মোবাইলে কুরআন নিয়ে টয়লেটে যাওয়া
প্রশ্নঃ ২৪০২৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
শায়েখ এর কাছে আমার প্রশ্ন হলো
আমি একজন মেয়ে। আমি আপনাদের অ্যাপে ছাপা কুরআন ডাউনলোড করেছি। এখন ফোন এ লক স্ক্রীন এনে (তখন তো কুরআন শরীফ দেখা যায় না) আমি কী ফোন নিয়ে টয়লেটে যেতে পারবো?
উল্লেখ্য... আমি গ্রামে থাকি বলে কাজটি করতে হয়। আমার স্বামীর বাড়িতে হাত লাইট নেই। একটু বুঝিয়ে উত্তর দিয়েন
2.. আমার বিয়ে হয়েছে 2 বছর। (পালিয়ে) আমরা তওবা করছি) কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে ওনার বড় বোনের( বয়স 30)বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত উনি বাচ্চা নিতে চায় না (আযল করে) ( লোকলজ্জার ভয়ে+ উনার মা বলছে বাচ্চা নিতে না )আমি ওনাকে দ্বীনের বুঝ দিই। আল্লাহর ভয় দেখাই, কিঞ্চিত রাগ দেখাই তবুও উনি বুঝে না। (উনি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র)
প্রশ্ন এখন এই অবস্থায় আমার কি করণীয় কিছুই বুঝতেছি না। একটু বুঝিয়ে সমাধান দিয়েন। ওনার রাজি না হওয়ার জন্য আমার কি গুনাহ হবে? আর কী করলে উনি বুঝবে?
(আমি এত জরুরী না হলে দুটি প্রশ্ন করে নিয়ম ভাঙ্গতাম না। আমি অন্ত্যন্ত দুঃখিত। অনুগ্রহ করে দুইটার উত্তর দিয়েন) জাজাকাল্লাহ্ খইরুন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১. আপনার প্রথম প্রশ্নের জন্য নিচের 3765 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।
২. আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরের জন্য 11555 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৩৭৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মোবাইল এ কুরআন এপ্স রাখা যাবে? অনেক সময় মোবাইল সাথে নিয়ে পাবলিক টয়লেটে ঢুকতে হয়। কুরআন হাদিসের আলোকে জানাবেন দয়া করে।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মোবাইলে কুরআনে কারীমের অ্যাপস রাখা জায়েয হবে। যেহেতু মোবাইলের অ্যাপস শারীরিক নয়, অশারীরিক। যেমনটি হাফেযে কুরআনের হৃদয়ে কুরআনে কারীম অশারীরিকভাবে আছে। আর এই কুরআন নিয়ে সে বাথরুমে যেতে পারে। ঠিক তেমনি মোবাইলের ভিতর কুরআনে কারীমের অ্যাপস থাকলে সেই মোবাইল ও অ্যাপস নিয়ে বাথরুমে যেতে পারবেন।
دُخُول الْخَلاَءِ بِمُصْحَفٍ
13 - ذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ وَالشَّافِعِيَّةُ إِِلَى أَنَّهُ يُكْرَهُ - وَلاَ يَحْرُمُ - أَنْ يَدْخُل الْخَلاَءَ وَمَعَهُ خَاتَمٌ عَلَيْهِ اسْمُ اللَّهِ تَعَالَى أَوْ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ تَعْظِيمًا لَهُ، قَال الْقَلْيُوبِيُّ: هُوَ مَكْرُوهٌ وَإِِِنْ حَرُمَ مِنْ حَيْثُ الْحَدَثُ، وَهُوَ ظَاهِرُ كَلاَمِ الْحَنَابِلَةِ، لِمَا وَرَدَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ إِِذَا دَخَل الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ (2) ، قَال فِي شَرْحِ الْمُنْتَهَى: وَجَزَمَ بَعْضُهُمْ بِتَحْرِيمِهِ فِي الْمُصْحَفِ، وَقَال صَاحِبُ
الإِِِْنْصَافِ: لاَ شَكَّ فِي تَحْرِيمِهِ قَطْعًا مِنْ غَيْرِ حَاجَةٍ.
وَذَهَبَ الْمَالِكِيَّةُ إِِلَى أَنَّهُ يَحْرُمُ دُخُول الْخَلاَءِ سَوَاءٌ أَكَانَ كَنِيفًا أَوْ غَيْرَهُ بِمُصْحَفٍ، كَامِلٍ أَوْ بَعْضِ مُصْحَفٍ، قَالُوا: لَكِنْ إِِنْ دَخَلَهُ بِمَا فِيهِ بَعْضٌ مِنَ الآْيَاتِ لاَ بَال لَهُ - أَيْ مِنْ حَيْثُ الْكَثْرَةُ - فَالْحُكْمُ الْكَرَاهَةُ لاَ التَّحْرِيمُ.
قَالُوا: وَإِِِنْ خَافَ ضَيَاعَهُ جَازَ أَنْ يَدْخُل بِهِ مَعَهُ بِشَرْطِ أَنْ يَكُونَ فِي سَاتِرٍ يَمْنَعُ وُصُول الرَّائِحَةِ إِِلَيْهِ، وَلاَ يَكْفِي وَضْعُهُ فِي جَيْبِهِ، لأَِنَّهُ ظَرْفٌ مُتَّسِعٌ (1) .
الموسوعة الفقهية
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
প্রশ্নঃ ১১৫৫৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হজরত, আমার বিয়ে হয়েছে এক দেড় মাস হবে, আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন বিয়ের দুই থেকে তিন বছর পর সন্তান নিতে এক্ষেত্রে শরীয়ত কি হুকুম করে? এবং কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে শরীয়তের বিপরীতে যাবে না, অর্থাৎ সন্তান জন্মবিরতির কোন শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি আছে কিনা।?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মৌলিকভাবে এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে—
এক. স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم بالاتفاق অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)
দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো), Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি। এ পদ্ধতি কেবল নিম্মোক্ত ক্ষেত্রে বৈধ হবে।
—দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয়।
— কোন কারণে মহিলার বাচ্চা লালন-পালনের সামর্থ না থাকলে।
—মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে।
عن جابر قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب العزل
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)
তিন. গর্ভপাত ঘটানো(Abortion)।এটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বহু পুরাতন একটি পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণের (Contraceptives) উপায়-উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও আজ অবধি দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতিও চালু আছে। এ পদ্ধতিও নাজায়েয। তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,উম্মতে মুসলিমার সকল ফুকাহা এ ব্যাপারে একমত, (রূহ আসার পর) গর্ভপাত করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ এটা الوأد (সূক্ষ সমাহিত) এর অন্তরভুক্ত; যে ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ যখন(কেয়ামতের দিন) জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে…….’ (তাকবীর ৮-৯)।ফিকহী মাসায়েল সূত্রে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ৪/২১৭ফাতাওয়া দারুল ইফতা; মিশর। তাং-১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ ইং)
উক্ত আলোচনা থেকে আশা করি এটা পরিস্কার হয়েছে যে, ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল পদ্ধতি নয়;বরং বিশষ পদ্ধতির এবং সাধারণ অবস্থাতে নয়; বরং বিশেষ অবস্থাতে এর অনুমোদন দেয়। অন্যথায় সাধারণ অবস্থায় ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)
সুতরাং খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদির অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে, দৈহিক সৌন্দর্য বা ফিগার ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে ,কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার ভয়ে (যাতে পরবর্তীতে এদের বিয়ে শাদীর ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়),অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করে পরিবার পরিকল্পনার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষত অভাবের কারণে সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেছেন, ولا تقتلوا أولادكم خشية إملاق، نحن نرزقهم وإيّاكم إنّ قتلهم كان خطأ كبيراً. ‘’দারিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি।নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ…’’(সূরা ইসরা, আয়াত-৩১)অন্যত্র তিনি বলেন, الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ . “শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” (সূরা আল-বাক্বারা)
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,আজকাল যদিও সন্তান হত্যার পরিবর্তে নানাবিধ উপায়ে তাদের জন্মের পর বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, তবুও সন্তান জন্মানোর ফলে আর্থিক আশংকাজনিত ভুল ধারণা জন্মনিরোধের অন্যতম কারণ। সুতরাং এবিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে ভেবে চিন্তে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস, কষ্ট বা লজ্জার ভয়ে আমরা যেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমান ও আখেরাতকে বরবাদ না করে দেই। আল্লাহ সহীহ সমঝ দান করুন ।আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন