প্রশ্নঃ ৯২১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুন্নী এবং ওহাবী এই বিভাজনটি কিভাবে শুরু হলো সঠিক ইতিহাস টি জানতে চাই
৪ অক্টোবর, ২০২১
কিশোরগঞ্জ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় ভাই আপনি যে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন একে তো সেটা একটা বিতর্কিত বিষয় দ্বিতীয়ত তার জন্য নাতিদীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন।যা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্ভব নয়।তাছাড়া আমাদের বাস্তব জীবনে এজাতীয় বিতর্কিত বিষয় তেমন কোনো ফল বয়ে আনে না। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে সংক্ষেপে বিষটি তুলে ধরার চেষ্টা করব। “ওয়াহাবি” শব্দটা মূলত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব এর নামের দিকে সম্ভোধন করে বলা হয়। যিনি ১৭০৩ সালে বর্তমান সৌদিআরবের রিয়াদে জন্ম গ্রহন করেন এবং আনুমানিক ১৭৯০-১৭৯৫ এর দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ৷”মানুষ মাত্রই ভুলের উর্ধে নয়” এটা তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।তবে তিনি শিরিক বিদায়াতের বিরুদ্ধে সদাসোচ্চার ছিলেন। সমগ্র আরবদেশ যখন শিরিক, বিদয়াত ও অধর্মীয় আচরণে ছেয়ে গিয়েছিল তখন তা রুখতে ওহাবের পুত্র মুহাম্মদ প্রতিবাদী দল গড়ে তোলেন। ক্রমশ: তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের রূপ নেয়। ১৭৪৭ সনে রিয়াদের শায়েখের সাথে সংঘর্ষ হয়। ১৭৭৩ সনে রিয়াদের শাসক দাহহাম আব্দুল ওহাবের পুত্র মুহাম্মদের কাছে ভীষণভাবে পরাজিত হন। আরববাসীরা এ ঘটনার পর দলে দলে তাঁর পতাকা তলে সমবেত হয়।
পরবর্তীতে সারা দুনিয়াতে যেকোন মানুষ বিদআতের বিরোধীতা করলেই তাকে "ওয়াহাবী" বলা হয় ৷ ওয়াহাবীয়াতের কোন ডেসক্রিপশন নেই ৷ যেখানে কেউ সম্মিলিত মুনাজাত না করে আবার কিছু ক্ষেত্রে করে- তাকে ওয়াহাবী বলা হয়। অনেক জায়গায় আছে ধূমপান না করলে তাকে ওয়াহাবী বলা হয়। কোথাও আছে খুব সুন্দর কিরআত পড়লে তাকে ওয়াহাবী বলা হয় ৷ এমনকি আমার নিজ কানে শোনা “এক মাহফিালে জনৈক বিদয়াতি বক্ত বয়ান করছিল। পাশেই একদল কুকুর ঘেউঘেউ করছিল । এতে বক্তা সাহেব কিছুটা ডিস্ট্রাব ফিল করলেন। তখন তিনি বলে ওঠলেন ওই শোনেন ওয়াহাবি চিল্লায়। এটা ওয়াহাবি!!
অর্থাৎ সমাজের ঐ প্রচলনের বাইরে যে ব্যক্তিটা গেল সেই ওয়াহাবী ৷ জাস্টিস আঃ মওদূদ তার ওয়াহাবী আন্দোলন গ্রণ্থে লিখেছেন 'প্রকৃতপক্ষে ইবনে আব্দূল ওহাব কোনো মাজহাবও সৃষ্টি করেননি বরং তিনি চার ইমামের অন্যতম ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের অনুসারী ছিলেন । তাঁর ইচ্ছা ছিল, বিশ্বনবী এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রূপ ছিল সে আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা। এগুলো করতে গিয়ে তিনি হয়তো কিছুটা কঠোরতাও অবলম্বন করেছেন।
১৮২২ সালের পূর্বে ভারত উপমহাদেশে 'ওহাবী' নামটির কোনো অস্তিত্তই ছিল না। সর্বপ্রথম এটি ইংরেজদের প্ররোচনায় এ দেশে আমদানী হয়। যাতে লোহা দিয়ে লোহা কাটার পথ সুগম হয়ে যায়।
আল্লামা গোলাম মোর্তজা তার চেপে রাখা ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন সৈয়দ আহমদ শহীদ রহঃ নিহত হওয়ার পর যেসব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোকে বিকৃত করে তাঁদের নাম পাল্টে কোনোটাকে বলা হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ, কোনোটাকে বলা হয়েছে ওহাবী আন্দোলন, ফারায়েজী আন্দোলন, মুহাম্মদী আন্দোলন, আবার কোনোটাকে হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।' (চেপে রাখা ইতিহাস পৃষ্ঠা-১৭৯)
আল্লামা গোলাম মোর্তজা আরো লিখেন 'দিল্লীর শাহ ওলীউল্লাহ থেকে শুরু করে তাঁর পুত্র, শিষ্য ও ছাত্রগণ এমনকি শহীদ সৈয়দ আহমদ এবং তাঁর অনুগামীদের সকলেই মুসলমানদেরকে শরীয়তের ওপর প্রত্যাবর্তন করার তাগিদ দিয়েছিলেন। ফলে কবর বাঁধান বা কবরের ওপর সৌধ নির্মাণ করা থেকে ক্রমে মুসলমানরা বিরত হতে থাকে। ইংরেজরা মুসলমান বিপ্লবীদের মতিগতি লক্ষ্য করে এবং এ আন্দোলন যে তাঁদের বিরুদ্ধে অব্যর্থ আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করছে তা বুঝতে পেরেছিল। তাই তারা কতকগুলো দরিদ্র ও দুর্বলমনা আলেমকে টাকা দিয়ে ঘুরিয়ে তাদের মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল-তোমরা যুগ যুগ ধরে যা করে আসছো, তাহা করতে থাকো। এ বিপ্লবীরা আসলে ওহাবী; নবী, সাহাবী ও ওলীদের কবর ভাঙ্গার দল। কাজেই এদের প্রতিহত করা তোমাদের ইমানি দায়িত্ব।
বিদয়াতের বিরোদ্ধে সোচ্চার লোকদের প্রতিহত করতে ইংরেজরা যাদের দাঁড় করিয়েছিল তাদেরই নামকরণ করা হয়েছে সুন্নি বলে।
আশা করি আপনার উত্তর পেয়েছেন। জাজাকুমুল্লাহ খাইরান
والله اعلم بالصواب
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
মুফতি, বইতুল কুরআন মাদরাসা, মুহাম্মাদপুর ঢাকা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১