প্রশ্নঃ ১৯৬২০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১৯ তারিখ আমার এস.এস.সি পরিক্ষা এই অবস্থায় আমি কি কি আমল করব একটু বললে আমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করব ইন শা আল্লাহ। আর কোন সুরা পড়ে কলমে ফুঁ দিব?
[ কিছু দিন আগে মসজিদে খতিব সাহেব আমাদের জন্য দুয়া এর আয়োজন করেছিল, তিনি বলেছে ২০ পারা সুরার ২ নাম্বার আয়াত নুন দিয়ে শুরু কলমের সুরা পড়ে বলে ফুঁ দিতে বলেছে, তাহলে ইন শা আল্লাহ ভালো হবে, যদি এইটা সত্যিই হয় তাহলে আমকে দুয়া টি এবং কিছু আমল লিখে দিন তাহলে আমার পড়তে সুবিধা হবে, আমাদের জন্য৷ দুয়া করবেন, বেশি সময় নাই তাই একটু দুয়া গুলো লিখে দিবেন প্লিজ, আলহামদুলিল্লাহ ]
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সিলেটসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া আপনার এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আপনার প্রত্যাশিত ভালো ফলাফলের জন্য আমরা দোয়া করছি।
সফলতার জন্য আল্লাহ রহমত অপরিহার্য বিষয়। আর কোনো কাজে আল্লাহ তাআলার রহমত তখনি আসে যখন বান্দার পক্ষ থেকে চেষ্টা ও দোয়া থাকে। এ জন্য উদ্দিষ্ট সুফল লাভের জন্য চেষ্টা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকতের জন্য সকাতরে তার সাহায্য প্রার্থনা করা আবশ্যক।
কি কি আমল করলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবেন সে ব্যপারে পরে বলছি, প্রথমে আপনার স্পেসিফিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিঃ
১- কলমে ফুঁ দেয়ার সাথে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের কোন সম্পর্ক নেই। আপনার প্রস্তুতি ভালো ও আশানুরুপ হলে যেকোন কলমেই পরীক্ষা দিননা কেন, আপনার পরীক্ষা অবশ্যই ভালো হবে। তার জন্য কলমে ফুঁ নেয়ার যৌক্তিকতা দেখি না।
হ্যাঁ, মুরুব্বী কেউ কলমে ফুঁ দিলে মনোবল ও সাহস বাড়ে কথা সত্য, এটা আপেক্ষিক বিষয়।
২- মসজিদের খতীব ছাহেব যে সুরার কথা বলেছেন তা সুরাতুল ক্বলাম, যা কুরআনের ৬৮ তম সুরা এবং ২৯ পারায় আছে, ২০ পারা নয়।
আপনি পরীক্ষার হলে যাবার পূর্বে সুরা কলম পড়ে নিতে পারেন। এটা অভিজ্ঞতালব্ধ একটি প্রসিদ্ধ আমল।
সুরা কলম পড়ে কোথাও ফু দেয়ার প্রয়োজন নেই, আপনি কেবল সুরা কলম পড়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করুন।
ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট সহায়ক হবে, তবে মনে রাখতে হবে, আপনার প্রস্তুতি ভালো না হলে কেবল আমলের উপর ভরসা করা চলবে না। প্রস্তুতিও নিতে হবে।
লিংকে ক্লিক করে পুরো সুরাটি দেখুনঃ https://muslimbangla.com/quran/sura/68
৩- কি কি আমল করলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবেন সে ব্যপারে পড়ুনঃ
পরীক্ষায় কামিয়াব হতে হলে পরীক্ষার্থীদের প্রতি অভিজ্ঞমহল ও বিশিষ্ট আলেমদের পরামর্শ হল–
প্রথমত, অলসতা ত্যাগ করে নিজের সাধ্যানুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, যারা ব্যাপক পরিশ্রমী তাদের সাফল্য ব্যাপক হয় আর যারা অপেক্ষাকৃত অলস তারা সফলতা থেকে তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلِكُلّٖ دَرَجَٰتٞ مِّمَّا عَمِلُواْۖ وَلِيُوَفِّيَهُمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ
‘আর সকলের জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।’ (সূরা আল-আহকাফ ১৯)
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, তিনিই সকল কাজে সফলতা দান করেন, তাই তিনি অবশ্যই আমাকে সফলতা দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক : ৩)
তৃতীয়ত, মহান আল্লাহর নিকটে বিনয়ের সাথে দোয়া করতে হবে। প্রয়োজনে “সালাতুল হাজত” পড়ে দোয়া করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বিশেষ কোন হালাল চাহিদা পূরনের জন্য আললাহ’র উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়। (ইবনু মাজাহ ১৩৮৫) হুযায়ফা রাযি. বলেন, كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন নামাজে রত হতেন’। (আবু দাউদ ১৩১৯)
এই নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। নামাজ শেষে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।
চতুর্থত, পরীক্ষার্থীরা সময়ভিত্তিক নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পড়লে পরীক্ষায় কামিয়াব হয় বলে অভিজ্ঞ আলেমরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
পড়ার পূর্বে : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْألُكَ فَهْمَ الأَنبِياءِ وَحِفظَ المُرسَلينَ و المَلائكَةِ المُقَرَّبِينَ
পড়ার পর: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَودِعُكَ ما قَرَأتُ وَ ما فَهِمْتُ وَ ما تَعَلَّمْتُ فَرُدَّهُ إليَّ عِندَ حَاجَتِي لَهُ أنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
পরীক্ষার দিন: اللَّهُمَّ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَيْكَ وَسَلَّمْتُ أَمْرِي إلَيكَ لا مَلْجَأَ وَلا مَنْجَا مِنكَ إلَّا إلَيك
পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময়: رَّبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَل لِّي مِن لَّدُنكَ سُلْطَانًا نَّصِيرًا
পরীক্ষা শুরুর পূর্বে: رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي بِسم اللهِ الفَتَّاح
পরীক্ষার মাঝে: يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ رَبِّ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
কোনকিছু ভুলে গেলে: اللَّهُمَّ رَبَّ الضَّالَّةِ ، هَادِيَ الضَّالَّةِ ، تَهْدِي مِنَ الضَّلَالَةِ ، رُدَّ عَلَيَّ ضَالَّتِي بِقُدْرَتِكَ وَسُلْطَانِكَ مِنْ عَطَائِكَ وَفَضْلِكَ
এবং লেখার মাঝে কোন অংশ মনে না আসলে দুরুদ শরীফ পড়ুন।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হলে: اللُّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَ سَهْلاً ، وَأَنْتَ إِنْ شِئْتَ جَعَلْتَ الْحَزْنَ سَهْلاً
পরীক্ষা শেষ করে : الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবায়ে কেরাম রাযি., তাবেইন ও পরবর্তী মনীষীগণ এ দোয়াগুলো বা এগুলোর একাংশ বিভিন্ন সময়ে পড়তেন। সুতরাং বাড়িতে বা যে কোনো স্থানে লেখাপড়ার শুরুতে কিংবা সাধারণ দোয়াতেও এ দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৬৮২৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, اسسلام عليكم ورحمة الله وبركة ১-পরীক্ষায় ফাস্ট হওয়ার জন্য কোন আমল আছে কি?২- আমি মাদ্রাসায় খুব ভাল পড়ি আলহামদুলিল্লাহ,আমার উস্তাদরা ও আমাকে আদর করে,,কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,, আমার ক্লাসম্যটরা আমার সাথে পড়া লিখা নিয়ে ,উস্তাদদের আদর নিয়ে খুব হিংসা করে,, এই সমস্যার জন্য আমি কি করতে পারি,,এই সমস্যার পতিক্রীয়ায় কোন আমল আছে কি? দয়া করে আমাকে কোন আমল কিংবা পরামর্শ দিলে খুব উপকৃত হবো। ৩- কিভাবে নিজেকে আখলাক ওয়ালা করতে পারি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আরবিতে সালামের সঠিক বানান এইভাবে-
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
১. পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার জন্য বিশেষ কোন আমল আছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে ভালো নাম্বার করার জন্য ভালোভাবে মন দিয়ে নিয়মানুবর্তিতা রক্ষা করে পড়াশোনার পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার কাছে সালাতুল হাজত পড়ে দোয়া করলে তিনি অবশ্যই সফলতা দেবেন ইনশাআল্লাহ।
পরীক্ষার দিন সকালে ইশরাকের সময় সালাতুল হাজত পড়ুন।
পরীক্ষার হলে যাবার পূর্বে সুরতুল ক্বলাম (২৯ পারা) পড়ুন।
হলে প্রবেশের পর একশত বার পড়ুন يا عليم ইয়া- আলীমু।
লেখার মাঝে কোন অংশ মনে না আসলে দুরুদ শরীফ পড়ুন।
২. হিংসা বিদ্বেষ ও বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর পড়ুন-
দুরুদ শরীফ তিনবার
সুরাতুল ফাতিহা তিনবার
আয়াতুল কুরসী তিনবার
সূরা ফালাক্ব তিনবার
সূরা না-স তিনবার
দুরুদ শরীফ তিনবার পড়ে দুই হাতের তালুতে ফু দিয়ে প্রথমে চেহারা, মাথা, শরীরের সামনের অংশ, এরপর যথাসম্ভব পুরো শরীর মাসাহ করে দিবেন।
রাতে ঘুমানোর সময় এই আমলটি আরেকবার করবেন।
কোনো ওয়াক্তে আমল করতে ভুলে গেলে স্মরণ আসামাত্রই আমল করে নেবেন।
আরো পড়ুন-
اعوذ بكلمات الله التامّات من كلّ شيطان وهامّة ومن كل عين لامّة.
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত পড়ুন। বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন "উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম" সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম
by ডা. মুহাম্মদ আবদুল হাই আরেফি রহ. , মাওলানা আহসান ইলিয়াস (অনুবাদক)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম আদর্শ-আখলাক অর্জন করার জন্য এই বইটি অনন্য।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন