গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিনী মা-বোনদের রোযা না রাখার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
প্রশ্নঃ ৯২৮৫৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি আলহামদুলিল্লাহ সাত মাসের গর্ভবতী এই অবস্থায় আমি চেষ্টা করছি রোজা ও নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে পড়ার,,,, তার জন্য বাড়ির লোক রাগ করছে বাচ্চার ক্ষতি হবে বলে,,, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি পারছি ,, এই অবস্থায় আমার করনীয় কি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আপনার মনে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, আপনাকে সামর্থ্য দিয়েছেন তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করার জন্য।
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!! অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, বর্তমানে কিছু মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আল্লাহ তায়ালার বিধান পালন করতে গেলে নিজের ক্ষতি হবে মনে করে।
অথচ তারা ভুলে গিয়েছে যে, জীবন-মরণ, সুস্থতা-অসুস্থতা সবকিছু আল্লাহ তাআলারই হাতে।
সুতরাং আল্লাহ তায়ালার বিধান পালন করতে গেলে নিজের ক্ষতি হবে এরকম চিন্তা-ভাবনা করা বোকামি, এবং নেক সুরতে শয়তানের ধোকা ছাড়া আর কিছু নয়।
পূর্বে দেখা গিয়েছে যে, গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিনী মা-বোনদের অবস্থা অন্যান্য মাস থেকে রমাযান মাসে ভালোই কেটেছে। কারণ সবকিছুই তো আল্লাহ তাআলারই হতে।
প্রিয় দ্বীনী বোন!! সব থেকে বড় কথা হলো, মা যেমন তাঁর সন্তানকে ভালোবাসেন, মহান আল্লাহ্ তা'আলা তার চেয়েও বেশি বান্দাদের ভালোবাসেন। তাহলে কি আমরা সন্তানের ক্ষতি হবে বলে রোজা না রেখে আল্লাহ তায়ালা থেকে ভালোবাসা বেশি দেখাচ্ছি না? যা কখনো সম্ভব নয়। সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং: ৪২৯৩
তবে যারা বাস্তবিকভাবেই দুর্বল, তাদের ব্যাপারে ইসলাম ছাড় দিয়েছে।
★★ গর্ভবতী ★★
রোযা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানী বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর প্রবল আশঙ্কা করলে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। পরে এ রোযা কাযা করে নিবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلاَةِ وَعَنِ الْحَامِلِ أَوِ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ "
অর্থ : আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।-জামে তিরমিযী- ৭১৫,
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ بَدْرٍ عَنْ الْجُرَيْرِيِّ عَنْ الْحَسَنِ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَخَّصَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لِلْحُبْلَى الَّتِي تَخَافُ عَلَى نَفْسِهَا أَنْ تُفْطِرَ وَلِلْمُرْضِعِ الَّتِي تَخَافُ عَلَى وَلَدِهَا
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে গর্ভবর্তী মহিলা নিজের জীবনের আশংকা করে এবং যে স্তন্যদানকারী মহিলা নিজের সন্তানের জীবনের উপর আশংকা করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এদের উভয়ের জন্য সাওম ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ দিয়েছেন। সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং: ১৬৬৮
شرح مختصر الطحاوی للجصاص۔۔ :
"قال أبو جعفر: (وإذا خافت الحامل والمرضع على ولديهما: أفطرتا، وكان عليهما القضاء، ولا إطعام عليهما مع ذلك)، وذلك لأنهما معذورتان في الإفطار."
(شرح مختصر الطحاوی للجصاص: كتاب الصيام (2/ 437)،ط. دار البشائر الإسلامية - ودار السراج، الطبعة: الأولى 1431 هـ - 2010 م)
حاشیة الطحطاوی علی مراقی الفلاح ۔۔ :
"قوله: "ويجوز الفطر لحامل"......."ومرضع" هي التي شأنها الإرضاع فتسمى به ولو في غير حال المباشرة."
(حاشية الطحطاوي على مراقي الفلاح: كتاب الصوم ، باب ما يفسد الصوم ويوجب القضاء، فصل في العوارض(ص: 684)،ط. دار الكتب العلمية بيروت،الطبعة: الطبعة الأولى 1418هـ - 1997م)
فتاوی تاتارخانیہ ؛ :
"وقال في الاصل: إذا خافت الحامل أو المرضع على أنفسهما أو على ولدهما جاز الفطر و عليهما القضاء". ( ٢/ ٣٨٤، إدارة القرآن و العلوم الإسلامية)
★★ দুগ্ধদানকারিনী ★★
দুগ্ধদানকারিনী মা রোযা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ঐ সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, ফলে দুধ না পাওয়ার কারণে সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয়, তাহলে তিনি রোযা ভাঙ্গতে পারবেন এবং পরে কাযা করে নিবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلاَةِ وَعَنِ الْحَامِلِ أَوِ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ "
অর্থ : আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।-জামে তিরমিযী- ৭১৫,
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ بَدْرٍ عَنْ الْجُرَيْرِيِّ عَنْ الْحَسَنِ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَخَّصَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لِلْحُبْلَى الَّتِي تَخَافُ عَلَى نَفْسِهَا أَنْ تُفْطِرَ وَلِلْمُرْضِعِ الَّتِي تَخَافُ عَلَى وَلَدِهَا
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে গর্ভবর্তী মহিলা নিজের জীবনের আশংকা করে এবং যে স্তন্যদানকারী মহিলা নিজের সন্তানের জীবনের উপর আশংকা করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এদের উভয়ের জন্য সাওম ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ দিয়েছেন। সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং: ১৬৬৮
شرح مختصر الطحاوی للجصاص۔۔ :
"قال أبو جعفر: (وإذا خافت الحامل والمرضع على ولديهما: أفطرتا، وكان عليهما القضاء، ولا إطعام عليهما مع ذلك)، وذلك لأنهما معذورتان في الإفطار."
(شرح مختصر الطحاوی للجصاص: كتاب الصيام (2/ 437)،ط. دار البشائر الإسلامية - ودار السراج، الطبعة: الأولى 1431 هـ - 2010 م)
حاشیة الطحطاوی علی مراقی الفلاح ۔۔ :
"قوله: "ويجوز الفطر لحامل"......."ومرضع" هي التي شأنها الإرضاع فتسمى به ولو في غير حال المباشرة."
(حاشية الطحطاوي على مراقي الفلاح: كتاب الصوم ، باب ما يفسد الصوم ويوجب القضاء، فصل في العوارض(ص: 684)،ط. دار الكتب العلمية بيروت،الطبعة: الطبعة الأولى 1418هـ - 1997م)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ২৫৩৪৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হুজুর গর্ভবতী মায়েদের আমল ও গর্ভের সন্তান নিরাপদে থাকার আমল এবং গর্ভের সন্তান সুন্দর ও সুস্থ হওয়ার আমল দিলে অনেক উপকৃত হবো।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় দীনি বোন, প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার জন্য কোরআন-সু্ন্নাহয় বর্ণিত কোনো নির্দিষ্ট আমল বা দোয়া নেই। বরং একজন স্ত্রী তাঁর স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হওয়াটাই একটি স্বতন্ত্র এবং এতটাই ফজিলতপূর্ণ আমল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিখ্যাত মহিলা সাহাবি সালামা রাযি.কে বলেছেন,
أَفَمَا تَرْضَى إِحْدَاكُنَّ أَنَّهَا إِذَا كَانَتْ حَامِلًا مِنْ زَوْجِهَا ، وَهُوَ عَنْهَا رَاضٍ أَنَّ لَهَا مِثْلَ أَجْرِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، فَإِذَا أَصَابَهَا الطَّلْقُ لَمْ يَعْلَمْ أَهْلُ السَّمَاءِ وَأَهْلُ الأَرْضِ مَا أُخْفِيَ لَهَا مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ ، فَإِذَا وَضَعَتْ لَمْ يَخْرُجْ مِنْهَا جُرْعَةٌ مِنْ لَبَنِهَا ، وَلَمْ يَمُصَّ مَصَّةً إِلا كَانَ لَهَا بِكُلِّ جُرْعَةٍ وَبِكُلِّ مَصَّةٍ حَسَنَةٌ ، فَإِنْ أَسْهَرَها لَيْلَةً كَانَ لَهَا مِثْلُ أَجْرِ سَبْعِينَ رَقَبَةً تُعْتِقُهُنَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে, সে যখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারারাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে? তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমুতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে। (আলমু’জাম, তাবরানী: ৬৯০৮, আবু নুআইম: ৭০৮৯, মাজমাউজজাওয়াইদ: ৪/৩০৫ )
তবে এটাতো জানা কথা যে, সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রুণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাবতীয় চাল-চলন ও গতিবিধির বিস্তর প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। অপরদিকে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই শুরু হয় মায়ের অবর্নণীয় কষ্ট। কোরআনের ভাষায়,
حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ
তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। (সূরা লুকমান: ১৪)
আর একজন মায়ের এহেন কষ্টের ফসল ‘সন্তান’ যদি তাঁরই অসতর্ক ও আজেবাজে চাল-চলনের কারণে নেক, সৎকর্মশীল ও সুচরিত্রের অধিকারী না হয় তাহলে একদিন এ মা’ই নিজের গর্ভ-ব্যর্থতা স্বীকার করে বলে থাকে, তোকে গর্ভে ধারণ করে ভুল করেছি। এজাতীয় কথা-আল্লাহ্র কাছে পানাহ চাই-যেন কোনো মাকে বলতে না হয় এলক্ষে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতি আল্লাহওয়ালাদের পরামর্শের ভান্ডার থেকে দশটি পরামর্শ পেশ করছি। আশা করি, উপকৄত হবেন—
এক- গোনাহ থেকে বিরত থাকুন: প্রিয় গর্ভবতী মা! গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ইবাদতের ফিকিরের চাইতে গোনাহ ছেড়ে দেয়ার ফিকির অধিক করাটাই হবে আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। আর এটা করতে হবে, আপনার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানের জন্যই। যেমন, নাটক-সিরিয়ালপ্রীতি বর্জন করবেন, কণ্ঠস্বরকে সংযত করবেন, বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে ঘর হতে বের হবেন না। আপনার যে সকল গায়রে মাহরাম আত্মীয় রয়েছে, তাদেরকে আপনার সাথে দেখা সাক্ষাতের কিংবা পর্দা লংঘনের জন্য অনুমতি দেবেন না। এভাবে চলতে পারলে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন,
إنَّ مَعَ العُسْرِ يُسْراً
কষ্টের সাথেই আছে সুখ। (সূরা আলাম-নাশরাহ: ৬)
এই যে আরেকটি আয়াত দেখুন, যা আপনার জন্যও প্রযোজ্য—
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا
যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা: ৩১)
দুই- ধৈর্য্য ধারণ করুন: অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে ধৈর্য্যহারা হবেন না। এভাবে ভাবুন, ‘এই সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্য জিহাদতূল্য ইবাদত’। এতে ধৈর্য্য ধারণ করা আপনার জন্য সহজ হবে। আপনার কষ্ট শক্তিতে পরিণত হবে। নবীজী ﷺ চমৎকার বলেছেন,
الصَّبْرُ ضِيَاءٌ
সবর হল জ্যোতি। (মুসলিম: ২২৩)
তিন- সময় মত নামাজ আদায় করুন: এসময়ে অস্থিরতা বেশি কাজ করে। আর যথাসময়ে নামাজ অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। এজন্যই নামাজের সময় হলে নবীজী ﷺ বেলাল রাযি.কে বলতেন,
أَقِمِ الصَّلاةَ، أَرِحْنا بِهَا
নামাজের ব্যবস্থা কর এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর। (আবু দাউদ: ৪৩৩৩)
চার- জিকির করুন: অস্থিরতা দূরীকরণের কোরআনি-ব্যবস্থাপনা এটি। এটা আপনাকে ও আপনার গর্ভের সন্তানকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ آَمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : ২৮)
পাঁচ- শোকর আদায় করুন: দেখুন, মা হওয়ার মাঝেই নারীজন্মের স্বার্থকতা। কত নারী এমন আছে,গর্ভবতী হওয়ার জন্যে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের ভাগ্যে এই নেয়ামত জুটছে না। এজন্য যখনি মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হবেন তখনি আল্লাহর শোকর আদায় করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَٱشْكُرُواْ لِى وَلَا تَكْفُرُونِ
আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা: ১৫২)
ছয়- বেশি রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকা থেকে বিরত থাকুন: গর্ভাবস্থায় রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানী ঘটে। তাই ইশার নামাজ সময়ের শুরুতে পড়ে নিন। তারপর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ুন। দেরি করে ঘুমোতে যাবেন না। অন্তত এতটা আগে রাতের বিছানায় যেতে হবে যাতে করে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিন্তে যাওয়া যায় এবং ফজর যথাসময় পড়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا
আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। (সূরা নাবা: ৯)
সাত- ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন: কেননা দৈহিক সুস্থতা ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রে ওযুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত, ঘুমানোর আগে ওযু করে নিবেন। এতে অনিদ্রার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচা সহজ হবে। নবীজী ﷺ বলেছেন,
إِذَا أَتَيتَ مَضْجَعَكَ فَتَوضَّأْ وضُوءَكَ لِلصَّلاةِ
যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। (মুসলিম : ৪৮৮৪)
আট- আপনার সন্তানের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করুন: প্রায় ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের বাচ্চা শোনার সক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন কিছু কোরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চার মাঝেও কোরআনের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. বলেন,
عَلَيْكُم بِالْقُرْآَن ، فَتَعَلَّمُوه وَعَلَّمُوه أَبْنَائِكُم ، فَإِنَّكُم عَنْه تُسْأَلُوْن ، وَبِه تُجْزَوْن
কোরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। (শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬)
এক্ষেত্রে অনেকে জানতে চান, কোন সূরা পড়ব? উত্তর হল, গর্ভাবস্থার জন্য মূলত নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই। তবে কোনো বুজুর্গ সূরার বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ রেখে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এভাবে,
☞ প্রথম মাসে সূরা-আল ইমরান পড়লে সন্তান দামী হবে।
☞ দ্বিতীয় মাসে সূরা-ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।
☞ তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।
☞ চতুর্থ মাসে সূরা-লোকমান পড়লে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।
☞ পঞ্চম মাসে সূরা-মুহাম্মদ পড়লে সন্তান চরিত্রবান হবে।
☞ ষষ্ঠ মাসে সূরা-ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী হবে।
☞ সপ্তম, অষ্ঠম, নবম ও দ্বশম মাসে সূরা-ইউসুফ, মুহাম্মদ এবং ইব্রারাহিম কিছু কিছু পড়বে।
☞ ব্যাথা উঠলে সূরা-ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফুক দিয়ে পান করলে ব্যথা কমে যাবে।
তাছাড়া ঘুমের পূর্বে অবশ্যই চার কুল তথা সূরা কাফিরূন, সূরা ইখলাস ও সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয় নিলে বহুবিধ ফায়দা পাওয়া যায়। এভাবে তিনবার করবেন।
নয়- দোয়ার অভ্যাস করুন: গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে অসহায়বোধ হয়। এমনও মনে হয়, না-জানি এবার আমি মরে যাব কিনা! তাই গর্ভকালীন সময়ে দোয়ায় বেশি লিপ্ত হতে হয়। কেননা এসময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ বলেন,
أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ
বলো তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন। (সুরা নামল ৬২)
তাছাড়া আপনি আপনার সন্তানের মা। আর মায়ের দোয়া কবুল হয়। সুতরাং নেক, সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে বার বার দোয়া করুন। এক্ষেত্রে কোরআনের বর্ণিত দোয়াগুলোকে অগ্রাধিকার দিন। যেমন, এ দোয়াটি মুখস্থ করে নিতে পারেন,
رَبِّ هَبْ لِىْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ
হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আল ‘ইমরান: ৩৮)
পুত্র-সন্তান লাভের জন্য পড়তে পারেন,
رَبِّ هَبْ لِىْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ
হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। (আস-সাফফাত: ১০০)
দশ- আল্লাহর এ দু’টি গুণবাচক নাম পড়ুন: কোনো গর্ভবর্তী মহিলা যদি আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (اَلْمُتَعَالِىْ) ‘আল-মুতাআ’লি’ এবং (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’ পড়তে থাকে তবে ওই মহিলা তার গর্ভকালীন কষ্টক্লেশ থেকে মুক্তি পায়।
উক্ত দশ পরামর্শ মেনে চললে গর্ভবতী মা যেমন মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠবে, অনুুরূপভাবে তার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানও ‘নেক’ হবে। ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন