আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?

প্রশ্নঃ ৬৯৪২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, গ্রামের মসজিদটি আমরা পুনঃনির্মাণ করতে চাইছি সেই জন্য গ্রামের ৪০০-৪৫০ টি পরিবার পিছু ৩০০০/- টাকা করে চাঁদা তোলা হবে ও তার সঙ্গে একটি মসজিদ নির্মাণ সংস্থা আর্থিকভাবে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।। চাঁদা ও সংস্থার আর্থিক অনুদান এই দুয়ের মিলিত অর্থ ব্যবহার করে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।।আমাদের গ্রামের ৯০% মানুষ শ্রমিক শ্রেণীর এরা রাজমিস্ত্রি ও হেল্পার।। বাকি ১০% এর মধ্যে শিক্ষক,কৃষক,ছোটো ব্যবসায়ী,টোটো চালক, ইত্যাদি রয়েছে।। গ্রামের মোট জনসংখ্যার মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ এমন রয়েছেন যাদের সম্পূর্ণ হালাল উপার্জন রয়েছে ও তাদের ব্যক্তিগত মোট সম্পদও শরীয়তের বিধানে হালাল।।আবার এমন কিছু সংখ্যক মানুষ রয়েছেন যাদের হালাল উপার্জন রয়েছে কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত মোট সম্পদে হালাল ও হারাম অর্থাৎ,(সুদ) মিশ্রিত অবস্থায় আছে যা পার্থক্য করা তাদের পক্ষেও সম্ভবপর নয়।। আবার এমন কিছু সংখ্যক মানুষ রয়েছেন যাদের সম্পূর্ণ উপার্জনটাই হারাম পদ্ধতিতে ও তাদের ব্যক্তিগত মোট সম্পদও শরীয়তের বিধানে হারাম।। আর এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যাদের ব্যক্তিগত মোট সম্পদ(‌হালাল অথবা হারাম) এই সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না , তাদেরকে সন্ধের তালিকায় রাখা হয়েছে।। এমনকি কোনো ব্যক্তি তার মোট সম্পদের কোন অংশ থেকে অর্থাৎ,হালাল অথবা হারাম অংশ থেকে আমাদেরকে চাঁদা দেবে তাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না ।। এর প্রধান কারণ ইসলামের বিধান সম্পর্কে গ্রামের মানুষজন খুবই অসচেতন ও তাদের মধ্যে এতটুকু ইলম নেই যাতে তারা তাদের ব্যক্তিগত মোট সম্পদের মধ্যে হালাল ও হারাম অংশকে পার্থক্য করে রাখতে পারে ।। প্রশ্ন:- (ক) এই অবস্থায় আমাদের গ্রামের মসজিদটি যদি এই সকল প্রকার লোকের অর্থাৎ, যাদের সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে,তাদের আর্থিক সহায়তায়/ চাঁদায় সম্পূর্ণভাবে পুনঃনির্মান করা হয়।। তবে মসজিদটির নির্মাণকাজ শরীয়তের বিধানে হারাম অথবা হালাল হবে ?? (খ) এই মসজিদটিতে ইবাদত(সালাত আদায়) করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কী?? (গ) উপরের বর্ণিত পদ্ধতি ও আলোচনার উপর ভিত্তি করে, আপনার ব্যক্তিগত মূল্যবান মতামতের মাধ্যমে আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতিটি জানালে উপকৃত হবো ।। ইনশাআল্লাহ ।। ইতি:-‌ মসজিদকমিটি ও প্রধান সদস্যবৃন্দ

২৪ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


بسم الله الرحمن الرحيم
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় স্থান হলো মসজিদ এবং সবচাইতে অপছন্দনীয় স্থান বাজার। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ১৪০২, আন্তর্জাতিক নং: ৬৭১)

আপনাদের মহান উদ্বেগকে রব্বে কারীম কবুল করুক। এটি খুবই ভালো কাজ। উত্তম কাজ। সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে এবং নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এরূপ লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবাহ, আয়াত ১৮)

উসমান ইবনে আফফান (রাযিঃ) যখন নতুনভাবে মসজিদ–ই নববী নির্মাণের সংকল্প করলেন, লোকে তা পছন্দ করল না। তারা সেটি আগের মত রাখাই ভাল মনে করেছিল। তখন উসমান (রাযিঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং: ১০৭৩, আন্তর্জাতিক নং: ৫৩৩-২)

প্রিয় প্রশ্নকারী সম্মানিত মসজিদ কমিটি ও প্রধান সমস্যবৃন্দ! আপনাদের কাজটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজমত, ইজ্জত, ইবাদাত সর্বদিক থেকেই। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরূরী। যা আপনাদের কাছে বিদ্যমান। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের এমন উদ্যেগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার।

ক-খ প্রশ্নের উত্তরঃ হারাম টাকা মসজিদের কাজে ব্যবহার করা জায়েজ নয়। তাই আপনাদের উচিত হারাম টাকা গ্রহণ না করা। উক্ত টাকা দাতাদের কাছে ফেরত দেয়া। যেন তারা লজ্জা পেয়ে হারাম কারবার ছেড়ে দেয়। তাছাড়া হারাম টাকায় মসজিদ নির্মান মাকরূহে তাহরীমী। এমন নির্মিত মসজিদে নামায পড়াও মাকরূহে তাহরীমী।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ [٢:٢٦٧]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত। (সূরা বাকারা-২৬৭)

গ- প্রশ্নের উত্তরঃ পরামর্শ হল, মসজিদে হারাম টাকা প্রদান করা জায়েজ নয়। নিশ্চিতভাবে জানা হারাম টাকা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা কর্তৃপক্ষের উপর আবশ্যক।
তবে নিশ্চিতভাবে জানা না থাকলে উক্ত টাকা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। যদি নিশ্চিত জানা থাকে যে, হারাম টাকা থেকে দান করেছে, তাহলে তার টাকা গ্রহণ করবেন না।
আর মুসলমানদের প্রতি ভালো ধারণা রাখা শরয়ী বিধান। তবে নিশ্চিত জানা থাকলে ভিন্ন কথা।


كل مسجد بنى مباهة أو رياء أو سمعة أو لغرض سوى ابتغاء وجه الله، وأو بمال غير طيب فهو لاحق بمسجد الضرار (مدارك التنزيل على هامش تفسير الخازن-2\281، تفسير روح المعانى-11ظ21، سورة التوبة-107)

عن أبى هريرة رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: …. لا يقبل الله إلا الطيب (صحيخ البخارى، باب الصدقة من كسب طيب-1\189)

عن ابن عباس رضى الله عنهما قال: أمرهم بالإنفاق من أطيب المال وأجوده وأنفسه، ونهاهم عن التصدق برذالة المال أو دنيئته، وهو خبيثه، فإن الله لا يقبل إلا طيبا (تفسير ابن كثير-1\320، سورة البقرة-267)

أما لو أنفق فى ذلك مالا خبثا ومالا سببه الخبيث والطيب، فيكره، لأن الله تعالى لا يقبل إلا الطيب، فيكره تلويث بيته بما لا يقبله (رد المحتار، كتاب الصلاة، مطلب كلمة “لا بأس” دليل على أن المستحب غيره، زكريا-2\639، كرتاشى-1\658)

وكذا فى حاشية الطحطاوى على الدر المختار، كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها-1\278

قَالَ تَاجُ الشَّرِيعَةِ: أَمَّا لَوْ أَنْفَقَ فِي ذَلِكَ مَالًا خَبِيثًا وَمَالًا سَبَبُهُ الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ فَيُكْرَهُ لِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَا يَقْبَلُ إلَّا الطَّيِّبَ، فَيُكْرَهُ تَلْوِيثُ بَيْتِهِ بِمَا لَا يَقْبَلُهُ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، مكروهات الصلاة، مطلب فى احكام المسجد-1/658، كرتاشى، طحطاوى على الدر المختار، باب ما يفسد الصلاة الخ-1/678)
والله اعلم بالصواب

والله اعلم بالصواب

মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন