প্রশ্নঃ ২১১৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু হযরত আমি জানতে চাই মহররমের যে ৯ তারিখ ১০ তারিখ আসতেছে সামনে এই দিনে আমাদের আমল কি এবং এই দিনটা দামী হল কেন ?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আশুরার দিনে পৃথিবীতে অলৌকিত ও রহস্যময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। এ কারণে মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম বিশেষভাবে মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত। আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নাত। আশুরার রোজা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এ দিনে রোজা রাখছে। প্রিয় নবী (সা.) তাদের রোজার কারণ জানতে পারলেন, এদিনে মূসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যায়। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।
মহানবী (সা.) বললেন, মূসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। অতঃপর তিনি মহররমের ৯-১০ অথবা ১০-১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যে কোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। [মুসলিম ও আবুদাউদ]।
আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) যখন মদিনায় এলেন, তখন ইহুদি সম্প্র্রদায়ের কিছু লোক আশুরার দিনকে খুব সম্মান করত এবং সেদিন তারা সাওম পালন করত। এতে নবী (সা.) বললেন, ইহুদিদের চেয়ে ওই দিন সাওম পালন করার আমরা বেশি হকদার। তারপর তিনি সবাইকে সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৯৪২]।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হলো মহররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম) এবং ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাত্রের সালাত। [সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৬১৩]।
আবু কাতাদাহ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফার দিনে সওম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, এর দ্বারা বিগত ও আগত এক বছরের গোনাহ (পাপ) মোচন হয়। আশুরার দিনের সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়। সোমবারের দিনে সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, এটা সেদিন যেদিন আমি জন্মেছি এবং নবুওয়াত লাভ করেছি আর আমার ওপর (কুরআন) অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসলিম ১১৬২, তিরমিজি ৬৭৬, নাসায়ী ২৩৮২, আবু দাউদ ২৪২৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৩, আহমাদ ২২০২৪]।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরবিয়া মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন