন্য ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকা শর্ত এবং খলীফা বা তার প্রতিনিধির উপস্থিত ছাড়া জুমা জায়েয হবে না। কারণ হিসাবে তারা বলে, 'যেহেতু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় জুমআ আদায় করেননি। কারণ, তখনও মক্কায় খেলাফত কায়েম হয়নি। অতএব বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র দারুল হারব। সুতরাং পৃথিবীর কোথাও জুমা পড়া জায়েয নয়।
ইসলাম কী বলে?
এ বিষয়ে জানার জন্য সর্বপ্রথম জানতে হবে দারুল ইসলাম ও দারুল হরব কাকে বলে?
দারুল ইসলাম ও দারুল হরব কী?
ইমাম আবু হানীফা রহি. দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
أَنَّ الْمَقْصُودَ مِنْ إضَافَةِ الدَّارِ إلَى الْإِسْلَامِ وَالْكُفْرِ لَيْسَ هُوَ عَيْنَ الْإِسْلَامِ وَالْكُفْرِ وَإِنَّمَا الْمَقْصُودُ هُوَ الْأَمْنُ وَالْخَوْفُ وَمَعْنَاهُ أَنَّ الْأَمَانَ إنْ كَانَ لِلْمُسْلِمِينَ فِيهَا عَلَى الْإِطْلَاقِ، وَالْخَوْفُ لِلْكَفَرَةِ عَلَى الْإِطْلَاقِ، فَهِيَ دَارُ الْإِسْلَامِ، وَإِنْ كَانَ الْأَمَانُ فِيهَا لِلْكَفَرَةِ عَلَى الْإِطْلَاقِ، وَالْخَوْفُ لِلْمُسْلِمِينَ عَلَى الْإِطْلَاقِ، فَهِيَ دَارُ الْكُفْرِ
দারুল ইসলাম ও দারুল হরবের প্রতি সম্পৃক্ততার মূল উদ্দেশ্য হলো, পরিপূর্ণ ইসলাম ও পরিপূর্ণ কুফর হওয়া নয়, বরং উদ্দেশ্য হলো, নিরাপত্তা ও ভয় বিষয়ে। অর্থাৎ যদি মুসলমানরা সর্বদিক থেকে নিরাপত্তায় থাকে, আর কুফরী শক্তি স্বাভাবিকভাবে আতংকিত থাকে, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম। পক্ষান্তরে সর্বদিক থেকে যদি কুফরী শক্তি নিরাপদে থাকে আর মুসলমানরা ভীত থাকে, তাহলে উক্ত রাষ্ট্র দারুল কুফর বা দারুল হরব। –বাদায়েউস সানায়ে, খ. ৯ পৃ. ৫১৩
দারুল ইসলাম
এক কথায়, দারুল ইসলাম হলো, ঐ সকল রাষ্ট্র, যেখানে অমুসলিমদের বসবাস খুবই কম থাকে এবং মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ট থাকে। সেই সাথে ইসলামের বিধান পালনে স্বাধীনতা থাকে এবং কোনো প্রকার বাঁধা এবং বিপদের শঙ্কা না থাকে এবং ইসলামী শক্তি সেখানে প্রবল থাকে, তাহলে উক্ত রাষ্ট্রের নাম হবে দারুল ইসলাম। যেমন, অতীতকালের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হিজরত পরবর্তী মাদীনা। আর বর্তমানের আফগানিস্তান।
দারুল কুফর
পক্ষান্তরে দারুল হরব বা দারুল কুফর হলো, ঐ সকল রাষ্ট্র, যেখানে মুসলমানদের বসবাস খুবই কম তথা মুসলমানগণ সংখ্যালঘু, সেই সাথে ইসলামের বিধান পালনে স্বাধীনতা না থাকে, বরং নানাবিধ বাঁধা এবং বিপদের মাঝে দিন গোজরান হয় মুসলমানদের এবং কুফরী শক্তি সেখানে শাসক থাকে এবং প্রবল থাকে। তাহলে, উক্ত রাষ্ট্রের নাম হবে দারুল হরব বা দারুল কুফর। যেমন অতীতকালের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এন হিজরত পূর্ববর্তী মক্কা। আর বর্তমানে ইজরাঈল।
দারুল আমান
দারুল আমান বলা হয় যে সকল রাষ্ট্রে মুসলিমগণ স্বাভাবিকভাবে স্বীয় ধর্ম পালনে সক্ষম। চাই তারা সংখ্যাগরিষ্ট হোক বা সংখ্যালঘিষ্ট। কিন্তু ইসলামের শাস্তির বিধান প্রয়োগ করতে সক্ষম নয়। তবে দ্বীন প্রচার ও পালনে স্বাধীন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও স্বীয় ধর্ম পালনে স্বাধীন। কোন ধর্ম পালনেই রাষ্ট্র পক্ষ থেকে কোন বিধি-নিষেধ নেই। তবে ইসলামী আইন উক্ত রাষ্ট্রে প্রচলিত নয়। আইন চলে মানবরচিত আইন বা কুফরী আইন। তাহলে উক্ত রাষ্ট্রের নাম হবে দারুল আমান।
যেমন অতীতকালের খৃষ্টান বাদশা নাজ্জাশীর শাসনাধীন হাবশা তথা আবিসিনিয়া ছিল দারুল আমান। আবিসিনিয়া যদিও খৃষ্টান বাদশার শাসনাধীন, কিন্তু সেখানে মুসলমানরা হিজরত করে স্বাধীনভাবে স্বীয় ধর্ম পালন করতে পারতো। তাদের ধর্ম পালনে কোন বাঁধা দেয়া হতো না। সেই সাথে স্বীয় ধর্ম প্রচারেও কোন বাঁধা ছিল না। তবে ইসলামী শরীয়তের নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান প্রয়োগ করার সুযোগ ছিল না। সুতরাং আবিসিনিয়া ছিল দারুল আমান। বর্তমানে অধিকাংশ দোষগুলো দারুল আমানের অন্তুর্ভূক্ত। এমনকি আমেরিকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোও। কারণ সেখানে সকল ধর্মাবলম্বীরাই স্বীয় ধর্ম পালনে ও প্রচারে স্বাধীন। রাষ্ট্র পক্ষ থেকে কোন প্রকার বিধি-নিষেধ নেই। যদিও সরকারী আইন ইসলামী নয়। এ হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অধিকাংশ রাষ্ট্রই দারুল আমানের অন্তর্ভূক্ত।
বর্তমানে কোনো দেশে কী জুম'আ পড়া যাবে না?
দারুল ইসলাম হোক বা দারুল হারব হোক কিংবা দারুল আমান হোক সর্বত্র জুমআ আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। কারণ, কুরআন-সুন্নাহ-এর যে সকল আয়াত-হাদিসে এ বিষয়গুলো পালনের হুকুম করা হয়েছে, সেখানে ব্যাপকভাবেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ-তে এমন কিছু নেই, যেখানে জুমআ শুধু দারুল ইসলামে ফরজ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কোনো আলেমও জুম'আ ফরজ হওয়ার জন্য দারুল ইসলামকে শর্ত দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। হেযবুত তওহীদ কোথায় এসব কোথায় পেলো সেটাই জানার বিষয়। অথচ কুরআনে কারীমে বর্ণিত হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
হে মুমিনগণ, জুমআর দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি করো। –সুরা জুমআ : ৯
উক্ত আয়াতে জুমআর নামাজ ফরজ হওয়ার জন্য খিলাফতের শর্ত করা হয়নি। উপরন্তু হাদিসসমূহের ভেতরও এ শর্ত কোথাও পাওয়া যায় না। নিন্মে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হলো–
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার মিম্বারের সিড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন,
لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ
যারা জুমআর সালাত ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৮৬৫
আম্মাজান হাফসাহ রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
رَوَاحُ الْجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য জুমুআর সালাতে যাওয়া ওয়াজীব। –জামে সগীর, হাদিস নং : ৪৪৬৭
আবুল জা’দ আদ-দামরী রা. সূত্রে বর্ণিত, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ تَرَكَ ثَلَاثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللهُ عَلَى قَلْبِهِ
যে ব্যক্তি (বিনা কারণে) অলসতা করে পরপর তিনটি জুমু’আহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তার অন্তরে সীলমোহর মেরে দেন। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ১০৫২
প্রিয় পাঠক, এ সকল আয়াত-হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো, জুমআ ফরজ হওয়ার জন্য খিলাফত শর্ত নয়।
ফাতাওয়ার কিতাবে কী লেখা আছে?
জুমার ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতি বা অনুমতি থাকা শর্ত। তবে এ শর্ত তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন মুসলিমদের সুলতান (রাষ্ট্রপ্রধান) থাকেন এবং তিনি জুম'আর ব্যবস্থাপনা করেন। পক্ষান্তরে অবস্থা যদি এমন হয় যে, সুলতান থাকা সত্ত্বেও তিনি জুমআ কায়েম করার দায়িত্ব পালন না করেন, কিংবা কোনো গোলযোগ বা অসুবিধার কারণে তাঁর অনুমতি গ্রহণ সম্ভব না হয়, অথবা মুসলমানদের কোনো সুলতান-ই না থাকে, তাহলে এসব পরিস্থিতিতে ইমামের উপস্থিতি বা অনুমতির ওপর জুমআ মওকুফ থাকবে না, বরং এমন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের ওপর আবশ্যক হলো, নিজেরাই জুম'আর ইমাম ঠিক করে নেবেন এবং তাঁর ইমামতিতে জুম'আ আদায় করবেন। ইবনে আজহারের আজাদকৃত গোলাম আবু উবায়েদ রহি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
شهدت العيد مع علي بن أبي طالب عليه السلام وعثمان محصور فجاء فصلى ثم انصرف فخطب
খলিফা হযরত উসমান রা. যখন অবরুদ্ধ, তখন আমি আলি রা.-এর সঙ্গে ঈদের জামাতে উপস্থিত হয়েছি। তিনি (মানুষকে নিয়ে) ঈদের সালাত আদায় করেছেন। তারপর ফিরে খুতবা প্রদান করেছেন। –মুশকিলুল আসার (ত্বহাবী) বর্ণনা নং : ৪৫০
এ বর্ণনার ভিত্তিতেই ইমাম ত্বহাবি হানাফী রহি. বলেন,
و روي عن محمد أن أهل مصر لو مات واليهم جاز أن يقدموا رجلا يصلي بهم الجمعة حتى يقدم عليهم وال
মুহাম্মাদ রহি. থেকে বর্ণিত, কোনো শহরবাসীর প্রশাসক মারা গেলে, তারা একজন ব্যক্তিকে সামনে অগ্রসর করে দেবে, যিনি তাদের নিয়ে জুমআর সালাত আদায় করবেন। যতদিন না (নতুন) প্রশাসকের আগমন ঘটে, ততদিন এভাবেই চলবে। –ফাতহুল বার, খ. ৫ পৃ. ৩৪১
হানাফী মাযহাবের অন্যতম গ্রন্থ ফাতাওয়া শামীতে এসেছে,
لو مات الوالي أو لم يحضر لفتنة ولم يوجد أحد ممن له حق إقامة الجمعة نصب العامة لهم خطيبا للضرورة....وبهذا ظهر جهل من يقول لا تصح الجمعة في أيام الفتنة مع أنها تصح في البلاد التي استولى عليها الكفار
যদি প্রশাসক মৃত্যুবরণ করেন অথবা ফিতনার কারণে উপস্থিত হতে না পারেন এবং এমন কাউকেও না পাওয়া যায়, যার জুমআ কায়েমের অধিকার রয়েছে, তাহলে জরুরতের কারণে সাধারণ মানুষ নিজেদের জন্য একজন খতিব নির্ধারণ করে নেবে....আমাদের এ বক্তব্য থেকে ওই ব্যক্তির অজ্ঞতা স্পষ্ট হয়ে গেছে যারা বলে, ফেতনার দিনগুলোতে জুম'আ সহিহ হবে না। অথচ ওই সমস্ত শহরেও জুমআ সহিহ, যেগুলো কাফেররা দখল করে নিয়েছে। –রাদ্দুল মুহতার, খ. ৩ পৃ. ৬
আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে,
فلو الولاة كفارا يجوز للمسلمين إقامة الجمعة
আর যদি প্রশাসক কাফের হয়, তাহলেও মুসলমানদের জন্য জুম'আ কায়েম করা বৈধ। –রাদ্দুল মুহতার, খ. ৩ পৃ. ১৪,
আরও স্পষ্টভাবে হানাফী মাযহাবের গ্রন্থ বাহরুর রায়েকে বলা হয়েছে,
و اما في بلاد عليها ولاة كفار يجوز للمسلمين إقامة الجمع والأعياد فيها
আর যেসব এলাকায় কাফেরদের কর্তৃত্ব রয়েছে, সেসব এলাকাতেও জুম'আ ও ঈদের নামাজ আদায় করা বৈধ। –বাহরুর রায়েক, খ. ৬ পৃ. ৪৬১
আর এসব ফাতাওয়ার ভিত্তিতেই আকাবিরগণ হিন্দুস্তানে জুমআ ফরজ বলে ফাতওয়া দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, কিফায়াতুল মুফতি, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ দেখতে পারেন। সুতরাং প্রমাণ হলো, ফাতাওয়ার কিতাবে জুমআ জায়েয হওয়ার জন্য দারুল ইসলামকে শর্ত করা হয়নি। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এমন আজগুবি কথা কোথায় পেলো আমার বুঝে আসে না। এটাও কী তাদের মিথ্যার জলন্ত প্রমাণ নয়?
জুম'আর শর্তাবলী:
তবে বিভিন্ন হাদিসের আলোকে জুম'আ সহিহ হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে-
এক. শহর বা উপশহরে হওয়া। গ্রামে বা জনমানবহীন বিয়াবানে জুমআর নামায শুদ্ধ হবে না।
দুই. জামা'আত হতে হবে।
তিন. যোহরের ওয়াক্ত হতে হবে।
চার.সকলের জন্য আম অনুমতি থাকতে হবে।
পাঁচ. খুৎবা দিতে হবে। -হেদায়া খ. ১ পৃ. ১১৪-১১৬
অভিযোগ:
তারা আরও অভিযোগ করে বলে–
রসূল মক্কায় থাকতে কোনদিন জুমা কায়েম করেন নি। কারণ ঐ স্থানটি তখনও "দারুল হারর" ছিল অর্থাৎ এসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। –বিশ্বনবী মোহাম্মাদ (দ:) এর ভাষণ, পৃ. ১৯১
জবাব
এ ব্যাপারে আগে হাদিসটি দেখে নেয়া যাক। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
إِنَّ أَوَّلَ جُمُعَةٍ جُمِّعَتْ فِي الإِسْلاَمِ بَعْدَ جُمُعَةٍ جُمِّعَتْ فِي مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ
ইসলামের প্রথম জুমআ মদীনাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মসজিদে (মসজিদে নববীতে) অনুষ্ঠিত হয়েছে। –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ১০৬৮
এ হাদিসের আলোকে তারা বলতে চায়–যেহেতু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআর নামাজ মক্কায় থাকাকালিন সময়ে আদায় করেননি, বরং মাদানী যিন্দেগীতে আদায় করেছেন, এর অর্থ হলো, রাষ্ট্র কায়েম না হলে জুমআ ফরজ হয় না' এ ধরণের কথাবার্তা মূর্খতার প্রমাণ বহন করে। কারণ, ইসলামের সকল বিধান মক্কায় অবতীর্ণ হয়নি, বরং পর্যায়ক্রমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুরো তেইশ বছরে আস্তে ধীরে ধীরে সব কিছুই নাযিল করা হয়েছে।
সুতরাং উপরিউক্ত অভিযোগ যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে মাদানী জিবনে যত বিধান নাযিল হয়েছে, সব বিধান পালনে কী রাষ্ট্র কায়েম শর্ত দেওয়া যৌক্তিক? কী হাস্যকর কথা! অথচ হেযবুত তওহীদের দাবী অনুযায়ী 'তাওহীদ' ব্যাতিত ইসলামের সকল বিধিবিধান এসেছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাদানী যিন্দেগীতে। তারা লিখেছে,
এই সময়ে (মক্কী জিবনে) যেসব সাহাবী ইন্তেকাল করেন তারা ইসলাম বলতে কি পেয়েছিলেন? তারা নামায-রোযা হজ্ব-যাকাত ঈদ কোরবানি কিছুই পেয়েছিলেন কি? তারা পেয়েছেন শুধুমাত্র তাওহীদ এবং বলার অপেক্ষা রাখে না তাওহীদই তাদের সফলকাম হয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট ছিল। –তওহীদ জান্নাতের চাবি, পৃ. ১০
তাহলে রাষ্ট্র কায়েম করার আগ পর্যন্ত কী ইসলামের অন্য কোনো আমল করা যাবে না? হেযবুত তওহীদের কাছে এর কোনো জবাব আছে কী? তাছাড়া ইদানিং বাংলাদেশে সেলিমরা কয়েকটি মসজিদে জুমআ আদায় করছে। অথচ বাংলাদেশে এখনও খিলাফত কায়েম হয়নি। বুঝা গেলো, হেযবুত তওহীদ নিজেদের মতবাদ নিজেরাই বিশ্বাস করে না।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র মুসলিম উম্মাহর করণীয়
কুরআন-হাদীসে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানের পরিচয় ইয়াহুদী জাতি পৃথিবীর প্রাচীনতম জাতি। আল্লাহ তা'আলা হযরত নূহ আ...
খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ (৪র্থ পর্ব)
পাপমোচন The Atonement পাপমোচনের বিশ্বাসটি খৃস্টধর্মে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মিস্টার ডেনিয়েল উইলসনের মতে...
প্রসঙ্গ মুয়াবিয়া রাজিআল্লাহু আনহুঃ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কিত ইতিহাস পাঠের মূলনীতি
...
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন